ত্রিধারে তরঙ্গলীলা পর্ব ২২

0
1369

#ত্রিধারে_তরঙ্গলীলা

|২২|

আজ সূর্যি মামার দেখা মেলেনি। আকাশে মেঘের ঘনঘটা। জানালা ঘেঁষে উদাস মুখে বসে আছে নামী। ঐ আকাশের সকল মেঘ যেন তার মুখে ভর করেছে আজ৷ দেখতে দেখতে তাদের জীবনে কেটে গেছে তিন বছর। পড়াশোনা, বন্ধুত্ব, প্রেম, ঘুরাফেরা, মান অভিমান সবই ছিল বছর জুড়ে। কোনোটাতেই এক রত্তি কমতি ছিল না। এরই মধ্যে ইতি ঘটেছে সুহাস, সৌধদের ম্যাডিকেল পড়ারও। তারা এখন ঢাকা ম্যাডিকেলে ইন্টার্নি করছে। গতকাল ছিল নামী, সুহাসের চতুর্থ বিবাহবার্ষিকী। ঠিক রাত বারোটার সময় নামীর দ্বারে এসেছিল সুহাস। প্রিয়তমাকে বিয়ের চারবছর পূর্তির অভিনন্দন জানিয়েছে। গতকালের সেই সুখে পরিপূর্ণ স্মৃতি গুলো মনে পড়ছে বারবার। আগে সুহাস খুব একটা দায়িত্বশীল ছিল না৷ ইদানীং বেশ দায়িত্বশীল হয়েছে। শিখেছে প্রেমিক এবং স্বামী হিসেবে প্রেমিকা, বউকে বিশেষ যত্ন নিতে৷ ইন্টার্নি করে অল্পস্বল্প আয় করে সে৷ যা দিয়ে বউকে ছোটোখাটো উপহার দেয়। অবশ্য সবার কাছে ছোটোখাটো হলেও নামীর কাছে এগুলোই বিশাল ব্যাপার। অদ্ভুত সুখ আর সীমাহীন ভালোবাসার। সেদিনের দুরন্ত ছেলেটা যে একদিন তাকে ভালোবেসে এতটা উজার করে দেবে একবিন্দুও টের পায়নি৷ ভেবেছিল ওখানেই বোধহয় সব শেষ। ওখানেই সে একদম নিঃশেষ। এই পৃথিবীতে আসলে শেষ বলতে কিছু নেই৷ যেখানেই শেষ ঘটে, সেখান থেকেই শুরু হয় নতুন সম্ভাবনার।

গতরাতে নামী, সুহাস দু’জন মিলে একসাথে খাবার খেয়েছে। নামীর হাতে খেতে ভীষণ ভালোবাসে সুহাস৷ নামীও সুযোগ হলেই নিজ হাতে যত্ন নিয়ে খাইয়ে দেয় তাকে। খুব ছোটোবেলা থেকেই নিজ হাতে খেতে শিখেছে সুহাস আর সিমরান৷ বাবা, মা দু’জনই ব্যস্ত মানুষ। তাদের ভাই, বোনকে দেখাশোনা করত কাজের লোকেরা। তাই মা তিন বছর বয়স থেকেই নিজহাতে খেতে শিখিয়েছে৷ বাসার কাজের লোকের হাতে ছেলেমেয়েরা খাবার খাবে এটা একদম পছন্দ করত না উদয়িনী৷ মায়ের সে শিক্ষায় মানুষ হয়ে কখনো কারো আদর, স্নেহভরা হাতে ভাত খাওয়া হয়নি। যখন থেকে নামীর সঙ্গে তার সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়েছে। যখন থেকে দু’জন দু’জনের পরিপূরক হতে শুরু করেছে তখন থেকেই দু’জন একসাথে খেতে বসলে নামীর হাতেই খাওয়া হয়। একদিন আবদার করেও বসে কখনো সুযোগ হলে সিমরানকেও যেন খাইয়ে দেয়। নামী বুঝতে পারে এটা শুধুই আবদার নয়৷ ভালোবাসা, যত্নের অভাবে নিমজ্জিত থাকা বোনটিকে একটু যত্ন আর ভালোবাসার অনুনয়। এরপর থেকে সিমরান যখনি আসে তাকেও নিজ হাতে খাইয়ে দেয়। এতে করে শশুর, ননদ, স্বামী সবার সঙ্গে খুবই মধুর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে মেয়েটার।

রাতে খাবারের পাট চুকিয়ে সুহাসের দেয়া শাড়ি পরে একান্ত ঘনিষ্ঠ মুহুর্ত কাটায়। চার বছরে সুহাসের সঙ্গে অসংখ্য সময় কাটালেও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে স্বাভাবিক দৈহিক মিলন ঘটে, তা কেবল একবারই ঘটেছিল৷ তাদের তৃতীয় বিবাহবার্ষিকীতে। সৌধদের বাড়িতে। সেদিন সৌধদের বাড়িতে কাজের লোক আর সৌধ ছাড়া কেউ ছিল না৷ তাই প্রিয় বন্ধু আর বোন নামীকে সারপ্রাইজ দিয়েছিল সৌধ৷ সেই মিলনের পর থেকেই যেন সুহাসের মাঝেকার পরিবর্তন গুলো গাঢ় হতে থাকে৷ এক নামীর মাঝেই খুঁজে পায় সকল সুখ। এর আগে নামীর সঙ্গে মন দেয়া, নেয়া চললেও অভ্যেসের দোষে পুরোনো গার্লফ্রেন্ডদের সঙ্গেও সময় কাটিয়েছে বারকয়েক। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে কম ঝগড়া, মনোমালিন্য হয়নি৷ কিন্তু যেদিন থেকে পরিপূর্ণ ভাবে স্ত্রী রূপে নামীকে পেয়েছে। সেদিন থেকে পিছু ফিরে তাকায়নি একবারো। সেইরাত কখনো ভুলার নয়। যেই রাতে ভালোবেসে নিজের সবটা উজার করে দিয়েছে নামী। সে রাতের পর দ্বিতীয় রাত তাদের জীবনে এলো ঠিক এক বছর পর। শত ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও স্ত্রীর নিকট এসেছে সুহাস। দ্বিতীয়বারের মতো স্ত্রীর দেহ, মনে তুলেছে আদিম সে ঝড়। যে ঝড়ের তাণ্ডবে মেয়েটা শতসহস্র বার তার বুকে মরণাপন্ন হয়ে থাকে। মাত্র কয়েকঘন্টা কাছে পেয়ে যতটা সুখ পায় নামী তার চেয়েও বেশি যন্ত্রণা পায় যখন মানুষটা দীর্ঘ সময়ের জন্য দূরে চলে যায়৷ এখনো পাচ্ছে সেই যন্ত্রণা। হৃদয় জুড়ে লেপে আছে সুহাস, শরীর জুড়ে এঁটে আছে সুহাস। অথচ সামনে নেই সুহাস। তার দেয়া প্রতিটা স্পর্শকে স্মরণ করে এখনো বুকে শিহরণ জাগছে। দেহ জুড়ে রয়েছে তার দেয়া আদুরে চিহ্নগুলোও। যা দেখে একই সঙ্গে সুখ, দুঃখ দু’টোই হয়। কবে তারা একসঙ্গে থাকতে পারবে। কবে থেকে তার প্রতিটা রাত কাটবে সুহাসের বুকে মুখ লুকিয়ে? কবে হবে তার সুখে ভরা একটি সংসার? বিষণ্ণ চোখ দু’টো এবারে ঝাপসা হয়ে ওঠে। অশ্রুসিক্ত নয়ন জোড়া বুজে ফেলে আচমকা। দু’ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে নামে গাল বেয়ে৷ তাকায় সহসা, কোলের উপরে থাকা ফোনটা হাতে নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকে। দু’টি শব্দের ম্যাসেজ লিখে সেন্ট করে প্রিয়তমকে,

‘ মিস ইউ। ‘

চোখের পানি মুছে পড়ার টেবিলের সামনে গিয়ে বসল নামী৷ নিধি, প্রাচী চলে যাবার পর এই নতুন বাসায় ওঠেছে সে। বাসাটা সুহাসই ভাড়া করে দিয়েছে। দু’টো বেডরুম, একটি ড্রয়িং, ডাইনিং এবং একটি কিচেনের ছোটোখাটো ফ্ল্যাট। এক রুমে নামী একাই থাকে৷ আরেক রুমে সুহাসের পরিচিত দু’জন ছোটোবোন। সিমরানের স্কুল ফ্রেন্ড এরা। কুমুদিনীতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে অনার্স করছে। দ্বিতীয় বর্ষের স্টুডেন্ট’স। ওরা দু’জন থাকে দু’জনের মতো আর নামী থাকে নামীর মতো৷ সুহাস মাঝেমাঝে এখানে আসে, সময় কাটায় এই যে রাতটা কাটিয়ে গেল৷ এতে করে ওদের বা বাসার মালিকের কোনো সমস্যা হয়নি৷ কারণ সবাই জানে সুহাস, নামী স্বামী-স্ত্রী। পড়াশোনার জন্যই আলাদা থাকতে হচ্ছে দু’জনকে। এছাড়া সিমরান প্রায় রোজই একবার করে আসার চেষ্টা করে৷ এই তিন বছরে অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘটেছে। সেই পরিবর্তনে দূরত্ব কমেছে সিমরান আর নামীর মধ্যেও। ননদ, ভাবি নয়৷ তারা এখন একে অপরের শুভাকাঙ্ক্ষী। সিমরান নামীকে ভাবি নয় বেস্ট ফ্রেন্ড হিসেবে মূল্যায়ন করে৷

সময়ের স্রোতে সবকিছুর পরিবর্তন ঘটলেও পরিবর্তন ঘটেনি উদয়িনীর মাঝে। সে নিজের জেদে অটুট। যা বাড়িয়ে তুলেছে ছেলেমেয়ের সঙ্গে তার দূরত্ব। স্বামীর সঙ্গে দূরত্ব নতুন নয় পুরোনো। শুধু কাগজে, কলমেই তারা স্বামী-স্ত্রী। সম্পর্ক কেবল দুটো সন্তানের বাবা, মা পর্যন্তই। সোহান খন্দকার এখন আলাদা ফ্ল্যাট নিয়ে থাকেন। বাড়িতে আসেন শুধু ছেলেমেয়েদের জন্য। মাসে একবার কিংবা কয়েকমাস পরপর৷ স্ত্রীর মুখদর্শন করে না বহুদিন। ভুলবশত একবার, দুবার হয়ে যায় তখন যখন ছেলেমেয়েদের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এক ঘরে না থাকলেও এক ছাদের নিচে থাকতে হয়। তবু উদয়িনীর হৃদয় নরম হয়নি। চূর্ণ হয়নি অহংকার। ভাঙেনি ভুল। এই পৃথিবীতে কিছু মানুষ থাকে যারা ভেঙে যাবে তবু মচকাবে না। উদয়িনী সেই মানুষদের মধ্যেই পড়ে। এ পৃথিবীতে সেই মানুষ গুলো খুব বোকা হয়৷ যারা বলে ভাঙব তবু মচকাব না। নিজেদের ভেঙে চুরমার করে দিতে যারা প্রস্তুত। তবু মচকাবে না একচুল৷ অথচ তারা কখনো ভেবে দেখে না। মচকানো জিনিস সারিয়ে তোলা যত সহজ ভাঙা জিনিস সারিয়ে তোলা ততই কঠিন। যা একবার ভেঙে যায় তা কখনো জোড়া লাগে না৷ সম্পর্কের সুতোয় টান পড়েছে বহুদিন। ছিঁড়ে যাওয়ার আগে উদয়িনী কি শুধরাবে? উত্তর দেবে একমাত্র সময়।
.
.
কোরবানির ইদের জন্য বেশকিছু দিন ছুটি পেয়েছে সৌধ। বড়ো আপু স্মৃতির বিয়ে ইদের তৃতীয় দিন। হাজব্যান্ড কানাডায় স্যাটেলড। বিয়ের পর বউকেও নিয়ে যাবে৷ সুজা এমপির একমাত্র মেয়ের বিয়ে। তোড়জোড় চলছে খুব। ধুমধাম করে মেহেদি অনুষ্ঠান, গায়ে হলুদ, বিয়ে, বউভাত সবমিলিয়ে জমকালো আয়োজনের করা হচ্ছে। সৌধর সকল বন্ধু, বান্ধুবী, স্কুল, কলেজ মিলিয়ে সকল স্যার, ম্যামকেও আমন্ত্রণ পত্র পাঠানো হয়েছে। বাকি শুধু একজন সে হলো সৌধর হৃদয়েশ্বরী নিধি। ঢাকাতে সুহাস সে আর আইয়াজ একসঙ্গেই থাকে। নিধি, প্রাচী থাকে হোস্টেলে। গতকাল ভোরবেলা নিধির মামা অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুস্থতার মাত্রা কতখানি জানা নেই। নিধি সেভাবে কিছু বলে যেতে পারেনি প্রাচীকে। তেমন কিছু না জানিয়েই ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে মেয়েটা। প্রাচীর কাছে দুপুরে এসব জানতে পেরে প্রচণ্ড রাগ করে সৌধ। ভোরবেলা মেয়েটা একা এতদূর চলে গেল! ভীষণ চিন্তায় পড়ে যায়। প্রাচীর ডিউটি ছিল বলে সঙ্গে যেতে পারেনি। তাই বলে তৎক্ষনাৎ তাকে একবার ফোন দেবে না? এবারে প্রাচীর প্রতিও বিরক্ত সে৷ এরপর কেটে যায় একদিন। পরের দিন নিধির ডিউটি থাকা সত্ত্বেও সে ঢাকায় ফিরে আসেনি৷ ফোনটা বন্ধ করে রেখেছে। ওদিককার কী খবর কে জানে? কী পরিস্থিতিতে আছে মেয়েটা তাও অজানা।
একদিকে বোনের বিয়ে আসন্ন অন্যদিকে হুট করে নিধি উধাও।

পাক্কা তিনদিন যাবৎ উধাও নিধি৷ সৌধর অবস্থা করুণ। ইদের ছুটি পড়ে গেছে এরই মধ্যে। কিন্তু বাড়ি ফেরার উদ্যম নেই কারোরি। একদিকে নিধির চিন্তা অপরদিকে সৌধ। বিপন্ন অবস্থা বন্ধুদের৷ শেষমেশ ব্যাগপত্র গোছাতে শুরু করতে দেখা গেল সৌধকে। মুখাবয়ব বিধ্বস্ত। পুরুষ মানুষ কাঁদতে পারে না৷ সৌধর মতো কঠিন ব্যক্তিত্বের পুরুষরা তো একদমই না৷ কিন্তু মনের কান্না কি থামানো যায়? যায় না তো। থামাতে পারছে না সৌধ। তিনরাত নির্ঘুম কাটিয়ে চোখ, মুখ ভয়াবহ হয়ে ওঠেছে৷ ওর রক্তিম চোখ দু’টোয় তাকালেই বুক ধক করে ওঠছে। কারো সাথে কথা বলে না। আর না কেউ সাহস দেখায় কথা বলার। খাবার বেলায় সুহাসের জোরাজুরিতে একটুআধটু খেয়ে ওঠে পড়ে৷ আর সারাবেলা কাটায় ঘনঘন পানি খেয়ে আর ফোন দেখে৷ ঘনঘন নিধির ফোনে কল করতেও দেখা যায়৷ কিন্তু ওপাশে রিং বাজে না। আর না কেউ রিসিভ করে সৌধর বুকের আগুন নেভায়। হঠাৎ ব্যাগপত্র গোছাতে দেখে সুহাস, আইয়াজ দু’জনই নিজেদের ব্যাগ গোছাতে শুরু করল। ওরা ভেবেছিল বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরুবে সৌধ৷ কিন্তু ওদের ভুল প্রমাণ করে গম্ভীর গলায় সৌধ বলল,

‘ আমি ফুলবাড়িয়া যাব। তোরা যেতে চাইলে আসতে পারিস। নয়তো বাড়ি ফিরে যা। ‘

চমকে গেল সুহাস৷ চমকাল আইয়াজও। বেচারার ধৈর্যের সব বাঁধই ভেঙে গেছে বুঝতে পেরে সুহাস বলল,

‘ আমরা যাব তোর সাথে। ‘

আইয়াজ বাঁধ সেধে বলল,

‘ নিধির পরিবারে যদি সমস্যা হয়ে থাকে? ওর বাবা, কাকারা নাকি সাংঘাতিক মানুষ। হিতে বিপরীত হবে না তো? ‘

কঠিন দৃষ্টিতে তাকাল সৌধ। চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠল নিমিষেই । আইয়াজ ঢোক গিলল। ঈষৎ হাসার চেষ্টা করে ক্ষীণ কণ্ঠে বলল,

‘ তুই যেতে চাইলে যাবি বারণ নেই তো। কিন্তু গেলে কী সমস্যা হতে পারে স্মরণ করিয়ে দিলাম। সবশেষে আমরা তো আর নিধির ক্ষতি হবে এমন কিছু করতে পারি না। ‘

সৌধর মনের অস্বস্তি তীব্র হলো। সে ওখানে গেলে নিধির ক্ষতি হবে এটা বিশ্বাস হচ্ছে না৷ বারবার মন বলছে সে ওখানে না গেলেই ওর ক্ষতি হবে। তাই তো আর মন মানছে না। নিজেকে আর আঁটকেও রাখতে পারছে না। অদৃশ্য এক সুতো যেন টানছে খুব। যেতে হবে তাকে। শিঘ্রই যেতে হবে। ব্যাগপত্র গুছিয়ে তৈরি তিন বন্ধু। এমনই সময় সুহাসের ফোন বেজে ওঠল। স্ক্রিনে নিধির নাম্বার জ্বলজ্বল করছে। সুহাস চ্যাঁচিয়ে ওঠল,

‘ দোস্ত নিধির কল। ‘

মুহুর্তেই ছোঁ মেরে ফোনটা নিয়ে নিল সৌধ। বুকের পাটা হাপড়ের মতো ওঠানামা করছে তার। হাত, পা কাঁপছে ভীষণ। সে কাঁপা হাতেই ফোন রিসিভ করল। অমনি শুনতে পেল আত্মায় প্রশান্তি দেয়া কণ্ঠস্বর,

‘ এই সুহাস কই তুই? ‘

‘ নিধি! ‘

থমকানো কণ্ঠ সৌধর। যা শুনে নিধির কণ্ঠও রোধ হয়ে এলো। সৌধ থমকানো স্বর এবার ব্যগ্রতায় রূপ নিল। অধৈর্য গলায় সে বলল,

‘ তুই কোথায়? কেমন আছিস নিধি? কী হয়েছিল তোর, ফোন বন্ধ ছিল কেন? ‘

‘ ভাইই, সব প্রশ্নের উত্তর দিব। আমি আর প্রাচী তোদের বাসার সামনে আছি। বাসায় থাকলে জলদি চলে আয়। ব্যাগপত্র গুছিয়ে একদম সিএনজি করে বেরিয়েছি। এটা নিয়েই বাড়ি ফিরে যাব। আসব একদম ছুটি কাটিয়ে। তার আগে দেখা করে যাই তোদের সঙ্গে। ‘

তিন বন্ধু বেরিয়ে এলো। নিধি প্রাচীও সিএনজির ভিতর থেকে বেরিয়েছে। সৌধ সামনে আসতেই নিধি বিস্মিত হয়ে গেল! বড়ো বড়ো চোখ করে মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,

‘ এ কী অবস্থা তোর? চোখ মুখের এ কী হাল! মনে হয় তিনদিন না ঘুমিয়ে গাঞ্জা খাইছিস। ‘

সুহাস, আইয়াজ নিধির ওপর প্রথমে রাগান্বিত থাকলেও পরমুহূর্তে ওর কথাবার্তা শুনে হেসে ফেলল। নিধি কথা বলার ফাঁকে সৌধর কপালে একবার হাত রাখল। সুহাসের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ জ্বর তো আসেনি। ও’কে এমন লাগছে কেন? তোদেরও তো চোখমুখ শুঁকনো। আরে ভাইই আমি মরে যাইনি যে তোদের অবস্থা এমন হবে। আমাদের ওখানে চারদিন যাবৎ বিদ্যুৎ ছিল না। ফোনে চার্জ ছিল না বলে বন্ধ দেখিয়েছে। তাছাড়া মামা এতটাই অসুস্থ ছিল যে ব্যস্ততায় আমি ফোন করারও সুযোগ পাইনি। ‘

কথাগুলো বলতে বলতে সৌধর কপাল থেকে হাত সরিয়ে একটু সরে যাচ্ছিল নিধি৷ কিন্তু সরতে পারল না। সকলের সম্মুখে আকস্মিক নিধিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল সৌধ। বরফের মতো শীতল আর শক্ত হয়ে গেল নিধি। দু-চোখ বড়ো বড়ো করে তাকাল পাশে দাঁড়ানো সুহাস, আইয়াজের দিকে৷ ওরা ইশারা করে বোঝাল, ‘ প্লিজ নিধি রাগ করিস না। ওকে একটু সামলে ওঠতে দে। হুট করে তোর সাথে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়াতে ছেলেটা মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। ‘ ওদের ঠোঁট নাড়ানো, ইশারায় বলা কথাগুলো বুঝতে অসুবিধা হলো না নিধির৷ আকস্মিক বুকের ভেতর চাপা কষ্ট অনুভব করল সে। স্মিত হেসে নিজের কষ্ট গুলো আড়ালে রেখে সৌধর পিঠে হাত রাখল সন্তর্পণে। টের পেল সৌধর হৃৎস্পন্দনের ভয়াবহ গতি। যা আচমকা বুক কাঁপিয়ে দিল তার। চোখ বুজে এলো আপনাআপনি। দু-চোখের কার্ণিশ বেয়ে পড়ল দু’ফোঁটা অশ্রুজল। সৌধর ভারী নিঃশ্বাস, হৃৎস্পন্দ সমস্তই অনুভব করল নিধি৷ তার সর্ব দেহে, সর্ব মনে কাঁপন ধরিয়ে দিল সৌধর প্রগাঢ় অনুভূতি। নিজেকে দূর্ভাগিনী মনে করবে নাকি সৌভাগিনী? এক কঠিন দ্বিধায় দিশেহারা হলো মন৷

| চলবে |
®জান্নাতুল নাঈমা
অনেকদিন পর ত্রিধারে তরঙ্গলীলা নিয়ে ফিরলাম। সবাই পাশে থাকবেন আশা করছি। সকল পাঠকদের উদ্দেশ্যে একটি বার্তা দিতে চাই, আপনাদের ভালোবাসা এবং সাপোর্টে এক তারিখ থেকে আমার প্রথম বই – মিশিবিবির প্রি-অর্ডার আসতে চলেছে। ফেসবুকে, ই-বুক প্লাটফর্মে আমার লেখা পড়েছেন সবাই। এবার বইয়ের পাতায়, বইয়ের ঘ্রাণে আমার লেখা ছুঁয়ে দেখার স্বাদ নিশ্চয়ই হয়েছে? যারা আমার লেখা ভিন্ন জনরার দারুণ এই বইটি পড়তে চান তারা তৈরি হয়ে নিন। প্রি-অর্ডার শুরু এক তারিখ থেকে। ভালোবাসা এবং কৃতজ্ঞতা রইল সকল পাঠকের প্রতি৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here