তোমার মায়ায় আবদ্ধ আমি পর্ব ২৩

0
543

#তোমার_মায়ায়_আবদ্ধ_আমি ?
#পর্বঃ23
#লেখনিতেঃসামিয়া_আক্তার_মুনা ?

জোছনা ভরা রাত, চাঁদের আলোয় চার দিকটা ঝলমল করছে।বাতাসে ভেসে আসছে নিশীদের বাড়ির ছাদে থাকা গন্ধরাজ ফুল গাছে থাকা ফুলের মিষ্টি সুভাষ। আর মাথার উপর রয়েছে বিশাল আকাশ আর অসংখ্য মিটিমিটি তারা যা সৌন্দর্যে একজন মানুষ বারংবার মুগ্ধ হতে বাধ্য।আর সেই মুগ্ধকর পরিবেশ উপভোগ করছে নিশি আর নিহান।

নিশিদের বাড়ির ছাদের দোলনায় বসে আছে নিশি, আর তার কোলে মাথা রেখে দোলনায় ঘুটি সুটি মেরে শুয়ে আছে নিহাত।আর নিশি চুপচাপ নিহানের মাথা সযত্নে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে নিশি কে চুপ থাকতে দেখে নিহান বলল __

‘কি হলো এমন চুপ করে আছো কেন?’

‘কারণ আমি আপনার উপর রেগে আছি, আপনি তখন আমাকে এমন ভাবে ভয় দেখালেন!তার ওপর এখন আবার আমাকে রাগিয়ে দিয়েছেন, তাই আমি আপনার উপর ভীষণভাবে রেগে আছি!’

‘আরে আমি কোথায় তোমাকে ভয় দেখালাম বল তুমি যে এত ভীতু তা কি আমি জানতাম নাকি!আর আমি কি এমন বলেছি যে তুমি রেগে আছো বলো!’

কি বুঝতে পারছেন না তো? কি এমন হয়েছে যাতে নিশি রেগে আছে চলুন তাহলে কিছুক্ষণ আগের ঘটনা থেকে ঘুরে আসি!!

কিছুক্ষণ আগে,,,,

নিহানের সাথে কথা বলে ফোনটা কেটে দিয়ে নিশি ছাদে যাচ্ছিল চেক করতে যে নিহান সত্যি এসেছে কিনা। ছাদে এসে নিশি দেখে যে ছাদের দরজা বাহির থেকে বন্ধ।ছাদের দরজা বন্ধ দেখে নিশি বলল__

‘ বজ্জাত টা কি পরিমান পাজি হলে আমাকে এইভাবে বোকা বানাতে পারে!এই রাত করে আমাকে ছাদ নিয়ে আসলো। আর আমিও হয়েছি একটা উনি বললেন আর আমিও নাচতে নাচতে ছাদে চলে আসলাম। ধুর শুধু শুধু এলাম!’

এ বলে যেই নিশি তার রুমে যেতে নেবে তখনই নিশি থেমে গিয়ে বলল__

‘ এমনিতেই তো ঘুম আসছে না রুমে গিয়ে তো সেই বেডে শুয়ে শুয়ে এপাশ ওপাশ করতে হবে তার থেকে ভালো ছাদে যখন এসেই পড়েছি তখন একটু সময় কাটিয়েই যাই।ভালো লাগবে!’

এই বলে নিশি যেই ছাদের দরজা খুলে ভেতরে গেল তখনই কোথা থেকে যেন হওয়ার গতিতে কেউ এসে নিশিকে তার বুকের সাথে মিশিয়ে নিল।
__________

হঠাৎ করেই কেউ এসে জড়িয়ে ধরায় ভয়ে হাত-পা কাঁপা কাঁপি উঠে গেছে আমার। শুনেছি রাত বারোটার পর নাকি ভূতেরা ঘুরে বেড়ায়! আমি তো বিশ্বাস করতাম না কিন্তু আজ মনে হচ্ছে এই কথাটা বিশ্বাস করাতে ভূত নিজেই এসেছে!! আল্লাহ এখন আমি কি করব? সব হয়েছে ওই রাক্ষসের জন্য! আল্লাহ শুধু এবারের মত বাঁচায় দাও আর জীবনেও রাত করে ছাদে আসবো না!!

নিশিকে এভাবে কাঁপতে দেখে নিহান নিশি কে ছেড়ে দিয়ে নিশির মুখটা দুই হাতের মধ্যে নিয়ে নিশির দিকে চেয়ে দেখে নিশি ভয়ে চোখ মুখ খিচে কি যেন বিরবির করে বলছে।চাঁদের আলোয় নিশির মুখে ভয়ের ছাপটা নিহান বেশ ভালোই বুঝতে পারছে।নিশিকেএভাবে ভয় পেতে দেখে নিহান অস্থির হয়ে বলল__

‘ কি হলো নিশি তুমি এত ভয় পাচ্ছ কেন? দেখো আমি নিহান প্লিজ ওপেন ইউর আইজ!’

হঠাৎ করে কানে নিহান স্যারের কণ্ঠ শুনে আমি ধীরে ধীরে চোখ খুলে দেখি নিহান স‍্যার আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।ওনাকে দেখে আমি ঝাপিয়ে পড়লাম উনার বুকে আর ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম।আমাকে কান্না করতে দেখে নিহান স্যার আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আদুরের গলায় বললেন___

‘কি হয়েছে নিশি এভাবে কান্না করছো কেন? প্লিজ টেল মি! কেন কান্না করছো তুমি, তুমি কি ভয় পেয়েছ?’

নিহান স্যারের কথা শুনে আমি হ্যাঁ বোদক মাথা নাড়িয়ে বললাম __

‘হ্যাঁ!’

‘আরে এখানে ভয় পাওয়ার কি হল?’

‘আসলে ছাদের দরজা তো তখন বাহির থেকে বন্ধ ছিল তাই আমি ভেবেছিলাম আপনি আসেননি। কিন্তু পরে ছাদে আসতেই যখন আপনি হঠাৎ করে জড়িয়ে ধরলেন আমি ভেবেছিলাম হয়তো ভু,, ভুত (কিছুটা তোতলিয়ে) এসেছে!!’

নিশির কথা শুনে নিহান হেসে বললো __

‘আর ইউ ম্যাড,এখানে ভুত আসবে কোথা থেকে? আর ভূত বলতে কোন কিছু হয় নাকি!তুমি তো শুধু শুধু ভয় পাচ্ছ,তেমন কিছুই হয়নি।আসলে আমি তো নিলয়কে বলে ওর হেল্প নিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে ছাদে এসেছি তখন নিলয়ও আমার সাথে ছাদে এসেছিল।রাত অনেক হওয়ায় নিলয়ের খুব ঘুম পেয়েছিল বলে ও চলে গেছে রুমে।আর যাওয়ার আগে আমার কথা মতো ছাদের দরজা বাহির থেকে বন্ধ করে গেছে যেন কেউ আসলে আমি বুঝতে পারি।’

নিহানের কথা শুনে নিশি বলল__

‘ আপনার এই বেশি বুঝার জন্য আজ আমি এত ভয় পেলাম, সরুন সামনে থেকে!’

এই বলে নিশি গিয়ে বসে পড়লো নিশিদের ছাদে থাকা দোলনায়। নিশিকে দোলনায় বসতে দেখে নিহান ও গিয়ে নিশির কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পরলো। নিহান কে কোলে মাথা দিতে দেখে নিশি বলল__

‘ এই উঠুন বলছি, একদম আমার কাছাকাছি আসবেন না! আপনি আমার কোলে মাথা কেন দিয়েছেন?’

নিশির কথা শুনে নিহান বলল __

‘হাহ,তোমার মত মেয়ের কোলে মাথা দিতে আমার বয়েই গেছে আমি তোমার বউয়ের কোলে মাথা দিয়েছি এখন চন্দ্র বিলাস করবো বলে!’ নিশু পাখি আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও তো!!’

‘আমি পারবো না, আমাকে কেন বলছেন?’

‘তোমাকে বলছি কারণ তুমি আমার বউ তাই! এখন তুমি যদি বলো তাহলে আমি অন্য মেয়েদের কোলে মাথা রেখে এমন চন্দ্রিলাস করতেই পারি!কোন সমস্যা নেই!!’

নিহানের কথা শুনে নিশি নিহানের চুলগুলো এক থাবায় ধরে বলে__

‘ কি বললেন আপনি?আপনি অন্য মেয়েদের কোলে মাথা রাখবেন, চন্দ্র বিলাস করবেন, করাচ্ছি আপনার চন্দ্র বিলাস!!’

এই বলে নিশি নিহানের চুলগুলো টেনে ধরে!চুলে টান পড়ায় নিহান বলে __

‘আরে কি করছো টা কি? ছাড়ো লাগছে তো আমার!’

‘ লাগুক আর বলবেন অন্য মেয়েদের কথা?আমি ছাড়া অন্য কোন মেয়েদের দিকে তাকালেও খবর আছে বলে দিলাম!!’

‘আরে আজব আমি তো তোমাকেই প্রথমে বলেছিলাম, কিন্তু তুমি যদি আমাকে ফিরিয়ে দাও তাহলে তো আমি অন্য কোথাও যাবোই!এখন আমার চুলগুলো ছাড়ো মাথায় ব্যাথা পাচ্ছি।’

নিহানের কথা শুনে নিশি চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে বলল__

‘ এবারের মত মাফ করলাম আর কোনদিনও এমন কথা বলবেন না!আমি জন্য আপনার মুখে অন্য কোন মেয়ের কথা না শুনি!’

নিশির কথা শুনে নিহান বলল__

‘ কেন জেলাস হচ্ছ নাকি?’

‘ জানি না!’

‘ জানি না মানে? আমি যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দাও নিশি।’

নিশি চুপ,,, নিশিকে চুপ থাকতে দেখে নিহান বলল__

‘ আচ্ছা ঠিক আছে কথা বলতে হবে না।তুমি আমার চুলগুলো টেনে মাথা ব্যথা উঠিয়ে দিয়েছো এবার অন্তত মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও!’

নিহানের কথা শুনে নিশি মুখ ভেংচি দিয়ে নিহানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ নিশিকে চুপ থাকতে দেখে নিহান বলল __

‘কি হল এমন চুপ করে আছো কেন?’

(তারপর তো আপনারা জানেনই )

বর্তমানে,,,

‘আমি কি এমন বলেছি যে তুমি রেগে আছো বলো!’

‘ না আপনি কিছুই বলেননি শুধু আমাকে ছেড়ে অন্য মেয়ের কাছে যেতে চেয়েছেন!’

মুখ ফুলিয়ে বলল নিশি। নিশির কথা শুনে নিহান বলল__

‘ তার মানে তুমি সত্যিই জেলাস তাই তো?’

‘ না আমি কেন আপনাকে নিয়ে জেলাস হতে যাব, হ্যাঁ!’

‘ না এমনি বললাম,আচ্ছা ছাড়ো সেসব কথা জানো আজকের এই সুন্দর রাতটা দেখে আমার সেই রাতের কথা মনে পড়ে গেল!’

‘ কোন রাতের কথা?’

‘ আরে ওই রাতের কথা যেদিন প্রথম আমরা ঝগড়া ছাড়া প্রথম বন্ধু হয়ে কথা বলেছিলাম, সেই রাতেও কিন্তু এমন জোছনা ভরা আর মুগ্ধ কর একটি রাত ছিল।’

‘ হ্যাঁ,সেই রাতের কথা কি আর ভুলতে পারি!সেই রাতে কথা বলতে গিয়েই তো আজ আমরা বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি।’

‘ হ্যাঁ সত্যিই আমরা যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিনই মনে থাকবে আমাদের ওই রাতের কথাটা!’

‘হ্যাঁ, শুনুন না আমরা যখন বুড়ো হয়ে যাব! তখন আমাদের নাতি-নাতনীদের আমাদের এই শত্রু থেকে বন্ধু হওয়ার গল্প করবো কেমন!!’

নিশির কথা শুনে নিহান মনে মনে বলে___

‘ এই মেয়ে সত্যি একটা পাগলি!এখনো ছেলে মেয়ে হওয়ার নাম নেই, আর ও কিনা নাতি-নাতনী কথা ভাবছে!!’

‘কি হলো আমি কি বলছি আপনি কি শুনছেন?কোথায় হারিয়ে গেলেন আপনি?’

নিশির কথা শুনে নিহান তার ভাবনা থেকে বেরিয়ে মুচকি হেসে বলল__

‘ হ্যাঁ শুনছি,তো তোমার যা ইচ্ছে বলো ঠিক আছে!’

‘ হুম ঠিক আছে!’

এমন হাজারো গল্পে গল্পে কেটে গেল নিশি আর নিহানের আজকের এই জোছনা ভরা রাত। আর তাদের স্মৃতির পাতায় তৈরি হলো নতুন একটি স্মরণীয় রাতের গল্প।

#চলবে,,

(আসসালামুআলাইকুম, কেমন আছেন সবাই? আইডিটা সত্যি খুবই সমস্যা হচ্ছে তাই গল্প লিখতে খুবই দেরি হচ্ছে।তার জন্য আমি দুঃখিত আর গল্পটা কেউ ছোট বলবেন না দয়া করে কারণ 1000+ ওয়ার্ড আছে।এতোটুকু লিখতেই আমার অনেক কষ্ট হয়েছে তাই কেউ ছোট বলবেন না! রিচেক দেওয়া হয়নি তাই ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here