#তোমার_মায়ায়_আবদ্ধ_আমি ?
#পর্বঃ10
#লেখনিতেঃসামিয়া_আক্তার_মুনা ?
গোল গোল চোখ করে নদীর আর রুহি তাকিয়ে আছে নিশি আর নিহানের দিকে।আর ভাবছে আবারো বুঝি লাগবে নিহানার নিশির মধ্যে ঝগড়া!
একটু আগে,,,,
সকালের প্রকৃতি স্বাভাবিকভাবেই দেখতে খুব ভালো লাগে। পাখিদের কিচিরমিচির,কোলাহলমুক্ত পরিবেশ তার ওপরে যদি পাহাড়ি এলাকা হয় তাহলে তো কথাই নেই।সকালের এই মুগ্ধকর পরিবেশ দেখবে বলে নদী, রুহি আর নিশি বের হচ্ছিল।
রুহি আর নদীর সাথে কথা বলতে বলতে নিচে নামছিলাম আমি।হঠাৎই অন্যমনস্ক হয়ে কিছু একটার সাথে পা বেজে পড়ে যাই। মনে হচ্ছে না আর সোজা হয়ে বাড়ি ফিরতে পারব!মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ করছি।
নিজের রুম থেকে বেরিয়ে ছাদে যাচ্ছিল নিহিন। হঠাৎই নিশি কে নিচে পড়ে যেতে দেখে দ্রুত ওকে ধরে ফেলে।
বর্তমানে,,,
চোখমুখ খিচে বন্ধ করে নিহানের গলা ধরে ঝুলে আছে নিশি আর নিশির এই ভিতু মুখের দিকে একধ্যানে তাকিয়ে আছে নিহান।
‘ তুই ঠিক আছিস তো নিশি?’
রুহির কথায় নিহানের হুস আসতেই নিশিকে ছেড়ে দিয়ে ওর দিকে গম্ভীর হয়ে তাকায়।রুহির কথায় আমি চোখ খুলে দেখি আমি মিস্টার বজ্জাত মানে নিহান চৌধুরী সামনে দাঁড়িয়ে আছি! মানে উনি আমাকে বাঁচিয়েছে আল্লাহ এর থেকে তো ভালো ছিল পরে গিয়ে কোমর ভাঙতাম তবু এই বদরাগীর ঝাড়ী থেকে তো বেঁচে যেতাম!
‘এই মেয়ে! তুমি কি হ্যাঁ?সব সময় এত টিরিং,বিরিং করো কেন?
উনার ধমকে আমি আমার ভাবনা থেকে বের হয়ে মনে মনে বলি___
‘ তৈরি হয়ে নে নি! এখন ভাষণ শোনার নিজেকে প্রস্তুত কর’
‘কি হল,কথা বলছো না কেন ইডিয়েট?’
‘দেখুন স্যার প্রথমত আমি এখন ঝগড়া করার মুডে একেবারেই নেই।আমাকে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচিয়েছেন তার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। কিন্তু এখন প্লিজ কিছু বলবেন না।আর এত সুন্দর একটা জায়গা বেড়াতে এসেছেন কই সবার সাথে মিলেমিশে মজা করবেন। তা না আপনি তো উল্টো একা একা সবসময় গম্ভীর হয়ে থাকেন।
একধমে কথাগুলো বলে শ্বাস নিয়ে নিশি আবার বলে__
‘ আপনা কি মন চায় না আমাদের সাথে মজা করতে? যাবেন আমাদের সাথে ঘুরতে?আমরা এখন সকালের পরিবেশটা ঘুরে দেখতে যাচ্ছি।’
নিহান নিশির কথা শুনে খুব মনোযোগ দিয়ে শুনে গম্ভীর হয়েই বলে___
‘তোমরা একটু দাঁড়াও আমি আসছি ‘
এই বলে নিহান চলে যায় নিজের রুমের দিকে।নিহান কে যেতে দেখে নদী বলে __
‘কি হলো ব্যাপারটা!আজকে কিছু বলল না যে?’
‘ আমিও তো কিছুই বুঝছি না বজ্জাতটা কি ভালো হয়ে গেল নাকি?’
বেশ কিছুক্ষণ পর,,,
নিহান রেডি হয়ে গলায় ক্যামেরাটা ঝুলিয়ে নিশিদের সামনে এসে বলে__
‘চলো আমিও যাব তোমাদের সাথে ঘুরতে।’
নিরহানের কথা শুনে নিশি খুশী হয়ে বলল___
‘ সত্যি স্যার!আপনি যাবেন আমাদের সাথে? চলুন তাহলে!’
_______
বেশ উঁচু একটা জায়গা সম্ভবত কোনো ছোট খাটো পাহাড় হবে তার শেষ কিনারে বড় একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে নদী,রুহি, নিশি আর নিহান। সকাল আনুমানিক ছয় টা কি তার একটু বেশি হবে।
‘নিশি তুই আমাদের এখানে কেন নিয়ে এলি?’
নদীর কথা শুনে আমি বললাম__
‘ আমি যখনই এই বাড়িতে আসি সকাল হলে এখানে আসি অপুকে নিয়ে। এখান থেকে তুই ওই পূর্ব দিকে একটু চেয়ে দেখত।’
নিশির কথা মত সবাই ওই দিকে তাকাতেই সবার চোখ মুগ্ধ হয়ে যায়।কারণ মনে হচ্ছে পূর্ব দিকের বিশাল দুটো পাহাড়ের নিচ থেকে লাল কিরণ ছড়িয়ে সূর্য আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসবে সারা পৃথিবীকে তার আলোয় আলোকিত করতে। সবাই দু চোখ ভরে দেখছেখন এই অপূর্ব দৃশ্য।সবাই যখন প্রকৃতির রূপ দেখতে ব্যস্ত। নিশি তখন কিছুটা এগিয়ে গিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে দুই হাত প্রশাসিত করে দাড়িয়ে পড়ে। সূর্যোদয়ের এমন অপরূপ দৃশ্য যখন নিহান তার ক্যামেরায় বন্দি করছিল তখন নিহানের ক্যামেরায় ধরা পড়ে চোখ দুটো বন্ধ করে দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে আছেন নিশি এলোমেলো ভাবে উরে যাচ্ছে নিশির অবাধ্য খোলা চুল।নিহান এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে নিশির দিকে।
‘ এই নিশি তুই এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?’
‘প্রকৃতি কেঅনুভব করবি’
‘ কি বলছিস তুই প্রকৃতি কে কি আবার অনুভব করা যায় নাকি?’
‘হুম যায়! যদি চাস তাহলে চোখ বন্ধ কর।’
নিশির কথা শুনে নদী রুহি আর নিহান তাদের চোখ বন্ধ করে ফেলে।ওরা চোখ বন্ধ করতেই নিশি বলে__
‘পাচ্ছিস পাখিদের চিরমিচির শব্দ শুনতে।’
নদী রুহি আর নিহান বলে__
‘হুম পাচ্ছি’
‘ এবার হাত প্রসারিত কর,,, পাচ্ছিস বাতাসকে অনুভব করতে।’
এই প্রথম এইভাবে প্রকৃতিকে অনুভব করছে নিহান মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে সে প্রকৃতির প্রতি।
‘ এবার প্রাণ ভরে নিশ্বাস নে,, পাচ্ছিস কাল রাতের বৃষ্টির কারণে ভিজে যাওয়া মাটির ঘ্রাণ।এভাবেই প্রকৃতিকে অনুভব করা যায়।’
‘ ওরে দোস্ত সত্যিই আমি প্রকৃতিকে আজ ভীষণভাবে অনুভব করতে পেরেছি।’
নদীর কথা শুনে রুহি বলল__
‘হ্যাঁ রে নিশি সত্যিই মুগ্ধকর অনুভূতি ছিল।’
ওদের কথা শুনে নিশি খুশি হয়ে বলল__
‘ একটা জিনিস খাবি?’
‘ কি?’
‘ চল আমার সাথে’
এই বলে নিশি ওদের একটা চায়ের দোকানের কাছে নিয়ে আসে।চায়ের দোকানদার নিশিকে দেখেই বলল__
‘ আরে নিশি মা কবে এসেছ তুমি? কেমন আছো?’
‘ আমি তো সবসময়ের মতোই বিন্দাস আছি! তুমি কেমন আছো কাকা? আর আমি গতকাল রাতে এসেছি।’
‘ ভালো আছি মা,তা তোমার বাড়ির সবাই কেমন আছে? আর এরা কারা (নিহানদের উদ্দেশ্য করে)?’
বাড়ির সবাই তো ভালোই আছে ওরা হচ্ছে আমার বান্ধবী।নদী আর রুসি আর উনি হলেন আমাদের স্যার সাথে আমাদের নিলয় ভাইয়ের বন্ধু।
‘ নিলয় মানে তোমার ওই বড় ভাইয়া?’
‘ হ্যাঁ কাকা,এখন মেহমানদের জন্য তোমার স্পেশাল চা টা দাও তো।’
নিশির কথা শুনে নিহান বলল__
‘কি তুমি আমাদের এই রাস্তার পাশের দোকানের চা খাওয়াবে বলে এতদূর টেনে নিয়ে এসেছ?’
‘ আরে স্যার খেয়ে দেখেন জীবনে ভুলবেন না! তোরা খাবি তো (নদী আর রুহি কে উদ্দেশ্য করে)।’
বিনিময়ে নদীরা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায়।দোকানদার ওদের চা দিতেই নিশি সবাইকে চা দেয়।নিহান ভেবেছিল খাবে না। কিন্তু পরে নিশি এত সখ কর দিয়েছে খেতে এই ভেবে খেয়ে দেখল না এই চা তো সত্যিই খুবই ভালো খেতে।নিহান কে চুপচাপ খেতে দেখে নিশি বলে __
‘কি স্যার! বলছিলাম না খুব ভালো খেতে।’
বিনিময় নিহান মুচকি হাসে,খাওয়া শেষে বিল পরিশোধ করে দোকানদার কে বিদায় জানিয়ে ওরা এবার আশপাশটা ঘুরে ঘুরে দেখছে আর নিহান ক্যামেরায় সব কিছু বন্দী করছে। নিশি নিহানকে উদ্দেশ্য করে বলল __
‘ কেমন লাগছে স্যার আমাদের গ্রাম ঘুরতে?’
‘খুবই ভালো লাগছে আর তোমাকে ধন্যবাদ এত সুন্দর ভাবে আমাকে ইভেন আমাদের কে প্রকৃতির মায়ায় ফেলার জন্য।’
নিহানের মুখে প্রথম নিজের জন্য প্রশংসা শুনে নিশি খুশি হয়ে বলল__
‘ধন্যবাদ দেওয়ার কিছুই নেই,আর আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সকালে আমাকে বাঁচানোর জন্য,সাথে আরো ধন্যবাদ আমাকে বকা না দেওয়ার জন্য। ‘
এই বলে নিশি হেসে ওঠে।
#চলবে,
( আসসালামুআলাইকুম, কেমন আছেন সবাই?সরি অনেকটা দেরি হয়ে গেছে।তার জন্য আমি দুঃখিত রিচেক দেয়া হয়নি তাই ভুলত্রুটি হলে ক্ষমাদৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ?)