তোমার নিরব অভিমানীনি পর্ব ১৩

0
1621

#তোমার_নিরব_অভিমানীনি(১৩)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)

যারা ব‌ই পড়ে তাদের মন অনেক ভালো হয়। সে জন্যই তুমি এতো ভালো তাই না ভাবীমণি?
রাহা’র এহেন জিজ্ঞাসাবাদে নজরাত শুধু মুচকি হাসে। রাহা থেমে আবারো বলে,
—” আমার ভাইয়া ও অনেক ভালো ভাবীমণি। শুধু নিজ থেকে কারো সাথে মিশতে পারে না। তবে যে নিজ থেকে মিশে তার সাথে দিব্বি মিশে যায়। ভাইয়া…
নজরাত কথার প্রসংঙ্গ পাল্টে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বলল,
—” চলো ওখানে বসে কথা বলি?
তারপর তারা বেলকনির ছোট কাম ছাদে গিয়ে দোলনায় বসে। ছোট্ট ছাদে ড্রিম লাইটের আলোয় মৃদু আলোকিত হয়ে আছে। সাথে রাতের আকাশে মিটিমিটি তারা। খুব সুন্দর উপভোগ করছে রাহা। নজরাত তখন মৃদুস্বরে বলল,
—” আচ্ছা রাহা তোমাকে না জানিয়ে এত বড় কাজটা করেছি তুমি কি রাগ করেছো?
রাহা ঠোঁট কামড়ে ধরে মুচকি হাসে, মাথা নিচু করে বসে থাকে। নজরাত ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ফিচেল হেসে বলল,
—” আমার হবু ভাবীমণি কি লজ্জা পাচ্ছে? দেখি দেখি লজ্জা পেলে তাকে কেমন লাগে?
রাহা লজ্জায় লাল রঙা হয়ে আড়ষ্ট ভাবে বসে থাকে। মুখ ফুটে বলতে পারে না যে, নজরাত তার জন্য ঠিক কি করেছে? সেই কলেজ জীবন থেকে রূপক কে পাগলের মত ভালবাসে সে। মাঝ খানে কিছু ভুল বোঝাবুঝির জন্য তাদের দূরত্ব বজায় আছে। না হয় হতো না কখনোই। আর ওদের সেই দূরত্ব ঘোচাতেই আল্লাহ তা’আলা নজরাত কে মুস্কিল আসান হয়ে পাঠিয়েছেন।

রাদ শাহমাত সেই প্রথম থেকেই সোফায় এক কোনায় বসে আছে। বোনের এনগেজমেন্ট হ‌ওয়ার ব্যাপারটায় বেশ অবাক হয়েছিল রাদ শাহমাত। এরকম হুট করে এনগেজমেন্ট? তবে মনে মনে খুশি হয়েছে এই ভেবে যে তার বোনটা তার ভালোবাসার মানুষটিকে পাবে। আল্লাহ চায়েতো সুখে সংসার করবে। এতেই খুশি রাদ।
______

লম্বা বড় ডাইনিং টেবিলে খাবার পরিবেশন করা হয়। নজরাত আর রাদ এর পরিবার ছাড়া সব মেহমান একসাথে বসে। তারপর তারা খাওয়ার পর নজরাত আর রাদ এর পরিবার বসে খেতে। সাজ্জাদ হোসেন নজরাত কে বললেন, রাদের খাবার সার্ব করে দিতে। বাবার কথা মতো নজরাত রাদ এর প্লেটে খাবার দেয়। মনে মনে ঠিক করে রাদ যতক্ষন পর্যন্ত নিষেধ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত দিতে থাকবে। কিন্তু রাদ মানা করলো না। এদিকে প্লেটে খাবার দিতে দিতে ছোট খাট একটা পিরামিড তৈরি হয়ে গেছে। এর বেশি দিলে খাবার গুলো প্লেটের চারিদিকে পরে নষ্ট হবে ভেবে আর দিল না। নিজের সিটে বসে রইল।
তখন রাদ শাহমাত তাকে অবাক করে দিয়ে তার ফাঁকা প্লেট নিয়ে গিয়ে রাদ এর পিরামিড প্লেট টা তাকে দিয়ে দিল। নজরাত অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। আর রাদ নিজে নিজে খাবার নিয়ে খেতে শুরু করলো।

খাওয়া শেষে নজরাত রাহা কে নিয়ে রূপক এর রুমে যায়। রুমটা পছন্দ হয় রাহার। ফার্নিচারে ভরপুর তো আছেই। এর মাঝে বেশ গোছানো, পরিপাটি।
গল্প করতে করতে নজরাত তার ভাইয়ের পছন্দ অপছন্দ সম্পর্কে জানায় রাহা কে। রাহা বেশ আগ্রহ নিয়ে শুনে।

রাত বেড়ে যাচ্ছে, বাসায় ফিরতে হবে বলে সাজেদা চৌধুরী খবর পাঠিয়েছেন রাহা নজরাত কে নিচে যাওয়ার জন্য।তারা নিচে আসতে সাজেদা চৌধুরী বাসায় যাওয়ার কথা বললেন।
তারপর নজরাত সহ সবাই বিদায় নিয়ে চলে আসবে, তখন সাজেদা চৌধুরী জিজ্ঞাসা বললেন,
—” রূপক কোথায়? ও কি এখনো রে’গে আছে?
নজরাত মৃদুস্বরে বলল,
—” আসলে মা ভাইয়া কিছু কাজের জন্য হয়তো বেরিয়েছে।
—” অহ আচ্ছা।

অতঃপর সাজ্জাদ হোসেন এর থেকে বিদায় নিয়ে তারা বেরিয়ে পরে বাসার উদ্দেশ্যে।
গাড়িতে নজরাত জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে থাকে। পিছনে রাহা সাজেদা চৌধুরী আর মণি তারা ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। হঠাৎ রাদ শাহমাত অস্ফুট গলায় বলল,
—” আমি আপনার সাথে এতো মিসবিহেব করি তবুও আপনি আমার বোনের জন্য এতো কিছু করছেন কেন?
নজরাত হঠাৎ রাদ এর কথা শুনে ভরকায়, হকচকায় পাশ ফিরে রাদ এর দিকে চেয়ে থাকে। রাদ গভীর মনোযোগ দিয়ে ড্রাইভ করছে। চোখ দুটো সামনের রাস্তায় নিবদ্ধ। নজরাত এর থেকে কোন সারা না পেয়ে তাকায় সে। দেখে নজরাত তাকিয়ে আছে তার দিকে। মেয়েটার চোখ দুটো ঘুমে নিবু নিবু হয়ে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে জোর করে চেয়ে আছে। রাদ শাহমাত এর বড্ড মায়া হলো বলল,
—” চোর পাহারা দিচ্ছেন নাকি? ঘুম পাচ্ছে তো ঘুমিয়ে পড়ুন।
নজরাত দীর্ঘশ্বাস ফেলে সিটে হেলান দিয়ে নেত্রজোড়া বন্ধ করে। রাদ একবার তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।

কিছুক্ষণ পর নজরাত ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে জানালার দিকে ঝুঁকে পরে। রাদ ব্যাপারটা খেয়াল করে খুব সন্তর্পণে নজরাত এর কাঁদে হাত রেখে তার কাঁদে মাথা রাখে। যেন গাড়ির ঝাঁকুনিতে নজরাত ব্যথা না পায়। ড্রাইভিং এর মাঝে মাঝে নজরাত এর দিকে তাকায় রাদ শাহমাত। নজরাত ঘুমের মাঝেই আরেকটু গেসে বসে রাদ শাহমাত এর সাথে। রাদ তখন ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
______
বাসায় ফিরে যখন সবাই গাড়ি থেকে নেমে যায় তখনো নজরাত এর ঘুম ভাঙ্গে না। রাদ কি বলে ডাকবে খুঁজে পায় না। আজ পর্যন্ত তার নাম নিয়ে ডাকেনি সে। এদিকে সবাই ঘরের ভিতরে ঢুকে গেছে। রাদ পরে যায় বিপাকে। কিছুক্ষণ ভেবে ডাকে,
—” এই যে শুনছেন? আমরা পৌঁছে গেছি। নামুন এবার?
কিন্তু নজরাত এর কোন পাত্তা নেই। তার ঘুম খুব গাঢ়। সহজে ভাঙ্গানো যায় না। আর তাই সে ঘুমাতে চায়নি। জোর করে সজাগ থাকতে চেয়েছিল।
রাদ শাহমাত ঠোঁটে আঙুল রেখে কিছুক্ষণ ভাবলো কি করা যায়? ভেবে একটি পথ খোলা দেখতে পেল। তবে পথটা সহজ উপায়ে নয়। খানিকটা কঠিন। কিন্তু এছাড়া তো কিছু করার নেই। সে গাড়ি থেকে নেমে,গাড়িতে কিছুটা ঝুঁকে খুব সন্তর্পণে নজরাত কে পাঁজা কোলে তুলে নিল। তারপর পায়ে ধাক্কা দিয়ে গাড়ির দরজা বন্ধ করে ঘরের দিকে গেল। গার্ডেন পার হ‌ওয়ার সময় হঠাৎ পা দুটো থামিয়ে দাঁড়িয়ে পরে রাদ। চাঁদের আলোয় নজরাত কে খুব আবেদনময়ী লাগছে। কিছু একটা টানছে রাদ কে। আর তাই এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে নজরাত এর মুখশ্রীর দিকে।
এই প্রথম মেয়েটার দিকে এমন গভীর দৃষ্টিতে তাকালো রাদ শাহমাত। কখনো দেখা হয়নি মেয়েটার ফর্সা টকটকে মুখশ্রী টা। ঘন কালো পল্লবের আড়ালে ডাগর ডাগর আঁখি দুটি দেখা হয়নি তার। চিকন ঘ্রাণেন্দ্রিয় টাতে কখনো ভালোবেসে কামড়ে দেওয়া হয়নি। অনিমেষ চাহনিতে চেয়ে চেয়ে নজরাত এর মুখশ্রীর আকৃতি মুখস্থ করে চলেছে রাদ শাহমাত।

মাথার উপরে রাত জাগা পাখি উড়ে যেতে রাদ শাহমাত বাস্তবে ফিরে। নিজেকে নিজে ধিক্কার জানায়। এই ফুলের মতো মেয়েটির যোগ্য নয় সে। সে পাপী, অনেক পাপী। যার কোন ক্ষমা নেই। না সে তার এই খারাপ দৃষ্টি নিক্ষেপ করবে না এই মেয়েটার উপর। কিছুতেই না।
______
ভোর বেলা ঘুম ভেঙ্গে নজরাত তাকে রাদ শাহমাত এর খুব কাছে আবিষ্কার করল। বড় বড় আঁখি দুটি আরো বড় করে তাকায় সে। বিয়ের পর এই প্রথম কাছে আসা। এতোটা কাছে। সবসময় দু’জনেই দুরত্ব বজায় রেখে থেকেছে। তাহলে আজ কেন এতো কাছে? নজরাত রাতের কথা স্মরণ করার চেষ্টা করলো। রাতে গাড়িতে ঘুমিয়ে পড়েছিল সে। তারপর? তারপর কি হয়েছিল? না তারপর আর মনে করতে পারছে না সে।
উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে অযু করে, রাদ শাহমাত কে ডেকে তুলে নামাযে দাঁড়ায়।

অফিসের সময়ে রাদ শাহমাত নাস্তা করে বেরিয়ে গেলে নজরাত তার প্রিয় লাইব্রেরী কক্ষে চলে যায়। সামনে তার একটা পরিকল্পনা আছে। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য পরিশ্রম করা চাই। আর তাই নজরাত তার একান্ত নিরিবিলি পরিবেশ লাইব্রেরী কক্ষে আসে।
অপরদিকে রাত শাহমাত অফিসে কাজ করছে ঠিক কিন্তু একটা মুখশ্রী বার বার তার কাজে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। চোখের পর্দায় যখনি সেই মুখশ্রী ভেসে ওঠে তখনি সে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছে।….

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।

(আসসালামু আলাইকুম।
লেখা শেষে রি-চেক করা হয় না। তাই ভুল ত্রুটি ক্ষমা ও সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here