#দৃষ্টিনন্দনে_তুমি
কলমে:লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:৮
হাসপাতাল থেকে সোজা ক্লিনিকে ছুটলো আবির। লাশের অবস্থা ভালো ছিল না। রিপোর্ট তৈরি করতে বেশ ঝামেলা হবে। মৃত্যুর কারণ বেশ ভয়ংকর। মেয়েটার উপরে অত্যাচার করা হয়েছে। আল্লাহ ভালো জানে কোন নর পিশাচের কাজকর্ম এগুলো। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আবির যখন কলেজের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো হঠাৎ একটা ছেলের দিকে ওর নজর আটকে গেলো। মহিত ওর ফুফাতো ভাই বাইক নিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আবির কৌতূহলী হয়ে ছেলেটার পাশে দাঁড়িয়ে পড়লো। গাড়ির দরজা দিয়ে উঁকি দিয়ে ছেলেটাকে ডাক দিতেই মহিত পেছনে ফিরে অমায়িক হাসি দিয়ে বলল,
>ভাইয়া তুই এখানে?
আবির ভ্রু কুচকে বলল,
> তুই ঢাকা শহরে কেনো? বাইক নিয়ে কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে কি করিস?
> ভাইয়া একটু দরকার ছিল। বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করছি। তুমি কোথায় যাচ্ছো?
> ক্লিনিকে যাচ্ছি। আচ্ছা থাক আমি যাচ্ছি।
আবির কথা বাড়ালো না গাড়ি ছেড়ে চলে আসলো। সারাদিনব্যাপী ঝামেলা শেষ করে বাড়ি ফিরতে ওর সন্ধ্যায় হয়ে আসলো। আপাতত আর কোনো কাজ নেই।
সারাদিন না খেয়ে বসে আছে হৈমন্তী। সকালবেলায় আবিরের ধমক শুনে খাওয়া দাওয়া বন্ধ। শুধু কান্নাকাটি করছে। আসমা বেগম খুব করে বুঝিয়েছে কিন্তু মেয়েটা বুঝোতে চাইছে না। আবিরকে কয়েকবার ফোন করা হয়েছিল কিন্তু ছেলেটা সুযোগ পাইনি। আবির হন্তদন্ত হয়ে বাড়িতে ফিরে চোখ চড়কগাছ। হৈমীর চোখ ফুলে গেছে। আসমা বেগম আবিরের সঙ্গে কথা বলছে না এড়িয়ে যাচ্ছে। অরিন হৈমীর কাছে বসে আছে। আবির রুমে ঢুকে আড় চোখে বারবার ঘুরে ঘুরে দেখছে। সকালবেলার বিষয়টা একদম মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে কি অদ্ভুত। হৈমন্তীকে কাঁদতে দেখে আবির ভ্রু কুচকে বলল,
> অরিন রিয়েলিটি শো চলছে?
অরিন বিরক্তি হলো আবিরের কথা শুনে। ঝাড়ি দিয়ে উত্তর দিলো,
> সব তোমার দোষ। তুমি ওকে বকেছো কেনো? সারাদিন খাওয়া দাওয়া বন্ধ। শুধু কেঁদেছে। ওর ভাইয়া শুনলে জানো কি হবে?
আবির অবাক হয়ে বলল,
> আচ্ছা হয়েছে টা কি সেটা তো আগে বল? তারপর না হয় বুঝবো।
> সকালে ও ইচ্ছে করে তোমার গায়ে ডিম ছুড়েনি তবুও তুমি বকেছো।
অরিনের কথা শুনে আবির ভ্রু টান করে ঠোঁট গোল করে বলল,
> ও আচ্ছা। মহারানি এই জন্য কান্নাকাটি করে আমার বাড়িটা সাগর মহানগরের ডুবিয়ে দিচ্ছেন?আচ্ছা তুই যা আমি দেখে নিবো। আর শোন মহিত এসেছিল বাড়িতে?
অরিন ওষ্ঠে হাসি ফুটিয়ে বলল,
> এসেছিল তুমি যাওয়ার পরে। বলছিল এখানে থাকবে কিছুদিন।
> আচ্ছা যা।
আবির চিন্তিত হয়ে বাথরুমে চলে গেলো। অরিন রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। হৈমন্তী ফুলছে রাগে।এই লোকটাকে ও উচিৎ শিক্ষা দিয়ে তবে ছাড়বে। নয়তো দিনদিন ওকে অপমান করেই চলেছে। কিভাবে কি করবে ভাবতে ভাবতে আবির বেরিয়ে আসলো। টাওয়েল রাখতে রাখতে বলল,
> আহারে,বউটা যে আমার হাতে খেতে চেয়েছে এটাতো আর আমার বোন আর আম্মা জানেনা তাইনা? কাজকর্ম থাকে একটু বুঝো না কেনো? দ্রুত আসো।
আবিরের কথা শুনে হৈমন্তী ধুপ করে জ্বলে উঠলো। লোকটার নেকামি মার্কা কথাবার্তা ওর সহ্য হয়না। ডাকাত একটা। হৈমন্তী মনে মনে ইচ্ছা মতো বাকবকি করলো আবিরকে। ওর ইচ্ছে নেই এই লোকটার সঙ্গে কথা বলার। তাই মুখ ঘুরিয়ে থাকলো। আবির বুঝলো এভাবে হবেনা তাই পাশে বসে জোর করে হৈমন্তী মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলল,
> খাবে না বুঝি?
হৈমন্তী আবিরের হাত ঝাড়া দিয়ে ফেলে দিয়ে মুখটা কঠিন করে বলল,
> আমার থেকে দুরে থাকবেন। একদম কাছে আসার চেস্টা করবেন না। স্পর্শ করা তো বহুদূর।
হৈমন্তীর ব্যবহারে আবিরের মেজাজ খারাপ হলো। এইটুকু একটা মেয়ের ব্যবহার এতো ঝাঝালো কেনো বুঝলো না। রাগ নিয়ন্ত্রণ করে উত্তর দিলো,
> আমাকে কে আটকাবে?ধর্ম বা আইন বলো কোথাও কিন্তু কোনো বাধা নেই তোমার কাছে আসার জন্য। রাগিয়ে দিও না ভুলভাল কিছু করে বসবো তখন দোষারোপ করবে। চুপচাপ খেয়ে নিবে। শুনো আমাদের পরিবারের মান সম্মানের কথা ভেবেই আমি তোমাকে মেনে নিয়েছি।তাছাড়া তোমার মধ্যে এমন কিছু নেই যেটা দেখে আমি তোমার জন্য পাগল হয়ে গেছি। ভেবেছিলাম তুমি ছোট তোমাকে মানিয়ে গুছিয়ে নিবো। কিন্তু তুমি মোটেও ছোট না। জিদ ধরে বসে আছো। আমি ডাক্তার,দেখতে শুনতে সুদর্শন। বিয়ে করতে চাইলে বউয়ের অভাব হবে না। তারা তোমার মতো এমন আচরণও করবে না। মির্জারা দুটো বিয়ের জন্য শুনেছি ফেমাস। আমার শাশুড়ি নাকি অবিবাহিত ছেলেকে ফেলে বিবাহিত ছেলেকে আবার বিয়ে দেওয়ার জন্য মাঝেমাঝে খেপে যায়। কিন্তু আমাদের এমন হয়না।
আবির শান্ত ভঙ্গিতে কথাগুলো বলে থামলো। হৈমন্তীর ভয়ানক কষ্ট হচ্ছে। আবির ওর মা কে নিয়ে খোটা দিয়েছে সেই সঙ্গে ওকেও অপমান করেছে। ও মধ্যে এমন কিছুই নেই যেটা দেখে ভালোবাসা যায়? হৈমন্তীর কান্না পাচ্ছে। কান্না আটকে ও পেছনে ঘুরে শুয়ে পড়লো। এই বাড়ির ভাত ও কিছুতেই মুখে তুলবে না। বাড়িতে ফিরেই তবে খাবে। আবির ওর মতিগতি দেখে জোরকরে তুলে ধরে বলল,
> কি হচ্ছে বলবে? কথা বলো ঝগড়া করো এভাবে চুপচাপ থাকার কোনো মানে হয়? আমি কথা শুনিয়েছি তুমিও শোনাও।
হৈমন্তী দাঁতে দাঁত চেপে উত্তর দিলো,
> কুকুরের কাজ কুকুর করেছে কামড় দিয়েছে পাই…
হৈমন্তী আর বাকিটা বলতে পারলো না। আবির ওর মূখের মধ্যে খাবার পুরে দিয়ে বলল,
> পচা পচা কথাবার্তা বলতে নেই বউ। তুমি না লেখাপড়া শিখছো? আমাদের হাতি বাহিনী নিয়ে আগামীকাল থেকে কলেজ যাবা। পড়াশোনা না লিখলে তোমাকে মানুষ করতে জীবন আমার শেষ হয়ে যাবে। আগে বোধবুদ্ধি শিখতে হবে। দুদিন পরে বাচ্চাকাচ্চা হবে এসব শিখলে আমার মান থাকবে?
হৈমন্তী মুখে খাবার নিয়ে ফেলে দিতে চাইলো কিন্তু অপচয় করা ঠিক হবে না ভেবে খেয়ে নিলো। আবির দ্বিতীয়বার খাবার দিতে দিতে বলল,
> দ্রুত খাবে। ছুরি আর বস্তুা কিন্তু ঘরেই আছে। ডাক্তার মানুষ এসব কিন্তু বেশ ভালো পারি। সুন্দর করে পিচপিচ করে কেটে খেয়ে ফেলবো। দারুণ মজা হবে।
আবির কথাটা বলে থামলো। হৈমন্তী ভ্রু কুচকে আবিরের দিকে তাঁকিয়ে আছে। লোকটা সত্যিই ভয়ানক। ও আর ভাবতে পারলো না চুপচাপ খেয়ে নিলো। আবির খাওয়ানো শেষ করে বাইরে বের হলো। হৈমন্তীর সামনে পরীক্ষা। বইপত্র আনা যাবে কিন্তু কলেজে পাঠানো নিয়ে বেশ চিন্তিত। বাড়িতে জানলে অশান্তি হবে। তবুও ঠিক করলো দু চারজন লোক দিয়ে ওকে ক্লাসে পাঠাবে। যদিও বিষয়টা জটিল হয়ে উঠবে তবুও এর চেয়ে ভালো বুদ্ধি আর পেলো না।
☆☆☆
আমেনা বেগমের উপরে প্রচণ্ড ক্ষেপে আছে চয়নিকা। মাসুদ বাড়িতে ফিরছে। বিয়ের অর্ডার হয়েছে বছর খানিক আগে তবুও একটু গুছিয়ে নেওয়ার জন্য এই প্রতিক্ষা। মেয়ের ছবি ছাড়া কেউ স্বচক্ষে তাকে দেখতে পারেনি। আমেনা বেগম মাসুদের ফিরে আসার কথা শুনে আয়োজন করতে ব্যস্ত। চয়নিকা বাচ্চা নিয়ে কাজকর্ম তেমন করতে পারছে না এতেই উনি চটে গেছে। রাজীব বুঝিয়ে বলেছে বাড়ির কাউকে কিছু করতে হবে না তবুও আমেনা বেগম শুনছে না। পরের লোক দিয়ে কাজ হয়না। ভদ্রমহিলা নিজে করছে না কিন্তু চয়নিকার উপরে একগাদা কাজ চাপিয়ে দিচ্ছে। চয়নিকা পরিস্কার করে জানিয়ে দিয়েছে এভাবে অতিষ্ঠ করলে বাবার বাড়িতে চলে যাবে। রাজীব এতেই কাবু। মাকে বুঝাচ্ছে চয়নিকা চলে গেল বাড়ির কাজকর্ম দেখাশোনা কে করবে। ওর উপরে কোনো চাপ দেওয়া ঠিক হবে না। আমেনা বেগম ছেলের কাছে মাথা নাড়িয়ে চুপচাপ ঘরেবসে ফুলছে। ছেলে যে বউকে কিছুই বলবে না এটা উনি জানেন। তাই ছেলের কাছে বউয়ের নামে কিছুই বলেন না। ঝগড়া ঝামেলা যায় হোক কুটকাচালি চলে না।
☆☆
নতুন বাড়ির কাজকর্ম মোটামুটি ঠিকঠাক। আরাফাত লোকজন নিয়ে আসবাবপত্র কিনে রুম সাজিয়ে ফেলেছে। কোথাও কোনো ঘামতি নেই। রাহেলা হকের থেকে বিদায় নিয়ে নিজের বাড়িতে এসে উঠতে আর কোনো বাধা নেই। ছোঁয়ার মন খারাপ। রাহেলা হক আরাফাতকে যথেষ্ট সাহায্য করছে। কয়েকদিনের মধ্যেই মাসুদ বিয়ে করে এখানে উঠবে। রাজীব আসতে পারবেনা। এলাকায় থাকাটা ওর দরকার। মিটিং মিছিল লেগেই থাকে। ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। রাজীবের জন্য চয়নিকা কোথাও যেতে পারে না। মায়ের বাড়িতে যাওয়ার কথা শুনলেও আমেনা বেগম জ্বলে উঠেন। বউমাকে উনার পছন্দ হোক বা না হোক চোখের আড়াল করতে উনি নারাজ। তাছাড়া চয়নিকা না থাকলে সব এলোমেলো হয়ে যায়। এই ব্যাপারে রাজীব মাকে সমর্থন করে। কোথাও যাওয়ার হলে রাজীব সময় করে নিয়ে যায় আবার নিয়ে আসে। সকলের কথা চিন্তা ভাবনা করেই রুম সাজিয়ে তুলছে আরাফাত। ছোঁয়া এসেছে মায়ের সঙ্গে তবে সে কাজকর্ম কিছুই পারে না। তবে ভুল হলে ফোড়ন কাঁটতে উস্তাদ। আরাফাত ভেবেছিল এই মেয়েটাকে ধাক্কা দিয়ে বাইরে বের করে দিবে কিন্তু দিতে পারছে না। দাঁত চেপে সহ্য করছে। দুদিন অরিনের সঙ্গে দেখা হয়েছে। আরাফাত পালিয়ে এসেছে। মেয়েটা প্রচণ্ড রকমের ছ্যাছড়া। ওকে দেখলেই টেনে ধরার চেষ্টা করে। মেয়েটার মনে কিছু একটা চলছে নাকি এমনিই সরল বুঝতে পারছে না। আরাফাত বুঝতেও চাইছে না। করো মন পড়তে হলে ফেঁসে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। মানুষের জীবনে প্রেম বারবার আসলেও ভালোবাসা বারবার আসে না। হৃদয় দিয়ে শুধু একজনকেই চাওয়া যায়।
☆☆
ডাইনিং রুমে বসে আছে হৈমন্তী। টিভিতে বাংলা সিনেমা চলছে। পাশে অরিন আর আসমা বেগম এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। পুরাতন দিনের বাংলা সিনেমা। “ভাত দে” সাবানা ম্যাডামের মারাত্মক অভিনয়ে আসমা বেগম ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। অরিনের চোখেও পানি। বিষয়টা এভাবে সিরিয়াস হয়ে যাবে হৈমন্তী বুঝতে পারেনি। বিনোদনের জন্য সিনেমা দেখতে বসে দারুণ ভাবে ফেঁসে গেছে বুঝতে পারছে। চ্যানেল পরিবর্তন করা কঠিন। আবার উঠেও আসা যাবে না। নিরুপায় হয়ে বসে থাকতে হচ্ছে। হৈমন্তীর করুণ অবস্থা। এমন সময় মহিত এসে হাজির হলো। হৈমন্তী ঘোমটাটা আরও একটু খানি টেনে নিয়ে বসলো। মহিত সোফায় বসতে বসতে বলল,
> অরিন চ্যানেল চেঞ্জ কর।এসব ভাত দে ছবি এখন আর চলে না। কি সব ছবি দেখছিস না।
অরিন কাঠ হয়ে বসে আছে। কথা বলার অবস্থায় নেই। হৈমন্তী মলিন হেসে বলল,
> আম্মা ছবি দেখে কাঁদতে আছে? ওদের ভাতের অভাব নেই শুধু অভিনয় করছে এই যা। তুমি শুধু শুধু কাঁদছো। শরীর খারাপ করবে।
আমেনা বেগম কাঁদতে কাঁদতে উত্তর দিলেন,
> মারে এমন সময় ছিল যখন মানুষের প্রচুর অভাব ছিল। এখন হয়তো ভাতের জন্য মানুষ মারা যায় না তবুও রুটি রুজির জন্য মানুষ কতটা কষ্ট করে। যার আছে তার অভাব নেই আর যার নেই তার কিছুই নেই।
আমেনা বেগম দীর্ঘনিশ্বাস ফেললেন। হৈমন্তী বুঝতে পারলো এভাবে হবে না। তাই মিনমিনে কন্ঠে বলল,
> ক্ষুধা পেয়েছে আম্মা।
> আচ্ছা চল।
হৈমন্তী আমেনা বেগমকে নিয়ে উঠে আসলো। ওদের সঙ্গে মহিতও আসলো। খাবার টেবিলে ও সোজাসুজি হৈমন্তীর সামনে গিয়ে বসে পড়লো। আমেনা বেগম দুজনকেই খাবার দিয়ে রান্নাঘরের দিকে এগোলেন। হৈমন্তী মাথা নিচু করে খাবার মুখে নিতেই মহিত ওষ্ঠে হাসি ফুটিয়ে বলল,
> তোমাকে দেখে আমার খারাপ লাগে। এইটুকু একটা মেয়ে ভাইয়ার মতো মানুষের বউ। ভাবা যায় না। তুমি কিভাবে আছো ওর সঙ্গে?
হৈমন্তী ভ্রু কুচকে ফেলল। খাবার মুখে নিয়ে গিয়েও থামিয়ে দিয়ে বলল,
> ভাইয়া মনের মিলমিশ থাকলে বয়স কোনো ব্যাপার না।
> তোমাদের মনের আবার মিলমিশ। ভাইয়া একটা মেয়েকে পছন্দ করতো জানো?তোমাকে বিয়েটা তো ও চাপে পড়ে বাধ্য হয়ে করেছে। মেয়েটা এখনো ভাইয়ার জন্য পাগল। তুমি সত্যিই ঠকেছো।
হৈমন্তী বুকের মধ্যে ধুপ করে উঠলো। আবিরের বলা কথাগুলো বারবার কানের মধ্যে বাজতেই আছে। লোকটা এই জন্য ওকে ওরকম কথাগুলো বলেছিল। অজান্তেই হৈমন্তীর চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো। মহিত চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে। হৈমন্তীকে চুপচাপ দেখে বলল,
> শুধু সম্মান বাঁচানোর জন্য বাধ্য হয়ে নিজের ভালোবাসাকে বিসর্জন দিয়েছে। তোমাকে মানিয়ে নিতে কষ্ট হবে এটাই স্বাভাবিক। কিছু মনে করোনা।
হৈমন্তী খাবার রেখে উঠে পড়লো। নিজকে ছোট ছোট মনে হচ্ছে। খাওয়া গলা দিয়ে নামবে না। মহিত ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকল।
হৈমন্তী পাত্তা না দিয়ে রুমে এসে বিছানায় ধপ করে বসে পড়লো। আবির ল্যাপটপ নিয়ে বসে ছিল হঠাৎ হৈমন্তীকে এমন উদাসীন দেখে খোচা দিয়ে বলল,
> সাবানা ম্যামের দুঃখে তুমিও কি দুখী হয়ে গেলে?চোখ মুখের অবস্থা এমন কেনো?
হৈমন্তী উত্তর দিলো না সোজাসুজি বলল,
> আমাকে যেতে দিচ্ছেন না কেনো? আপনার সঙ্গে আমি থাকবো না।
আবির ভ্রু কুচকে বলল,
> আবার সেই কথা? যেতে তো পারবে না তারচেয়ে আসো তোমাকে খুন করে রাস্তা তৈরি করে ফেলি।
> তবে তাই করুণ নয়তো আমি কিন্তু নিজেই কিছু করে ফেলব।
আবির দ্রুত উঠে এসে হৈমন্তীর হাত ধরে বিরক্তি নিয়ে বলল,
> কি করবে তুমি?
হৈমন্তী মুখটা কঠিন করে উত্তর দিলো,
> হয় যেতে দিবেন নয়তো আমি সুইসাইড করবো। দরকার নেই আপনার মানিয়ে নেওয়ার। সব শুনেছি আমি।
আবির রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না হৈমন্তীর হাতটা নিজের মুঠোয় শক্ত করে ধরে বলল,
> খুন করে ফেলবো আজেবাজে কথাবার্তা বললে। ঘটে বুদ্ধি থাকলে এসব ফালতু কথাবার্তা বলতে না। শুনো মহিতের সঙ্গে যদি আর একটাও কথা বলেছো আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। কিছু বলছি না বলে ভেবেনো কিছু বলবো না।
হৈমন্তী শব্দ করে কেঁদে ফেলল। কি এক দুর্বিষহ জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। কোনো সমাধান নেই আছে শুধু জটিলতা। ওকে কাঁদতে দেখে আবির ওকে দুহাতে বুকের সঙ্গে আগলে নিয়ে বলল,
> সরি সরি প্লিজ কান্নাকাটি বন্ধ করো। আম্মা জানলে ঝামেলা হবে। এমনিতেই সকাল থেকে কথা বলছে না। জানতে পারলে পিটাবে। বরকে মার খাওয়াবে নাকি?
হৈমন্তী ফুপিয়ে ফুপিয়ে উঠছে। আবিরে ওকে ছেড়ে দিয়ে বলল,
> তুমি ফিরে গেলে আমাকে আজীবন বউ ছাড়া কাটাতে হবে। লোকজন আমার দিকে আঙুল তুলবে।সন্দেহ করবে পুরুষের আড়ালে কোনো নারী কিনা। ঠিক হবে বলো?
> আমি চলে গেলে আবার বিয়ে করবেন যাকে আপনি ভালোবাসেন। পছন্দ করেন। জোরজবরদস্তি করে মানিয়ে নিয়ে সংসার হয়না।
আবির ভ্রু কুচকে বলল,
> মহিত বলেছে তাইনা?
হৈমন্তী মাথা নাড়িয়ে না বলল। কিন্তু আবির শুনলো না। উঠে বাইরে চলে গেলো। হৈমন্তী কেঁদে ফেলল। বাইরে তর্কাতর্কির আওয়াজ আসছে হয়তো আবির মহিতকে বকাবকি করছে।কিন্তু ছেলেটা তো খারাপ কিছু বলেনি।
(চলবে)