তোর মনের অরন্যে পর্ব-৪

0
942

#তোর_মনের_অরণ্যে
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৪.
ইউনিভার্সিটির গেট দিয়ে আমন তার ব্ল্যাক স্পোর্টস কার নিয়ে ভিতরে ঢোকার আগেই ফুল স্প্রিডেই চোখের নিমেষে একটা ব্ল্যাক কালার আর ফিফটিন বাইক ভিতরে ঢুকে যায় পাশ কাটিয়ে। আমন তীক্ষ্ণ চোখে সামনে তাকিয়ে থাকে। বাইক আরোহী ও পুরো ফুল ব্ল্যাক ড্রেসআপে আছে মেয়ে না ছেলে সেটা বোঝা যাচ্ছে না । তাকে এই ভাবে পাশ কাটিয়ে ঢুকছে তাও এই ভাবে ড্রাইভ করে। আমন এর সাথে ক্যাম্পাসে থাকা সব স্টুডেন্ট গুলো ও চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। তাদের সবার মনে একটাই প্রশ্ন কে এই বাইক আরোহী। তারা একবার গেট এর মুখে দাঁড়িয়ে থাকা আমন স্যার এর গাড়ি দেখছে আর একবার এই মাত্র ভিতরে ঢোকা বাইক টা কে দেখছে ।কে এই আরোহী?

সু বাইক নিয়ে ইউনিভার্সিটির ভিতরে ঢুকে পার্কিং লটে গিয়ে বাইক থামিয়ে মাথায় থেকে হেলমেট খোলে সাথে সাথে ছাড়িয়ে পড়ে এক ঢাল ঘন কালো চুল। সু হেলমেটটাকে বাইক এর উপর রেখে হাত দিয়ে চুল গুলো ঠিক করে নিয়ে বাইক পার্ক করে নেমে দাঁড়ায়। চার পাশে একবার চোখ বুলিয়ে সামনের দিকে পা বাড়ায়। এদিকে আমন এর তো চোখ রাগ আর অবাক হয়ে গেছে সু কে অস্পষ্ট ভাবে তার মুখ দিয়েই বেরিয়ে আসে।

-“ধানী লঙ্কা! উফ এই মেয়ে এখানে কি করছে?

ক্যাম্পাসে সবাই এখন সু কে দেখে যাচ্ছে । সু গ্রাউন্ড আসতে কয়েক জন ছেলে মেয়ে এসে সু এর সামনে দাঁড়িয়ে যায়। সু একবার তার সামনে দাঁড়ানো সবাই কে দেখে নিয়ে বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে যায় ওদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে ।

-“এই ইউনিভার্সিটিতে নিউ নাকি বেবি? ওদের মধ্যে রাজ বলে একজন ছেলে বলে ওঠে।

-” আরে বাহ এন্ট্রি তো দারুণ নিয়েছ তো এখন এমন চুপ হয়ে গেলে কেনো? রিনি বলে এক মেয়ে বলে ওঠে।

-“তুমি জানো তুমি গেট দিয়ে ভেতরে ঢোকার সময়ে কাকে টেক্কা দিয়ে এসেছ? নিশা বলে ওঠে।

-“তা নাম কি তোমার বিউটিফুল? আমরা এই ইউনিভার্সিটি এর সিনিয়র তাই আমাদের কাছে নাম বলতে হবে। বুঝতে পেরেছ বেবি? সু এর গালের দিকে হাত বাড়িয়ে বলে ওঠে রনি ।

সু তার দিকে বাড়ানো হাতটা মুহূর্তের মধ্যে তার হাতের মধ্যে বন্দি করে নেয়। সাথে সাথে রনি এর মুখ থেকে একটা মৃদু চিৎকার বেরিয়ে আসে। ওর সাথে বাকিরা রনি এর চিৎকার শুনে ওর দিকে তাকায়। রনি এর মুখটা কেমন কুকড়ে আছে ব্যাথায়। তারা রনি হাতের দিকে তাকায় দেখে সামনের মেয়েটা হাত ধরে আছে। কিন্তু দেখে তো মনে সিম্পল ভাবেই ধরে আছে আর একটা মেয়ে হাত ধরেছে তাতেই ব্যাথা পেয়ে গেলো রনি আশ্চর্য। সু ওর হাতটা ছেড়ে দিয়ে ওদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যায়। রনি শুধু হিংস্র চোখে সু এর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। রনি তার হাতের দিকে তাকায় দেখে কেমন লাল হয়ে উঠেছে তার হাত। সে নিজেও ভেবে পাচ্ছে না মেয়েটার হাত কী দিয়ে তৈরী। কারণ সে কোনো কিছু দিয়ে তো আঘাত তাকে করেনি শুধু তার হাত টা কে ধরে ছিল তাতেই তার ব্যাথা কেনো লাগলো।

দূরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এতক্ষণ লক্ষ করছিলো আমন ওদের। এই ছেলে মেয়ে গুলো যখন সু এর সামনে এসে দাঁড়ায় তখনই এগিয়ে আসতে যাচ্ছিলো কিন্তু তার মনে পড়ে রাস্তায় মেয়েটার ব্যবহার তাই দেখতে চাইছিল কি হয়। আর মেয়েটার ডোন্ট কেয়ার অ্যাটিটিউড দেখে সে আরো বেশি করে দেখতে চাইছিল যে এই গ্যং এর হাত থেকে এই মেয়ে কি করে নিস্তার পায়। এই ইউনিভার্সিটি তে এই গ্যং এর হাত থেকে নিস্তার পেয়েছে খুব কম জনই আছে। এদের দলের লিডার রনি মন্ত্রী গৌতম রাঠোর এর ছোটো ছেলে সাথে এই ইউনিভার্সিটি এর ট্রাস্টি প্লাস প্রফেসর রিক রাঠোর এর ভাই। ওর বাবার নামে ট্রাস্ট বোর্ড থাকলেও সেখানে রিক এর নাম রাখা হয়েছে। তাই এখানেই সেই জোর দেখায়। কেউ তার বিরুদ্ধে কোনও কথা বলতে পারে না। তবে ভয় সে শুধু পায় আমন কে দেখে। কয়েকবার আমন তাকে মেরে ও ছিল। এই ইউনিভার্সিটির ফিফটি পার্সেন্ট এর শেয়ার চৌধুরীদের আর বাকি ফিফটি পার্সেন্ট মল্লিক আর এই রাঠোরদের তাই আমন এর উপর কথা বলতে পারে না রনি। আর আজ কিনা সেই ছেলের হাত ব্যাথা করে দিলো ওই মেয়েটা। কিন্তু সামান্য ওই ভাবে ধরলে তো ব্যাথা হওয়ার কথা নয় তাহলে? উম কিছু তো আছে এই মেয়ের মধ্যে। আমন নিজের মনে ভেবে ওঠে।

আমন এই ইউনিভার্সিটি এর একজন প্রফেসর।এবং একজন স্যাকসেসফুল বিজনেসম্যান । সেই সাথে এই ইউনিভার্সিটি এর পুরো মহিলা মহল এর ক্রাশ শুধু তাই নয় তার এই গুড লুকিং তার এই হ্যান্ডসামনেস এর জন্য বাইরে ও মেয়েদের কাছে বিশেষ ভাবে পরিচিত। বত্রিশ বছর বয়সেও সে স্টিল ব্যাচেলর। আজ পর্যন্ত তার নামে কোনো মেয়ে জনিত কোনো স্ক্যান্ডেল নেই। সে সবার কাছে ওয়ার্কাহলিক নামে পরিচিত।

—————

-“মে আই কামিং স্যার?

-” আরে ম্যাডাম আপনি প্লিজ ভিতরে আসুন। প্লিজ বসুন প্রিন্সিপাল সোমেশ আহুজা বলে ওঠেন।

-“প্লিজ স্যার আমাকে ম্যাডাম আর আপনি বলবেন না আমি আপনার থেকে অনেক ছোটো বলতে পারেন আপনার মেয়ের বয়সী। সু ভিতরে এসে চেয়ার টেনে বসে বলে ওঠে।

-” আমার থেকে ছোটো হলেও আমার থেকে প্রফেশনাল ভাবে আমার থেকে অনেক বড়। একজন দেশের রক্ষক। যাদের কারণেই আমাদের দেশের সাধারণ নাগরিক শান্তি তে ঘুমাতে পারে। প্রিন্সিপাল বলে ওঠে।

-” প্রফেশনাল আলাদা হলেও একজন শিক্ষক এর সম্মান সব সময়ে সবার উপরেই থাকে। কারণ আমরা তাদের থেকে শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েই কিন্তু আমাদের লক্ষে পৌঁছায় সে ডক্টর হোক ইঞ্জিনিয়ার হোক কিংবা যেকোন প্রফেশনই হোক না কেন। তাই প্রত্যেক শিক্ষক এর সম্মান সবার আগেই সে যতো বড় উচু মানের মানুষ হোক না কেনো। সু বলে ওঠে।

সু এর কথা শুনে প্রিন্সিপাল আবেগী হয়ে এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আজকাল কেউ আর শিক্ষকদের কেও মানে না। আজকাল শিক্ষক সেটাই ম্যাটার করে না পাওয়ার স্ট্যান্ডার্ড এইসব আগেই দেখে। যদি তুমি পয়সা ওয়ালা হও তাহলে তুমি শিক্ষক হিসাবে সম্মান পাবে আর যদি পয়সা ওয়ালা না হও তাতে শিক্ষক কি সেটা দেখে না। তাছাড়া এখন কার স্টুডেন্ট গুলো একইরকম শিক্ষকদের কোনো কেয়ার করে না। এই তো তিনি একজন প্রিন্সিপাল কিন্তু এই তাকে অনেক ভাবে অপমানিত হতে হয়েছে এই ইউনিভার্সিটি এর স্টুডেন্ট রনি এর কাছ থেকে মন্ত্রীর ছেলে বলে কথা।

-“ঠিক আছে বেটা আমি আর আপনি বা ম্যাডাম বলবো না। হেসে বলে ওঠে প্রিন্সিপাল।

-” সোহা জৈন রাইট। পঁচিশ বছর বয়সে তুমি একজন দক্ষ অফিসার এতটা উন্নতি সত্যি ভাবা যায় না। এই নাও তোমার ফাইল। আমার কাছে দিল্লী থেকে ফোন এসেছিল আমাকে বলা হয়েছে। তুমি এখানে একজন প্রফেসর হিসাবে জয়েন করবে আমি সব রেডি করে রেখেছি হিউম্যান সাইকোলজি তে । স্যার আমাকে সব বলেছেন এই কেস এর ব্যাপারে। তোমার যে কোনও সাহায্য এর প্রয়োজন হলে আমি আছি।

-” থ্যাঙ্ক ইউ স্যার। স্যার আরো একটা কথা ছিল এই ইউনিভার্সিটি এর সমস্ত স্টুডেন্ট আর স্যার ম্যাডাম দের ডিটেইলস লাগবে। সু ওরফে সোহা বলে ওঠে।

-” ঠিক আছে আমি তোমার জন্য সব ডকুমেন্ট রেডি করে রাখছি।

-“না স্যার আপনি যদি আমাকে একটু মেইল করেন দিতেন তাহলে খুব ভালো হয় বুঝতেই পারছেন ব্যাপার টা খুবই কনফিডেন্সিয়াল। প্রিন্সিপাল কে পুরোটা বলতে না দিয়ে সোহা বলে ওঠে।

-“ওকে পাঠিয়ে দেবো। তোমার কেস এর জন্য কোনো কিছু করতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করব। প্রিন্সিপাল হেসে বলে ওঠে।

-” ওকে স্যার আসছি তাহলে। সোহা বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

রুম থেকে বেরোতে সোহা এর ফোন বেজে ওঠে। সোহা ফোন রিসিভ করে কানে ধরতে ওপাশ থেকে কথা বলে ওঠে।

-” আমি তোমাকে সমস্ত ইনফরমেশন পাঠিয়ে দিয়েছি এ.আর চৌধুরীর।

-“ওকে স্যার আমি চেক করে নিচ্ছি। সোহা বলে ওঠে।

-“বেস্ট উইশেস ফর ইওর রানিং কেস। উই অল নো দি ভিক্টরি উইল বি ইওর’স। সুদীপ্ত ভৌমিক বলে ওঠে।

-” থ্যাঙ্ক ইউ স্যার। আই উইল ট্রাই মাই লেভেল বেস্ট। বলে সোহা ফোন কেটে দেয়।

এক পলক ফোন এর দিকে তাকিয়ে নিয়ে আবারও সামনের দিকে পা বাড়ায়। গন্তব্য ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট হিউম্যান সাইকোলজির ক্লাস রুম। তার ছোটো থেকে স্বপ্ন ছিলো এন.এস.জি জয়েন করা। সেই ক্ষেত্রে সে বিশেষ করেই সে সাইকোলজি নিয়েই স্টাডি করেছে যাতে সহজে সে মানুষের মনোভাব বুঝতে পারে। যদিও এন.এস.জিতে যে কোনও ফিল্ড থেকে আসতে পারে তবে তার জন্য সব দিক থেকে দক্ষ থাকতে হবে। সোহা ছোটো থেকেই বিদেশে বড় হয়েছে যদিও তার কারণও আছে। সে ওখানে তার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেই দেশে ফিরে এন.এস.জি জয়েন করে। কারণ গ্রাজুয়েশন ছাড়া এন.এস.জি জয়েন করা যায় না। তারপরেই সে তাকে প্রশিক্ষণ এর জন্য বাইরে পাঠানো সেখানেই সে তার ট্রেনিং এর সাথে সাথে তার স্টাডি শেষ করে। দু মাস আগেই তার পি এইচ ডি লেভেল কম্পিলিট হয়েছে। তবে সোহার এই প্রফেশনের আশার ও কারন আছে তাই সে নিজেকে তৈরী করতে তার সর্বস্ব দিয়ে তার লক্ষে স্থির থেকে গেছে। পঁচিশ বছর বয়সে সে তার স্টাডি কম্পিলিট করেছে যেহেতু সে ফরেন কান্ট্রি তে বড় হয়েছে আর সাথে তাই এটা সম্ভব হয়েছে কারণ আমাদের দেশের ইউনিভার্সিটি লেভেল ফরেন কান্ট্রি এর স্কুল লেভেল এর সমান।

সোহা ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের হিউম্যান সাইকোলজির রুমের সামনে এসে দাঁড়িয়ে একবার পাশের নাম বোর্ড টা দেখে নেয়। তারপরেই রুমে ঢোকে। সোহা কে রুমে ঢুকতে দেখে বাকিরা চুপচাপ বসে বসে হা করে তাকিয়ে থাকে। রনি রাজ রিনি নিশা রুক্ষ চোখে তাকিয়ে থাকে সোহা এর দিকে সোহা কে এই রুমে আসতে দেখে তাদের মুখে শয়তানি হাসি ফুটে ওঠে। তারা মনে করছে সোহা তাদের সাথে তাদের ক্লাসে পড়ে। তাহলে বেশ জব্দ করা যাবে এটা ভেবেই নিজেরা মনে মনে খুশি হয়ে যায়।

সোহা রুমে ঢুকে মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে পকেটে হাত রেখে তীক্ষ্ণ চোখে একবার পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে নেয়। সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। সোহা বুঝতে পারে তাকে তারা তাদের মত স্টুডেন্ট ভাবছে। একবার সকলের দিকে তাকিয়ে নিয়ে প্রফেসর ডেস্ক এর দিকে এগিয়ে যায়। তারপরেই ডেস্কে দাঁড়িয়ে টেবিলের উপরে থাকা ডাস্টার টা জোরে টেবিলের উপর আঘাত করে। সাথে সাথে রুমে থাকা সবাই কেঁপে ওঠে। এতক্ষণ তারা অবাক হয়ে দেখেছিল সোহা কে যখন ডেস্ক এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো তখন তারা অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল তারা বুঝতে পারছিল না এই মেয়ে ওখানে কি করতে যাচ্ছে। আর এখন ডাস্টার দিয়ে আঘাত করতে সব কেঁপে ওঠে।

-“হে ইউ তোমার সাহস কি করে ডেস্কে দাঁড়ানোর আর তারপরে ওটা নিয়ে আঘাত করছ কেনো নিজেকেই কি ভাবলে তুমি? রিনি চিৎকার করে বলে ওঠে।

-“গেট আউট অফ মাই ক্লাস। আই ডোন্ট লাইক বিয়ারিশ স্টুডেন্ট ইন মাই ক্লাস। সো গেট আউট। সোহা তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে কঠিন শীতল কন্ঠে বলে ওঠে।

এদিকে সোহা এর কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে যায়। চোখ বড় বড় করে সোহা এরপর দিকে তাকিয়ে দেখতে থাকতে। আর পুরো ক্লাস রুম জুড়ে গুঞ্জন ভরে যায়। সোহার বলা কথা গুলো নিয়ে সবাই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে শুরু করে দেয়। তাঁরা সোহার বলা কথা গুলো এখনও ঠিক হজম করতে পারিনি। আর রনি রাজ নিশা রিনি সবাই সোহার দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে।

চলবে….. ❣️

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন..। নিজেদের মতামত জানাবেন ।

(আজকে #ইচ্ছেকথন গল্প দেবো না। তাই কেউ অপেক্ষায় থাকবেন না । আপনাদের রেসপন্স আসতে আসতে কমে যাচ্ছে যেটা আমার জন্য খুবই কষ্টদায়ক)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here