#দৃষ্টিনন্দনে_তুমি
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:৩২
আবির জ্বর নিয়েই সকাল সকাল বাইরে বের হয়েছে। হৈমন্তী নিষেধ করেছিল কিন্তু শোনেনি। ছেলেটার মাথায় কি চলছে আল্লাহ্ ভালো জানে। রোহান খাবার টেবিলে একা একাই বকবক করে চুপচাপ হয়ে গেছে। রোহানের উপরে মোটামুটি সবাই বিরক্ত। রোহান আর জুলি ইউনিভার্সিটি গেছে। নায়রা হৈমন্তীর থেকে ওদের বিয়ের সেই বিখ্যাত ইতিহাস শুনছে আর হাসিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। যদিও সময়টা মজার ছিল না। বেশ কষ্টের ছিল কিন্তু হৈমন্তীর কাছে সেসব এখন বেশ মজার বলে মনে হচ্ছে। ঐতিহাসিক বিয়ে। বাসর রাতে বর ডিগ্রী অর্জন করতে বিদেশ বিভূঁয়ে পাড়ি দিয়েছিল। নায়রা ওকে এটা ওটা বলে খোঁচানোর চেষ্টা করছে। হৈমন্তী লজ্জা পাচ্ছে। শেষের কাহিনী শুনে নায়রা ঠোঁট উল্টে বলল,
> তুমি এতো সহজে ভাইয়াকে মাফ করে দিলে? আমি হলে এক বছর কথা বলতাম না।
হৈমন্তীর দৃষ্টি উদাসীন। লোকটাকে ও কিভাবে ফিরিয়ে দিবে পারে? মানুষটার যে অবস্থা হয়েছে সেখানে ওর রাগ আসছে না। বরং কষ্ট হচ্ছে। স্ত্রী হয়ে স্বামীর পাশে থাকা ওর দ্বায়ীত্ব। তাছাড়া ও লোকটাকে ভালোবাসে। শক্ত হবে পরের লোকের কাছে। ঘরের মানুষটার কাছে মোটেও না। দূরে থাকলে দুরুত্ব বাড়ে। হৈমন্তী চাইনা লোকটা ওর থেকে দূরে যাক। বরং আরও কাছে আসুক যতটা কাছে আসলে কখনও ভূলে থাকা যায় না। কথাগুলো ভেবে হৈমন্তী মলিন হেসে বলল,
> আমাকে নিরাপদে রাখতে লোকটা এতকিছু করলো আর আমি উনাকে ভূল বুঝে দূরে সরিয়ে রাখবো এমনটা পারবো না আপু। তাছাড়া ক্ষুদ্র মানব জীবন। কখন দুম করে চলে যায় বলা কঠিন। তাই এই অল্প সময়ে রাগারাগি করে প্রিয় মানুষটার থেকে দূরে থাকার মানে হচ্ছে সময় নষ্ট করা। আমি আমার জীবনের একটু সময়ও এভাবে অপচয় করতে পারবো না। যতদিন বাঁচবো উনার সঙ্গে থাকবো।
হৈমন্তীর শেষের কথাগুলো বলে লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নিলো। নায়রা কিটকিট করে হাঁসছে। কোনোরকম হাসি থামিয়ে বলল,
> এ যুগের রোমিও জুলিয়েট। যাইহোক দারুণ লেগেছে তোমাদের জুটি। দোয়াকরি এভাবেই থেকো সবসময়।
ওদের আড্ডার মধ্যেই আবির ফিরে আসলো। লোকটার জ্বর আসছে যাচ্ছে। কিছুতেই কোমার লক্ষণ নেই। হাসপাতালে গিয়ে ব্লাড টেস্ট করে ওষুধ নিয়েছে। শরীর ঘেঁমেঘেঁটে একাকার অবস্থা। আবির চুপচাপ হৈমন্তীর পাশে বসে সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। নায়রা আবিরের জন্য পানি আনতে চলে গেছে। হৈমন্তী আবিরে হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,
> রুমে চলুন। ফ্রেস হয়ে ঘুমালে ভালো লাগবে। কতবার বললাম বাইরের না যাওয়ার জন্য শুনলেন না।
আবির চোখ বন্ধ করেই বলল,
> আমি ঠিক আছি। শান্ত হও।
হৈমন্তী শান্ত হলো না। পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো ওর দিকে। রোহান বাড়িতে ফিরে এসে হৈমন্তী আর আবিরকে এভাবে চিপকে বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে ফেলল। ও কপালে ভাজ পড়েছে। বিষয়টা কি হচ্ছে ঠিক ধরতে পারছে না। ওর রাগ হচ্ছে হৈমন্তীর উপরে। ধারণা ছিল বাঙ্গালী মেয়েরা খুব লজ্জাবতী হয়। সহজে বাইরের মানুষের সঙ্গে মিশতে পারে না।কিন্তু এখন সব ভিন্ন। রোহান ওদের থেকে দুরুত্ব নিয়ে বসতে বসতে বলল,
> হৈমন্তী আমাকে এক গ্লাস পানি দাও তো। সারাদিন তোমার কাজকর্ম নেই বাইরের লোকজনের সঙ্গে চিপকে থাকা ছাড়া। যাও পানি নিয়ে আসো
হৈমন্তী হতভম্ব হয়ে গেলো রোহানের কথা শুনে। পাশে নায়রা চোখ গোলগোল করে ভাইকে দেখছে। আবির শক্ত করে হৈমন্তীর হাত ধরে রেখেছে। ছাড়াছাড়ির লক্ষণ নেই। ছাড়বেও না।ভাবলো, ওর বউ শুধু ওর সেবাযত্ন করবে। মামাতো খালাতো চাচাতো কোনো ভাইকেই পানি টানি দিতে পারবেনা। হৈমন্তী শুধু কাজী আবির এহসানকে পানি খাওয়াবে। সেই পানির স্বাদ হবে অমৃত। কথাগুলো ভেবেই প্রশান্তি লাগছে আবিরের মনে। হৈমন্তী হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইছে কিন্তু হচ্ছে না। হৈমন্তী উঠছে না দেখে নায়রা পানি দিতে উঠে গেলো কিন্তু রোহান চোখ গরম করে বলল,
> যাকে বলছি সেই দিবে পানি। তোর থেকে পানি আমি নিবা না।
নায়রা ধমক শুনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে পড়লো। আবিরও নাছোড়বান্দা কিছুতেই ও হৈমীকে এই বেয়াদব ছেলের পানি দিতে পাঠাবে না। হৈমন্তী জোরকরে হাসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ও উঠছে না দেখে নায়রা রোহানের উপরে বিরক্ত হয়ে বলল,
> কত ঝড়ঝাপ্টা পেরিয়ে দুজন একটু এক হয়েছে। কোথায় বোনকে তাঁর বরের সঙ্গে প্রেম ট্রেম করার সুযোগ করে দিবা তানা হুকুম করছো। শুনো ভাইয়া তোমার পানি তুমি নিজে নিয়ে খাও।
নায়রার কথা ঝঙ্কার দিয়ে রোহানের কানের মধ্যে বাঁজতে লাগলো। ও ঝটকরে হৈমন্তীর আর আবিরের দিকে তাঁকালো। বিষয়টা বুঝতে ওর কয়েক সেকেন্ড লাগলো। মাথা ঘুরছে। তবুও পুরোপুরি সিউর হওয়ার জন্য বলল,
> মিস্টার আবির হৈমন্তীর কে হয়?
নায়রা ভ্রু কুচকে বিরক্তি নিয়ে বলল,
> হৈমী এই ভদ্রলোকের বউ বুঝলে? তোমার মাথায় সত্যি সমস্যা আছে। বাড়ির সবাই জানে আর তুমি জানো না অদ্ভুত।
আবিরের বেশ মজা লাগছে রোহানের মুখটা দেখে । উপযুক্ত শাস্তি। মেয়ে দেখলেই প্রেম প্রেম পাই। হুটহাট করে যেসব ছেলেমেয়েদের প্রেম পাই তাঁদেরকে সমুদের পানি চুবিয়ে মারা উচিত। রোহান হেলতে দুলতে রুমে গিয়ে ধপাস করে দরজা বন্ধ করে দিলো। আবির সেদিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
” এবার দেবদাস হবে সিউর। রাতে মাল খেয়ে টাল হয়ে বাড়িতে ফিরবে তারপর কালকের দিন নিরবতা পালন করে পরশুদিন আবার নতুন মেয়ের খোঁজ করবে। হৃদয় ভাঙার পার্টিও দিবে বন্ধুদের নিয়ে।”
হৈমন্তী পাশ থেকে বলল,
> কিছু বললেন?
> না। হৈমন্তী ঘুম পাচ্ছে। চলো ঘুমাই।
> আপনার ঘুম পাচ্ছে তো আমি কি করবো? আমি ঘুমাবো না।
আবির ওর হাত ধরে টেনে উঠিয়ে দিয়ে যেতে যেতে বলল
> একা ঘুম আসবে না। বউ থাকতে আমার একা ঘুমাতে হবে এটা মানতে পারছি না। চলো চলো।
আবির হৈমন্তীকে জোরকরে রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।
☆☆☆☆☆☆☆☆
মাসুদ বাড়িতে ফিরে এসেছে হানিমুন প্যাকেজ শেষ হওয়ার দুদিন আগেই। রুনি ঘরকুনো মেয়ে সব সময় রুমে থাকতে পছন্দ করে। ওর সঙ্গে মাসুদের এটা নিয়ে মিলমিশ হয়না। রুনি একটু খানি ঘুরাঘুরি করে একদিন ধরে বিশ্রাম করে। এমন একটা মেয়ের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে মাসুদের মেজাজ খারাপ হয়েছে। এর চাইতে যদি ভাইবোনদের নিয়ে আসতো পুরো কক্সবাজার কাঁপিয়ে দিতে পারতো। ছোট ভাই আরাফাত প্রচুর ঘুরতে পছন্দ করে। কোনো ক্লান্ত হয়না। হৈমন্তী বাইরে না গেলেও ওর কৌতূহল বেশি। ঘুরাঘুরির জন্য একেবারে খারাপ না। মাসুদ বারবার নিজের ভাইবোনের গুণকির্তন করে রুনির কান পচিয়ে দিয়েছে। মেয়েটা বাধ্য হয়ে বলেছে বাড়িতে ফিরবে। শেষমেশ বাড়িতে ফিরা। ও কান ধরেছে জীবনে আর মাসুদের সঙ্গে আসবে না। বাড়িতে থেকে চয়নিকার কাছ থেকে রান্নাবান্না শিখবে আর বই পড়বে। এসব ঘুরাঘুরি করে টাইম নষ্ট করবে না। অন্যদিকে চয়নিকা রাজীদের সামনে তেমন আসছে না। জাফরের সেই বিষয়টা নিয়ে ও লজ্জিত। রাজীব সুযোগ পেলেই ওকে খোচা দিচ্ছে। রাজীব ভাবতেও পারেনি এরকম একটা বোকামি করবে। মন্ত্রীর এসব মানাই না কিন্তু ও কিছুতেই চয়নিকাকে হারাতে পারবে না। নিজের মানুষকে নিজের কাছে রাখতে যা ইচ্ছে ও তাই করতে পারে।
☆☆☆☆☆☆
ঝমঝম করে বৃষ্টি নেমেছে ধরণীতে। হঠাৎ হঠাৎ বৃষ্টি হচ্ছে কিছুদিন ধরে। আরাফাত বাড়িতে নেই। অরিন ছাদে ছিল। আকাশে ঘনকালো মেঘের ঘনঘটা। ঝড়ো হওয়াতে ওর বেশ ভালো লাগছিল কিন্তু তাঁর মধ্যেই ঝুম বৃষ্টির আবির্ভাব। নিচে নেমে যেতে পারতো কিন্তু নামলো না। আজ ভিজতে ভালো লাগছে। অরিন হাত দুটো সোজা রেখে আকাশের দিকে মুখ উঁচু করে চোখ বন্ধ করলো। বৃষ্টির ফোঁটা মুখে চোখে আছড়ে পড়ছে। মৃদু মৃদু দুর থেকে বজ্রপাতের শব্দ আসছে। শীতে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে তারমধ্যে মেঘ ডাকার শব্দে ও চমকে উঠছে তবে সেসবে আজ পাত্তা দেওয়ার মুড নেই। মন ভালো কি খারাপ বোঝা যাচ্ছে না। বৃষ্টি আগে এতোটা পছন্দ ছিল না কিন্তু আজকাল বেশ পছন্দ হচ্ছে। বাড়ির গেট দিয়ে আরাফাত গাড়ি নিয়ে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে ছাদের দিকে তাঁকিয়ে থমকে গেলো। মেয়েটা একেবারে ধারে দাঁড়িয়ে আছে। আরাফাতের কপালে ভাজ পড়লো। মেয়েটা আবার লাফিয়ে পড়ার চিন্তা করছে না তো? এমন চিন্তা মাথায় আসতেই আর অপেক্ষা করলো না। দ্রুত বেরিয়ে আসলো। দ্রুতগতিতে বাড়ির ভেতরে গিয়ে তরতর করে সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠে গেলো। ছাদে পা ফেলে ভাবলো অরিনকে ডাকবে কিন্তু পারলো না। কন্ঠরোধ হয়ে আসছে। ও মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় ধীরগতিতে অরিনের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। মেয়েটার পা থেকে মাথা অবধি একপলক তাঁকিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। তাঁকানো উচিৎ না। কয়েকবার কথাটা বিড়বিড় করে বলে আবারও তাাঁকালো। আরাফাত বিবেচনাধীন কখনও ছিল না কিন্তু আজ কেনো জানি ভূলটাকে সঠিক বলে মনে হচ্ছে। মেয়েটার পরনে জলছাপা রঙের থ্রি পিচ। পা দুখা খালি। এলোমেলো চুলগুলো মুখের উপরে পড়ে আছে। বৃষ্টির পানি মুখের উপরে পড়ে চুল বেয়ে গলার উপরে গিয়ে টপটপ করে পড়ছে। হঠাৎ বজ্রপাতের শব্দে আরাফাতের ধ্যান ভাঙলো। ডান হাত দিয়ে নিজের চুলগুলোর মধ্যে আঙুল চালিয়ে হাসলো। অরিনের নড়াচড়া নেই। যেমন ছিল তেমনি আছে। আরাফত হাত এগিয়ে দিয়ে অরিনের হাতটা নিজের মুঠোয় পুরে নিয়ে ধমক দিয়ে বলল,
> বৃষ্টিতে ভিজে অসুস্থ হতে চাইছো? গাধা মেয়ে নিচে চলো। ছাদের দরজায় তালা ঝুলাতে হবে।
আরাফাতের ধমক শুনে অরিন উপর থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো। মনে মনে ভাবলো ওর বরটা এমন রোবট কেনো? ওকে চুপচাপ দেখে আরাফাত আবারও ধমক দিয়ে উঠলো। এবার অরিন চমকে উঠলো। কান্না পেয়ে গেলো। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না। আরাফাতের পায়ের কাছে ধুপ করে বসে হুহু করে কাঁদতে শুরু করলো। আরাফাত হন্তদন্ত হয়ে অরিনকে ধরতে বসে পড়লো। অরিন ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লো। আরাফাত হতভম্ব হয়ে গেছে মেয়েটার এমন আচরণ দেখে। দীর্ঘদিনের অবহেলা অযত্নে মেয়েটার মধ্যে যে অভিমান জমেছিল সেটা কান্না হয়ে এক সঙ্গে বেরিয়ে এসেছে। একটা মানুষ কতদিন এভাবে চুপচাপ থাকতে পারে? আরাফাত ওকে কোলে তুলে নিয়ে রুমের দিকে পা চালালো। বাড়িতে ভাই ভাবি মা বাবা সবাই আছে। আরাফাত সেসব নিয়ে ভাবছে না। ওকে রুমে আনার পথে চয়নিকার সঙ্গে দেখা হয়ে গেলো। আরাফাত চুপচাপ রুমে ঢুকলো। চয়নিকা কৌতূহলী হয়ে জিঞ্জাসা করতেই আরাফাত সবটা বলে দিলো। দুজনের চোখেমুখে চিন্তার ছাপ। আরাফাত ওকে বিছানায় রাখতে গেলো। কিন্তু বিছানায় রাখলে বিছানা ভিজে যাবে। চয়নিকা দ্রুত বিছানার উপরে টাওয়েল আর গামছা বিছিয়ে দিয়ে আরাফাতকে চেঞ্জ করে আসতে বলল কিন্তু আরাফাত গেলো না। মেয়েটাকে আগে জ্ঞান ফিরাতে হবে। হাত পা ঠান্ডা হয়ে আছে। চয়নিকা অরিনের কনিষ্ঠা আঙ্গুল চেপে ধরেছে। কোথায় একটা শুনেছিল এমনে ধরলে চেতনা ফিরে। কিন্তু আরাফাত সেসব ভরসা করছে না। গ্লাসের পানি নিয়ে অনবরত অরিনের মুখে ছিটাতে থাকলো। বাড়িতে লোকজন আছে বেশি হৈচৈ করলে চলে আসবে। চয়নিকা চুপচাপ আছে কিন্তু আরাফাত চুপ নেই। ছটফট করছে আর অরিনকে ডাকছে। কয়েক মূহুর্ত্তের মধ্যেই অরিনের জ্ঞান ফিরলো। মেয়েটার ফুপিয়ে উঠলো। আরাফাত আর অপেক্ষা করলো না দ্রুত ওকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়ে বলল,
> তুমি ঠিক আছো? এভাবে আর কখনও ছাদে যাবে না। তোমাকে আর বকবো না।
অরিন আরাফাতের কাধে থুতনি দিয়ে সামনে তাকাতেই চয়নিকার চোখে চোখ পড়ে গেলো। দুজনের চোখেই কৌতূহল। তবে তা দ্রুত পরিবর্তন হয়ে লজ্জায় রুপ নিলো। চয়নিকা ঝটপট বিছানা থেকে নেমে দৌড়। অরিন বারবার ওকে ধাক্কা দিচ্ছে কিন্তু ছেলেটা একে ছাড়তে চাইছে না। বহুকষ্টে যদিওবা ছেড়ে দিলো দুহাত দিয়ে অরিনের মুখটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে ছলছল চোখে বলল,
> প্রিয়জনের লা*শ দেখেছো অরিন? আমি দেখেছি। সেই লা*শের ভার বড্ড ভারি। সারাজীবন সেই ভার বহন করতে হয়। জ্বলেপুড়ে শেষ হয়ে বেঁচে থাকা যে কতটা যন্ত্রণার যদি বুঝতে তবে এভাবে নিজেকে কষ্ট দিতে না।
আরাফাত থমথমে মুখ নিয়ে অরিনের কপালে ওষ্ঠাদ্বর রেখে বিছানা থেকে নেমে পড়লো। কাপড় নিয়ে বাইরে যেতে যেতে বলল,
> আমি পাশের রুম থেকে চেঞ্জ করে আসছি তুমি চেঞ্জ করে নাও। না পারলে বলো সাহায্য করবো।
অরিন মাথা নিচু করে বলল,
> আমি পারবো।
আরাফাত আর পেছনে ফিরলো না। দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে গেলো। লোকটা দুঃখ পেয়েছে কিন্তু কেনো? অরিন কিছুই বুঝতে পারছে না সামান্য বৃষ্টিতে ভেজার জন্য লোকটা এমন করছে কেনো। তবে লোকটা কষ্ট পাই এমন কাজ ও আর কখনও করবে না।
☆☆☆☆☆☆☆
বাইরের হৈচৈ শুনে হৈমন্তীর ঘুম ভাঙলো। কিছু একটা নিয়ে সবাই চিৎকার চেচামেচি করছে। আবির ওকে জোরকরে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিল। এখনো ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। হৈমন্তী উঠতে চাইলো কিন্তু হচ্ছে না। শেষমেশ আবিরকে ধাক্কা দিয়ে জাগিয়ে দিলো। আবির লাললাল চোখ খুলে বিরক্তি নিয়ে বলল,
> বিরক্ত করছো কেনো? আমার ঘুম পাচ্ছে। চুপচাপ শুয়ে থাকো।
হৈমন্তী ঝাঝালো কন্ঠে বলল,
> আরে আপনি ঘুমান মানা করছে কে?আমাকে ছাড়ুন বাইরে কিছু একটা হয়েছে।
আবির ঘুরে পাশ ফিরতে ফিরতে বলল,
> অনেক আগেই হওয়ার কথা ছিল কিন্তু এখন হচ্ছে। মেয়েটা খুব লেজি। আসতে লেট করেছে।
হৈমন্তী বিস্মিত হয়ে বলল,
> কার কথা বলছেন? কোন মেয়ে?
> বিরক্ত না করে দেখে আসো যাও।
হৈমন্তী দ্রুত বিছানা থেকে লাফিয়ে পড়লো। কোনোরম দরজা খুলে বাইরে এসে হতবাক। ডাইনিং রুমের সোফায় একটা মেয়ে বসে আছে। তাঁকে ঘিরেই এতো হৈচৈ। আবেদা হক চিৎকার করছেন। হৈমন্তী বিষয়টা বোঝার জন্য জুলি পাশে গিয়ে ফিসফিস করে জিঞ্জাসা করলো,
> আপু মেয়েটা কাঁদছে কেনো?
> রোহানের গার্লফ্রেন্ড এক সপ্তাহ ধরে নাকি রোহান ওর সঙ্গে যোগাযোগ করছে না তাই বাড়িতে চলে এসেছে। মাম্মা বিষয়টা মানতে পারছে না।
> কিন্তু কেনো?
> আরে মাম্মা ভাইয়াকে পিউর বাঙালি মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিতে চেয়েছেন। এখানকার মেয়েদের উনার পছন্দ না।
> ছেলের পছন্দ হলে মানতে না পারার কিছু নেই। চলো ফুপিকে বুঝিয়ে বলি।
> বুঝবি না তুই চুপচাপ দেখে যা। আর রোহান দুপুর থেকে দরজা বন্ধ করে পড়ে আছে। এতকিছু হচ্ছে বাইরে আসছে না। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না।
হৈমন্তী চুপ থাকলো। মেয়েটা অনবরত কথা বলছে আর ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদছে। আবেদা মির্জাও থেমে নেই। মুখ চালিয়ে যাচ্ছেন। একটু পরে আবির বেরিয়ে আসলো। আবেদা মির্জার পাশে চুপচাপ বসে তারপর বলল,
> ছেলের পছন্দের গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ। যদি এই মেয়েকে না মানা হয় সেই দুঃখে যদি ওরা সুইসাইড করে তখন কি হবে? সারাজীবন ছেলেকে হারাতে হবে।
আবির এই সেই বলে আবেথা মির্জাকে বুঝিয়ে ফেলল। উদ্দেশ্য যেভাবেই হোক এই মেয়ের সঙ্গেই রোহানের বিয়েটা দিয়ে দেওয়া। রোহান বিবাহিত হয়ে গেলে কখনও আর হৈমন্তীকে বিরক্ত করবে না।
(চলবে )
ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। গল্পটা দ্রুত শেষ করবো। অনেকেই বিরক্ত হচ্ছেন জানি ক্ষমা করবেন ।