তোর শহরে রেখেছি পা (পর্ব ১৬)

0
467

#তোর_শহরে_রেখেছি_পা
#পর্ব_১৬
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

আরহাম আর আরুহি দুজনে আইসক্রিম খেয়ে খোলা রাস্তায় হাত ধরে হাঁটছে। ওদের দেখে মনে হচ্ছে পাঁচ বছরের বাচ্চা। রাত প্রায় দশটা বাজে অথচ বর আর বরের কোন পাত্তা নেই। এদিকে আজিম আহমেদ সব সামলে নিয়েছে। দুই ভাই-বোন মিলে ছোটবেলায় হাড়িয়ে গিয়েছে। কে জানে এরকম রাত আসবে কিনা আর। কিছু কিছু মুহুর্ত হঠাৎ করেই আসে কিন্তু সেই মূহুর্ত বা অনুভূতি জীবনে দ্বিতীয় বার আসে না। আরহাম আর আরুহি বাড়ি ফিরলো। আনোয়ার খান আর আনোয়ার খানের গিন্নি ওদের কথা শোনালো এত রাত করে কেউ বাইরে থাকে। নতুন জামাই কিছু হয়ে গেলে কি হতো। হ্যানত্যান বকের ঠ্যাং । আজ আরহাম বা আরুষি তাদের কিছুই বললো না। মাঝে মাঝে না হয় অধিকার ফলাক। খেয়ে দেয়ে আরহাম আর আরুহি নিজেদের রুমে ঢুকে অন্যরকম কিছু পরিবর্তন দেখতে পেল। ওদের ঘরে কেউ এসেছিল। আরহাম আর আরুহি ঘর থেকে বেরিয়ে একে অপরের রুমের দিকে যাচ্ছিল মাঝপথেই দেখা হয়ে গেল। আরুহি বলল,,

“আরুহি তোর রুমেও কি কিছু পরিবর্তন দেখতে পেলি?”

“এখানে না রুমে চলো। দেয়ালের ও কান আছে কথাটা মাথায় আছে তো বুঝতে পারি না কিভাবে মাঝে মাঝে বোকা হয়ে যাও। নাকি বিয়ের খুশিতে বোকা হয়ে গেলে।”

“আরে বাবা যাচ্ছি তো । বিয়ে করলে মানুষ বোকা হয় না। বিয়ে করলে নাকি বুদ্ধি বাড়ে।”

“সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি।ইনি নাকি আবার সি আইডি। চলো রুমে চলো।”

“হুম চল।”

আরুহি আর আরহাম আরুহির রুমে চলে গেল। রুমে গিয়ে আরুহি দরজা ভালো করে বন্ধ করে দিল। তখন আরহাম বলল,,,

“নিশ্চয়ই প্রমান খুঁজতে এসেছিল কেউ আমাদের ঘরে?”

“তা তো বুঝতেই পেরেছি। তবে যে বা তারা খুজেছে তারা সব কিছু পারফেক্ট ভাবে করতে চাইলেও একটু মিস্টেক করে ফেলেছে। তারওপর আমাদের নজর এড়িয়ে কিছু করা সম্ভব নয়। তবে তাদের কে গাধা বলতেই হচ্ছে। কারন এখনকার যুগে কেউ রুমে প্রমান রাখে নাকি। কতো জায়গা আছে রাখার তবে এরা বুঝতে পারবে না। এদের বুদ্ধি এখনো এনালগ-ই রয়ে গেছে দেখছি। ভিলেন হবি ঠিক আছে একটু স্মার্ট ভিলেন হ তা না করে কিছু কিছু জায়গায় এনালগ-ই রয়ে গেছে। ”

“সব তো ঠিকই আছে। যাই তাহলে ঘুমোতে যাই। কাল অনেক ধকল যাবে আমার ওপর দিয়ে।”

“সব কাজ করছি আমি আর সব ধকল নাকি ওনার যাবে। ”

“কাল একটা মানুষের সারাজীবন এর সব দায়িত্ব নিচ্ছি এটা কি কম ধকল নাকি। তাছাড়া তুই সেসব বুঝবি না। অনেক রাত হয়েছে। এখন ঘুমানোটা দরকার। ”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

” এক মিনিট নেহমাত শেখ আর আঁখি খানের তো কাল সকালে আসার কথা ছিল আজ এলো কেন?”

“তোমাকে দেখতে এসেছে আর কি করতে আসবে। বেশি চিন্তা না করে এখন যাও ঘুমাও। ”

“ওকে আল্লাহ হাফেজ!”

“আল্লাহ হাফেজ এবং আসসালামু আলাইকুম।”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। শুকরিয়া শান্তিটা খুব দরকার ছিল।”

“হুম এখন যাও।”
_______________

আরেকটা নতুন দিনের সূচনা। প্রতিটা সকালই আলাদা সৌন্দর্য্য আর স্নিগ্ধতা নিয়ে আসে!

আজ আফরিন আর আরহাম এর শুভ বিবাহ। সকাল সকাল উঠে আরহাম আর আরুহি নামাজ আদায় করে নিয়েছে। আরুহি কাজে লেগে পরেছে আরহাম মনোযোগ দিয়ে তার বোনের কাজকর্ম দেখছে। কারন সে চাইলেও কেউ তাকে কাজ করতে দিচ্ছে না। আরহাম আরুহির খাবার নিয়ে বসে আছে কিন্তু আরুহির পাত্তা নেই। ও গিয়ে দেখলো আরুহি বাগানে কাদের কে কি যেনো বুঝিয়ে দিচ্ছে। সেখান থেকে আরহাম আরুহিকে টেনে এনে টেবিলে বসালো। তখন আরুহি বলল,,

“ভাইয়া কি করছো দেখছো না আমি কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছিলাম।”

“আগে খেয়ে নে পরে করবি তাছাড়া আজ আমাদের বাড়িতে তেমন কোন কাজ নেই। কাল আমাদের বাড়িতে অনুষ্ঠান!”

“আমি আমার ভাইয়ের বিয়েতে কোন ত্রুতি রাখতে চাই না।”

“হুম বুঝেছি এখন খেয়ে নে হা কর!”

আরহাম আরুহিকে খায়িয়ে দিচ্ছে। বাড়িতে যারা ওদের দেখছে তারা ওদের ভালোবাসা দেখে মুগ্ধ। তখন নেহমাত শেখ কে বাড়ির ভেতরে ঢুকতে দেখা গেল। তা দেখে আরুহি বলল,,

“আরে ফুপা আপনি সকাল সকাল কোথায় গিয়েছিলেন। ব্রেকফাস্ট করেছেন।”

তখন নেহমাত শেখ মেকি হাসি দিয়ে বলল,,

“আরে এই তো আশে পাশেই হাটছিলাম। হুম ব্রেকফাস্ট করেছি। ”

“ওহ আচ্ছা। আপনাদের কোন অসুবিধা হচ্ছে না তো। না মানে আপনি তো আমাদের বাড়িতে পুরোনো হয়েও নতুনভাবে আমাদের বাড়িতে এসেছেন। ”

এ কথা শুনে নেহমাত শেখ কিছুটা হকচকিয়ে গেল। তখন আনোয়ার খান বললেন,,

“পুরোনো হয়েও নতুন মানে?”

“আরে দাদুভাই ফুপি তো আমাদের পুরোনো আত্মীয় কিন্তু এসেছে কাল তাই বললাম। তা ফুপা অসুবিধা হচ্ছে না তো।”

তখন নেহমাত শেখ বলল,,

“আরে অসুবিধার কি আছে। আমরা আমরাই তো। ”

“ঠিক বলেছেন আমরা আমরাই তো। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। আর সমস্যা হলে একটু মানিয়ে নেবেন। বুঝতেই পারছেন আমাদের আপনারা ছাড়া কেউ নেই। ”

“সমস্যা নেই আরুহি। তবে যাই বলো না কেন তোমার বাবা একজন চমৎকার মানুষ ছিলেন বাড়িটাও চমৎকার ভাবে বানিয়েছিলেন। তার সাথে ছিলেন সাহসী।”

“সাহসী না হলে কি জীবনে এত কিছু করতে পারতো। তাই হোক এখন আর পুরোনো কথা ভেবে লাভ নেই। আপনারা বরং এখন রেস্ট নিন। ”

এ কথা শুনে নেহমাত শেখ এক মুহুর্ত দাঁড়ালেন না। আঁখি খান নিচে তার মায়ের সাথে রয়েছে। মূলত একটু কাজ করে ভালো দেখানোর চেষ্টা। আরুহি মনে মনে বলল,,

“যান নেহমাত শেখ ওপরে গিয়ে দেখুন আপনার জন্য কি অপেক্ষা করছে। ”

নেহমাত শেখ তারজন্য রাখা বরাদ্দকৃত রুমে চলে গেল। কেন যেনো তিনি আরুহির চোখদুটো সহ্য করতে পারেন না। আরুহির চোখ ওর বাবার মতো হয়েছে। যখন ও তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওনার দিকে তাকিয়ে থাকে তখন ওনার অস্বস্তি বোধ হয়। নেহমাত শেখ রুমে ঢুকে বিছানার ওপর একটা খাম দেখতে পেল। সে খামটা খুলল সেখানে একটা চিঠি। চিঠিটা খুলে পরতে লাগলো,,,

“পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না, আল্লাহ’কে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’লা কঠোর শাস্তিদাতা”
(আল-মায়িদাহঃ ২)
“তোমরা তো প্রাধান্য দাও কেবল পৃথিবীর এই (বৈষয়িক) জীবনটাকে অথচ পরকালীন জীবনটাই উত্তম এবং স্থায়ী— অনন্তকাল!
সূরা আল ‘আলাঃ১৬-১৭

আজ কিছু করার জন্য তোমরা প্ল্যান করেছো। তবে খবরদার সেটা ফলাতে যেও না। এর ফল ভালো হবে না। তোমাদের কৃতকর্মের সব কথা জেনেও বসে আছি তোমাদের কিছু করছি না। ভুলেও আজ কিছু করতে যেও না। আমার নজর সবসময় তোমার ওপরেই আছে। আমাকে তোমাকে ফিনিস করতে দু সেকেন্ড ও সময় লাগবে না। প্রথম দুটো আয়াত পাঠালাম কেন জানো যদি তোমার হৃদয় পরিবর্তন হয়। তবে হবে না জানি। আজ ভুলেও সীমালঙ্ঘন করতে যেও না। এর পরিণাম তোমার বা তোমার পরিবারের জন্য খুব একটা ভালো হবে না। আর হ্যা আশেপাশে আমাকে খুঁজতে যেও না খুঁজলেও পাবেনা।

ইতি
তোমার অজানা শত্রু!

চিঠিটা পরেই নেহমাত শেখ ঘামতে লাগলো। কে এই অজানা শত্রু। যে আমার ব্যাপারে সব জানে। আর সে জানালোই কিভাবে আজ কিছু করার প্ল্যান করেছি। না আজ প্ল্যানটা কাজে লাগানো যাবে না। যে চিঠিটা পাঠিয়েছে বা রেখেছে। সে নিশ্চয়ই আমার ব্যাপারে সব জানে। এই চিঠিটা কে রেখেছে আরহাম নাকি অন্য কেউ। আরহাম আর আরুহিকে দেখে বোঝা তো যায় না। ওরা ওদের বাবা মায়ের মৃত্যুর রহস্য জানে। তবে ওদের কথাগুলো বেশ রহস্যময় লাগে। যদি ওরা জেনেই থাকে আর প্রমান ওদের কাছেই থাকে তাহলে ওরা চুপ করে থাকতো না। আর ওরা তো আজ সকাল থেকেই ব্যস্ত। আরহাম এর কাজ না থাকলেও ও আরুহির পেছন পেছন ছিল। নেহমাত শেখ কাকে যেনো ফোন করে মানা করলো। তখন রুহানি এলো রুমে আর বলল,,,

“বাবা তোমাকে একজন একটা খাম পাঠিয়েছিল পেয়েছো?”

“পেয়েছি কিন্তু কে দিয়েছে খামটা।”

“জানিনা তুমি বাড়ি থেকে বের হবার পর। একটা ছেলে আসে মুখে মাস্ক ছিল তাই চেহারা দেখিনি। তোমার নাকি একটা খাম আছে খুবই দরকারি কাগজ আছে তাতে তোমার নাকি খুব দরকারি তাই তাড়াতাড়ি পাঠাতে বলেছো । তুমি এখন এখানে তাই এখানের ঠিকানা দিয়েছো। আমিও জরুরি ভেবে রেখে দিয়েছি।আর তোমার বিছানায় রাখলাম। তুমি বাড়িতে এসেছো শুনে বলতে আসলাম। কিসের কাগজ বাবা?”

তখন নেহমাত শেখ একটু ভয় পেল ইতস্তত করে বলল,,

“এই তো অফিসের খুব জরুরী একটা তথ্য দরকার ছিল।তাই চাইছিলাম। ”

“ওহ আচ্ছা।”

বলেই রুহানি রুম থেকে বেরিয়ে গেল। সব শুনে তিনি চিন্তিত হয়ে পরলো কে এই অজানা শত্রু। নেহমাত শেখ অন্য কিছু ভাবতে লাগলো।

___________________

আফরিন কে আবরার খায়িয়ে দিচ্ছে আজ এ বাড়িতে অবিবাহিত ভাবে শেষ দিন। তাই ভাইয়ের কাছে আবদার করেছে তাকে খায়িয়ে দিতে হবে। আবরার ও আর মানা করেনি পরম যত্নে বোন কে খায়িয়ে দিচ্ছে।পাশে মিস্টি বসে আছে। হুট করে মিস্টি বলল,,,

“আচ্ছা চাচ্চু বিয়ের দিন কি মেয়েদের ভাই মেয়েদের খায়িয়ে দেয়?’

তখন আবরার হেসে বলল,,,

“হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন মামন?”

“তোমার খাওয়ানো দেখে আমি টেনশনে পরে গেছি। আমার তো বড় ভাই নেই। আমার বিয়ের দিন আমাকে খায়িয়ে দেবে কে? সারাদিন না খেয়ে থাকতে হবে নাকি আল্লাহ মালুম।”

এ কথা শুনে আবরার আর আফরিন হেসে উঠলো। আফরিন মিস্টির গাল ধরে বলল,,

“ওরে পাকা বুড়ি। বিয়ের দিন ভাইকেই খায়িয়ে দিতে হবে এরকম কোন নিয়ম নেই। আমার আজ ভাইয়ার হাতে খেতে ইচ্ছে করছিল তাই ভাইয়ার কে বলতেই ভাইয়া খায়িয়ে দিচ্ছে।”

“যাক বাবা বাঁচলাম আমার বিয়ের দিন আর আমাকে না খেয়ে থাকতে হবে না। তবে আমি কিন্তু আমার মা বাবার কাছে আমার ছোট ভাই চেয়েছি। তারা বলেছে এনে দেবে।”

“তাই নাকি কোথা থেকে এনে দেবে প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করবে নাকি দারাজ থেকে অর্ডার করে আনবে।”

তখননি কোথা থেকে নাদিয়া এসে আফরিনের কান ধরে বলল,,,

“এই আফরিন তুমি আমার মেয়েকে আজে বাজে কি বলছো। ও এখনো ও ছোট ও এতকিছু বোঝে নাকি। এ সময় তুমি তা বুঝাবে তাই বুঝবে তাই ভালো কিছু শেখাও বুঝলে।

“ভাবি আমার লাগছে। প্লিজ ছেড়ে দাও। এখন যদি আমার কান টা ছিঁড়ে যায় তাহলে আমার জামাই বলবে কি মেয়ে বিয়ে করলাম তার তো একটা কান নাই।”

“হইছে আর ঢং করতে হবে না। ছেড়ে দিলাম।
বাই দ্য চিপা গলি আফরিন তুমি কি তোমার বাচ্চা ডাউনলোড করবে নাকি দারাজ থেকে অর্ডার করবে কোনটা।”

কথাটা শুনে আফরিন লজ্জা পেল। তা দেখে আবরার আর নাদিয়া হেসে উঠল। মিস্টি ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছে না। তখন মিস্টি বলল,,,

“চাচ্চু , আম্মু তোমরা হাসছো কেন?” আর ফুপি কি বলল! বাচ্চা কি অর্ডার করতে হয়। ”

আফরিন এর খাওয়া শেষ। আবরার হাত ধরে মিস্টিকে সামনে এনে বলল,,

“বাচ্চা হচ্ছে আল্লাহর একটা নেয়ামত। আর বাচ্চা টা হবে তোমার মায়ের পেটে। আল্লাহ চাইলে খুব তাড়াতাড়ি তোমার ভাই বা বোন আসবে ইনশাআল্লাহ।বুঝলে তোমার এত মাথা ঘামাতে হবে না।”

“ওহ আচ্ছা কিন্তু আমার ভাই বা বোন যদি পেটের ভেতরে থাকে তাহলে আলো বাতাস পাবে কোথা থেকে। খাবে কি?”

“সে সব কিছুর ব্যবস্থা আল্লাহ করবেন। আমাদের সবার ওপরে আল্লাহ আছে । তিনি আমাদের সবাইকে সৃষ্টি করেছেন। তাই তো আমাদের সবকিছুর জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা উচিৎ। আচ্ছা সেসব বাদ দাও তোমার ছোট মাথায় সেসব এখন ঢুকবে না। তুমি বরং নিচে গিয়ে গেল গিয়ে। ”

“আরে আমি খেলবো কিভাবে সারা বাড়ির মধ্যে আমিই একমাত্র বাচ্চা। তাছাড়া আর সবাই কতো বড় বড় ভাই বোন আমার। আন্টি থাকলে ঠিক আমার সাথে খেলতো।”

“আচ্ছা তাহলে আফরিন এর সাথে থাকো।”

“আচ্ছা।”

আবরার এর কাজ আছে দেখে আবরার রুম থেকে চলে গেল। নাদিয়া এসেছিল খাওয়া শেষ হয়েছে কিনা দেখতে আর আসার পর আফরিনের কথাটা শুনতে পেল। নাদিয়া সব গুছিয়ে চলে গেল।

_________________________

আরহামকে নিজ হাতে সুন্দর করে সাজিয়ে দিচ্ছে আরুহি। দুজনের চোখে পানি চিকচিক করছে মুখে রয়েছে তৃপ্তির হাসি। মেরুন রঙের পাঞ্জাবি তে দারুন লাগছে আরহাম কে। সব কিছু শেষ শুধু পাগরি টাই পড়ানো বাকি। আরুহির থেকে আরহাম কিছুটা লম্বা আরহাম বোনের কাজ কে একটা চেয়ার এনে চেয়ারে বসলো। আরুহি মুচকি হেসে ভাইয়ের মাথায় পাগড়ি পরিয়ে দিল। আর বলল,,,

“মাশাআল্লাহ আমার ভাইটাকে অনেক সুন্দর লাগছে।”

“লাগবেই তো লোকে বলে বিয়ের দিন নাকি বর আর কনে কে সব থেকে বেশি সুন্দর লাগে। জানিনা এর সত্যতা কতটুকু।”

“লোকে ঠিকই বলে। আজ তো আফরিন তোমাকে দেখে চোখ-ই ফেরাতে পারবে না।”

“আফরিন এর কাছে আমি কিছুই না। আফরিন কতো ফর্সা।”

“সিরিয়াসলি ভাইয়া তুমি এরকম বলছো। আল্লাহ তায়ালা আল কোরআন এ বলেছেন,,

“আমি মানুষ জাতিকে সৃষ্টি করেছি সব থেকে সুন্দর আকৃতিতে।

আল্লাহর সৃষ্টি সবসময় ই সুন্দর।তাছাড়া তুমি অবুঝ নও। কিন্তু আজ অবুঝের মতো কথা বললে। তুমি জানো তোমাকে পছন্দ করে দেখে তোমার বউ সুন্দর ছেলেকে রিজেক্ট করে দিয়েছে। তোমাকে পছন্দ করে দেখেই না বিষয়টি এরকম বিয়ে পর্যন্ত গড়িয়েছে। ভুলেও আর এসব বলবে না।”

“কি আফরিন কার সাথে বিয়ে রিজেক্ট করেছে?”

“তুমি এসব ছাড়ও? এখন চলো আমাদের দেরি হচ্ছে। তোমার বউ তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।”

আরহাম বোনের হাত ধরে দার করিয়ে বলল,,,

“আমার বোন আমাকে সুন্দর বলেছে ঠিক আছে। আমার তো বলা হয় নি মাশাআল্লাহ আমার বোনকে এই শুভ্র রঙে অনেক সুন্দর লাগছে। আমার তো আজ বিয়ে । লোকে নজর লাগালেও আমার বিয়ে আমার বউয়ের সাথেই হবে। কিন্তু আমার বোন তো অবিবাহিত তার তো নজর লাগতেই পারে। দাড়া আমি একটু নজর কাটিয়ে দিই।”

আরুহি মুচকি হাসলো। আরুহি আবরারের দেওয়া সাদা রঙের গাউন পরেছে সাথে হিজাব। মুখে হালকা মেক আপ এইটুকু তেই আমাদের নায়িকা কে অনেক সুন্দর লাগছে।আরহাম সূরা নাস আর সূরা ফালাক পরে বোনের মাথায় ফু দিয়ে দিল। তখনি আজিম আহমেদ তাড়া দিল। ওরা সবাই আফরিনের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল। আরহাম বিয়ের গাড়িটা ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। আরুহি আর আরহাম সেই গাড়িতে যাবে বাকিরা অন্য গাড়িতে।

______________________

নাহিয়ান খানের বাড়িতে রমরমা পরিবেশ। আত্মীয় স্বজন এ পুরো বাড়ি ভরপুর। আফরিন কনে সেজে বসে আছে। আফরিন মেরুন রঙের গর্জিয়াস লেহেঙ্গা সাথে গর্জিয়াস মেরুন রঙের হিজাব। মুখে হালকা মেক আপ। ব্যস আমাদের কনে তৈরি। মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে। আফরিন এর কাজিন রা আর নাদিয়া মিলে আফরিন কে জালাচ্ছে। তখন শোনা গেল বর এসেছে। সবাই আফরিন কে একা রেখে চলে গেল। গেট আটকাতে হবে তো। আফরিন এর অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে। অন্য রকম ভালো লাগছে। তখন ওর রুমে নাসরিন খান এলো। মাকে দেখে আফরিন একটু ইমোশনাল হয়ে পরলো। নাসরিন খান মেয়ের হাত ধরে বলল,,,

“সরি মা তোমার যখন আমাকে দরকার ছিল আমি তোমার পাশে ছিলাম না। পারলে আমাকে মাফ করে দিও।”

“প্লিজ মা আমি সব ভুলে গেছি তুমি প্লিজ এখন আর এসব মনে করো না। হ্যা ছোটবেলায় তুমি সাথে ছিলেন না। কিন্তু এই পাঁচটা বছরে তুমি তো তোমার সর্বচ্ছো চেষ্টা করেছো আমাদের ভালো রাখার জন্য। আমাদের খেয়াল রেখেছো।”

নাসরিন খান মেয়েকে জরিয়ে ধরলো। আফরিন ও মাকে জরিয়ে ধরলো। কিছুক্ষণ ইমোশনাল সিন হলো।

নিচে গেটে আফরিনের কাজিন দের আবদার মিটিয়ে ঢুকলো আরহাম আর আরুহি। আবরার আরুহিকে দেখেই থমকে গেছে। দুজনেই আজ শুভ্র রঙ পরেছে। ওদের দুজন কে দেখে যে কেউ বলবে কাপল । নিবিড় আর ইমান এটা নিয়ে মজা করছে। আরুহি ভাইকে বসিয়ে আফরিন এর সাথে দেখা করতে গেল।আরুহিকে দেখে আবরার মনে মনে বলল,,

“তোমাকে ভালোবাসার পর আর কোনো দিকে মন যায়নি। তোমাকে দেখার পর আর কারো দিকে চোখ যায়নি।”

আবরার আরুহিকে দেখে একটা হাসি দিল। আরুহিও আবরারের হাসির জবাবে হাসি দিল।

অতঃপর সব নিয়ম কানুন মেনে কোন ঝামেলা ছাড়াই তিন কবুলের মাধ্যমে আরহাম আর আফরিন এর বিয়ে হয়ে গেল। আফরিন কে যখন নিচে আনা হয় তখন আরহাম মুচকি হেসে মুগ্ধ চোখে আফরিন এর দিকে তাকিয়ে ছিল। আফরিন ও তাই সে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিল তার শ্যামপুরুষের দিকে। সেটা নিয়ে ওর একটা কাজিন মেয়ে বলেছিল,,

“এরকম নিজের থেকে কম সুন্দর মানুষের দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকার কি আছে। দেখতো আফরিন কি ফর্সা আর ওর জামাইটা ওর তুলনায় কম ফর্সা।”

দুঃভাগ্যবসত মেয়েটা ছিল আবরারের পাশে সেটা হয়তো মেয়েটা খেয়াল করে নি খেয়াল করলে কখনোই এই কথা টা বলতো না। তখন আবরার মেয়েটার কথা বলেছিল। ,,,

“জামাইটা আমার বোনের আপনার না মিস। তাই আপনাকে সেসব নিয়ে ভাবতে হবে না।”

পাশে তাকিয়েই মেয়েটা চমকে গিয়েছিল। মেয়েটা আবরার কে ভালোভাবেই চেনে আর রাগটা কেও।মেয়েটার চমকানো দেখে আবরার মুচকি হেসে বলল,,

আপনাকে একটা গল্প শোনাই। ঠিক গল্প না ছোট কয়েকটা বাক্য , তো শুনুন।

হুজুর পাক (সা.) কে একবার আবু জেহেল বলেছিল, ‘মুহাম্মদ তুমি বড়ই কুৎসিত।’ হুজুর পাক বললেন, ‘তুমি ঠিক বলেছো।’

হযরত ওমর (রা.) প্রতিবাদ করে বললেন, ‘হুজুর, আপনি পূর্ণিমার চাঁদের চেয়েও সুন্দর।’ হুজুর বললেন, ‘তুমি ঠিক বলেছো।’

হযরত আবু বকর (রা.) বললেন, ‘হুজুর, আপনি দুজনকেই বললেন ঠিক বলেছো – এর অর্থ কি?’

হুজুর পাক বললেন ‘মানুষ যখন কিছু দেখে তখন তার মধ্যে সে নিজেকেই দেখতে পায়।’
অর্থ্যাৎ সৌন্দর্য মানুষের অন্তরে বসবাস করে। যে নিজে যত সুন্দর, অন্যকে সে তত সুন্দর করে দেখতে পায়। আরেকটা কথা,

সৌন্দর্য কখনো মানুষের চেহারা বা গায়ের রঙে থাকে না,সৌন্দর্য থাকে মানুষের মনে,ব্যবহারে আর ব্যক্তিত্বে!

যেটা আরহাম ভাইয়ার পুরোটাই আছে। এবার বুঝতে পারলেন। আশা করি বুঝতে পেরেছেন। ”

বলেই আবরার ওখান থেকে চলে যায়। আরুহি তার ভাইয়ের পাশেই ছিল সর্বদা। ওদের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর। আরুহি একটা জায়াগায় দাঁড়িয়ে আছে। আবরার সুযোগ বুঝে আরুহির কাছে গিয়ে বলল,,,

“ধন্যবাদ মিস!”

আরুহি বলল,,

“কেন?”

“আমার কথা রেখেছেন বলে এই যে আমার দেওয়া গ্ৰাউনটা পরেছেন।”

“ওহ আচ্ছা। ”

“আপনাকে মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে।”

“ধন্যবাদ আপনাকেও অনেক সুন্দর লাগছে মিস্টার।”

“জি ধন্যবাদ। আপনাকে একটা কথা বলবো জানি আপনি সব কিছু ভালো মতোই করতে পারবেন। আমার বোন টাকে একটু দেখে রাখবেন। যদিও একটু বেশি কথা বলে নিজেকে ম্যাচুয়ার ভাবে। তবে ও কিন্তু ম্যাচুয়ার নয়। ”

“আপনি আফরিন কে ভালো ভাবেই চিনি মিস্টার। তাই বলতে হবে না আমাকে সে কি রকম। আপনাকে একটা কথা বলতে পারি আপনার বোন একটা চমৎকার মেয়ে।”

“আপনিও একটা চমৎকার মেয়ে এ বুঝলেন।”

আরুহি কিছু বললো না মুচকি হাসলো। অতঃপর কনে বিদায়ের সময় চলে এলো। আফরিন আবরার কে ধরে অনেক ক্ষন কাদলো। সবাইকে জরিয়ে ধরে কান্না করলো। ওর কান্না দেখে মিস্টি ও কাঁদছে। আবরার কোন রকমে আফরিন কে গাড়িতে বসিয়ে দিল। আরুহি সামনে বসলো এখন আরহাম আর আফরিন পেছনে। গাড়ি ছুটতে লাগলো আরহাম আফরিন কে আগলে নিয়ে বলল,,

“বউ আজ যা কান্না করার করে নাও। এরপর থেকে তোমায় আর কাঁদতে দেব না বুঝলে।”

হঠাৎ করে বউ ডাকায় আফরিনের আপনাআপনি কান্না বন্ধ হয়ে গেল। আর লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে গেল। আফরিন কিছু বললো না। আরহাম আবারও বলল,,

“চলো, আমরা জীবনের পথটা এক সাথে পার করি। চলার পথে তোমার যা যা প্রয়োজন হবে আমরা ভাগাভাগি করে নিব।”

আফরিন এবার মুচকি হেসে আরহামের দিকে তাকিয়ে মাথা দুলালো। অতঃপর শুর হলো আরহাম আর আফরিন এর নতুন যাত্রা।

~চলবে,,

বিঃদ্রঃ আসসালামু আলাইকুম। কোন ঝামেলা ছাড়াই দিয়েছিলাম আরহাম আর আফরিন এর বিয়ে। সকলে ওদের রিসিফশনে গিফ্টস নিয়ে আইসেন আপনাদের সকলের দাওয়াত রইল। আজকের পর্ব কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন। ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here