তোর পরশে প্রেম পর্ব ১৯

0
105

#তোর_পরশে_প্রেম
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৯( শুভ বিবাহ)

সন্ধ্যার আবছা আলোয় হেলে দুলে হাঁটছে এক কিশোরী। হাত ভর্তি লাল গোলাপ, মাথায় তাজা ফুলের ক্রাউন,পরনে লাল রঙা ড্রেস, মুখশ্রী জুড়ে রয়েছে স্নিগ্ধ হাসি। মুগ্ধ নেত্রে চেয়ে আছে এক যুবক,প্রেয়সীর রুপে আর চাঞ্চল্যের প্রেমে পরছে বারংবার। সেই কবে কখন কিভাবে এই বাচ্চা মেয়ের প্রেমে পরেছিল তা স্বরণ নেই! আজ শুধু দেখতে পাচ্ছে সেই বাচ্চা প্রেয়সী কিভাবে মনমোহিনী রুপে ধরা দিচ্ছে।

পুতুল দৌড়ে এসে বলে,আমরা আজ এখানে থেকে যাবো?
‘তোর ইচ্ছে করছে?তাহলে হানিমুন সেরে ফেলি কি বলিস?
তুমি আমাকে বিয়ে কবে করলে?
‘পরশ পুতুলের হাত ধরে বলে,চল আরো একবার বিয়েটা করে ফেলি । এবার তুই কবুল বলবি আমিও কবুল বলবো। মনের লেনাদেনা তো সেই কবেই শেষ এবার না হয় পুরোপুরি আমার করে দিবি নিজেকে।
‘কি বলছো? বাবা, আম্মু, বড় আম্মু সবাইকে বলতে হবে না?
‘তুই কি জানিস তুই নিজের অজান্তে আমার নামে নিজেকে সেই কবেই উৎসর্গ করেছিস?তুই আমার দলিল করা সম্পদ একাদম আমার নিজস্ব সম্পদ। তুই নিজেই নিজেকে লিখে দিয়েছিস আমার নামে।
‘কি বলো কবে কখন?
‘পরশ পুতুলের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলে,মিসেস আহসান আহমেদ পরশ হ্যাপি ম্যারেজ ডে। বাকি জীবনটা আমার সাথে কাটাবেন ম্যাম? তিন বছর আগে আজকের এইদিনে কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করেননি, করেছিলেন ম্যারেজ পেপারে।
‘পুতুল বোকার মত তাকিয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর সব ভুলে জড়িয়ে ধরলো পরশকে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে, আগে বলোনি কেন?
‘তুই কি তখন এই শান্ত পুতুল ছিলি? তুই ছিলি অশান্ত পুতুল।
পুতুল পরশকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,আমি কিভাবে ভুল করতে পারি? আমি কেন বুঝলাম না আমার পরশ যে আমাকে কারো সামনে অশালীন ভাবে চলতে দিতো না।সে কি আমাকে অন্যকারো হতে দিবে!আমার নিজের বোকামির জন্য আফসোস হচ্ছে ভাইয়া।
‘পরশ পুতুলকে ছেড়ে দিয়ে বলে,দিলি তো রোমান্সে বা’হাত ঢুকিয়ে! এই মূহুর্তে তোর ভাইয়া বলতে ইচ্ছে হলো?
‘সরি অভ্যেস তো তাই।
‘এবার তাড়াতাড়ি গালে চুমু দে গলা জড়িয়ে বল লাভ ইউ ডিয়ার হ্যাসবেন্ড।
‘বিয়ে করেছো চুরি করে আমাকে বোকা বানিয়ে। ঠিকঠাক বিয়ে করো ঠিকঠাক আদর পাবে।
‘তবে রে

‘দেখো আমি কিন্তু চিৎকার করবো। আর কত চুমু লাগে তোমার? নিজেকে ইমরান হাশিম মনে করো নাকি?কথায় কথায় চুমু!
‘প্রসঙ্গ যখন আসবে তোমার ঠোঁটে চুমু খাওয়ার, তখন আমি ইমারন হাশমীর বড় ভাই।
‘ছিহহহ লুচু
‘লুচু হয়েছি আমি তোমারি ঠোঁটের কারনে কি শাস্তি দেবো বলো?
‘বাসায় যাবো চলো তাড়াতাড়ি।
‘উঁহু আজ কবুল বলবি তারপর নিবো।
‘কবুল বকুল কবুল৷
‘পরশ পুতুলের বাহু ধরে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসলো। পুতুলের চোখে চোখ রেখে বলে,তোমাকে পেয়েও হারিয়েছি আর হারাতে চাইনা।এখান থেকে বাসায় গেলে আমার বউ হয়েই আমার হাত ধরে যাবে।
‘পরশের তুমি ডাক শুনলেই পুতুল কেমন এলোমেলো হয়ে যায়। নিজেকে শান্ত রেখে বলে,আমাদের কাবিন তো হয়েই গেছে সে হিসেবে আমি তো তোমার বউ তিন বছর ধরে।
‘সেটা শুধু আমি আর ছোট চাচ্চু জানি। কিন্তু এবার আমি সবাইকে জানাতে চাই। আর ইসলামি রীতিতে বিয়েটা করে তোকে একবারে আমার করে নিতে চাই। পুতুলের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,যাতে তুই বলতে পারিস #তোর_পরশে_প্রেম। তোমার মন থেকে পুরো শরীর জুড়ে আমার পরশ একে দিতে চাই।জ্বালিয়ে দিতে চাই ভালোবাসার আগুনে। তুমিও রেডি হও সে দহনের লেলিহান দাবানলে নিজেকে উজার করে দিতে।
‘পুতুল পরশের হাত খামছে ধরলো।
‘এখনি এই অবস্থা তাহলে……
পুতুল দ্রুত গতিতে হেঁটে গাড়িতে যেয়ে বসলো৷
পরশও এসে বসে ড্রাইভার করা শুরু করলো। প্রায় দুই ঘন্টা পর একটা বিশাল বড় মসজিদের সামনে থামালো গাড়ী৷

‘পরশ পুতুলের দিকে তাকিয়ে বলে,সুন্দর করে মাথায় ওড়না পর।

‘সবাইকে ছাড়া এভাবে বিয়ে করা কি ঠিক হবে?
‘তুই আমার বউ আর বউকে বিয়ে করতে কাউকে লাগে নাকি!
পুতুল বের হলো গাড়ী থেকে। তাকিয়ে দেখে সেখানে তার বড় আম্মু, আম্মু, তার বাবা,পরাণ আর পরশের কিছু বন্ধুরা। পুতুল লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখলো।
কাল বিলম্ব না করে বিয়ে সম্পন্ন করলো।
সবাই পুতুল আর পরশকে উইশ করছে।
নিলুফা বেগম বললেন, ধুমধাম করে অনুষ্ঠান করে আমার বউমাকে ঘরে তুলতাম৷ পাগল ছেলেটা সে সুযোগ দিলো না। মনে হচ্ছে ওর বউকে কেউ চুরি করে নিয়ে যাবে।
সবাই মিলে একটা রেস্টুরেন্টে বসে রাতের ডিনার করল।সবাই বেশ আনন্দিত।

পরশ পুতুলকে রেখে সবাই চলে গেলো। পরশ পুতুলকে বলে,মিসেস পরশ আপনার অনুভূতি কেমন?
‘অনুভব করতে দিলে তো অনুভূতি বলবো? কি হলো এটা সত্যি নাকি স্বপ্ন সেটা ভাবতে ভাবতেই আমার মাথা হ্যাং।
‘তোর মাথায় শুধু আমাকে নিয়ে ভাববি আর আমার কথাই চিন্তা করবি। এবার চল বাসায় যাবো।
‘নাহহহ আমি বাসায় যাবো না।
‘পুতুলকে কোলে তুলে বলে,তুই যাবিনা আমার বউকে নিয়ে আমি যাবো।
‘নামাও সবাই দেখছে!
‘দেখলে দেখুক তাতে কি!নিজের বউকে কোলে নিয়েছি অন্যের বউকে না৷

🌿পরাণ আর পরশের বন্ধুরা মিলে বাসর ঘর সাজাচ্ছে। জুলিয়া বলে,এখানে কি হচ্ছে? কার বিয়ে?
‘পরশের এক বন্ধু বলে,আপনি কে?
‘আমি এ বাড়ির বড় বউ।
‘তাহলে তো আপনার জানার কথা এখানে কি হচ্ছে!
‘আরেকজন বললো,ভাবি হয়তো মজা করছে।তাই না ভাবি?
‘পরাণ বললো,তুমি ওদের জন্য নাস্তা রেডি করো আমি আসছি৷
‘জুলিয়া কিছু বলতে যেয়েও চুপ হয়ে গেলো৷ রুম থেকে বের হয়ে কাজের মেয়েকে নাস্তা বানাতে বলে নিজের রুমে চলে আসলো৷ মনে, মনে বলছে সবাই আমাকে কেমন একলা করে দিলো!আমি সব কেড়ে নিতে যেয়ে নিজেই নিঃস্ব হলাম।
‘পরাণ জুলিয়ার পাশেই বসলো একটু দূরত্ব রেখে। আজ পরশ আর পুতুলের বিয়ে হয়েছে। তাই ওদের জন্য সামান্য আয়োজন।
‘বাহহ আর এই কথাটা কেউ আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলো না?
‘সেই অধিকার তুমি নিজ হাতে নষ্ট করেছো৷
‘আমি আর আপনাদের সুখে কাটা হবো না। আজ এক্ষুনি চলে যাবো। বলেই লাগেজে কাপড় রাখা শুরু করলো।
‘পরাণ এসে জুলিয়া হাত ধরলো।তোমাকে আমি আটকাবো না,আমার সেই অধিকারও নেই! তবে আর কয়েকটা দিন পরে যাও। আমি চলে যাওয়ার পর কেউ তোমাকে আটকাবে না। এতোদিন পর বাড়িতে একটু আনন্দ এসেছে এটাকে নষ্ট করো না। তোমার কাছে অনুরোধ করছি আর কিছুদিন সহ্য করো।
‘জুলিয়া হুট করে পরাণ কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। কিছু সময় পর কান্না জড়ানো কন্ঠে বলে,আমাকে ছেড়ে যাবেন না প্লিজ আপনি চলে গেলে আমি একা হয়ে যাবো। আমাকে একটা সুযোগ দিন আমি নিজেকে সুধরে নেবো।নিজের লোভ আর হিংসের কারণে আজ আমি সর্বহারা হওয়ার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। একটা সুযোগ দিন আমাকে।
‘পরাণ
জুলিয়ার কপালে চুমু দিয়ে বলে,”চলে যেতে চাইলে যাও..
আমি তোমাকে আটকাবো না!
তবে থাকতে হলে এক বিন্দু ও তোমার ভাগ কাউকে দেবো না।
তোমার, রাগ সহ্য করতে করতে কবে কখন তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি জানা নেই।তোমাকে স্বাগতম আমার হৃদয়ে।
তবে শর্ত হলো সারাজীবন থাকতে হবে।
‘জুলিয়া নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। মানুষটা এতো ভালো! এতোকিছু জানার পরেও তাকে ক্ষমা করে দিলো।জুলিয়া আস্তে করে বলে,আমরা আমাদের অতীতকে বিসর্জন দিলাম। আমরা দু’জন মিলে অন্য রকম এক ভবিষ্যত গড়বো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here