তোর শহরে রেখেছি পা (পর্ব ১৪)

0
549

#তোর_শহরে_রেখেছি_পা
#পর্ব_১৪
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

আরুহি মুচকি হেসে বলল,,

“ভাইয়া ইউ আর জিনিয়াস।”

তখন নেওয়াজ আহমেদ বলল,,

“আরহাম আর তুমি দুজনে মিলে কি কথা বললে আমরা কিছুই বুজতে পারলাম না। দয়া করে আমাদের বুঝিয়ে বলবে। ”

“A.K এর সাথে কারা কাজ করে তাদের রেডি থাকতে বলুন। A.K যাবে ভাইয়া কে ফিরিয়ে। আর ভাইয়া কি বলেছে সেটা আমি বুঝতে পেরেছি । আমি A.K কে বলে দিচ্ছি। বাকিটা ভাইয়া এসে আপনাদের বুঝিয়ে বলবে।আপনাদের টেনশন করতে হবে না। আর রবিন নামক অপরাধীকেও ছাড়তে হবে না। আমার ভাই টা না খেয়ে আছে আমি বরং ভাইয়ার খাবারের ব্যবস্থা করি।”

সবাই আরুহির কথা শুনে অবাক কি বলছে ও। তখন নেওয়াজ আহমেদ বলল,,,

“আমি A.K এর সাথে যারা কাজ করে তাদের রেডি হতে বলছি। কিন্তু তুমি A.K কে কিভাবে খবর দেবে। ও তো কখন কি করে বোঝা যায় না। আর সহজে ওকে ফোনেও পাওয়া যায় না।”

“আমার ভাইয়ের সাথে সবসময় কাজ করে আর আমি জানবো না তাই কখনো হয়। আমি খুব ভালো করেই তাকে চিনি আর সেও আমাকে চেনে। তাই অসুবিধা নেই। তার পার্সোনাল নাম্বার আমার কাছে রয়েছে। আপনারা কিন্তু সময় নষ্ট করছেন।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

“আমি আসছি ভাইয়া একেবারে প্রথমে অফিসেই আসবে। আর হ্যা A.K যে ভাইয়াকে আনতে যাচ্ছে এই খবর যেনো অফিসের লোক ছাড়া আর কেউ না জানে।নাহলে সমস্যা হতে পারে। ”

“আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যা বলছো তাই হবে।”

আরুহি কারো দিকে না তাকিয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেল। আবরার ওকে থামাতে চেয়েছিল আবার কি মনে করে যেনো থামালো না। খান বাড়ির সকলে আরুহি কে নতুন করে দেখছে মনে হয়। এই কঠিন সময়েও কিভাবে শান্ত হয়ে সব কিছু মেনটেন করলো। তার দশ মিনিট পরেই অফিসে এন্ট্রি হলো A.K এর সকলে A.K কে এতো ফাস্ট অফিসে দেখে অবাক। A.K সবাইকে সব বুঝিয়ে দিল আর সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে পরবে এমন সময় আবরার A.K এর কাছে গিয়ে বলল,,

“ম্যাম আমি আপনাদের সাথে যেতে চাই। প্লিজ ম্যাম না করবেন না। আরহাম ভাইয়া আমার খুব কাছের একজন। ”

A.Kকে বলল,,,

সরি মিস্টার আবরার এটা পসিবল নয়। আপনাকে ওখানে নিয়ে যেতে পারবো না। তাছাড়া আপনি একজন স্পাই অফিসার।

প্লিজ ম্যাম না করবেন না। প্লিজ তাকে উদ্ধার এর কাজে আমি যেতে চাই। কথা দিচ্ছি কোন প্রব্লেম ক্রিয়েট করবো না।

“ব্যাপারটা সেটা না মিস্টার আবরার ওখানে রিস্ক আছে। আমি সেখানে নিয়ে কি করবো।”

“প্লিজ ম্যাম এরকম করবেন না। প্লিজ একটা সুযোগ দিন।”

“আচ্ছা ঠিক আছে। তা মিস্টার আবরার আপনি গান চালাতে পারেন তো?”

“জি ম্যাম সব ট্রেনিং শেষ করেই এখানে আসতে পেরছি। তাছাড়া স্পাইদের আরো করা করে ট্রেনিং দেওয়া হয়।”

“সেটা আমি জানি তবুও বললাম এখন আমাদের সাথে যেতে পারেন।”

“জি ধন্যবাদ ম্যাম আমি যাবো আপনাদের সাথে।”

আবরার ওর পরিবার কে বলল,,

“আমার একটু কাজ আছে করেই আসছি তোমরা বরং বাড়ি চলে যাও ।”

বলেই আবরার A.K এর সাথে চলে গেল। আবরারের পরিবার ও আবরারের কথা শুনে বাড়ি চলে গেল। শুধু আফরিন রয়ে গেল সে বলে দিয়েছে আরহাম কে না দেখে সে কোথাও যাবে না। বাকি কেও আর কিছু বলে নি। পরে না হয় আরহাম এর সাথে দেখা করবে সবাই। কেউ জানতেও পারলো না ওরা কোথায় যাচ্ছে। আবরার নিচে এসে মুখে মাস্ক পরে নিল। ওর গাড়িতে সবসময় হুডি আর রিভলবার থাকে সেটাও নিয়ে নিল। মোট এখানে সময় লাগলো বিশ মিনিট। এখনো বাকি দুঘন্টার বাকি এক ঘন্টা চল্লিশ মিনিট।

______________________

এদিকে,,,

আরহাম কে একটা গোডাউন এ একটা চেয়ারে হাত পা বাঁধা অবস্থায় রাখা হয়েছে। তখন একটা লোক বলল,,,

“এই তুই কি বললি দুই ঘন্টায় বাড়ি পৌঁছাতে পারবি। তোকে তো আমরা ছাড়বোই না তাহলে যাবি কি করে। আর কি যেনো বললি GN এ আছিস। এটা কি বললি মাথায় তো কিছুই ঢুকলো না।”

তখন আরহাম মুচকি হেসে বলল,,,

“আরে ভাই আমার বোন ছাড়া এ দুনিয়ায় কেউ নাই‌। আমার বোন নিশ্চয়ই কান্না করছে তাই ওরে শান্তনা দিলাম এই বইলা আমি বাড়ি ফিরছি।GN মানে গাড়ি বুঝিয়েছি এই ধরুন CNG এটার উল্টো প্রথম দুটো অক্ষর GN তাই।

“তুই তো তোর বোনরে কইলি সে চাইলে দের ঘন্টার মধ্যেই বাড়ি ফিরতে পারবি এটা কেনো বললি।”

“আরে আমার বোন অনেক কল্পনা প্রিয় মানুষ। ও চাইলে বললাম যাতে কল্পনায় ও ভাবে আমি বাড়ি ফিরে গেছি।”

“ওহ আচ্ছা।”

“আচ্ছা এখানে আপনারা কয় জন আছেন?”

“মোট তেরো জন?কেন কি করবি”

“ঐ এমনিই আচ্ছা আপনাদের বস এখানে নেই?”

“না এই তুই এত বেশি কথা বলিস কেন চুপ থাক এমনিতেও তোর ঘ্যান ঘ্যান শুনতে শুনতে কানের পোকা মরে গেছে। চুপ থাক নয়তো শ্যুট করে দেব।”

“আচ্ছা আর কথা কমু না আপনারা তো আমাকে একটু খাইতে দিতে পারতেন। আমার মতো অবুঝ বালক কে এভাবে উঠিয়ে এনেছেন আমার চেহারা দেখে আপনাদের মায়া হচ্ছে না।”

“তুই অবুঝ বালক এটা মানতে আমার একটু কষ্ট হচ্ছে। তোর চেহারা সুন্দর আছে। কিন্তু বস কইছে তোরে খাওন না দিতে তাই দিবার পারলাম না।”

‘আপনারে দেইখা তো ভালোই মনে হইতাছে। তা আপনি এই লাইনে ক্যান?”

“টাকার লাইগা ঢুকছিলাম এই লাইনে পাঁচ বছর আগে। এহন কাম করতে করতে খারাপ হইয়া গেছি। যাই হোক তুই চুপ থাক। আমার ভালো লাগতাছে না। এমনিতে টেনশনে আছি রবিন রে ছাড়বো কিনা। খারা দশমিনিট পর আরেক খান কল করি তোর স্যার রে!

লোকটা দশ মিনিট আবার ফোন দিল নেওয়াজ আহমেদ কে। ফোন ধরতেই লোকটা বলল,,

“আপনারা কিন্তু এখনো খবর দিলেন না। আমরা কিন্তু অফিসার আরহাম কে মেরে দেব।”

তখন নেওয়াজ আহমেদ বলল,,

“আরে এখনো তো চার ঘন্টা হয় নি। আর রবিন ও একটা নারী পাচারকারী ওকে কি আর সহজে ছাড়া যায়। ওপরে খবর পাঠিয়েছি ওনারা দেখছে ওনারা খবর পাঠালেই তোমাদের জানাচ্ছি। তোমরা কিন্তু আরহাম কে কিছুই করবে না।”

“যা করার তাড়াতাড়ি করুন। আপনাদের ওপর নির্ভর করছে আরহাম এর জীবন।”

বলেই লোকটা ফোন কেটে দিল। তখন নেওয়াজ আহমেদ এর পাশে থেকে একজন অফিসার বলল,,

“স্যার আপনি তো ওপরে খবর পাঠান নি। তাহলে মিথ্যে বললেন কেন? ওরা যদি আরহাম কে কিছু করে?”

“আরহাম কে আনার জন্য কে গেছে সেটা জানো তো A.K গেছে। আজ পর্যন্ত যতগুলো মিশনে সে গেছে কোনো টায় অসফল হয়ে ফেরে নি সফল হয়েই ফিরেছে। জানিনা আরহাম ওর বোন কে কিভাবে কি বলেছে তবে আরুহি যে সব বুঝতে পেরেছে সেটা বুঝতে পেরেছি। আরহাম আসুক তারপর ওর থেকে শোনা যাবে। ততক্ষন পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরে থাকতে হবে।”

“তবে স্যার আমার আজকে আরহাম এর বোন আরুহি কে কেমন যেনো রহস্যময়ী লাগলো। এর আগে দেখেছি ওদের ভাইবোনের ভালোবাসা অনেক গভীর কিন্তু আজ আরুহি একদম নিস্তব্ধ হয়ে ছিল। কোন চিন্তা দেখতে পেলাম না এমন কি ওর মুখে একটা জিনিস কাজ করছিল যেনো ও জানতো ওর ভাইয়ের খবর আসবেই। আবার কতোটা স্বাভাবিক ভাবে সবকিছু হ্যান্ডেল করলো।”

“ওকে দেখে আমারও সেটা মনে হয়। আচ্ছা সেসব বাদ দাও । নাহিয়ান খান এর পরিবার সবাই এখানেই তুমি তাদের খাবারের ব্যবস্থা করো।”

” স্যার তারা বাড়ি চলে গেছে শুধু একজন আছে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে তুমি তাকে খাবার দিয়ে তোমার অন্য কাজ করো!”

‘ওকে স্যার!”

_______________________

আরহাম রিল্যাক্স এ বসে আছে। ওকে যে বেধে রাখা হয়েছে তাতে মনে হয় ওর কিছু যায় আসেনা। ওর এত রিল্যাক্সশন দেখে ওখানে থাকা সকলেই অবাক হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর বাইরে গুলির আওয়াজ শোনা গেল। তখন আরহাম হাসতে লাগলো আর বলল,,

“নে তোদের সকলের জম এসে পরেছে। বললাম আমাকে একটু খেতে দে শুনলি না। এখন আমাকে খেতে না দেওয়ার জন্য নিজেরা গুলি খা।”

তখন একজন লোক দৌড়ে ভেতরে এসে বলল,,

“বাইরে সি আই ডি এর লোক এসেছে। আমাদের ওপর আক্রমণ করছে। কয়েকজন মারাও গেছে। সব থেকে বড় কথা A.K কে এসেছে।

এ কথা শুনে আরহাম এর সাথে থাকা লোকটা ভয় পেয়ে বলল,,,

“ওরা আমাদের খবর কি করে পেল। এখানে তো কারো আসার কথা না। এই গোডাউনের কথা ওরা কি ভাবে জানলো। এই আরহাম তোর হদিস ওরা পেল কিভাবে।তোর সাথে থাকা ফোন ঘড়ি সবই তো নষ্ট করে দিয়েছি তাহলে।”

“আরে গাধা আমি যে তোর সামনে গোডাউন এর কথা বললাম তুই বুঝলি না। গোডাউন এর প্রথম অক্ষর G আর শেষ এর অক্ষর N প্রথম অক্ষর আর শেষ এর অক্ষর মিলিয়ে GN কিন্তু তোর মাথায় এই সহজ জিনিস টা ধরলো না। আমি যা বুঝালাম আর তুই তাই বুঝলি পাঁচ বছর আগে এখানে জয়েন না হয়ে পড়াশোনাটা ভালোভাবে করতি তাহলে এই সোজা জিনিস বুঝতে এতো কষ্ট হতো না। গাধার দল।”

“তোকে আর আমি বাঁচিয়ে রাখবো না। রবিন কে তো পাবোই না। তার থেকে বরং তোকে উরিয়ে দিই।”

তখন পেছন থেকে আওয়াজ আসলো,,,

“ভুলেও এটা করার সাহস দেখাবি না। নাহলে তোর এমন হাল করবো বুঝতেও পারবি না। ”

সকলে পেছনে তাকিয়ে দেখলো সবাই ভেতরে ঢুকে পরেছে। এখন এখানে ওদের দুজন লোক রয়েছে বাকি এগারো জন কে ওরা মেরে দিয়েছে। সি আই ডি এর লোক ওদের গিয়ে ধরলো। ওরা আর আক্রমণ করার সুযোগ পেল না। আবরার আর A.k একি ড্রেস আপ দুজনের ব্ল্যাক হুডি মুখে মাস্ক জিন্স প্যান্ট আর স্পোর্টস জুতা। আবরার গিয়ে আরহাম এর বাঁধন খুলে দিল। আর বলল,,

“আরহাম ভাইয়া তুমি ঠিক আছো?”

‘আরে N.A তুমি এখানে? আমি একদম ঠিক আছি।’

“N.A?,,”

“আমাদের আলাদা বিশেষত্ব আছে কাজের জায়গায় যার যা নাম তাই বলেই সম্বোধন করতে হবে। তাছাড়া তুমি একজন স্পাই অফিসার এরকম বোকামো করলে চলবে।তা তুমি এখানে কি ভাবে?”

“A.k কে বলে কয়ে আসলাম।”

তখন A.K গিয়ে বলল,,

“মিস্টার আরহাম আপনি ঠিক আছেন?”

“আপনি থাকতে আমার আবার কি হবে ।আপনি থাকতে কেও আমার কিছুই করতে পারবে না। আমি জানতাম আপনি ঠিক ভাবেই আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবেন। সেই জন্যই তো সব বললাম আমার বোনকে।”

“হুম এখন যান আপনার বোন খাবার নিয়ে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।”

“আপনি তো এখন অফিস যাবেন না। তাই তো?”

A.k আরহাম এর কানে কানে ফিসফিস করে বলল,,

“আমি অফিসে গেলে আপনার বোন কিভাবে অফিস যাবে মিস্টার আরহাম!”

কথাটা বলেই A.K মুচকি হাসলো। তা দেখে আরহাম ও হাসলো। আবরার ওখানে থাকলেও কিছুই বুঝতে পারলো না। A.K সবার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে সবার আগে চলে গেল। কেও কিছু মনে করলো না কারন A.k সবসময় আগেই চলে যায় অফিসে যায় না। আবরার আরহাম এর সাথে চলে গেল। আরুহি আরহাম এর অফিসে ঢুকার দশ মিনিট আগে অফিসে একটা একটা খাবারের ব্যাগ নিয়ে ঢুকেছে। এখন সবাই আরহাম এর জন্য অপেক্ষা করছে। আবরার গাড়ি থেকেই আবার আগের ড্রেস আপ করে এসেছে। আরহাম আর আবরার একসাথে অফিসে ঢুকলো। আরহাম মুচকি হেসে আরুহির সামনে গেল। আরুহি ভাইকে দেখে জরিয়ে ধরলো। আর বলল,,

“ভাইয়া ঠিক আছো তুমি?”

“আলহামদুলিল্লাহ একদম ঠিক আছি।এখন খেতে দে খুব ক্ষুদা লাগছে!”

তখন নেওয়াজ আহমেদ বলল,,,

“আল্লাহর লাখ লাখ শুকরিয়া তুমি সহি সালামতে এখানে এসেছো আরহাম। জানি না তোমার বোন A.k কে কি বলেছে। আর তুমিই বা আকারে ইঙ্গিতে কি বুঝিয়েছো!”

“স্যার সে সব পরে বলি আমার ক্ষুদা লেগেছে।আর আমার বোনের ও! তাই আগে খেয়ে নিই তারপর সবাই কে বলছি!”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

তখন আরুহি বলল,,

“মিস্টার নিশান আপনিও আসুন খেয়ে নিন। নিশ্চয়ই আপনিও খান নি। আর আপনার বোন ভাইয়ার কেবিনে বসে আছে সেও কিছু খায় নি।

তখন আরহাম বলল,,

“হ্যা ঠিক বলেছিস। আবরার তুমি আমাদের সাথে এসো। স্যার আমরা আমার কেবিনে গিয়ে খেয়ে তারপর এসে সব বলছি।”

“ঠিক আছে।”

আরহাম আরুহি আর আবরার আরহামের কেবিনে গিয়ে দেখতে পেল আফরিন একটা চেয়ারে চুপ করে বসে আছে। তা দেখে আরহাম বলল,,

“ভেতরে আসতে পারি মিসেস আরহাম মাহমুদ খান!”

আফরিন চোখ তুলে দরজার দিকে তাকালো। আফরিনের চোখ দুটো চকচক করে উঠলো। মনে হয় একে দেখার জন্য চোখদুটো ছটফট করছিল। আফরিন চেয়ার ছেড়ে উঠে আরহাম এর সামনে এসে বলল,,

“আপনি ঠিক আছেন ওরা আপনার কোন ক্ষতি করে নি তো । আপনি কিভাবে ওদের কাছে গেলেন। আপনার কোথাও লাগে নি তো?”

“আরে রিল্যাক্স মিস আফরিন আমি একদম ঠিক আছি। ওরা আমার কোন ক্ষতি করে নি। এই দেখুন আমি ফিট এন্ড ফাইন।”

“আমি খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম আপনি জানেন?”

“সে তো দেখতেই পাচ্ছি। কেঁদে কেটে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছেন। আপনার চোখের পানি অনেক মূল্যবান। এটুকু তে ফেললে হবে। আপনি ভবিষ্যতে একজন সি আই ডির বউ হবেন । আপনাকে শক্ত হতে হবে।”

“আমি আরুহির মতো এত স্ট্রং নই বুঝলেন।”

“কেন বোনু কিছুই করে নি।”

তখন আবরার বলল,,

“কিছু করে নি তা নয়। এতো সবকিছুর মধ্যে সে ছিল নিশ্চুপ। একটা চেয়ারে তিন ঘন্টা যাবৎ বসে ছিল। কিছুই বলে নি। তার ভেতর অন্যরকম একটা শক্তি ছিল। তার চোখ মুখ ছিল কঠিন আবার তাকে দেখে মনে হচ্ছিল সে আগে থেকেই জানতো যে তোমার খবর আসবে।”

আরহাম আরুহির কাছে গিয়ে ওর গালে হাত রেখে বলল,,

“আমি জানি তো আমার বোন স্ট্রং। আই এম প্রাউড অফ ইউ ফর এভরিথিং।”

আরুহি মুচকি হেসে বলল,,

“ধৈর্যশীল মানুষদের শেষ পরিণতি সুন্দর হয়..ইনশা-আল্লাহ্। আমার আল্লাহ সবরকারীকে ভালোবাসে। আমার জন্যই আমার আল্লাহ যথেষ্ট।
আল্লাহ তায়ালা আল কোরআন এ বলেছেন,,

তোমরা ভয় করো না; আমি তো তোমাদের সাথেই আছি। আমি সবকিছু শুনি ও দেখি।
সূরা ত্ব-হাঃ ৪৬

সবকিছু আল্লাহর বিশ্বাস রেখে বসে ছিলাম আল্লাহ কখনো তার বান্দাকে নিরাশ করে না। তাছাড়া ও কথাটা আমার সবসময় মনে থাকে,,

যখন দেখবেন আপনার কষ্ট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে যাচ্ছে ,তখন বুঝে নিবেন ,-
নিশ্চয়ই আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনার জন্য স্বস্তি অতি নিকটে,

“হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল”

যার জন্য তার আল্লাহ যথেষ্ট থাকে তার জীবনে যত কঠিন সময় আর কষ্টই আসুক না কেন সে নিরাশ হবে না‌। একজন মুমিন বান্দা কখনো নিরাশ হয় না। সর্বদা তার রবের প্রতি তার বিশ্বাস থাকে। তাছাড়া আমি জানতাম তোমার একটা না একটা খবর পাবোই। তাই চুপ করে বসে আল্লাহর কাছে দোয়া করছিলাম।”

আরহাম আরুহির কথায় কিছু বললো না শুধু মুচকি হাসলো। আবরার আর আফরিন মনোযোগ দিয়ে আরুহির কথা শুনলো। সব শুনে ওদের আল্লাহর ওপর বিশ্বাস আরো গাঢ় হয়ে গেল। আবরার বলল,,

“আপনি ঠিক বলেছেন মিস যেকোন কঠিন সময়ে আমাদের আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা উচিৎ।”

“এখন খাওয়া যাক। বিরিয়ানি এনেছি ঠান্ডা হয়ে গেলে আর ভালো লাগবে না।”

“হুম!”

চারজন এ মিলে একসাথে বিরিয়ানি গেল। সব শেষে আবরার বলল,,

“বিরিয়ানি টা খুব মজা হয়েছে কোন রেস্টুরেন্টের থেকে কম না।”

এটা শুনে আরুহি মুচকি হাসলো কিছু বলল না। খাওয়া শেষ করে নেওয়াজ আহমেদ এর কাছে গেল সাথে আবরার রাও অনেক অফিসার ও আরহামের কথা শোনার জন্য সেখানে গেল। নেওয়াজ আহমেদ আরহাম কে দেখে বলল,,

“ওহ তোমাদের খাওয়া শেষ। ভালো তাহলে এখন বলো কি ঘটনা। তুমি কিভাবে ওদের হাতে পরলে?আর কিভাবে কি করলে?”

তখন আরহাম বলল,,,

“আসলে স্যার একটা কাজের জন্য অফিস থেকে আমি একটা জায়গায় যাচ্ছিলাম। তখন একটা লোক একটা গর্ভবতী মহিলাকে নিয়ে আমার কাছে লিফ্ট চায়। লোকটাকে দেখে না দিতে চাইলেও গর্ভবতী মহিলাকে দেখে গাড়িতে উঠাই। কিছুদূর যেতে না যেতেই লোকটা আমার মাথায় বন্দুক ঠেকায়। আর বলে সে যেদিকে যেতে বলে সে দিকে যেতে আমিও তার কথা মতো সেখানে যাই। যখন ঘটনা টা ঘটে তখন আমি ঘড়ির টাইম দেখে ছিলাম আর তখন গাড়ি থেকে নামতে বলে তখনও ঘড়ির টাইম দেখি। নামার পর সেখানে দেখি একটা পরিত্যাক্ত গোডাউন। ওরা আমাকে ভেতরে নিয়ে গিয়ে বেঁধে ফেলে। রাস্তায় থেকেই ওরা আমার ফোন ঘড়ি রিভলবার নিয়ে নেয়। ঘড়ির টাইম অনুযায়ী সেখানে যেতে পয়ত্রিশ মিনিট লেগেছিল অফিস থেকে গোডাউনের দূরত্ব চল্লিশ মিনিট। আর রাস্তাটাও সোজা ছিল কোন ডান ড়ামে রাস্তা ছিল না। তাই সহজ হয়েছে ব্যাপার টা। তাই তো বললাম দু ঘন্টার মাঝে বাড়ি পৌঁছাতে পারবো আর আমি আছি GN এ মানে গোডাউন। গোডাউনের এর প্রথম অক্ষর G আর শেষের অক্ষর N। আমি আর আরুহি এরকম অনেক জিনিস এর সাইন দিয়ে মাঝে মাঝে কথা বলি এটা বলতেই আরুহি আমার কথা বুজে গেল। সি আই ডি এর বোন এটুকু তো জানবেই। আমি জানতাম আরুহিকে বললেন ও সবার আগে A.K কে জানাবে। কারন ও সবকিছু তে আমার সাথে যুক্ত আর আরুহি ওকে ভালো ভাবেই চেনে। দু ঘন্টার কথা বললাম কারন আমি জানতাম আরুহি ফোন রেখে আগে A.K কে জানাবে। ওর অফিসে আসতে দশমিনিট টাইম লাগবে। অফিসে এসে সবাইকে সব বোঝাতে আরো দশ মিনিট টাইম লাগবে। মোট বিশ মিনিট গাড়ি যদি খুব জোরে চালায় তাহলে ত্রিশ মিনিটেই ওখানে পৌঁছে যাবে আর গোডাউনটা একটু ভেতরে তাই গোডাউন খুঁজতে দশ মিনিট মোট এক ঘন্টা গেল। তারপর তাদের সাথে গুলাগুলি হবে ওখান থেকে বিশ মিনিট লাগবে আমাকে ছাড়াতে। সবাই কে গাড়িতে ওঠাতে দশ মিনিট আর অফিসে পৌঁছাতে আরো ত্রিশ মিনিট লাগবে। এই হচ্ছে মোট দুই ঘন্টা। তবে দের ঘন্টার কথা বলেছিলাম কারন সবকিছু আরো ফাস্ট করলে দের ঘন্টাই লাগবে। আর দেখুন দুই ঘন্টা পুরোপুরি লাগে নি। এক ঘন্টা চল্লিশ মিনিট লেগেছে। তাই ওভাবে বলেছি A.K কে আমার কথা জানলেই ও বুঝতে পারবে আমি ঠিক কি বলছিলাম। আর A.K এখান থেকে খবর নিয়ে গেছিল ত্রিশ মিনিট বা চল্লিশ মিনিট গাড়িতে যাওয়ার পর কোন গোডাউন আছে কি না। এখান থেকে জেনেছে আছে একটা ব্যস হয়ে গেল কাজ। এভাবেই আমি এখন এখানে সবার সামনে।”

আরহাম এর কথা শুনে সবাই অবাক চোখে ওর দিকে তাকালো। আরুহির ঠোঁটে ঝুলে আছে মুচকি হাসি। হঠাৎ করে নেওয়াজ আহমেদ হাল তালি দিল। তা দেখে সকলে হাত তালি দিল। নেওয়াজ আহমেদ বললেন,,,

“ব্রিলিয়ান্ট আরহাম। আমি একজন সি আই ডি এর হেড অফিসার হয়েও এটা বুঝতে পারি নি। যেটা A.k আর তোমার বোন ততটা তাড়াতাড়ি বুঝে ফেলেছে। তোমার আর A.K এর বোঝাপড়াটা অনেক গভীর। সেই জন্যই তো বলি কাজের মধ্যে তোমাদের জুটি বেস্ট।”

“ধন্যবাদ স্যার আজ তাহলে আসি বাড়ি গিয়ে একটু রেস্ট নিই। পাচঘন্টা একটানা বাধা অবস্থায় ছিলাম। তাই কেমন যেনো লাগছে।”

“ঠিক আছে যাও।”

ওরা বাড়ি চলে গেল। অফিসের সকলে ওদের বুদ্ধিমত্তার প্রসংসা করলো। আবরার আর আফরিন ও বাড়ি চলে গেল। আরুহি আর আরহাম বাড়িতে ঢুকলো। ড্রয়িংরুমে যেতেই আরহাম আরুহির দিকে তাকালো। আরুহির চোখ ছলছল করছে। আরুহি দৌড়ে গিয়ে আরহাম কে জরিয়ে ধরে কান্না করে দিল। এতক্ষন এই কান্না টা ও চেপে রেখেছিল। সবার সামনে চিৎকার করে কাঁদতে চেয়েও কাঁদতে পারে নি আরুহি। আরহাম বোন কে আগলে নিল। মা বাবা মরার পর আজ এই ভাবে আরুহিকে কাঁদতে দেখলো। আরহাম মনে মনে বলল,,

“আরুহি তুই এক রহস্যময়ী চরিত্র তোকে বোঝা দায়। কখনো তেজী কখনো রুক্ষ আবার কখনো শান্ত কখনো শীতল কখনো সাহসী ভয়ডঢ়হীন যোদ্ধা।আবার কখনো আবেগী। তুই বরাবরই রহস্যময়ী তোকে বোঝা দায়। ”

আরহাম আরুহির মাথায় হাত রেখে মুখে বলল,,

“কি হয়েছে আমার বোনুটার?”

“ভাইয়া আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম। আমি ভাবছিলাম বোধহয় মা বাবার মতো তোকে হাড়িয়ে ফেলবো। ইচ্ছে করছিল চিৎকার করে কাঁদতে কিন্তু কিছু একটা ভেবে আর কাঁদিনি। শুধু আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখে ছিলাম।”

“আমার বোনু অনেক স্ট্রং। সেটা আমি জানি সে কেন সে কান্না করে নি। সে কারো সামনে তার দূর্বলতা প্রকাশ করে নি। আমার বোন তার দূর্বলতা কাউকে দেখাতে চায় না। সে চায় না কেউ তার কান্না দেখুক। ”

আরহাম আরুহির চোখ মুছিয়ে বলল,,,

“আর কাঁদতে হবে না। এখন দ্যাখ আমি এসে গেছি।”

“তবে ভাইয়া যে এই কাজটা করেছে তাকে এর ফল অবশ্যই পেতে হবে। আমি ছাড়বো না তাকে।”

“সেসব পরে হবে। এখন চল হাত মুখ ধুয়ে নে। এখন তো তোর নিষিদ্ধ সময় চলছে এর মধ্যে এত দৌড়াদৌড়ি। সেই জন্যই আমার বোন সালাত আদায় করে নি তখন আমার নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ পেল। আমার বোন কে সর্বদা দেখেছি কোন খারাপ কিছু হলে আগে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে। যাই হোক ওপরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। এই সময় মুড সুইং বেশি হয় কিন্তু তোর এগুলো বেশি হয় না। বুজলাম না এসময়ে মেয়েদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে কিন্তু তুই সব সময়ের মতোই শান্ত থাকিস।”

“এসব বাদ দাও এখন রুমে যাও।”

“হুম যাচ্ছি বাই দ্য ওয়ে বিরিয়ানি টা কোন হোটেল থেকে নিয়েছিলি সেই ছিল।”

“ভাইয়া তুমি যাবে?”

“আবরার বলল রেস্টুরেন্টের থেকে কম না।”

“ভাইয়া!”

ভাইয়া শুনতেই আরহাম দৌড়ে রুমে গেল। তা দেখে আরুহি হেসে ফেলল। আরুহিও রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল। এখন একটু রেস্ট নিতে হবে।আজ যা গেল।

______________________

রাত দশটার দিকে আবরার ছাদে গেল। আজ অনেক সুন্দর চাঁদ উঠেছে। আর অনেক ফুল ও ফুটেছে। ও গিয়ে দোলনায় বসলো।আর মুচকি হেসে বলল,,

“সৌন্দর্যের নতুন এক আভাস হচ্ছে বাগান বিলাস”

তারপর চাঁদের দিকে তাকিয়ে আরুহি কে ভেবে বলল,,

“বুঝলে প্রিয়সী,,

~কোন একদিন তুমি না হয় রাতের চাঁদ দেখবে,
আর আমি না হয় তোমার পাশে দাড়িয়ে চাঁদ দুটোই একসাথে দেখবো।”

~চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here