তোমার মায়ায় আবদ্ধ আমি পর্ব ৯

0
772

#তোমার_মায়ায়_আবদ্ধ_আমি ?
#পর্বঃ9
#লেখনিতেঃসামিয়া_আক্তার_মুনা ?

হা হয়ে তাকিয়ে আছে নিহান নিশিদের দিকে কারণ, নদী আর কয়েকজন বাচ্চা মিলে বলছে খেলায় জিতছে নদীর টিম।কিন্তু নিশি আর ওর সাথে থাকা বাচ্চারা বলছে জিতেছে নিশির টিম! আর বেচারা রুহি ওদেরকে থামানোর চেষ্টা করছে।ওদের কান্ড দেখে নিহান নিলয় কে বলল___

‘ সিরিয়াসলি,ভাই!তোর বোন এভাবে টিম বানিয়ে সামান্য খেলা নিয়ে ঝগড়া করছে?এই মেয়ে কি ঝগড়া ছাড়া আদেও আর কিছু পাড়ে?’

‘ আচ্ছা চল গিয়ে দেখি আসলে হয়েছেটা কি!কেন ওরা এভাবে ঝগড়া করছে।’

‘ আসলে,নকলে কিছুই নেই গিয়ে দেখবে সব দোষ তোর বোনেরই।’

‘ সব দোষ নন্দ ঘোষ!এই তুই সবসময় আমার বোনের পেছনে লেগে থাকিস কেন রে?’

‘কারণ, তোর বোন সবসময় ঝামেলা পাকায়।’

‘বলছে তোরে,চল আমার সাথে।’

এই বলে এই নিলয় নিহানকে নিয়ে নিশীদের কাছে যায়।

_______

‘নিশি দেখ! তুই কিন্তু চিটিং করছিস।আমি নিজে দেখেছি তোদের বউ আউট হয়েছে মানে আমরা জিতেছি।’

‘ তোর চোখে যে সমস্যা এটা শুধু আগে জানতাম! আর আজকে তার প্রমাণও পেলাম।’

‘কিহ! আমার চোখে সমস্যা?এই রুহি তুই বল তো কোনদিন শুনেছিলি আমার চোখে সমস্যা আছে?’

‘রুহি কি বলবে?আমি বলছি তাতেই হবে!’

‘এই তোরা এখানে এভাবে ঝগড়া করছিস কেন?’

ঝগড়ার মাঝে নিলয় ভাইয়ার কণ্ঠ শুনে পিছনে ফিরে দেখি নিলয় ভাইয়া আমি নিহান স‍্যার আমাদের পেছনে ভ্রু কুচকে দাঁড়িয়ে আছে।

‘আসলে ভাইয়া খেলায় জিতেছে আমার টিম কিন্তু নদী বলছে জিতেছে নদীর টিম।’

‘ বিশ্বাস করেন ভাইয়া খেলায় আমরাই জিতেছি।নিশি মিথ‍্যে বলছে।’

‘ছি!নদী সমান‍্য খেলায় জেতার তুই মিথ্যেবাদী বলতে পারলি!আর,,,’

ভাইয়া আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,,,

‘চুপ কর তুই,রুহি তুমি বলো তো কোন দল জিতেছে?’

রুহি বেচারা পড়েছে মহা মুশকিলে!দুই দিকেই প্রাণ প্রিয় বান্ধবী কাকে ছেড়ে কার কথা বলবে তাই রুহি আমতা আমতা করে বলল___

‘ আসলে ভাইয়া আমি ঠিক বুঝতে পারছি না!’

নিলয় হয়তো রুহির অবস্থা বুঝতে পেরেছে তাই নিলয় বলল__

‘আচ্ছা থাক, তোমার আর বলতে হবে না। আর তোরা (আমাকে নদীকে উদ্দেশ্য করে )এবার থাম যে দলেই জিতুক তাদের সবাইকে চল আজ আমি আইসক্রিম খাওয়াবো।’

‘ কিহ! সত্যি ভাইয়া তাহলে চলো, এই বাচ্চা পার্টি চলো ভাইয়া আমাদের আজকে আইসক্রিম খাওয়াবে।’

তারপর আমরা সবাই মিলে চললাম আইসক্রিম খেতে।

_______

‘আপু জানো কালকে না আমাদের একটা উৎসব আছে। আসবে তোমরা আমাদের উৎসবে?’

আমরা সবাই মিলে আইসক্রিম খাচ্ছিলাম তখনই এনি আমাকে এই কথাটা বলল।ওর কথা শুনে আমি তো মহা খুশি,আমিও উৎসুক হয়ে বললাম __

‘কিহ!কাল তোমাদের ওসব মানে পাহাড়ি উৎসব!ও মাইয়া আল্লাহ,আমি তো শুনেই বেশ একসাইডেট লাগছে,আমি তো যাবোই তোমরা সবাই যাবে তো (ভাইয়াদের উদ্দেশ্য করে )’

আমার কথা শুনে নদী বলল __

‘উফ, পাহাড়ি উৎসব! আমার অনেক দিনের ইচ্ছে এমন উৎসব দেখার আমিও যাবো এনি’

‘ কখন শুরু হবে তোমাদের এই উৎসব?আর কোথায়ই বা হবে?’

নিহান স্যারের কথার উত্তরে এনি বলল__

‘ কাল সন্ধ্যার পর পরই শুরু হবে,আমাদের গ্রামে।’

তোমাদের গ্রাম মানে?তোমরা এখানে থাকো না?’

আমার কথা শুনে এনি বলল__

‘ না আমারা কয়েক জন এই দিকে থাকি না। আমাদের গ্রামটা হলো একটু ভেতরের দিকে।’

‘তাহলে আমরা তোমাদের গ্রাম আমরা চিনবো কি করে?’

‘ আপু আমি নাহয় কাল তোমাদেরকে এসে নিয়ে যাব। আজকে আমরা যেখানে খেলেছি, তোমরা ওইখানেই দাঁড়িয়ে থেকো আমি এসে তোমাদের নিয়ে যাব।’

‘ আচ্ছা ঠিক আছে!’

এরপর এনিরা আমাদেরকে বিদায় জানিয়ে চলে যায়। আর আমরাও আমাদের বাড়িতে চলে আসি।

পরের দিন বিকেলে,,,,,,

‘ আমার তো আর তর সইছে না কখন সন্ধ্যা হবে আর কখন যাব!’

‘উফ!নিশি তুই চুপ করবি?কাল সন্ধ্যা থেকে এই নিয়ে কতবার বলি মনে আছে আরে বোইন আর একটু পরে সন্ধ্যা হবে তখনই আমরা যেতে পারবো।এখন রেডি হ চুপচাপ।’

নদীর কথা শুনে আমি বললাম __

‘হুম হয়েছে আর জ্ঞান দিতে হবে না,সর সামনে থেকে!’

এই বলে আমি রেডি হতে চলে গেলাম।

___

স্কাই ব্লু জিন্স,রেড কালার টপস, হোয়াইট আর রেড কালার কম্বিনেশন স্কার্ফ গলায় ঝুলিয়ে।চোখে কাজল, মুখে হালকা মেকআপ আর বেবি পিঙ্ক লিপস্টিক ব্যাস এতেই তৈরি নিশি।নদীও কম কিসে? ব্লু টপ্স, ব্ল্যাক জিন্স,গলায় ব্লু স্কার্ফ ঝুলানো আর নিশির মতো হালকা মেকআপে নদীকেও অসাধারণ লাগছে।আর রুহি রেড চুরিদার আর নিশি নদীর মতো হালকা মেকআপ এতেই দারুন লাগছে রুহিকে। ব্যাস তিন বান্ধবী তৈরি হয়ে যেই নিচে যেতে যাবে তখনই মেঘলা শাড়ির কুচি ঠিক করতে করতে ঘরে ঢুকে নিশিদের উদ্দেশ্য করে বলল___

‘ কিরে, হলো তোদের?’

মেঘলা আপু কে দেখে আমি বললাম __

‘ওহ!হো,আপু তোমাকে তো দারুন লাগছে দেখো শুভ ভাইয়া না আবার হু হারায়।’

আমার কথা শুনে মেঘলা আপু কিছুটা লজ্জা পেয়ে বলল__

‘ হুম হয়েছে পাকা বুড়ি,সব সময় শুধু আমাকে লজ্জা দেওয়া চল নিচে সবাই অপেক্ষা করছে।’

তারপর আমরা সবাই চললাম নিচে। আমরা নিচে গিয়ে দেখি শুভ ভাইয়া,নীরবভাইয়া, অপু,নিলয় ভাইয়া আর নিহান ‍স‍্যার আমাদের জন্য নিচে অপেক্ষা করছে।

নিহান কে দেখে নিশির চোখ এক মুহূর্তের জন্য হলেও আটকে যায়!ব্ল্যাক জিন্স,ব্ল্যাক টি-শার্ট,চুলগুলো সবসময় এর মতো সাজানো, হাতে ব্ল্যাক ওয়াচ, হোয়াইট সু আর গলায় ক্যামেরা ঝোলানো ব্যস এতেই মেয়েদের ক্রাশ হওয়ার জন্য যথেষ্ট। নিহানকে দেখে নিশি মনে মনে বলল__

‘ দেখতে তো মাশাল্লাহ ভালই,কিন্তু জন্মের সময় মনে হয় মধু দেয়নি করলার রস দিয়েছে না হলে আমাকে শুধু শুধু কথা শোনায় কেন এই খচ্চরটা।’

‘ এই নিশি কি ভাবছিস?’

রুহির কথায় আমি আমার ভাবনা থেকে বের হয়ে মনে মনে বলি__

‘ কি ব্যাপার!আমি হঠাৎ এই ব্যাটাকে সুন্দর বলছি কেন?ও বাবা গো ক্রাশ ট্রাশ খাইলাম নাকি!ধুর কি সব ভাবছি’

মনে মনে এইসব ভেবে আমি নিচে চলে গেলাম। তারপর আমরা সবাই মিলে চললাম এনির বলা জায়গায় যেখানে আমরা গতকাল খেলেছিলাম।
আমরা এনির বলা জায়গায় গিয়ে দেখি এনি আগে থেকেই এসে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে আমরা যেতেই এনি বলল __

‘তোমরা এসে গেছো, চলো আমার সাথে।’

এই বলে এনি হাটা শুরু করল আর আমরাও ওর পিছু পিছু হাটা ধরলাম।
______

হা করে তাকিয়ে আছি আমরা গ্রামটার দিকে হারিকেন আর প্রদীপের আলোয় ঝলমল করছে এনিদের গ্রাম। অনেকটা জায়গা জুড়ে আগুন ধরানো হয়েছে আর আর সেই আগুনের চারপাশে নেচে যাচ্ছে কিছু আদিবাসী মেয়ে।পরনে তাদের শাড়ি কিন্তু তাদের স্টাইলে দেখতে বেশ ভালই লাগছে। রাতের পাহাড় আলোয় ঝলমল করছে আর আদিবাসীরা তাদের উৎসবে মেতে উঠেছে নাচ গান আর হইুল্লোরে সবকিছুই আমাদের কাছে বেশ নতুন। এই প্রথম আমরা দেখছি পাহাড়ি কোন উৎসব। আমাদেরকে দেখে কয়েকজন মহিলা এগিয়ে এলো তাদেরকে দেখে এনি বলল___

‘ আম্মু (ওই মহিলা গুলোর থেকে একজনকে উদ্দেশ্য করে হয়তো এনীর আম্মু হবে )এই হল সেই আপু(আমাকে উদ্দেশ্য করে) যার কথা তোমাকে কালকে বলেছিলাম।ওনারা এসেছে আজকে আমাদের উৎসব দেখতে।’

এনির আম্মু আর বাকি মহিলারা আমাদের সাথে প্রথমে কুশল বিনিময় করলেন তারপর এনির আম্মু বললেন__

‘ আমি তোমাদের খুব প্রশংসা করেছে,তোমরা এসেছ আমরা খুব খুশি হয়েছি।’

সত্যিই আদিবাসীরা খুবই আন্তরিকভাবে আমাদেরকে স্বাগতম জানালেন। তাদের সাথে কথা বলে আমরা একটা সাইডে চলে আসি উৎসবটাকে উপভোগ করতে। আদিবাসী মেয়েদের নাচ দেখে হঠাৎ আমার ও ইচ্ছে হলো একটু ওদের মতো নাচার তাই আমি নদী আর রুহি কে বললাম__

‘দোস্ত চল আমরাও গিয়ে নাচি।’

‘হ‍্যাঁ চল’

এই বলে আমি নদীর আর রুহি গিয়ে মিশে গেলাম আদিবাসী মেয়েদের সাথে যারা নাচ করছিল।ওরা ও আমাদের সাথে খানিকেই মিশে গেল।

______

এই প্রথম এমন উৎসবে এসেছে নিহান।এত দিন বিদেশে থাকায় এমন উৎসব কখনও দেখা হয়নি।তাই নিহানও খুব এক্সাইটেড হয়ে সবকিছু ঘুরে ঘুরে নিজের গলায় ঝুলে থাকা ক্যামেরায় বন্দি করছিল। নিহান যখন এদিক-ওদিক ছবি তুলছিল তখন তার ক্যামেরায় হঠাৎ ধরা পরল নিশির হাস্যজ্জল চেহারা।পাহাড়ি মেয়েদের সাথে তাল মিলেয়ে নিচ হইহুল্লোর করছে।নিহান কিছুক্ষণ ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের অজান্তে এই কয়েকটা ছবি তুলে নিল নিশি আর নাচ করা বাকি মেয়েদের।ছবি তুলে নিহান নিজে নিজে বলে উঠলো__

‘পাজি মেয়ে একটা!’

_____

আদিবাসীদের সাথে মিলে নাচ-গান,আড্ডা,খাওয়া- দাওয়া, হই-হুল্লোড় করে আমরা সবাই রাত বারোটার দিকে বাসায় ফিরি।বাসায় ফিরেই যে যে যার যার রুমে চলে যাই কারণ সবাই বেশ ক্লান্ত।

রুমে এসেই আমি আর নদী বেডে ধপাস করে শুয়ে পড়লাম।আমাদের শুয়ে পড়তে দেখে রুহি বলল__

‘দেখ আজকেও এমন করবি না, আগে ফ্রেশ হয়ে আয় তারপর ঘুমা তোদেরকে আমি কিছু বলব না।’

রুহীর কথা শুনে আমি বললাম __

‘হ্যাঁ যাচ্ছি তো!এমন করছিস কেন?’

তারপড় আমি,নদী,রুহি একে একে ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পড়ি।আমার তো চোখ বন্ধ করার সাথে সাথেই চোখে রাজ্যের ঘুম নেমে আসে।

#চলবে,

(আসসালামুআলাইকুম,কেমন আছেন সবাই?আমি খুবই দুঃখিত গতকালও গল্প না দেওয়ার জন্য।আসলে আমি একটু অসুস্থ ছিলাম তাই কালকে গল্প দিতে পারিনি।রিচেক দেওয়া হয়নি তাই ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here