দিয়া(প্রথম পর্ব)

0
1350

#দিয়া(প্রথম পর্ব)
© প্রিয়াংকা শী
“শোনো বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে একটু দই মিষ্টি খেয়ে বেরোও”
অর্নবের বাড়ি থেকে বেরোতে সত্যিই খুব দেরি হয়ে যাচ্ছিল।আজকের মিটিংটা খুব ইম্পর্টেন্ট।জামার হাতার কলারটা গুটিয়ে ঘড়ি দেখতে যাওয়ার সময়েই দিয়ার পিছুডাকটা কানে এলো।অর্নব ঘড়িতে দেখলো,নটা বেজে গেছে, মিটিং শুরু হতে যদিও এখনও একঘন্টা বাকি। কিন্তু আজ অর্নবের বেশ দেরি হয়ে গেছে।দিয়ার কথা কানে যেতেই একটু বিরক্ত হয়েই বললো,”আবার কী!”অর্নবের এই তিরিক্ষে মেজাজের রুপটার সাথে দিয়া বরাবরই পরিচিত।তাই একটু থতমত খেয়ে মুখ কাচুমাচু করে বলে উঠলো,”মানে ওই আর কী! মিটিং আছে;তাই দই খেয়ে বেরোলে সব শুভ হয় বলে,”অর্নবের মেজাজটা আবার একটু সপ্তম সুরে উঠবে ভাবছিল।আগে অফিস বেরোনোর তাড়া তার মধ্যে দিয়ার এসব সেকেলে নিয়ম মানা অর্নবের একদম পছন্দ নয়।অর্নব পেছন ফিরে একটু কঠিন সুরেই বললো,”যখন তখন এই সেকেলে নিয়মগুলো মানা একটু বন্ধ করো না দিয়া,দেখতে পাচ্ছো না কত দেরি হয়ে যাচ্ছে!”দিয়ার শান্ত দিঘীর মত গভীর টলমলে চোখগুলো খানিক ব্যাথাতুর হয়ে উঠল। কিন্তু মুখে কিছু বললো না দিয়া।অযথা যখন তখন এই সামান্য কথাতেও চোখের জল ফেলা আবার অর্নবের একদম পছন্দ নয়।তাই সেই ব্যাথার ভুবনে ডুব দিয়ে অযাচিতভাবে ভেসে ওঠা জলীয় বাষ্পগুলোকে লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করলো দিয়া, কিন্তু এই রুক্ষ মেজাজের কাঠখোট্টা স্বভাবের মানুষটাকে চিনতেও মাঝেমাঝে কেমন যেন ভুল হয়ে যায় দিয়ার।এই কাঠখোট্টা,নীরস মানুষটাও কীভাবে যেন মুহুর্তের মধ্যে মুখে কিছু না বলতেই দিয়াকে বুঝে ফেলে।এ ধাঁধার উওর খোঁজা দিয়ার পক্ষে আজও সম্ভব হলো না।অর্নব পায়ে জুতো মোজা গলাতে গলাতে বললো,”দিয়া দই এর বাটিটা নিয়ে আসো”দিয়া শাড়ির আঁচল নিয়ে খুটখাট করছিল একজায়গায় দাঁড়িয়ে,অর্নবের কথা যেন ওর কানেই ঢুকছিল না।সেইসময় আবার গুরুগম্ভীর অর্নবের গলার স্বর একটু ওপরে উঠলো,”দিয়া বললাম না,দই এর বাটিটা রান্নাঘর থেকে নিয়ে আসো”দিয়া শাড়ির আঁচল নিয়ে খুটখাট করতে করতে কী যেন একটা কথা একমনে ভেবে চলেছিল সেসময়,বোধহয় গতরাতের কথা.. গতরাতে এই মানুষটাই তাকে কাছে টেনে নিজ বাহুডোরে বেঁধে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে বলেছিল,”আমি তো আছি সবসময় তোমার পাশে, তোমার সব ভয়,সব কষ্টে সবসময় আমি তোমার পাশে আছি”আর আজ কিনা এই মানুষটাই তাকে এইভাবে অবহেলা করছে!আসলে বিয়ের পর থেকেই দিয়া অর্নবের এই দুধরনের রুপ দেখে আসছে,অর্নব অফিসের কাজকর্ম নিয়ে খুব প্র্যাকটিক্যাল,সেসময় সামান্য কিছু ভুল হয়ে গেলেও আর ছাড় পায় না কেউ আর এই বাইরের রুক্ষ গম্ভীর স্ট্রিক্ট কঠোর ডিসিপ্লিন মেনে চলা মানুষটার ভেতরেও যে একটা নরম বিনয়ী স্বভাবের মাটির মানুষ আছে যার দুচোখের অতল গভীরে ভালোবাসার বিশাল সমুদ্র রয়েছে,তার টেরও মাঝেমাঝে পায় দিয়া।এই যেমন কাল রাতেই দিয়া পা মুচকে বাথরুমে পরে গিয়েছিল,সেসময় আবার হঠাৎই পাওয়ার কাট।ভয়ে দিয়ার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিল,তখন ওই তিরিক্ষে মেজাজের গম্ভীর স্বভাবের মানুষটাই নিজের অফিসের কাজকর্ম সরিয়ে রেখে মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে দিয়াকে খুঁজতে খুঁজতে বাথরুমে এসে দেখে,দিয়া বাথরুমের মেঝেতে স্লিপ খেয়ে পরে আছে।অনেক চেষ্টা করেও কিছুতেই নিজের পায়ে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়াতে পারছে না,ভাগ্যিস বাথরুমের দরজা খুলে বেরোনোর সময়ই দিয়ার পা-টা মুচকেছিল,তাই দরজাটা খোলা ছিল বলেই অর্নব দিয়াকে খুঁজতে খুঁজতে বাথরুমে এসে দেখতে পেয়েছিল।অর্নব দিয়াকে আর কোনো কথা বলতে না দিয়ে ওকে কোলে তুলে বাথরুম থেকে ঘরে নিয়ে যায়,ওর পা-টা ধরে বলে,”কী কান্ড বাধিয়েছো!বেশ ফুলে গেছে দেখছি”।নিজেই রান্নাঘর থেকে গরমজল করে নিয়ে এসে দিয়ার পা দুটো কিছুক্ষন গরম জলের মধ্যে ডুবিয়ে রাখে,তারপর তোয়ালে দিয়ে পা মুছিয়ে একটা অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিয়ে বলে,”নাও ঘুমিয়ে পরো,কালকের মধ্যে আশা করছি ঠিক হয়ে যাবে”দিয়ার চোখের কোনে তখন আবেগের একটুকরো সমুদ্র উত্তাল ঢেউ তুলে আছড়ে পরছিল বারবার,বারবার মনে পরছিল ছোটোবেলায় তার বাবাও তো এইভাবেই তাকে আগলে রাখতো যখন দিয়া খুব ‌ভয় পেত,দিয়াকে কোলে তুলে নিয়ে বাবা সবসময় বলতো,”জীবনে ভয়কে সবসময় জয় করতে হয়,আর তোর বাবা থাকতে তোকে কোনো বিপদ ছুঁতে পারবে না বুঝলি!”পিতৃহারা দিয়া বাবার কথা ভাবতে ভাবতেই নিজের অজান্তেই দুফোঁটা চোখের জল ফেলেছিল।সেইসময় একদম সিনেমার হিরোদের মত ফিল্মিকায়দায় দিয়াকে বুকে টেনে নিয়ে অর্নব বলেছিল,”আমি তো আছি দিয়া তোমার সব ভয়ে,তোমার সব কষ্টে, তোমার পাশে,তাহলে এত কিসের ভয় তোমার!”দিয়ার আবার মনে পরে যাচ্ছিল তার বাবার কথা।মনে মনে ভাবছিল,”ঠিক বাবা যেভাবে তাকে আগলে রাখতো সেভাবে আগলে রাখে না?অবশ্য এতো গেল গতরাতের কথা।মাঝরাতে লোডশেডিংএ পাওয়ার কাটের সময় যে আগাগোড়া আনরোম্যান্টিক মানুষের মনেও একটু আধটু প্রেম কেন জেগে ওঠে,সে কারণ তো স্বয়ং ব্রক্ষাই জানেন, কিন্তু এখন সকাল নটা।ঠিক দশটায় অর্নবের মিটিং।অর্নবের চোখের তারাগুলো সমানে অফিস ফাইলের পেজগুলোতে ঘুরে চলেছে,কানে ব্লুটুথ। সম্ভবতঃ মিটিং এর ব্যাপারেই কারোর সাথে গম্ভীর আলোচনা চলছে।দিয়া তখনও গতরাতের রুপকথার আলোছায়াতে মিশে, কিন্তু অর্নবের ভেতরের কেজো মানুষটা ততক্ষনে গতরাতের স্বপ্নের মায়াজাল থেকে বেড়িয়ে বাস্তবের মাটিতে খুঁটি গেড়ে বসে গেছে।এখন এ মানুষকে সহজে গতরাতের দিয়াকে বুকে জড়িয়ে‌ ধরে আগলে রাখা মানুষটার সাথে মেলানো যাবে না।অর্নবের আর একবার ধমকে অবশ্য দিয়ার ধ্যানটা ভাঙে,দিয়া একটু ভয় পেয়েই ছুটে রান্নাঘর থেকে দই এর বাটিটা আনতে যায়।মনে‌মনে‌ নিজের
অদৃষ্টকে খুব গাল পারতে থাকে দিয়া।কেন যে এমন আনরোমান্টিক কাঠখোট্টা খিটখিটে স্বভাবের বাহাত্তুরে বুড়োর মত পাবলিকের সাথে তার বিয়ে হল!ঠিক সেসময় অর্নবের আর একবার জোরে হাঁক দেওয়ার কথা,দিয়া এত দেরি হচ্ছে কেন!দিয়া তড়িঘড়ি করে দই এর বাটিটা নিয়ে এসে চামচে করে কিছুটা দই তুলে অর্নবকে খাওয়াতে যাবে ভাবছিল। কিন্তু অর্নব দিয়ার হাতটা ধরে থামিয়ে দেয়।দিয়া আবার হকচকিয়ে যায়,মনে মনে ভাবতে থাকে,”কী হল আবার!এইতো বললো দই এর বাটি নিয়ে এসো,তাহলে আবার থামিয়ে দিলে কেন?অর্নব একচামচ দই তুলে দিয়ার মুখে ঢুকিয়ে দিয়ে বলে,”তোমার নিউ স্কুলে জয়েনিং না আজ?অল দ্য বেস্ট”দিয়ার ভ্যাবাচাকা খাওয়া মুখটাতে আচমকা দমকা খুশীর হাওয়া।সত্যিই এই খিটখিটে মানুষটাকে আজও বুঝে উঠতে পারলো না দিয়া! দিয়ার দুচোখে তখন একঝলক খুশীর কলরোল।

মাঝরাতে আবার দিয়ার হঠাৎ করে খিদে পায়।আর মনের মত খাবার খুঁজে না পেলে দিয়ার পেট গুড়গুড় করে।ক্লাস টেনে পড়ার সময় দিয়াকে মাঝরাত অব্দি জেগে পড়তে হত।তার পাশে শুয়ে থাকা ঠাম্মি তখন ঘুমিয়ে কাদা,দিয়া ঠাম্মিকে ঘুম থেকে তুলে বলেছিল,”ঠাম্মি আচারের শিশিটা কোথায় লুকিয়ে রেখেছো বলোতো!ঠাম্মি বলেছিল,ওতো তোর মা লুকিয়ে রেখেছে,আমি অতশত জানিনা বাবা,আমায় বারন করে দিয়েছে,ওকে একটুও খেতে দেবেন না তাহলে দেখবো পড়ার সময়েও আচারের শিশি নিয়ে বসে আছে।দিয়ার অবশ্য ঠাম্মির বলা কথা একটুও পছন্দ হয়নি,তাই মাঝরাতে ঠাম্মিকে তুলে আলুচাট বানিয়ে খেয়েছিল,বেচারা ঠাম্মি!দিয়ার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গেছিল,একথা ভাবতেই দিয়ার মুখে একচিলতে দুষ্টুমির হাসি ফুটে ওঠে,অবশ্য বিয়ে হয়ে এবাড়িতে আসা ইস্তক দিয়ার এহেন ইচ্ছেকে প্রাধান্য দেওয়ার মত মানুষ কোথায়!পাশে শুয়ে থাকা ঘুমন্ত অর্নবকে দেখে তখন দিয়ার মনে হচ্ছিল,যেন একটা সাক্ষাৎ যম, এক্ষুনি ঘুম থেকে উঠে বলবে,”দিয়া শান্ত হয়ে ঘুমোতেও পারো না,মাঝরাতে ঘুমের মধ্যেও আলুকাবলি,দইবড়া এসব বলে চিৎকার করতে থাকো! কিন্তু না,তার বিয়ে করা একমাত্র বর তখন ঘুমিয়ে কাদা আর দিয়ার হঠাৎ মনে পরে যায়,মা যেন কী শিখিয়ে পাঠিয়েছিল,স্বামী নাকি দেবতা!একথা মনে পরতেই দিয়া খিলখিল করে হেসে ওঠে,ইস!মা যদি জানতে পারতো,সে অর্নবকে সাক্ষাৎ যমদূতের সাথে তুলনা করেছে,তাহলে নির্ঘাত আঁশবটি নিয়ে তার পেছনে ছুটে বেড়াতো,বলতো বেহায়া মেয়ে এই শিখিয়ে পাঠিয়েছি তোকে আমি!স্বামীকে যমদূত বলা!দিয়া মুখে হাত চাপা দিয়ে হিহি করে হাসতে থাকে।অবশ্য যমদূতের কেন ঘুম ভেঙেছিল তা দিয়া নিজেও জানে না।হয়তো টয়লেট পেয়েছিল।অর্নব ঘুম চোখে চশমাটা হাতড়ে হাতড়ে পরে বলে,”কীগো এখনো জেগে আছো কেন!”দিয়া গম্ভীরমুখে বলে,”কী করবো আমার তো খিদে পেয়েছে”
“খিদে পেয়েছে?এই মাঝরাতে?”দিয়ার মুখে তখন ছেলেবেলার ছেলেমানুষী,ঠাম্মি আদর করে‌ বলতো তখন,আমার দিদিভাইটা বড্ড আদুরে,বড্ড ছেলেমানুষ,এখন অবশ্য সে ছেলেবেলাও নেই,আর সেই আদর দেওয়ার মানুষও নেই,সময়ের সাথে সাথে সবই তো হারিয়ে যায় আমাদের জীবন থেকে।অর্নবের সাথে বিয়েটাও তো ঠিক সুখের কিনা তা আজো বুঝে উঠতে পারলো না দিয়া! মাঝেমাঝে মানুষটাকে বড্ড কাছের মনে হয় দিয়ার আবার মাঝেমাঝে বড্ড একগুঁয়ে,জেদী,রাগী।ঠিক যেন বুঝেও বুঝে উঠতে পারে না দিয়া,ঠিক যেন কাছে গিয়েও ছুঁতে পারে না দিয়া।কিন্তু সেই মুহূর্তে দিয়ার কানে আসে রান্নাঘরে টুংটাং আওয়াজ,দিয়ার মনে হল নিশ্চয় ইঁদুরের উৎপাত।মাঝরাতেই হাতে র্্যাটকিল স্প্রে নিয়ে রান্নাঘরে ঢুকে দিয়ার চক্ষু ছানাবড়া।অর্নব নামক গম্ভীর মানুষটি তার পরম প্রিয় শান্তির ঘুম ছেড়ে রাত্রিবেলায় স্প্যাগোটী বানাচ্ছে।দিয়ার মনের মধ্যে তো তখন”হায় ম্যা মরজাওয়া,ফিদা হয়ে গেছি বস”টাইপের ফিলিংস চলছে”নিশ্চয় আমার জন্য রান্না করছে,কী ভালো বর পেয়েছে সে!”কিন্তু দিয়ার খুশীর টিউবলাইট তখন অনেকক্ষন ধরে জ্বলবে জ্বলবে করেও আর জ্বলে উঠতে পারলো না,দিয়ার খুশীর গ্যাসবেলুনটা আকাশের অনেক উঁচুতে উঠতে উঠতে উঠতে হঠাৎ ফটাং করে ফেটে গেল,যখন দিয়াকে রান্নাঘরে দেখতে পেয়ে অর্নব বলে উঠলো,ওহ্!তুমি এসেছো এখানে,ভালোই হয়েছে তাহলে,একটু সবজিগুলো কেটে দাও তো, নুডলসে দেব।দিয়া আমতা আমতা করে বলতে যাচ্ছিল,”আমি? সব্জি কাটবো?”হঠাৎ ফ্ল্যাশব্যাকে ভেসে ওঠে বিয়ের আগের সিন।দিয়া রান্না করতে ঢুকেছে রান্নাঘরে,মা বলছে,ওরে তোর জ্বালায় আজ আর আমরা খেতে পারবো না ঠিকসময়ে!তোর বাবা সুগারের রুগী বেশীক্ষন না খেয়ে থাকলে আবার ওর শরীর খারাপ করবে আর দিয়া আবেগঘন গলায় বলে চলেছে,মা দাঁড়াও,হ্যাভ পেশেন্স সব রান্না সময়মত হয়ে যাবে,দিয়া আবার একটা লম্বা মেনুও বানিয়েছিল নিজের হাতে সেদিন দুপুরের লাঞ্চের,ভাত ডাল,শুক্তো,মাছের কালিয়া,চাটনি,পাপড়ভাজা।সমস্ত রান্না দিয়া নিজেহাতে করবে ভেবেছিল সেদিন।
ফাইনালি অবশ্য সব্জি কাটতে গিয়ে নিজের আঙুলটাই কেটে বসে বাড়িশুদ্ধু লোকের মাথা খারাপ করেছিল দিয়া আর রান্না?স্বয়ং অন্নপূর্ণা এসেও উদ্ধার করতে পারেনি দিয়াকে।কোনোরকমে একটাই রান্না করতে পেরেছিল।তা হল পোড়া পোড়া ডাল,তার বাবা অবশ্য ওই পোড়ারান্না খেয়েও বলেছিল, অপূর্ব স্বাদ!আর ওর মা মুখ বেঁকিয়ে বলেছিল,”যত আদিখ্যেতা!মেয়েটা তো আজবাদে কাল শ্বশুরবাড়ি যাবে,এত মাথায় তুললে চলবে ওকে? আর রান্নাঘর? তার মা আজও বুঝে উঠতে পারেনি, শুধুমাত্র একটা পোড়া ডাল রান্না করে কটা সব্জি কাটতে গিয়ে নিজের আঙুল কেটে ফেলা দিয়া কী করে অতটুকু সময়ের মধ্যে রান্নাঘরের ওই হাল করতে পারে!একদিকে লঙ্কাগুড়ো,একদিকে হলুদগুঁড়ো পড়ে রান্নাঘরের মেঝে মাখামাখি,আর একদিকে সর্ষেতেলের বয়াম উল্টে তেলেমাখামাখি সারাঘরে পা পিছলে পরে যাওয়ার অবস্থা।মা জিজ্ঞেস করতে অবশ্য দিয়া খুব সপ্রতিভভাবে উত্তর দিয়েছিল,”কী করবো আরশোলার সাথে কুংফু লড়তে গেলে ওরকম একটু আধটু হয়,আরশোলাটা আমার পিঠের ওপর পরলো আর আমায় কাটা আঙুল নিয়ে ওর সাথে ফাইট করতে হলে কিচেনের একটু দুর্দশা হবে না?কিচেনটা তখন রনক্ষেত্র হয়ে গেছিল জানো মা,একদম কার্গিল যুদ্ধ আর আমি আর ওই আরশোলা ইন্ডিয়া পাকিস্তান-একদম হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।কী বুঝলে!কথাটা বলেই ফিক করে হেসে ফেলেছিল দিয়া,তার মা সবশুনে বলেছিল,আমার আর জেনে কাজ নেই বাপু,এদিকে বলে গেলি কিচেনের ধারেকাছেও তুমি থেকো না,আমি একা সব সামলে নিতে পারবো,আর এদিকে আমার সাধের কিচেনটার এই দশা করলি তুই!এই মেয়ে যে শ্বশুরবাড়ি গেলে কী হবে! সেদিনের কথা মনে পরতেই হাসি পেয়ে যায় দিয়ার,আর অর্নব কিনা দিয়াকে সব্জি কাটতে বলছে!দিয়া অবশ্য চিরকালই বড়ো বিশাল হৃদয়ের মানুষ,একজন মানুষ এই মাঝরাত্রিবেলা তার হঠাৎ খিদের সময়ে তার হেল্প চাইছে!আর দিয়া সেই হেল্প করবে না,তা হতে পারে কখনও?দিয়া পরমানন্দে নিজের গুনাবলী লুকিয়ে স্বেচ্ছায় ভলিউন্টিয়ার করতে এগিয়ে গেল, কিন্তু অর্নবের কেমন যেন একটা সন্দেহ হল,বিয়ের পর থেকে একবারও রান্নাঘরে পা না দেওয়া দিয়াকে এত খুশীতে ডগমগ হয়ে সব্জি কাটতে আসতে দেখে অর্নব অবাকই হল,গম্ভীরস্বরে বললো,পারবে তো সব্জি কাটতে?দিয়া প্রচন্ড অহংকার করে বললো,আরে এতো কোনো ব্যাপারই নয়,আমার কাছে,আমি তো ফাইভস্টার হোটেলের শেফদের থেকেও বেশী ভালো সব্জি কাটতে পারি,একদম বেঁকাট্যারা হয় না জানোতো!অর্নবের ব্যাপারটা কেমন যেন একটা সন্দেহ হল,আর ভাবতে না ভাবতেই দিয়ার কাটা একটা সব্জির টুকরো ছিটকে এসে অর্নবের নাকে গুঁতো খেল।অর্নবের আর বুঝতে বাকি রইল না দিয়ার সব্জিকাটার কেরামতি বড়ই ফাটাফাটি, কিন্তু মুখে শুধু বললো,তুমি বেডরুমে যাও,এখানে বেশীক্ষন থাকলে যে আবার কী কান্ড বাঁধাবে!কিচেনটার হাল বরবাদ হয়ে যাবে,চলে আসে দিয়া মুখ ভার করে, কিন্তু পেট তো খিদেয় চুঁইচুঁই করছে।কিছুক্ষণ পরেই দেখলো অর্নব দুহাতে দুটো বোল নিয়ে ঘরে ঢুকছে,সম্ভবতঃ তাতে স্প্যাগোটি করা,দিয়া আবার মনে মনে ভাবতে থাকে,সত্যি বিয়ে করার কত উপকারিতা!
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here