#তোমার_মায়ায়_আবদ্ধ_আমি ?
#পর্বঃ11
#লেখনিতেঃসামিয়া_আক্তার_মুনা ?
‘নিশি,এটা কি তোরা ঠিক করেছিস? আমাদের রেখে তোরা একা একা ঘুরে এলি।’
‘ আরে আপু তোমরা তো সবাই ঘুমিয়ে ছিলে তাই তোমাদের নিয়ে যেতে পারিনি।প্লিজ আমার লক্ষী আপু রাগ করো না।আর তাছাড়া আজকে বিকেলে আমরা তো নদীর পাড়ে ঘুরতে যাব বলে ঠিক করা হয়েছে তখন আমরা সবাই প্রচুর মজা করব ঠিক আছে!’
‘হুম,হয়েছে এখন আর আমাকে বোঝাতে হবে না।চল খেতে বসবি।’
‘হ্যাঁ,চল খুব খিদে পেয়েছ এই চল (নদী আর রুহী কে উদ্দেশ্য করে) ফ্রেশ হয়ে আসি ‘
এই বলে নিশিরা চলে যায় ফ্রেশ হতে।
________
খাবারের টেবিলে বসে আছে সবাই, শুধু নিহান আর নিশিরা বাদে।নিহান খাবার টেবিলের সামনে আসতেই নিলয় ভ্রু নাচিয়ে নিহানকে বলল____
‘ কিরে নিহান!আমার বোন না সব সময় ঝামেলা পাকায় তাহলে আমার বোনের সাথে একা একা কেন ঘুরে এলি।একটা বার তো আমাকে বলতে পারতি!’
‘ তোর বোন যে ঝামেলা পাকা এটা তুইও জানিস,তাই বলে ওর সাথে যে ঝগড়া করা ছাড়া আমি ঘুরতে যেতে পারবো না এটা কোথায় লেখা আছে।আর আমি কি তোর বোনের সাথে একা গেছি নাকি আমরা কয়েকজন মিলে গিয়েছিলাম।আর তুই এমন করে কথা বলছিস কেন?আমরা একা একা গিয়েছি বলে কি তোর হিংসা হচ্ছে নাকি? তাহলে ঘুমিয়ে ছিলি কেন, তোরা যদি না ঘুমিয়ে থাকতি তাহলে তো তোরাও যেতে পারতি।আচ্ছি ঠিক আছে কান্নাকাটি করিস না আজ বিকেলে তো যাব আমরা নদীর পাড়ে ঘুরতে।তখন মন ভরে ঘুরে আসিস ঠিক আছে।’
হা হয়ে সবাই নিহানের দিকে চেয়ে আছে,সবাই যেন নিজের কান আর চোখ কে বিশ্বাসই করতে পারছে না কারণ দেশে এসেছে পর থেকে কেউই নিহানকে এমন ঠাট্টা করে কথা বলতে দেখেনি।সব সময় কেমন রাগী গম্ভীর হয়ে থাকে তাই সবাই বেশ অবাক হয়।সবার মত নিহানের কথায় নিশিও খুব অবাক হয়। খাবার টেবিলে এসে নিহানের সব কথা শুনে নিশি মনে মনে বলে__
‘ ও মাই আল্লাহ! উনিও রাগ ছাড়া এভাবে মজা করে উত্তর দিতে পারেন!’
_____
‘বাহবাহ,নিহান এ আমি কাকে দেখছি যে তুই কি না আমার বোনকে নিয়ে সারাক্ষণ আমার কাছে নালিশ করতি, সে তুই এখন ওকে নিয়ে ভালো ভালো কথা বলছিস!’
নিলয়ের কথা শুনে নিশি চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলল___
‘ কেন তোমার বোন কি খুব পাজি নাকি ভাইয়া? যে সব সময় তার নামে শুধু নালিশই শুনবে! ভালো কথা শুনতে পারবে না?’
‘শুনবে কি করে? সব সময় তো ঝগড়াই কর তাই তোমার ভাই সবসময় নালিশই শুনবে এটাই তো স্বাভাবিক।’
নিহানের কথা শুনে নিশি বলল ___
‘কি বললেন আপনি?’
‘কই কিছু নাতো!’
এমন হাজারো আড্ডা, হাসি-ঠাট্টায় মেতে ওঠে ওদের ব্রেকফাস্ট টেবিল।
বিকেলে,,,,,,
‘এই নিশি! তোরা কি আজ আদেও নিচে নামবি?নাকি উপরেই বসে থাকবি।সবাই নিচে তোদের জন্য অপেক্ষা করছে। শুধু তোরাই (নদী,রুহি আর নিশিকে উদ্দেশ্য করে) বাকি।’
‘আর পাঁচ মিনিট ভাইয়া!’
‘ তোর পাঁচ মিনিট তো তেতাল্লিশ মিনিটে পরিণত হল কিন্তু তুই তো নিচে নামলি না।’
‘ এইতো ভাইয়া আমরা এসে পড়েছি!’
নিজের হাতের সাহায্যে খোলা চুল গুলোকে ঠিক করে নামতে নামতে বলল নিশি।নিশিরা নামতেই দেখে ড্রয়িংরুম ফাঁকা কেউ নেই। কাউকে না দেখে নিশি বলল ___
‘ভাইয়া সবাই কোথায়?’
‘ সবাই বাহিরে আছে গাড়িতে ওয়েট করছে চল!’
‘ তাহলে চলো!’
এই বলে চলল নিশিরা বাড়ির বাহিরে গাড়ির দিকে। গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে নিশিদের জন্য ওয়েট করছিল নিহান। হঠাৎই নিহানের চোখ যায় বাড়ির সদর দরজার দিকে।ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট মিশ্রণে একটা লং স্কার্ট পরে আছে নিশি।চোখে কাজল,হালকা মেকআপ,আর একটু লিপস্টিক ব্যাস এতেই সব সময়ের মতো ভালো লাগছে নিশিকে। আর নিশির এই সামান্য সাজে মায়াবী মুখের দিকেই চোখ আটকে গেছে নিহানের।
‘কি হলো! স্যার চলুন’
নিহান নিশি কে দেখতে এতটাই ব্যস্ত ছিল যে কখন যে ওরা এতটা কাছে চলে এসেছে বুঝতেই পারেনি। নিশির ডাকে হুস আসতেই নিহান বলল__
‘ হ্যাঁ! হ্যাঁ, চলো’
এই বলে নিহান গিয়ে বসে পড়ে ড্রাইভিং সিটে।নিহানকে বসতে দেখে নিশি,নদী,রুহি যখন পেছনে বসতে যাবে তখনই নিহান বলল__
‘আমাকে কি তোমাদের ড্রাইভার মনে হয়?একজন সামনে এসে বস।’
‘ কেন ড্রাইভার হবেন কেন?আজব কথা!’
‘এই যে তোমরা সবাই পেছনে বসছো আর সামনে শুধু আমি একা তাহলে তো আমাকে তোমাদের ড্রাইভারই লাগবে তাই না।’
নিহানের যুক্তি শুনে নদী বলল__
‘ হ্যাঁ,তাই তো ঠিকই!ঠিক আছে স্যার তাহলে আমি আসছি সামনে।’
‘ হ্যাঁ, এসো’
তারপর নদী সামনে গিয়ে বসতেই নিহান গাড়ি স্টার্ট দিতেই গাড়ি চলতে শুরু করল তার আপন গতিতে। আজ মোট তিনটা গাড়িতে করে নিশিরা বের হয়েছে। ঢাকা থেকে তো ওরা দুটো গাড়ি করে এসেছিল আর গ্রামের বাড়িতে থাকা গাড়ি মিলে তিনটা গাড়ি করে বের হয়েছে।একটা গাড়িতে শুধু মেঘলা আর শুভ গেছে, আরেকটাতে নিলয়,নিরব আর অপু,আর শেষের টায় নিহান, নিশি,নদী আর রুহি।
আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে এগিয়ে চলছে গাড়ি।লোকেশন দেখে গাড়ি ড্রাইভ করছিল নিহান, হঠাৎই তার চোখ পরে যায় গাড়ির সামনে থাকা মিররের দিকে যেখানে দেখা যাচ্ছে গাড়ির জানালার কার্নিশ বেয়ে আসা ফুরফুরে বাতাসে এলোমেলোভাবে উড়ে যাচ্ছে নিশির অবাধ্য চুল গুলো। বাতাসে চুলগুলো বারবার উড়ে এসে নিশির মুখের ওপর পড়ছে আর নিশি চুলগুলো ঠিক করছে। আর বির বির করে কি যেন বলে যাচ্ছে এই দেখে নিহান মুচকি হেসে বলল__
‘পাগলী একটা!মনে মনে কি বলছে আল্লাহই ভালো জানেন,দেখা গেল বাতাসের জন্য চুল উড়ছে বলে মনে মনে হয়তো বাতাসেরই গুষ্টি উদ্ধার করছে!!’
এসব ভেবে আরেকটা হাসলো নিহান প্রায় ত্রিশ থেকে পয়ত্রিশ মিনিট জার্নি করে নিশিদের গাড়ি এসে পৌঁছায় মদন উপজেলার উচিৎপুর হাওয়ারে যাকে বলা হয় মিনি কক্সবাজার। নিশিরা ওখানে পৌঁছাতেই সবাই গাড়ি থেকে নেমে যায়।গাড়ি থেকে নেমে চারিদিকে তাকাতেই সবার চোখ ভরে যায়। এই হাওয়ারে ঘুরতে আসার ছোট বড় পর্যটকদের অভাব নেই, সেই পর্যটকদের জন্য তৈরি করা হয়েছে ছোট ছোট বাঁশের রেস্টুরেন্ট যেগুলো দেখতে খুবই সুন্দর দোতলা মাচা বিশিষ্ট রেস্টুরেন্ট এগুলো সাময়িকভাবেই তৈরি করা হয়েছে।রয়েছে চায়ের দোকান যে গুলোতে চকলেট চা পাওয়া যায়। এক পাশে রয়েছে ঝালমুড়ি, ফুচকা, হালিম,আইসক্রিম,গোলা ইত্যাদি খাবারের দোকান। আরেক পাশে রয়েছে বিভিন্ন কসমেটিক্সের দোকান কিছুটা মেলার মতও বলা যায়।আর নদীর একপাশে রয়েছে সারি সারি নৌকা এখানে আসা পর্যটকরা সবকিছু ঘুরে ঘুরে দেখছে তাদের সাথে সবকিছু ঘুরে ঘুরে দেখছে নিশিরা।নিশি নৌকা দেখে নিলয়দের উদ্দেশ্যে করে বলল__
‘ ভাইয়া চলো না নৌকায় উঠি।’
নিশির কথা শুনে নিলয় বলল__
‘ খবরদার এই কথা বলবে না নৌকায় ওঠার প্রয়োজন নেই। এমনিই ঘোরাঘুরি করো।’
নিলয়ের কথা শুনে নিশি মন খারাপ করে বলে__
‘ কেন ভাইয়া নৌকায় উঠলে কি হবে?’
‘ কিছুই হবে না, নদীর স্রোত দেখেছিস তাছাড়া আমাদের মধ্যে অনেকেই সাঁতার পারে না তাই রিক্স নিয়ে নৌকায় ওঠার প্রয়োজন নেই। চল তোদের ফুচকা খাওয়াই।’
নিশি আর কি বলবে যেখানে ও ছাড়া আর কেউই জোরাজোরি তো দূর নৌকায় ওঠার কথাও বলছে না। এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে একেক জন তাই মন খারাপ করেই চললো নিশি ফুচকার দোকানে। খাওয়া-দাওয়া হাসি ঠাট্টা করে কেটে গেল ওদের বিকেল।
______
রাত প্রায় বারোটা,ভরা জোছনার রাত জানালার কার্নিশ বেয়ে আসছে ফুরফুরে বাতাস।সে বাতাসে উরে চলছে নিশির ঘরের জানালার ধারের পর্দা গুলো আর জানালার ধারে দাঁড়িয়ে সেই মুহূর্তটাকে উপভোগ করছে নিশি। সন্ধ্যায় হাওড় থেকে ঘোরাঘুরি করে এসে এসেই নিশি ঘুমিয়ে পড়েছিল তাই বারোটার দিকে ঘুম ভাঙতেই ও জানালার ধারে এসে দাঁড়ায়। হঠাৎই নিশির মনে ইচ্ছে জাগে যে এখন একটু ছাদ থেকে ঘুরে আসলে কেমন হয়। আর রাতের পাহাড় তার উপরে এমন জোছনা রাত জানলা দিয়ে তো ঠিক ভাবে দেখা যাচ্ছে না ছাদে গেলে নিশ্চয়ই ভালোভাবে দেখা যাবে এভাবে। এই ভেবে চলল নিশি ছাদের দিকে, ছাদে এসে নিশি ছাদের গেট খোলা পেয়ে ভাবল,,,,
‘এত রাতে ছাদে আবার কে আসলো?দেখি তো ছাদে গিয়ে!’
নিশি ছাদে গিয়ে দেখলো ছাদের এক কোনে আকাশের দিক চেয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিহান।নিহান কে দেখে নিশি পেছন থেকে বললো __
‘স্যার আপনি!’
#চলবে,
(আসসালামু আলাইকুম,কেমন আছেন সবাই? রিচেক দেওয়া হয়নি তাই ভুল ছুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ?)