#তোমার_আমার_প্রণয়
#israt_jahan_arina
#part_9
দৃশ্য ক্লাসে বসে মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করছে।আতিক স্যার গতকাল কোচিং এ এই ম্যাথ গুলি করিয়েছে।কিন্তু সে এই ম্যাথ এর আগা মাথা কিছুই বুঝেনি।আজ ক্লাসে তিনি সব স্টুডেন্ট দের ওই ম্যাথ করতে দিয়েছে।দৃশ্য বার বার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।আতিক স্যার বিষয়টা লক্ষ করে দৃশ্যর পাশে এসে বললো
-“কি ব্যাপার দৃশ্য?এই ম্যাথ করতে এতক্ষণ লাগে?গত কাল না বুঝিয়েছি?”
দৃশ্য আমতা আমতা করে বললো
-“স্যার আমিতো এইটা অনেক ভালো করে বুঝেছি।কিন্তু এখন কিছুতেই মনে করতে পারছি না।”
আতিক স্যার চোখ গরম করে বললো
-“হাত পাত।”
দৃশ্য ভয়ে ভয়ে বললো
-“কেনো স্যার?”
আতিক স্যার দাতে দাঁত চেপে বললো
-“তোকে খুশিতে চকলেট দিবো তাই।”
দৃশ্য ভালো করেই জানে এই চকলেট কোন চকলেট?তাই ঢোক গিলে বললো
-“থাক স্যার,আমার চকলেট লাগবে না।”
আতিক স্যার এক ধমক দিয়ে বললো
-“এক্ষনি হাত পাত।সব সময় তুই ফাঁকিবাজি করিস।আজ তোর খবর আছে।”
দৃশ্য আড়চোখে একবার স্যারের হাতের মোটা বেত টা দেখে নিলো।ভীষণ ভয় লাগছে।এই বেতের বারি তার হাতে পড়লে হাত টাই খসে পড়বে।ভয়ে ভয়ে হাত সামনে বাড়ালো।আর চোখ বন্ধ করে নিলো।ভীষণ জোরে শব্দে দৃশ্য কেপে উঠলো।মনে হচ্ছে তার হাতটা জ্বলে যাচ্ছে।চোখ খুলতেই গর গর করে পানি পড়তে লাগলো।নাবিলা,মৌ আর সায়মা করুন চোখে দৃশকে দেখে যাচ্ছে।
দৃশ্যকে কাদতে দেখে আতিক স্যার তাকে ক্লাস থেকে বাইরে বের করে দিলো।
মাহাদ করিডোর দিয়ে লাইব্রেরির দিকে যাচ্ছিল।হঠাৎ তার চোখ পড়ল ক্লাসের বাহিরে দাড়িয়ে থাকা দৃশ্যর দিকে।ভালো করে খেয়াল করতেই দেখতে পেলো দৃশ্য হাতের দিকে তাকিয়ে শব্দহীন কান্না করছে।তার নাকের ডগা লাল হয়ে গেছে।ফর্সা মেয়েদের এই এক জ্বালা।কান্না করলেই সবার আগে নাক আর কান লাল হয়ে যায়।দুই বেনুনী করা কান্নারত কিশোরীকে দেখে মাহাদের প্রেমিক মনটা বিচলিত হয়ে উঠলো।সে দৌড়ে দৃশ্যর সামনে পৌঁছালো।হঠাৎ কাউকে আসতে দেখে দৃশ্য কান্না বন্ধ করে দিলো।মুখ তুলে মাহাদকে দেখে অবাক হলো।মাহাদ বিচলিত হয়ে প্রশ্ন করলো
-“এই পিচ্ছি কাদঁছো কেনো?”
মাহাদের এই কথায় কি ছিলো তা দৃশ্যর জানা নেই।তবে সে এবার জোরে কান্না শুরু করলো।হাত ধরে কাদতে দেখে মাহাদ দৃশ্যর হাত সামনে মেলে ধরলো।আর দেখতে পারলো হাতে মোটা লাল দাগ বসে গেছে।সামনে উকি দিয়ে দেখতে পারলো ক্লাস রুমে আতিক স্যার।সে বুঝতে পারলো কি ঘটেছে।তাই সে দৃশ্যর হাত ধরে হাঁটতে শুরু করলো।দৃশ্য তখনও ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছে। মাহাদ তাকে মেডিকেল ফ্যাসিলিটিজ রুমে নিয়ে আসলো।একটা সীটে বসিয়ে গেলো মলম আনতে।তাক থেকে একটা মলম এনে তার পাশে বসে মলম লাগতে শুরু করলো।
এতখন কান্নার জন্য দৃশ্য কিছুই বুঝতে পারেনি।কিন্তু এখন মাহাদ হাত ধরায় তার অন্যরকম লাগছে।অনুভূতিটা ঠিক কেমন তা সে জানে না।তবে তার ভীষণ লজ্জা লাগছে।এই মানুষটার সামনে সে এতক্ষণ ভ্যা ভ্যা করে কেঁদেছে।মান সম্মান আর কিছুই রইলো না।
মাহাদ দৃশ্যকে উদ্দেশ্য করে বললো
-“আতিক স্যার কেনো মারলো?”
সে ফোঁপাতে ফোঁপাতে বললো
-“একটা ম্যাথ পারিনি তাই।”
-“পারনি কেনো? উনি বুঝিয়ে দেয় নি?”
-“দিয়েছিলো,কিন্তু আমি কিছুই বুঝিনি।”
-“না বুজলে বলনি কেনো?”
এবার আর দৃশ্য কোনো জবাব দিলো না। মাহাদ বললো ছুটির পর লাইব্রেরীতে বই খাতা নিয়ে চলে আসবে।আমি বুঝিয়ে দিবো ম্যাথ।মনে থাকবে?
দৃশ্য মাথা ঝাকিয়ে হে জানালো। মাহাদ কড়া চোখে দৃশ্যর দিকে তাকিয়ে বললো
-“এমন কিছুই করবে না যাতে কেউ তোমার গায়ে হাত তোলার সুযোগ পায়।।আমি সহ্য করতে পারবনা।আর বড়দের সাথে আমি বেয়াদবি করতে চাইনা।স্যার ছারা অন্য কেউ হলে হাতটাই কেটে ফেলতাম।নেক্সট টাইম লেখাপড়ায় কোনো গাফিলতি যেনো না হয়?”
দৃশ্য মাহাদের কথা শুনে ভয় পেলো।এই লোকটা কতটা রাগী সেটা সে সেইদিন বুঝেছে।এই বিলাই চোখ যেনো তাকে এক্ষনি ভোৎস করে দিবে।সে দ্রুত চোখ নামিয়ে নিলো।
মাহাদ তাকে বসে থাকতে বলে বেরিয়ে গেলো।কয়েক মিনিট পর হাতে আইসক্রিম নিয়ে ফিরলো।দৃশ্য আইসক্রিম দেখে ভীষণ খুশি হলো। মাহাদ নিজে প্যাকেট খুলে দৃশ্যের হাতে আইসক্রিম ধরিয়ে দিলো।দৃশ্য মনের আনন্দে আইসক্রিম খাচ্ছে।আর মাহাদ এক মনে দৃশ্যর খাওয়া দেখলো।দৃশ্যর বাচ্চাদের মতো খাওয়া দেখে মাহাদ হেসে ফেললো।পকেট থেকে টিসু বের করে দৃশ্যর কাছে বসলো।হঠাৎ মাহাদকে পাশে বসতে দেখে দৃশ্য অবাক হয়ে গেলো। মাহাদ টিসু দিয়ে দৃশ্যর মুখ পরিষ্কার করে দিলো।মাহাদের এই যত্ন টুকু দৃশ্যর খুব ভালো লাগলো।ধূসর চোখ গুলো আজ অনেক কাছ থেকে দেখছে।কেমন নেশা ধরানো চাহুনি তার। মাহাদ দূরে সরে বসতেই দৃশ্য বাস্তবে ফিরলো।ইসস এতক্ষণ কি সব ভাবছিলো সে।
ক্লাস ছুটির পর দৃশ্য আর নাবিলা আসলো লাইব্রেরীতে। দুজনেই চেয়ার টেনে মাহাদের সামনে বসলো। মাহাদ নাবিলাকে দেখে কিছুটা বিরক্ত হলো। এই বাচ্চাটা বডিগার্ড ছাড়া চলতে পারে না। সারাখন চারিপাশে বান্ধবীদের একটা বহর নিয়ে চলে। মাহাদ তানিমকে একটা টেক্সট করে দিলো।কিছুক্ষণ পর তানিম আসলো লাইব্রেরীতে। তানিম এসেই নাবিলাকে উদ্দেশ্য করে বললো
-“কি ছোট আপু? তোমারও ম্যাথ নিয়ে প্রবলেম?”
-“না ভাইয়া।আমার তো ইংরেজিতে প্রবলেম।”
-“তাহলে এইখানে কি করো? এখানে তো ম্যাথ ক্লাস চলে।”
নাবিলা মুখটা কাচুমাচু করে বললো
-“ভাইয়া আমিতো দৃশ্যের সাথে এসেছি।”
-“ভাবী কি কোলের বাবু যে তুমি তার সাথে এসেছো?”
তামিমের কথা শুনে দৃশ্য এবং নাবিলা দুজনেই বড় বড় চোখ করে তাকালো। বেচারা তানিম পড়লে ফ্যাসাদে। মুখ ফসকে বলে ফেলেছে। নাবিলা চোখ কুঁচকে বললো
-“ভাবী কে?”
তানিম বিড় বিড় করে বললো
-“ভাবী মানে! ভাবী নাতো বেবি বেবি?”
তানিমের কথা শুনে মাহাদ চোখ গরম করে তাকালো। এমনিতেই মাহাদের বন্ধুরা দৃশ্য কে কিছুটা ভয় পায়। যা মেয়ে কখন তাদের নাকানি-চুবানি খাওয়ায় বলা তো যায় না। তানিম নাবিলাকে বললো
-“আরে মেয়ে বেশি কথা বলে। চলো তোমার ইংরেজি ক্লাস নেই।”
কথাটা বলেই সে নাবিলার পিঠের ব্যাগ ধরে টেনে দূরের টেবিলে নিয়ে গেল। দৃশ্য অবাক হয়ে তাদের কান্ড দেখছিল। মাহাদের কথায় তার ধ্যান ফেরে।
-“হাতে কি এখনো ব্যথা আছে?”
-“না।”
মাহাদ নিজের ব্যাগ থেকে একটা স্যান্ডউইচ বের করে দৃশ্যর সামনে ধরলো। আর বললো
-“তুমি এটা খেতে থাকো আর আমি তোমাকে ম্যাথ বোঝাচ্ছি।”
-“ওকে।”
দৃশ্য স্যান্ডউইচ খাচ্ছে আর ম্যাথ বোঝার চেষ্টা করছে। মাহাদ খুব ইজি ভাবে দৃশ্যকে ম্যাথ গুলো বুঝিয়ে দিল। মাহাদ যেমন ভালো গান গায় তেমনি সে লেখাপড়া তেও পটু। আফটার অল ক্লাসের ফার্স্টবয় বলে কথা। দৃশ্য খুব সুন্দর ভাবে ম্যাথগুলো বুঝলো এবং দুইটা ম্যাথ মাহাদকে করেও দেখালো। পড়া শেষ করে মাহাদ বললো
-“সপ্তাহে দুই দিন লাইব্রেরীতে চলে আসবে আমি তোমাকে বুঝিয়ে দিব।মনে থাকবে?”
-“জি ভাইয়া।”
তারপর দৃশ্য আর নাবিলা বেরিয়ে গেল স্কুল থেকে। তানিম মাহাদের কাছে আসতেই পিঠে এক ঘা বসিয়ে দিলো মাহাদ আর বললো
-“ওই শালা তোদের ভাবি বলতে মানা করছি না? আর ভাবি থেকে সোজা বেবি?”
-“আরে ব্যাটা বেবি বলতে তোর বেবি বুঝাইসি। আমাদের জন্য তো জাস্ট ভাবী। দেখ শালা এমনি এক বাচ্চাকে ভাবি বলতে হইতাছে। তার উপরে আবার প্যারা দিস না।”
-“তোদের জন্য একদিন আমি মহা ঝামেলায় পরবো। আগে আমার অনুভূতি ওকে বুঝিয়ে নেই, তারপর যত খুশি ভাবী ডাকিস।”
-“তুই তো শালা এত দিনেও বলতে পারলি না। তোর জায়গায় আমি হলে প্রথম দিনেই প্রপোজ করে দিতাম।”
-“হ্যাঁ প্রথম দিনই প্রপোজ করতাম আর আমার গালটা ও লাল করে দিতো তাইনা? তাছাড়া প্রথম দিন তো আমাকে বেকুব বানায়া গেছে।”
-“হ্যাঁ সেটা তো জীবনেও ভুলব না।”
-“মজা নিস না তো? এই বাচ্চাটাকে কিছু বললে কি বুঝবে?”
-“তুই খামোখাই প্যারা নিচ্ছিস।”
-“আমার মতে প্রোপোজ করে ফেল। কারণ দৃশ্য চোখে তোর জন্য কিছু একটা দেখেছি আমি। তাছাড়া বড় হওয়ার জন্য অপেক্ষা করলে দেখবি পাখি অন্য খাঁচায় ঢুকে গেছে।”
কথাটা শুনেই মাহাদের ভীষন রাগ হল। দৃশ্য কে অন্য কারো সাথে সে চিন্তাই করতে পারে না। এই বাচ্চা মেয়েটা ধীরে ধীরে তার অনুভূতির সাথে মিশে গেছে। তার কিশোর মন সেই কিশোরীর প্রেমে বারংবার হাবুডুবু খাচ্ছে।
কয়েক দিন পরই এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান। নেক্সট ইয়ার এই সময়ে মাহাদরাও বিদায় নিবে। তাই এই বছর তারা বেশ মজা করে এদিনটা পালন করতে চায়। তবে মাহাদের অন্য প্ল্যান আছে। এই দিনটাতে সে দৃশ্যকে তার মনের কথা বলতে চায়।আর মাত্র একটা বছর সেখানে থাকবে। তাই সে আর দেরী করতে চাইছে না। সব বন্ধুরা মিলে বিদায় অনুষ্ঠানের প্ল্যান করতে বসে পড়লো।
সন্ধ্যার দিকে মাহাদ বাসায় ফিরলো। বাসায় ফিরেই ড্রয়িংরূমের সোফায় মাহিমকে দেখতে পেলো। বসে বসে সবজি পাকোড়া খাচ্ছে। পাশে দাদী বসে বসে পান চিবুচ্ছে। এটা তার দাদীর পুরনো অভ্যাস।সারাদিন পান চিবিয়ে মুখ লাল করে রাখবে। মাহাদকে দেখেই দাদীর মুখে হাসি ফুটে উঠল। বরাবরই মাহাদ তার প্রিয় নাতি। মাহিমের সাথে দাদীর ঠিক বনিবনা হয় না।সারাদিনে দুইজন লেগেই থাকে। মাহাদকে দেখেই দাদি বললেন
-“কিরে মাহাদ এতক্ষণে তোর আসার সময় হলো?”
-“এইতো সুইট দাদী স্কুলে সামনে অনুষ্ঠান তো সেটা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম।”
-“তোরা দুই ভাই সারাদিনই বাইরে টই টই করে ঘুরে বেড়াস। আল্লাহ! আজ একটা নাতনী দিলে আমার দুঃখটা বুঝতো।”
মাহিম মুচকি হেসে বললো
-“দাদী এসব আমাদের সামনের না বলে বাবার সামনে বলো কাজে দিতে পারে।”
মাহিমের কথা শুনে দাদি মাথায় এক চটি মারলো।আর বললো
-“বান্দর পোলা। কার সামনে কি বলতে হয় সেটাও শিখিস নি?”
মাহিম মাথা ডলতে ডলতে বললো
-“আরে দাদি, আমি তো সে কথাই বললাম। যেকথা বাবার সামনে বললে কাজে দিবে সেটা আমাদের সামনে বলে কি লাভ বল?”
কথাটা বলতে বলতেই আমজাদ রহমান ড্রইং রুমে আসলেন। আর বললেন
-“কি কথা হচ্ছে দাদি নাতির মধ্যে? আমার সামনে বললে কাজে দিবে কি কথা?”
শামসুন্নাহার বেগম এবার লজ্জায় পড়ে গেলেন। ছেলের সামনে এখন কিভাবে কথাটা বলবে? তাই তিনি চুপ হয়ে গেলেন। কিন্তু মাহিম তো চুপ থাকার পাত্র না। সে বললো
-“বাবা দাদির একটা বিষয় নিয়ে ভীষণ আফসোস হচ্ছে।”
মাহিমের কথা শুনেই শামসুন্নাহার বেগমের কাশি উঠে গেল। তিনি চোখ গরম করে মাহিমের দিকে তাকালেন। মাহাদ হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আমজাদ রহমান কিছুই বুঝতে পারলেন না শুধু বললেন
-“কি নিয়ে আফসোস হচ্ছে?”
-“দাদীর একটা নাতনীর খুব শখ বাবা সেটা নিয়ে আফসোস হচ্ছে।”
আমজাদ রহমান মুচকি হেসে বললেন
-“আম্মা মনে আফসোস রাইখেন না। পাঁচটা বছর ওয়েট করেন তারপর একবারে নাত বউ দেখে মন ঠান্ডা করবেন।”
শামসুন্নাহার বেগম রেগে বললেন
-“হারামজাদা! লজ্জা সরম কিছু নাই।নিজে যেমন,পোলা গুলাও তেমনই হইছে।”
তিন বাপ ছেলে মিলে হাসতে লাগলো আর দাদী বিরক্ত হয়ে নিজের রুমে চলে গেল।
______________________
দৃশ্য আর নাবিলা বের হয়েছে বিকেলে কোচিং এর উদ্দেশ্যে। বাসা থেকে বের হতেই তমা আপুর সাথে দেখা হয়ে গেলো। দৃশ্যদের সামনের বাড়িটাই তমাদের বাড়ি। তমা এবার ক্লাস টেনে পড়ে। তমাকে দেখেই দৃশ্য হেসে বললো
-“কেমন আছো তমা আপু?”
-“এইতো ভালো তোরা কেমন আছিস?”
-“আমরা ভালো আছি আর ফাহিম ভাইয়াও ভালো আছে।”
তমা অবাক চোখে দৃশ্যের দিকে তাকালো আর বললো
-“আমি কি তোর ভাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করেছি?”
-“না এখনো করনি, বাট ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ভাইয়ার কথায়ই তুমি জিজ্ঞেস করতে?”
-“আমার ঠেকা পড়েছে তোর গুন্ডা ভাইয়ের খবর নিতে?”
-“হ্যাঁ এর জন্যই তো বারান্দা দিয়ে আমার ভাইয়ের রুমে উঁকি ঝুঁকি মারো।”
দৃশ্যর কথায় তমার কেশে উঠলো। নাবিলা বোকার মতো তাদের দুজনকে দেখে যাচ্ছে। তার আশেপাশে এত কিছু ঘটে আর সে সেটা খেয়ালই করেনি?
তমা বললো
-“তুই বেশি পেকে গেছিস দৃশ্য।”
-“সে যাই বলো, আমার ভাইকে পটাতে না পারলে ভাবি কিন্তু ডাকবো না।”
তমা রাগী চোখে বললো
-“লাগবেনা আমার তোর মত ফাজিল ননদ।”
-“সময় আসলে আমাকেই লাগবে।”
-“এই যা কোচিংয়ে যা।”
-“ওকে আপু।”
দৃশ্য চলে যেতেই তমা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। ফাহিমকে সে ছোটবেলা থেকেই ভীষণ পছন্দ করে। কিন্তু ফাহিমের রাগকে সে ভীষণ ভয় পায়। আর সেই ভয়েই কখনো ফাহিমকে মনের কথা বলতে পারেনি তমা। ফাহিমের থেকে মাত্র দুই বছরের ছোট হলেও ফাহিম তাকে বাচ্চাই মনে করে। যেন তার থেকে সাত-আট বছরের বড়। ফাহিমের ভাব দেখলে তার মাঝে মাঝে গা জ্বালা করে। তবে দৃশ্যকে তমা ভীষণ পছন্দ করে। মেয়েটা ভিষণ চঞ্চল। সারাদিন শুধু দুষ্টুমি করে বেড়ানোই তার কাজ।
বরাবরের মতো আজও মাহাদ দাঁড়িয়ে আছে দৃশ্যের কোচিং এর গলির মোড়ে। দৃশ্য কে আসতে দেখেই বাইক থেকে নেমে দাঁড়ালো। পকেট থেকে দুটো চকলেট বের করে তাদের দুইজনকে দিল। দৃশ্য কে উদ্দেশ্য করে বললো
-“হাতের ব্যথা কমছে?”
-“হে। আপনি প্রতিদিন এখানে কি করেন?”
দৃশ্যের কথা শুনে মাহাদ মুচকি হাসলো। আর বললো
-“আমার খুব প্রিয় একজনের অপেক্ষা করি।”
কথাটা শুনে না চাইতেও দৃশ্যের মনটা কিছুটা খারাপ হলো। তবুও কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো
-“কে আপনার প্রিয় মানুষ?”
দৃশ্যর মন খারাপ দেখে মাহাদ মুচকি হাসলো। আর বললো
-“সময় আসুক তখন বলবো।”
-“আচ্ছা ভাইয়া। আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে,আসি।”
মাহাদ বুঝতে পারল দৃশ্যর মনটা খারাপ হয়ে গেছে। তাই সে কথা বাড়ালো না শুধু বললো
-“আচ্ছা যাও।”
পরদিন দৃশ্য আর তার বান্ধবীরা ক্লাস রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। হঠাৎ মাহাদ আর তার বেশ কয়েকজন বন্ধুরা দৃশ্যদের ক্লাস রুমে ঢুকলো। আর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো, সামনে স্কুলের বিদায় অনুষ্ঠান। যারা যারা অনুষ্ঠানে পার্টিসিপেট করতে চায় তারা যেন অডিটোরিয়ামে এসে নাম এন্ট্রি করে যায়। আর মেয়েদের জন্য শাড়ি আর ছেলেদের জন্য পাঞ্জাবি পরার নির্দেশনা দিলো।
দৃশ্যত অনুষ্ঠানের কথা শুনেই ভীষণ এক্সাইটেড হয়ে গেল। অনুষ্ঠান মানেই মাহাদের গান। মাহাদ আড়চোখে একবার দৃশ্যের দিকে তাকালো। তারপর মুচকি হেসে ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
দৃশ্য বরাবরই অলস প্রকৃতির মেয়ে। এসব অনুষ্ঠানে সে কখনোই পার্টিসিপেট করতে চায়না। এবারও তাই হলো। অডিটোরিয়ামের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখল মাহাদ একটা মেয়ের সাথে ভীষণ হেসে কথা বলছে। মেয়েটার নাম রামিসা।মহাদের সাথে একই ক্লাসে পড়ে। এই মেয়েটাকে দৃশ্যর এককথায় ঢঙ্গি মনে হয়। তার বন্ধু বান্ধবের লিস্ট খুজতে গেলে মেয়ের সংখ্যা হাতেগোনাই পাওয়া যাবে।
দৃশ্যর মনে হঠাৎ এক সাগর অভিমান জমা হলো। মাহাদের সেই প্রিয় মানুষটা রামিশা নয়তো? মাহাদ তাকে ছাড়া অন্য কোন মেয়ের সাথে এত ইজি ভাবে কথা বলবে বিষয়টা সে মেনে নিতে পারছে না। বক্ষস্থলের কোনায় সূক্ষ্ম ব্যথা অনুভব করছে সে। আর এক মুহূর্তও সে সেখানে দাঁড়ালো না।সে সেখান থেকে দ্রুত বেরিয়ে গেল।