তোর পরশে প্রেম পর্ব ১৩

0
101

#তোর_পরশে_প্রেম
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৩(অবশেষে দেখা হলো)

“আপনার সাথে অবশেষে দেখা হয়েই গেলো মিস পুতুল।
‘আমরা তো একি দেশে ছিলাম শুধু পার্থক্য ছিলো জেলার। তাহলে দেখা হওয়াটা কি অস্বাভাবিক?
‘আপনার সাথে আমার কোন পার্সোনাল আলাপ নেই৷
‘আমার তো পার্সোনাল,প্রফেশনাল কোন আলাপই নেই। আপনি আপনার রাস্তা ধরুণ আমি আমার রাস্তা।
‘একটা কথার উত্তর দিন চলে যাচ্ছি।
‘কয়েকদিন পর আমার ভর্তি পরিক্ষা ভিষণ ব্যস্ত,যা বলার অন্য কোন সময় বলবেন।
‘পরশ পুতুলের দুই বাহু চেপে ধরে বলে,তোর মত মেয়ের সাথে দ্বিতীয়বার কথা বলা তো দূর তোর চেহারা দেখারও ইচ্ছে নেই। আমার কথার উত্তর দে।
‘পরশ ভাই ছাড়ো আমার লাগছে।
‘লাগুক তোরজন্য এরচেয়ে বেশি লেগেছে আমাদের।
আমার বাবাকে হত্যা করার কারণ বল?আমাকে খুনি কেন বানিয়েছিস সেই কৈফিয়ত দে।
‘পুতুল অস্থির হয়ে বলে, বড় আব্বুর কি হয়েছে৷ আমার বড় আব্বু ঠিক আছে তো?কথা কেন বলছো না কথা বলো৷
‘পরশ পুতুলকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো, পুতুল পরে যাবে তার আগেই নিরব তাকে আগলে নেয়।
পুতুল নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়।

নিরব এসে পরশের কলার ধরে বলে,তোর সাহস কি করে হলো আমার পুতুলের শরীর স্পর্শ করার?
‘পরশ নিরবের হাত থেকে কলার ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,তোর সাথে আমার কোন কথা নেই৷ আর অন্যের বউকে আমার পুতুল কি করে বলছিস? আর মনে রাখিস আমার আর ওর মাঝে আমি কাউকে চাইনা।
পুতুল আবার পরশের কাছে এসে বলে,তোমার যত রাগ আছে সব সহ্য করবো,শুধু বলো, আমার বড় আব্বু কেমন আছে? বড় আব্বু ঠিক আছে তো?
‘পরশ পুতুলের বাহু জোড়ে চেপে ধরে বলে,এই নাটক অন্য কাউকে দেখা আমার সামনে এই সব নাটক করে লাভ নেই৷ আমার বাবার মৃত্যুর জন্য তুই দায়ী, আমার পরিবার ভেঙে দেয়ার জন্য তুই দায়ী। তিনদিনের মধ্যে তোকে আমি বেপারী ম্যানশনে দেখতে চাই। পুরান না নতুন ম্যানশন। তোর সাথে সব সম্পর্ক সেদিন শেষ হবে।
‘নিরব কিছু বলবে পুতুল চোখ দিয়ে ইশারা করে মানা করে দিচ্ছে।
পরশ নিজের বাইক নিয়ে চলে গেলো। মূহুর্তেই পুতুলের দৃষ্টির বাহিরে।পুতুল সেখানেই বসে পরলো। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। তার বড় আব্বু আর নেই! এই কথাটা সত্যি কি করে হতে পারে? শাওন যে বলল অন্য কথা। তাহলে কি শাওন আমাকে মিথ্যে বলেছে?
নিরব পুতুলের কাছে এসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে, পুতুল নিজেকে ভেঙ্গে ফেলার জন্য গড়োনি। উঠে এসো।
‘কতবার বলেছি আমার থেকে দূরে থাকুন। আমি নিজেকে নিজে সামলে নিতে পারবো।

“পুতুল বাসায় এসে নিজের প্রয়োজনীয় সব গুছিয়ে নিয়ে হল রুমে আসলো।মাহমুদ সাহেব আর রাবেয়া বেগম সেখানে বসা ছিলো৷ পুতুল তাদের সামনে এসে নম্র স্বরে বলে,আঙ্কেল, আন্টি তোমরা না থাকলে হয়ত আমি নিজের বাসা ছেড়ে এসে এতো ভালো থাকতে পারতাম না৷ তোমাদের ভালোবাসার
ঋণ কখনো শোধ করতে পারবো না৷ আজ আমাকে ফিরতেই হবে। জানিনা ফিরে আসা হবে কি না। তবে আমি সব সময় তোমাদের সাথে যোগাযোগ রাখবো।
‘মাহমুদ সাহেব বলেন,আমি তো তোকে আগেই বলেছিলাম একবার সবার সাথে দেখা করে আয়। তোর বাসা তোর তো সেখানে ফিরতেই হবে।এই বাসায় তো ছিলি অতিথি পাখির মত। তোর তো নীড়ে ফিরতেই হতো।
পুতুল মাহমুদ সাহেবকে জড়িয়ে ধরলেন। মাহমুদ সাহেব পুতুলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,এটাও নিজর বাড়ি মনে করবি,কোন সমস্যা হলে তোর এই বাবার দরজা সব সময় তোর জন্য খোলা।
‘রাবেয়া বেগম খানিকটা দূরে সরে যেয়ে বলেন,চলেই যখন যাবে তখন আর ফর্মালিটি করার কি আছে?
যাচ্ছো যাও। তবে যদি পারো আমার ছেলের জন্য হলেও ফিরে এসো।
‘আন্টি আমি ফিরলে তোমাদের জন্য ফিরবো৷
‘নিরব পুতুলের সামনে এসে বলে,তুমি তো আগে বলোনি তুমি বিবাহিতা। তাহলে আজ ওই ছেলেটা কেন বলল তুমি অন্যকারো স্ত্রী?
‘সেই প্রশ্নর উত্তর আমারও অজানা। তবেসেই কৈফিয়ত আমি আপনাকে দেবো না৷ রাস্তা ছাড়ুন যেতে দিন আমাকে।
‘নিরব হাঁটু গেড়ে বসে পরে পুতুলের সামনে,হাত জোড় করে বলে,প্লিজ আমাকে তোমার সাথে নিয়ে চলো।আমি তোমাকে ছাড়া কি করে থাকবো?
‘দেখুন আমি আপনাকে সহস্রবার বলেছি,আমার জীবনে কোন প্রেম, ভালোবাসার জায়গা নেই।
‘কোনটাই দিতে হবে না,শুধু সারাজীবন তোমার পাশে থাকার অধিকার দাও। নয়তো তোমাকে আমি যেতে দেবো না।
‘মাহমুদ সাহেব একহাতে পুতুলের ব্যাগ অপর হাত দিয়ে পুতুলের হাত ধরে বলে,চল তোকে আমি এগিয়ে দিয়ে আসবো। দেখি কে আটকায়?
‘পুতুল আর মাহমুদ সাহেব বাসস্ট্যান্ডে আসলো, মাহমুদ সাহেব পুতুলকে বললেন,তোর যখন প্রয়োজন হবে তখনই আমাকে স্বরণ করবি।তোর এই বাবা সব সময় তোর পাশে আছে৷
‘পুতুল বাসে উঠে বসলো৷ পুতুলের অনেক কান্না পাচ্ছে। সাথে রয়েছে মনের মধ্যে হাজার হাজার প্রশ্ন। মনে পরলো তিন বছর আগের কিছু স্মৃতি…….
দু’দিন পর পুতুল ফিরে যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে, তখন শাওন এসে বলে,তোর ফ্যামিলি তোকে তেজ্য করেছে। এমনকি কিছু অডিও ক্লিপসও শোনায় পুতুলকে। পুতুল যখন জিজ্ঞেস করে তার বড় আব্বুর কথা তখন শাওন বলে,সেও তোর মুখ দেখতে চায় না, সবাই তোকে ত্যাগ করেছে৷
মাঝে মাঝে তবুও শাওনের কাছ থেকে সবার খোঁজ নিতো। কিন্তু শাওন বলত সবাই তোকে ছাড়া ভালো আছে। এখানে কারোর তোর কোন চিন্তা নেই। যদি চিন্তা থাকতো তাহলে তারা তোকে খুঁজে বের করতোই৷ তাদের আর তোকে প্রয়োজন নেই। পুতুল চোখের কোণে থাকা জলটুকু মুছে নিলো। সব সত্যির মুখোমুখি থাকে হতে হবে। কে সত্যি বলছে আর কে মিথ্যে সেটা তাকে জানতেই হবে।

সুফিয়া বেগম জানালার পাশ ঘেসে বসে আছেন,হঠাৎ চোখ এক অর্ধ বয়স্ক একজোড়া কাপলদের দিকে পড়ল, একজন আরেকজনের হাত ধরে হাঁটছেন৷সুফিয়া বেগম দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লেন। মনে মনে ভাবলেন,আমার,তোমার এমন মূহুর্তের সময় এখন। আজ তুমি আমার পাশে নেই! “আমি আর আমার মেয়ে কোনদিন তোমার কাছে ইম্পর্ট্যান্ট ছিলাম না। চলে এসেছি ঠিকি কিন্তু ভুলে যেতে পারছিনা।আমার তীলে তীলে আর শখে গড়া সংসার তোমার কারণে ছেড়ে এসেছি। আমাকে না পারলে আমার সংসার ফিরিয়ে দিতে,আর না পারলে আমার মেয়েটাকে ফিরিয়ে দিতে। এমন সময় খেয়াল করলেন, পরশের মত কেউ একজন তার বাসায় ঢুকেছে।দ্রুত উঠে বসার রুমে আসলেন। কিছুক্ষণ পর পরশ তার সামনে উপস্থিত। রাগী কন্ঠে বললেন, কি চাই এখানে?আমার আর কিছু কেড়ে নেয়া বাকি আছে নাকি?
‘ছোট আম্মু আমি বা আমরা কখনো তোসার থেকে কিছু কেড়ে নিতে চাইনি।তবে আজ তোমাকে ফিরিয়ে দিতে এসেছি।
‘তিন বছর পর আর কি ফিরিয়ে দিবে? পারলে আমার তিন বছরের সংসার ফেরত দাও নয়তো আমার মেয়েটাকে ফেরত দাও। তিন বছর ধরে যে যন্ত্রণা বয়ে বেড়চ্ছি তা থেকে মুক্তি দাও।
” যার জন্য তুমি আমি আমরা সবাই দিনের পর দিন কষ্ট পেয়েছি, সে কিন্তু দিব্বি ভালো আছে। এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম তিনটা বছর ধরে। বহুল অপেক্ষিত সেই দিনটা অবশেষে চলে এসেছে। আমার সাথে চলো আমি তোমাকে তোমার প্রশ্নের উত্তরের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেবো,তুমি উত্তর চেয়ে নিও।
‘আমার পুতুল ঠিক আছে! কোথায় আছে আমাকে এক্ষুনি নিয়ে চল।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here