তোমার নামে আমাকে ডাকো পর্ব ২

0
373

#তোমার_নামে_আমাকে_ডাকো
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম

|পর্ব-০২|

বাগানের সুইমিংপুলের পাশে খেলার আয়োজন করা হয়েছে। এক প্রকার বলতে গেলে তাজের জন্য ট্রুথ ওর ডেয়ার খেলার আয়োজন করা হয়েছে। তাজের মতে বিয়ে বাড়িতে খেলাধুলা না হলে সে সবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করবে। অগত্যা তাজের কথা বলতে রাত দশটার পরে সবাই সুইমিং পুলের দিকে আসে। বাড়ির বড়রা এবং আত্মীয়-স্বজনদের সুইমিংপুলের পাশে সারি সারি চেয়ার পেতে গল্পগুজব করছে। তাদের থেকে কিছুটা দূরে বাড়ি ছোটরা ঘাসের উপর কার্পেটে বিছিয়ে ট্রুথ ওর ডেয়ার খেলছে। বোতল ঘোরানোর পরে, বোতল থামলে নিলাংশের মামাতো বোন নিঝুম মানে বিয়ের কনে বলল,

‘ এই আমি প্রশ্ন করব রুহানি কে।’

নিঝুমের ছোট বোন বলল,

‘ আচ্ছা করো। আপু তো আগেই বলেছে তার টার্ন আসলে সে ট্রুথ নিবে।’

নিঝুম কিছুক্ষণ চিন্তা করে তারপর বলল,

‘ তুমি যেহেতু আমার ছোট তাহলে তোমাকে খুব সহজ কিছু প্রশ্ন করি। এখন পর্যন্ত টোটাল কতগুলো প্রেমের জন্য প্রপোজাল পেয়েছে?’

রুহানি মৃদু হেসে বলল,

‘ কখনো গুনি নি আপু। তবে প্রেমের বেশি প্রস্তাব এসেছে আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের দৌলতে।’

নিঝুমের ছোট বোন এশা কৌতুহল গলায় বলল,

‘ তোমার বেস্ট ফ্রেন্ডের দৌলতে? কিন্তু কিভাবে? তুমি না আমাদের বলেছিলে তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড আপুর বিয়েতে অ্যাটেন্ড করবে, কিন্তু তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড তো এখনো এলো না। কাল থেকে তো আপুর বিয়ের প্রোগ্রাম শুরু হয়ে যাবে।’

রুহানি মৃদু স্বরে বলল,

‘ সে পরে একসময় গল্প করে বলল তোমাদের। আর ওর সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়েছে ও বলেছে কাল অনুষ্ঠানের আগেই পৌঁছে যাবে এখানে।’

তাজ ঠোঁট দুটো উঁচু করে বলল,

‘ তোমাদের কথা শেষ হলো আবার খেলা শুরু করো।’

এশা ভেংচি কেটে বলল,

‘ এই ছেলের সারাদিন খেলা আর খেলা। খেলা ছাড়া আর কিছু নেই মাথায়।’

ওদের কথার মাঝে নিঝুম বোতল ঘোরানো শুরু করে দেয়। বোতল থামে নিলাংশের সামনে। তা দেখে তাজ চিৎকার করে বলল,

‘ এই আমি ভাইয়া কে ডেয়ায দিবো।’

নিলাংশ তাজের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ এই না। তাজ ছাড়া অন্য কেউ ডেয়ার দেও।’

তাজ নাছোড়বান্দার মতো বলল,

‘ না, না তা হবে না আমি দেবো তোমাকে ডেয়ার।’

নিঝুম তাজের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ আচ্ছা ঠিক আছে, ঠিক আছে। তুই ভাইয়া কে কী ডেয়ার দিবি দে।’

তাজ শয়তানি হেসে বলল,

‘ আমি আমার শ্রদ্ধেয় সম্মানীয় ভাইয়ার জন্য একটা ঝাকানাকা ডেয়ার রেডি করে রেখেছি। ভাইয়া তুমি এখন বাড়ির গেটের কাছে যাবে। তুমি যাওয়ার পরে গেট থেকে যে প্রথমে বাড়ির ভিতরে ঢুকবে সে ছেলে হোক কিংবা মেয়ে তুমি তাকে রোমান্টিক ভাবে প্রপোজ করবে। এবং, এবং যতক্ষণ গেট দিয়ে কেউ না ঢুকতে ততক্ষণ তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে থাকবে। আর ভাইয়া তুমি একদম চিন্তা করো না আমরা এখান থেকে তোমার উপর নজর রাখব।’

তাজের কথা শুনে সবাই মুখ টিপে হাসতে শুরু করে। নিলাংশের মত রাগী ছেলেকে এমন লেজেগোবরে অবস্থা ফেলে দিয়েছে তাজ। নিলাংশ আগে আন্দাজ করতে পেরেছিল তার ছোট বদমাইশ ভাই এমন কিছু একটা করবে। নিলাংশ অসহায় গলায় বলল,

‘ এটা ছাড়া অন্য কিছু দেয়, আমি এটা পারবো না।’

তাজ দাঁত বের করে হেসে বলল,

‘ না ভাইয়া তা বললে তো হবে না। তোমাকে এই টাস্ক টা কমপ্লিট করতে হবে।’

নিলাংশ রেগে তাজের দিকে তাকিয়ে হন হন করে ওখান থেকে গেটের কাছে চলে যায়। নিলাংশ চলে গেলে সবাই খিলখিলিয়ে হাসতে শুরু করে। এক মিনিট, এক মিনিট করে প্রায় এক ঘন্টার কাছাকাছি সময় হয় গেছে এখনো গেট থেকে কেউ ঢুকলো না। আর এত রাতে বাড়িতে কেউ বা আসবে কেনো? এশা নিলাংশের এমন অবস্থা দেখে তাজের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ এই তাজ দেখ, প্রায় এক ঘণ্টা সময় মত হয়ে গেছে এখন পর্যন্ত কেউ এলো না। আমার মনে হয় না এত রাতে বাড়িতে কেউ আসবে। তাহলে কী ভাইয়া সারারাত ওখানে দাঁড়িয়ে থাকবে? যা এবার তোর ফাইজলামির বন্ধ করে ভাইয়া কে ডেকে নিয়ে আয়।’

তাজ এশার দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ আচ্ছা ঠিক আছে।’

তাজ বসা থেকে উঠবে, তখন গাড়ির হর্ন শুনে গেটের দিকে তাকায়। বাড়ির গেট দিয়ে কালো রংয়ের একটা গাড়ি ঢুকেছে। সবাই উৎসুক হয়েছে দিকে তাকায়। গাড়ি থেকে একটা মেয়ে নামে। ওয়েস্টার্ন ব্লেজার সুট পড়া, চোখে কালো রঙের সানগ্লাস, মুখে মাস্ক, চুলগুলো উঁচু করে বাঁধা। কেউ মেয়েটার দিকে ভালো করে তাকানোর আগে নিলাংশ আচমকা মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে। মুহূর্তে চোখ বড় বড় হয়ে যায় সবার।

ইধা শুটিং শেষ করেই ফ্লাইটে ওঠে। এয়ারপোর্ট থেকে সোজা রুহির দেওয়া ঠিকানা মত চলে আসে। কিন্তু গাড়ি থেকে নামতে না নামতেই এক অজ্ঞাত যুবক ইধা কে জড়িয়ে ধরে। ইধা কিছু বুঝে ওঠার আগেই অজ্ঞাত যুবক ফিসফিসিয়ে বলল,

‘ প্লিজ, প্লিজ আপনি চিৎকার করবেন না। আমি অনেকটা বাধ্য হয়ে আপনার সঙ্গে এমন আচরণ করেছি।’

তুষার রেগে ঐ অজ্ঞাত যুবকে ইধার কাছ থেকে সরাতে চাইলে, ইধা হাতের ইশারায় তুষার কে থামতে বলে। অজ্ঞাত যুবক আবার ফিসফিসিয়ে বলল,

‘ আমি আমার ভাই বোনদের সঙ্গে বসে ট্রুথ ওর ডেয়ার খেলছিলাম। যখন আমার টার্ন আসে তখন আমার ছোট ভাই আমাকে ডেয়ার দেয়। গেট থেকে প্রথম যে বাড়ির ভিতরে ঢুকবে তাকে আমাকে প্রপোজ করতে হবে। ওদের কথা মত আমি এখানে প্রায় এক ঘন্টার মতো দাঁড়িয়ে আছি। অবশেষে আপনার দেখা পেলাম। প্লিজ আপনি কিছু মনে করবেন না। আমি এখন আপনাকে একটা ফুল দিয়ে শুধু আই লাভ ইউ বলবো। আপনি শুধু ফুলটা হাতে নিয়েন তাহলে ই হবে আর কিছু লাগবে না। তাহলে আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। প্লিজ আপনি আমার এই রিকোয়েস্ট টা রাখুন। না হলে আমার ছোট ভাই-বোনদের কাছে আমার প্রেস্টিজের ফালুদা হয়ে যাবে।’

ইধা অজ্ঞাত যুবক কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উপর-নীচ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সম্মতি জানায়। ইধার উওর হ্যাঁ শুনে অজ্ঞাত যুবক ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বাড়ি যাওয়ার রাস্তার পাশে লাগানো ফুল গাছ থেকে একটা ফুল ছিঁড়ে হাঁটু গেড়ে বসে। ফুলটা ইধার দিকে এগিয়ে দিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,

‘ আই, আই লাভ ইউ।’

ইধা আস্তে করে হাত বাড়িয়ে ফুলটা হাতে নেওয়ার সময় কারো চিৎকার শুনে ইধা এবং নিলাংশ সেদিকে তাকায়। তাজ ওর আম্মুর দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলল,

‘ আম্মু দেখে যাও তোমার দুশ্চরিত্রা বড় ছেলে কী করছে? মেয়ে দেখল কী দেখলো না চলে গেল প্রপোজ করতে। ওই দেখো আবার নির্লজ্জের মতো মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরেছে। আম্মু তোমার এই সতী সাবিত্রী ছোট ছেলের সামনে এমন অন্যায় মেনে নেওয়া যায় না। ওহ আম্মু কই তুমি?’

তাজের কথা শুনে সবাই চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকায়। কী সাংঘাতিক ছেলেরে বাবা! নিজেই পাঠানো ওর বড় ভাইয়া কে প্রপোজ করতে আবার নিজেই ওর আম্মু কে তা বলে দিচ্ছে। তাজের চিৎকার শুনে তাজের আম্মু, ফুপি, কাকিয়া এদিকে চলে আসে। তারা কিছু বলবে তার আগেই দেখে সত্যি সত্যি নিলাংশ হাঁটু গেঁড়ে হাতে ফুল নিয়ে বসে আছে একটা মেয়ের সামনে। তারা কিছু বলবে এর আগে রুহি চিৎকার দিয়ে বলল,

‘ ইধা!’

ইধা রুহি কে দেখে নিলাংশের পাশ কাটিয়ে রুহি দিকে চলে যায়। রুহি এক প্রকার দৌড়ে এসে ইধা কে জড়িয়ে ধরে বলল,

‘ তোর না কাল আসার কথা ছিল তাহলে আজ এত রাতে?’

ইধা ধীর গলায় বলল,

‘ শুটিং শেষ হয়ে গেছিল তাই আগেই চলে এসেছি।’

রুহি এক গাল হেসে বলল,

‘ খুব ভালো করেছিস। তুই আর আমি খুব মজা করব।’

এরমধ্যে এশা এসে বলল,

‘ আপু এইটা বুঝি তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড? যার কথা এতক্ষণ আমাদের কাছে বলছিলে?’

রুহি ওপর নীচ মাথা নাড়িয়ে বলল,

‘ হ্যাঁ।’

এশা ইধার দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ এই যে রুহানি আপুর বেস্ট ফ্রেন্ড আপু, তুমি তোমার মুখের মাক্স টা খোলো তো। আমরাও একটু দেখি রুহানি আপুর বেস্ট ফ্রেন্ড কে। আমাদের এখানে এসেছে পর থেকে রুহানি আপু তো সারাক্ষণ তোমার কথা বলেই যাচ্ছে।’

ইধা মাক্স এর আড়ালে মৃদু হেসে চোখে থাকা সানগ্লাস এবং মাক্স খুলে ফেলে। মাক্স খোলামাত্র সবাই বিস্ফোরিত চোখে ইধার দিকে তাকিয়ে আছে। বর্তমান সময়ের সবথেকে জনপ্রিয় অভিনেত্রী ইধা চৌধুরী ওদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অবিশ্বাস্য ব্যাপার। কারো কারো তো ইধা কে দেখার পরে দুই ঠোঁটের মাঝখানে ফাঁকা হয়ে গেছে। নিঝুম ইধার দিকে বিষ্ময় চোখে তাকিয়ে বলল,

‘ ও মাই গড, দা মোস্ট পপুলার সেলিব্রিটি অফ দ্যা প্রেজেন্ট টাইম ইজ ইধা চৌধুরী।’

ইধা সেলিব্রিটি হওয়ার পরে এমন অনেক পরিস্থিতিতে পড়েতে হয়েছে। রুহির আত্মীয় স্বজন আচমকা ইধা কে দেখে চমকে যায়। ইধা সবার রিএকশন দেখে হালকা হাসে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here