#দিয়া(দ্বিতীয় পর্ব)
©প্রিয়াংকা শী
এইতো গতমাসেরই কথা বিয়ের পর সমস্ত আত্মীয়ের বাড়িতে নিমন্ত্রন সারতে হয়,তাই অর্নব আর দিয়া মচলন্দপুরে অর্নবের কাকারবাড়ীতে বেড়াতে গেছিল,তখন ওদের বাড়ির বড় বাগানটা দেখে দিয়া আর লোভ সামলাতে পারেনি, দুপুরবেলা চুপিচুপি সবার চোখের আড়ালে বাগানে গিয়ে কোমরে শাড়ীর আঁচল গুঁজে অর্নবের দশবছরের পুঁচকে ভাইঝিটার সাথে গাছ থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে পেয়ারা পাড়ার চেষ্টা করে। সবথেকে নিচু ডালটা থেকেই পেয়ারা পাড়ার চেষ্টা করছিল দিয়া,তবু বেচারি একটা পেয়ারাও পাড়তে পাড়ছিল না,অর্নবের পুঁচকে ভাইঝিটাও বলতে শুরু করলো,”কাম্মা,ছেড়ে দাও,তোমার দ্বারা পেয়ারা পাড়া হবে না,তোমরা শহরের মেয়েরা কী আর গ্ৰামের মেয়েদের মত পেয়ারা পাড়তে পারো?”দিয়া তো ছেলেবেলার মত পেয়ারা পাড়ার আনন্দে লাফাতে লাফাতে ভুলেই গেছিল,তার কাকাশ্বশুর সত্যি খুব স্ট্রিক্ট,যদি দেখতে পেয়ে যায় ভরদুপুরবেলা বাড়ির বৌ কোমরে আঁচল বেঁধে লাফিয়ে লাফিয়ে পেয়ারা পাড়ছে,তাহলে তো বাড়িতে একটা বেশ দক্ষযজ্ঞ বাঁধতে পারে, কিন্তু এতকিছু ভাবার ফুরসৎ কোথায় ছিল দিয়ার!সে তো তখন পেয়ারা পাড়ার আনন্দেই মশগুল। কিন্তু অর্নব যে কখন থেকে চুপিচুপি দাঁড়িয়ে থেকে দিয়ার পেয়ারা পাড়া দেখছিল,তা দিয়া বুঝতেও পারেনি,অবশ্য শেষবার একটা বড় লাফ দিয়েও যখন গাছের সবথেকে নিচু ডালটা থেকেও পেয়ারা পাড়া গেল না,দিয়ার ছোটোবেলার মত ঠোঁট ফুলিয়ে ভেউভেউ করে কাঁদতে ইচ্ছে করছিল।সেইসময় কোথ্থেকে অর্নব নামক কিম্মভুত কিমাকার মানুষটা এসে তার হাইটের আ্যাডভান্টেজ নিয়ে গাছ থেকে একসাথে কয়েকটা পেয়ারা পেড়ে দেয়,ওই যেকটা পেয়ারা গাছের নিচু ডালটায় ধরেছিল,সবকটা।পেয়ারা পেয়ে দিয়া তো তখন দারুন খুশী, গদগদস্বরে অর্নবকে থ্যাঙ্ক ইউ টা বলে দেবেই ভাবছিল,কিন্তু মহাশয়ের আ্যটিটিউড তো কিছু কম যায় না।দিয়াকে দুটো পেয়ারা পেড়ে দিয়ে ভাবলো সে,জগৎ সংসারের সমস্ত কার্য উদ্ধার করে দিয়েছে,দিয়ার কানে কানে চুপিচুপি বলে গেল,অর্নব,”শোনো বামুন হয়ে চাঁদে হাত বাড়াতে নেই”নিমেষে দিয়ার মুখের সমস্ত আনন্দ মিলিয়ে গেল,মানুষটাকে যেই একটু ভালো ভাবতে যাবে ভাবে দিয়া, অমনি সে কিছু না কিছু খারাপ কথা বলে চলে যায়।মনেমনে খুব রাগ হয় দিয়ার দুটো পেয়ারা পেড়ে দিয়ে যা ইচ্ছে তাই শোনানো,”দিয়া হলো বামুন আর গাছের ডালে ঝোলা পেয়ারাগুলো হল আকাশের চাঁদ”এর আগেও দিয়া তার মধ্য উচ্চতা নিয়ে অর্নবের কাছ থেকে দুচারবার টিপ্পনি শুনেছে,যখন ওয়ার্ডরোবের সবথেকে ওপরের তাক থেকে জামা পাড়ার জন্য দিয়াকে টুলের ওপর উঠতে হয়েছে, তখনও পাশ থেকে ওই কিম্ভুত কিমাকার মানুষটা ফোড়ন কেটে চলে গেছে,” নাহ্!ছোটোবেলায় ঠিক করে কমপ্ল্যানটা খাওয়া হয়নি তাহলে, শুধু বয়সেই বড় হয়েছে, কিন্তু বাড়েনি একদম”দিয়া আবার বড়বড় চোখ করে অর্নবের দিকে তাকাতেই অর্নব বলতো,”মানে রিন্টুর কথা বলছি,ও ছোটোবেলায় একদম কমপ্ল্যানটা খায়নি জানোতো,এমা!তোমার কথা কেন বলবো আমি!তুমি তো কত্ত লম্বা! সেদিন তো নিজের চোখেই দেখলাম পেত্নীর মত হাত বাড়িয়ে কেমন অত উঁচুতে ঝোলা গাছের পেয়ারাটাও পেড়ে ফেললে”দিয়ার বেশ খানিকটা রাগ হচ্ছিল আবার তবু অর্নব তো আর থামার পাত্রই নয়,আবার বলে চললো,তাছাড়া তোমার তো এই ছোট্ট একটা পুঁচকে টুল লাগে,জানো রিন্টুর এর থেকে কত বড় লম্বা একটা টুল লাগে,এই একদম আমার হাইটের।”দিয়া ততক্ষনে টুল থেকে নেমে এসে, অর্নবের সামনে দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করে,”বুঝলাম! খুব রসিকতা হয়েছে আমায় নিয়ে!তো আমি নয় ছোটোবেলায় কমপ্ল্যান খাইনি, কিন্তু তোমাকে তো,তোমাকে তো..”দিয়া আবার কথা হারিয়ে ফেলেছিল, কিন্তু নাহ্!ঝগড়ার সময় তো কিছুতেই হারলে চলবে না তাই আবার একটু ভেবেচিন্তে বলেই ফেলে,তোমাকে তো হাইব্রিডের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছিল,তাই এততাড়াতাড়ি তুমি এত লম্বা হয়েছো, তোমার তো শুধু কমপ্ল্যানে চলতো না!দিয়ার কথা শুনে অর্নব হো হো করে হাসতে থাকে,”কী আমি হাইব্রিডের ইনজেকশন নিয়েছি!”দিয়া অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে অর্নবের দিকে।সত্যিই কী তাহলে তার সম্পর্কের পারদ গলছিল!এই কাঠখোট্টা বেরসিক মানুষটাও যে দিয়ার পাল্লায় পরে এইভাবে প্রানখোলা হাসিতে বাড়ি মাতাবে,তা কী কেউ ভাবতে পেরেছিল!দিয়ার এখনও মাঝেমাঝে সেই দিনটার কথা মনে পরে যায় যখন তার শাশুড়ি মা তার হাত ধরে বলেছিল,পারবি আমার ছেলেটাকে একটু জীবনটাকে বাঁচতে শেখাতে?ও যে বয়সের আগেই বড্ড তাড়াতাড়ি বড় হয়ে গেল,সংসারের সব ঝামেলা,দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিতে গিয়ে জীবনটা বাঁচতে ভুলে গেছে ছেলেটা!মৃত্যুপথযাত্রী শাশুড়িকে কথা দিয়েছিল দিয়া,আপনার ছেলে আবার আগের মত হাসবে মা,দেখবেন আমি আমার কথা রাখবো।সেই কথা যে রাখতে পেরেছে দিয়া,তাই ভেবেই ভালো লাগছিল,এই রুক্ষ কাঠখোট্টা মানুষটাও তাহলে দিয়ার পাল্লায় পড়ে বড্ড তাড়াতাড়ি বদলাচ্ছিল। কিন্তু মাঝেমাঝে তবু এখনও অর্নবের মেজাজটা কেমন বেখাপ্পা হয়ে থাকে,যখন কাজের খুব চাপ থাকে অর্নব যেন ল্যাপটপ আর অফিসের ফাইল থেকে চোখ তুলতেই চায় না,সেসময় অর্নবের একটু আ্যাটেনশন পাওয়ার অপেক্ষায় দিয়া ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকে, কিন্তু অর্নবের সময়ই হয় না দিয়ার জন্য,দিয়ার মাঝেমাঝে মনে হয় তাদের সম্পর্কের সমীকরণ বোধহয় আর কোনোদিনই বদলাবে না।অর্নবের ব্যস্ততা দিয়ার মনখারাপের কারণ ছিল না, কিন্তু অর্নবের রুক্ষতা দিয়ার মনখারাপের কারণ ছিল।ঠিক এরকমই একটা সময়ে দিয়া একদিন দেখতে পায়,অর্নব খুব আপসেট,একা একা দাঁড়িয়ে আছে বারান্দায় চুপচাপ।সিগারেটের ধোঁয়ায় ধোঁয়ায় ভরে যাচ্ছে বারান্দাটা,দিয়া ধীরপায়ে অর্নবের কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রাখতেই অর্নব বাচ্চা ছেলের মত দিয়ার বুকে মাথা রেখে ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ওঠে,কী হয়েছে এক্সাটলি!সেটা বোঝার আগেই অর্নব নিজেই বলে ওঠে,”কাকিমাকে বাঁচাতে পারলাম না দিয়া!মায়ের মত উনিও যে লিউকোমিয়ার পেশেন্ট ছিলেন।দিয়া এবার বুঝতে পারে অর্নব রিসভের মায়ের কথা বলছে,রিসভ অর্নবের ছেলেবেলার বন্ধু।একসাথে খেলাধূলা,হৈ হট্টগোল করে বড় হয়েছে দুজনে।তাই কাকিমাও অর্নবের খুব কাছের একজন মানুষ ছিলেন,কাকিমার চলে যাওয়াটা অর্নব একদম মন থেকে মানতে পারছিল না,কারন অর্নবের মাও তো ওই একই অসুখে গত হয়েছিলেন।দিয়া অর্নবের চোখের জল মুছিয়ে ওর হাত ধরে ওকে বাড়ির সামনের রাস্তাটায় নিয়ে আসে, কিছুক্ষন আগেই একনাগাড়ে হয়ে চলা মুষলধারে বৃষ্টিটা তখন থেমে গেছিল, কিন্তু রাস্তায় তখনও গোড়ালিঅব্দি জল জমেছিল,অর্নব বুঝতে পারছিল না তখনও দিয়া ঠিক কী করতে চাইছে,কেন ওর হাত ধরে ওকে রাস্তায় জমা জল দেখাতে নিয়ে এসেছে।দিয়া রাস্তায় জমা জল দেখে একটু মুচকি মুচকি হাসলো,এই তো ব্যস,আমার কাজ হয়ে যাবে তাহলে!”কাজ হয়ে যাবে?কী কাজ হয়ে যাবে?কী আবোলতাবোল বলছো দিয়া?”অর্নবের এবার একটু ভয় করলো দিয়ার মতিগতি দেখে এই পাগল মেয়ে যে কখন কী করে বসে,সত্যি তা বোঝা দায়!দিয়া এবার অর্নবের দিকে তাকিয়ে বললো,”নাও লাফাও”অর্নব এবার একটু ভ্যাবাচাকা খেয়ে বললো,”লাফাবো মানে?আর ইউ লস্ট?হ্যাভ ইউ গন ম্যাড দিয়া,আমি তোমাকে কাকিমার মৃত্যুর কথা বলে আমার কষ্টটা বোঝাতে চেয়েছিলাম,আর তুমি?জাস্ট বিহেভিং লাইক আ স্টুপিড ইডিয়ট”অর্নবের চোখে বিরক্তি স্পষ্ট।দিয়া সবশুনে বললো,হয়ে গেছে আমায় গালাগাল করা? যতখুশি আমায় গালাগাল করতে পারো, কিন্তু আমায় মনের মত গালাগাল করেও কিন্তু তোমার মনের কষ্ট যাবে না,এবার একটু ভ্রু কপালের ওপরে তুলে বললো,কী করে যাবে জানো?
দিয়ার কথায় অর্নবের সবসময় তাক লেগে যায়,মেয়েটা ভুল বলে না ঠিক?অর্নব কিছু বুঝতে পারে না, শুধু ও বকবক করতে শুরু করলে মনে হয় একটা মিঠে তাজা বাতাস এসে ভরিয়ে দিচ্ছে অর্নবের জীবন….অর্নবের বত্রিশ বছরের ক্লান্ত জীবনে অর্নব শুধু জীবনের যাঁতাকলে পিষেছে,বাঁচতে পেরেছে কই!মুক্ত হাওয়ায় তাজা বাতাসে শ্বাস নিয়েছে কই?দিয়া আবার বলে ওঠে,কী ভাবছো?আমি ভুলভাল বকছি তাইতো?শোনো কিছুসময় না ভুলভালই বকতে হয়,যখন ঠিক বলে কিচ্ছু হয় না,তখন একটু ভুলভাল বকতে হয়,কথাটা বলেই অবশ্য আনমনে জিভ কাটে দিয়া,”কী ভুলভাল বকছে সে,নিজেই ভেবে পায় না!”তারপর বলে,শোনো যেটা বলছি সেটা করো,জীবনে দুঃখটাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচলে দুঃখ কখনও তোমায় ছেড়ে যাবে না, কিন্তু ওকে যদি তুমি ছেড়ে দাও,দেখবে ও -ও তোমায় ছেড়ে চলে যাবে,আর কীকরে ছাড়তে হয় জানো ওদেরকে?দাঁড়াও আমি তোমায় শেখাচ্ছি।অর্নব দুহাত তুলে অনেক বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল,দিয়া আমার কথাটা শোনো,কেউ দেখতে পেয়ে গেলে কী হবে!
“আরে!কিচ্ছু হবে না,একবার আমার কথাটা শুনেই দেখো না মিস্টার,ঠকবে না একটুও,”দিয়া আবার ঠোঁট উল্টে বললো,তুমি তো জানোই না কীভাবে জীবনটা বাঁচতে হয়?তোমায় আমি জীবন বাঁচতে শেখাচ্ছি, কীভাবে মুক্ত আকাশে নিঃশ্বাস নিয়ে তাজা ফ্রেশ এয়ার ফুসফুসে ভরতে হয়?তুমি যে জীবনটাকে জীবন বাঁচা বলো,সেটা কী আদৌ জীবন?সারাক্ষন শুধু টেনশন,চিন্তা,ফ্রাস্ট্রেশন,ডিপ্রেশন,লাভ-ক্ষতির হিসেব,ইঁদুর দৌড়ের লড়াই।দিয়া এবার অর্নবের গালে হাত রেখে বলে,কীহবে এত ইঁদুর দৌড়ে দৌড়ে অর্নব?যদি জীবনটা একমুহুর্তের জন্য প্রানখুলে বাঁচতে না পারো”দিয়ার কথা শুনে অর্নবের আবার সব গুলিয়ে যাচ্ছিল,সত্যিই তো এই পাগলি তো ওকে ভুল কিছু বোঝাচ্ছে না!ও যেভাবে খুব সহজে জীবনটা বাঁচতে পারে,অর্নব তো পারে না,ওর যে ছেলেবেলা থেকে ভয় ইঁদুর দৌড়ে না দৌড়ালে তুমি যে হেরে যাবে অর্নব,তুমি যে হেরে যাবে।তাইতো সেদিন যখন কাকাই এর বাড়িতে দিয়া কোমরে শাড়ির আঁচল গুঁজে পেয়ারা পারছিল,কিংবা হাঁটু অব্দি শাড়ি তুলে পাড়ার বাচ্চাদের সাথে কিতকিত খেলছিল।অর্নবের মনে হচ্ছিল আড়ালে দাঁড়িয়ে ও যেন একদৃষ্টে দিয়াকেই দেখে,ওকে তো এত ভাবতেই হয় না,লোকে দেখলে কী ভাববে!ও তো বেশ কারোর পরোয়া না করে জীবনটা বাঁচতে পারে,এমনকি ওর স্ট্রিক্ট কাকাশ্বশুরের চোখরাঙানিকেও ভয় পায় না দিয়া,তাহলে অর্নব কেন পারে না দিয়ার মত জীবনটাকে সহজ স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে?কেন নিজের ভেতরে এত কষ্ট লুকিয়ে রেখেছে ও?অর্নব দিয়ার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে,আর দিয়া অর্নবের সায় পেয়ে বুঝতে পারে,অর্নব দিয়ার পাগলামিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে।দিয়ার প্রানোচ্ছল হাসিতে অর্নবের ভেতরের বিমর্ষ ক্লান্ত মানুষটা কেমন যেন বদলাতে থাকে।দিয়া অর্নবের হাতের মুঠোয় নিজের হাত রেখে বলে,”ভালোবাসা মানে কী জানো অর্নব? ভালোবাসা মানে জলজমা রাস্তায় তুমি যাকে জীবনে সবথেকে বেশী ভালোবাসো তার হাত ধরে জলের মধ্যে ছপাং ছপাং করে লাফানো।এতে সব ডিপ্রেশন চলে যায় বুঝলে?অর্নবের মুখে আর কোনো কথা আসছিল না, শুধু মনে হচ্ছিল দু’চোখ ভরে দিয়াকেই দেখে।দিয়া আবার বলতে শুরু করে,নাও লাফাতে শুরু করো,এখন সবাই যে যার ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পরেছে,কারোর অত জানার চান্সও নেই।দিয়া অর্নবের হাত ধরে ওই বৃষ্টির জলজমা শহরের রাস্তায় সমস্ত ভিড় ভাট্টা কোলাহল,ধোঁয়া,পলিউশন সমস্ত কিছুকে উপেক্ষা করে,শহরজীবনের সমস্ত দুঃশ্চিন্তাকে মুক্তি দিয়ে লাফাতে থাকে আর দূরে বহহুদূরে আকাশের গায়ে হারিয়ে যেতে থাকে সমস্ত বিষন্নতা।দুটি ছেলেমেয়ে তখন পৃথিবীর সমস্ত কষ্ট ভুলে একে অপরের ভালোবাসায় মত্ত,একে অপরকে আবিষ্কার করতে মত্ত।একজন আরেকজনকে জীবন বাঁচতে শেখাচ্ছে,আর আরেকজন অপরজনকে বাঁচতে শেখাতে গিয়ে আবার নিজেকে বাঁচাচ্ছে নতুন করে,আসলে এই ইঁট কাঠ পাথরের পৃথিবীতে বেঁচে তো থাকি আমরা সবাই, কিন্তু বাঁচার মতন বাঁচতে পারি ক’জন?দিয়ার চোখের তারায় অর্নব এক নতুন পৃথিবী খুঁজে পাচ্ছিল।দিয়ার হাত ধরে ওই জলজমা রাস্তায় লাফাতে লাফাতে অর্নব ভুলে যাচ্ছিল কষ্ট কী?যন্ত্রনা কী?প্রত্যেকদিন ফুসফুসে আমরা স্বস্তি শান্তির বদলে টেনশন আর ডিপ্রেশন নামক ভয়াবহ দূষিত বায়ু ভরে চলেছি। মাঝেমাঝে সব ছেড়ে দিয়ে খেয়ালী বাউলের একতারার সুরে জীবনের ছন্দকে ছেড়ে দেওয়া উচিত।দিয়া অনেকক্ষন ধরে অর্নবের হাত ধরে জলের মধ্যে লাফাতে লাফাতে ক্লান্ত হয়ে গিয়ে অর্নবের বুকের মধ্যে মুখ গোঁজে।সেসময় আবার মুষলধারায় বৃষ্টিটা শুরু হয়।বৃষ্টির বিন্দু বিন্দু ফোঁটায় যেন ধুয়ে মুছে যেতে থাকে সমস্ত ক্লান্তি।এক অদ্ভুত আবেশ ঘিরে ধরে দুজনকে,এর আগে এই উপলব্ধি যেন কখনও হয়নি।জলে ভেজা রাস্তায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে দুজনে।দিয়ার বৃষ্টিভেজা ঠোঁটে প্রথমবার ঠোঁট রাখে অর্নব।প্রথম স্পর্শে শিউরে উঠে দিয়া।আকাশপাড়ে তখন দামাল বৃষ্টি অঝোর ধারায় বইছে।
(চলবে)
ভালো লাগলে গল্পের নাম ও লেখিকার নামসহ শেয়ার করতে পারেন।