#তোর_শহরে_রেখেছি_পা
#পর্ব_১৩ (বোনাস পার্ট)
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
আবরারের কথা মতো আফরিন নিচে নামে নি। আবরার ডিনার করতে নিচে নামলে দেখলো সকলে কেমন যেনো হয়ে আছে। তখন আবরার আনোয়ার খান কে বলল,,,
“দাদুভাই আমি এম সরি তখন ওভাবে রেগে এখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য। আসলে খুব রাগ হচ্ছিল কেন যেনো।”
তখন আনোয়ার খান বললেন,,
“বুঝতে পেরেছি আবরার তোমাকে আর বোঝাতে হবে না।”
আবরার রবিনের দিকে তাকালো। রবিন এর চোখে অন্য রকম একটা আক্রশ দেখতে পেল। কিন্তু কিছু বলল না। খাবার টেবিলে বসে আবরার জানতে পারলো কালকে তাদের কাজ আছে তাই শেখ পরিবার কালকে এখান থেকে চলে যাবে। ও আর কিছু বললো না।
__________________
অফিসের সব কাজ শেষ করে আরহাম আর আরুহি বাড়ি ফিরছে। তখন আরুহি বলল,,
“তুমি কিন্তু আফরিন কে পছন্দ করো সেটা আমায় জানাও নি ভাইয়া?”
“আমি জানি তুই আমার চোখের ভাষা বুঝতে পারিস। তাই বলিনি আর দ্যাখ আমি ওর ব্যাপারে না বললেও তুই সব বুঝতে পেরেছিস।”
“তা কবে যাবে আফরিন কে বিয়ে করার প্রস্তাব নিয়ে?”
“তোর কি মনে হয় আমাদের মতো এতিমের বাড়িতে আংকেল তার মেয়েকে দেবে।ওরা জয়েন ফ্যামিলিতে থাকে। আর এখানে এসে একা থাকতে হবে।”
কথাটা বলেই আরহাম এর মুখটা মলিন হয়ে গেল। আরুহি তখন বলল,,,
“কেন দেবে না নিশ্চয়ই দেবে। আমার ভাইয়ের মতো কোন ভাই- ই হয় না। আর যে একজন বেস্ট ভাই হতে পারে সে বেস্ট হাজবেন্ড ও হতে পারে। সবথেকে বড় কথা তোমরা একে অপরকে পছন্দ করো। তুমি আগে থেকে নেগেটিভ হচ্ছো কেন সব ঠিক হবে ইনশাআল্লাহ।”
“তুই -ই তো আমার ভরসা।”
“আর তুমি আমার ভরসা।”
____________________
পরের দিন,,
শেখ পরিবারের সকলে চলে গেল কিন্তু আনোয়ার খানের পরিবারের সকলে রয়ে গেল। রুহানির আরুহি কে খুব পছন্দ হয়েছে। যখন আফরিনের কথা জানতে পারলো তখন রুহানি ওর পরিবার কে বলে আরুহির জন্য প্রস্তাব দিতে । তখন নেহমাত শেখ জানায় আরহাম কখনো তার বোনকে আমাদের পরিবারে দেবে না। কারন ও এখনো আমাদের মেনে নিতে পারে নি। সব থেকে বড় কথা আমিও চাই না আরুহিকে আমার ছেলের বউ করতে। বাবার কথা শুনে রুহানি আর কিছু বলে নি। ওরা হলে সকালেই চলে গেছে। আববার পরের দিন সকালেও আফরিন কে নিচে নামতে দেয় নি। ওর সাথে আবরার ওপরে গিয়ে খেয়ে ওকে নিয়ে ভার্সিটি গিয়েছে। ভার্সিটি আসতেই আরুহির সাথে আফরিনের দেখা হয় তখন আরুহি বলল ,,,
“আসসালামু আলাইকুম ভাবি।কেমন আছেন?”
এ কথা শুনে আফরিন লজ্জা পেল। আর বলল,,
“ওয়ালাইকুমুস সালাম। আরে রাখ তো তোর ভাবি। আমি তোর ভাবি হওয়ার আগে বান্ধবী তার থেকে বড় কথা এখনো কিছুই হয় নি। যেদিন আমাদের বিয়ে হবে সেদিন থেকে ভাবি বলবি!”
“আচ্ছা বাবা রাগ করিস না আমি তো এমনিতেই বললাম। আচ্ছা তোদের বাড়ির মেহমান আছে না গেছে। ”
“কিছু আছে আর কিছু গেছে! শেখ পরিবার চলে গেছে খান পরিবার আছে!”
“তারা গেল কেন?
“আমাদের রিজেকশন পেয়ে।”
“মানে?”
“তোকে একটা কথা বলবো কিন্তু তুই ওনাকে বলবি না।”
“ওনাকে কানাকে?
বলেই আরুহি হেসে উঠলো।তখন আফরিন বলল,,
“মজা নিচ্ছিস উনি মানে তোর ভাই আরহাম মাহমুদ খান।”
“এই বার ঠিক আছে! তাই হোক ফটাফট বলে ফেল বলবো না তোর ওনাকে।”
কাল ঘটে যাওয়া সব ঘটনা আফরিন আরুহি কে খুলে বলল সব শুনে আরুহি বলল,,,
“আরেব্বাস ওরা তোকে দেখতে এসেছিল। অথচ আমাদের কে বলল না। যাই হোক তাদের নিয়ে আমাদের কোন মাথাব্যথা নেই। তবে কাল মিস্টার নিশান কিছু না বললে তো তোর বিয়ে হয়েই যেতো।”
“আরে আমাকে যতটা ভালো দেখতে লাগে আমি ততটা ভালো নই। আরে আমি তো বলতামই শুধু বাবার দিকে তাকিয়ে ছিলাম আর ভাইয়া আসার অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু ভাইয়া আসার পরে তো ভাইয়া নিজেই বলল আমি বলতে পারলাম কই।”
“ওকে বুঝলাম!”
“শুকরিয়া আমাকে বোঝার জন্য। তবে তুই একটা কথা বল তুই আর তোর ভাই কিন্তু সবার সাথে কথা বললে আগে সালাম দিস। কিন্তু নেহমাত শেখ কে তোরা দুজনে কখনো সালাম দিস নি। গুড আফটারনুন বা গুড ইভিনিং বলেছিস। আবার আমার ফুপা মানে নওশাদ শিকদার কেও কখনো সালাম দিস নি। কাল নেহমাত শেখ কে দেখে মনে পরলো এই ঘটনাটা তোরা কি আগেই থেকেই ওনাদের ব্যাপারে কিছু জানিস নাকি।”
“তোর ছোট মাথায় এতো চাপ দিতে হবে না। ওটা যাস্ট এমনিই বলেছি। কেনো যেনো বলতে ইচ্ছে করে না উনাদের যে আসসালামু আলাইকুম (আল্লাহ আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত করুক) তাই গুড আফটারনুন বা গুড ইভিনিং বলি। মুসলিম হিসেবে ছোট বড় সকল মুসলমান কে সালাম দেওয়া উচিত। এটা আমাদের রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিখিয়েছে। ওনাদের বিষয়টা আলাদা।”
“ওকে বুঝতে পারছি এখন চল ক্লাসে যাই। ”
“ওকে চল!”
ওরা ক্লাসে চলে গেল। আবরার পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল। ওদের সব কথাই ও শুনেছে। কিন্তু মুচকি হেসে দাঁড়িয়ে থাকলেও কিছু বললো না।
____________________
রাত দুটোর সময় আরহাম আর A.K ফোর্স নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাস্তায়। কারন এখানে দিয়েই ট্রাক যাওয়ার কথা। অনেক ক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পর একটা মালবাহী ট্রাক দেখা গেল। তার পুরোটা ঢাকা।সবাই সবার পজিশন নিয়ে দাঁড়িয়ে পরলো। রাস্তায় পাথর দিয়ে ব্লক করে রেখেছিল যাতে এখানে এসে ট্রাক টা এমনিতেও থামে। রাস্তা ব্লক দেখে ট্রাক ড্রাইভার গাড়ি থামায়। সে চিৎকার করে বলে
“রাস্তা ব্লক হইয়া আছে দুইজন গাড়ি থেকে নাইমা পাথর গুলা সরান লাগবো।”
তখন একজন এর আওয়াজ আসলো,,,
“এই রাস্তা তো কোনদিন ব্লক থাকে না। আজ আবার ব্লক হবে কোথা থেকে!”
বলেই দুজন লোক গাড়ি থেকে নামলো। ট্রাক ড্রাইভার ও নামলো। তিন জনে গাড়ি থেকে নেমে পাথর গুলো সরাতে নিচু হতেই পেছন থেকে আরহামের লোকেরা বাড়ি মারলো তারা মাটিতে চিৎকার দিয়ে লুটিয়ে পরলো। ওদের চিৎকার শুনে গাড়ি থেকে আরো দুজন বেরিয়ে আসলো। তারা এসেই দেখতে পেল তাদের লোক মাটিতে শুয়ে আছে। তা দেখে একজন চিৎকার করে বলল,,,
“এই কে এখানে?এদের এই অবস্থা কে করেছে? ”
তখন আরহাম বলল,,
“তোর জম!”
“ভালো চাস তো আমাদের রাস্তা ছাড় নাহলে NS তোদের কি হাল করবে তোরা ভাবতেও পারবি না।”
তখন পেছন থেকে একটা মেয়েলি আওয়াজ আসলো,,,
“ও তাই নাকি রে! NS আমাদের কি হাল করবে সেটা ভাবার আগে তুই দেখ আমি তোর কি হাল করি। এই A.K কে হুমকি দিস তুই তোর সাহস দেখে অবাক হচ্ছি। তোদের মতো পুঁটি মাছের কতো কি যে দেখতে হবে। তোরা ওর হয়ে কাজ করিস ঠিক আছে কিন্তু তোরা নিজেরাই একেক জন নিজেকে NS ভাবিস।”
A.K এর কথা শুনে লোকদুটো ভয় পেল। ওরা ওর নামে অনেক শুনেছে । লোকদুটো গান দিয়ে শ্যুট করতে নিল তখন আরহাম আর A.K দুজন কে শ্যুট করে দিল। আরহাম আর A.K ট্রাকের ভেতরে থাকা সবগুলো মেয়েকে নামানোর ব্যবস্থা করলো। তাদের অবস্থা দেখে A.K এর চোখ দুটো ভিজে উঠলো। তবে সকলের চোখে এখনো অনেক ভয় আতংক।এটার মানে ও বুঝতে পারল না।সবাইকে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করতে বলল। A.k আর আরহাম কাউকে খুঁজছে পুরো ট্রাকটা খুঁজলো। না এখানে নেই।কিন্তু একজন কে দেখে ওর সন্দেহ হলো। একজন বোরকা পড়া পরিহিত মেয়েকে দেখে অন্যান্য মেয়েদের তুলনায় সে অতিরিক্ত লম্বা আবার মুখ ও ঢাকা। A.K ভালো করে তাকে পর্যবেক্ষণ করলো পায়ের দিকে তাকাতেই ওর মুখে হাসি ফুটে উঠল। ও আরহামকে বলল,,
“মিস্টার আরহাম আজকাল দেখি মেয়েরাও ছেলেদের মতো ব্ল্যাক সুজ পরতে শুরু করেছে। না দেশটা আস্তে আস্তে রসাতলে যাচ্ছে।”
এ কথা শুনে আরহাম বলল,,
“মানে ?”
“বোরকা পড়া ম্যাডামের দিকে তাকান।”
আরহাম বোরকা পড়া মেয়েটার দিকে তাকালো। আরহাম তার দিকে তাকাতেই ওর কথা বুঝতে পারলো। ঐ একটা কথা আছে না বুদ্ধিমান এর জন্য ইশারায় যথেষ্ট। আরহাম মেয়েটার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,,
“বোরকা পড়া আফা একটু এদিকে আসেন। আমগো ম্যাডাম আপনার লগে কথা কইতো!”
আরহাম এর কথা শুনে লোকটা ভয় পেয়ে যায়। এটা দেখে আরহাম এর খুব খুশি লাগছে। এমনিতেও A.K এর সব কথাই শুনেছে সে। এখন কি করবে । লোকটা কিছু করছে না দেখে A.k এগিয়ে এসে বলল ,,
“মিস্টার রবিন আপনাকে আর বোরকা পরে থাকতে হবে না। আমি জানি আপনি কে ? আপনি যে আজ এখান দিয়ে যাবেন সেটার ব্যাপারে আমরা আগেই জেনেছি। তাই বলে বাঁচতে মেয়ে সাজবেন এটা ভাবি নি।”
হ্যা লোকটা কেউনা এটা হচ্ছে রবিন নেহমাত শেখ এর ছেলে। কাল আবরার খোঁজ নিয়ে রবিনের ব্যাপারে জানিয়েছে তাই সহজেই বুঝতে পেরেছে বোরকার আড়ালে রবিন রয়েছে। তাছাড়া জুতোটাও ওদের চেনা। ভয় পেয়ে রবিন গান ধরলো আরহামের দিকে তখনি A.K রবিনের হাতে শ্যুট করে দিল। গুলিটা ও এমন ভাবে করেছে যাতে গুলিটা একটু ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়। কারন এখনো অনেক টর্চার করা বাকি। তখন A.K এগিয়ে গিয়ে বলল,,,
“তোরা এতো বোকা কেন রে তুই কোন অফিসারের দিকে বন্ধুক ধরবি বাকি অফিসার রা কি তোকে ছেড়ে দেবে। গাধা কোথাকার মানলাম তুই এ কাজে যোগ দিয়েছিস দুই বছর হলো তাই বলে তোর বসদের মতো পাকাপোক্ত হতে পারিস নি। তার ওপর তোর সাহস দেখে অবাক হচ্ছি তুই আমার সামনে মিস্টার আরহামের দিকে বন্ধুক করেছিস তোর কি হাল করি করবো তুই শুধু দেখবি। ”
A.K মেয়েদের সামনে গিয়ে বলল,,
“তোমাদের এখানে আনার সমস্ত দায় এর তোমাদের যত রাগ যত ঘৃনা আছে সব এর ওপর অসুল করো।আমরা কিছুই বলবো না তবে তাকে জিবিত রাখতে হবে। ওর এমন হাল করো তাতে ও আফসোস করে কেন ও মরে গেল না। এতো সহজ মৃত্যু ওর নয়।”
মেয়েরা সবাই মিলে কিছুক্ষণ কথা বললো তারপর সিদ্ধান্ত নিল সকলে পাচটা টা করে নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে চড় মারবে। তাতে ও মরবে না। কিন্তু আঘাত পাবে মেয়েরা আছে পঞ্চাশ জনের মতো পাঁচ টা করে চড় মারলে অনেক। দুজন অফিসার রবিন কে ধরলো মেয়েরা একেক করে এগিয়ে গিয়ে ওকে চড় মারলো।প্রত্যেকটা চড়ের সাথে রবিন চিৎকার দিয়ে উঠলো আর বলল,,
“আমাকে ছেড়ে দাও আমাকে অন্যভাবে শাস্তি দাও। আমার মুখ আর মানতে পারছে না। সহ্য হচ্ছে না আমার। প্লিজ ছেড়ে দাও।” আরো কতো আহাজারি।
সবার চড় খেয়ে রবিন এর গালে রক্তিম বর্ন ধারন করেছে একটা সময় না পেরে অজ্ঞান হয়ে গেল। সবার সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে চড় মেরেছে সেটা তো কম জোরে নয়। মেয়েগুলো সি আই ডি কে ধন্যবাদ জানালো। ওদের বাড়িতে পৌছে দেওয়া হলো।
____________________
সবার ব্রেকিং নিউজ বের হলেও রবিনের কোন ব্রেকিং নিউজ বের হয় নি। কারন A.K বলেছে তিন দিন পর ওর কথা জানাতে । ও আর আরহাম দেখতে চায় নেহমাত শেখ কি করে। দুঃভাগ্যবসতো নেহমাত শেখ ছেলের কোন খোজ নিলেন না। তাই তিন দিন পর রবিনের ধরা পরার খবর সবাইকে জানানো হলো। সব জানালো হলে নেহমাত শেখ এমন ভাব করলো তার ছেলে এগুলো করে সে কিছুই জানে না। উল্টো প্রেস মিডিয়ার সামনে ছেলেকে চড় মারলো। রবিন অবাক চোখে ওর বাবাকেই দেখতে লাগলো। কিন্তু কিছুই বললো না কারন বললেও হয়তো বা কেউ বিশ্বাস করবে না। টিভিতে এগুলো দেখে আরহাম আর আরুহি হাসতে লাগলো। আরহাম বলল,,
“মিস আরুহি আহা কি সুন্দর অভিনয় এ অভিনয় তো আমার মায়ের যুগের ভিলেন ডিপজলের অভিনয়কেও হার মানিয়ে দেবে।’
“আচ্ছা মিস্টার আরহাম আপনি মাঝে মাঝে আমার সাথে এভাবে কথা বলেন কেন?”
“কারন তোর সাথে এভাবে কথা বলতে আমার খুব মজা লাগে আফা।”
বলেই আরহাম আর আরুহি হাসতে লাগলো।
“কালকের কথাটা কিন্তু দারুন ছিল ভাইয়া তোমার ,, বোরকা পড়া আফা এদিকে আসেন আমগো ম্যাডাম আপনার লগে কথা কইতো।”
বলেই আরহাম আর আরুহি হাসিতে ফেটে পরলো।
_________________
খান বাড়িতে,,
আনোয়ার খান রা দুদিন পরেই চলে গেছে এখন আর কেউ নেই। বাড়ির ড্রয়িংরুমে বড় রা এখন কেও নেই। শুধু আবরার আর আফরিন তাই খবরে এগুলো দেখে আফরিন বলল,,
“আহা গো কি ভালো ছেলের সাথে আমার পরিবার বিয়ের কথা বলছিল। শালা গাজাখোর এর সাথে নাকি আমার বিয়ের কথা হচ্ছিল ছিঃ ”
তখন পেছন থেকে আওয়াজ আসলো,,
“বিয়ের কথা হচ্ছিল বিয়ে তো আর হয় নি। সঠিক সময় আবরার এসে তোমার কথা জানালো। তা চার দিন তো হয়ে গেল আপনার পছন্দের ছেলের কথা তো এখনো কেউ জানলাম না। নাম কি কি করে সে?”
আফরিন পেছনে তাকিয়ে দেখলো ওর বাবা আর মা তা দেখে আফরিন মেকি হাসি দিল। তখন আবরার বলল,,
“তাকে আপনারা সবাই ভালো করেই চেনেন!’
“আমরা চিনি?”
“ছেলেটা হলো আরহাম ভাইয়া।”
আবরারের কথা শুনে সবাই খুশি হলেও নাহিয়ান খান কে চিন্তিত দেখা গেল । উনি আবরারের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“আরহাম কে আমাদের বাড়িতে আসতে বলো। ছেলে হিসেবে সব দিক দিয়েই সে যোগ্য।”
“আরহাম ভাইয়া বলেছে সে সময় মতো এসে পরবে। তাই ভাইয়া যখন চাইবে ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করি।এর মধ্যে তো আমরা আফরিনের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছি না।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”
বলেই নাহিয়ান খান ওখান থেকে চলে গেল। তখন সিঁড়ি দিয়ে নাদিয়া রেগে নামছে আর রিয়াদ পেছন থেকে কিছু বলতে বলতে আসছে। কিন্তু নাদিয়া কিছু কানেই নিচ্ছে না। ওদের অবস্থা দেখে আবরার এগিয়ে গিয়ে বললো,,
“কি হয়েছে ভাবি ভাইয়া তোমার পেছন পেছন এমন করছে কেন?”
“আর বলো না আবরার তোমার ভাইয়ার সবদিক খেয়াল আছে শুধু আমার দিকে নেই। আমি কিছু বললেই রেগে যায় আমাকে একটুও সময় দেয় না কয়েকদিন ধরে আমাকে এড়িয়ে চলে অবহেলা করে।কথায় কথায় আমার সাথে ঝগড়া করে। আমার কি অভিমান হয় না তার ওপরে আজ কি বলেছে আমি ওর পেছনে ঝোঁকের মতো লেগে থাকি সবসময় শান্তিতে থাকতে দেই না। এটা আমার আত্মসম্মান এ লেগেছে। আমি আর থাকব না এখানে।”
তখন রিয়াদ বলল,,,
“আসলে কাজের চাপে কয়েকদিন ধরে আমি খুব ব্যস্ত। ওকে একদম সময় দিতে পারিনা তাই ও বলে আমি নাকি ওকে অবহেলা করি। কাজের জন্য মেজাজ টাও খিটখিটে হয়ে থাকে। তাই রাগের মাথায় কি বলেছি নিজেই জানি এই নিয়ে তোর ভাবি রেগে এখন বলছে আমার সাথে থাকবে না।”
সব শুনে আবরার বলল,,
“ভাইয়া তোকে একটা কথা বলি মন দিয়ে শুনো,,না’রী ততক্ষণ’ই তোমার…
যতক্ষণ সে রাগ করে, অভিমান করে, ‘ঝ গ ড়া করে,অধিকার খাটায়,বি র ক্ত করে, ভালোবাসে, আদর যত্ন করে, খেয়াল রাখে। কিন্তু যখন’ই আপনি একবার তার আত্নসম্মানে ‘আঘাত করবে ‘অবহেলা করবে ব্যাস্ততা দেখাবে দিনের পর দিন, তখন যদি একবার সে নিজেকে গুটিয়ে নেয় তোমার সবকিছু থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়। বিশ্বাস করো তখন হাজারবার চাইলেও আগের সেই মানুষটিকে আর ফিরে পাবে না। হাজার কান্না করলেও আর আটকে রাখতে পারবে না। ওই যে কথায় বলেনা, যে না’রী খোপা করা চুলের মতো বেধে রাখতে পারে তেমন খোলা চুলের মতো ছেড়েও দিতে পারে। তাই বুঝতে শিখুন, জানতে শেখো, সম্মান করতে শিখো। ভালোবাসতে শেখো, আগলে রাখো। কাজের জন্য সম্পর্ক নষ্ট করো না। ভাবিকে বুঝিয়ে বললেই তো বুঝতে পারবে তোমার সমস্যা। কারন সবাই তোমার বিপক্ষে গেলেও তোমার ছি মানুষ টা তোমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকবে। যখন কাজের চাপ পরবে তখন বলবে নাদিয়া ইদানিং খুব কাজের চাপ পরে গেছে আমি যদি খারাপ আচরণ করি তাহলে মাফ করে দিও যখন ক্লান্ত শরীরে ফিরবো তখন মাথায় বিলি কেটে দিও। তাহলে দেখবে কোন ঝামেলায় থাকবে না।”
সবাই খুব মনোযোগ সহকারে আবরারের কথা শুনলো। নাসরিন খান ওখানেই ছিল। ছেলের কথা শুনে সেও অবাক হয়ে গেছে। তখন রিয়াদ বলল,,
“বারে ভাই তুই মহিলাদের নিয়ে পিএসডি করে ফেলেছিস। যাই হোক ধন্যবাদ এভাবে বোঝানোর জন্য। তো বউ শুনেছো আবরার কি বলল আমি তোমার কাছে মাফ চাইছি সব কিছুর জন্য এরপর থেকে এরকম করবো না। কাজের চাপ পরলে তোমাকে এসে বলবো। আমায় মাথায় বিলি কেটে দিতে ভুল ত্রুটি ক্ষমা করে দিও তখন। ”
বলেই রিয়াদ নাদিয়া কে জরিয়ে ধরলো। সবার সামনে নাদিয়া লজ্জা পেল । সবাই মুচকি হেসে চলে গেল।
___________________
দেখতে দেখতে সাতদিন কেটে গেল। কিন্তু হুট করে আরহাম কে পাওয়া যাচ্ছে না। পুরো সি আই ডি টিম আরহাম কে খুঁজছে কিন্তু কোথাও আরহাম কে পাওয়া যাচ্ছে না। ওদিকে এসব শুনে আফরিন কাঁদছে কিন্তু এতকিছুর মাঝেও আরুহি নির্বাক ও সবাই আপাতত সি আই ডি এর অফিস এ । আবরার এর পরিবারের সকলেই এসেছে কারন আরুহিদের এখানে কেউ নেই। আর আরুহি যে আরহাম কে অনেক ভালোবাসে সেটা তে কোন সন্দেহ নেই। সবাই আরুহি কে সামালানোর জন্যই এসেছে কিন্তু এখানে এসে তো মনে হচ্ছে ওদের দরকারি নেই। পাঁচ ঘন্টা যাবৎ আরহাম কে পাওয়া যাচ্ছে না।প্রায় তিন ঘন্টা ধরে আরুহি সি আই ডি অফিসের একটা চেয়ারে বসে আছে অফিসের অনেকেই আরহাম এর বোন হিসেবে তাকে চেনে। সবাই ওদের ভাইবোনের ভালোবাসা দেখেছে তাই সকলেই আরুহিকে এভাবে মেনে নিতে পারছে না। আরুহি বলেও দিয়েছে তাকে যেনো এখন কেও শান্তনা দিতে না আসে কারন ওর শান্তনা পছন্দ না। কেউ শান্তনা দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে না। আরুহি কিছু একটা ভাবছে। আবরার আরুহির নিরবতা মেনে নিতে পারছে না। ও দু একবার গেছিল আরুহির কাছে কিন্তু কিছুই বলতে পারে নি। তখনি জানা যায় কেউ কল করেছে আরহাম এর হয়ে। আরুহি তখন সেখানে গেল। নেওয়াজ আহমেদ এর পাশে দাড়ালো । নেওয়াজ আহমেদ ফোন স্পিকারে দিল।যে ফোন দিয়েছে সে বলেছে
“” আরহাম তাদের কবলে আছে যদি রবিন কে ফেরত না দেওয়া হয় তাহলে আরহাম কে ছাড়বে না। রবিন কে ছেড়ে দিলে আরহাম কে ফেরত দেওয়া হবে নতুবা আরহাম এর লাশ দেওয়া হবে। সময় চার ঘন্টা।”
তখন নেওয়াজ আহমেদ বলল,,
“তোমরা আরহাম কে কিছুই করবে না। তোমরা আরহাম কে ছেড়ে দাও নাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে। আমরা রবিন কে ছাড়বো না।”
“না ছাড়লে নাই আমরা ও সি আই ডি অফিসার আরহাম কে ছাড়বো না।”
তখন আরুহি পাশ থেকে বলল,,,
“আমি সি আই ডি অফিসার আরহাম এর বোন আমি কি তার সাথে কথা বলতে পারি!”
এ কথা শুনে ওপাশ থেকে বলল,,
“এই তোর ভাই কি দিয়ে তৈরি বলতো। এখানে তোর ভাই কে উঠিয়ে এনে বেঁধে রেখেছি। তোর ভাই ভয় পাচ্ছে না। তারওপর বললাম আমরা কেন ওকে ধরে এনেছি তারপর থেকে বললো তোমরা যা ইচ্ছে করো শুধু আমার বোনের সাথে আমার একটু কথা বলিয়ে দাও। সেই কখন থেকে তোর সাথে কথা বলার জন্য বলছে। আমি বুঝলাম না তোদের ব্যাপার। ঠিক আছে বলাচ্ছি বল তবে এখন না আমি জানি তোরা ফোন ট্রেস করার চেষ্টা করছিস।আর কথা বাড়ানোর চেষ্টা করছিস। আমি আবার ফোন দেব তখন বলবি ঠিক চল্লিশ সেকেন্ড। ঠিক আছে।”
বলেই ওপাশের লোকটা ফোন রেখে দিল। সকলে আরুহির দিকে তাকালো কিন্তু আরুহি আরুহিই ওর কোন ভাবান্তর নেই। কিছুক্ষণ পর ফোন এলো আরুহি ফোন ধরে স্পিকারে দিয়ে বলল,,
“আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। তোমাকে ওরা মারে নি তো?”
“ওয়ালাইকুমুস সালাম। না মারে নি।”
“ওহ আচ্ছা তাহলে ঠিক আছে!ওরা তোমাকে খেতে দিয়েছে।”
“না দেয় নি! তবে শোন আমি দুঘন্টা এর মধ্যে ফিরছি এখানে একটা GN এ আছি। তুই চাইলে দের ঘন্টার মধ্যেই বাড়ি ফিরতে পারবো।”
কথাটা বলার সাথে সাথেই ফোন কেটে গেল। সকলে আরুহির দিকে অবাক চোখে তাকালো। আরুহি এগুলো কি বললো আর আরহাম ই বা কি বললো। সবার মাথায় ওপর দিয়ে বললো তারওপর আরুহির মুখে হাঁসি দেখা গেল।সেটা দেখে সকলে আরো অবাক।
~চলবে,,
বিঃদ্রঃ আসসালামু আলাইকুম। কথা দিয়েছিলাম বোনাস পার্ট দেব তাই ছোট হলেও দিয়ে দিলাম।পর্বটা কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন। ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ।