#তোমার_মায়ায়_আবদ্ধ_আমি ?
#পর্বঃ15
#লেখনিতেঃসামিয়া_আক্তার_মুনা ?
সকালে,,,,,
জানালার কার্নিশ বেয়ে আসছে ফুরফুরে বাতাস আর সেই বাতাসে বারংবার উড়ে চলেছে নিহানের রুমের পর্দা গুলো। আর পর্দা গুলো উঠতেই মিষ্টি একফালি রোদ্দুর এসে আছড়ে পড়ছে নিহানের মুখের ওপর। একটু পর পর মুখের উপর রোদ পড়তেই নিহানের ঘুম হালকা হয়ে যায়।ঘুম হালকা হতেই হঠাৎ নিহান অনুভব করে তার বুকের উপর আছড়ে পড়ছে কারো গরম উত্তপ্ত নিঃশ্বাস। এমন অনুভূতি হওয়ায় নিহান চোখ মেলে দেখে নিশি তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মুখ গুজে ঘুমিয়ে আছে।নিশির খোলা চুল গুলো এলোমেলো হয়ে এসে পড়ছে নিশির মুখের উপর নিশির এই ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে নিহানের ঘুম যেন এক ছুটে পালিয়ে যায়। নিসপলকভাবে একধ্যানে তাকিয়ে আছে নিহান নিশির মুখের দিকে। ঘুমন্ত নিশির মুখের দিকে তাকিয়ে নিহান মনে মনে বলল___
‘ এ কেমন মায়ায় আবদ্ধ হচ্ছে আমি নিশি।তবে কি নিহান চৌধুরী সত্যিই একটা পিচ্চি মেয়ের প্রেমে পড়ে গেল! ভালোবেসে ফেলল তার পাজি বউকে!!’
নিশিকে পাজি বউ বলে সম্বোধন করে নিহানর নিজে নিজেই হেসে ফেলল। হঠাৎ দরজায় নক পড়ায় নিহান কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। এখন যদি নিশি দেখে ফেলে যে ও নিশির দিকে এইভাবে তাকিয়ে ছিল তাহলে তো অনেক কথা শুনতে হবে। তাই নিহান তাড়াতাড়ি চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান করে শুয়ে থাকে।
দরজায় বারবার নক পড়ায় নিশির ঘুমটা ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠে নিজেকে নিহানের বুকে আবিষ্কার করে নিশির চোখ তো চড়ক গাছ। নিজেকে এমন অবস্থায় দেখে নিশি মনে মনে বলল__
‘ ওরে আল্লাহ,আমি তো ওই পাশে শুয়ে ছিলাম এখানে আসলাম কিভাবে এখন যদি এই বজ্জাত টা আমাকে ওনার এত কাছাকাছি দেখে ফেলে তাহলে তো কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।বজ্জাটা তো আমাকে কাঁচা গিলে খাবে।’
ওইদিকে ভেতর থেকে কোন শব্দ না পেয়ে নিহানদের সার্ভেন্ট চলে যায়। দরজায় নক পড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নিশি খুব সাবধানে নিজেকে নিহানের থেকে ছাড়িয়ে বেড থেকে নেমে বুকে হাত দিয়ে হাফ ছেড়ে নিচু স্বরে বলে__
যাক বাবা বাঁচলাম বজ্জাত টা টের পায়নি।’
এই বলে নিশি কোন মত শাড়িটা ঠিক করে দরজা খুলে নিচে চলে যায় ব্যাগ আনতে। নিশি রুম থেকে যেতেই নিহান চোখ খুলে উঠে বসে হাসতে থাকে। কেননা নিশি নিজেকে নিহানের কাছাকাছি দেখে নিজের মুখের যে বারোটা বাজে ছিল তা দেখার মত।
_______
ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে ফোনে গেমস খেলছিল আফরিন।নিশিকে নিচে নামতে দেখে আফরিন বলল___
‘ গুড মর্নিং ভাবি’
আফরিনের কথা শুনে নিশি মুচকি হেসে বলল __
‘মর্নিং কি এখনো আছে? বেলা নয়টার বেশি বাজে!’
নিশির কথা শুনে আফরিন বলে __
‘আরে,আপু থুরি ভাবি আজকের জন্য এখনই আমাদের মর্নিং বুঝলে।গতকাল এত রাত করে ঘুমিয়েছি তাইতো উঠতে লেট হয়ে গেল।’
‘হুম,তাও ঠিক ‘
‘তুমি এখনো চেঞ্জ করোনি?’
‘আরে আর বোলো না আমার ব্যাগটা তো রাতে এখানেই রেখে চলে গিয়েছিলাম তাই তো আর চেঞ্জ করতে পারিনি। এখন তো ব্যাগটাই নিতে এলাম।’
‘ওহ,ভাবি ওই তো তোমার ব্যাগ ‘
এই বলে আফরিন নিশি কে সোফার পাশে থাকা ব্যাগটা এনে দেয়। আর নিশি ব্যাগ নিয়ে উপরে চলে যায় ফ্রেশ হতে।নিশি ব্যাগ হাতে করে উপরে যাচ্ছে আর বলছে __
‘উফ কি ভাড়ি রে বাবা তার উপরে এই শাড়ি, কিভাবে যে সবাই এসব শাড়ি পরে আল্লাই জানে।’
এসব বলে নিশি রুমে গিয়ে দেখে নিহান বেডে নেই নিহানকে না দেখে নিশি মনে মনে বলল ___
‘ভাগ্যিস আমি আগে উঠেছিলাম না হলে তো ধরা পড়ে গেল অনেক কথা শুনতে হতো!কিন্তু এই পাজিটা গেল কই?’
ওয়াশ রুম থেকে পানির পরার আওয়াজ পেয়ে নিশি মনে মনে বলল ___
‘মনে হয় ফ্রেশ হতে গেছে যাই আমি গিয়ে আফরিনের রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসি।’
এই বলে নিশি চলে গেল আফরিনের রুমে।
____
ফ্রেশ হয়ে একটা জিন্স আর টপস পরে গলায় স্কার ঝুলিয় মাথার চুল হাতের সাহায্যে ঠিক করতে করতে নিচে নাম ছিল নিশি।নিশিকে এই ড্রেসে দেখে মিসেস চৌধুরী বললেন___
‘নিশি মা আমি জানি তুই এইসব পোশাকেই কমফোর্ট। কিন্তু মা এখন তো তুই এই চৌধুরী বাড়ির বউ এখন যদি তুই এইসব জিন্স টপস পড়িস তাহলে তো খারাপ দেখাবে তাইনা। তাছাড়া একটু পরেই হয়তো নিহানের ফুপ্পি আসবে তোকে দেখতে উনি যদি তোকে এসব পোশাকে দেখে মন্দ বলতে পারে।তুই এক কাজ কর একটা শাড়ি পড়।’
মিসেস চৌধুরীর কথা শুনে নিশি বলল__
‘ কিন্তু মামনি আমি তো তেমন শাড়ি তেমন কন্ট্রোল করতে পারি না।’
‘ কিন্তু’
‘ কিন্তু কিছুই না মা,ও যাতে কমফোর্ট ফিল করবে তাই পড়বে।তাছাড়া ওই মহিলাকে খবর দিয়েছে কে আমি বলে দিচ্ছি মা ওই মহিলা আসছে ভালো কথা কিন্তু এসে যেন তোমাকে বা নিশিকে কোন কথা না শোনায়।’
ফ্রেশ হয়ে নিচে নামার সময় মিসেজ চৌধুরী আর নিশির কথা শুনে এই বলে নিহান।নিহানের কথা শুনে মিসেস চৌধুরী বলে __
‘রেগে যাচ্ছিস কেন নিহান?আপু এবার আর কিছু বলবে না দেখিস। আর নিশি কে আমি নিজেই কিছু বলতে দেব না।’
‘ হুম ঠিক আছে আর নিশি তুমি বাড়ি থেকে কোন লং ড্রেস বা চুরিদার টাইপ জামাকাপড় এনে থাকলে এখন ওইটা পরে নাও, বিকেলে গিয়ে আমি তোমার জন্য ড্রেস এনে দিবো।’
নিহনের কথা শুনে নিশি বলল __
‘হ্যাঁ আছে আমি চুরিদার এনেছি!’
‘তাহলে ঐটা পড়ে নাও বিকেলে গিয়ে আমি তোমার জন্য ড্রেস এনে দেব। ‘
নিহানের কথা শুনে নিশি উপরে চলে যায়।নিশি একা যবে ভেবে নিশির সাথে আফরিনও যায়।
______
‘আচ্ছা আফরিন,স্যার তোমার ফুপ্পির কথা শুনে এমন রেগে গেলেন কেন?’
‘আরে আর বলোনা ফুপ্পি হলেন বাবার একমাত্র চাচাতো বোন।তার ওপর বাবার বড় তাই উনি এই বাড়িতে এলেই আম্মুর এটা ওটা নিয়ে খুত ধরে, বড় বলে বাবাও কিছু বলতে পারে না কিন্তু ভাইয়া যখন দেশে ছিল ভাইয়ার সামনে মাকে কিছু বললে ভাইয়া কথা শুনিয়ে দিত। কিন্তু ভাইয়া যখন দেশে ছিল না তখন আমাদের বাড়িতে এলে অনেক কথাই মাকে শুনিয়েছে।আমরা ভাইয়াকে বলতাম না ভাইয়া শুনলে ফোন করে কথা শুনাতো তাই আমরা কিছু বলতাম না। কিন্তু এবার আসুক না কিছু বললে দিবে ভাইয়া কথা শুনি।’
‘ আচ্ছা চলো আমি রেডি নিচে চলো।’
_______
‘বাবা ভালোই তো বউকে আস্কারা দিচ্ছ রেহানা!’
টেবিলে বসে সবাই মিলে নাস্তা করছিলাম হঠাৎই কোন মহিলার কথা শুনে পিছন ফিরে দেখি একজন মহিলা ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে আছে। ওনার বেশ পোশাক দেখে তো ভালো ফ্যামিলির মনে হচ্ছে।আমার ভাবনার মাঝে আফরিন আমার কানের সামনে এসে বলে __
‘এসে গেছে কটকটির মা কাটি বুড়ি!’
‘মানে?’
‘মানে ইনিই হলেন আমার সেই ফুপ্পি দেখছো এসেই কেমন পিঞ্জি ওয়ালা কথা বলল।’
আফরিনের কথা শুনে আমি বললাম __
‘ চুপ কর’
নিহানের ফুপি কে দেখে মিস্টার চৌধুরী বললেন__
‘আরে আপু, কেমন আছো? এসো বসো!’
মিস্টার চৌধুরীর কথা শুনে নিহানের ফুপ্পি বললেন__
‘ সেসব পরে,আগে বল বউকে এত আশকারা কেন দিচ্ছিস?বাড়ির বউ কই আগে সবাইকে খাইয়ে তারপর নিজে খাবে!তানা উনি শশুর-শাশুড়ির সাথে বসে খাচ্ছে।আর নতুন বউ এগুলো কি পড়েছে,শাড়ি কই?’
নিহানের ফুপ্পির কথা শুনে নিহানের মা বললেন__
‘ আসলে আপু এই যুগের মেয়েরা কি আর শাড়িতে অভ্যস্ত নাকি ও শাড়ি পরতে পারে না। তাই আর,,,,’
মিসেস চৌধুরীর কথার মাঝেই ওনাকে থামিয়ে নিহানের ফুপ্পি বললেন __
‘বউকে এতো স্বাধীনতা দিতে নেই নইলে দেখা যাবে তোমার ছেলেকে নিজের আঁচলে বেঁধে রাখবে। ওর ভাগ্য ভালো যে ও আমার ছেলের বউ না নাহলে বাড়ির বউয়ের কি কি করণীয় তা সব ভালো করে শিখিয়ে দিতাম। আর,,,,’
এতক্ষন সব কথা নিহান চুপচাপ সহ্য করছিল কিন্তু ফুপ্পির এত লাগাম ছাড়া কথা শুনে নিহান আর নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করতে পারলো না। তাই ও মিসেস জেসমিন (নিহানের ফুপ্পি) এর কথার মাঝেই বলে উঠল__
‘ জাস্ট এনাফ ইজ এনাফ! তুমি থামবে, এতদিন এই বাড়ি আসলে আমার মায়ের খুত ধরতে আর এখন আসছো আমার বউয়ের খুত ধরতে। আর কি বললে ও আমাদের সাথে কেন খেতে বসেছে? কেন ও আমাদের পরে কেন খাবে?এই বাড়ির একমাত্র পুত্রবধূ ও,ও কেন সার্ভেন্টের মতো আমাদেরকে আগে খাবার সার্ভ করে পরে খাবে।কেন?আর যেন কি বললে ও, ওর ভাগ্য ভালো যে ও তোমার ছেলের বউ হয়নি তাই না? ও যদি তোমার ছেলের বউ হতো তাহলে তুমি ওকে সব শিখিয়ে দিতে তাই তো? হ্যাঁ,এই একটা কথা তুমি সত্যি বলছো যে ওর ভাগ্য ভালো যে তোমার বাড়ির বউ হয়নি, না হলে যে ওর কি হতো আল্লাহই জানে। কিন্তু একটা মজার ব্যাপার হলো তুমি তোমার নিজের ছেলের বউকে এত জ্বালিয়েছে যে বেচারী এখন আলাদা সংসার করছে। আর কি বললা ও আমাকে আসলে বাঁধবে কেন আমি কি কোন চাবি নাকি যে আমাকে আচলে বাঁধবে।আমাকে আমার মার কাছ থেকে নিয়ে যাবে, তুমি তোমার নিজের দোষে নিজের একমাত্র ছেলে কে হারিয়েছ আর দোষ দিচ্ছ পরের বাড়ির মেয়ের ওপর। এখানে এসেছ খাও দাও বেড়াও তারপর চলে যাও। আমি যেন তোমাকে আর না দেখি আর কাও কে কোন কথা শুনিয়েছ।’
এই বলে খাবার না খেয়েই নিহান রেগেমেগে উপরে চলে যায়।নিহান উপরে যেতেই মিসেস জেসমিন বলল__
‘দেখেছিস ভাই (মিস্টার চৌধুরী কে উদ্দেশ্য করে) তোর ছেলে আমাকে আবারও এতগুলো কথা শুনালো।’
মিসেস জেসমিনের কথা শুনে মিস্টার চৌধুরী বলল__
‘ আপু ছোট মানুষ ছেড়ে দাও, তুমি তো জানোই ও সব সময় একটু রাগী টাইপের বিদেশ থেকে এসেছে পর থেকে তো আরো একটু রাগী বেশি হয়ে গেছে। তুমি বরং যাও রুমে গিয়ে রেস্ট নাও।’
মিস্টার চৌধুরীর কথা শুনে মিসেস জেসমিন বলল __
‘হ্যাঁ,হ্যাঁ দে ছেলে -মেয়েদের এভাবেই আস্কারা দে’
এই বলে মিসেস জেসমিন রুমে চলে যায়।উনি যেতেই আফরিন নিশিকে বলল __
‘দেখলে তো ভাবী এসেই ঝড় তুলে দিছে এজন্যই ভাইয়া ওনাকে দেখতে পারেনা।’
আফরিনের কথা শুনে মিসেস চৌধুরী বললেন__
‘ থাক বাদ দে এসব কথা, নিশি যাও নিহান কে গিয়ে ডেকে নিয়ে আসো।না খেয়েই ছেলেটা রাগ করে চলে গেল, যাও ডেকে নিয়ে এসো।’
মামুনির কথা মতো নিশিও উপরে চলে যায় নিহানকে ডাকতে।নিহান কে ডাকতে এসে নিশি দেখল নিহান বেডে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।নিশি নিহানের কাছে গিয়ে বলল __
‘মামনি আপনাকে নিচে খেতে যেতে বলেছেন।’
নিশির কথা শুনে নিহান নিশির সামনে দাঁড়িয়ে নিশির হাত দুটো নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলল__
‘ নিশি তুমি ফুপ্পির কথায় কি কষ্ট পেয়েছো?’
নিহানের কাজে নিশি বেশ অবাক হয়ে বলে__
‘ আরে না আমি কেন কষ্ট পেতে যাব?’
‘নিশি তুমি তো এমন শান্তশিষ্ট নও যে তোমাকে কেউ ইভেন আমিও একটা কথা বলে ছাড় পাইনি সেই তোমাকে কেউ এতগুলো কথা শোনালো তারপরও তুমি বলছো তুমি কষ্ট পাও নি বা মন খারাপ করো নি।’
নিহানের কথা শুনে নিশি সত্যিই নিজের প্রতি অবাক সত্যিই তো নিহান তো ঠিকই বলেছে। তবে কি সত্যিই বিয়ের পর সব মেয়েরা এতটা পাল্টে যায় যে মেয়েকে কেউ কোনো কথা শোনাতে পারতো না সেই মেয়েকে সবাই কথা শোনায় আর সেই মেয়েটাও চুপ করে মুখ বুঝে সবটা মুখ বুঝে সহ্য করে নেয়।
‘নিশি যাও তৈরি হয়ে নাও আমরা এখন বের হব।’
নিহানের কথা শুনে নিশি বলল__
‘কেন কোথায় যাব আমরা?’
আমরা এখন তোমার জন্য শপিং করতে যাব তারপর লাঞ্চ করে একেবারে বাসায় আসব।যাও তৈরি হয়ে নাও।’
এই বলে নিহান রুম থেকে বেরিয়ে যায় নিহান যেতেই নিশি মনে মনে বলে __
‘স্যার হঠাৎ আমাকে নিয়ে এত ভাবছেন কেন?তবে কি,, না,না এসব আমি কি ভাবছি উনি কেন আমাকে ভালবাসতে যাবেন?’
#চলবে,,
(ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা সাপেক্ষ)