#তোর_শহরে_মেঘের_আনাগোনা (৭)
#Rawnaf_Anan_Tahiyat
সময় বহমান, নদীর স্রোতের মতো সময় বয়ে চলেছে। দেখতে দেখতেই কেটে গেল বেশ কয়েকদিন, এই কয়েক দিনে আমূল পরিবর্তন হয়েছে সবার জীবনেই। সাকিব আর সিমরানের বিয়ের দিন এগিয়ে এলো,আজ বাদে কাল ওদের বিয়ে। পুরো বাসা বিয়ে উপলক্ষে অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে,আর তার তদারকি করছে রাত নিজেই। বিয়ের প্যান্ডেল, হলুদ সন্ধার জন্য স্টেজ সাজানো, বিয়েতে যাওয়ার জন্য গাড়ি সাজানো সবকিছুর তদারকি রাতের উপর। খালামনি নিজে থেকে রাত কে এই দায়িত্ব দিয়েছেন, একবার রাতের ক্ষীণ মনে হলো খালামনি যেন ইচ্ছে করেই এটা করেছেন। খালামনি খুব ভালো করেই জানে যে রাত সাকিব কে ভালোবাসে আর সেজন্যই এটি করেছেন যেন রাত কষ্ট পায়। চোখের পানি তালা ঝুলিয়ে পাথর মানবী তে পরিণত হয়ে সব দায়িত্ব হাসি মুখে পালন করতে লাগলো সে। সন্ধ্যার মধ্যে হলুদ সন্ধার সমস্ত আয়োজন করা শেষ, কিন্তু যার বিয়ে সেই বাসায় নেই। একটা হসপিটালে জয়েন করেছে সাকিব,সেখান থেকে একটা হেল্থ ক্যাম্পিং এ আছে কিছু দিন হলো।সিমরানের কালো সত্যি জানার পরও ওকে বিয়ে করছে,কি করবে আর ভালোবাসা ভুলে যাওয়া সম্ভব নয় ওর পক্ষে। সারাদিন কাজ শেষে ক্লান্ত হয়ে সন্ধ্যা সাতটার দিকে বাসায় ফিরলো সাকিব, বিয়ের জন্য মাত্র তিন দিনের ছুটি নিয়েছে। সাকিব বাসায় ফিরতেই সবাই রৈ রৈ করে উঠলো, ওকে হলুদ সন্ধার জন্য রেডি করাতে ব্যস্ত হয়ে উঠলো সবাই।
‘হলুদ পাঞ্জাবি পড়ে আমাকে কেমন লাগছে রে রাত বুড়ি?’
পার্লারের মেয়েদের সাথে বসে মেহেদীর ডিজাইন সিলেক্ট করছিল রাত এমন সময় সাকিবের আগমন ঘটলো। রাত ওর দিকে উল্টো ঘুরে বসেছিল তাই ওর মাথায় হালকা করে টোকা দিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল। মেহেদী ডিজাইন সিলেক্ট করা বাদ দিয়ে ঘুরে তাকিয়ে দেখে তার স্বপ্নের সাজে সেজে সাকিব ভাই দাঁড়িয়ে। অবাক নয়নে সাকিব ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রইল রাত, হলুদ পাঞ্জাবীতে অপরুপ লাগছে তাকে।সে সবসময় কল্পনা করে এসেছে সাকিব ভাই কে বর বেশে ঠিক কেমন দেখতে লাগবে,আজ যেন তার স্বপ্ন টা পূর্ণ হতে চললো। মাছের মত ওরকম হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে সাকিব বিরক্ত হয়ে বললো,,
‘ওভাবে দেখছিস কি আমাকে? আমি জানি আমি দেখতে সুন্দর, এইভাবে বারবার আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থেকে সেটা আমাকে মনে করিয়ে দিতে হবে না। এখন তাড়াতাড়ি করে বল আমায় দেখতে কেমন লাগছে?’
‘খুব সুন্দর লাগছে সাকিব ভাই, একবারে ঠিক আমার স্বপ্নের পুরুষ টির মতো।’
‘কিছু বললি কি তুই?’
‘ন নাহ,কি বলবো আবার? সিমরান আপু তোমাকে দেখে ক্রাশ খাবে এটা আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর। দেখো আবার ওর বান্ধবীরা আবার তোমার প্রেমে না পড়ে?’
রাতের বাক্যলাপ শুনে সাকিব মুচকি হেসে ওর মাথায় আলতো করে গাট্টা দিয়ে বললো,’ধুর পাগলি, সবসময় বাজে কথা বলে ।’ হাসতে হাসতেই স্টেজের দিকে এগিয়ে গেল সাকিব,আর তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো রাত। সাকিব ভাই কে তার নিজের করে পাওয়া হলো না আর, হলো না পাওয়া তাকে নিজের মতো করে ভালোবাসার অধিকার…………….
__________________________________
সিমরানের গায়ে হলুদের সময় সাকিব ওকে ভিডিও কল করলো, ওকে ও এদিকে হলুদ লাগানো হচ্ছে। সাকিবের ভিডিও কল দেখে সিমরান বেশ বিরক্ত হলেও তা বাইরে প্রকাশ করলো না। মুখে মেকি হাসি ঝুলিয়ে ফোন স্ট্যান্ড সামনে রেখে স্বাভাবিক ভাবেই কথাবার্তা চালিয়ে গেলো।সিমরানের সাথে কথা বলার সময় হঠাৎ করেই ওর কয়েকটা বন্ধু একসাথে ওর উপর হা’ম’লা শুরু করলো, অনেক টা হলুদ হাতে নিয়ে চোখে মুখের উপরে মাখিয়ে দিল। চোখ মুখ আপাতত হলুদে মাখামাখি,এই বেশে সাকিব কে লাগছে ঠিক জোকারের মত।কল কেটে দিয়ে হুড়মুড় করে বাসায় ফিরে এসে নিজের রুমের দিকে ছুটে এলো, রাত তখন একা একাই ওর রুমের সামনের দিকটায় ডেকরেশন এর কাজ করছিল। বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম ফুল দিয়ে সাজাচ্ছিল সামনের দিকটা, ঠিক তখনই সাকিব প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতে এলো। দৌড়ে এসে রুমে ঢুকার সময় রাত দরজার কাছে থাকায় টাল সামলাতে না পেরে ওর উপরেই মেঝেতে উল্টে পড়লো।পড়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই উঠে দাঁড়ালো সাকিব, রাত তখনো মেঝেতেই। সাকিবের মুখ থেকে কিছু টা হলুদ ওর মুখেও লেগে গেছে, সেটাই মুছতে মুছতে উঠলো রাত। বিরক্তি ভরা চোখে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তখনই সাকিব আবাল মার্কা একটা হাসি দিয়ে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল।
রুমের সামনেই বেসিনে দশ মিনিট ধরে মুখ ধুয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে রইল রাত, না দেখে হলুদ মুছতে গিয়ে পুরো মুখ টা হলুদে মাখামাখি হয়ে গেছে। সাবান দিয়ে ধোয়ার পরও উঠছে না,ঘষে ঘষে মুখের নরম চামড়াটা লাল টুকটুকে করে ফেললো। মায়ের কাছে শুনেছে অবিবাহিত অবস্থায় অন্যের বিয়ের হলুদ নাকি নিজের মুখে ছোঁয়াতে নেই। সেজন্য হলুদ সন্ধার অনুষ্ঠানে যায়ই নি সে কিন্তু বলে না যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধা হয়।যেই ভয়ে গেল না সেই ভয়টা এসে সাকিব ভাই বেশ পাকাপোক্ত ভাবে গেঁথে দিয়ে গেলেন, বিগড়ে যাওয়া মেজাজ নিয়ে নিচে অনুষ্ঠানে চলে গেল রাত। এখন আর না গিয়ে কোনো লাভ নেই,যা হবার তা তো হয়েই গেল।
রাতের লাল হয়ে যাওয়া মুখখানি দেখে আসমা অবাক হয়ে গেল। মুখে লাল রঙের সাথে খানিকটা হলুদের আঁচ ও রয়েছে গালে, কপালে, থুতনিতে। মেয়ে কে বিষয় টা জিজ্ঞেস করলেন কিন্তু রাত অতি সন্তর্পণে ব্যাপারটা এড়িয়ে গেল। যদিওবা মা’কে সবকিছু খুলে বলতো কিন্তু মায়ের পাশে দ্য ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড খালামনি আর তার মেয়ে দাড়িয়ে আছে। একটু হেসে রাত মায়ের পাশে বসে পড়লো, সামনে সাকিব ভাইয়ের বন্ধুরা, নিদ্রা আপুরা সবাই ডান্স করছে।ওদিকেই তাকিয়ে রইল সে।
Ho ho ho ho
ho ho ho ho
Isq vhi tu hai
Pyar bhi tu hai
Tuhi meri mohabbat hai
Sans mein teri
Sans mein le loon
Teri agar ijajat hai
Music……………….
Sans mein teri
Sans mein le loon
Teri agar ijajat hai
Teri bin me iss duniya ka
Year karunga keya
Mujhko toh bass shaam saware
Ek teri hi chahat hai
Sans mein teri
Sans mein le loon
Teri agar ijajat hai…………………….
নিদ্রা আর একটা গানের সাথে সাথে ছেলে কাপল ডান্স করছে, ওদের সাথে আর সবাই ও ডান্স করছে। ওদিকে দেখতে দেখতেই সাকিব একবার ঘুরে আশপাশের দিকে তাকালো, দেখে রাত ও এসেছে এখন। রাত ও সাকিবের দিকে তাকিয়েছে তখন আর সাকিব ও তার দিকে, একেবারে চোখাচোখি হলো দুজনই। চোখের ইশারায় কিছু জিজ্ঞেস করল ওকে, কিন্তু ও কোনো রেসপন্স না দিয়ে চোখ নামিয়ে নিল। সাকিব ভাই কে যত হাসিমুখে থাকতে দেখছে ওর ভিতর টা তত বেশি জ্বলছে, চুপ চাপ ওখান থেকে উঠে বাইরে চলে এলো। হঠাৎ করেই কেন জানি খুব কান্না পাচ্ছে তার, ইচ্ছে করছে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে। কিন্তু পরিস্থিতি ওকে কান্না দূরে থাক মন খারাপ করার মতো অবস্থাতেও রাখে নি। বাগানের একটা বেঞ্চে এসে বসলো রাত। আজকের পর থেকে সাকিব ভাই অন্য কারো হয়ে যাবে,তাকে নিয়ে আর স্বপ্ন দেখার অধিকার টাও থাকবে না ঢ়
আজকের পর থেকে। সিমরান আপু সাকিব ভাইয়ের এতো বড় ক্ষতি করতে চাইছে আর সেটা জেনেও সাকিব ভাই ওকে কেন বিয়ে করতে যাচ্ছে তার কিছুই মাথায় ঢুকলো না রাতের। সবটাই তো জানে সাকিব ভাই, সবকিছু খুলে বলেছে ওকে, তারপরও কেন??
চলবে…….……………..??