দৃষ্টিনন্দনে তুমি পর্ব ৩৫

0
483

#দৃষ্টিনন্দনে_তুমি
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:৩৫

গত এক সপ্তাহ আবির হৈমন্তীকে ক্যানবেরির দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরিয়ে দেখিয়েছে। প্রথমে গিয়েছিল পার্লামেন্ট হাউজ তারপর চুনাপাথর নদী,ক্যানবেরি কটেজ, ফসলের মাঠ, টিউলিপের বিশাল বাগান কিছুই বাদ রাখেনি। হৈমন্তী মুগ্ধ হয়ে দেখেছে। আবিরের উপরে ও মোটামুটি সন্তুষ্ট।ওদের সঙ্গে নায়রা আর জুলি গিয়েছিল। রোহান নতুন বউকে নিয়ে সিডনিতে গেছে শশুর বাড়িতে। ছেলেটা প্রথমে হম্বিতম্বি করলেও পরে মেনে নিয়েছে। মোটামুটি ওদের মধ্যে কোনো ঝামেলা নেই। কিন্তু হৈমন্তীর সঙ্গে ও কথা বলতে চাইছে না। ইগনোর করছে এটা নিয়ে হৈমন্তীর আক্ষেপ থাকলেও আবিরের নেই। মামাতো চাচাতো খালাতো যত রকমের ভাই আছে সকলের থেকে হৈমন্তীকে ও দূরে রাখতে চাই। বউকে লোকে বিরক্ত করবে আর ও সেটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবে এমনটা হবে না। হৈমন্তী শুধু ওর নিজের।সেখানে আর কোনো তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতি আবির সহ‍্য করবে না। হিংসা হয় প্রচুর। ঘুরতে ঘুরতে মাস পেরিয়ে গেছে। আবিরের ফিরে আসার দিন ঘনিয়ে আসলো। ওদিকে ওর ফুপা পুলিশের হাতে বন্দি তবে কেস চলছে। কিছুদিনের মধ্যেই কেস ফাইনালে চলে যাবে। আশাকরা যায় লোকটার ফাঁসি না হলেও সারাজীবন আর জেলের বাইরের আসতে পারবে না। আবিরের ক্লিনিক রমরমা চলছে। আরাফাত সামলে নিয়েছে। রাজীব মফস্বলে হাসপাতাল তৈরী করছে সাধারণ মানুষের জন্য। চালু হতে সময় লাগবে। আবির ওর একমাত্র ভরসা। শুধু নির্বাচনে দাঁড়ালেই হয়না সাধারণ মানুষের কথাও ভাবতে হয়। এই হাসপাতালে অতি সাধারণ মানুষের চিকিৎসা হবে। রাজীবের নির্বাচনের ফিল্ড ভালো। আশাকরা যায় আগামী নির্বাচনে আবারও ক্ষমতাই ফিরবে। আরাফাত রাতদিন এক করে ভাইয়ের জন্য খাটছে। ওরা মফস্বলে ফিরে গেছে। মাসুদের যাওয়া হয়নি। আক্ষেপ নিয়ে ঢাকায় পড়ে আছে।। তবে ছুটির জন্য আবেদন করবে। নির্বাচনের কিছুদিন আগে ও ফিরে যাবে। রাজনীতির প্রতি ওর নেশাটা ক্রমশ বৃদ্ধি হয়েছে ভাইকে দেখে। তবে আফসোস করে না। অরিন মির্জা বাড়িতে আরাফাতের সঙ্গেই থাকে। ওদের সম্পর্কটা এখন স্বাভাবিক। কোনো জড়তা নেই। আরাফাত সারাদিন কর্মব্যস্ততার শেষে ফিরে আসে ওর আছে।এদিকে আবির পড়েছে মহা বিপদে। অষ্ট্রেলিয়া থেকে ফিরে যাওয়ার ক্ষণ উপস্থিত হচ্ছে কিন্তু ওর একা ফিরতে মন চাইছে না। হৈমন্তীর কি জানি হয়েছে সে বিন্দাস আছে। ঘুরছে ফিরছে আর নতুন নতুন রূপে সেজে আবিরকে চমকে দিচ্ছে। আবিরের মনে কু ডাকছে। বউকে এভাবে রেখে গিয়ে যদি হারিয়ে ফেলে এই ভয় ওকে পাগল করে দিচ্ছে। তবুও কিছুই করার নেই। মেয়েটার ভবিষ্যৎ নষ্ট করার অধিকার ওর নেই। শেষমেশ উপাই না পেয়ে আবিরের বাংলাদেশের ফেরা হলো না। তিনটা বছর নাককান বন্ধ করে ওর এখানেই থাকতে হবে এমন একটা সিদ্ধান্ত নিলো। দরকার হলে মাঝেমাঝে গিয়ে দেশ থেকে ঘুরে আসবে। কথাগুলো ভেবে ও ফুপার সঙ্গে কথা বলে এখানকার হাসপাতালে জয়েন করে ফেলল। হৈমন্তীর সেটা অজানা। আবির সারাদিন হাসপাতালে থেকে সব ঠিকঠাক করে রাতে ক্লান্ত শরীরে ফিরে আসলো। হৈমন্তী তখন ফোন নিয়ে ব‍্যস্ত। আবিরকে দেখে ও ফোন রেখে এগিয়ে আসলো। প্রচণ্ড গরম পড়ছে। হৈমন্তী ওর দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলল,
> কোথায় ছিলেন সারাদিন?চলেই তো যাবেন তবুও দূরে দূরে থাকেন কেনো?
আবির পানির গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলল,
> কাজ ছিল হৈমী। তোমার ইউনিভার্সিটির সামনে দিয়ে ফিরলাম। তুমি ক্লাস করবে কবে থেকে?
হৈমন্তী মন খারাপ করে আবিরের কোলের মধ্যে ঢুকে গিয়ে বলল,
> আপনি বাংলাদেশ ফিরলে তবে ক্লাস করবো। আপনি জানেন আমার বেশ কিছু বন্ধু হয়েছে? নায়রা আপু আলাপ করিয়েছে। ভাবছি সিডনিতে ঘুরতে যাবো ওদের সঙ্গে। খুব মজা হবে বলুন?
আবির ভ্রু কুচকে ফেলল হৈমন্তীর কথা শুনে। কথা নেই বার্তা নেই এখানকার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে ফেলেছে মেয়েটা। মির্জা বাড়ির ছোট মেয়ের কিনা এতো এতো বন্ধু? শাশুড়ি আম্মার কথা ভেবেই আবির ঢোক গিলছে। আমেনা বেগম এসব পছন্দ করেন না। উনার মনে মেয়েরা মাটির মতো হবে।যাদের দৃষ্টি থাকবে মাটির দিকে। রোগ,শোক,ব‍্যাথা, যন্ত্রণা সহ‍্য করার অপরিসীম ক্ষমতা থাকবে তাঁদের মধ্যে। ওদের কোনো বাইরের বন্ধু থাকতেই পারেনা। উনি বিষয়টা ভালো চোখে দেখেন না বলেই হৈমন্তীর স্কুল কলেজে তেমন ভালো কোনো বন্ধু নেই। আবির কথাগুলো ভেবে বলল,
> আমার শাশুড়ি আম্মা জানলে হার্ট এটাক করবে হৈমী। দুদিনের মধ্যে এতো এতো বন্ধু জোগাড় করলে আমার কথা তোমার মনে থাকবে তো? আমার তো এবার ভয় করছে।
> বলেছিলাম তো একা রেখে যাবেন না। আপনি শুনছেন না। আমার মন টিকবে না তাই যাতে খারাপ না লাগে তাই এই ব‍্যবস্থা।
আবির হৈমন্তীকে দুহাতে আটকে নিয়ে বললো,
> আচ্ছা হৈমী তুমি আমি দুজনে যদি ছোট্ট একটা সংসার সাজাই কেমন হবে? আমি সারাদিন হাসপাতালের শেষ কাজ করে তোমাকে নিয়ে ইউনিভার্সিটি থেকে বাড়িতে ফিরবো। তুমি রান্না করলে আমি সাহায্য করার নামে বারবার তোমাকে গভীর ভাবে স্পর্শ করে বিরক্ত করবো। তুমি মেকি রাগ দেখিয়ে লজ্জা পাবে আমি উপভোগ করবো। সুযোগ পেলে বেরিয়ে পড়বো চুনাপাথর নদী বা টিউলিপের বিশাল বাগান দেখতে। কখনও বা সমুদের তীরে হারিয়ে যাবো। মাঝেমধ্যে রাগ অভিমান করে কথা বলবো না কিন্তু রাতে এক সঙ্গে চিপকে ঘুমানোর অভ‍্যাস ছাড়বো না। খুনসুটিতে মেতে থাকবো সারাক্ষণ।
আবিরের কথা শেষ হলো না। হৈমন্তী ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। হৈমন্তী কেনো পৃথিবীর প্রতিটা নারী চাই তাঁদের এমন সুন্দর একটা সংসার হোক। স্বামীর ভালোবাসা নিয়ে রানীর মতো বেঁচে থাকতে কার না ভালোলাগে? অর্থসম্পদের চাইতে ভালোবাসার দাম যে অধিক। হৈমন্তী আবিরকে ছাড়া থাকতে পারবে না। ওর এমন একটা সংসারের প্রচণ্ড লোভ হচ্ছে। লোকটা ওকে ছেড়ে যাবার আগে বুঝি লোভ ধরিয়ে দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু কেনো? কষ্ট দেওয়ার জন্য? হৈমন্তী নাকের পানি চোখের পানিতে আবিরের গলা ভিজিয়ে দিচ্ছে। ওকে এভাবে কাঁদতে দেখে আবির ওষ্ঠে হাসি ফুটিয়ে হৈমন্তীর কপালে চুপু দিয়ে বলল,
> কাজী আবির এহসান খুব একটা মিথ্যা বলেনা হৈমী। নিজের বউয়ের কাছে তো প্রশ্নই আসে না। আমি সব সময় সৎ থাকার চেষ্টা করি। আগে বলো তোমার কি এমন একটা সংসারের প্রয়োজন আছে?
হৈমী নাক টেনে বলল,
> খুব করে প্রয়োজন। সেই সংসারের শুরুতে একটা পিচ্চি বাবুর প্রয়োজন। বাবুর জন্য হলেও আপনি আর কখনও আমাকে ছেড়ে থাকার জন্য পাগল হবেন না। কাছেকাছে থাকবেন আর আদর দিবেন।

আবিরের ভালো লাগছে। মেয়েটা কাঁদছে কষ্ট পাচ্ছে এতে ওর কষ্ট পাওয়া উচিৎ কিন্তু হৃদয় তো ওর নিয়ন্ত্রণে নেই। হৈমন্তীর ওর প্রতি এই মমতা ভালোবাসা সবটা দেখে ওর হৃদয় খুশীতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠছে। আবির হৈমন্তীর হাতটা মুঠোয় নিয়ে চুমু দিয়ে বলল,
> এমন একটা সংসারে খুব দ্রুত তুমি পা রাখতে চলেছো হৈমী। আমি বাসা ভাড়া নিয়েছি। ফুফিদের বাড়িতে থাকাটা কেমন দেখাচ্ছে। ঘর জামাই ঘর জামাই ফিলিং হচ্ছে। তোমাকে না নিয়েই বাসা পছন্দ করে এসেছি। দরকারি জিনিসপত্র কেনাকাটা করেছে আমার বন্ধুরা।
হৈমন্তী ঝট করে আবিরকে ছাড়িয়ে দিয়ে বলল,
> আপনি আমাকে একা রেখে যাবেন?
> জীবন্ত বর বেঁচে থাকতে বউ একা থাকবে এটা কখনও হয়েছে? সুন্দরী বউ রেখে যেতে ভরসা পাচ্ছি না। তিন বছর কষ্ট হলেও এখানে থাকতে হবে। তোমার ইউনিভার্সিটি বন্ধ হলে মাঝেমাঝে গিয়ে বেড়িয়ে আসবো। আমি দীর্ঘদিন এখানকার হাসপাতালে কাজ করেছি তাই জয়েন করতে অসুবিধা হয়নি।
হৈমন্তী খুশীতে আবিরকে জড়িয়ে ধরলো। অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ দিলো। বিনিময়ে আবির শুধু হাসলো। হৈমন্তীর চুলে চূমু দিয়ে মজা করে বলল,
> আগামীকাল যাচ্ছি আমাদের নতুন গৃহে। একদিনে কিন্তু বাচ্চা হবে না। কি করবে এখন হৈমী?
হৈমন্তীর আবিরর হাতে কামড় দিয়ে বলল,
> আপনি সত্যিই ডাকাত ডাক্তার। একদম ভালো না। শুধু শুধু কষ্ট দিলেন। আমার চোখের পানি হয়তো অর্ধেক ফুরিয়ে গেছে। সব দোষ আপনার।
> দোষ মেনে নিয়েছি এবার আমার গিফট দাও। তোমার জন্য তিনটা বছর এখানে থাকতে হচ্ছে। এমনি এমনি তো না। দ্রুত গিফট দাও।
হৈমন্তী কিছু একটা ভেবে টুপ করে আবিরের গালে চুমু দিয়ে দ্রুতগতিতে বেরিয়ে গেলো। আবির হতবাক হয়ে সেদিকে তাঁকিয়ে ভাবলো,” বাপবা আমি যে অসংখ্যবার চুমু টুমু দিয়ে ভাসিয়ে দিই তখন এতো লজ্জা কোথায় থাকে? পারেও বটে।
☆☆☆☆☆
সারাদিন কনসেনট্রেশনের কাজ দেখাশোনা
করে ফিরে এসেছে আরাফাত। রাজীব মিটিং নিয়ে বিজি আছে। অরিন হৈমন্তীর সঙ্গে ভিডিও কলে গল্প জুড়েছে। আরাফাত দ্রুত এসে ওর ফোনটা কেঁড়ে নিয়ে বলল,
> হৈমী তোর গাধা বরের জন্য আমার অবস্থা খারাপ। কোনদিক ছেড়ে কোনদিকে যায় বলতো? তোর ডাকাত ডাক্তারের কি খবর? কোথায় সেই পালোয়ান?
> রুমে আছেন। ভাইয়া আমরা নতুন বাড়িতে উঠব তুমি আসবে না দেখতে? তোমাদের সবাইকে খুব মিস করছি ভাইয়া।
আরাফাতের দৃষ্টি ছলছল করে উঠলো। বোনটা দূরে আছে। বোনের ছোট থেকে বড় হওয়া পযর্ন্ত সব সময় ছায়ার মতো আগলে আগলে রেখেছিল।। আরাফাত মলিন হেসে বলল,
> ইনশাআল্লাহ খুব দ্রুত যাবো হৈমী। আমার বোনের বাড়িতে আমি যাবোনা এমনটা হয়নাকি। মন দিয়ে পড়াশোনা করবি একদম চিন্তা করবি না। যখন যা দরকার হবে শুধু একবার আমাকে বলবি। বোনের জন্য আরাফাত সব করতে পারে।

হৈমন্তী কেঁদে ফেলল কথা বলতে বলতে। সবাই ওকে এতোটা ভালোবাসে কেনো কে জানে। হয়তো ও পৃথিবীর সব থেকে সৌভাগ্যবান মেয়ে। যার ভাই তিন তিনটা আছে। যারা বোনের জন্য সব পারে। বেশিক্ষণ আর কথা হলো না। ওপাশ থেকে আবির হৈমন্তীর থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে দুটো কথা বলে রেখে দিলো। আরাফাত ফোন রেখে সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করতেই অরিন শরবতের গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলল,
> সারাদিন এভাবে ঘুরলে আপনি তো অসুস্থ হয়ে যাবেন। আমার মনে হয় একজন লোক রাখা উচিত। আপনার কাজকর্ম গুলো একটু খেয়াল রাখতো।

আরাফাত সিরিয়াস লুক নিয়ে বলল,

> আমিও ভাবছিলাম আমার কাজকর্মের জন্য একজনকে খুব দরকার। অরিন মাকে বলো ঘটক চাচাকে বাড়িতে ডেকে এনে বলতে ভালো মেয়ের খোঁজ নিতে।
অরিন বোকার মতো জিঞ্জাসা করলো,
> কেনো? ঘটক দিয়ে কি হবে?
> আমি বিয়ে করে বউ নিয়ে আসবো। দুজন বউ হলে আমার কাজকর্মের সমস্যা হবে না।
> আপনি তো খুব। আমি কি বললাম আর আপনি কোথায় নিয়ে গেলেন? কথায় বলবো না আপনার সঙ্গে। নিয়ে আসুন বউ। আমি ছাঁদ থেকে লাফিয়ে পড়বো। সারাদেশে নিউজ হবে আরাফাত মির্জার দ্বিতীয় বিয়ের খবর শুনে উনার প্রথম স্ত্রী কাজী অরিন আরাফাত সুইসাইড করেছে।
অরিনের বলতে দেরী হলো কিন্তু আরাফাতের ওর গলা টিপে ধরতে দেরী হলো না। খুব জোরে না ধরলেও অরিন ভয় পেয়েছে। আরাফাত রেগে গেছে। অরিন জানতো লোকটা এই কথাটা শোনা মাত্র রেগে যাবে তবুও বলতে খুব ইচ্ছে হলো। আরাফাত অরিনের দুহাতের মধ্যে নিজের হাতের আঙুল পুরে নিয়ে ওর গলাতে শক্ত করে কমড় বসিয়ে দিয়ে বলল,
> আজেবাজে কথাবার্তার জন্য এটা তোমার শাস্তি। তব এটা শুধু টেলার ছিল বাকীটা তুমি ক্রমশই দেখতে পারবে।
অরিন চোখমুখ কুচকে আছে। আর একটু হলে দাঁত ফুটে যেতো। কি ভয়ানক যন্ত্রণা হচ্ছে। অরিনের চোখে পানি চলে আসলো। ওকি সিনেমার নায়কা যে ব‍্যাথা থাকবে না। রাগ হচ্ছে। অরিন উঠে চলে যেতে চাইলো কিন্তু আরাফাত উঠতে দিলো না। এক হাতে ওকে ঝাপটে ধরে আরেক হাতে দরজা লক করে নিলো। অরিন চুপচাপ কাঁদলো। আরাফাত পাত্তা দিলো না। ওকে বিছানায় বসিয়ে বলল,
> এইটুকুতেই চোখের জলে নাকের জলে অবস্থা খারাপ। থাপ্পড় গুলো কে খাবে? আমি বলেছিলাম না সুইসাইডের কথা মাথায় আনবে না। মনে তোমার এসব চলে? এতো ভালোবাসার পরেও যদি এমন করো আমি সত্যি বনবাসে চলে যাবো। বাংলাদেশে বন নেই তাঁতে কি আফ্রিকায় আছে সেখানে যাবো। তুমি বৈরাগীর বউ হয়ে একা সংসার করো।
অরিন শব্দ করে কেঁদে বলল,
> কি দরকার ছিল বিয়ের কথা বলার। সেখান থেকেই তো সূত্রপাত। আমি রাগ করেছি। আজ আপনি একদম আমার ধারেকাছেও আসবেন না। আপনি বাইরে থেকে এসে গোসল করেননি। আপনার জন্য আমার খাওয়া হলো না।।
আরাফাত মিটমিট করে হেসে বাথরুমে চলে গেলো। জানে অরিন অল্পতেই চোখের পানি ফেলতে উস্তাদ। তবে বেশ ঝগরুটে। কাঁদবে আর ঝগড়া করবে।
_______________
আবির আর হৈমন্তীর উপরে আবেদা মির্জা রেগে আছেন। ভেবেছিলেন মেয়েটা যতদিন থাকবে ততদিন পযর্ন্ত উনার কাছে থাকবে কিন্তু হলো না। আবির তড়িঘড়ি মেয়েটাকে নিয়ে আজ নতুন বাসাই গিয়ে উঠছে। উনি এতকিছু জানতেন না। শোনার পরে অনেকবার বুঝিয়েছেন কিন্তু আবিরের এক কথা। ঘর জামাই হওয়া চলবে না। মাঝেমাঝে হৈমন্তীকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে আসবে। তাছাড়া খুব একটা দূরে না। যখন ইচ্ছে তখন দেখা করা যাবে। সম্মান থাকতে থাকতে দূরে যাওয়ায় ভালো। কখনও কখনও ভালো সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠে। আবির ভেবে নিয়েছে কয়েকমাসের মধ্যে বাবা মাকে নিয়ে আসবে। কিছুদিন এখানে বেড়িয়ে গেলে মন ভালো হবে।। সব দিক বিবেচনা করেই বাসা ভাড়া করা। ছেলের বাড়িতে বাবা মা আসতে অসুবিধা হবে না কিন্তু ছেলের ফুপি শাশুড়ি বাড়িতে কিভাবে উনারা আসতে পারে। হৈমন্তী নতুন বাড়িতে যাওয়ার আগে আবিরের দেওয়া লাল শাড়িটা সুন্দর করে পরে নিয়েছে। এখান থেকে যাওয়ার সময় দুটো লাগেজ ছাড়া কিছুই নেওয়া লাগলো না। জুলি আর নায়রা আগেই চলে গেছে বাড়ি সাজানোর জন্য। আবেদা মির্জা হৈমন্তীদের সঙ্গে গেলেন। নতুন বাড়িতে প্রবেশের সময় হৈমন্তী আর আবির কিছু ছবি ক‍্যামেরা বন্দি করা হলো। পাশাপাপাশি দুটো বেডরুম একটা কিচেন। একটা রুমে বেলকনি আছে আরেকটাতে নেই। নয় তালা ভবন। আবির চেয়েছিল ছোটখাটো একটা বাড়িতে ঘর নিবে কিন্তু সম্ভব হলো না। এটা ক্যানবেরির মূল শহরের আশেপাশের ছাড়া পাওয়া কঠিন। হাসপাতাল থেকে সেটা দূরে হয়ে যায়। বাসাটা মোটামুটি খারাপ না পছন্দসই। হৈমন্তী ভীষণ খুশী নতুন বাড়িতে এসে। আবেদা মির্জা প্রস্তাব দিলেন একটা কাজের মেয়ে ঠিক করে দেওয়ার জন্য। এজেন্সিদের বললে অনেক কাজের মেয়ের সন্ধান দিতে পারবে। কিন্তু হৈমন্তী শুনলো না। ওদের দুজন মানুষের মধ্যে কোনো তৃতীয় পক্ষের প্রবেশ ঘটাবে না। নিজের সংসার হৈমন্তী নিজেই সামলে নিবে। তাছাড়া ও শাশুড়ি মায়ের থেকে রান্না শিখেছে। যখন ইচ্ছে তখন শাশুড়ি মায়ের কাছে ফোন দিলেই উনি ওকে রেসিপি বলার জন্য তৈরি। আবেদা মির্জা মিটমিট করে হেঁসে বললেন,
> দেখা যাক আমার হৈমী মা তাঁর নতুন সংসার কিভাবে সামলাতে পারে।
(চলবে )

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। ইচ্ছা ছিল আজকের পর্বে গল্পের শেষ টানতে কিন্তু হলো না। খাপছাড়া লাগছিল। আগামী পর্বে ইনশাআল্লাহ চেষ্টা করবো শেষ করতে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here