#দেবী
লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি (ছদ্মনাম)
কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ।
১৬ঃ
দুপুরে সিরাজী মঞ্জিলের ফাকা জায়গায় বৌভাতে খাওয়ানোর আয়োজন করা হয়েছে। শত শত মানুষ কে খাওয়ানো হচ্ছে। সকল আত্মীয়স্বজন, ব্যবসার সঙ্গী সহ কয়েক হাজার মানুষকে খাওয়ানো হচ্ছে। বহুবছর পর এমন ভাবে খেয়ে সিরাজপুর বাসী খুব ই সন্তষ্ট। দুলাল সিরাজী এগুলো পর্যবেক্ষণ করছে। আর রুহুল, মহীবুল, হেলাল, ওরা সব কিছু হাতে হাতে সামলাচ্ছে। এত মানুষের খাওয়ার আয়োজনে চাকর চাকরানিদের ও নাজেহাল অবস্থা। বার ছোটাছুটি করতে হচ্ছে।
রুহুলের মনে কাকন কে একপলক দেখার প্রবল ইচ্ছে জেগেছে। না জানি কত সুন্দর লাগছে তার বিবিজান কে। কিন্তু কাজের ব্যস্ততায় সকাল এর পর আর দেখাই মেলে নি । তাই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো দাদাজান যতই কথা শুনাক সুযোগ পেলেই ফুড়ুৎ করে যে এক পলক দেখেই চলে আসবে।
___________________
কাকন সকল মহিলাদের সঙ্গে বসে আছে অন্দরমহলের বসার ঘরে। তাকে আজকে আবারও আরেকদফা সাজানো হয়েছে। এরকম সাজে তার দম বন্ধ হয়ে আসছে।একেই তো এত ভারী গয়নাগাটি, তার ওপর ভারী বেনারসি, গ্রীষ্মের গরম সব মিলিয়ে দম বন্ধকর অবস্থা। সবাই সিরাজী মঞ্জিলের নতুন বউ দেখতে এসেছে। সকলেই কাকনের রুপ দেখে মুগ্ধ হলো। কাকনের রূপের প্রশংসা করছে। কাকনের কথাবার্তা আর নমনীয়তায় সকলেই মনে-প্রাণে কাকন কে পছন্দ করলো এ যেন রুহুলের জন্য যোগ্য বিবাহিতা স্ত্রী।
কিছুক্ষণ পর উপস্থিত হলো ফাতিমাসহ কাকনের মহিলাশালার সকল মেয়েরা। কাকন উঠে জড়িয়ে ধরলো ফাতিমাকে। ফাতিমাসহ সকলেই আজ এক অন্য কাকন কে দেখলো। কে বলবে এই সেই মহিলাশালার কাকন। একদম সিরাজী মঞ্জিলের গিন্নীদের মতো লাগছে।
কাকন ফাতিমাকে জড়িয়ে ধরেই কেদে দিলো।এক দিনের ব্যবধানে দুজনেরি মনে হলো যেন একযুগ পর দেখা। ফাতিমা বললো,” কাকন,মা আমার কান্দে না,,দেখ আমি তো চইলা আইছি। তুই কি এইখানে কষ্টে আছা যে কান্দোস,,থাম মা আমার।”
ফুল কাকনের কাধে হাত রেখে বললো,”কাকন কান্না থামা,,তরে দেখার জন্যই তো আইছি আমরা। দেখি চোখ মোছ।”
রিতা হাসতে হাসতে কাকন কে জড়িয়ে ধরে বলল,” “বা রে কাকন তরে একদম রানীর মতো লাগতাছে।”
কাকন চোখ মুছলো।হেসে দিলো রিতার কথায়। তারপর কাকন সকলের সাথেই কথা বললো।
–হইছে এখন সক্কলে বইসেন ভবির কাছে। কান্নাকাটি বন্ধ করেন।” সামিয়ার কথায় সকলে বসলো।ফাতিমা সিরাজী বাড়ির মহিলাদের সালাম দিলো।
ফাতিমা দুলাল সিরাজীর স্ত্রীকে সালাম করে পায়ের কাছে বসেই বললেন,” আম্মা,,আইজ কি কাকন রে আমার লগে নিয়া যাইতে পারুম আমি, আপনে অনুমতি দিলে নিয়া যাইতাম? ”
–“না,যেহেতু নিয়ম মত সুয়ামির ও যাওয়া লাগে রুহুল তো যাইতে পারবো না মহিলাশালায়।তাছাড়া আরও মাইয়ারা থাকে ওইখানে আমার নাতি আর নাতি বউ রে পাঠামু না।”
মন খারাপ হয়ে গেলো ফাতিমা আর কাকনের। ফাতিমা বুঝতে পারলো সে চাইলেও আর কখনো মুখ ফুটে কাকন কে নিজের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলতে পারবে না। মুখে মিথ্যে হাসি টেনে বললো,”জি সিরাজী আম্মা,,,আপনে যা কইবেন তাই হইবো।
কাকনের খুব বলতে ইচ্ছে করছে আমি যাবো।দয়া করে আমাকে যেতে দিন দাদিমা। কিন্তু মনের কথা জিভ অব্দি টানতে পারলো না কাকন। নববধুর মুখ ফুটে কিছু বলা যে বেমানান।
_____________________
সামিয়া সিড়ি বেয়ে নিজের কক্ষে যাচ্ছিলো। বকুল সামিয়ার হাত ধরে একপ্রকার জোর করেই নিজের কক্ষে নিয়ে গেলো। সামিয়া ভয় পেয়ে গেলো বললো,
–“আ,,আপনি দরজা আটকাইলেন কেন”
–” কাল থেকে আমাকে এভাবে এড়িয়ে যাচ্ছো কেন তুমি,,তুমি বোঝো না কতটা চাই আমি তোমাকে”
বকুলের এমন কথায় ভড়কে গেলো সামিয়া।
–দেখেন ভাই দরজা খোলেন, এইভাবে আমারে নিয়া এক কক্ষে আছেন লোক জানাজানি হইলেই কেলেংকারী হইয়া যাইবো। আর তাছাড়া দাদাজান জানলে আপনের নিজের ই বিপদ।”
–“হোক বিপদ। আমি কিছুই ভয় পাই না।” বলেই সামিয়ার হাত ধরলো। তারপর আবার ও বললো,”আমি তোমাকে ভালোবাসি সামিয়া, বিবাহ করতে চাই। ভয় নাই আমি রুহুলকে বলেছি আমার মনের কথা। আশা করি ওর পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি নাই। আজ আমি চলে যাবো কিন্তু যাওয়ার আগে তোমায় নিজের মনের কথা বলে গেলাম যাতে তোমার হৃদয়ে অন্য কাউকে জায়গা না দিতে পারো।[লেখিকা স্রোতস্বীনি] আজ চলে যাবো ঠিক ই কিন্তু আল্লাহ তায়লা ভাগ্যে রাখলে আগামিবার যখন আসবো আব্বা-আম্মা কে নিয়ে আসবো আর তোমার আমার কাবিন করে তারপর ই যাবো।শুধু বলবো অপেক্ষা করতে পারবে তো আমার।”
সামিয়ার যেন মাথা শুন্য শুন্য লাগছে। লোকটা তাকে এত করে চায়। ইচ্ছে তো করছে সায় দিতে কিন্তু দাদাজান আর ভাই দের ভয়ে বলার সাহস পাচ্ছে না সামিয়া।
বকুল আবারো বলল,”তোমার উপর নির্ভর করছে আগামীতে আমার এবাড়িতে আসা। তোমার মতামত শুধু একবার জানাও বিশ্বাস করো সবাইকে মানিয়ে নেবো”
বকুলের চোখে অসীম ভালোবাসা দেখে দিধায় পড়লো সামিয়া।কিন্তু বকুল যে ওর উত্তরের অপেক্ষা করছে। এ কয়দিনে তো সামিয়ার ও বকুল কে ভালো লেগেছে।সামিয়া মাথা নিচু করেই মাথা উপর-নিচ করে সম্মতি জানালো। বকুল মুচকি হেসে সামিয়াকে আলিঙ্গন করতে চাইলো ওমনি সামিয়া দৌড়ে দরজা খুলে পালালো। (লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি)
বকুলের আজ পরিপুর্ণ মনে হচ্ছে। এবার শুধু বাবা-মাকে রাজি করানোর পালা। তারপর প্রস্তাব দেবে দুলাল সিরাজীর কাছে। তারপর সামিয়া কে সে নিজের রাজ্যে নিয়ে যাবে। এখন রুহুলের সাথে দেখা করে রওনা হতে হবে। ট্রেন ছাড়বে ছয়টায়। বকুল রুহুলের সাথে দেখা করে বিদায় নেবে সিরাজপুর থেকে । কিন্তু তবুও মন টা খারাপ ই লাগছে প্রেয়সী কে ছেড়ে যাওয়ার বেদনায়।এসেছিল বন্ধুর বিয়ে খেতে উল্টো নিজের বিয়ের সানাই বাজাতে ইচ্ছে করছে।
__________________________
ফাতিমাসহ সকলে খাওয়া দাওয়া করে কাকনের থেকে বিদায় নিতে এলো। কবে আবার কাকনের সাথে দেখা হবে তার তো নিশ্চয়তা নেই। বুকে পাথর চাপা দিয়ে বিদায় নিতেই হবে। কাকন চাইলেও ফাতিমা কে নিজের কাছে রাখতে পারবে না। ফাতিমা কাকন এর থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।
ফাতিমা সহ সকলে সিরাজী মঞ্জিলের গেইট অতিক্রম করবে তখন রুহুল এসে ডাক দিলো ফাতিমাকে।রুহুল সালাম দিয়ে সভ্য আচরণ করলো। রুহুলের কথা এবং আচরণে ফাতিমার মনে কিছুটা সুখ অনুভব হলো এটা ভেবে যে রুহুল তার কাকন কে ভালো রাখবে। যখন খুশি তখন হয়তো কাকন কে দেখতে আসতে পারবে না কিন্তু কাকন সুখে থাকলে দূর হতেই ফাতিমার শান্তি। ফাতিমাসহ সকলে চলে গেলো মহিলাশালার উদ্দেশ্যে।
কাকন বসে আছে আর যারা কাকন কে দেখতে আসছে তাদের কে কাকন পান বানিয়ে দিচ্ছে। এটা একপ্রকার নিয়ম বলা যায়। বয়স্ক মহিলারা কাকন কে নানা প্রশ্ন করছে আর কাকন উত্তর দিচ্ছে। আর যাওয়ার আগে হাতে করে একটা পান নিয়ে যাচ্ছে।
রুহুল অন্দরমহলে প্রবেশ করেই বিব্রতবোধ করলো। এত মেয়ে মানুষের ভীড়ে সত্যি তার অসস্তি লাগলো। তবুও বিবিজান কে এক পলক না দেখলে যে তার হৃদয়ের ব্যাকুলতা কমবে না। কষ্টে বসার ঘরে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো। দরজার কাছে দাড়িয়েই কাকনের হাসিমাখা মুখ দেখে আবারো তার হৃদয়ে সুখের পায়রা উড়তে শুরু করলো। সিদুর রঙা শাড়ি তে আবারো বউ এর সাজে রূপবতী কাকন এর উপর চোখ ফেরানো দায় হলো রুহুলের।পলকহীন ভাবে তাকিয়েই রইলো যেন এক ঘোরে চলে গেছে সে। সকল মেয়েরা উচ্চস্বরে হেসে দিলো রুহুলের এভাবে তাকিয়ে দেখে। কাকন ঘর ভর্তি মানুষের সামনে খুব লজ্জা পেলো। তার স্বামীর এরকম আচরণ করে।যেন সবসময় কাকনকে লজ্জায় ফেলতে প্রস্তুত থাকে।
সকলের হাসিতে রুহুল থতমত খেয়ে গেলো।
রুহুলের দাদিমা বলে উঠলো, “কি রে মানিক মাইয়া গো মধ্যে কেন তুই, যা বাইরে যা। বউ দেহার জন্য সারারাইত পইড়া আছে “।
আরেকদফা হাসির ধ্বনি বাজতে শুরু করলো। কাকনের এখন মাটি ফাক করে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে। রুহুল সকলের সামনে লজ্জাবোধ করলো। লজ্জায় মাথা চুলকিয়ে চলে গেলো বাইরের উদ্দেশ্যে।
অন্দরমহল থেকে বের হওয়ার পথেই বকুলের সাথে দেখা হলো রুহুলের।বকুল বন্ধু কে আলিঙ্গন করে বললো ” রুহুল আজ আমাকে চলে যেতে হবে, বিবাহিত জীবন সুখের হোক তোদের, আমি চললাম”
(লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি)
রুহুল খেয়াল করলো বকুল মনমরা হয়ে আছে। তার আর বুঝতে বাকি রইলো না কেন হাসি খুশি বন্ধু বকুলের এমন দশা। তবুও বন্ধুর চলে যাওয়ার কথা শুনে মন টা ভীষণ খারাপ হলো রুহুলের। এইতো সেদিন এলো অথচ আজ ই চলে যেতে হবে। রুহুল হাত ধরে বললো, ” সাবধানে যাস আর মাঝে মাঝে চিঠি লিখিস। খুব মনে পড়বে তোর কথা ”
–” সে তো অবশ্যই দেবো। আজ তাহলে আসি ”
রুহুল বকুল কে এগিয়ে দিতে চাইলো। বকুল না করা সত্ত্বেও নিজে উদ্দ্যগে নিজেদের গাড়িতে করে এগিয়ে দিতে চাইলো। বকুল সিরাজী মঞ্জিলের গেইটের কাছে যেয়ে একবার পিছে তাকালো। চারদিকে চোখ বুলালো হয়তো শেষবারের জন্য সামিয়া কে দেখতে পাবে কিন্তু সে ব্যার্থ হলো সামিয়া নেই।
রুহুল এর ডাকে উঠে পড়লো গাড়িতে। ছাউনিহীন গাড়িতে চড়ে চললো স্টেশনের পথে। গাড়িতে পিনপিন নিরবতা। বকুলের মন মরা অবস্থায় করুনা হলো রুহুলের। কিন্তু দাদাজান এর অনুমতি ব্যাতিত রুহুল সামিয়া কে বকুলের হাতেও তুলে দিতে পারবে না। বিয়ের ঝামেলা শেষে দাদাজান কে জানাতেই হবে।এখন বন্ধুকে শান্তনা তো দেওয়া যেতেই পারে। রুহুল গাড়ি স্টেশনে থামলে দুজনেই নামলো। রুহুল এবার বকুল কে বললো, “মন মরা হয়ে থাকিস না তোকে বড্ড অচেনা লাগছে। আমি আমার বন্ধু বকুল ছাড়া অন্য কারো সাথে বোন বিয়ে দেবো না। ”
রুহুলের কথায় খুশিতে গদ গদ করে উঠলো বকুল।যেন গুপ্তধন খুজে পেয়েছে।বকুল বললো,
–“সা’লা সারাজীবন আমাকে তুই সা’লা বলেছিস অথচ আজ দেখ তুই ই আমার সা’লা হলি ”
–সম্মান দিয়ে কথা বল সম্পর্কে আমি তোর অনেক বড়। ”
–“তুই আমার বন্ধু বন্ধুই থাকবি”
ট্রেন চলে এসেছে তাই বকুল চললো নিজ যাত্রায় আর রুহুল হেসে বিদায় জানালো বন্ধু কে।
কিছুদুর আসার পর কেউ পিছন থেকে রুহুলকে জাপ্টে ধরলো। রুহুল দেখলো এটা আর কেউ নয় বকুল। বকুল হাপাতে হাপাতে বললো, “ধন্যবাদ বন্ধু তোর এই ঋণ কোনোদিন ভুলবো না। খুব শীঘ্রই মা-বাবা কে নিয়ে আসবো।
রুহুল বললো, ” বন্ধুকে ধন্যবাদ দেওয়া শিখে গেছিস বাহ। যাহ তোর ট্রেন ছেড়েছে। ”
বকুল হেসে দৌড়ে চলন্ত ট্রেনে উঠে গেলো। দরজায় দাড়িয়ে হাত নেড়ে বিদায় জানালো। রুহুল ও বিদায় দিয়ে গাড়ি নিয়ে চললো সিরাজী মঞ্জিলের উদ্দেশ্যে।
হয়তো ভাগ্যে থাকলে আবারও দেখা হবে হাসিমুখ নিয়ে রুহুলের সাথে।
__________________________
সারাদিনের ধকলে কাকন বেশ ক্লান্ত। সাথে মন টাও খারাপ করছে বিয়ের আগে শুনেছিল বৌভাতের দিন মেয়েরা নিজ বাড়িতে যায় অথচ আজ কাকনের নিজ বাড়ি নেই বলে কাছের মানুষদের কাছে যেতে পারলো না। মন মরা হয়েই সকল গয়না খুলছিল কাকন। দরজা লাগানোর আওয়াজে পিছনে তাকালো। দেখলো রুহুল এসেছে। আবারো লজ্জা এসে ঘিরে ধরলো কাকন কে। মাথার আচল ঠিক করে নিরবে অলংকার খুলে গয়নার বাক্সে রাখলো।লেখিকা স্রোতস্বীনি। রুহুল এসে কাকনের পাশে বসতেই কেপে উঠলো। রুহুল কাকনের দিকে অগ্রসর হলো। কাকন যত পিছাতে লাগলো রুহুল ততই আরো নিকটে যেতে শুরু করলো। কাকন উঠে যাবে ওমনি রুহুল কাকনকে হাত ধরে নিজের কোলে বসালো। কাধে নিজের থুতনি রেখে বললো, “আমাকে দেখলেই এত দূরে সরে যান কেন বিবিজান। বোঝেন না কেন আপনাকে একপলক দেখার তৃষ্ণায় আমি কাতর হয়ে থাকি”
কাকনের হৃদযন্ত্র যেন দৌড় প্রতিযোগিতা দিয়েছে। থামার নাম ই নেই। কাকনের এমন অস্থিরতা দেখে রুহুল ছেড়ে দিলো। গ্লাসে রাখা পানি ঠকঠক করে পান করলো কাকন। কাকনের এমন ভীতুরুপ দেখে রুহুল ঘর কাপানো হাসি দিলো। হেসে হেসে বললো,”আপনার বয়স কত বিবিজান? ”
–“প,,পনেরো বছর সাত মাস।”
–” সংসার করার জন্য এতটাও ছোট নন আপনি।আপনার বয়সের মেয়েরা জননী হয়ে গেছে আর আপনি আমাকে দেখলেই ঘেমে একাকার হয়ে যান,,কাপাকাপি শুরু করে দেন এটা কিন্তু বেমানান। আমাকে কি এখনো গ্রহণ করতে পারেন নি? ”
কাকন দৃষ্টি নত রেখেই বললো, “আমি গ্রহণ করেছি”
–“তাহলে আমাকে দেখলেই এত জড়তা কেন সৃষ্টি হয় আপনার “(লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি)
— “জা..জানি না আমি”
রুহুল খেয়াল করলো কাকনের নাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। মায়াবতীর মতো লাগছে।গরমে এমন পোশাকে সত্যি সকলেই নাজেহাল। রুহুল কাকন নিয়ে বিছানায় বসলো। নাকে জমা ঘাম গুলো রুমাল দিয়ে মুছে দিলো। মাথার কাপড় ফেলে খোপা খুলে দিলো। রুহুল কাকন কে বললো, “শাড়ি টা খুলুন বিবিজান ”
রুহুলের কথায় কাকনের চোখ বেড়িয়ে আশার দশা। –“মা,,মানে”
–“মানে আপনি এই শাড়িটি পরিবর্তন করে সুতি শাড়ি পড়ে আসুন। আজ রাতে আপনার সাথে চন্দ্রবিলাশ করবো। “।
কাকন যেন হাফ ছেড়ে বাচলো। রুহুলের কথা মতো সুতি শাড়ি পড়লো কাকন। রুহুল কাকনের হাত ধরে নিজের বিশাল বাড়ান্দায় নিয়ে গেলো। ঘর থেকে একটা মাদুর নিয়ে পাতলো বাড়ান্দার মাঝ বরাবর। কাকন কে বসিয়ে কাকনের কোলে মাথা রাখলো।
দুজনেই আকাশের চাঁদ দেখতে ব্যস্ত। রুহুল বললো,
–” জানেন বিবিজান এই ক’দিন রোজ রাতে এই বাড়ান্দায় সময় পার করেছি। আর আপনার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনেছি,আপনার কি আমার কথা মনে হয়েছে?”
কাকন চাঁদের দিকে তাকিয়ে আনমেই মুখ ফুটে সত্যি কথা বললো, “না আমি তো আমি বিয়েই করতে চাই নি তাই মনেও হয়নি”। (বলার পর কাকনের হুশ হল এ সে কি বলে ফেললো।)
রুহুল ভ্রুকুচকে বললো,”কেন আমি বুঝি খুব কুৎসিত, আপনার মতো রুপোবতীর সাথে বেমানান? ”
–“আপনি যথেষ্ট সুন্দর দেখতে।” বলেই জিভ কামড়ালো কাকন।লজ্জা লাগলো নিজ মুখে স্বামীর সৌন্দর্যের কথা বলে।
রুহুল কাকনের মুখ পানে চেয়ে লজ্জামাখা মুখ দেখলো।কাকনের হাত নিজের হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে বললো,”তাহলে বিয়ে করতে চান নি কেন?
–“আসলে আমি কোনোদিন ও বিয়ে করতে চাই নি। আমি সেবিকা হতে চেয়েছিলাম”
–“বাহ উত্তম চিন্তা।
–“জি”
দুজনেই চন্দ্রবিলাশে ব্যস্ত। কিছুক্ষণ পর রুহুল নেশালো সুরে বললো, “বিবিজান”
–“হুম ” (লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি)
রুহুল চাঁদের দিকে তাকিয়ে আবারো বললো, “ওই যে আকাশের চাঁদ টা দেখছেন ওই চাঁদ আর আমার বিবিজান দুজনেই এক। তাদের কোনো শাখা নেই। চাঁদ যেমন রাতের অন্ধকারে আলোর ছোয়া নিয়ে আসে আপনিও আমার বিষাদময় অন্ধকার জীবনে আলো নিয়ে এসেছেন। কখনো ছেড়ে যাবেন না তো আমাকে। আমি আবারো অন্ধকারে হারিয়ে যাবো। ”
রুহুল যখন কথা গুলো বলছিল কাকন রুহুলের দিকে তাকিয়ে ছিল। নিজের কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকা স্বামীর জীবনে কিসের বিষাদ ছিল।
কাকন আরেক হাত দিয়ে রুহুলের মাথায় হাত রাখলো। এই প্রথম মন থেকে রুহুল কে স্পর্শ করলো কাকন। একদিনেই লোকটার প্রতি যেন কাকন দুর্বল হয়ে পেড়েছে। একেই বোধহয় হালাল সম্পর্কের ভালোবাসা বলে।
___________________
ধরণীর বুকে যেমন আজ সুন্দর চাঁদ ভেসে আছে ঠিক তেমনি একজন মানুষ সিরাজপুরের নদীতে ভেসে আছে লাশ হয়ে। হয়তো সকালে সবার আগে চোখে পড়বে জেলেদের। তারপর, তারপর কি হবে??
চলবে…….
#দেবী
#Srotoswini_স্রোতস্বীনি
বিদ্রঃ দয়া করে কেউ কপি করবেন না। ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
®️ Srotoswini-স্রোতস্বীনি ✍️