#তোমার_মায়ায়_আবদ্ধ_আমি ?
#পর্বঃ৮
#লেখনিতেঃসামিয়া_আক্তার_মুনা ?
ময়মনসিংহ এমন একটি বিভাগ যার প্রায় প্রতিটি জেলা সীমান্তবর্তী। মানে ইন্ডিয়ার মেঘালয়ের সাথে ময়মনসিংহ গেলে দেখা যাবে প্রকৃতির অপূর্ব এক দৃশ্য। পাহাড়,নদী,বৃষ্টি হলে পাহাড়ের গায়ে সাময়িক তৈরি হওয়া ঝর্ণা,পাহাড়ি একলাকা দেখতে আসা পর্যটকদের জন্য তৈরি ছোট বড় বিভিন্ন সুন্দর পর্যটক কেন্দ্র।
আমাদের বাড়ি একে বারে পাহাড়ি এলাকার কাছাকাছি হওয়ায়,আমাদের বাড়ির ছাদ থেকেই দেখা যায় বাংলাদেশের চিনেমাটির পাহাড়।পাহাড়ের গা কেটে বানানো পাহাড়ে চড়ার আঁকাবাঁকা পথ।গারো এবং হাজং আদিবাসীদের পাহাড়ে বানানো ছোট ছোট ঘরগুলোও আমাদের শহরে বাস করা লোকেদের বেশ নজর কাড়ে।
মাথার উপর বিশাল পড়ন্ত বিকেলের আকাশ আর পাহাড়ের এই দৃশ্য সাথে প্রান ভড়ে শ্বাস নেওয়ার মতো মুক্ত বাতাস একেবারে মুগ্ধকর পরিবেশ। যা দেখে যে কোন মানুষ কিছুক্ষণের জন্য হলেও সব দুঃখ কষ্ট রাগ সব ভুলে মুহূর্তটাকে উপভোগ করবে। ঠিক তাই করছি আমি! এই মুক্ত বাতাসের মতো নিজের রাগ কেও মুক্ত করার চেষ্টা করছি।
কিছুক্ষণ আগে,,,,
আমরা শহর থেকে আসার সময় গ্রামের আত্মীয়দের জন্য আপুর বিয়ের ইনভিটেশন কার্ড এনেছিলাম।দাদু অপু,নিরব ভাইয়া আর শুভ ভাইয়া গেছে এখানকার আত্মীয়দের ইনভাইট করতে। যেহেতু আজকে ভাইয়া রা ইনভাইট করতে গেছে তাই আমাদের আর আজকে বাহিরে ঘুরতে যাওয়া হয়নি।তাই আমি নদী আর রুহিকে আমাদের বাগান থেকে শুরু করে সব ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছি।বাগান থেকে ঘুরে আমরা যখন ছাদে যেতে যাব তখন আমাদের সাথে দেখা হয় নিলয় ভাইয়া আর মিহান স্যারের সাথে,হয়তো ওনার ও ছাদে যাচ্ছিল।
‘ আসসালামু আলাইকুম স্যার,কেমন আছেন?সেই যে আপনাকে গতকাল রাতে দেখেছিলাম আর তো দেখলাম না!কৈ থাকেন?’
নদীর কথা শুনে নিহান স্যার বলল__
‘ অলাইকুম আসসালাম,খুব ভালোই আছি আমি আর এখানে এতো ফরমালেটির প্রয়োজন নেই। এখানে না আমি তোমার কলেজ প্রফেসর আর না তুমি আমার স্টুডেন্ট এখানে আমার বেড়াতে এসেছি তাই এখানে আমাকে ভাইয়া বলেই ডেকো।’
নিহানের কথা শুনে নদী দাত কেলানী হাসি দিয়ে বলল__
‘আপনি খুব ভালো স্যার থুরি ভাইয়া!তো আপনি আজ কোথায় ছিলেন আপনাকে তো খাবারের সময় দেখলাম না।’
‘ আমি তো রুমেই ছিলাম।আর তোমরা আমাকে খাবারের সময় দেখবে কিভাবে বল তোমরা যে লেট করে নিচে নামো তার আগেই আমাদের খাবার খাওয়া শেষ হয়ে যায়। তাই নিচে থেকে আর কি করবো আমি রুমে চলে যাই।তাই দেখা হয় না আর তোমাদের বলেই বা কি হবে বলো এমন এক ফ্রেন্ড জুটিছ যে সব সময় নিজে তো লেট করেই সাথে তোমাদেরও লেট করায়।’
ঐ দিকে নিশি নদী কে নিহানের সাথে হেসে হেসে কথা বলতে দেখায় এমনিতেই মনে মনে রেগে ছিল তবুও কোনো কথা বলে নি।কিন্তু নিহানের কথা শুনে এইবার আর নিশি চুপ থাকতে পাড়ল না রেগে তেতে ওঠে বলল___
‘ দেখলে তো ভাইয়া! আমি বলেছিলাম না উনি সুযোগ পেলেই আমাকে কথা শোনাবে।মিলল তো আমার কথা।’
‘ কথা পড়ল সবার মাঝে যার কথা তার গায়ে বাঝে! আমি তো কারো নাম করে কিছু বলিনি। আমি তো ওকে ও (রুহিকে উদ্দেশ্য করে) বলতে পারি।’
‘ না পারেন না!কারণ ওদের লেট আমার জন্যই হয় আর এটা সবাই জানে।’
‘তাহলে তুমি স্বীকার করছ যে তুমি লেট করো?’
‘ আরে আপনি তো মহা পাজি ‘
এই কথা শুনে নিহান কিছুটা রেগে বলল__
‘কি বললে তুমি?’
‘কেন!শুনতে পাননি কি বলেছি?’
‘ইউ,,’
‘আরে তোরা থামবি! কি কখন থেকে বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করেই যাচ্ছিস!’
‘ ভাইয়া,তুমি আমাকে কেন বলছ? এবার কি আমার কোন দোষ ছিল তুমিই বলো।উনিই তো প্রথমে শুরু করলেন।’
‘আমি তো তোকে একা কিছু বলিনি আমি দুজনকেই বলেছি।আর নিহান তুই কেন ওর সাথে এমন করিস বলতো আচ্ছা যা হয়েছে সব ভুলে এখন থেকে তোরা বন্ধু হয়ে যা।’
‘তোর বোন হবে আমার বন্ধু! আর তুই ভুলে যাস না ও আমার স্টুডেন্ট।’
‘এই তুই না মাত্র বললি নদীকে যে,,না এটা তোর কলেজ না তুই এখানে ওদের প্রফেসর আর না এখানে ওরা তোর স্টুডেন্ট।তাই অন্তত এখানে আমার বোন তোর বন্ধু হতেই পারে।’
‘ আরে ভাইয়া আমারও এতো শখ নেই যে তোমার এই বদ মেজাজি বন্ধুকে বন্ধু বানানোর।’
‘ নিলয়,দেখ তোর বোন আমাকে কি বলল!তোমার সাহস হল কি করে আমাকে এসব বলার আর তোমার মত মেয়েকে নিহান চৌধুরী কখনোই বন্ধু বানাবে না।’
‘ আমার মত মেয়ে মানে কি হ্যাঁ?আমি এই খান বাড়ির মেয়ে, আর কি সব সময় নিহান চৌধুরী নিহান,চৌধুরী করেন নিজেকে কি মনে করেন আপনি? রানী ভিক্টোরিয়ার জামাই!!’
‘ তোমাকে তো আমি!’
এই বলে যেই উনি আমার দিকে তেরে আসতে যাবে তখনই নিলয় বাইয়া ওনাকে ধরে ফেলে। তারপর ওনাকে টেন অন্য দিকে নিয়ে চলে যায়। ওনাকে নিয়ে যেতেই নদী আমার কাঁধে হাত রেখে বলল__
‘ ওরে দোস্ত,ভালোই তো কথা শুনালি ওনাকে বেশ রেগে গেছেন হয়তো। দেখে বোঝা যাচ্ছিল!’
‘ বেশ করেছি কথা শুনিয়েছি মনে থাকলে আর এই নিশির সাথে লাগতে আসবে না।’
‘ তাও বেচারাকে তুই অনেক কথা শোনালি।’
আমি রেগে বললাম __
‘এই তুই আবারও শুরু করলি তুই শুধু আমার কথা শোনানোটাই দেখলি। উনি যে আমাকে কথা শোনালো ঐটা দেখলি না। ‘
এই বলে আমি ছাদে চলে আসলাম আর আমার পেছনে পেছন নদী আর রুহি ও চলে আসলো ছাদে।
বর্তমানে,,,
ছাদের রেলিং ধরে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছি আমি। নদী আর রুহি সারা ছাদ ঘুরে ঘুরে দেখছে ছাদের একটা পাস জুড়ে দাদী ছাদ বাগান করেছে।বিভিন্ন ফুলের গাছ আছে তাই দেখছে ওরা।আমি চোখ দুটো খুলে আশেপাশে তাকাতেই, হঠাৎ আমার চোখ পরে আমাদের বাড়ি থেকে একটু দূরে কিছু বাচ্চা মেয়ে বৌচি খেলছে!ওদের দেখে আমি কিছুটা চিৎকার করে বলি__
‘ দোস্ত খেলবি?’
আমার কথা শুনে নদী আর রুহি আমার কাছে এসে বলে__
‘কি?’
‘ঐ দেখ!’
ওরাও আমার কথা মতো আমার হাতের ইশারা করা জায়গায় তাকায়।ওরা বাচ্চাদের দিকে তাকাতেই উত্তেজিত হয়ে বললে__
‘ হ্যাঁ দোস্ত চল!আমরাও খেলবো অনেক বছর হয় খেলা হয় না!’
‘ হ্যাঁ চল!’
আমরা যেতে নেব তখনই রুহি বলল___
‘ কিন্তু ‘
‘কিন্তু কি?’
‘ বাচ্চারা কি, আমাদের খেলতে নেবে?’
‘ আরে নিবে মানে! আমরা তো এখনো বাচ্চাই!’
নদীর কথা শুনে আমিও বললাম__
‘ ঠিকই তো!আমরা তো এখনো বাচ্চাই চল।’
এই বলে আমি আর নদী রুহিকে টেনে নিয়ে চললাম বাচ্চাদের কাছে যেখানে ওরা খেলছে।
______
‘হেই বাচ্চা পার্টি!তোদের সাথে আমাদের ও খেলতে নিবি?’
আমার কথা শুনে বাচ্চারা হয়তো অনেকটা অবাক হয়।যা ওদের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। একটা বাচ্চা বেশ অবাক হয়েই আমাকে বলল__
‘ আপু তোমরা খেলবে?’
‘ হ্যাঁ,আমরা খেলব!’
‘কিন্তু আমাদের তো লোক হয়ে গেছে আর তোমাদের নিতে হলে আরেক জন লাগবে,তোমরা তো তিনজন।’
‘ আরে বাচ্চা পার্টি আমাদের নাও না খেলায়’
হঠাৎ একটা বাচ্চা মেয়ে কেমন একটা ড্রেস পরা হয়তো কোন আদিবাসী হবে হয়তো ও বলে উঠলো__
‘এনি (ওই বাচ্চাটার নাম যার সাথে আমি কথা বলছিলাম) আজ তাহলে আপুরাই খেলুক আমি আবার কালকে খেলবো।
‘ না বাবু তার কোন দরকার নেই,আমরা এক টিমে বেশি খেলি প্লিজ।’
তারপর বাচ্চাগুলোও কিছু একটা ভেবে বলল __
‘ঠিক আছে’
তাহলে আর কি ব্যাস শুরু হয়ে গেল আমাদের খেলা।
#চলবে,
(আসসালামুআলাইকুম, কেমন আছেন সবাই?আমি খুবই দুঃখিত গতকাল গল্প দিতে পারিনি তার জন্য।তাই আজকের পর্বটা খুব বড় করেই দিলাম। রিচেক দেওয়া হয়নি তাই কোন ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ?)