#তোর_শহরে_ভালোবাসা ?
পর্ব-১৭
ফাবিহা নওশীন
??
‘সামু চেঞ্জ করে শাড়ি পড়ে নিস।বিয়ের প্রথম দিন আর বাড়ি ভর্তি মেহমান আছে।তাই চেঞ্জ করে একটা শাড়ি পড়ে নিস”
নাস্তার টেবিলে সামুর মা সামুকে বললো।
সামু খেতে খেতে বললো,
আচ্ছা আম্মু।
সামু খাওয়া শেষ করে নিশির কাছে শাড়ি নিয়ে যায়।নিশি ওকে গুছিয়ে শাড়ি পড়িয়ে দেয়।সাথে হালকা করে সেজে নেয়।নিজেকে আয়নায় বারবার দেখছে।একদম বউ বউ লাগছে।
মনে মনে ভাবছে,
এভাবে আদির সামনে গেলে আদি আর রাগ করে থাকতে পারবে না।
সামান্তা আর নিশি লিভিং রুমে বসে গল্প করছে তখনই নিশি সামুকে ধাক্কা দিয়ে বললো,
–দেখ নিষ্টুরনি,,,আমার ভাইয়ের কি অবস্থা করেছিস?একদিনেই মুখ শুকিয়ে গেছে।
সামু সেদিকে চেয়ে দেখে আদি চোখ ডলতে ডলতে সিড়ি দিয়ে নিচে নামছে।মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে আছে।যেন সদ্য ছেকা খেয়েছে।কোনোদিন না চেয়ে সোজা ডাইনিং টেবিলের গিয়ে বসে পড়লো।মাথা নিচু করে চুপচাপ খাচ্ছে।সামু আর নিশি দুজনেই ওকে পরখ করছে।
আদি খাওয়া শেষ করে সিড়ি দিয়ে উঠে চলে গেলো নিজের রুমে।
নিশি সামুকে ধাক্কা মেরে বললো,
তাড়াতাড়ি যা,,আবহাওয়া ভালো ঠেকছেনা।
সামু কাদো কাদো হয়ে বললো,
–আপু এই আবহাওয়ায় আমাকে পাঠাতে চাও,,?তোমার কি দয়ামায়া নেই এই বাচ্চা মেয়েটার প্রতি।
–তোকে খেয়ে ফেলবে না,,,
সামু ভেংচি কেটে রুমের দিকে পা বাড়ালো।আদি আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুলে ব্রাশ করছে।সামান্তা পিছনে গিয়ে গলা খাকারি দিলো।আদি দেখেও দেখলোনা।ফোন নিয়ে সোফায় বসে পড়ল।সামান্তা পাত্তা না পেয়ে ওর পাশে গিয়ে বসে আবারো গলা খাকাড়ি দিলো।
আদি বিরক্ত হয়ে ফোন থেকে মুখ তুলে ভ্রু কুচকে বললো,
–কি চাই,,
–আমাকে দেখে কি তোমার ভিক্ষুক মনে হচ্ছে,, যে বলছো কি চাই?
আদি কিছু না বলে মুখ ফুলিয়ে বারান্দায় পা বাড়ালো।সামুও পিছু পিছু হাটা ধরলো।আদি আবার রুমে চলে এলো।সামু পিছনে থেকে মজা করে বললো,
–রাগ করেছো গো সোয়ামী??
আদি চমকে সামুর দিকে চেয়ে বললো,
–ছি,,এইগুলা কি ধরনের ল্যাংগুয়েজ সামু?
–আমার সাথে কথা না বললে আমি এমন ভাষাই এপ্লাই করবো?
–তোমার সাথে কথা বলবোনা।গতকাল রাতে কি করেছো ভুলে যাইনি,,,আমাকে দিয়ে খাটিয়ে নাক ডেকে ঘুমিয়েছো।
সামু দাত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে তারপর বললো,
–সেজন্যই তো সরি বলতে এসেছি।প্লিজ একসেপ্ট মাই সরি।
–নট একসেপ্টেড,তুমি সরি বললেই কি আমার ওয়েডিং ফার্স্ট নাইট ফিরে আসবে?
সামু অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে বললো,, না,,
তারপর মাথা উচু করে টেডি স্মাইল দিয়ে বললো,
–তবে একটা কাজ করতে পারি,,চলুন আবার বিয়ে করি।হিহি,,,
আদির সামুর কথা শুনে প্রচুর হাসি পাচ্ছে কিন্তু হাসি চেপে ওর দিকে তাকাতেই নাক ফুলটা চোখে পড়ে।সামুর নাকে নাক ফুলটা জ্বলজ্বল করছে।নাক ফুলটা ওর সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।আদি সামান্তার নাকে হাত দিয়ে বললো,
–নাক ফুলটা তো তোমাকে দারুণ মানিয়েছে।
সামান্তা খুশিতে গদগদ হয়ে বললো,
–আর শাড়িতে?
আদি এতক্ষণে সামুকে খেয়াল করলো।কিছুটা দূরে গিয়ে সামুর পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলালো।
সামু মিষ্টি কালার শাড়ি পড়েছে,নাকে ওর দেওয়া নাকফুল,গলায় প্লাটিনামের চেইন,,হাতে রিং আর দুহাতে দুটো চিকন সোনার চুড়ি,,চুলগুলো বেনি করে একপাশে রাখা।চোখে হালকা শেডের সাথে কাজল,ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দেওয়া।একদম সদ্যবিবাহিত নারী।
সামুকে ভালোভাবে দেখে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বললো,
— তোমায় একদম হট লাগছে।
সামুর মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো।
–কি জঘন্য কমপ্লিমেন্ট,,,
আদি বাকা হেসে সামুকএ জড়িয়ে ধরল।
তখনই দরজায় নক করলো কেউ।কিন্তু সেদিকে আদির খেয়াল নেই।সামু দরজায় নক শুনে আদিকে দু’হাতে সরিয়ে নিলো।
আদি সামুর দিকে প্রশ্নবোধক চাহনি দিলো।
–দরজায় কেউ নক করছে,,
আদি বিরক্ত হয়ে উঠে দরজা খোলে দিলো।সাভেন্ট বললো,
–স্যার,আপনার দুজন বন্ধু এসেছে।
–আচ্ছা,বসতে বলো আসছি।
আদি বিরক্তি নিয়ে সামুর দিকে চেয়ে বললো,
–শেষে বন্ধুরা আমার রোমান্সে ভিলেন হলো।
সামু মুচকি মুচকি হাসছে।তারপর বললো,
–কি সুইট আপনার বন্ধুরা,,, একদম সময় মত এসে প্টেছে।
সামু নিচে নেমে দুজন সুদর্শন ছেলেকে লিভিং রুমে বসে থাকতে দেখলো।তারা নিজেদের মতো করে কথা বলছে।সেদিকে সামুর আগ্রহ নেই।সামু সামিরের রুমে গেলো।বেচারা একা একা বোর হচ্ছে ভিষণ তাই সামু ভাইয়ের সাথে সময় কাটাবে।
সামিরের সাথে এটা সেটা নিয়ে কথা বলছে।মিনিট ২০পর সামুর ফোনে টুং শব্দে একটা মেসেজ এসেছে।আদির মেসেজ।
“সামু,বাইরে যাচ্ছি,কখন ফিরবো ঠিক নেই।”
সামান্তা মেসেজ পড়ে মুচকি হাসে।আর ভাবছে যাক অন্তত যাওয়ার আগে বলে তো যায়।সামু দুপুরে লাঞ্চ করে সার্ভেন্টকে দিয়ে নিচের গেস্ট রুম থেকে নিজের জিনিসপত্র,জামাকাপড়, বইপত্র সবকিছু উপরে আদির রুমে পাঠায়।রুমে গিয়ে পুরো রুমে চোখ বুলায়।
এখন থেকে এটা আমার ঘর।অবশেষে আমি এই ঘরের অধিকার পেয়েছি।
তারপর সবকিছু নিজের পছন্দ মতো গুছিয়ে নেয়।নিজের জামাকাপড়, বইপত্র সবকিছু গুছাতে গুছাতে বিকেল হয়ে যায়।বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা আদির আসার নাম নেই।সামান্তা ভাবছে,
–আদিকে এবার এই বন্ধুদের আড্ডা থেকে দূরে রাখতে হবে।বন্ধুদের পেলে সারা দুনিয়া ভুলে যায়।বন্ধু ছাড়া জীবন চলেনা কিন্তু সব ফেলে সারাদিন তাদের লেজ ধরে বসে থাকলে তো চলবেনা।নিজের পার্সোনাল একটা লাইফ আছে,ফ্যামিলি,রেসপনসেবলিটি আছে সেগুলো তো পালন করতে হবে।বিয়ে হয়েছে সংসার হয়েছে এখন একটু পরিবর্তন হতে হবে।মাঝরাতে বাড়ি ফিরা,দুপুর পর্যন্ত ঘুমানো,,তারপর বন্ধুদের আড্ডা,ক্লাব,পার্টি এসব আর চলবেনা তবে তাড়াহুড়ো নয়,সবকিছু ধীরে ধীরে করতে হবে।
সন্ধ্যায় নাস্তা করে বন্ধুদের কাছ থেকে ক্লাসের পড়া জেনে নিয়েছে সামান্তা।বিয়ের জন্য ভার্সিটি যাওয়া হয়নি কতদিন।ওকে যে সবদিক দিয়ে পার্ফেক্ট হতে হবে।তাই পড়াশোনায় মনোযোগী হতে হবে।বইপত্র নিয়ে পড়তে বসে গেলো।পড়া শেষ করে শাড়ি চেঞ্জ করে সালোয়ার কামিজ পরে১০টা নাগাদ নিচে গেলো।নিচে গিয়ে দেখে আদি চলে এসেছে,,সামিরের সাথে কথা বলছে।সামু আদির পাশে গিয়ে বসে জিজ্ঞেস করলো,
–কখন এলে?
–এইতো কিছুক্ষণ আগে।
–ওহহ,,যাও রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেও।
আদি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।
ডিনার শেষে সামু রুমে গিয়ে দেখে আদি নেই।ফ্রেশ হয়ে এসে আদিকে খোজে কিন্তু আদি ঘরে নেই।সামান্তা বারান্দায় গিয়ে দেখে আদি রকিং চেয়ারে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।আদিকে এই সময় এভাবে ঘুমাতে দেখে অবাক হয়ে যায়।যে ছেলে রাত ২-৩টা ঘুমায় সে রাত ১২টায় এমন বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।সামান্তা আদির কাছে গিয়ে ফিসফিস করে ডাকে,,
–আদি,,,
নো সাড়াশব্দ।
আবার ডাকে একটু জোরে,,
–আদি,,
–হু(ঘুম ঘুম চোখে)
–এখানে এভাবে ঘুমাচ্ছো কেন?বেডে গিয়ে ঘুমাও,,।
–উহু,,
–কেন?
–উহু,,
–কি জ্বালা শুধু উহু উহু করছে।উঠো বলছি নয়তো পানি ঢেলে দিবো।
আদি ঘুম ঘুম চোখে পিটপিট করে চোখ মেলে সামুকে নিজের কোলে বসিয়ে,পিছনে থেকে জড়িয়ে ধরে, ওর পিঠে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।
–এত ঘুম কেন?
–কালকে সারারাত ঘুমাইনি।শোক পালন করেছি।তুমি তো আরামসে নাক ডেকে ঘুমিয়েছো।
–হিহি,,
আদি আরো জোরে ঝাপটে ধরে মাথা রাখলো।
তা দেখে সামান্তা বললো,
–আদি আমাকে কি তোমার বালিশ মনে হচ্ছে?
–হু,,তোমার পিঠ বালিশের মতো সফট।পাথরের মতো শক্ত নয়।
আদির কথা শুনে সামু উচ্চস্বরে হেসে উঠলো।হাসির শব্দে আদির চোখের ঘুম উবে গেলো।হাসির ঝংকার ওর কানে বাজছে।সামুকে এভাবে প্রাণ খোলে কখনো হাসতে দেখেনি।আদি মাথা তুলে সামুর পিঠে নাক ঘষে বললো,
তুমি হাসতেও জানো?তোমাকে এর আগে এভাবে হাসতে দেখিনি?প্রাণ খোলা উচ্ছল হাসি।
সামু আদির কোল থেকে উঠে দাড়িয়ে বললো,
–এভাবে হাসতে দেখোনি,এবার থেকে দেখবে।মাত্র তো শুরু,,,অনেক কিছু বাকি আছে দেখার,,।
আদি উঠে দাড়িয়ে বাকা হেসে বললো,
–ইউ আর রাইট,, অনেক কিছু এখনো বাকি,,
আদির কথার মানে সামুর ব্রেইন এখনো ধরতে পারেনি।ব্রেইন ধরতেই দেখে আদি ওর দিকে এগিয়ে আসছে।
সামান্তা আমতা আমতা করে বলল,,
–না মানে,,,আমি আসলে বলছিলাম,,
আদি সামান্তাকে একটানে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ওর গালে নাক দিয়ে স্লাইড করতে করতে মাতাল করা কন্ঠে ফিসফিস করে বললো,
–কি বলছিলে,,?
সামান্তার গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছেনা।সব কথা গলায় এসে আটকে যাচ্ছে।
আদি সামান্তাকে কোলে তুলে নিলো।সামান্তা আদির শার্ট খামচে ধরে ওর বুকে মুখ লুকালো।ধীর পায়ে রুমে নিয়ে বেডে শুইয়ে দিয়ে নিজের ভর ওর উপর ছেড়ে দিয়ে চোখে,ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ছুয়ালো,,,।
❤ ❤ ❤ ❤
❤ ❤ ❤
❤ ❤
❤
ঘুম ভেঙে সামু নিজেকে আদির বুকে আবিষ্কার করে।ঘুমঘুম চোখে আদির দিকে তাকাতেই হার্ট এটাক হওয়ার অবস্থা।আদি ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে ওর দিকে চেয়ে আছে।আদিকে এভাবে চেয়ে থাকতে দেখে লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিয়ে বললো,
–এত সকালে ঘুম ভেঙে গেলো কিভাবে?
–ঘুমাইনি।সারারাত জেগে জেগে তোমাকে দেখেছি।
–মিথ্যুক,,ঘুমের রাজ্যের রাজা না ঘুমিয়ে আমাকে দেখবে,,,?
–হুম,,
বলেই সামুর কপালে ঠোঁট ছোয়ালো।সামু আদিকে ছাড়িয়ে উঠতে গিয়ে আবার শুয়ে পরলো।তারপর আদির দিকে অসহায় ভাবে তাকালো।
আদি বাকা হেসে বললো,
–কি হলো জান যেতে ইচ্ছে করছে না?আমার কাছে আরো থাকতে ইচ্ছে করছে?
সামু মুখ ইনোসেন্ট করে বললো,
–তুমি চোখ বন্ধ কর।
–কেন?
–বন্ধ করো।
–উহু,,
সামু কাদো কাদো হয়ে বললো,
–প্লিজ,,
আচ্ছা,,আদি চোখ বন্ধ করলো।সামু আদির মুখের উপর চাদর দিয়ে নিজের জামাকাপড় ঠিক করে এক দৌড়ে ওয়াশরুম।
আদি চাদর সরিয়ে হেসে দিলো।তারপর মনে মনে বলছে,
–আজ অনেক শান্তি লাগছে।অবশেষে তোমাকে নিজের করেই ফেললাম।বলেছিলাম না তোমাকে হাসিল করেই ছাড়বো।করে ফেলেছি।
সামান্তা শাওয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেলো।ওর আজ নিজেকে পরিপূর্ণ লাগছে।
সামান্তা শাওয়ার নিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল ঝাড়ছে।আদি পিছনে থেকে এসে সামুকে জড়িয়ে ধরে গলায় নাক ঘষছে।
–আদি ছাড়ো,,ফ্রেশ হয়ে নেও।
–উহু,,
সামান্তা জোর করে আদিকে সরিয়ে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দিলো।
আদি ওয়াশরুম থেকে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হচ্ছে।আদিকে ভেজা চুলে এভাবে বের হতে দেখে সামান্তা অপলক তাকিয়ে আছে।আদি কাছে এসে ভ্রু নাচিয়ে বললো,
–কি দেখো বউ?
–কিছুনা,,তাড়াতাড়ি নিচে এসো।
–নিচে গিয়ে কি করবো?
–সবার সাথে নাস্তা করবে।
আদি সামান্তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
–আমার তো শুধু তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করে।
সামান্তা নিজেকে ছাড়িয়ে বললো,
–দেখাদেখিতে পেট ভরবেনা।রেডি হয়ে নিচে আসুন।
সামান্তা চলে গেল। আদি বিরবির করে বললো,বউটা এতো আনরোমান্টিক কেন?
চলবে….
#তোর_শহরে_ভালোবাসা?
পর্ব-১৮
ফাবিহা নওশীন
??
সামুর পিছনে আদি হাতা ফোল্ড করতে করতে সিড়ি দিয়ে নামছে।তা দেখে নিশি হা হয়ে আছে।দুজন নামতেই নিশি কিছু একটা খোজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।সোফার সামনে পিছনে, নিচে,উপরে,সেন্টার টেবিলের উপরে,নিচে খোজছে।তা দেখে সামু জিজ্ঞেস করলো,
–আপু কি খোজ?
নিশি কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়িয়ে বললো,
–চশমা খোজি,,ইদানীং মনে হচ্ছে একটু বেশি দেখি।
সামু অবাক হয়ে বললো,বেশি মানে?
–কি আর বলবো দুঃখের কথা,,ইদানীং যা চোখের সামনে না থাকে তাও দেখি।যেমন দেখ আমার মনে হচ্ছে তোর পিছনে একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে তাও ভাইয়ার মতো চেহেরা,,কিন্তু তোর পিছনে তো কেউ নেই তাইনা,,এত সকাল সকাল কি ভাইয়া উঠে বল?
সামু আর আদি এবার আসল কাহিনী বুঝতে পারলো।সামু মুখে হাত চেপে হাসছে।আদি এসে নিশির চুল ধরে টান দিলো।তারপর বললো,
–মজা করা হচ্ছে না?তোর চুল ছিড়ে কাকের বাসায় দিয়ে আসবো।
নিশি চুল ছাড়াতে ছাড়াতে বললো,
–সে না হয় দিস,,কিন্তু এখন ছাড়,,একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে,,
–কি কাজ?
–সূর্য্যি মামাকে দেখবো?
আদি চুল ছেড়ে দিয়ে ভ্রু কুচকে বললো,,
–কেন?সূর্যকে দেখার এত তাড়া কেন?
–আরে দেখতে হবে না সূর্য আজ কোন দিকে উঠেছে,,যে আমার ভাই সকাল সকাল লিভিং রুমে হাজির,,
–তবে রে,,!!
নিশি দৌড় দিলো ভাইয়ের মার খাওয়ার আগে।সামু হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে।তা দেখে আদি বলছে,
–হাসলে কি পেট ভরবে?পেট ভরার জন্য খেতে হবে,,
–হুম,,
সামু বুঝতে পারলো আদি ওর কথা ওকেই শুনাচ্ছে।কিন্তু হাসি চেপে রাখতে পারছেনা।মুখে হাত দিয়ে আটকে রেখেছে।তা দেখে আদি বললো,
–ভালোভাবেই হাসো,,নয়তো হাসি আটকে রাখার ক্রাইমে মরে যাবে।
সামান্তা হাত সরিয়ে জোরে জোরে হেসে দিলো।আদি মুখ ফুলিয়ে ডাইনিং টেবিলের কাছে গেলো।সামু হাসতে হাসতে নিশির কাছে গেলো।দূর থেকে বড়রা ওদের কান্ড দেখে হেসে যাচ্ছে।আদির মা বললো,
–আমার পরিবারের খুশিতে যেন কারো নজর না লাগে।দোয়া করি এভাবেই খুশি থাকুক সবাই।
নাস্তা শেষে সামু মায়ের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে।
–আম্মু আর কিছুদিন থেকে গেলে হয়না?
–মেয়ের শ্বশুর বাড়ি কতদিন থাকবো?
–কি বললে এটা তুমি?
–আরে মজা করলাম রাগ করিস কেন?কতদিন ধরে এসেছি।সামিরের স্কুল আছে।জানিসই তো তোর ভাই তোর চেয়ে বড় ফাকিবাজ।পড়াশোনা নষ্ট হচ্ছে অন্য সময় আবার আসবো।তোর সময় হলে তুই আদিকে নিয়ে ঘুরে আসিস।
আর শোন,,আহনাফ ভাই আর ভাবি খুব ভালো মানুষ।তোকে খুব ভালোবাসে।অনেক কপাল করে এমন শ্বশুর শাশুড়ী পেয়েছিস।সবসময় তাদের মেনে চলবি।সব কথা শুনবি।খেয়াল রাখবি।সম্মান করবি।যত কষ্ট হোক না কেন নিজের আগে পরিবার এটা মনে রাখবি।নিশিও তোকে খুব ভালোবাসে।ওর খেয়াল রাখবি।কষ্ট পায় এমন কিছু করবিনা।আর হ্যা,,লাস্ট টাইম যা করেছিস,,এমন কাজ কাউকে না জানিয়ে করবিনা।ভাগ্য ভালো ছিলো তাই বেচে গেছিস কিন্তু সবসময় কিন্তু ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়না।বুঝলি,,কোনো কিছু করার আগে আদিকে জানাবি।
আর হ্যা,সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা আদিকে নিয়ে।ও তোর হাসব্যান্ড।সবকিছুতে ওর প্রায়োরিটি আগে দিবি।ওর বয়স কম,ম্যাচুরিটির অভাব আছে।কিছুটা বাচ্চামি স্বভাবের।বয়সের সাথে সাথে ঠিক হয়ে যাবে।ওর দিকে খেয়াল রাখবি।ছেলেটা তোকে খুব ভালো বাসে।শুনেছি অনেক রাগী, জেদি।যখন রাগারাগি করবে তখন মুখে মুখে তর্ক করবিনা।দুজন রেগে গেলে চলবেনা একজনকে অন্তত ঠান্ডা থাকতে হবে।তাই যখন রেগে যাবে চুপ থাকবি।পরে বুঝিয়ে বলবি।ওর সব কথা মেনে চলবি।ছোট ছোট বিষয়ে খেয়াল রাখবি।স্বামীকে খুশি রাখতে না পারলে নারীর জীবন বৃথা।সংসারে স্বামীর অবস্থান প্রথমে। বুঝেছিস?
–হুম।(এতো টিপিক্যাল কেন তুমি।মাথা ঘুরছে এসব শুনে)
সামু নিশির রুমের পাশ দিয়ে নিজের রুমের দিকে যেতেই নিশি হাসি হাসি মুখে এগিয়ে এলো।তারপর সামুকে ধরে গান গাইছে,,
আগার তুম মিল যায়ে জামানা ছোর দেংগে হাম,,
–সকাল সকাল পাগল হয়েছো?
–ওই পাগল হবো কেন হা?খুশিতে তো তুই পাগল হয়ে যাচ্ছিস,,
–মানে,,
—
তোর ফেইস দেখেই সবাই সব বুঝতে পারবে।এতো গ্লো করছো কেন গো ভাবি?
[ভ্রু নাচিয়ে ]
–তুমি নিশ্চয়ই গতরাতের গল্প শুনতে চাইছো?
–অবশ্যই,,,
–তাহলে চলো আমার রুমে।তোমার ভাইয়ের সামনে বসিয়ে বলবো।
–ওই,,কি বলিস।যা সর,,
–হিহি,,
সামু রুমে গিয়ে দেখে আদি ঘুমাচ্ছে।সামু আদির পাশে বসে চেক করছে আদি কি সত্যিই ঘুমাচ্ছে কিনা,,
সামু আদিকে একটা চিমটি কাটলো।কোনো হেলদোল নেই।তাই বুঝতে পারলো বেচারা ঘুমের রাজ্যের রাজা ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিয়েছে।উঠে যাবে তখনই আদি সামুকে টান মেরে নিজের বুকে ফেলে দিলো।সামু আদির কাছে এমন কিছু আশা করেনি।ও তো ভেবেছিলো আদি ঘুমাচ্ছে।
আদি ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–কি হু,,,চিমটি কাটা হচ্ছে?
–তুমি ঘুমাও নি?
–ঘুমাতে কই দিলে?চিমটি কাটছো কেন?
–আমি ভেবেছি ঘুমাচ্ছ?
–ওহহ আচ্ছা,আমি ঘুমিয়ে গেলেই চিমটি দেও,,
–এই না,,আমি তো চেক করছিলাম ঘুমিয়েছ কিনা?
–ঘুমালে কি করতে?ঘুমের মাঝে আমার ইজ্জত লুটে নিতে?(বাকা হেসে)
–ছিঃ ছাড়ো।
–চলো একটু রোমান্স করি,,
–সারাক্ষন একি কথা রোমান্স আর রোমান্স,,
সত্যি করে বলো তো এর আগে কার সাথে রোমান্স করেছ?
–এর আগে তো আর বিয়ে করিনি,,রোমান্স ও জাগেনি,,,রোমান্স কিভাবে করবো?
রোমান্স করতে বউ দরকার।আর এখন সুন্দর একটা বউ আছে কিন্তু বউ আমার রোমান্স ই করতে চায়না।কি কপাল আমার,,, (বাচ্চাদের মতো মুখ করে)
সামু আদির ফেস দেখে হাহা করে হেসে দিলো।
–বউ এভাবে হেসো না বুকে বড় লাগে,,
–কি লাগে বুকে,,
–তীর,,
–কোথায়?
–এই যে এইখানে (আংগুল দিয়ে দেখালো)
সামু আদির বুকে কিস করতেই আদি হা,,
আদি কিছু বলতে যাবে তখনই সামু আদির মুখ চেপে ধরলো।
–নো মোর টক।
বলেই সামু আদির বুকে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে রইলো।আদি মুচকি হেসে সামুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
কয়েকঘন্টা পর সামুর ঘুম ভাংলো।আদির নিশ্বাস উঠানামা করছে।তারমানে ঘুমাচ্ছে।সামু আদিকে ছাড়িয়ে উঠে গেলো।
.
.
.
বিকেলে সামুর আম্মু,আব্বু,সামির চলে যাচ্ছে।মেইন ডোরের সামনে দাড়িয়ে সামু কাদছে।সামুর আম্মু,আব্বু অনেক বুঝিয়ে সামুকে শান্ত করেছে।সামুর আব্বু আদিকে বললো,
–বাবা,তুমি ওকে দেখে রেখো।
–আংকেল চিন্তা করবেন না।আমি আছি।
.
.
.
রাতের বেলায় সামু অন্ধকার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।দৃষ্টি শূন্যে স্থির।না চাইতেও চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।কোনো কিছুর শব্দে চোখের পানি মুছে নিলো।আদি এসে পিছনে থেকে জড়িয়ে ধরে কাধে থুতনি রাখলো।
–মন খারাপ?
–হু,
–মন খারাপ করোনা আমি আছি তো,,
সামু ঘুরে আদির বুকে মাথা রাখলো।কেমন অন্য রকম প্রশান্তি পাচ্ছে।আদির শার্ট খামচে ধরে জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করছে।
–তুমি আছো বলেই আমি এতটা শান্ত,,জানো যখন এখানে এসেছি প্রথম প্রথম নিজেকে প্রচন্ড একা লাগতো।মা,বাবা,নিশি আপু আমাকে অনেক ভালোবাসা দিয়েছে,অনেক সাপোর্ট দিয়েছে,
আমার জন্য সবকিছু সহজ করে দিয়েছে যাতে আমি অস্বস্তিবোধ না করি।এতকিছুর মাঝেও কোথাও একটা কিন্তু থেকে যেতো।দিনশেষে একা লাগতো।খুব করে চাইতাম নিজের একজন হোক,সম্পূর্ণ নিজের।এখন যেমন তুমি আছো।নিজের একজন।আমার নির্ভরতার জায়গা।
আদি সামান্তার মুখ তুলে ধরে বললো,হুম সারাজীবন থাকবো,একে অপরের নির্ভরতা হয়ে।
দুজনের দৃষ্টি স্থির।একে অপরের চোখের ভাষা বুঝার চেষ্টা করছে।
.
.
.
গভীর রাত সামু পরম নির্ভরতায় আদির বুকে ঘুমিয়ে আছে।আদির চোখে ঘুম নেই।আদি অপলক নয়নে চেয়ে আছে।কিছু ভাবছে।আদি সামুকে বালিশে শুইয়ে দিয়ে চাদর ভালো ভাবে জড়িয়ে দিয়ে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে আয়নায় নিজেকে পর্যবেক্ষণ করছে।তারপর কল ছেড়ে চোখে মুখে পানি দিচ্ছে।অস্থিরতার সাথে মুখে পানি দিচ্ছে।আয়নায় পানি পড়ে ঘোলা হয়ে গেছে।আদি হাত দিয়ে একটানে পানি মুছে ফেলে।তারপর স্থীর দৃষ্টিতে নিজেকে দেখে।তারপর বিরবির করে বলে,
–আদি,,প্রথমে সামু তোর মোহ ছিলো।তুই ওর রুপে,ওর এডিটিউটে মুগ্ধ হয়েছিলি,,ওর মোহে ডুবে ছিলি,,তারপর যখন ও তোকে পাত্তা দিতোনা তখন ও তোর জেদ ছিলো,ওকে হাসিল করার জেদ।কিন্তু এখন কি?এখন ও তোর কাছে কি?
(আয়নার প্রতিচ্ছবিকে প্রশ্ন করছে)
কিছুক্ষণ স্থীর দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বললো,
নাও আই নো,আই লাভ হার,,ইয়েস আই ডো।আদি ইউ লাভস সামু।সি’জ মাইন।আই কান্ট লিভ উইথ হার।
বলেই হাসি ফুটিয়ে শান্ত মনে সামুর কাছে গেলো।চাদরের ভিতরে ঢুকে সামুকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ঘাড়ে মুখ গুজে বললো,সামু আইম ইন লাভ উইথ ইউ।উম্মাহ।
সকালে ঘুম ভাংতেই সামু নিজের ঠোঁটে সুরসুরি অনুভব করে।আদি সামুর ঠোঁটে হাত বুলাচ্ছে।সামু পিটপিট করে চোখ মেলে আদির আংগুল দেখতে পায়।হুট করেই হা করে আদির আংগুলে কামড় দেয়।আদি আউচ করে উঠে।
সামু ভ্রু নাচিয়ে বলে,
কি?হা?ঘুমের সুযোগ নিচ্ছো?
–আমার বিয়ে করা বউ আমি যা খুশি করবো কার বাবার কি!!
–আপাতত আমার অনেক কিছু।আজকে ভার্সিটি যেতে হবে।উফফ,,সরো দেরি হয়ে যাচ্ছে।
সামু উঠেই তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিলো।আদির কেন জানি খুব খুশি লাগছে।অন্যরকম ফিলিংস।
সামু আয়নার সামনে দাড়িয়ে রেডি হচ্ছে।আদি ফ্রেশ হয়ে এসে সামান্তার হাত ধরে টান দিয়ে ওর কোমড়ে হাত রেখে সামান্তার হাত নিজের কাধে রেখে গান গাইছে আর সামুকে নিয়ে ড্রান্স করছে।সামান্তা আচমকা ভ্যাগাচ্যাগা খেয়ে যায়।তবুও হাসি মুখে আদির সাথে তাল মিলিয়ে ড্রান্স করছে।
Mujshe dur kahi na ja…
Bas ehi kahi reh jah,,
meih teri dibani re…
apsos tujhe hein keya…
Teri meri kahani naye ban gayi
Tu mera hogaia mein teri hogayee…
–সকাল সকাল কি হলো?
এত খুশি কেন?
–,বিকজ আই এম ইন লাভ উইথ ইউ,,
–নতুন কিছুনা।সেটা অনেক আগেই বলেছো।
–না মানে এখন ভালোবাসাটা আরো বেরেছে তাই,
–আচ্ছা,
–হুম তাই আমি এতো খুশি,,
–পাগল,,
–তোমার জন্য,,
নেও এবার রেডি হও।আমি তোমাকে দিয়ে আসবো।
সামু-আদি রেডি হয়ে নাস্তা করে বেরিয়ে যায়।সামু লাল কুর্তি পড়েছে,,কানে ঝুমকো,চুলগুলো ছাড়া,হাতে চুড়ি পড়েই আছে।আদির কড়া নির্দেশ বিয়ের চিহ্নগুলো যাতে না খোলে।তাই ওর দেওয়া চেইন,নাক ফুল,আংটিগুলো ও পড়া।লেডিস সু,লেডিস ব্যগ কাধে ঝুলানো।গলায় আইডি কার্ড।নো সাজগোছ।ঠোঁটে জাস্ট একটু লিপস্টিক।
আদি কালো টি-শার্ট-প্যান্ট পড়া।টি-শার্টের উপর কোর্ট।হাতে ওয়াচ,চোখে গ্লাস।চুলগুলো স্পাইক করা।পারফেক্ট কাপল।
ভার্সিটির গেইটের সামনে গাড়ি থামাতেই সামু আদির গালে শব্দ করে একটা কিস করে কোনো দিক না চেয়ে নেমে পালালো।
আদি অবাক হয়ে নিজের গালে হাত দিয়ে বসে আছে।তারপর অস্ফুটস্বরে বলল,
–“যাক বাবা বউটা একটু রোমান্টিক হচ্ছে।”