#দেবী
লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি( ছদ্মনাম)
কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ।
২৪ঃ
নিজের ভালোবাসার মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়ার মাঝে যে প্রাপ্তি , সেটা দুনিয়ার আর কোনো প্রাপ্তি তে নেই।
বিন্তি রুহুল কে ভালোবাসতো। বোধহয় আজও বাসে। কিন্তু বিন্তির একপাক্ষিক ভালোবাসা কোনোদিন ও পুর্ণতা পাবে না। কারণ রুহুলের হৃদয় তো অন্যকেউ হরণ করে বসে আছে। কারো সাধ্যি নেই তাদের দুজন কে আলাদা করার।
বিন্তি ছবি আঁকছে আর পাশে বসে আছে সামিয়া। সে মুলত আচার খাচ্ছে আর বিন্তির ছবি আকা দেখছে। এত সুন্দর করে অঙ্কন সে টেলিভিশন এ দেখেছিল তবে সাদাকালো টেলিভিশনে স্পষ্ট বুঝতে পারে নি। বিন্তির এত নিখুঁত অঙ্কন দেখে সামিয়া বেশ খুশি। রানুর মতো সেও আবদার করে বসে আছে তার মুখ ও অঙ্কন করে দিতে হবে।
কিন্তু বিন্তির মুখে হাসি নেই। সে চুপচাপ ছবি এঁকে যাচ্ছে। বিন্তির মনে হচ্ছে সে আর ওই অস্ত যাওয়া সূর্য সারাজীবন একাই থেকেই যেবে। রুহুলের অবজ্ঞা যদি এতই বেদনা দেয় তবে রুহুলের প্রেমে পড়ার অনুভুতি এত সুখের কেন লেগেছিল বিন্তির।
__________________
সকলে আবার বসার ঘরে বৈঠক বসিয়েছে। এর কারণ হলো বিয়েতে কভাবে কি কি করবে। সেই অনুযায়ী সকলেই উপস্থিত।কাকন, বিন্তি,সামিয়া,রুহুল,দুলাল সহ বাড়ির সকল সদস্য রয়েছে।
রুহুল কথা বলছে আর রুহুলের ঠিক পিছনেই মাথায় কাপড় দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কাকন। সকলের মনোযোগ ই রুহুলের দিকে। কিন্তু কাকনের চোখ দুটি বিন্তির দিকে। কারণ বিন্তি বার বার রুহুলের দিকে তাকাচ্ছে এটা কাকনের সহ্য হচ্ছে না। কাকন রুহুল কে বিশ্বাস করে কিন্তু কেন যেন তার কিশোরী মনে হিংসে হচ্ছে।
বকুলের বাবা, মা,বকুল, দুলাল তারাও নিজেদের মতামত জানালো। পনের দিন পর বিয়ে নানা আয়োজন করতে হবে। কিন্তু এগুলো তে বিন্তির কোনো ভাবান্তর নেই তার চোখ দুটো তখন ও রুহুলের দিলে নিবদ্ধ । রুহুলের সাথে বিন্তির চোখাচোখি হয়ে গেলো। রুহুল কিছু না বলে দাদাজানের কথায় মন দিলো।
_________________________
রাতের খাবার বানানোর জন্য রন্ধনশালায় কাজ করছে। আর দাদিমার কড়া আদেশ এ কয়দিনেই সামিয়া কে সংসারের সকল কাজ শেখাতে হবে। সামিয়াও প্রতিবাদ করে নি।
মালেকা এদিকে বিরক্ত হচ্ছে। মেয়ে তার একটা অকর্মা হয়েছে। কাজে মন না দিয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।মালেকা বলল,”যত জ্বালা সব আমার। এইডা রে বিদায় করতে পারলে বাচি। কিন্তু একটা কামে মন নাই। শশুড় বাড়ি গেলে ফিরা দিন ই ফেরত দিয়া যাইবো। ”
সুভা বললো, “আহ মালেকা এভাবে বলছো কেন তুমি। কদিন পর পরের বাড়ি যাবে। আয় সামিয়া তোর কাজ করতে হবে না।”
সামিয়া যেন এই সুযোগেই ছিল।খুশিতে সুভার পাশে গিয়ে বললো, ” হ্যাঁ বড়াম্মা দেখো না তুমি কত ভালো।আর আম্মা খালি কথা শুনায়। তুমি কেন আমার আসল আম্মা হইলা না কও দেখি।”
সামিয়ার শেষের কথায় মালেকার মন ভারী হলো। তবুও বললো, “আপা আপনে এইডা রে এত আশকারা দিয়েন না তো। রুহুল আর আপনে এই দুইজনে মিলাই আমার মাইয়াডারে মাথায় তুলছেন। একখান কাম করে না খালি হাতপায়ে বড় হইছে।”
সুভা হেসে বললো, “বারে আমার সামিয়া বুড়ি এ বাডির সকলের ছোট। কত আদরের। ওকে মাথায় তুলবো না তো কাকে তুলবো। ”
দাদিমা মুচকি হেসে বলে উঠলেন, “তয় যা ই কও তোমরা সবচেয়ে বেশি আদরের আছিল আমাগো রুহুল। আমার মানিক। দাদার পরাণ আর বাপের কইলজা আছিল মানিক আমার।”
মালেকা বরাবরই রুহুল কে অপছন্দ করে। সামিয়ার প্রথম কথা এবং শাশুড়ির কথায় বলল, “হ হেইডা তো আমরা সকলেই জানি। রুহুল রে এই মঞ্জিলে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা হইছে। সম্পত্তি তেও হয়তো তাই ই হইবো। ”
দাদিমা এমন কথার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি বললেন, “মালেকা তুই কি সম্পত্তি বেশি পাওনের কথা কইতাছা। ভালো কইরাই জানোস সিরাজী মঞ্জিলে কোনো ভাগাভাগি হয় না। আর না কোনদিন হইবো। সবাই একসাথে থাকবো এইডাই নিয়ম।”
মালেকা আবারো বললো, “কিন্তু সিরাজী বংশের কর্তার দায়িত্ব তো রুহুল রেই দিবেন আমার হেলাল রে তো আর দিবেন না।”
–“কেন হেলাল রে দিমু কেন। নিয়ম মতো বাড়ির বড় পোলা পাইবো। চুপ কইরা কাম কর কইয়া দিলাম হেলালের মা।আমার মানিক রে নিয়া কিন্তু কোনো কথা শুনমু না আমি। ”
সুভা বলল,” দয়া করে চুপ করুন আপনারা। বাড়িতে মেহমান। আর এতই যখন অসুবিধে বেশ আমি আমার খোকা কে বলব দায়িত্ব ছেড়ে দিতে। দরকার নেই এমন রেশারেশির।”(লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি)
দাদিমা ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন,”চপ আর একখান কথা কেউ কইলে সিরাজী সাব এর কানে কথা যাইতে সময় লাগবো না। আমার মানিক ই হইবো এই বংশের পরের কর্তা আর এইডাই শেষ কথা ”
তারপর আবারো বললেন,”এই রানু কই তুই, মহীর মারে ডাইকা পাঠা ”
এতক্ষণ নিরব হয়ে সব শুনছিলেন কাকন। মালেকার কথায় সে স্তব্ধ। এতটা অপছন্দ করেন সে রুহুল কে।রুহুলের মতো সরল মনের মানুষ প্রতি এত ঘৃণা। কাকন সুভার দিকে তাকাচ্ছে ছেলের প্রতি সতীনের এমন ঘৃণা অথচ কিছুই বলে না। এই মানুষ টা সম্পর্কে বড় হয়েও প্রতিবাদ করে না কেন।
এর ই মাঝে মহীবুলের মা এলো। চোখ মুখ কেমন শুকনো লাগছে। এত মার খাওয়ার পর ও কিভাবে হেটে হেটে এখানে কাজ করতে আসছে কাকনের মায়া লাগল। কাকন হাতের কাজ ফেলে মহীবুলের মাকে ধরলো। কাঠের টুলে বসতে দিলো।
কাকনের এভাবে এগিয়ে যাওয়া দেখে সকলেই তাকিয়ে থাকলো।
সুভাও ভালোভাবে মহীবুলের মা কে পরখ করল।তারপর বলল,”কি হইছে মহীর মা,,তোর চোখ মুখ এমন দেখাচ্ছে কেন?”
মহীবুলের মা ঢোক গিলে বলল,”কিছু না বড় ভাবি। শরীর ডা একটু খারাপ আর কি।”
কাকন মিথ্যে বলা টা পছন্দ করলো না।আর তার চেয়ে বড় কথা সে চায় চাচি আম্মা বিচার পাক। তাই বললো, “মিথ্যে কথা বলছে চাচি আম্মা। চাচাজান চাচিআম্মা কে মেরেছে আমি স্বচোক্ষে দেখেছি।”
কাকনের কথা শুনে সকলেই কাকনের দিকে চাইলো।
সুভা মহীবুলের মায়ের দিকে এগিয়ে যেয়ে বললো,
” কথটা কি সত্যি মহীরমা জামাল ভাই আবার তোকে মেরেছে। ”
মহীবুলের মা সুভাকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিলো। সে যে নিরুপায়। বিয়ের পর থেকে এগুলোই সহ্য করতে হয়।মুখফুটে বললেও কিছুই হবে না।
দাদিমা আফসোস এর সহিত বললো, “পোলাডা আর মানুষ হইলো না। পশুর চেয়েও অধম হইছে। এই বয়সে আইসাও বউ এর গায়ে হাত তোলা বাদ দিলোনা। ওর বাপেরে জানান লাগবো। ”
কাকন বললো, ” দাদিমা চাচাজান বলেছে এই বাড়িতে স্ত্রীর গায়ে হাত তোলা নাকি নতুন কিছু না। তাহলে সব স্বামীই কি এভাবে গায়ে হাত তুলতো? ”
–” সুয়ামির মাইর আর সুহাগ দুইডাই আশীর্বাদ। তয় তর দাদাজান এই বয়সে মারে নাই। সে আমারে মারছে পোলা বিয়া করানোর আগে অব্দিই। শেষ মাইর খাইছিলাম বিলালের বিয়ার দিন। (শেষ কথাটা দাদিমা সুভার দিকে চেয়ে বললো)
কাকন বললো, “তাহলে কি আব্বা ও আম্মা দের গায়ে হাত তুলতো? ”
মালেকা ব্যাঙ্গাত্মক স্বরে বললো, “হ আমার গায়েই খালি তুলছে তয় তার বড় বউ পেয়ারির আছিল তো তাই তারে কম ই মারছে”
কাকন সুভার দিকে চাইলো। সুভা চোখ নামিয়ে নিল ছেলের বউ এর সামনে কথাটা লজ্জাজনক তার কাছে। সুভার গায়েও হাত তোলা হয়েছে এ কথাটি কাকনের সহ্য হলো না। কাকন রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে এলো।
(লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি)
________________________
রুহুল বসার ঘরে বকুলের সাথে বসে আছে। সেখান বিন্তি, তার বাবা-মা আর সামিয়া ও রয়েছে। রুহুল বসার ঘর থেকে দেখলো কাকন মন মরা হয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছে। বিষয়টি রুহুলের সুবিধা লাগলো না তাই রুহুল ও নিজের কক্ষে যাওয়ার জন্য বেরোলো। রুহুল এখন একা যাবে এই সুযোগ টি বিন্তি কাজে লাগাতে চায়। বিন্তি কথা বলতে চায় রুহুলের সাথে । শুধু একটা কারণ জানতে চায় ওকে বিয়ে না করার।
রুহুল সিড়ি পার করে দোতলায় উঠে গেছে তখনি শুনতে পেলো কারো কন্ঠ।
–“রুরুহুল ভভাই ”
রুহুল পিছনে বিন্তি কে দেখলো। বললো,
“কিছু বলবে বিন্তি? ”
–“জজি ”
–“হ্যাঁ বলো কি বলতে চাও ”
–” আআমাকে কেন ভাভালোবাসলেন না রুরুহুল ভাই। আআমাকে কি ভালোবাবাসা যেতোতো না।
–“দেখো বিন্তি তোমাকে আগেও বলেছি আমি তোমাকে বোনের চোখে দেখি। আবারও বলছি এগুলো আর বলো না আমাকে । আমি এখন বিবাহিত।
–” আআমি জাজানি আআপনি বিবাহিহিত, শুশুধু এএটুকু জাজানতে চাচাই আআমার মমধ্যে কিকি কমতি ছিছিল।শুধু তোতোতলা বলে? ”
–“ভুল ভাবছো। তোমার মধ্যে কোনো কমতি নেই বিন্তি। আমি তোমার জন্য নই আমি শুধুই আমার স্ত্রীর। আর আমি কখনোই তোমার হবো না। তাই বকুলের দেখানো পাত্র টাকে বিয়ে করে নাও। ছেলেটা ভালো তোমায় অনেক পছন্দ করেছে।
–“ওওইটা ভাভাইয়ার দেখানো পাপাত্র না। আআমি জাজানি ওওইটা আআপনিই ভাইয়াকে ববলেছিলেন।”
রুহুল ভাবলো বিন্তি সত্যিটা কিভাবে জানলো। সত্যিই তো পাত্র টা রুহুল ই দিয়েছিল। রুহুল বলল,”তুমি ভুল জানো। আমি কাউকে পাঠায় নি। ”
–“আমাকে জুজুবিন নিজে ববলেছিল যেযে আআপনি আমাকে বিয়ে ককরতে ববলেছিলেন।কিকিন্তু আমি তো আআপনাকে অনেক চেচেয়েছি। ”
–” বিন্তি এধরণের জেদ ছেড়ে দাও। আমার আশা না করে জীবনে আগে বাড়ো।পাঁচবছর হয়ে গেছে ভেবেছিলাম তুমি ভুলে গেছো এখনো সেই জেদ ধরে আছো। আগে ছোট ছিলে কিন্তু এখন তো তুমি সব বোঝো। না বুঝের মতো আচরণ করছো কেন? ”
–“আআমি তো আয়াপনার আশা ককরি না। কিকিন্তু আআপনাকে খুব মমনে পড়ে, ভুভুলতে পারি না”
–“নতুন কাউকে হৃদয়ে স্থান দাও আর মনে পড়বে না।
জুবিন অনেক ভালো ছেলে।
–”কিকিভাবে দেবো ববলেন। আআপনার হৃদয়ের মামানুষ যখন আআপনাকে কথাটাটা ববলবে তখন দেদেখবেন কতটা ককঠিন এই কাজ।”
–“আমার হৃদয়ের মানুষ কখনোই আমাকে বলবে না।কারণ আমি আমার মানুষ কে পেয়ে গেছি।”
বিন্তির কথাটিতে খারাপ লাগলো। সাথে রাগ ও। তাই বললো,”পেপেয়ে ও যদি হাহারান বুঝবেন ককেমন লালাগে। আআমি যেমন আআপনাকে না পাওয়ার ককষ্টে কাকাতরাচ্ছি গত পাপাঁচবছর যাবৎ আআপনিও পাপাবেন দেদেখে নিয়েন। ওই কাকন কেও যেন কেকেড়ে নেয় আআপনার থেকে। তাতাহলে আআপনিও বুবুঝবেন বিরহের বেবেদনা। ”
ঠাস করে থাপ্পড় মারলো রুহুল বিন্তিকে।কাকন কে হারাবে একথা যেন রুহুলের শরীর জ্বালিয়ে দিয়েছে। রাগান্বিত হয়ে বললো, “আমার বিবিজান কে কেউ কেড়ে নেওয়া তো দূর ওর দিকে কালো ছায়া দিলেও তাকে রুহুল সিরাজীর মুখোমুখি হতে হবে। আমার শেষ নিশ্বাস অব্দি সে আমার সাথে থাকবে। ”
কথাটি বলেই চলে যেতে নিলো। তারপর আবার বললো, “আর কাল সকালের পর যেন আর কোনো দিন তোমাকে সিরাজী মঞ্জিলের ত্রিসীমানায় না দেখি। না হলে আমার রাগ সম্পর্কে ধারণা আছে তোমার। নতুন করে বলতে হবে না আশা করি। ”
আর এক মুহুর্ত ও দাড়ালো না রুহুল। হয়তো পিছনে ফিরলে বিন্তির অশ্রুসিক্ত চেহারা টা দেখতে পারতো।
(লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি)
___________________________
রুহুল নিজের সকল রাগ দরজার কাছে দাড়িয়ে জোরে শ্বাস নিয়ে ঝেড়ে ফেলল যেন। তারপর দরজা খুলে ভিতরে গেলো। কিন্তু কক্ষে কাকন কে না দেখে বুঝতে বাকি রইলো না যে বাড়ান্দায় গেছে। রুহুল বাড়ান্দায় উঁকি দিয়ে দেখলো কাকন দাঁড়িয়ে। রুহুল পিছন থেকে যেয়ে জড়িয়ে ধরলো। রুহুলের স্পর্শ কাকনের বড্ড চেনা হয়ে গেছে। কাকন রুহুলের স্পর্শ পেয়েই সামনে ফিরে রুহুল কে জড়িয়ে ধরলো। রুহুল ও পরম আবেশে জড়িয়ে নিলো অর্ধাঙ্গিনীকে। রুহুল কাকনের মাথায় চুমো দিয়ে বললো, “এত রাতে এই বাড়ান্দায়
কি করছেন বিবিজান? ”
কাকন নিরুত্তর রইলো।
রুহুল আবারো বললো, “কি হলো জবাব দিন ”
–“আমার মন টা ভালো লাগছে না। কেন যেন অন্যরকম খারাপ লাগা অনুভব হচ্ছে মনের ভেতর।
–” কেন শরীর খারাপ আপনার? ”
–“না, শরীর ভালো। তবে..” কথাটি বলে কাকন রুহুল কে ছেড়ে দিলো।
রুহুল জিজ্ঞেস করলো, “তবে কি বিবিজান? ”
রুহুল বাড়ান্দার কিনারে দাঁড়িয়ে বললো, “আপনাদের সিরাজী মঞ্জিলে স্ত্রী দের এত নির্মম ভাবে কেন পেটানো হয়। দাদাজান ও নাকি দাদিমা কে মারধর করতো। অথচ পুরো সিরাজপুরে আপনাদের কত সুনাম।”
কাকনের কথা শুনে রুহুল মাথা নিচু করে ফেললো। তারপর বললো, ” কে কার স্ত্রীকে পেটাতো সেগুলো নিয়ে দয়া করে আপনি ভাববেন না।যা যেমন চলছে চলতে দিন। এগুলো ঘাটতে গেলে সংসারে অশান্তি হবে।আর এইটুকু নিশ্চিত থাকুন আমি কোনোদিন আপনার গায়ে হাত তোলা তো দূর আপনাকে টোকাও দিবো না। ”
–” আমি জানি আপনি ওনাদের মতো না। কিন্তু আব্বাও আম্মাদের মারধর করত। তখন আপনি কিছু বলেন কি কেন?”
–“আব্বা আমার সামনে কখনোই আম্মা কে মারতো না। আর ছোটআম্মাকে মারলে আমি প্রতিবাদ করতাম। কিন্তু বন্ধ দরজায় যদি আব্বা আম্মাদের অত্যাচার করে আমি কি করতে পারতাম বলেন দেখি।”
–“জানেন আজ চাচাজান চাচিআম্মাকে
খুব খারাপ ভাবে মে’রেছে। আমি নিজ চোখে মা’রতে দেখেছি ”
–“কিহ চাচাজান আজকেও মেরেছে চাচিজান কে।
বাড়ি ভর্তি মেহমান তার কোনো হুশ জ্ঞান নেই। ”
–” হ্যাঁ শুধু মারেই নি। আমি ধাক্কা দেওয়াতে ওনার কপাল কেটে রক্ত বেড়িয়েছিল বলে আমার চুলের মুঠি ও ধরেছিল। এমন কি এটাও বলেছে যে আপনিও সুযোগ বুঝে আমার গায়ে হাত তুলবেন। বিশ্বাস করুন আমি বুঝতে পারি নি ওনার কেটে যাবে। ”
কাকনের কথা শুনে রুহুল কাকনের চুলে হাত বুলিয়ে দিল। কাকনের দু হাত ধরে কাছে আনলো। তারপর কাছে টেনে এনে বললো,” আমার রুহ আপনি, আর রুহ কে আঘাত করা মানে নিজের মৃত্যুকে আমন্ত্রণ করা। ”
কাকন রুহুলের হাত ধরে বললো, সারাজীবন এভাবে ভালো বাসবেন তো আমায়? ”
–“শেষ নিশ্বাস অব্দি এই রুহুল সিরাজী শুধুই তার বিবিজানের।শুধু তাকেই ভালোবেসে যাবে বুঝেছেন।”
কাকন পলক হীন ভাবে রুহুলের দিকে চেয়ে রইলো। কালে শার্টে অন্ধকারে রুহুল কে স্নিগ্ধ লাগছে। তবে কাকনের মনে রুহুল কে সাদা রঙে বেশি মানায়। কাকন রুহুলকে বললো, “আপনি কালো রঙ পড়েছেন কেন। সাদা রঙ ও তো পড়তে পারেন। ”
রুহুল ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো, “কেন? ”
–“আপনাকে সাদাতে বেশি মানায় ”
–“তাই বেশ এখন থেকে সব রঙ বাদ। কাল ই ঢোল পিটিয়ে সব রঙের পোশাক বিলিয়ে দিবো।আর আমার বিবিজানের বলা সাদা রঙ পড়বো শুধু ঠিক আছে।
কাকন বললো, “না না বিলিয়ে দিতে হবে না।আপনি ওগুলোও পড়বেন। তবে সাদা রঙ আমার সামনে বেশি বেশি পড়বেন। ”
(লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি)
–“ঠিক আছে তাই হবে। এবার একটু হাসেন দেখি বিবিজান, আপনার হাসি মুখ দেখার জন্যই কিন্তু সুদুর নিচতলা হতে দোতলায় আসা। কিন্তু এখনো আমার কোহিনুরের ঝলকখানি দেখলাম না। ”
কাকন প্রাণখুলে হেসে বললো, “আপনার এইসকল দুষ্টুমিষ্টি প্রেমময় কথাই আমাকে হাসায়। ভালোবাসার সুখের হাসি হাসায়। হৃদয় হতে নির্গত হয় সুখময় হাসি।”
চলবে……
#দেবী
#Srotoswini_স্রোতস্বীনি
বিদ্রঃ দয়া করে কেউ কপি করবেন না। ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করে পাশে থাকবেন। ধন্যবাদ।
®️ Srotoswini-স্রোতস্বীনি ✍️