তোর মনের অরন্যে পর্ব-৩

0
988

#তোর_মনের_অরণ্যে
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৩.
-“গুড মর্নিং মাম্মা ।গুড মর্নিং বাপি । সোহা বাড়ির ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলে ওঠে।

-” নাও ওই এলেন মেয়ে আমার। তা বলি বাছা শহরে ফিরেছ তো কালকে তা আজকে মনে পড়লো বাড়ির কথা। শ্রেতা দেবী।

-“ওহ হো মাদার ইন্ডিয়া আমি কালকে ফিরতাম কিন্তু কি করব বলো এমন একটা কেস এসে গেলো যে আর ফিরতে পারলাম না। সোহা ডাইনিং টেবিলে বসে বলে ওঠে।

-“কি এমন কেস শুনি? শ্রেতা দেবী বলে ওঠে।

-“আমার সিহু বেটা কি কাজ করেছে একটু শুনি নিশ্চয়ই কোনো ভালো কাজ। ধীরাজ জৈন বলে ওঠে।

সোহাগ এবার ভালো ভাবে বসে একের পর এক কালকের ঘটনা রূশার ব্যাপারটা বলতে শুরু করে। এর এদিকে তার বাবা মা মন দিয়ে শুনতে থাকে। সোহা পুরো বলে শেষ করতে শ্রেতা দেবী বলে ওঠে।

-” জানোয়ার গুলোর উচিত শিক্ষা হয়েছে। মেয়েটার উপর দিয়ে কি ঝড় টাই না গেছে ভাবলেই বুক কেঁপে উঠছে।

-” আচ্ছা সিহু বেটা তুমি কি ভাবে বুঝলে যে ওকে ইয়্যটে রাখা হয়েছে? ধীরাজ জৈন বলে ওঠে।

-“আরে বাপি ওই ভিডিও গুলো ভালো ভাবে খেয়াল করলে ওরাও ঠিক বুঝতে পারতো যে ওকে কোথায় রাখা হয়েছে। যদি ওটা খুবই সূক্ষ্ম একটা তথ্য ছিল। সোহা খেতে খেতে বলে ওঠে।

-“যেমন? কি এমন দেখলে যার জন্য বুঝতে পারলে। আবারও জিজ্ঞেস করে ওঠে সোহা এর বাবা।

-” রুশা কে যে রুমে রাখা হয়েছিল তার থেকে দূরে ইয়্যট এর ওয়াল এর গায়ে একটা লোগো ছিল ব্যস ওখান থেকেই পরিষ্কার হয়ে গেলো যে ওকে কোনো ইয়্যট এর মধ্যে রাখা আছে। আর ওকে যে শহরের বাইরে কোথাও নিয়ে যাওয়া হয়নি এটা ও কিছুটা নিশ্চিত ছিলাম তাই একে একে দুই মিলিয়ে ফেললাম। সোহা বলে ওঠে।

-“বাহ এই নাহলে আমার সিহু বেটা। হাসতে হাসতে বলে ওঠে সোহার বাবা।

-” আচ্ছা এবার কয়েকদিন বাড়িতে থাকছ তো নাকি? শ্রেতা দেবী বলে ওঠে?

-“না মাম্মা আমাকে আবারো আজকেই বেরোতে হবে আমার মিশন এর জন্য। সোহা মুখটা কিছুটা অসহায় এর মত করে বলে ওঠে তার মা কে মানাতে।

-” এবার কোথায় শুনি? কিছুটা গম্ভীর হয়ে বলে ওঠে শ্রেতা দেবী।

-” বেশি দূরে নয় ব্যাঙ্গালোর। সোহা বলে ওঠে।

-” ওহ তাহলে তো ভালোই হলো তুমি ওখানে আমাদের বাংলো তে সৌ এর সাথে থাকতে পারবে আর আমি কিছুটা নিশ্চিত ও হয়ে যাই। তবে দেখো ওখানে গিয়ে আবার মারামারি করতে যেও না। আমার হসপিটাল এর ডিউটি না থাকলে আমি ও চলে যেতাম তোর সাথে। শ্রেতা দেবী বলে ওঠে।

-“আচ্ছা এবারও ওই পাজির দল সাথে যাবে তো নাকি তুই একা? আবারো বলে ওঠে।

-“আরে বাবা না ওরাও যাবে। সোহা বলে ওঠে।

-“আচ্ছা ঠিক আছে কখন বেরোবে? ধীরাজ জৈন বলে ওঠে।

-” এইতো খেয়ে নিয়ে রেডি হয়েই বেরিয়ে পড়ব। সোহা বলে ওঠে।

সোহার মা কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলো না। তিনি সাথে যেতো কিন্তু তিনি একজন ডক্টর তাই তার কাছে তার ডিউটি আগে পড়ে মানুষ কে রক্ষা করা। তেমন তার মেয়ে ও দেশের রক্ষার কাজে লেগে আছে। এতে তার কোনো আপত্তি নেই কিন্তু মেয়েটার কোনো খেয়াল তিনি রাখতে পারেন না তাই মাঝে মাঝেই তার মন খারাপ হয়ে যায়। সোহার বাব একজন বড় নামকরা বিজনেসম্যান তিনি বিজনেস ও বাড়ি সন্তান সব দিকে সমান ভাবেই খেয়াল রাখেন। সোহার আরো একজন ভাই আছে তবে সেও একজন তার বাবার মতো একজন বিজনেসম্যান পারিবারিক বিজনেস যোগ দিয়েছে। তবে তাদের বিদেশী কোম্পানীর দায়িত্বে আছে।

————

-“স্যার মিস্টার মল্লিকরা চলে এসেছেন আপনার জন্য ওয়েট করছে মিটিং রুমে।

-” ওকে তুমি যাও আমি আসছি এক্ষুনি। ল্যাপটপ এর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে ।

-“ওকে স্যার। বলেই চলে যায় মেয়েটা।

মেয়েটা চলে যেতেই উঠে রুম থেকে বেরিয়ে মিটিং রুমের দিকে পা বাড়ায়। মিটিং রুমে ঢুকতেই দেখতে সবাই তার জন্য অপেক্ষা করছে।

-“হে আমন কেমন আছিস ভাই।

-” গুড । আমন বলে ওঠে।

-” হ্যালো আমন । মণিকা বলে ওঠে।

-“হাই । নির্লিপ্ত ভাবে বলে ওঠে।

-” তো এবার মিটিং শুরু করা যাক। সম্রাট চৌধুরী বলে ওঠে।

-“হ্যাঁ অবশ্যই একটু তাড়াতাড়ি হলে ভালো হয় আমাকে আবার ইউনিভার্সিটি যেতে হবে। আমন বলে ওঠে।

রুমের মধ্যে থাকা চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রির কর্নধার সম্রাট চৌধুরী ও আমন চৌধুরী সাথে মল্লিক ইন্ডাস্ট্রির সাজিদ মল্লিক আরহান মল্লিক ও মণিকা মল্লিক । তাদের মিটিং শেষ হতেই আমন উঠে দাঁড়ায়। কিন্তু তার আগেই তাকে ডেকে ওঠে

-“আমন বলছি আমরা তোমার আর মণিকার সম্পর্কের ব্যাপার নিয়ে কথা বলতে চাইছি। সাজিদ মল্লিক বলে ওঠে।

-” কিসের ব্যাপার নিয়ে কথা বলতে চাইছেন আপনি? আমাদের মধ্যে বিজনেস রিলেটেড আর কি কোনো সম্পর্ক আছে? হ্যাঁ এটা ঠিক যে আমাদের সাথে আপনাদের একটা ভালো রিলেশন আছে কিন্তু সেটা শুধু মাত্র পারিবারিক ভাবে তাছাড়া আর কিছু নেই। তাই প্লিজ আমি এখন কোনো কথা বলতে পারছি না। আমাকে এখন যেতেই হবে। আমন তীক্ষ্ণ গলায় বলে বাইরে বেরিয়ে যায়।

এদিকে রুমের মধ্যে সম্রাট বাবু ও চুপ করে বসে আছে তার বলার মত কিছু নেই আর। তিনি তার এই ছেলে কে এই বিষয়ে কোনো কথা বলতে পারবে না। তাই তিনি নির্লিপ্ত ভাবে বসে আমন এর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। এদিকে সাজিদ মল্লিক মুখে বিরক্তি ও রাগ ফুটে উঠেছে। আরহান চুপ চাপ বসে বসে দেখে যাচ্ছে। মণিকা ও হাত মুঠ করে আমন এর দিকে তাকিয়ে রাগে হিসহিসিয়ে উঠেছে ।

-“তোমাকে তো আমার হতেই হবে। আমাদের শুধুমাত্র পারিবারিক সম্পর্ক থাকবে নয় তুমি আমার সাথে ও জড়িয়ে যাবে। মণিকা নিজের মনে বলে ওঠে।

————-

আমন রাগে জোরে গাড়ি ড্রাইভ করে যাচ্ছে। তার এখনও একটু আগের কথা গুলোর জন্য রাগ বেড়ে যাচ্ছে। কি পেয়েছে টা কি তাকে এরা। রাগে ফুসতে ফুসতে আমন সামনের দাঁড়িয়ে থাকা বাইক টা কে না দেখেই ধাক্কা মারে। বাইক টা উল্টে পড়ে যায় পাশে। এবার যেনো আমন রাগের পারদ আরো বেশি চড়ে গেছে। উফ তার অন্যমনস্ক থাকার দরুন আজ আরও একটা বড় বিপদ হতে পারতো। হটাৎ করেই তার গাড়ির কাছে নক করতে আমন নিজের রাগ কমিয়ে কাঁচ নামিয়ে দেয়। দেখে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তবে চোখে গ্লাস ও মুখে মাস্ক মুখ দেখায় যাচ্ছে না।

-“এই যে চোখ কি বন্ধ করে গাড়ি চালান নাকি রাস্তায় যে একটা এত বড় একটা গাড়ি দাঁড় করানো রয়েছে সেটা কি আপনি দেখতে পাননি? মানছি বাইক টা আপনার বড় গাড়ির থেকে ছোটো তবু ও তো একটা গাড়ি নাকি? বলি চোখ কোথায় থাকে শুনি? চিৎকার করে বলে ওঠে মেয়েটা।

এমনিতেই আমন এর মাথায় গরম হয়েছিলো তার উপর এই মেয়েটা এসে আবার তাকে জ্ঞান দিয়ে যাচ্ছে। যেটুকু বা রাগ শান্ত করতে পেরেছিল সেটাও আবার চড়ে যাচ্ছে মাথায়। সে রাগী চোখে তাকায় মেয়েটার দিকে কিছু বলতে যাবে কিন্তু তাকে কিছু বলতে না দিয়ে আবারো চিৎকার করে ওঠে।

-“আপনারা কি সাধারণ মানুষ কে মানুষ মনে করেন না নাকি। কিভাবে গাড়ি চালান আজ যদি এই বাইক এর জায়গা কোনো সাধারণ মানুষের ক্ষতি হয়ে যেতো তাহলে কি হতো? তার দায় ভার কি আপনি নিতেন? আবারো চিৎকার করে বলে ওঠে ।

-” সু ইয়ার চলে আয় অনেক হয়েছে। আমাদের লেট হয়ে যাচ্ছে। নীহার ডেকে ওঠে।

-” এই যে শুনুন এর পর থেকে চোখ ডাবল করে গাড়ি চালাবেন তবুও দেখে চালাবেন যতো সব নাহলে আপনাকে আমি পুলিশে দেবো। বলেই চলে যায়।

সু চলে যেতেই আমন রাগে স্টেয়ারিং এর উপর জোরে হাত দিয়ে আঘাত করে। উফ এই মেয়ে তাকে জ্ঞান দিয়ে চলে গেলো যদিও বা তাকে বলত এখন এই মেয়ে তাকে পুলিশ এর ভয় দেখায় পুলিশ হ্যা এই আমন রোদ চৌধুরী কে পুলিশ এর ভয় দেখায়। এই সব পুলিশ ও আমার কিছু করতে পারবে না। কিন্তু এর পরে তোমাকে পেলে অবশ্যই আমি তোমার ব্যবস্থা করব মিস ধানী লঙ্কা। আমন নিজের মনে বলে ওঠে।

চলবে…. ❣️

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন। নিজেদের মতামত জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here