#তোমার_মায়ায়_আবদ্ধ_আমি ?
#পর্বঃ24
#লেখনিতেঃসামিয়া_আক্তার_মুনা ?
চারপাশে গভীর রাতের স্তব্ধ নীরবতা,সেই নীরবতায় হঠাৎই বেজে ওঠে নিহানের পকেটে থাকা ফোনের এলাম।হঠাৎ এলামের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় নিশির, ঘুম ভাঙতেই নিশি নিজেকে আবিষ্কার করে ছাদে।ঘুম ভাঙার পর চারপাশে তাকিয়ে দেখে রাতের আধার এখনো বিরাজমান। এই অসময়ে এলাম বাজায় নিশি বিরক্ত হয়ে নিহান কে ডেকে বলল___
‘স্যার উঠুন,এত রাতে কিসের এলাম দিয়ে রেখেছেন আপনি!স্যার,,, স্যার উঠুন!’
নিশির ডাকে নিহানের ঘুম ভাঙতেই নিহান ঘুমঘুম কন্ঠে বলল___
‘আরে নিশি ডাকছো কেন?”
‘ডাকছি কি আর সাধে আপনার ফোনে এত রাতে কিসের এলাম দেওয়া।’
এলামের কথা শুনে নিহান তাড়াতাড়ি উঠে বলল__
‘নিশি ওঠো আমাকে এখন যেতে হবে।’
নিহানের কথা শুনে নিশি ভ্রু কুচকে বলল __
‘এত রাতে কোথায় যাবেন আপনি?’
‘এত রাত না ভোর চারটা বাজে, আমি জানতাম তোমার সাথে কথা বলতে বলতে চোখ লেগে যেতে পারে!তাই আগে থেকেই এলাভ দিয়ে রেখেছিলাম যাতে কেউ উঠে দেখার আগেই আমি কেটে পড়তে পারি। না হলে এর আগের বার ছাদে দুজনকে একা দেখে বিয়ে দিয়ে দিয়েছিল। এবার দেখলে আমার মান সম্মান সব শেষ করে দিবে!’
নিহানের কথা শুনে নিশি বলো__
‘ বাহ কি বুদ্ধি!’
‘ জী ম্যাডাম,এখন চলো আমাকে এগিয়ে দিবে!’
নিহানের কথা শুনে নিশি দোলনা থেকে নামতেই ব্যথায় কুকরিয়ে আহ বলে উঠল।নিশির মুখে আহ শুনে নিহান হন্তদন্ত হয়ে নিশিকে ধরে বলল__
‘ কি হয়েছে নিশি? কোন প্রবলেম।’
‘ না তেমন কিছুই না, সারারাত একভাবে বসে থাকায় এখন হাত পা নারাতে কষ্ট হচ্ছে।’
‘ তাহলে চলো তোমাকে নিয়ে রুমে দিয়ে আসি।’
নিহানের কথা শুনে নিশি ভ্রু কুচকে বলল__
‘ আপনি আমাকে রুমে দিয়ে আসবেন মানে?’
‘মানে সিম্পল আমি তোমাকে কোলে করে রুমে দিয়ে আসবো!’
নিহানের কথা শুনে নিশি বল __
‘না না তার কোন প্রয়োজন নেই,আমি একদম ঠিক আছি। চলুন আপনাকে এগিয়ে দেই আপনার এখন বেরিয়ে পড়া উচিত নইলে কে কোন দিক থেকে দেখে ফেলবে ঠিক নেই,চলুন।’
নিশির কথা শুনে নিহান বলল__
‘ তুমি সত্যিই ঠিক আছো তো? ‘
‘হ্যাঁ একদম,চলুন এবার!’
এই বলে নিহান আর নিশি নিচে চলে গেল। ছাদ থেকে নিচে এসে নিশি আগে দেখছে সব ঠিকঠাক আছে কিনা। নিচে সব ঠিক দেখে নিশি গিয়ে নিহানকে ডেকে এনে খুব সাবধানে বাড়ি থেকে বের করে নিশি নিজেও গাড়ির পর্যন্ত নিহানকে এগিয়ে দিয়ে আসে।গাড়ির সামনে এসে নিহান ড্রাইভিং সিটে বসে বলল__
‘ কি জালারে বাবা! নিজেরই বিয়ে করা বউকে দেখতে আসতে হয় চোরের মত লুকিয়ে লুকিয়ে!!’
নিহানের কথা শুনে নিশি ফিক করে হেসে দেয়।নিশির হাসি দেখে নিহান বলল__
‘ হেসো না তো, আমার কিন্তু রাগ উঠবে!সাবধানে বাড়ি যাও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।’
‘আপনি যান তারপর আমি বাড়ির ভিতরে যাচ্ছি!’
‘ না তুমি আগে ভিতরে যাও তারপর আমি যাব (আসলে বাড়ির কেউ যেন গাড়ির কোন শব্দ না পায় তার জন্য নিহান নিশিদের বাড়ি থেকে একটু দূরে গাড়ি পার্ক করে)’
নিহানের কথা শুনে নিশি বলল___
‘ আচ্ছা ঠিক আছে সাবধানে যাবেন।’
এই বলে নিশি চলে গেল বাড়ির দিকে। যেই নিহান দেখলো নিশি বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেছে তখন নিহান ও গাড়ি স্টার্ট দিল আর গাড়ি চলতে শুরু করল তার আপন গতিতে।আর নিশি বাড়ির ভেতরে এসে মেইন ডোর বন্ধ করে এক ছুটি নিজের রুমে এসে আফরিনের পাশে শুয়ে পরলো।প্রায় সারারাত সজাগ থাকার কারণে বেডে শুতেই নিশির চোখে নেমে আসলো রাজ্যের ঘুম।ঘুম পরীরা নিশির চোখে ধরা দিতেই নিশিও পাড়ি দিল ঘুমের রাজ্য।
________________
বিকেল পাঁচটা,,,,,
বড় একটা শপিং মল এসেছে খান বাড়ির ছোট বড় প্রায় সকল সদস্যরা। সাথে এসেছে শুভর ফ্যামিলির মেম্বারস রাও।সবাই মেঘলা আর শুভর বিয়ের জন্য ঘুরে ঘুরে শপিং করছে।আর এই দিকে মলের একপাশে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে নিশি। নিশি বরাবরই শপিং করতে এলে মেঘলা কে সাথে করে নিয়ে আসত। মেঘলাই সবকিছু দেখেশুনে নিশিকে কিনে দিত, দু বোন শপিং করতে এসে কতই না মজা করত, ঘুরতো ফিরতো আড্ডা দিত।কিন্তু আর দুদিন পরেই মেঘলা চলে যাবে তার শ্বশুরবাড়ি।আর নিশি চলে যাবে নিহানদের বাড়ি আর কখনো দুবোন মিলে এভাবে মজা করে শপিং করতে পারবে কিনা তা জানানেই নিশির। এইসব ভেবেই মন খুব মন খারাপ নিশির।তাই নিশি চুপ করে এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ কোথা থেকে যেন নিহান এসে নিশির পাস ঘেঁষে দাড়িয়ে বলল__
‘ কি ব্যাপার সে কখন থেকে নোটিশ করছি তুমি এখানে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছো, সবাই তো ওই দিকে আছে তুমি এখানে কি করছ?’
‘ কিছুই না এমনিই দাঁড়িয়ে আছি,কখন এসেছেন আপনি।’
‘ এই কিছুক্ষণ আগেই এসেছি।তা তুমি শপিং করছো না কেন?তোমার কি মন খারাপ?’
নিহানের কথা শুনে নিশি বলে__
‘জানেন আগে যখন আমি আর মেঘলা আপু শপিং আসতাম কত মজাই না করতাম। আপুর সঙ্গে না আসলে আমি শপিং করতে আসতামই না। আপুই সবসময় আমার জন্য কেনাকাটা করত। আমি তো জাস্ট একটু দেখে পছন্দ করতাম।কিন্তু আর কয়েকদিন পরেই আপু চলে যাবে শুভ ভাইয়াদের বাড়ি আর আমি চলে যাবো আপনাদের বাড়ি।সবার থেকে কেমন দূরত্ব হয়ে যাবে! এসব ভেবেই একটু মন খারাপ করছিল আর কি, আর কিছুই না!’
নিশির কথা শুনে নিহান বলল__
‘ মন খারাপ করো না।আর তোমার এই হাজবেন্ড থাকতে তোমার শপিং নিয়ে টেনশন করতে হবে না যে তোমার ড্রেস সিলেক্ট করে দেবে। অনুষ্ঠানের দিনগুলোতে তুমি তোমার ড্রেস পেয়ে যাবে ওকে। এখন চলো ওনারা তো সবাই শপিং নিয়ে বিজি তুমি এখানে একা থেকে কি করবে?এর থেকে ভালো হবে চলো তোমাকে নিয়ে একটু শপিং মাল্টা ঘুরে আসি। এতে করে তোমার মনটা একটু ভালো হবে।’
নিহানের কথা শুনে নিশি বলল __
‘আচ্ছা আপনি একটু দাঁড়ান আমি মাকে বলে আসছি।’
‘ আচ্ছা ঠিক আছে যাও!’
নিহানের কথা শুনে নিশি তার মায়ের কাছে গিয়ে বলল__
‘ মা একটু শোনো!’
মেঘলার বিয়ের জন্য লেহেঙ্গা দেখছিলেন মিসেস আয়েশা হঠাৎই নিশির ডাক পেয়ে পিছন ফিরে বললেন__
‘হ্যাঁ বল, কি হয়েছে?’
‘ আসলে মা আমার এখানে ভালো লাগছে না, আর নিহান স্যার ও চলে এসেছেন। তাই আমি ভাবছিলাম উনার সাথে একটু ঘুরে আসি!’
‘সে কি তুই যদি ঘুরতে চলে যাস তাহলে শপিং করবি না?’
‘ তার কোনো প্রয়োজন নেই নিহান স্যার বলেছেন আমাকে শপিং করিয়ে দিবেন। এবার আমি যাই?’
নিশির কথা শুনে মিসেস আয়েশা মুচকি হেসে বললেন__
‘ হ্যাঁ যা আর,,শুন ফোন করলে চলে আসবে কিন্তু!’
‘ হ্যাঁ, ঠিক আছে!’
এই বলে নিশি নিহান এর কাছে এসে বলল__
‘ হ্যাঁ,চলুন!’
_________
রাত প্রায় বাজে পোনে ১১ টা,,,,
বেডে শুয়ে শুয়ে নিজের বাঁ হাতের অনামিকা আঙ্গুলে থাকা আংটিটার দিকে চেয়ে আছে নিশি,আর মুচকি মুচকি হাসছে।আর নিশির পাশে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে আফরিন।হবে নাই বা কেন সেই বিকেল থেকে শপিং করে একটু আগে বাড়ি ফিরে সবাই বেশ ক্লান্ত।সবাই আসার সময় রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে আসায় সবাই বাড়ি ফিরে যার যার রুমে এসে রেস্ট নিচ্ছে। খুব ধকল গেছে সবার উপর দিয়ে।
আর নিশি ভাবছে বিকেলের কথা,,,,
বিকেলে যখন নিশি আর নিহান সবার থেকে আলাদা হয়ে ঘুরতে বের হয়েছিল।তখন নিহান নিশিকে নিয়ে যায় মলে থাকা একটা রেস্টুরেন্টে। রেস্টুরেন্টে গিয়ে ওরা যখন খাবার অর্ডার করে এটা ওটা নিয়ে কথা বলছিল তখন হঠাৎ করেই নিহান নিশির হাতে একটা গোল্ড রিং পরিয়ে দেয়। হঠাৎ করে আংটি পরিয়ে দেওয়ায় নিশি অবাক হয়ে বলে____
‘ হঠাৎ করে রিং পরিয়ে দিলেন যে!’
নিশির কথা শুনে নিহান মুচকি হেসে বলল ___
‘হ্যাপি ফার্স্ট মিট ডে নিশি! তোমার মনে আছে, আজ থেকে এক মাস আগে এই দিনে আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো আমাদের প্রথম দেখা ঝগড়া দিয়ে শুরু হলেও আজকের দিন আমাদের ভালোবাসায় ভরা।সেদিন আমি তোমার উপর রেগে থাকলেও আজ আমি চাইলেও তোমার উপর রেগে থাকতে পারিনা কারণ ভালোবাসি আমি তোমাকে।’
‘নিহান স্যারের মুখে আমার জন্য ভালোবাসার কথা শুনে মুগ্ধ হয়ে গেছি আমি। সত্যিই তো যেই লোকটাকে কয়েকদিন আগে পর্যন্ত সহ্যও করতে পারতাম না আজ তাকে নিজের স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছি। ভালোবাসি এখন আমি তাকে।’
নিহানের কথা শুনে মনে মনে বলল নিশি।
‘এটা তোমায় দেওয়া আমার প্রথম উপহার কখনো যেন না দেখি আংটি টা খুলতে ঠিক আছে।’
নিহানের কথা শুনে নিশি তার ভাবনা থেকে বেরিয়ে বলল ___
‘হ্যাঁ এটা আমি খুব যত্ন করে রাখবো!’
________________
হঠাৎ করে ফোনে রিংটোন এর শব্দে নিশিতার ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে।এত রাতে ফোনের শব্দ পেয়ে নিশি মুচকি হাসি মনে মনে বলে____
‘ নিশ্চয়ই উনি ফোন করেছেন!’
এই ভেবে নিশি ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে ফোনের স্কিনে নিহানের নাম্বার,সত্যিই নিহান ফোন করেছে।ফোনের স্ক্রিনে নিহানের নম্বর দেখে নিশি মুচকি হেসে ফোনটা রিসিভ করে।ফোন রিসিভ করতেই ফোনের অপর পাশ থেকে নিহান বলল__
‘ কি ব্যাপার আজও এখনো ঘুমাওনি দেখছি!’
নিহানের কথা শুনে নিশি বলল__
‘ ঘুম না আসলে কি করব?’
‘ তাহলে তোমাকে ঘুম পাড়াতে কি আজো আমি আসব?’
নিহানের কথা শুনে নিশি বলল___
‘ এই না, না তার কোন প্রয়োজন নেই।আচ্ছা স্যার আপনার কি মনে হচ্ছে না আপনি আমাকে অতিরিক্ত মিস করছেন!যাকে বলে চোখে হারাচ্ছেন!!’
‘তোমার মত পাজি মেয়েকে চোখে হারাতে আমার বয়েই গেছে!’
নিহানের কথা শুনে নিশি রেগে বলল___
‘ কিহ, আমি পাজি! আমি পাজি হলে আপনি কি? আপনি তো বদ রাগী, বজ্জাত একটা!!’
নিশিকে রেগে যেতে দেখে নিহান বললো__
‘ আরে আগে পুরো কথাটা তো শুনবে?’
‘ হ্যাঁ বলুন!’
‘আমি তো তোমাকে চোখে হারাচ্ছি না! আমি তো আমার একমাত্র বউকে চোখে হারাচ্ছি।’
‘ আপনি তো বড় সেয়ানা!একদিকে আমাকে পাজি বলে রাগিয়ে দিচ্ছেন, আবার বউকে চোখে হারাচ্ছি এতো সুন্দর করে বলে আমার রাগে এক বালতি পানিও ঢেলে দিচ্ছেন!!’
বিনিময়ে হাসল নিহান এমন হাজারো দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়া লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করা ফোনে কথা বলা রাগ অভিমান সব মিলিয়ে কেটে গেল তিন দিন।
#চলবে,,,,
( আসসালামুআলাইকুম,কেমন আছেন সবাই?আমি গত দুইদিন ধরে বলতেছি যে আমার আইডিতে একটু প্রবলেম হচ্ছে তার জন্য গল্প লিখতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। তার জন্যই গতকাল গল্প দিতে পারিনি তার জন্য আমি দুঃখিত।আর রিচেক দেওয়া হয়নি ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ?)