তোর শহরে মেঘের_্আনাগোনা পর্ব ৬

0
655

#তোর_শহরে_মেঘের_আনাগোনা (৬) বোনাস পর্ব
#Rawnaf_Anan_Tahiyat

সিমরান আর রায়হানের খুব অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কিছু ছবি দেখায় ওর বান্ধবীরা, যেগুলো ওদের ফোনে ছিল।ছবি গুলো দেখে কয়েক মুহুর্তের জন্য সাকিব স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল, কিছু বলতে পারে নি কিছুক্ষণ। এরপর ওদের থেকে আরো খোঁজ খবর নেয় রায়হান আর সিমরানের ব্যাপারে। ওদের থেকেই রায়হানের দুটো বন্ধুর কথা জানতে পারে যাদের থেকে জানা যাবে যে ওরা দুজন এখন কোথায় আছে।ব্যস আর কোনো কথা নেই,ওর তিন বন্ধু কে লাগিয়ে দিল ওই দুটো কে খুঁজে বের করে আচ্ছা মতো ধোলাই দিতে।ধোলাই পর্ব শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই রাতের মেসেজ এলো ওর ফোনে,আর মেসেজ টা ওপেন করেই..……….…বিশ্বাস করতে পারছিল না এইসব কিছুই, কিন্তু ও নিজেই ওই মেয়ে গুলোর কাছে যা শুনেছে তা-ও তো মিথ্যা নয়। নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়েই রাতের মেসেজ টা বিশ্বাস করলো,এক বুক চাপা আর্তনাদ এসে ভিড় করলো ওর কাছে।

** বর্তমান **

কাঁদতে কাঁদতেই রাতের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো সাকিব,বড্ড বেশি ক্লান্ত সে। এদিকে বেচারি রাত এখনো ঘোরের মধ্যে আছে, সাকিব ভাই তাকে জড়িয়ে ধরেছে এটা তো সে ভাবতেই পারছে না।ভ্যাবাচেকা খেয়ে বসে রইল কতক্ষণ কে জানে, হঠাৎ করেই হুশ এলো সাকিব ভাই তাকে ধরে কাঁদছে। ঘাড় ঘুরিয়ে ওর দিকে তাকালো, কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেছে কিন্তু কান্নার রেশ চোখে মুখে লেগে রয়েছে এখনও। চোখের কোণে কয়েক ফোঁটা পানি চিকচিক করছে , হাত দিয়ে সেটা মুছে দিলো। ঠিক তখনই আমায়রা সাকিবের রুমে এলো ওর সাথে কথা বলার জন্য।আমায়রা সাকিবের ছোট বোন, এত দিন বাসায় ছিল না সে। পড়াশোনার জন্য বাসা ছেড়ে কলেজের কাছেই হোস্টেলে থাকে, ভাইয়া এসেছে শুনে কালকেই চলে আসতো কিন্তু হঠাৎ কোচিং এ পরীক্ষা শুরু হলো কালকে।আর তাই পরীক্ষা দিয়ে আজকে সকালেই বাসায় ছুটে এসেছে ভাইয়ার সাথে দেখা করতে। যদিও বা জানে যে সাকিব ওর মুখ টাও দেখতে চায় না, তারপরও ভাই তো?

রুমে এসে খুঁজে পেল না ভাইকে তাই বেলকনিতে হয়তো থাকতে পারে এটা ভেবে বেলকনিতে চলে এলো।এসে দেখে রাতের কাঁধে মাথা রেখে সাকিব ঘুমুচ্ছে,আর রাত ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। এই মেয়ে টা কে সহ্য হয় না আমায়রার, হনহন করে এসে রাতের কাঁধ থেকে এক ঝটকায় সাকিব কে দূরে সরিয়ে দিলো।

‘তুই আমার ভাইয়ার সাথে এখানে কি করছিস রাত? আমার ভাইয়ার কাছে তুই এখনও ঘুরঘুর করছিস কেন?’

আমায়রার ধাক্কায় সাকিবের ঘুম ভেঙ্গে গেছে, চোখ খুলে দেখে যার মুখ সে এই জন্মে দেখতে চায় না সেই ওর সামনে দাঁড়িয়ে রাতের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।এক রাশ ঘৃণার চোখে আমায়রার দিকে তাকালো সাকিব,,

‘ওকে কিছু বলার আগে তুই আমাকে বল তুই আমার রুমে কি করছিস? আমি কি তোকে আমার রুমে আসার পারমিশন দিয়েছি? কোন অধিকারে আমার রুমে এসেছিস তুই?’

‘ভাইয়া আমি তোর বো……..’

‘বের হ তুই আমার রুম থেকে, তুই আমার কেউ না, কেউ না তুই আমার বুঝতে পেরেছিস তুই? এক্ষুনি বের হ বলছি।’

এই বলে সাকিব নিজেই আমায়রার হাত ধরে টানতে টানতে রুমের বাইরে বের করে দিল।রাত পিছন থেকে এসে সাকিব কে আটকাতে চাইলো কিন্তু তার আগেই সাকিব ওকে বললো,,

‘রাত বুড়ি তুই এখন আমার রুম থেকে যা, আমি একটু একা থাকতে চাই প্লিজ।’

মুখটা কালো করে রাত ব্যাগ নিয়ে ওর রুম থেকে বেরিয়ে গেল।ও চলে যাওয়ার পর সাকিব আমায়রার মুখের উপর দরজা টা খট করে বন্ধ করে দিয়ে আবার বেলকনিতে এসে বসলো। মাথা টা যন্ত্রণা দিচ্ছে ভীষণ,দু হাতে মাথা চেপে ধরে সামনের দিকে তাকিয়ে রইল।

__________________________________

একটা বড় ফার্মেসির সামনে সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে রায়হান তার ঠিক নেই। সিমরান কি কি করছে ভিতরে কে জানে, হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো পাঁচটা দশ বাজে এখন। অসহ্য কর বিরক্তি নিয়ে মিল্লাত কে একটা কল দিলো রায়হান।আমায়রার বয়ফ্রেন্ড মিল্লাত,সে ওদের প্লানের মুল হোতা।ওর ইশারায় এই দুই জন বাঁদর নাচ নাচছে,আর ও ওদের দেখে আর হাসে। দুই বার রিং হওয়ার পর ফোন রিসিভ করলো মিল্লাত,প্রেয়সীর সাথে প্রেম নিবেদনে ব্যস্ত এইসময় ফোন আসাতে বেশ বিরক্ত হয়ে গেল সে।বা হাতে ফোন তুলে কানে দিতেই ওপাশ থেকে ভয় পাওয়া গলায় রায়হানের কন্ঠ শোনা গেল,,

‘আন্টির অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেছে আজকে মিল্লাত ভাই, তুমি তাড়াতাড়ি হসপিটালে চলে এসো।আজকেও আন্টি কে স্যালাইন দিতে হয়েছে, আরো দুটো কি ইনজেকশন যেন সেগুলোও দিতে হবে। সেগুলো নিতে আমরা ফার্মেসি তে এসেছি তুমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের সাথে ওখানেই দেখা করো।’

‘শাট আপ রাস্কেল, কখনও তো সময় বুঝে ফোন কর আমাকে।যখন তখন ফোন করে মেজাজ খারাপ করে দিবি না একদম,মা অসুস্থ হয়ে পড়লে আমি কি করবো? আমি কি ডাক্তার নাকি,ডাক্তার যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে সেভাবেই চিকিৎসা করা। ভালো না হলে পরে বলবি, আমি কাউকে দিয়ে টাকা পাঠিয়ে দেবো বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করানোর জন্য। এখন ফোন রাখ ইডিয়ট।’

মিল্লাতের ব্যবহারে রায়হান থ বনে গেল,এ কেমন ছেলে আবার? নিজের মা অসুস্থ অথচ তার খোঁজ খবর নেয় না একবার ও, সিমরান আর ও ওর মায়ের দেখা শোনা করে।যেচে কখনো ওর মায়ের খবর দিতে গেলে সবসময় এই ব্যবহারটাই করে ওদের সাথে। তখনই সিমরান ইনজেকশনের প্যাকেট নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো। রায়হান কে ওরকম চুপ করে থাকতে দেখে ইশারায় কিছু জিজ্ঞেস করতেই ও বললো, ‘মিল্লাত ভাই আজকে আসবে না বললো, ওনাকে আমি ঠিক বুঝতে পারি না জানো তো।’

‘ধুর রাখো তো ওর খবর। আমরা আমাদের নিজেদের বিষয় টা নিয়ে ভাবি না, ওকে ভেবে আমাদের কি দরকার?’

রায়হান সিমরানের কথার প্রতিউত্তরে কিছু বললো না, চুপচাপ হসপিটালের দিকে পা বাড়ালো দু’জনে ই।

_______________________________________

রাত দের বাসায় এখন লঙ্কাকাণ্ড ঘটছে। সকালের ব্যাপারটা নিয়ে আসমা আর নাসিমার মধ্যে প্রচুর ঝামেলা হয়েছে, এখনো ও হচ্ছে। সেদিন রাজিয়ার কথা টা শোনার পর থেকেই কেন জানি আসমার নিজের কাছে নিজেকেই বড় অপরাধী মনে হচ্ছিল, কেন জানি মনে হচ্ছিল তিনি মা হিসেবে ব্যর্থ। নিজের সন্তানের আদর, শাসনের দায়িত্ব তিনি নিজে না নিয়ে বোনের হাতে তুলে দিয়েছিলেন, বোন চোখের সামনে তার এক সন্তান কে মা’রে আরেক সন্তান কে আদর করে তারপরও তিনি কিছুই বলতে পারেন না। প্রথমে রাতের সাথে খুব ভালো থাকলেও হঠাৎ করেই বুবু ওর সাথে কেন এতো খারাপ ব্যবহার করে, কেন অকারণে দোষ দেয় তা আজো ও জানেন না তিনি।এত দিন খারাপ লাগলেও মুখ ফুটে কিছু বলতে পারেননি বুবু কে কিন্তু রাজিয়া কে দেখে নিজের অপরাধ বোধ টা যেন পাকাপোক্ত ভাবে গেঁথে গেল মনে। এইভাবে নিজের সন্তান কে অন্যের রোষানলে আর পড়তে দিতে পারেন না তিনি,তাই আজকে নাসিমা রাতের সাথে অমন করে কথা বলায় খেপে উঠলেন। সারাদিন দুই বোনের তর্কাতর্কি চললো,নাসিমার সাথে আরো যোগ হয়েছে আমায়রা। রাজিয়া সহ বাসার বাকি সবাই মিলে ও দুই জনের একজন কেও শান্ত করতে পারলো না। এদিকে বাসায় কি চলছে না কিছু এসবের ধরা ছোঁয়ার বাইরে রাত আর সাকিব। দুজনের একজনেও নিজের রুমের বাইরে বের হয়নি সারাদিন, একজন মন ভাঙার যন্ত্রণায় সারাদিন কেঁদেছে তো আরেকজন প্রিয় মানুষ টাকে কষ্ট পেতে দেখে ছটফট করছে।

চলবে…………..

{আসসালামুয়ালাইকুম। প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি নিয়মিত গল্প না দেওয়ার জন্য, আমার পরীক্ষা চলছে কোচিং এ+আম্মু হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তাই পরশু বোনাস পর্ব দেওয়ার কথা থাকলেও তা দিতে পারিনি। ইনশাআল্লাহ এখন থেকে নিয়মিত দেওয়ার চেষ্টা করবো, রেসপন্স করবেন সবাই।}

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here