#তোর_মনের_অরণ্যে
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
২.
রূশা ফ্লোরে সেই হাত পা বাঁধা একই অবস্থায় পড়ে রয়েছে তার শরীরের কোনো শক্তি অবশিষ্ট নেই সাথে একটু আগেই তাকে জোর করে মদ খাইয়ে দেওয়ার জন্য মাথা টা কেমন ঝিমঝিম করছে। আর তার ঠিক একটু দূরেই পাঁচ জন হাত নিয়ে ছটফট করছে । ওরা একটু আগেই আবারো তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে যাচ্ছিলো আবারো সেই নরক যন্ত্রণা ভাবলে ভয়ে বুক কেঁপে ওঠে। রুশা ভীতু ঝাপসা চোখে চারিদিকে দেখতে থাকে কোথায় থেকে গুলি চললো। আর এদিকে গুন্ডা গুলো ও হাত চেপে ধরে গালি দিয়ে যাচ্ছে গুলি করার পর ও কেউ আসছে না দেখেই ওদের মধ্যে একজন পাশে ফেলে দেওয়া গান টা তুলে নিয়েই উঠে দাঁড়ায়। আর তখন কয়েকজন এর পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় এই রুমের দিকে এগিয়ে আসছে। গুন্ডা টা রিভলভার উঠিয়ে রাখে শুট করার জন্য কিন্তু তার ট্রিগারে চাপ দেওয়ার আগেই আবারো তার হাতে গুলো লাগে। হাত থেকে ছিটকে গান টা পড়ে যায়। রুমের মধ্যে ঢুকে আসে এক মেয়ে পর পরই পাঁচ টা গুলি চালিয়ে দেয় পাঁচ জন এর পায়ের দিকে তাক করে তারা এবার পা আর হাত নিয়ে ছটফট করছে । রুশা তার ঝাপসা চোখে দেখতে পায় একজন মেয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে যদি ও মুখটা তার কাছে স্পষ্ট নয়।
-“নীরা কাম ফাস্ট। সোহা চিৎকার করে বলে ওঠে।
সাথে সাথে রুমে আরো দুটো ছুটে আসে। তিনজন মিলেই এগিয়ে যায় রুশার কাছে। সোহা তার হাতের পায়ের দড়ি গুলো খুলছে আর এদিকে নীরা তার সাথে থাকা ব্যাগ থেকে ড্রেস বের করে তাড়াতাড়ি করে। ওদের কাছে যখন এই কেস এর সমস্ত ডিটেইলস আর ভিডিও গুলো দেখে ছিল তখনই তারা বেরোনোর সময়ে ড্রেস নিয়ে নিয়েছিলো আর তারা জানত এখানে তারা একে ড্রেসে রাখবে না আর এটাই তো স্বাভাবিক তাইনা।
-“অ্যাস তাড়াতাড়ি ড্রেস পড়া। কন্ডিশন ভালো না জলদি। সোহা তাড়া দিয়ে বলে ওঠে।
রুশা এখনও সব শুনতে পাচ্ছে কিন্তু চেয়ে ও চোখ খুলতে পারছে না। তার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। এদিকে নীরা আর অ্যাস রুশা কে তাড়াতাড়ি ড্রেস করিয়ে দেয়। কয়েক মিনিট পরেই রুমে ঢোকে দুজন সোহা ওদের দেখে বলে ওঠে।
-“এই পাঁচ জন কে তুলে নিয়ে আয় আর সাথে এই পুরো ইয়্যট কে তল্লাশি করতে ভুলিশ না আমি গেলাম।
সোহা নীচু হয়ে রুশা কে কোলে তুলে নিয়ে বেরিয়ে যায়। সাথে বাকি দুজন মেয়ে রুমের বাইরে এসে পাশে থাকা আরও একটা ইয়্যটে উঠে পড়ে সোহা রুশা কে নিয়ে সাথে আসে নীরা ও অ্যাস। ওদের সাথে বাকি ফোর্স দের ভিতরে যেতে বলে ওঠে ইয়্যট নিয়ে বেরিয়ে পড়ে মাঝ সমুদ্র থেকে।
এদিকে রুশার অবস্থা খারাপ হতে শুরু করেছে এই সাতদিন ধরে কোনো খাবার তেমন পেটে পড়েনি সাথে তুমুল অত্যাচার চলেছে আর আজ আবারো এইসব এর উপর মদ খাইয়ে দিয়েছে খালি পেটে এইসব সহ্য হয়নি ভমেটিং শুরু হয়ে গেছে। সোহা ও নীরা মিলে প্রাথমিক চিকিৎসা করেছে কিন্তু এখুনি এই মেয়েকে হসপিটালাইজড করতে হবে। সোহারা তাদের মিশনের এর জন্য কিছু চিকিৎসা ট্রেনিং দিয়ে রাখা হয় যাতে তারা বিপদে পড়ে নিজেরা নিজেদের রক্ষা করতে পারে। আর এখন সেটাই প্রয়োগ করলো। বেশ কিছুক্ষণ পর তারা সমুদ্রের পাড়ে এসে পৌঁছায়। সোহা নেমে রুশা কে কোলে তুলে তাদের ওখানে রাখা গাড়িতে নিয়ে উঠে পড়ে।
-” হ্যালো স্যার আপনারা তাড়াতাড়ি হসপিটাল চলে আসুন আমরা রুশা কে নিয়ে আসছি। বলেই সোহা ফোন কেটে দেয়।
এদিকে তখনও সবাই সেই মিটিং রুমে উপস্থিত আছে কর্নের সাথে সোহা এর কথা হতেই তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে।
-” স্যার আমাদের এক্ষুনি হসপিটাল যেতে হবে রুশাকে পাওয়া গেছে। সোহা ওকে নিয়ে হসপিটাল আসছে। কর্ন হাসি মুখেই বলে ওঠে কমিশনার কে।
-” আর এই যে আপনাকে বলছি একটু আগেই বলছিলেন না কে এই সোহা? কি করতে পারবে সে? তো আপনাকে বলি ডিপার্টমেন্টে সে লেডি ডন হিসাবে পরিচিত তাই খোঁজ করলে অবশ্যই তার সমন্ধে সব তথ্য পেয়ে যাবেন। কর্ন বলে ওঠে।
আর একটু আগের সেই অফিসার টা চুপ হয়ে তাকিয়ে থাকে আসলেই সে দু মাস হয়েছে জয়েন করেছে তাই ঠিক ভাবে জানে না আর বাকি থাকা সবাই খুশি হয় সাথে যারা এই মেয়ের সাফল্য মেনে নিতে পারেন না তাদের মুখ বেঁকে যায়।
সোহা অ্যাস নীরা রুশা কে হসপিটাল ভর্তি করে দেয়। কমিশনার আসতেই তার সাথে কথা বলেই তারা তিনজন বেরিয়ে পড়ে সেখান থেকে এখন তার একটাই গন্তব্য হেড অফিসের টর্চার রুমে
————
টর্চার রুমের ভিতরে চেয়ার এর বসে পায়ের পা তুলে সিগারেট টানছে সোহা। তার চোখ একদম স্থির সিলিং এর দিকে আর তার থেকে একটু দূরে সেই পাঁচ জন গুন্ডা পড়ে আছে। এই রুম টা কে এখন একদম শান্ত মনে হচ্ছে। আর তাই বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা বাকি অফিসাররা প্রমোদ গুনছে তারা জানে এই শান্ত পরিবেশ ঝড়ের পূর্বাভাস।আর এর পরে যে ঠিক কত টা ভয়ঙ্কর ঝড় উঠতে চলেছে সেটাও তারা জানে। তারা সোহা কে কম দিন থেকে চেনে না। বাইরে নীরা অ্যাস দাঁড়িয়ে আছে সাথে আরো কয়েকজন অফিসার।
-“সোহা সব রেডি আছে। রুমের মধ্যে ঢুকে বলে ওঠে আকাশ।
-” সানি তুই নিয়ে চলে আয় দেরি করছিস কেনো? সোহা আকাশের পাশে দাঁড়ানো সানি কে বলে ওঠে।
সানি আবারো বাইরে চলে যায় আর এদিকে আকাশ সোহার পাশে এসে দাঁড়িয়ে যায়। সোহা তাঁর হাতের সিগারেট টা নিয়ে এগিয়ে যায় ওই পাঁচ জন এর দিকে।
-” তো তোরা নিজেরা মুখ খুলবি নাকি আমাকে হাত লাগাতে হবে? সোহা বলে ওঠে।
ওরা পাঁচজন একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে নিয়ে আবারো সোহার মুখের দিকে তাকায়। সোহা ওদের কোনো কথা বলতে না দেখে তার হাতে থাকা সিগারেট টা নিয়ে একজন এর ঠোঁটের উপর চেপে ধরে। ছটফট করতে করতে সরে যেতে নিলেই আকাশ এসে ধরে রাখে। ঠোঁট সরানোর জন্য সিগারেট ছ্যাকা জিভে ঠোঁটের নিচে লাগে। আর বাকিরা চুপ করে দেখতে থাকে।
কিছুক্ষণ পরই সোহা সিগারেট ফেলে দিয়ে সোজা হয়ে বসে। সোহা ছেড়ে দেই সেই গুন্ডা এবার চিৎকার করে ওঠে পুড়ে যাওয়ার জন্য। ততক্ষণে রুমে সানি ও চলে এসেছে তার হাতে রয়েছে গরম দুটো শিক।
-“কিরে তোরা কি এখন ও কিছু বলতে চাস না? ওকে কোনো ব্যাপার না।
বলেই সোহা সানির হাতের থেকে শিক নিয়ে দুই জনের পুরুষাঙ্গের উপর চেপে ধরে। পুরো রুমে চিৎকারে ভরে যায়। তারা ছটফট করতে থাকে কিন্তু ছাড়াতে পারেনা। তাদের হাত বাঁধা আছে তাই শুধু পা ছুড়ে যাচ্ছে আর গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে যাচ্ছে। দুজন এর অবস্থা দেখে বাকি তিনজন ভয়ে ঢোক গিলতে শুরু করে। সোহা এবার ওদের দিকে তাকাতে ওরা একটু সরে বসে এটা দেখেই সোহা এর মুখে বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে। ওদের মধ্যে একজন বলে ওঠে।
-“আমি বলছি আমি বলছি। ওই মেয়েকে আমরা তুলে নিয়ে যায় আমাদের বস এর আদেশে। আমরা শুধু ওই মেয়ে কে ইয়্যটে রেখে সেদিন বেরিয়ে আসি বস এর কথা মত। তার পরের দিন সকালে আবার আমরা ইয়্যটে যায়। গিয়ে দেখি মেয়েটা পুরোই নগ্ন অবস্থায় পড়ে আছে। আসলে ওই দিন পুরো সময়ে আমাদের বস ওই মেয়ের সাথে ছিল। আমাদের কে বস বলেছিলো মাঝ সমুদ্রে চলে যেতে। আর আমরা ওই মেয়ের সাথে যা খুশি তাই করতে পারি শুধু যাতে মেয়েটা মরে না যায় এটাই বলে হয়েছিলো।
-“কে তোদের বস? সোহা বলে ওঠে।
-” আমরা জানি না।
কথা টা বলে শেষ না করতে সোহা আবারো গরম শিক চেপে ধরে অন্য আরেকজন এর উপর। আবারও চিৎকার করে ওঠে।
-“আমরা বস কে কোনো দিন দেখেনি আমরা শুধু তার নাম জানি এর বেশি কিছু জানি না সত্যি বলছি। একজন চিৎকার করতে করতে বলে ওঠে।
-“কি নাম তার? সোহা হিসহিসিয়ে বলে ওঠে।
-“এস.আর আমরা তার মুখ দেখিনি কখনো সব সময়ে মুখ ঢেকে থাকতো এই নামে চিনি আর কিছু জানি না। তবে তবে…
-” কি তবে? বল জলদি। সোহা আরো একটু জোরে চেপে ধরে বলে ওঠে।
-” তবে এস.আর এর উপরেও আরেক জন বস আছে আমাদের তাকে আমরা কেউ কখনো দেখিনি জানি না। শুধু এস.আর মুখে বিগ বস বলে এই নামটা শুনেছি আর কিছু জানি না সত্যি বলছি। যন্ত্রণায় চিৎকার করতে করতে বলে ওঠে।
-“এস.আর আর বিগ বস। সোহা নিজের মনেই কিছুক্ষণ আউড়ে নেয়।
তার পরেই সোহা উঠে দাঁড়িয়ে হাতের থেকে শিক দুটো ফেলে দিয়ে কোমর থেকে গান বের করে পর পর পাঁচটা গুলি চালায় ওদের পুরুষাঙ্গ লক্ষ করে। পুরো রুমে যন্ত্রণা চিৎকারে ভরে যায়। তারপর আবারো তাদের কপাল বরাবর শুট করে দেয়। এই মুহূর্তে সোহার মুখ একদম হিংস্র হয়ে উঠেছে। আকাশ সানি এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে তারা এই সবে অভ্যস্ত। বাইরে থাকা বাকি অফিসার গুলো ভয়ে আছে। তারা জানত এটাই হবে।
-“রেপিস্টদের একটাই শাস্তি মৃত্যু। বলেই বেরিয়ে আসে সোহা। বলেই রুম থেকে বেরিয়ে আসে।
রুম থেকে বেরিয়ে সোহা নিজের কেবিনে চলে আসে। তার এখন মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। এইসব জানোয়ারদের জন্য মাথা গরম করলে চলবে না। টেবিল থেকে ফোন হাতে নিতেই দেখে তার ফোনে একটা মেইল এসেছে হাই কমিশন থেকে তাকে শীঘ্রই দেখা করার বার্তা পাঠিয়েছে।এটা দেখেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সোহা।
————
দিল্লী হাই কমিশনার অফিসে বসে আছে সোহা। তার সামনে বসে আছে সুদীপ্ত ভৌমিক। সোহার দিকে একটা ফাইল এগিয়ে দেয়।
-“এটা তে তোমার নেক্সট কেস এর ইনফরমেশন আছে। আর এটা তোমাকেই করতে হবে আমি অন্য কাউকে এটা হ্যান্ডওভার করতে পারবো আমি জানি এটা তুমি ছাড়া কেউ করতে পারবে না। এতে সমস্ত ইনফরমেশন আছে। সুদীপ্ত ভৌমিক বলে ওঠে।
সোহা ফাইল টা হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে নিলেই সুদীপ্ত ভৌমিক আবারো বলে ওঠে।
-“আমি জানি তুমি কালকে ফিরেছ কিন্তু কিছু করার নেই তোমাকে ছাড়া আমি অন্য কাউকে এর দায়িত্ব দিতে ভরসা পাচ্ছি না।
-” স্যার আমার কিছু বলার ছিল। আমি কেস এর সাথে সাথে আরো একটা কেস এর জন্য পারমিশন চাইছি। সোহা বলে ওঠে।
-“আরো একটা কেস ওকে কোনো ব্যাপার আমার তোমার উপর বিশ্বাস আছে। কিন্তু এই কেস টা খুবই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। সন্ত্রাসবাদীরা এখন জেকে বসেছে বর্তমানে কলেজ লাইফ ইউনিভার্সিটি লাইফ ধ্বংসের পথে। স্টুডেন্টদের ড্রাগস ও বিভিন্ন মাদক দ্রব্যের প্রতি তারা আসক্ত হয়ে পড়ছে বিভিন্ন বেআইনি কাজের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। নেশার দ্রব্য নেওয়ার জন্য তারা সন্ত্রাসের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। আর ব্যাঙ্গালোর থাকা আমাদের স্পাই এর মাধ্যমে খবর পাওয়া গেছে ব্যাঙ্গালোর ইউনিভার্সিটি তে এর উৎস পাওয়া গেছে ওখানেই ওরা ওদের কাজ গোপন ভাবে চালিয়ে যাচ্ছে স্টুডেন্টদের মধ্যে থেকে। তাই এটাই তোমাকে হ্যান্ডেল করতে হবে।
-” আর এই কেসে তোমাকে সাহায্য করবে আর এন্ড ডব্লিউ এর সিনিয়র অফিসার মিস্টার এ.আর চৌধুরী। তোমাকে মিস্টার চৌধুরীর সমস্ত ডিটেইলস পাঠিয়ে দেওয়া হবে তোমাকে কালকের মধ্যে এই কেস টেক ওভার করতে হবে। সুদীপ্ত ভৌমিক বলে ওঠে।
-” ওকে স্যার। সোহা উঠে দাঁড়িয়ে বলে ওঠে।
তারপরেই সমস্ত ডিটেইলস নিয়ে বেরিয়ে পড়ে, এখন সে বাড়ি ফিরবে। শহরে ফেরার পর একবারও বাড়ি যেতে পারিনি। এমনিতেই বছরেই অর্ধেক সময়ে তার বাইরে বাইরে কেটে যায়। এখন তাকে গিয়ে তার মাদার ইন্ডিয়ার রাগ ভাঙ্গতে হবে তারপর সে নয় এই কেস দেখবে ।
-” চলো সোহা এখন মাদার ইন্ডিয়ার মান ভাঙ্গতে তারপরেই এই এ.আর এর সাথে কথা বলা যাবে। সোহা নিজের মনে বলে ওঠে।
চলবে…. ❣️
ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন..। নিজেদের মতামত জানাবেন ।