তোমার_তুমিতেই_আমার_প্রাপ্তি লেখক-এ রহমান পর্ব ১৮

0
871

তোমার_তুমিতেই_আমার_প্রাপ্তি
লেখক-এ রহমান
পর্ব ১৮

–কি বলছ সেটা বুঝতে পারছ তো? তোমরা যতটা সহজ ভাবছ বিষয়টা কি আসলেই ততটা সহজ?

ইমতিয়াজ রহমান হুংকার ছেড়ে কথাটা বলতেই সবাই কেঁপে উঠলেন। মিরা তার সামনে সোফায় বসে অনবরত নাক টেনেই যাচ্ছে। তার চোখের পানি বন্ধ হবার কোন নাম নেই। ইমতিয়াজ রহমান আবারো বললেন

–আমি অবাক হচ্ছি এটা ভেবে যে ঈশা আর ইভান তোমরা এই বিষয়টাকে কিভাবে সাপোর্ট করলে? ইফতি বলল আর তোমরাও সেটা মেনে নিলে? এটা কোন গেইম না। এটা লাইফ! ভাবতে পারছ এই ইন্সিডেন্টের পরে এই মেয়ের বাবা মার কি অবস্থা? সবার কাছে কি জবাব দিবে তারা?

ঈশা ইভানের দিকে তাকাল। ভাব্লেশ হীন ভাবে বসে আছে ইমতিয়াজ রহমানের পাশে। এমন একটা ভাব যেন এখানে সেরকম কিছুই হচ্ছে না। ঈশার প্রচণ্ড রাগ হল। এই মানুষটা এরকম কেন? সব কিছু এতো সহজ ভাবে নেয়। ইমতিয়াজ রহমান একের পর এক তার বানি শুনিয়েই যাচ্ছে অথচ তার কোন গুরুত্ত নেই। সে যেন এসব শুনতেই পাচ্ছে না। ইফতি মাথা নিচু করে বসে আছে। ইমতিয়াজ রহমান নিজের মতো এক এক করে সবাইকে কথা শোনাচ্ছে। কিন্তু তার কথার উত্তরে কেউ কোন কথা বলছে না। ইমতিয়াজ রহমান আবারো বলে উঠলেন

–নিজের ভবিষ্যতের কথা না ভেবে এরকম একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে তুমি ভুল করেছ মিরা। ইফতি এখনো নিজের দায়িত্ব নিতেই পুরোপুরি রেডি না। আর তোমার টা তো দুরের কথা। তোমার এরকম একটা স্টেপ নেয়ার আগে বাবা মায়ের সাথে আলোচনা করা উচিৎ ছিল। যাই হোক। আমি এই বিষয়ে আর কথা বাড়াতে চাইছি না। আমি নিজেই তোমাকে তোমার বাসায় দিয়ে আসবো। এখনি।

কথাটা শোনা মাত্রই সবাই তার দিকে তাকাল শুধু ইভান ছাড়া। ঈশা কিছুই বলার সাহস পেলো না। অসহায়ের মতো ইভানের দিকে তাকিয়ে থাকলো। ইভান সেই তখন থেকেই তার দৃষ্টি স্থির রেখেছে মেঝেতে বিছানো সাদা টাইলসের উপরে। গভির ভাবে কিছু একটা ভাবছে। কিন্তু ঈশার এবার অসস্তি হচ্ছে। এতক্ষণে ইভানের একটা কথা তো অন্তত বলা উচিৎ ছিল। তাহলে তাকে এখানে আনার কি দরকার ছিল? এরকম পরিস্থিতি সামলাতেই তো তাকে এনেছে। কিন্তু সে যে একদম চুপ হয়ে যাবে সেটা ভাবতেই পারেনি ঈশা। এবার সকল নিরবতা ভেঙ্গে ইফতির মা মিরাকে জিজ্ঞেস করলো
–তোমার বাবার নাম কি?

–নি…নিয়াজ মোরশেদ।

মিরা কাপা কাপা গলায় কথাটা বলতেই ইমতিয়াজ রহমান বড় বড় চোখে তার দিকে তাকাল। অস্পষ্ট সরে বলল
–নিয়াজ মোরশেদ। তোমার বাড়ি কোথায়? বাবা কি করেন?

মিরা তার সম্পূর্ণ পরিচয় দিতেই ইভানের মা মুখে আচল চেপে কাঁদতে শুরু করলেন। ঈশা ইফতি কিছুই বুঝতে পারলো না। ইভান এবার নড়েচড়ে বসলো। মিরার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো বেশ কিছুক্ষন। তার দিকে তাকিয়েই শান্ত গলায় বলল
–চল মিরা। তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসি।

ঈশা তীক্ষ্ণ চোখে তাকাল। কোন সিদ্ধান্তে না আসতেই ইভান এরকম কথা কেন বলছে? যদি জোর করে মেয়েটার বিয়ে দিয়ে দেয় তাহলে? ইভান উঠে দাঁড়ালো। মিরার সামনে গিয়ে দাড়াতেই ইমতিয়াজ রহমান শান্ত গলায় বলল
–তোমার বাবা মার মতামত না নিয়ে আমরা কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারব না। তোমাকে আপাতত বাসায় দিয়ে আসাটা জরুরি। তারপর কথা হবে।

মিরা ছল ছল চোখে ইফতির দিকে একবার তাকাল। ইফতি কোন কথা বলল না। তাকে ইভান আগেই কথা বলতে নিষেধ করে দিয়েছিল। কারন সে জানত ইফতি কথা বললে হিতের বিপরিত হবে। সমাধান তো হবেই না বরং আরও বিগড়ে যাবে। মিরা ইফতির উপরে অভিমান করেই চলে গেলো। ইভান ঈশার সামনে এসে বলল
–তুইও আমার সাথে যাবি।

ঈশা কোন কথা না বলেই ইভানের সাথে চলে গেলো। নিচে গিয়ে তারা গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে। ঈশা ইভানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ইভান বুঝতে পারলো ঈশার মাথায় অনেক প্রশ্ন ঘুরছে। কিন্তু এসবের কোনটার উত্তর এখন সে দিতে চায় না। সময় হলেই সব কিছু জানতে পারবে। ঈশার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলল
–ইফতির চেয়ে দেখছি তোর টেনশন বেশী। ওর হবু বউয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। তোর হবু বর তো তোর সামনে। তাহলে এতো টেনশনের কি আছে?

ইভানের এমন হেঁয়ালিপূর্ণ কথা যেন ঈশার গায়ে আগুন জালিয়ে দিলো। বিরক্তিকর চোখে তাকিয়ে বলল
–তোমার সব সময় রঙ লেগেই থাকে না? প্রতিটা বিষয় এতো সহজ ভাবে নাও কেন?

ঈশা কথাটা শেষ করতেই ইভান একটু হেসে তাকে হাত ধরে কাছে টেনে নিতেই মিরাকে দেখে থেমে গেলো। ঈশাকে ছেড়ে দিয়ে তার দিকে তাকাল। ঈশা রাগে ফুসছে। ইভান যেন এটাতেই আরও বেশী মজা পাচ্ছে। অবশেষে গাড়ি এসে দাঁড়াল। ওরা তিনজনই গাড়িতে উঠে পড়লো। গাড়িতে বসে ঈশা হাজার প্রশ্ন করেছে কিন্তু ইভান কোনটারই উত্তর দেয়নি। ঈশা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। ইভানের এরকম আচরন তার মোটেই ভালো লাগছে না।

ঈশা ভাবতে ভাবতেই গাড়ি এসে থেমে গেলো মিরাদের বাড়ির সামনে। ইভান নেমে দরজায় দাঁড়ালো। কলিং বেল চেপে দাড়িয়ে থাকলো। কিছু সময় পর একজন মহিলা এসে দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলতেই ইভান কে দেখে জিজ্ঞেস করলো
–কাকে চাই?

–নিয়াজ সাহেব আছেন? ওনার সাথে দেখা করতে চাই।

ইভানের কথা শুনে মহিলাটা মাথা নাড়িয়ে তাকে ভিতরে আসতে বললেন। তার সাথে ঈশা আর মিরাকে ঢুকতে দেখে সবাই অবাক হল। মিরাকে দেখেই আসলে সবাই বেশী অবাক হল। গত কয়েক ঘণ্টা যাবত মিরার কোন খোজ না পেয়ে সব জায়গায় খুজে বেড়িয়েছে তার বাড়ির লোকজন। কিন্তু কোথাও পায়নি। ঈশা চারিদিকে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো। বিয়ে বাড়ির খানিক ছিটে ফোটা আছে। আয়োজন এখন থেকেই চলছিল। কিন্তু মিরার অনুপস্থিতিতে হয়তো থেমে গিয়েছিলো।
–কে?

গম্ভীর গলার আওয়াজে ঈশার ঘোর কাটে। পিছনে ঘুরে তাকায় সবাই। ইভানের ঠোটের কোনে সূক্ষ্ম হাসি। নিয়াজ সাহেব অবাক চোখে তাকালেন। অস্পষ্ট সরে বলল
–ইভান!

ইভান এক গাল হেসে বলল
–অনেকদিন পর তোমার সাথে দেখা হল। কেমন আছো?

নিয়াজ সাহেব কোন কথা বলতে পারলো না। তিনি ইভান কে দেখেই তার সমস্ত কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। পাশেই মিরাকে দেখে কৌতূহলী চোখে প্রশ্ন করলেন
–মিরা তুমি কোথায় গিয়েছিলে? আর ইভানের সাথে কি করছ?

মিরা কোন উত্তর দিলো না। সে মাথা নিচু করে চুপ করে থাকলো। ইভান মিরার হাত ধরে টেনে নিয়ে তার বাবার সামনে দাঁড়ালো। স্বাভাবিক ভাবেই বলল
–শুনলাম মেয়ের বিয়ে দিচ্ছ। একবারও মেয়ের সাথে কথা বলার প্রয়োজন মনে করনি। মেয়ে কাউকে পছন্দ করে কিনা সেটাও জানার প্রয়োজন মনে করনি। আবার কি পুরাতন ইতিহাস নতুন করে তৈরি করতে চাও মামা?

ইভানের মুখে মামা ডাক শুনে সবাই থমকে গেলো। তার মানে ইনি ইভানের সেই মামা যার সাথে এতদিন যাবত কোন সম্পর্ক ছিল না। ঈশা জানত ইভানের একটা মামা আছে কিন্তু তার সাথে কোন যোগাযোগ নেই। মিরাও বেশ অবাক হল। সেও কিছুই জানতোনা। আর নিশ্চয় ইফতিও কিছুই জানে না। কারন জানলে সে অবশ্যই মিরাকে জানাত। নিয়াজ সাহেব থমথমে গলায় বললেন
–আমার মেয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার আমার আছে। কারও কাছে এটার জন্য জবাব দিহি করতে প্রয়োজন মনে করিনা আমি।

ইভান হাসল। তাচ্ছিল্যের সরে বলল
–কারও কাছে জবাব দিহি করতে হবে না তোমাকে। কিন্তু নিজের মেয়েকে তো অন্তত জিজ্ঞেস করবে। তার এই সম্পর্কে জড়াতে কোন আপত্তি আছে কিনা? অন্য কাউকে সে পছন্দ করে কিনা সেটাও জানার কোন প্রয়োজন নেই তোমার। নাকি তোমাদের বাড়িতে মেয়েদের মতামতের কোন মুল্য দেয়া হয়না?

–তুমি কি এসব বলতে এসেছ এখানে? আমার মেয়ের ভালো মন্দ আমি বিচার করবো। তোমার কাছ থেকে এসব কথা আমি শুনতে চাই না। তুমি আমার মেয়েকে নিয়ে এসেছ অনেক ধন্যবাদ। অতিথি হিসেবে তোমাকে সম্মান করতে যা দরকার সেটাই করবো। এর বেশী কিছু না।

নিয়াজ সাহেবের কথায় ইভান রেগে গেলো। চিৎকার করে বলল
–কিসের এতো জেদ তোমার? এরকম পরিস্থিতি আগেও হয়েছে এই বাড়িতে। তোমার জেদের জন্য আবার সেই কয়েক বছর আগের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে। তুমি যে অন্যায় করছ সেটা কি বুঝতে পারছ। মিরা তোমার মেয়ে ঠিকই। কিন্তু ওর উপরে অন্যায় ভাবে কোন সিদ্ধান্ত চেপে দেয়ার অধিকার তোমার নেই। তুমি কি জানতে চেয়েছ তোমার মেয়ে কাউকে পছন্দ করে কিনা? জানতে চাওনি কখনও। কিন্তু দেখ ভাগ্য তোমাকে আবার সেই একি জায়গায় এনে দাড় করাল। তোমার ছোট বোনের জিবনে বহু বছর আগে এরকমি এক ঘটনা ঘটেছিল। সেদিনও তুমি নিজের বোনের খুশির চেয়ে তোমার জেদটাকেই বড় করে দেখেছিলে। কিন্তু কেন? কেন তোমার সেদিন মনে হয়েছিলো যে তোমার বোনের সিদ্ধান্ত ভুল? ইমতিয়াজ রহমান কে নিজের পছন্দে বিয়ে করে তোমার বোন কি অসুখি হয়েছে? বল মামা?

নিয়াজ সাহেব কিছুক্ষন চুপ করে থাকলেন। তারপর গম্ভীর গলায় বললেন
–এতো কিছু আমার জানা নেই। আমি শুধু জানি তোমার মা সেদিন আমার সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে এই বাড়ি থেকে পা বাড়িয়ে ভুল করেছিলো। আর সেই কারনেই আমি তার সাথে কোন সম্পর্ক রাখতে চাইনি। কিন্তু আমার মায়ের অনুরধে আমি কয়েকবার দেখা করতে বাধ্য হয়েছি। তোমার মায়ের সাথে দেখা হলেও এতো বছরে কোন কথা হয়নি আমার। আর আমি চাইবো তার সাথে মৃত্যু অবধি কোন কথা যেন নাহয়।

–এখনো তুমি নিজের জেদটাকেই বড় করে দেখছ। তুমি জানো তোমার মেয়ের জিবনেও একি ঘটনা ঘটেছে। তোমার মেয়ে তোমার সেই বোনের ছোট ছেলেকে ভালোবাসে। আর তার সাথে সারাজীবন কাটানোর জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়েছিলো। ইমতিয়াজ রহমান চাইলে আজ নিজের ছেলের সাথে তোমার মেয়ের বিয়ে দিয়ে বড় প্রতিশোধ নিতে পারত। কিন্তু তার কাছে তোমার সম্মানের আগে জেদ প্রতিশোধ এসব নিতান্তই তুচ্ছ। সে একটাই কথা বলেছে যে তোমার অনুমতি ছাড়া কোন সিদ্ধান্ত নেবে না। ফেরত পাঠিয়েছে তোমার মেয়েকে। তুমি কেন বুঝতে চাওনা মামা। তারা একে অপরকে ভালোবাসে। তোমরা নিঃসন্দেহে ছেলে মেয়েদের জন্য ভালো সিদ্ধান্ত নিবে। সেটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু তাদের এই অনুভুতিকে নিজের জেদের কাছে ছোট করার অধিকার তোমার নেই। আজ মিরা আমাদের বাড়িতে না গিয়ে যদি অন্য কোন বাড়িতে যেত তাহলে কি হতো ভাবছ?

ইভানের কথা নিয়াজ সাহেব সোফায় বসে পড়লেন। থম্থমে গলায় বললেন
–আমার কাছে আমার কথার মুল্য সব কিছুর আগে। আমি তোমার আম্মুর জন্য অনেক বছর আগে একবার এরকম পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছিলাম। এখন আর হতে চাইনা। আমি যা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেটাই ফাইনাল।

–তুমি নিজের মেয়ের জীবনটা নষ্ট করতে উঠে পড়ে লেগেছ মামা। দেখ আম্মু আজ অনেক সুখী। তোমার সিদ্ধান্ত মেনে নিলে আজ অনেক গুলো জীবন নষ্ট হয়ে যেত। তুমি মিরার সাথেও একি কাজ করছ মামা।

ইভানের কথা শেষ হতেই মিরা কঠিন গলায় বলল
–আমি ইফতিকেই বিয়ে করবো বাবা। নাহলে আমি সুইসাইড করবো। এটাই আমার শেষ কথা।

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here