তোমার_তুমিতেই_আমার_প্রাপ্তি লেখক-এ রহমান পর্ব ৭

0
1213

#তোমার_তুমিতেই_আমার_প্রাপ্তি
লেখক-এ রহমান
পর্ব ৭

কলকাতা থেকে মেডিকেল টিম এসেছে। অনেক রেয়ার একটা অপারেশন হবে। ইমতিয়াজ রহমান না থাকায় সবাই খুব চিন্তিত। না জানি কি হবে। একটা বাচ্চার ব্রেন থেকে টিউমার অপসারণ করা হবে। টিউমারটার অবস্থান অনেক জটিল। তাই বাচ্চাটা বাচবে কিনা সেটা নিয়ে রয়েছে সংশয়। বাচ্চাটার নাম সুহা। কিছুক্ষনের মধ্যেই তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হবে। সবাই তার সাথে দেখা করছে। সুহার পরিবারের লোকজন তার কাছেই আছে। ইভান তাকে শেষ বারের মতো চেকাপ করছে। ঈশা পাশে দাড়িয়ে আছে। ইভান নিজের কাজ শেষ করে উঠতে যাবে তখনই সুহা ক্লান্ত সরে বলল
–ভাইয়া ঠিক হয়ে যাব তো?

ইভান থমকে গেলো। আবার ভালো করে বসে পড়লো। করুন চোখে তাকাল। মেয়েটা তার উত্তরের অপেক্ষা করছে। কিন্তু ইভানের কাছে উত্তর নেই। সে জানেনা এর ভবিষ্যৎ কি? সে বাচবে কি মরে যাবে? আর বাচলেও সারাজীবনে স্বাভাবিক জিবনে ফিরতে পারবে কিনা? ইভানের অবস্থা বুঝতে পেরে ঈশা এগিয়ে গিয়ে বলল
–কেন হবে না? অবশ্যই হবে। তুমি তো অনেক স্ট্রং! তাই না।

সুহা ক্লান্ত মুখে হাসির রেশ টেনে কিছু বলতে জেয়েও থেমে গেলো। ঈশা ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।

ইভান চোখ তুলে ঈশার দিকে তাকাল। ইভানের সেই চাহুনি ঈশাকে নাড়িয়ে দিলো। এতোটা অসহায়ত্ব! ইভান তো অসহায় নয়। এমন কি ঈশার ধারনা মতে তাকে কারও কোন অনুভুতিই ছুঁতে পারেনা। সে তো স্বার্থপর। সবার আগে নিজের স্বার্থের কথা ভাবে। তাহলে আজ এই মানুষটা এমন করে কেন তাকাল তার দিকে। যে মানুষটা শুধু মুখেই বলে ভালবাসি কিন্তু ভালবাসার কোন অর্থই বুঝে না। সেই মানুষটার চোখেও আজ পানি। ইভান বরাবরই কঠিন। কিন্তু আজ তো তার আচরন সম্পূর্ণ বিপরিত। তাহলে কি ঈশা তাকে ভুল বুঝেছিল? ঈশার ভাবনার মাঝেই মেঘলা এসে ইভানের ঘাড়ে হাত রাখল। ইভান চমকে তাকাল। মেঘলা ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–সব রেডি।

ইভান সুহার দিকে তাকাল। মাথায় হাত দিয়ে আদর করে দিয়ে কপালে ঠোট ছুয়ে দিয়ে হাসল। সুহাও ম্লান হাসল। ইভান উঠে গেলো। সুহার পরিবারের লোকজনের সামনা সামনি হতেই চোখ নামিয়ে নিলো ইভান। সে জানেনা তাদের কি বলে শান্তনা দিবে। জতক্ষন এই অপারেশন শেষ হয়ে সুহার জ্ঞান না ফিরছে ততক্ষণ ইভান কিছুই বলতে পারবে না। ইভান নত দৃষ্টিতে বের হয়ে চলে গেলো। ঈশা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আজ নতুন এক ইভানের সাথে পরিচয় হল তার। ছোটবেলা থেকে সে ইভান কে অনেক ভয় পেত। কারন সে তাকে খুব শাসন করতো। একটু বড় হলে বুঝতে পারল ইভান অনেক কড়া ধাঁচের মানুষ। খুব স্ট্রিক্ট! যা বলে তাই করে। কিন্তু কিছুদিন আগে তার সমস্ত ধারনা বদলে যায়। ইভানের আসল রুপ বুঝে যায় সে। ইভান যে একটা স্বার্থপর ছেলে সেটা খুব ভালো ভাবে জানা হয়ে যায় তার। তাকে কারও অনুভুতি কষ্ট ভাললাগা এসব কিছুই স্পর্শ করতে পারেনা। সে নিজেকে ছাড়া আর কাউকে বোঝেনা। কিন্তু আজ ইভান আর সেরকম নয়। একদম আলাদা। তাহলে কি ঈশার ধারনা ভুল ছিল। নাকি সে শুধু মাত্র ঈশার সাথেই এরকম। আর সেটা যদি হয়েও থাকে তাহলে ঈশার সাথে এরকম হওয়ার কারন টা কি? ঈশার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। ঈশাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ইভান তার সামনে দাড়িয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বলল
–আর দেরি করার মতো সময় নেই।

ঈশা মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো। সব কিছু ঠিক করে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তারা অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে গেলো। কলকাতার ডক্টরের টিম আছে। তাদের সাথে থাকবে ইভান। ঈশা ,মেঘলা, ইফতিও থাকবে সেখানে। সবাই খুব চিন্তিত। এই অপারেশনটা সাক্সেস হলেও কতোটুকু হবে তা নিয়েই তাদের চিন্তার শেষ নেই। কারন এই ছোট মেয়েটা যেদিন এসে হসপিটালে ভর্তি হয়েছিলো সেদিন থেকেই ঈশা আর ইভানের সাথে খুব ভালো সম্পর্ক তৈরি করে ফেলেছিল। বেশ মায়াবী মেয়েটা। শুধু তাদের প্রফেশন নিয়ে প্রশ্ন না। এখানে ইমোশনও জড়িয়ে আছে। সবটা মিলে বিষয়টা অনেক ক্রিটিক্যাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

————
দীর্ঘ ৮ ঘণ্টা অপারেশনের পর সাক্সেস হয়ে তারা বের হল। সবার মুখেই মোটামুটি হাসি। কিন্তু এখনো টেনশনটা তেমন কমেনি। সুহার জ্ঞান ফিরলে তবেই সব স্পষ্ট হবে। সবাই ভীষণ টায়ার্ড। ইভান বারান্দায় এক পাশে দাড়িয়ে ইমতিয়াজ রহমানকে ফোন করলো।
–হ্যালো আব্বু!

–ইভান অপারেশন কেমন হল?

–সব কিছু ঠিক মতই হয়েছে আব্বু। আমি ভাবতে পারিনি এতো সহজে সব কিছু হয়ে যাবে।

ইমতিয়াজ রহমান ছেলের গলার আওয়াজ শুনেই বুঝে গেলো সে খুব উতফুল্য। সব কিছু ঠিক ঠাক মতো হওয়াতে খুব খুশি। এই প্রথম এতো বড় কিছুর দায়িত্ব তিনি ছেলের উপরে দিয়ে এসেছেন। আর একদম নিশ্চিন্ত ভাবে। কারন তিনি জানেন ইভান রেস্পন্সিবল ছেলে। সে সারাজীবন তার দায়িত্ব ভালো করে পালন করে এসেছে। কখনও কারও ক্ষতি করেনি বা চায়নি। তাই তার ছেলের উপরে পূর্ণ ভরসা ছিল। তিনি হাসলেন। তারপর খুব স্বাভাবিক ভাবেই বললেন
–আমি জানতাম। তুমি তোমার দায়িত্ব খুব ভালভাবে পালন করবে। তুমি কোনদিন অন্যায় করনি তাই সৃষ্টি কর্তাও তোমার সাথে অন্যায় করবে না। আই এম প্রাউড অফ ইউ মাই সান।

ইভান চুপ হয়ে গেলো। কিছু একটা ভাবছে। ইমতিয়াজ রহমান ছেলেকে চুপ করে থাকতে দেখে বললেন
–কি হল ইভান? কোন সমস্যা?

ইভান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
–কিছু না আব্বু।

ইমতিয়াজ রহমান ছেলের মনের কথা বুঝে গেলেন। সে কি ভাবছে সেটাও তিনি ভালো করেই বুঝতে পারলেন। কারন তিনি সবটা জানেন। ছেলেকে শান্তনা দিতে তিনি বললেন
–আমি জানি তুমি কি ভাবছ। কিন্তু ভেবে কোন কুল পাবে না ইভান। তুমি তো ভালো করেই জানো যে তুমি কোন অন্যায় করনি তাহলে তোমার মাঝে কেন এই অপরাধ বোধ? এটা তো অন্য কারও হওয়ার কথা ছিল।

বাবার কথা শুনে ইভান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
–কিন্তু সে তো ভাবে আমি তাকে জোর করে ধরে রেখেছি। কিন্তু আমি তো এমনটা করতে চাইনি আব্বু। আমি তো তার সুখের জন্যই সব কিছু করেছি। আমি তো তাকে আটকে রাখতে চাইনা আমার জিবনে।

–তাহলে মুক্ত করে দাও।

বাবার কথা শুনে ইভান অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। বুঝতে না পেরে বলল
–মানে?

–মানেটা খুব সহজ। তোমার মনে হচ্ছে তুমি তার সাথে অন্যায় করছ। তাকে জোর করে তোমার জীবনের সাথে আটকে রেখেছ। যার কারনে সে তোমাকে অপরাধী ভাবছে। আর এর দায় ভার তুমি নিতে পারছ না। তাহলে এই মান অভিমানের সম্পর্কের কোন মুল্য নেই ইভান। না তুমি ভালো থাকতে পারবে না সে ভালো থাকতে পারবে। তুমি ভালো না থাকলেও অন্তত তাকে ভালো থাকতে দাও।

ইমতিয়াজ রহমানের কথা গুলো ইভান কিছু সময় ভাবল। তারপর একটু হেসে বলল
–তুমি ঠিক বলেছ আব্বু। তার খুশিতেই আমার সুখ। আমি বুঝতে পেরেছি আমাকে কি করতে হবে।

ইমতিয়াজ রহমান ছেলেকে সলুশন তো দিলেন ঠিকই কিন্তু এবার নিজেই হতাশ হয়ে পড়লেন। ছেলের অবস্থা দেখে। তিনি তার ছেলেকে ভালো করেই জানেন। কষ্টে ভেতর ফেটে গেলেও মুখে বলবে সে ভালো আছে। তাই তিনি অসহায় হয়ে বললেন
–তুমি অনেক স্ট্রং ইভান।

ইভান হেসে বলল
–তুমি একদম টেনশন করনা আব্বু। আমি একদম ঠিক আছি। আচ্ছা এখন রাখছি। আমি তোমাকে পরে আবার আপডেট দিবো।

ইমতিয়াজ রহমান ফোন রেখে দিলেন।

—————-
সন্ধ্যা নামবে নামবে অবস্থা। মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে। আকাশে মেঘ জমেছে। কিছুক্ষন আগেই সুহার জ্ঞান ফিরেছে। পুরোপুরি সুস্থ না হলেও টেনশনটা আর নেই। ঈশা বাসায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইভান খুব ব্যস্ত। তাই সে ড্রাইভার কে বলেছে ঈশাকে পৌঁছে দিতে। এমন সময় ঈশার ফোন বেজে উঠলো। অপরিচিত নাম্বার দেখে ধরবে কিনা ভাবছে। ভাবতে ভাবতেই ফোনটা কেটে গেলো। ঈশা ফোনটা ব্যাগে ঢুকিয়ে রেখে রুম থেকে বের হল। গাড়িতে উঠে বসলো। কিন্তু কিছুক্ষন পর আবার বেজে উঠলো। ফোন বের করে ঈশা দেখল একি নাম্বার। না চাইতেও ধরে ফেলল ফোনটা । ফোন ধরে ‘হ্যালো’ বলতেই ওপাশ থেকে পরিচিত কণ্ঠ ভেসে আসল। ঈশা কণ্ঠটা শুনে অস্থির হয়ে গেলো। এই কণ্ঠটা কার সে সেটা ভালো করেই জানে। কিন্তু কেন? এভাবে আবার ঈশাকে ফোন করার কারন কি? নতুন আবার কোন নাটক হতে যাচ্ছে। সে কিছুই বুঝতে পারছে না। এলোমেলো চিন্তা ধারা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। শুন্য মস্তিষ্কে সব কেমন গোলমেলে লাগছে। ভেবেই কুল পাচ্ছে না কি করবে। অবশেষে কথা শেষ করে ফোনটা হাতে শক্ত করে ধরল। বড় করে শ্বাস নিয়ে ড্রাইভার কে বলল
–গাড়ি ঘুরিয়ে নাও।

ড্রাইভার পিছনে ফিরে তাকাল। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো
–বাসায় যাবেন না ম্যাম?

–নাহ!

চলবে………।

(ঈশার এরকম আচরনের মাত্রাটা জাদের কাছে বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছে তাদের জন্য বলছি। যেই ছেলেটাকে সে কোনদিনও ভালই বাসেনি সেই ছেলে তাকে সবার সামনে নিজের মুখে ভালবাসার কথা এবং তাকেই বিয়ে করার কথা স্বীকার করতে বাধ্য করেছে। অন্য ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার পরেও ঈশার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে নিজের জীবনের সাথে জড়ানোটা কি মেনে নেয়া সহজ কথা? তাহলে কি ঈশার স্বভাবতই তাকে ঘৃণা করার কথা নয় কি? তাই বলছি একটু ধৈর্য নিয়ে পড়েন। খুব তাড়াতাড়ি সব কিছু জানতে পারবেন। গল্পের প্লট সাজাতে অনেক কিছুই সামনে আনতে হয়। নাহলে গল্পটা খাপ ছাড়া হয়ে যাবে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here