দেবী পর্ব ২

0
1005

#দেবী
লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি (ছদ্মনাম)
কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ
২ঃ
___________________

বিকেলে মহিলাশালায় প্রবেশ করলো দুলাল
সিরাজী এবং রুহুল সিরাজী।

রাজমিস্ত্রী টি তাদের দেখে বললো,”আসসালামু আলাইকুম সিরাজী আব্বা, রুহুল সাব কেমন আছেন”

দুলাল সালামের উত্তর নিলেন,”ওয়ালাইকুম আসসালাম।”

রুহুল বললো,”ভালো,, তোমাদের কাজ কত দূর”?

–”জি কেবল তো শুরু ধীরে ধীরে শেষ হইবো।”

দুলাল কাজ দেখে বললেন,”ঠিক আছে,,,তয় এই বছরের মধ্যেই কাম শেষ চাই।”

–”জি সিরাজী আব্বা আপনে চিন্তা করিয়েন না।”

দুলাল এবার একজন নারী কে ডাকলেন,” ফাতিমা, ফাতিমা”

দুলালের ডাকে ফাতিমা দ্রুত হাজির হলেন,”জি, আসলামু আলাইকুম সিরাজী আব্বা।”

দুলাল বলল্রন,”কাকন রে যাইয়া কও আমার জন্য পান আনাই তে। কয়দিন হলো ওর হাতের পান খাই না। ও কি সুস্থ হয় নাই।”

ফাতিমা মাথা নেড়ে বললেন,”জি না, হের জ্বর সারে নাই।”
দুলাল বললেন, “ঠিক আছে তয় একখান ডাক্তার দেহাইয়ো। ”

-”জি” বলে চলে গেলো ফাতিমা।

রুহুল বাম বাশের পুরোনো দালান টায় চোখ বুলালো। এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো তারপর বললো,” দাদা জান,একটা কথা ছিল। আবার নতুন করে দালান দিচ্ছেন কেন?”

দুলাল বললো, “গ্রামের ভালোর জন্য আমি সব ই করতে পারি। গ্রামের মাইয়া গো শিক্ষার প্রয়োজন।ওরা যে ঘর গুলাতে থাকে ওগুলা মজবুত না। তাই ওদের জন্যে নতুন কইরা দালান করতাছি। তুমি যে কয়দিন পারো আমার লগে এইখানে আসবা।”
(লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি)

রুহুল দাদার কথায় সম্মতি জানালো আর বললো, “জি দাদাজান। কিন্তু বামপাশের দালান এর কাজ কি আর কোনোদিনও হবে না।”

দুলাল বামপাশে চেয়ে বললো,” না, যে কাজের জন্য এত বড় দুর্ঘটনা হইলো হেইডা আর করমু না।”

রুহুল দাদাকে বললো,” সব ই আল্লাহর ইচ্ছা,,তবে আব্বা কে সামনের মাসে আবার শহরে হাসপাতাল থেকে ডাক্তার আনবো আমি।”

দুলাল সিরাজী বললো, “হ্যাঁ,, আনিও। তুমি কাম গুলা দেইখা বাদ মাগরিব আইসো। আমি যাই হাজী রে দেইখা আসি। হে তো বিছনায় পইড়া গেছে। বড্ড ভালো মানুষ আছিলো। আমি যাই।”

সন্ধ্যা হয়ে গেছে তাই রুহুল বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হলো। রাস্তায় দেখা হলো আক্কাস আলীর সাথে।

আক্কাস পথ আটকিয়ে বললো, ” দাড়াও, কাম ডা তুমি ঠিক করলা না।লেখিকা স্রোতস্বীনি। মানলাম তুমি সিরাজী বংশের পোলা কিন্তু তাই বইলা আমার পছন্দ করা মাইয়ারে অন্য জায়গায় বিয়া দিয়া ঠিক করলা না। আমি মিতু রে ভালোবাসতাম। আমার গায়ে হাত তুলছো, গেরামের পঞ্চায়েতের সামনে অপমান করছো তাও কিছু কই নাই কিন্তু ওরে অন্য শহরে বিয়া দিয়া কাম ডা ঠিক করলা না।”

রুহুল গম্ভীর ভাবে বললো, ” ভুলে যেও না কার সাথে কথা বলছো। আর নিজের বয়স দেখেছো মিতুর বয়স ১৬ আর তোমার ৪০ এর কাছা কাছি। লজ্জা করে না ওই বয়সি মেয়েকে বিয়ে করতে চাও। আর তোমার চরিত্র সম্পর্কে সবাই অবগত।”

আক্কাস বললো, ” হের, ওইগুলা বাদ দেও।পুরুষ মানুষ একটু আকটু ওগুলা কইরাই থাকে। তাই বইলা কি বিয়া দেওন যাইতো না।”

রুহুল বাকা হেসে বললো, ” তুমি পুরুষ নও বলেই এখনো বিয়ে হয় নি।” বলেই আক্কাসকে এড়িয়ে চলে গেলো রুহুল।

আক্কাস রুহুলের যাওয়ার পানে চেয়ে রইলো তারপর বললো,”রুহুল সিরাজী তর তেল কমাইয়া ছাড়মু আমি। সব কিছুর প্রতিশোধ নিয়াই ছাড়ুম।”

আক্কাস আলী। গ্রামের মধয়বিত্ত লোকদের মধ্যেই পড়ে তাদের পরিবার। ১৬ বছর বয়সি মিতু কে বিরক্ত করতো। বিয়ে করতে চাইতো। অনেক বার বিচার করা হলেও আক্কাস থেমে থাকে নি। মেয়েটাকে সেদিন হাত টেনে ধরেছিল স্কুল থেকে আসার সময়। সেটা দেখার পর রুহুল আক্কাস কে মার দিয়েছিল। পঞ্চায়েতে বিচার করা হয়েছিল। আক্কাস কে নানাভাবে অপমান করা হয় গ্রামবাসীর সামনে।
____________________
সিরাজী মহিলাশালার অন্দর কক্ষে~
ফাতিমা বিছানার কাছে যেয়ে বললো, “কাকন, এই কাকন তর জ্বর ঠিক হইছে “?

কাকন আস্তে বললো,” আপা,,,আগের চেয়ে ভালো।”

ফাতিমা কাকনের কপালে হাত দিলো তারপর বললো,” সিরাজী আব্বা আজকেও তর কথা জিগাইলো। তর হাতের পান তার এত ভালো লেগেছে যে তর এত কদর করে।”

কাকন উচ্চস্বরে প্রাণখোলা হাসি দিলো,”হাহাহা,,”

ফাতিমা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো “হাসোস কেন,, জ্বর এর ঘোরে কি পাগল হইলি নাকি? ”

কাকন চোখ ফাতিমার দিকে চেয়ে বললো,” খুশি তে, এই যে উনি আমার খোজ নিচ্ছে,,,শুনে অনেক ভালো লাগলো আপা,,অনেক ভালো।”

ফাতিমা এবার বললো,” পাগলি একখান মাইয়া, হইছে এখন জলদি ওঠ,,খায়া নে। দুপুরেও খাস নাই।
_______________________
সিরাজী মঞ্জিলঃ

নিচ তলায় একটি কক্ষে বিছানায় সুয়ে আছে বিলাল সিরাজী। দুলাল সিরাজীর জেষ্ঠ্য পুত্র এবং রুহুল সিরাজীর আব্বা।
রুহুল বাবার কক্ষে প্রবেশ করলো।
বাবার হাত স্পর্শ করে বললো,” আপনি কবে ভালো হবেন আব্বা?নএভাবে শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেন, আমাদের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না,,,আম্মা,ছোট আম্মা আপনার জন্য আর কত অপেক্ষা করবে আব্বা,,,আপনি কি আর আগের মতো হবেন না,, আমার সাথে দাবা খেলবেন না,,পাঞ্জা লড়বেন না , বলবেন না খোকা চল আজ দুজন দৌড় দিয়া দেখি কেডা জেতে।লেখিকা স্রোতস্বীনি। এই বাড়িতে আপনারে যদি এভাবে দেখি আমার আর থাকতে ইচ্ছে করে না এই বার গেলে আর আসবো না।”

সুভা(রুহুলের মা) রুহুলের কাধে হাত রেখে বললো,”খোকা রে”

রুহুল জবাব দিলো,” জি আম্মা,বলেন”

সুভা চোখের পানি ফেলে বললো,”তুই ও কি আমাকে ছেড়ে চলে যাবি,,,তুই ছাড়া তো আমার কেউ নাই।”

রুহুল মায়ের দিকে ফিরে বললো, ” কাদবেন না আম্মা,,,আমি আপনাকে কখনো ছাড়বো না। আব্বা ভালো হবে। আবার আগের মতো হবে।আগামী সপ্তাহে ডাক্তার নিয়ে আসবো আমি।”

দরজার কাছে এসে ডাকলো রুহুলের ভাই হেলাল।আপন নয় সৎভাই তার বাবার দ্বিতীয় পক্ষের ছেলে।
হেলাল বললো, ” দাদা ভাই, দাদা জান ডাকে আপনারে।”

রুহুল উঠে দাঁড়িয়ে বললো,”যা আসছি। আম্মা আমি ছোট আম্মা কে বলছি আব্বা কে দুধ দিয়ে সুজি করে দিতে। আর কান্না থামান। আমি ডাক্তার আনবো শহর থেকে।”
_______________________
রুহুল দাদার কাছে গিয়ে বললো,”দাদাজান ডেকেছেন?”
দুলাল সিরাজী বললেন,”হ্যাঁ, রুহুল,,কতকাল আর আমি এগুলা দেখমু। ভাবছিলাম তোমার আব্বার হাতে সব দিমু কিন্তু তার আগেই তোমার আব্বা শয্যাশায়ী হয়া গেলো। আমার বংশে তুমি ছাড়া আর কোনো যোগ্য ব্যক্তি রে দেখি না। আমি চাই তুমি সামনের শীতে সকল দায়িত্ব কাধে নেও।

রুহুল জানে তার আর কোনো রাস্তা নেই। বড় ছেলে হওয়াতে তাকেই দায়িত্ব নিতে হবে। তাই বললো, “আপনি যা বলবেন তাই হবে দাদা জান।”

দুলাল নিশ্চিন্তে বললো,”তোমার উপর আমার আস্থা সবচেয়ে বেশি রুহুল।সিরাজী বংশে তোমার মতো বিবেক বুদ্ধি সম্পুন্ন পোলা আর নাই।”

রুহুল দাদার চোখে চোখ রেখে বললো,”সিরাজী বংশ আমার কাছে সবার আগে। সিরাজী বংশের মান-সম্মান রক্ষার জন্য আমি সব করতে পারি দাদাজান।

পরিচয়ঃ
জেলার সবচেয়ে ধনি ব্যক্তি দুলাল সিরাজী। সিরাজীপুরে কেবল তাদের ই রাজত্ব। মুলত তাকেই সিরাজী আব্বা বলে সম্ভোধন করা হয় যাকে সিরাজী বংশের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।পুর্ব পুরুষদের যুগ থেকেই চলে আসছে। দুলাল সিরাজীর ২ ছেলে ১ মেয়ে। বড় ছেলে বিলাল সিরাজী। তার সন্তান রুহুল সিরাজী আর প্রথম স্ত্রী সুভা। তার ২য় স্ত্রী মালেকা। তার ১ ছেলে ২ মেয়ে। রুহুল এর সৎ ভাই বোন এর নাম হেলাল,বোনেরা আলেয়া, সামিয়া। আলেয়ার বিয়ে হয়েছে। স্বামী সরকারি চাকরি করে। তাই ঢাকায় থাকে।অন্যদিকে রুহুলের চাচা জামাল মদ এবং গাজার মধ্যে ডুবে থাকে। ২টা বিয়ে করেছিল কিন্তু এখন কেবল একজন স্ত্রী ই আছে। প্রথমজন কে সে নিজ হাতেই হত্যা করেছে। জামালের প্রথম পক্ষের কোনো সন্তান নেই। বিয়ের ৬মাস পরেই স্ত্রীকে খুন করেন। ২য় পক্ষে একছেলে এক মেয়ে আছে ।মেয়ে রোকেয়ার বিয়ে হয়েছে। স্বামী নিয়ে শশূড় বাড়ি থাকে। জামালের একমাত্র ছেলে মহীবুল। হেলাল আর মহীবুল সমবয়সী।

চলবে….

#দেবী❤️
#Srotoswini_স্রোতস্বীনি
বিদ্রঃ দয়া করে কেউ কপি করবেন না। আগের পার্টের লিংক কমেন্টে দেওয়া হয়েছে।ধন্যবাদ।

®️ Srotoswini-স্রোতস্বীনি ✍️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here