তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব ১৫+১৬

0
582

#তোর_শহরে_ভালোবাসা ?

পর্ব-১৫

ফাবিহা নওশীন

??
ছাড়ুন,,, আম্মু-আব্বু।হু হু!!

ডাকো যাকে ইচ্ছে ডাকো।আমি তোমাকে ছাড়ছিনা।কি বলেছিলে আমি জিরাফ?রোমান্স ছাড়া আর কিছু পারিনা??

সামান্তা আদির সাথে দৌড়ে পারেনি।ছাদে উঠার সিড়ির কাছে যেতেই পিছনে থেকে ধরে ফেলে।এখন নিজের সাথে মিশিয়ে পিছনে থেকে দু’হাতে সামান্তার পেট চেপে ধরে রেখেছে।সামান্তা ছুটার চেষ্টা করছে আর আম্মু আব্বু করছে,,,।

আদি এবার সামুর গলায় হালকা করে ঠোঁট ছুয়াচ্ছে।আর সামান্তা দু’হাতে ওকে সরানোর চেষ্টা করছে।
সামান্তা না পেরে বললো,
–এভাবে জোর জবরদস্তি রোমান্স করাকে কি বলে জানেন?
আদি মুখ তুলে মনোযোগের ভান করে বললো,
–কি বলে জান?
–লুচ্চামি!!
–ছি,,ছি,,এভাবে বলে না।একে লুচ্চামি না বরের আদর বলে।
তারপর আবার নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
–ছাড়ুন,,কেউ দেখবে,,
সামান্তা আদির হাত টেনে জোরে একটা কামড় দিলো।আদি আহ করে ছাড়তেই সামু এক দৌড়ে নিচে চলে আসে।আদিও পিছনে আসে।
–দাড়াও,,তোমার চুল ছিড়ে ফেলবো।
–আমার চুল ছিড়ার শখ নেই।
সামু গিয়ে আদির মায়ের পিছনে গিয়ে লুকালো।
–মা দেখুন আপনার ছেলে আমার চুল ছিড়তে এসেছে।
আদির মা রেগে গিয়ে আদিকে বললো,
–কিরে আদি,,তুই ওর চুল ছিড়তে এসেছিস তোর সাহস তো কম না।যা এখান থেকে নয়তো তোর সব চুল ছিড়ে নিবো।
–মা জানো ও কি করেছে?
আদির মা ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,
–কি করেছে?
–ও,,,(হায় আল্লাহ আমি কি ওর মতো পাগল হয়ে গেছি)কিছুনা।
সামু মুচকি মুচকি হাসছে।আদি সামুর দিকে কটমট করে তাকাচ্ছে।
আদি মনে মনে বলছে এর শোধ পরে নিবো।
আদি নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।নিশির কি হলো জানতে হবে।ও কি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা জানতে হবে।
আদি চলে যাওয়ার পর আদির মা জিজ্ঞেস করে,
–কি করেছিস সামু?
–কিছুইনা,,কিছু করলে তো বলতোই।হুদাই আমার চুলের পিছনে পড়েছে।

দূর থেকে সামুর মা সবটা দেখছিলো আর ভাবছে মেয়েটা আমার অনেক ভাগ্যবতী।এত ভালো শাশুড়ি পেয়েছে,,আদিও ভালো।সামুর মতোই বাচ্চামো করে।সামুকে ভালোবাসে খুব।

.
.
.
.

জয় রাতে বাড়িতে ফিরতেই জয়ের বাবা এগিয়ে এসে ছেলেকে জিজ্ঞেস করলো,
–সারাদিন কোথায় ছিলে?তোমার ফোন বন্ধ কেন?তোমার হসপিটালে যাওয়ার কথা ছিলো।কিন্তু যাওনি কোথায় ছিলে?

–নিশিতাদের বাসায়,,

–হুয়াট!!তুমি হসপিটালে না গিয়ে নিশিতাদের বাড়িতে,,,জয় তোমার ভাই রাজ হসপিটালে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে।তোমার চাচার অবস্থাটা বুঝা উচিত।আমাদের এখন ওদের পাশে থাকা উচিত আর তা না করে তুমি নিশিতাদের বাসায় ছিলে।

–হুম ছিলাম।রাজের যা খুশি হোক আই ডোন্ট কেয়ার।ওর মতো মানুষের বেচে থাকা উচিত নয়।

–জয়,,রাজ তোমার ভাই,,,

–ভাই কিসের ভাই?ও আমার ভাই না,,ওর আমার ভাই হওয়ার যোগ্যতা নেই।ও যা করেছে তাতে,,,

–কি করেছে,,হাহ,,কি করেছে রাজ?অসুস্থ একটা মানুষকে নিয়ে এসব বলতে বাধলোনা।

–না বাধলো না।আমি নিতান্তই বিবেক বর্জিত মানুষ নই,আমার শিক্ষা এতটা খারাপ নয় তাই আমি ওর মৃত্যু কামনা করতে পারছিনা।তবে ও যা করেছে তার শাস্তি ওকে পেতেই হবে।আগে হাসপাতাল থেকে ফিরুক।

–জয়,,কি বলছিস,,আমি তো কিছু বুঝতে পারছিনা।ওরা তোকে কি বুঝিয়েছে জানিনা।

–ওরা আমাকে কি বুঝাবে,,আমি কি বাচ্চা ছেলে যে যা বুঝাবে তাই বুঝে নিবো।আমি সবকিছু নিজের চোখে দেখেছি,নিজের কানে শুনেছি।

–কি করেছে?

–ও একজনের স্ত্রীকে পাওয়ার জন্য অন্য একজনের স্ত্রীর ভিডিও বানিয়ে ব্ল্যাকমেইল করেছে।
জয়ের গলা ধরে আসছে কথাগুলো বলার সময়।
রাজ আমাদের এনগেজমেন্টের দিন নিশির ভাবিকে দেখে পছন্দ করে কিন্তু রাজ জানতো না ওনি নিশির ভাবি,আমিও জানতাম না কারণ এর আগে আমি দেখিনি ওর ভাবীকে।রাজ আমাকে জানায় ওর একটা মেয়েকে পছন্দ হয়েছে আমি যেন নিশির সাথে এ নিয়ে কথা বলি।নিশির সাথে কথা বলে জানতে পারি ওনি ওর ভাবি।তারপর রাজকে জানাই ভেবেছি রাজ এসব ভুলে যাবে।কিন্তু না রাজ ভাবীর পিছনে পড়ে থাকে।ওনার নাম্বার কালেক্ট করে ফোন করতো।ভাবি বিরক্ত হতো কিন্তু ননদের হবু শ্বশুর বাড়ির লোক তাই কিছু না বলতে পেরে নাম্বার বদলে দেয় তখন ভার্সিটিতে পিছু করতো।ভাবী বাসায় কিছু জানাতে পারেনি আদির ভয়ে।আদি হাই টেম্পার হয়ে থাকে কখন কি করে ফেলে।
তারপর,,
কিছুক্ষণ থেমে বললো,, তোমাদের বিবাহ বার্ষিকীতে নিশি আসে।আর রাজ ইচ্ছে করেই নিশিকে ট্রাপে ফেলে।ওর উপর এত পরিমাণে ড্রিংকস ফেলে যে বাধ্য হয়েই ওকে চেঞ্জ করতে হয় আর সেই ওয়াশরুমে রাজ হিডেন ক্যামেরা সেট করে।আর সে ভিডিও দিয়ে ভাবিকে ব্ল্যাকমেইল করে।

–কিহ!!!

–হ্যা,বাবা।হ্যা।বলছিলে না ভাই,,,আমার ভাই আমার বউয়ের সম্মান নিয়ে খেলেছে।নিজের ভাবীর সম্মান। নিজের বাড়ির সম্মান।ওর ভাইয়ের হলুদের দিন ভিডিও পাঠিয়ে ভাবিকে ব্ল্যাকমেইল করে।এমনকি তার পিছনে লোক লাগিয়ে দেয়।হুমকি দেয় এটা বলে যে রাজের সাথে দেখা না করলে ভিডিও লিক করে দেবে।কাউকে বলার চেষ্টা করলেও ভিডিও লিক করে দেবে। তুমি বলেছিলে না ভাবীর চরিত্র খারাপ রাজের সাথে নোংরামি করতে গিয়েছিলো?
না সে তো নিশিকে বাচাতে প্রুভ কালেক্ট করতে গিয়েছিলো আর নিজের সেইফটির জন্য আদিকে ক্লু দিয়ে গিয়েছে।
প্রুভ কালেক্ট করার পর আদি ভাবিকে সেফ করে।আদি সবটা জেনে প্রচুর রেগে যায়।যাবেই তো আমারো একটা বোন আছে কেউ যদি ওর সাথে এমন করতো আমি কি করতাম বাবা?

–জয়ের বাবা চুপ।তিনি ভাবতে পারছেন না রাজ এতটা নিচ।

–ও আরো অনেক মেয়ের জীবন নিয়ে খেলেছে।সব প্রুভ আদির কাছে আছে।ওরা পুলিশ কমপ্লেইন করবে।আর আমিও ওদের সাথে আছি।রাজ সুস্থ হলে জেলে থাকবে।
নিশি আজই এসব জেনেছে আর ভেঙে পড়েছে।আমার ওর পাশে থাকা বেশি জরুরি ছিলো ওই কালপিটের সাথে নয়।
রাজের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।ও আজ থেকে আমার কেউনা।যে আমার সম্মানে হাত দেয় সে আমার ভাই হতে পারেনা।নেভার।এখন তুমি রাজেএ সাপোর্ট করবে না নিজের ছেলে আর ছেলের বউয়ের সাপোর্ট করবে ডিসিশন ইস ইউস।গুড নাইট।

জয়ের বাবা নির্বিকার।তার ভাইয়ের ছেলে এমন বিগড়ে গিয়েছে সেটা তিনি জানতেন ই না।অবশ্যই অন্যায়ের সাথ তিনি দিবেন না।জয়ের সাপোর্টার তিনি।

চৌধুরী বাড়ির ডিনার টেবিল-
সবাই একসাথে খেতে বসেছে।খাবার মুখে তুলতে তুলতে আদি বাবাকে জিজ্ঞেস করলো,
–বাবা কি ব্যবস্থা নিলে?
–তোমাকে এসব নিয়ে ভাবতে হবেনা।আমার কমিশনারের সাথে কথা হয়েছে,,,সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে।হ্যারেজমেন্টের জন্য কেইস করা হবে।সব প্রুফের কপি পাঠানো হয়েছে।রাজ সুস্থ হলেই জেলে থাকবে ইনশাআল্লাহ।তুমি তোমার বিয়েতে ধ্যান দেও।

আদির মা বললো, হুম,,এবার যেনো আর কোনো সমস্যা না হয়।ভালোয় ভালোয় আগামীকাল হলুদ,তারপর বিয়েটা হয়ে গেলেই হয়।

আদি সামুর দিকে চেয়ে বললো,, মা তুমি এত চিন্তা করোনা তো,,সব ঠিক হবে এবার।আমাদের লাইফের ভিলেনকে সামু ধরাসাই করে দিয়েছে।
সামান্তা ভিষণ লজ্জা পাচ্ছে।সবাই হোহো করে হেসে দিলো।

??
পরেরদিন সন্ধ্যা–
সামুকে কাচি হলুদরঙ, সবুজ রঙের পাড়ের শাড়ি পড়ানো হয়েছে।ফুলের গয়না,ভারী মেকাপে সামুকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।সামুর হলুদ রং একদম পছন্দ নয় তবে সবার জোরাজোরিতে পড়েছে।হলুদের দিন নাকি হলুদ না পড়লে গায়ে হলুদ হলুদ ফিল আসেনা।সামুর তো নিজেকে সরিষা ক্ষেত ফিল হচ্ছে।

আদি হালকা বাদামী রংয়ের পাঞ্জাবি পড়েছে।সামনের দুটো বোতাম খোলা,হাতে ব্যান্ডের ঘড়ি,,চুলগুলো স্পাইক করা।
সামান্তা রুম থেকে বের হতেই আদিকে দেখে পুরাই ক্রাশ।আদির দিকে হা করে চেয়ে আছে।তা দেখে আদি বলে,,
–খেয়ে ফেলবে নাকি এমন হা করে আছো কেন মিস.সরিষা ক্ষেত?
আদির কথায় সামু কিছুটা লজ্জা পেলেও রাগটাই বেশি হলো।এত সুন্দর করে সেজেছে কই ভালো কমপ্লিমেন্ট দিবে তা নয় হলুদ পড়ায় সরিষা ক্ষেত উপাধি দিয়ে দিলো।আদির মাথা ফাটাতে ইচ্ছে করছে।ওর কথা ওকেই ফিরিয়ে দিলো।

সামান্তা নাক ফুলিয়ে কিছু না বলেই হাটা দিলো।কয়েকপা এগুতেই ঘাড়ে ঠান্ডা কিছু অনুভব করলো।হাত দিয়ে দেখলো হলুদ।পিছু ফিরতেই দেখে আদি দাত কেলিয়ে হাসছে।

সামু ভ্রু নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–কি হলো?
–হলুদ দিলাম,,আমার বউকে আমিই আগে হলুদ ছোয়ালাম।
সামু মনে মনে বলছে,,
আমাকে ইনসাল্ট করে হলুদ লাগানো হচ্ছে।
মুখ ভেংচি কেটে হাটা ধরলো।আদি বুঝতে পারলো না সামু এমন কেন করলো,, বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইলো।

নিশিও শাড়ী পড়ে সেজেগুজে হাজির।তখনই জয় ও তার ফ্যামিলি হাজির।জয়ের ফ্যামিলিকে দেখে নিশি উচ্ছ্বসিত।হিয়ের ফ্যামিলিকে এখানে আসা করে নি।নিশি এগিয়ে গিয়ে সবাইকে অভ্যর্থনা জানালো।তারপর জয়ের দিকে তাকাতেই জয় ইশারায় সব ওকে জানালো।

নিশি চলো ওদের সাথে আমরাও বিয়েটা করে ফেলি,,
জয় বাকা হেসে নিশিকে বললো।
নিশি ভ্রু কুচকে বললো,
–মাথা ঠিক আছে?
–এত সুন্দর করে সেজেগুজে সামনে দাড়িয়ে থাকতে কোন ছেলের মাথা ঠিক থাকে।
নিশি জয়ের মাথায় গাট্টি মেরে বললো,
–১বছর ওয়েট করো।তার আগে এসব ভুলেও বলোনা।

সামান্তা মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।তখনই ওর ফোনে টুং করে একটা মেসেজ এলো।আদির মেসেজ,,

“তোমাকে এত্ত সুন্দর লাগছে আমি চোখ ফিরাতে পারছিনা।হলুদরঙ তুমি এত অপছন্দ করো কেন?তোমাকে হলুদে ভিষণ ভালো লাগে।একদম হলুদ পরী।লাভিউ উম্মাহ”

মেসেজটি দেখে সামান্তার মুখে হাসি ফুটে।
মুচকি মুচকি হাসছে।আদি সেটা দেখে নিজেও হাসে।

কিছুক্ষণ পর রাজের বাবা আসে।এসেই আদির বাবাকে বলে,
আমার ছেলের এমন একটা অবস্থা করে আপনারা আনন্দ উৎসব করছেন?রাজ কোমায় চলে গেছে।আপনারা আবার ওর নামে কেস করেছেন?
আদি উঠে এসে বললো,
–আপনার কি মনে হয় আমরা আপনার ছেলের জন্য শোক পালন করবো?ওর কপাল ভালো ও কোমায় চলে গেছে।এসি রুমে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকবে।নয়তো জেলে পচে মরতে হতো।আপনি কোন মুখে এসব বলতে এসেছেন?আপনার ছেলে এমন একটা কাজ করেছে আপনার লজ্জা হওয়া উচিৎ।

তিনি আমতা আমতা করে বলল,
–তোমরা কেসটা তুলে নেও।প্লিজ।

নিশি এগিয়ে এসে বলল,সরি আংকেল।কে কি করবে জানি না কিন্তু আমি এটা কক্ষনো হতে দেবো না।আমি আপনার মেয়ে হলে কি করতেন?কিংবা আপনার মেয়ের সাথে এমন হলে কি করতেন?আমি ওর শাস্তি চাই।

রাজের বাবার আর কিছু বলার নেই।তিনি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চলে গেলো।

চলবে,,,
#তোর_শহরে_ভালোবাসা ?

পর্ব-১৬

ফাবিহা নওশীন

??
সামুর খটকা লাগছে এই রাজের বাবা বলে গেলো রাজ কোমায় আছে এটা কি সত্যি না পুলিশের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য এমন বলছে।
কাকে জিজ্ঞেস করবে বুঝতে পারছেনা।নিশিকে জিজ্ঞেস করবে,,কিন্তু নিশি কি জানে,,আদির সাথে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিলো।
আদিকে মেসেজ করলো,

“হলুদ শেষে দেখা করবে কথা আছে”

অপর দিকে নিশি জয়কে বলছে,
–দেখো জয়,তুমি যদি ভেবে থাকো আমি রাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নিবো তবে ভুল ভাবছো,,আমি রাজকে শাস্তি দিয়েই ছাড়বো।তুমি কিংবা তোমার ফ্যামিলি এ বিষয় নিয়ে আমাকে রিকুয়েষ্ট করোনা।লাভ হবেনা।কারণ আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি এখন আমি আমার সিদ্ধান্ত থেকে একচুল ও নড়বোনা।একটা মেয়ের কাছে তার সম্মানের চেয়ে বড় কিছু নেই।সো,,

–রিলেক্স,রিলেক্স,,,কাম ডাউন।আমি এসব কিছু বলবোনা।না আমি বলবো না আমার ফ্যামিলি।আমি যা বলার গতকাল রাতেই বাবাকে জানিয়ে দিয়েছি এটাও বলেছি রাজ আর আমার ভাই নয়,ওর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।বাবাও সব কিছু শুনে আমাকে সাপোর্ট করেছে।তোমাকে সাপোর্ট করেছে।ওনারা এখানে তোমাকে রিকুয়েষ্ট করতে নয় ফ্যামিলি মেম্বার হিসেবে তোমার ভাইয়ের বিয়ে এটেন্ড করতে এসেছে।আর কিচ্ছু নয়।
আর তাছাড়া তুমি আমার বউ,,বিয়ে হয়নি তাতে কি,,আমি তোমাকে আমার বউ মানি।কেউ আমার বউয়ের দিকে,আমার প্রপার্টির দিকে হাত বাড়াবে আর আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো?ইম্পসিবল। আমি কেন কোনো ছেলেই পারবেনা।সো রিলেক্স।তুমি যেখানে আই উইল বি দেয়ার।

নিশি মুচকি হেসে জয়কে জড়িয়ে ধরলো।
–লাভ ইউ।
–লাভ ইউ টু।এন্ড মোর দেন ইউ।

সামান্তা হলুদের শাড়ি পড়া অবস্থায় আদির জন্য অপেক্ষা করছে।মুখে,শরীরে,হাতে হালকা হলুদের আভা রয়ে গেছে।অনেকক্ষন পর আদি এলো।তা দেখে সামু চোখ কুচকে বললো,
–এতক্ষনে আপনার আসার সময় হলো?

আদি বাকা হেসে বললো,
— চোখে হারাচ্ছো দেখছি?একটু সবুর করো,,কালকে রাত থেকে পার্মানেন্ট আমি তোমার।

সামু চোখ বড়বড় করে নাক ফুলিয়ে বললো,
–জ্বি নো,,আমি না চোখে হারাচ্ছি আর না তোমার মতো বিয়ে নিয়ে এতোটা ডেস্পারেট হচ্ছি।আমার গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে তাই ডেকেছি।

–আচ্ছা,আচ্ছা,,কি গুরুত্বপূর্ণ কথা? এই ওয়েট ওয়েট,,এখন আবার এটা বলো না যে বিয়ে করবে না,,

–উফফ,,এত বেশি কথা কেন বলো,,?আর আমি যদি বলি বিয়ে করবোনা তুমি শুনবে?শুনবে না সো এসব কেন বলবো?বলার প্রশ্নই আসেনা,,আগেরবার মজা করে বলে ফেসে গেছি।আর না,,

আদি সামুর কোমড় জরিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে সামুর গালে নিজের গাল মিশিয়ে বললো,
–তুমিও তো দেখছি আমার মতো বিয়ে নিয়ে ডেস্পারেট।বাট প্রকাশ করোনা।

সামু চোখ বন্ধ করে নিয়ে কাপা কাপা কন্ঠে বললো,
–আমাকে ছাড়ুন,, একটু দূরে সরুন।

আদি সামুর গালে স্লাইড করতে করতে বললো,
–কেন?

সামু আদির ছোয়ায় বারবার কেপে কেপে উঠছে।চোখ বন্ধ করে নিলো।তারপর বললো,
আমার কেমন জানি লাগছে,,

আদি মৃদু হেসে বললো,
–কেমন লাগছে?

–জানিনা,,

আদি সামুর গাল ছেড়ে দিয়ে ওর দিকে তাকাতেই দেখে সামু চোখ বন্ধ করে আছে।আর কেমন কাপছে।
–কি বলতে এসেছিলে?

সামু চোখ খোলে বললো,
–রাজের বাবা এসে বললো যে রাজ নাকি কোমায় চলে গেছে এটা কি সত্যি?

আদি সামুর কথা শুনে সামুকে ছেড়ে দিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে বললো,
–দিলে তো মুডটা খারাপ করে,,

সামু বুঝতে পারলো না কি এমন বলেছে যে মুড খারাপ হয়ে গেলো।ও তো গুরুত্বপূর্ণ কিছু জিজ্ঞেস করেছে।
–কি এমন বললাম,, আমি তো জাস্ট জানতে চাইলাম সত্যি কিনা,,নাকি এসব ড্রামা,,

আদি কিছু না বলে চলে গেলো।
–যাক বাবা, কি এমন বললাম এমন রাগ দেখিয়ে চলে গেলো।সামু তোর কপালে অনেক দুঃখ আছে।বিয়ে করার জন্য দুনিয়ায় আর ছেলে পাসনি।কথায় কথায় রাগ করে,,।
এ রাগ না জানি কি ধ্বংস ডেকে আনে।

সামু ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।আগামীকাল ওর বিয়ে কেমন অদ্ভুৎ এক অনুভূতি কাজ করছে।কিন্তু আদি হুটহাট রাগ করে বসে।সুন্দর মুহুর্তগুলো হটাৎ করেই মিলিয়ে যায়।

সামু শুয়ে শুয়ে ভাবছে,
ভালোবাসো কতটুকু জানিনা।তার গভীরতাও আমি মাপতে পারিনা।হয়তো তুমিই মাপতে দেওনা।আমাকে কনফিউশনে রাখো।

সামুর ফোন বেজে উঠলো।আদির ফোন।রিসিভ করতেই আদি বললো,
সামু তুমি এমন কেন?আমি যে রাগ করেছি তুমি বুঝোনি?অবশ্যই বুঝেছ।কিন্তু তুমি আমার রাগ ভাংগানোর চেষ্টা করলে না।কেন?হুয়াই?

–আদি সরি,,আমি বুঝতে পারিনি।তুমি যে রাগ করেছো বুঝেছি কিন্তু কেন রাগ করেছো সেটা আমি এখনো মিলাতে পারছিনা তাহলে তোমার রাগ আমি কিভাবে ভাংগাবো?

–তুমি বুঝোনি,,আমি তোমাকে বলেছি রাজের নাম মুখে নিবেনা,,আর তুমি এমন সুন্দর একটা মুহুর্তে রাজের নাম নিয়ে আমার মুডটাই নষ্ট করে দিলে।

এবার সামুর আক্কেল এসেছে।
–উপপপ!!সরি।আমি ভুলে গিয়েছিলাম।প্লিজ সরি।আসলে আমি কোমায় যাওয়ার কথা শুনে কিছুটা সারপ্রাইজ হয়েছিলাম তাই,,

–ও সত্যিই কোমায়।পুলিশ চেক করেছে।সুস্থ হলেই ওকে এরেস্ট করা হবে।গুড নাইট বায়।
বলেই খট করে ফোন কেটে দিলো।

সামান্তা কানে ফোন গুজে কিছুক্ষণ বসে রইলো তারপর ফোন সরিয়ে বললো,
–এটা কি হলো ফোন রেখে দিলো। আমি কি ফোন করবো?নাকি আবার রাগ করবে?কি করবো?আমি যে ওই ছয় ফুটের জিরাফকে বুঝতে পারিনা।উফফ,,
শালার জামাই তুই এমন কেন?
তোর মন কেন বুঝিনা?
#তোর_শহরে_ভালোবাসা এমন কেন?

বিয়ের আমেজ শুরু হয়ে গেছে।চারদিকে সাজসজ্জা লোকজন।রিসিপশনে সামুর বাড়ির মানুষ, আদি,আদির ফ্যামিলি,বন্ধু-বান্ধব,আত্মীয় স্বজনরা অপেক্ষা করছে।কনেদের আসার পালা।একটা গাড়ি এসে থামলো।ভারী লেহেঙ্গা আর ভারী মেকাপে নিশি গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালো।তারপর আদিকে ইশারা করলো।আদি এগিয়ে গিয়ে গাড়ির দরজার সামনে দাড়ালো।গাড়ির দরজা খোলতেই আদি সামুর দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো।সামু আদির হাতে হাত রাখলো।
তারপর আস্তে আস্তে বাইরে পা রাখলো।আদি সামুকে নামানোর চেয়ে ওকে দেখায় ব্যস্ত বেশি।সামুকে একদম পুতুলের মতো লাগছে।ভারী লেহেঙ্গা,জুয়েলারি,মেকাপ একদম একটা পুতুল লাগছে।চোখ সরাতে পারছেনা।তা দেখে সামু কিছুটা বিব্রতবোধ করছে।

–ভাই আগে ওকে নিয়ে চল।পরে দেখিস,দেখার প্রচুর সময় আছে।
নিশির কথায় আদির ঘোর কাটলো।সামান্তার হাত ধরে বসার জায়গায় নিয়ে গেলো।
সামুর মা সামুর কপালে চুমু খেয়ে নজর উতরে দিলো।

সবার নজর এই কাপলের দিকে।কিন্তু হ্যান্ডসাম বয়ের নজর তার বউয়ের দিকে।সামান্তার মনে হচ্ছে আদি ওর দিকে চেয়ে আছে।তাই মাথা ঘুরাতেই দেখে আদি সত্যিই ওর দিকে চেয়ে আছে।সামান্তা সামনের দিকে চেয়ে হাসি হাসি মুখ করে আস্তে করে বললো,

–মাই হ্যান্ডসাম হাসব্যান্ড,,প্লিজ সামনের দিকে তাকান।সবাই আমাদের দেখছে।আপনি যে হ্যাবলার মতো আমাকে দেখছেন এটাও সবাই দেখছে।সো প্লিজ।

আদি সামনে তাকিয়ে সামুর মতোই হাসি হাসি মুখে বললো,
–কি করবো ইউ আর লুকিং হট।দেখতেই ইচ্ছে করছে।

সামুর আদির কথা শুনে রাগ হলো।বিরবির করে বলছে,
— লেহেঙ্গা পড়েছি তাও হট।লেহেঙ্গা পড়লে কাউকে হট লাগে,,বলতে পারতো ইউ আর লুকিং সো গর্জিয়াস।তা না হট।

–এইটা কোনো কমপ্লিমেন্ট হলো?ভালো কিছু বলতে পারতে না?

–পরে বলবো।

–কখন?

–বলবো কথা বাসর ঘরে,,,

–চুপ করে বসে থাকো আরেকটা কথা বললে তোমার খবর আছে।

–হাহা,,বউ আমার রেগে গেছে।বউকে আজ রাগানো ঠিক হবেনা।

.
.
.

সামু আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে।ভারী লেহেঙ্গা আর গয়নার ভার টানতে টানতে মনে হচ্ছে নিজের ওজন ৫কেজি কমে গেছে।পুরো গা ভর্তি গহনা।সামু বিরক্তি নিয়ে গহনা খোলছে।তখনই আদি পিছনে এসে দাড়ালো।
–তোমাকে যা লাগছেনা,ইচ্ছে করছে খেয়ে ফেলি।
সামু ভ্রু কুচকে বললো,
–এইগুলো কোন ধরনের কথা?আমি কি চকলেট আইসক্রিম যে খেয়ে ফেলবে?আমি জলজ্যান্ত একটা মানুষ।
–বউ বুঝি রেগে আছে।
সামু কাদো কাদো হয়ে বললো,
–একটু হেল্প করোনা।আমার অনেক বিরক্ত লাগছে।
–আগে বলবা তো,,
আদি সামুর গয়না খোলতে সাহায্য করছে।গয়নার পর চুল।দীর্ঘ সময় পর চুল খোলতে পারলো।চুলে লেহেঙ্গার ওড়নার এক কোনা লাগানো।সেটা খোলতেই ওড়না নিচে পড়ে গেলো।লেহেঙ্গার পিছনে সামুর পিঠের অর্ধেক অংশ উন্মুক্ত।
আদি সামুর দুবাহু চেপে ধরে পিঠে নাক ঘষছে।হটাৎ এমন কিছুতে সামু চমকে উঠে।শিহরণে চোখ বন্ধ করে নেয়।
আদি মাথা তুলে আয়নায় নিজেদের প্রতিবিম্ব দেখে।সামুর বন্ধ চোখের লজ্জা মাখা মুখ দেখে বাকা হেসে বললো,
–আমার দাজ্জাল বউ দেখি আবার লজ্জা পায়।

সামু হুট করে ঘুরে ভ্রু কুচকে বললো,
–আমি দাজ্জাল,,,ওকে।নো টাচ,,
বলেই একটা কুর্তি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।

আদি হতবাক হয়ে সামুর পিছু পিছু গেলে সামু ঠাস করে মুখের উপর ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে দেয়।
–যাক বাবা,,কি হলো এটা??

৩০মিনিট পর সামান্তা শাওয়ার নিয়ে বের হলো চুল মুছতে মুছতে।
আদি এগিয়ে গিয়ে বললো,
–সামু আমি তো মজা করেছি,,রাগ করোনা প্লিজ।

সামু বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে হাই তুলতে তুলতে বললো,
–ইটস ওকে,,গুড নাইট।

আদির মাথায় হাত।
–সামু আজকে আমাদের ফার্স্ট নাইট।তুমি আমার সাথে এটা করতে পারোনা।

–লাইট অফ করো।চোখে বিধছে।অনেক ঘুম পাচ্ছে বিরক্ত করোনা।আর হ্যা,আমাকে হেল্প করার জন্য ধন্যবাদ।নয়তো এতো শান্তির ঘুম দিতে পারতাম না।গুড নাই ডিয়ার।

–ডিয়ার মাই ফুট,,প্লিজ সরি,,প্লিজ।

সামুর সাড়া শব্দ নেই।
–তুমি কি ঘুমিয়ে পড়েছো?
–….(সামু চোখ বন্ধ করে মুখ টিপে হাসছে)
আদি একবার বসছে আরেকবার দাড়াচ্ছে।আবার সামুকে ডাকছে।
কিছুক্ষণ পর সামু ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো।

সকালে ঘুম ভেঙে গায়ের উপর কারো ভারী স্পর্শ পেলো।আদি ওর কোমড় জরিয়ে পিঠে মুখ গুজে ঘুমাচ্ছে।
সামু আদির থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে আদির চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে গালে একটা কিস করে কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
–গুড মর্নিং মাই লাভ।

ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে গেলো।আয়নার সামনে মুখে পানি দিতেই কিছু একটা জ্বলজ্বল করছে।ভালোভাবে দেখলো নাকে সাদা পাথরের নাকফুল।ডায়মন্ডের হবে হয়তো।গলায় প্লাটিনামের চেইন।একটা ছোট লকেট।লকেটে ছোট ছোট পাথর।সেটাও ডায়মন্ডের হবে।হাতে একটা ডায়মন্ডের রিং।আদির বাসরঘরের গিফট।হয়তো ঘুমিয়ে যাওয়ার পর পড়িয়ে দিয়েছে।সামান্তার এখন খুব খারাপ লাগছে।গতরাতে আদির সাথে এমন মজা না করলেও পারতো।

তারপর ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলো।নিচে নামতেই নিশি বললো,
–একা কেন,ভাইয়া কই?
–তুমি জানোনা তোমার ভাইয়ের ঘুম,,
–হুম তা অবশ্য ঠিক।আজ তো আরো উঠবে না।ফার্স্ট নাইট বলে কথা।তা কেমন হলো,,
–সরম করো বড় ভাবি হই,,
–আইছে বড় ভাবি,, তাড়াতাড়ি বল,,
–শুনতে চেওনা হার্ট এটাক হবে।
–তবুও শুনতে চাই।
–তবে শুনো,,সামু সব খোলে বলল।
নিশি ভ্রু কুচকে বললো,
আমার সত্যিই হার্ট এটাক হচ্ছে।তুই এতটা হার্টলেস,,
সামু টেডি স্মাইল দিলো।

চলবে….?

(গল্প লিখে আমি আর রিভিশন দেইনা।তাই অনেক বানান ভুল হয়ে থাকে।ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here