তোর পরশে প্রেম পর্ব ৪

0
100

#তোর_পরশে_প্রেম
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৪

আইসিইউ রুমের বাহিরে পুরো বেপারী পরিবার। সবার চেহারায় চিন্তার ছাপ স্পষ্ট।
‘পলাশ সাহেব সবে মাত্র এসেছেন চট্রগ্রাম থেকে। পরশ, ভাইজানের এই অবস্থা কি করে হলো?
‘চাচ্চু বুঝতে পারছি না বাবা হঠাৎ করে এমন অসুস্থ হয়ে পরলো।
‘পুতুল আর চোখে একবার পরাণের দিকে তাকালো, তার কি উচিৎ সবাইকে সবটা বলা। নাকি চুপ করে থাকবে সে?
‘পরশ অগ্নি দৃষ্টিতে পুতুলের দিকে তাকিয়ে বলে,চাচ্চু তোমার মেয়েকে জিজ্ঞেস করো,ও বাবাকে কি উল্টোপাল্টা বলেছে। ওই ছিলো বাবার রুমে বাবার কাছে।
‘পুতুল ভয়ে গুটিয়ে গেলো, কি বলবে পুতুল!সত্যিটা নাকি অন্য কিছু।
পালাশ সাহেব পুতুলের হাত শক্ত করে ধরে বলে,কি বলেছিস তুই?
‘বাবা আমি তো শুধু।
‘একদম চুপ কর তোর এতো সাহস!আজকে তোর সাহস আমি বের করবো। তোর এতো জেদ? তোর শরীরে যে রক্ত বইছে সেই রক্ত আমার শরীরেও। পনেরো বছর বয়সে কেউ বাচ্চা থাকে না।ভাইয়া সুস্থ হোক তোকে আমি পরে দেখে নিচ্ছি। আর মনে রাখিস বিয়ে তোকে পরশ-কেই করতে হবে।
‘পুতুলের চোখ দিয়ে টুপটুপ করে জল গড়িয়ে পরছে, পুতুল তার বাবাকে ভয় পায়।
পলাশ সাহেব শান্ত স্বরে বললো,বাড়ির মেয়েরা সবাই বাসায় চলে যাও। এখানে কান্নাকাটি করলে রুগী সুস্থ হবে না৷ তবে পরিবেশ অসুস্থ হবে।
সবাই বিনাবাক্য বিনিময়ে বের হয়ে গেলো।
পুতুলের চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পরছে মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের হচ্ছে না। পুতুল কখনো তার বাবার মুখের উপর কিছু বলতে পারে না।
‘নিলুফা বেগম পুতুলকে নিজের কোলের দিকে টেনে বসালো। নরম স্বরে বলল,কিরে বোকা মেয়ে, এভাবে কাঁদছিস কেন! তোর বাবা তো এমনই না বুঝে, না শুনে আগেই একশান। এবার আমার কাছে বল দেখি কি হয়েছে?
‘পুতুল আশেপাশে তাকালো, ড্রাইভারের পাশের সিটে জুলিয়া বসা।পেছনে সুফিয়া বেগম একপাশে, আরেক পাশে পুতুল মাঝখানে নিলুফা বেগম।
‘কিরে কি দেখছিস, বল আমাকে।
‘বড় আম্মু, পরাণ ভাইয়া যখন বলল,বাবা আমি এসেছি৷ তখন বড় আব্বু হঠাৎ রেগে গেলো। আর বড় আম্মুর তো রেগে যাওয়া বারণ তাই এমন অবস্থা। বিশ্বাস কর আমি বিয়ে নিয়ে বড় আব্বুকে কিছু বলিনি।
‘নিলুফা বেগম অবাক হলেন আবার চিন্তিত ও হলেন আড়াই বছর আগে পিয়াস সাহেব পরাণকে যখন ফিরিয়ে আনতে গিয়েছিল, তারপর সেখান থেকে একা ফিরে এসে, বলেছিল, নিলুফা আজ থেকে আমাদের এক সন্তান। পরশ ছাড়া আমাদের কোন সন্তান ছিলো সে কথা ভুলে যাও। আর হ্যা আমি বেঁচে থাকি আর মরে যাই। পুতুল কে আমার পরশের বউ করবে।
‘নিলুফা বেগম কারণ জিজ্ঞেস করেছিল। কিন্তু পিয়াস সাহেব শুধু বলেছিলেন,সব কথা যখন তখন বলতে নেই। কিছু কথা প্রকাশের একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে। সময় হলে আমি নিজেই তোমাকে বলবো। এখন যেটা বললাম শুধু সেই কথাটা মনে রেখো।
‘আমার কথা বিশ্বাস করছো না কেন, বড় আম্মু! আমি সত্যি বলছি।
‘বিশ্বাস কেন করবো না! বিশ্বাস করেছি। নিলুফা বেগম নিজের আঁচল দিয়ে পুতুলের চোখের অশ্রু বিন্দু মুছে দিলো।
‘সুফিয়া বেগম বললেন,তুমি ওকে এতো আদর দিও না আপা। ও দিনদিন বাঁদর তৈরি হচ্ছে। তুই ছোট মানুষ ছোট মানুষের মত থাকবি। তোর ভালো খারাপ আমরা বুঝবো। তুই কেন বলবি, আমি বিয়ে করবো না। আমাদের বলেছে, বলেছে ভাইজান কে বলার সাহস করলো কি করে?
‘আম্মু আমার কথাটা তো শোন আসলে আমি….
‘তুই একদম আমাকে আম্মু ডাকবি না।

‘ঠিক আছে খালামনি ডাকবো৷
‘ সুফিয়া বেগম রেগে গিয়ে বলেন,তোর কাছে সব কিছু দুষ্টুমি মনে হয়?
‘নিলুফা বেগম বললেন, ছোট এমন করিস না তো মেয়েটার সাথে। তোরা যা করিস, মনে হয় ওর বয়স পনেরো নয় ত্রিশ।
‘আপা মনে আছে শ্বাশুড়ি মা বলতেন, মেয়েদের বড় হতে বয়স লাগে না, পরিস্থিতি তাদের বড় করে দেয়। নয়তো তেরো বছর বয়সে এই সংসারের হাল ধরে পঞ্চাশ বছর পার করতে পারতাম না।
‘দেখ ছোট তোর কথায় তোর উত্তর লুকিয়ে আছে। পুতুলের সে পরিস্থিতি নেই। হুট করে ওর উপর পাহাড় চাপিয়ে দিলে পাহাড়ের নিচে চাপা পরে ও নিঃশেষ হয়ে যাবে। তাই ওকে সময় দে বোঝার, ও বুঝবে।

*ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছে তিনজন। পরাণ, পরশ আর পলাশ সাহেব৷
‘ডাক্তার আব্দুল হালিম’ বললেন,আপনাদের আগেই বলেছি, উনি এখন ক্যান্সারের লাস্ট স্টেজে আছে। তাই কোন বিষয় নিয়ে ওনাকে উত্তেজিত বা চিন্তিত করবেন না। ওনার হার্টের সমস্যা ও আছে। তাই যদি কয়েকটা দিন তাকে বাচিয়ে রাখতে চান, তাহলে ওনাকে রিলাক্স রাখুন৷ আর বাসার পরিবেশ একদম স্বাভাবিক রাখুন। আমার কাছে এই একটা চিকিৎসা আছে ওনার জন্য। বাকি নয়তো হসপিটালে ভর্তি করে রেখে যান। যে ক’দিন বাঁচে ডাক্তার আর নার্সরা দেখে নেবে।
‘নাহহ ভাই জানকে আগামীকাল সকালেই বাসায় নিয়ে যাবো। তারপর যা বলেছেন সেরকম ভাবেই রাখবো।

‘যে কেন সময় যে কোন কিছু ঘটে যেতে পারে।
‘ধন্যবাদ স্যার।

‘তিন চাচা ভাতিজা বাহিরে আসলো, একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে তিনজন।
পলাশ সাহেব বললেন,পরশ তোমার বাবার শেষ ইচ্ছে হলো তোমার আর পুতুলের বিয়ে। আমি চাই এটাতে আর বিলম্ব না করতে। তোমার মতামত কি?
‘চাচ্চু তোমরা যা ভালো মনে করবে সেটাই। বাবার সুস্থতা আগে ম্যাটার করে।
‘পলাশ সাহেব বললেন,পরাণ তোমার কি কিছু বলার আছে?
‘বলার থাকলেও তোমরা সে-সব শুনবে না। তোমরা সেটাই করবে যেটা তোমরা ডিসাইড করে রেখেছো। তাহলে আমাকে জিজ্ঞেস করার মানে কি?
‘বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়, সেই ভদ্রতা কি ভুলে গেছো?
‘সরি চাচ্চু আমি ওইভাবে বলতে চাইনি। তবে আমি আর কে তোমাদের? আমি ভিনদেশী। এসেছি আবার চলে যাবো।তোমাদের সব তো পরশ। ও সারাজীবন তোমাদের পেলো ভবিষ্যতে পুতুলকে বিয়ে করে পুরো রাজত্ব পাবে।
‘তুমি কি বলতে চাও সরাসরি বলো?
‘যদি বলি পুতুলকে আমি বিয়ে করতে চাই তো?
‘তাহলে ভেবে দেখবো,বিষয়টি। তুমি আর পরশ তো,ভিন্ন না।
‘এটাই তো ভেবে দেখতে হবে আমার বেলায়!
‘পরশ বললো,ভাইয়া তুই চাইলে পুতুলের বিয়ে তোর সাথে হবে। চাচ্চু তোমার কোন আপত্তি আছে?
‘নাহহ পরশ, তোমার আপত্তি না থাকলে আমারও নেই৷


বাসায় ফিরে যে যার মত রুমে চলে আসলো,পুতুল নিজের ডায়েরিতে কিছু লিখছিলো।
‘জুলিয়া এসে বলে,এই পুতুল বলতো আমার আর পরাণ ভাইয়ার জোড়ি কেমন হবে?
‘পুতুল অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে,একদিনে তোমরা প্রেমও করে ফেলছো? কিন্তু কখন করলা প্রেম!
‘তোর মাথায় সমস্যা আছে পুতুল। পরশ ভাইয়ার ডাক্তার হওয়া উচিৎ ছিলো। তোরমত পাগলের সাথে বেচারা সারাজীবন কিভাবে কাটাবে?
‘সমস্যা নেই তোমার পরাণ তো ডাক্তার তোমার মত পাগলি কে ঠিক সামলে নিতে পারবে।
‘আমি পাগলি?
‘দেখছো তুমিই পাগলি। কারণ পাগল কে পাগল বললে চেতে যায়। বাইদা ওয়ে পরশ ভাইয়া কিন্তু পারণ ভাইয়ার থেকে একটু বেশি কিউট। সবাই তো বলবে, পুতুল তুই জিতছিস। হায় ভাবতেই লজ্জা লাগে?
‘জুলিয়া বলে,বেশি কথা বললে,হিন্দি সিরিয়ালের মত, তোকে অজ্ঞান করে পরশ ভাইকে আমি জামাই করে নেবো।
‘যদি এটা করতে পারো, তাহলে তুমি যা চাও তাই আমি তোমাকে দেবো। আর না পারলে আমি যা চাই দিতে হবে কিন্তু?

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here