তোমার আমার প্রণয় পর্ব-৫২

0
4973

#তোমার_আমার_প্রণয়
#israt_jahan_arina
#part_52

সকাল প্রায় দশটা।শামসুন্নাহার বেগম বসে আছে মাহাদের পাশে। মাহাদ তখনও গভীর ঘুমে মগ্ন।মায়া ভরা দৃষ্টিতে দেখছেন বিধ্বস্ত মাহাদ কে।এই ছেলেটাকে তিনি ভীষণ ভালোবাসেন।তাইতো মাহাদের সামান্যতম কষ্ট তাকে যন্ত্রণা দেয়।কয়দিন যাবত মাহাদ বাসায় যাচ্ছেনা বলে তিনি চলে এসেছেন।নিজের চোখে মাহাদকে না দেখলে মন শান্ত হবে না।

শামসুন্নাহার বেগম একবার পুরো রুমে চোখ বুলালেন।সারা রুম থেকে বাজে গন্ধ বের হচ্ছে।বারান্দায় বেশ কয়েকটা বোতল পড়ে আছে।সারা রুমে জুড়ে সিগারেটের ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।তিনি রাগী চোখে জয়ের দিকে তাকালেন।

জয় ভীত হয়ে পাশে দাড়িয়ে আছে।সকাল সকাল দাদী এসে হামলা দিবে জানলে রুম পরিস্কার করে রাখতো।শামসুন্নাহার বেগম ভীষণ রেগে বললেন

-“ওই তোরা কি বন্ধু নাকি শত্রু?বন্ধুর এই সব ছাইপাশ খাওয়ার থাইকা ফিরায়া না আইনা নিজেও হের লগে তাল মিলাস?নিজে তো বিয়া সাদি কইরা সংসার জুইড়া নিছোত। বন্ধুরে তো একটু বুঝাইতে পারিস?বিয়াসাদির লাইগা রাজি করতে পাড়িস?”

জয় নরম সুরে বললো
-“দাদী ও তো আমার আগেই বিয়ে করে বসে আছে।কয় বিয়ে করাবেন ওকে?ওর বউ যদি এসে মামলা করে দেয়?”

-“হারামজাদা!!তোরাই ওরে নষ্ট করছিস।”

জয় কি করবে বুঝতে পারছেনা।এই মুহূর্তে এই জায়গা থেকে কেটে পরাই উত্তম।জয় দাদীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলো।

শামসুন্নাহার বেগম বেশ কিছুক্ষন মাহাদকে পর্যবেক্ষণ করলেন।তার চাঁদের টুকরা নাতিতার এই বিষণ্ণতা তিনি কিছুতেই মানতে পারছে না।জীবনে সব কিছু পেয়েলেও ছেলেটা সুখ পায়নি।একটা মেয়ে তাদের জীবনে এসে সব সুখ কেরে নিয়েছে।

জয় বাসায় পৌঁছেই দেখলো তার বউ রেগে বোম হয়ে আছে।জয় বেশ ভয়ে আছে।এই মেয়ে একটা বাঘিনী।তবে রাগলে মৌয়ের সৌন্দর্য যেনো কয়েক গুণ বেড়ে যায়।মৌ রেগে বললো

-“তুমি আবার এই ছাইপাশ খেয়েছো?তোমার বন্ধু তো শেষ হবেই সাথে তোমাকেও শেষ করে ছাড়বে।”

-“আসলে মাহাদ ভীষণ কষ্টে আছে।তাই ওর পাশে থাকাটা জরুরি ছিলো।”

-“আমার বন্ধুবিকে কষ্ট দিয়ে ভালো থাকবে নাকি?কখনোই না।নিজের কাজের জন্য কষ্ট পাচ্ছে।”

জয়ের বেশ রাগ হলো।সে রেগে বললো
-“সবটাই তুমি জানো।তার পরও মাহাদকে দোষারোপ করছো?”

-“দৃশ্যকে তো ছেড়ে দিয়েছে। এখন আবার কি চায়।”

-“কি চায় মানে কি?কষ্ট কি শুধু তোমার বন্ধুবি পাচ্ছে নাকি?”

-“পাচ্ছেই তো।এতো সব করে আবার নাকি ওর পিছু নিয়েছে।আমি এই অবস্থায় না থাকলে ঠিক দৃশ্যর সাথে দেখা করতে যেতাম।”

-“হে যাও।তোমার বন্ধুবিও কম না।আমার বন্ধুকে ডেটে ডেকে নিয়ে একদম চিৎপটাং করে ফেলেছে।ভালো ছেলে ডেটে গেলো আর ফিরলো অসুস্থ হয়ে।ভাবা যায়।কি করা ডোজ দিয়েছে তোমার বন্ধুবী ভাবতে পারো?”

-“ফালতু কথা বলবে না।তোমার বন্ধু আমার বান্ধুবিকে দেখেই ফিট খেয়ে গেছে মনে হয়।”

-“ফিট খেলেই বা প্রবলেম কি? নিজের বউ।ফিট খাবে নাকি চুমু খাবে তাতে তোমার কি?”

মৌ এবার আরো রেগে গেলো।সেই ঘটনার পর থেকে সে মাহাদকে খুব একটা পছন্দ করেনা।দৃশ্যর জন্য বেশ চিন্তা করে।দৃশ্যর হঠাৎ সবাইকে ছেড়ে চলে যাওয়াতে সে ভীষণ কষ্ট পেয়েছে।যেদিন জয়ের মুখে শুনলো দৃশ্য ঢাকায় আর মাহাদের অফিসে আছে।সেদিন বেশ খুশি হয়েছিল।দৃশ্যর সাথে দেখা করতে চেয়েছিল।কিন্তু জয় রাজি হয়নি।কারণ মৌ এখন সাত মাসের প্রেগনেন্ট।

মাহাদ দৃশ্যকে ছেড়ে চলে আসার পর মৌ জয়ের উপর ভীষণ রেগে গেছিলো।এমনকি জয়ের সাথে সব রকম যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলো।জয় বহু কষ্টে দুই পরিবারকে রাজি করলেও মৌ কিছুতেই রাজি হচ্ছিলো না।জয় যেনো অস্থির হয়ে পড়েছিলো।শেষে জয়ের পাগলামি দেখে রাজি হয়ে যায়।দুই বছর আগে তারা পারিবারিক ভাবে বিয়ে করে।
মৌকে অস্থির হতে দেখে জয় তাকে শান্ত করলো।আর নরম সুরে বললো

-“মৌ এই অবস্থায় এতো রেগে যেয়ো না।দৃশ্য মাহাদকে ডিভোর্সের কথা বলেছে।বুঝতেই পারছো মাহাদের কি অবস্থা হতে পারে।রবিন ওকে ধরে রেস্টুরেন্ট থেকে বাসায় নিয়ে এসেছে।ছেলেটা কাল অনেকক্ষণ কাদলো।সিচুয়েশন এতটা কমপ্লিকেটেড যে কি বলবো বুঝতে পারছি না।”

মৌ এবার বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লো।মুখে যাই বলুক সে তো ঠিকই জানে মাহাদ দৃশ্যর প্রতি কতটা দুর্বল।সে বললো
-“তোমার বন্ধু কি করবে বলেছে?”

-“তুমি নিজেও জানো মাহাদ কখনোই ডিভোর্স দিবে না।”

-“আর যদি দৃশ্য দেয়?”

জয় এবার বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লো।তার চোখে মুখে স্পষ্ট চিন্তার ছাপ।

ঘুম থেকে উঠে মাহাদ দাদীকে দেখতে পেলো।প্রথমে বেশ চমকে গেলো।পড়ে মুচকি হেসে বললো

-“দাদী তুমি?এতো সকাল সকাল?”

-“আর সকাল কই?বারোটা বাজে।”

-“ওহহ!হটাৎ এখানে?”

-“কি করতাম।তুই তো বাড়িত আসোস না।তাই দেখতে আইলাম।আচ্ছা এমন আর কত দিন থাকবি?একটা বিয়া সাদি কর মাহাদ।”

মাহাদ থমথমে গলায় বললো
-“বিয়ে তো করেছি দাদী।”

শামসুন্নাহার বেগম রেগে বললেন
-“ওইডা কোনো বিয়া না।ওই মাইয়ারে ভুইলা যা।আমি তোর লাইগা সুন্দরী মাইয়া আনমু।কতো সুন্দরী আর ভালা বংশের মাইয়া লাইনে দাড়ায় রইছে।তুই একবার হে কইলেই হইবো।”

-“দাদী আমি এই বিষয়ে আর কথা বলতে চাইছি না।তুমি বসো।আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।”

বলেই মাহাদ ওয়াস রুমে চলে গেলো।শামসুন্নাহার বেগম বেশ মনঃক্ষুণ্ণ হলেন।ছেলেটা কি এই ভাবেই জীবন পার করবে?
দৃশ্য আজ সপ থেকে বেরিয়ে একটা পার্কে বসলো।সামনের লেকে কয়েকটা হাঁস সাঁতার কাটছে।দৃশ্য এক দৃষ্টিতে সে দিকে তাকিয়ে রইলো।দৃশ্য দেখলো হাঁস গুলো জোড়ায় জোড়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে।হঠাৎ দৃশ্য করো ডাকে চমকে যায়।পাশে তাকিয়ে দেখে একটা বাচ্চা মেয়ে হাতে ফুল নিয়ে দাড়িয়ে আছে।মেয়েটা দৃশ্যকে দেখে বললো

-“আপা ফুল নিবেন?একদম তাজা ফুল।”

দৃশ্য দেখলো সামনের এই মেয়েটার মুখে ভীষণ মায়া।বয়স বারো কি তেরো হবে।যে বয়সে মেয়েটার হেসে খেলে বেড়ানোর কথা ছিলো,সেই বয়সে মেয়েটা জীবিকার তাগিদে ফুল বিক্রি করছে।সারাদিন রোদে পুড়ে মেয়েটার মুখটা মলিন হয়ে আছে।দৃশ্য মুচকি হেসে বললো

-“না আপু আমার লাগবে না।”

-“নেন না আপা।ভাইয়া কই। তারে কইলে ঠিকই নিবো।”

-“আমাকে ফুল দেয়ার কেউ নেই।তবে তুমি এই টাকাটা রাখো।”

বলেই দৃশ্য ব্যাগ থেকে একশো টাকা বের করে দিলো।মেয়েটা ভীষণ খুশি হয়ে বললো
-“আপা অন্তত একটা গোলাপ রাখেন।”

দৃশ্য আর মানা করলো না।গোলাপটা নিয়ে নিলো। ফুলটার দিকে তাকিয়ে দৃশ্যর মনে পড়ে গেলো সে দিনের কথা।যেদিন মাহাদ তাকে ক্লাস রুমে প্রথম প্রপোজ করেছিলো।দৃশ্যর চোখ ভিজে উঠলো।মুহূর্ত গুলো আজও তার সামনে পরিষ্কার। গোলাপ ফুল টার দিকে তাকিয়ে দৃশ্য হু হু করে কেঁদে ফেললো।ভেতরটা তার দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে। মাহাদের অশ্রুসিক্ত সেই দৃষ্টির কথা মনে পড়ছে।মানুষটা একটুও বদলায় নি।আজও তার ক্ষেত্রে ভীষণ ইমোশনাল।
_________
আজ দৃশ্য শপ থেকে ফিরেই রান্না বসিয়েছে।সন্ধায় লতা ফিরে এসে দেখলো দৃশ্য বিরিয়ানি রান্না করছে।সে কপাল কুচকে বললো

-“কি ব্যাপার দৃশ্য?আজ হঠাৎ বিরিয়ানি।”

দৃশ্য মুচকি হেসে বললো
-“এমনি আপু।হঠাৎ ইচ্ছে হলো তাই।”

-“হুম!!বেশ ভালো ঘ্রাণ আসছে।জলদি ফ্রেশ হয়ে আসি তার পর খাবো।”

-“আচ্ছা যাও।”

দৃশ্য আবার রান্নায় মনোযোগ দিলো।তখনই বাসার ডোরবেল বেজে উঠলো।দৃশ্য দৌড়ে এসে দরজা খুলে দেখলো জিনিয়া এসেছে।জিনিয়াকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে।দৃশ্য কপাল কুঁচকে বললো

-“কি হয়েছে তোর?বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছে।”

জিনিয়া দাত দিয়ে নখ কামড়াতে কামড়াতে আনমনা হয়ে বললো

-“আমার মনে হয় বাসার সামনে আমি মাহাদকে দাড়িয়ে থাকতে দেখেছি। বাট শিওর না।”

দৃশ্যর বুকটা ধক করে উঠলো।জিনিয়া দৃশ্যর দিকে তাকিয়ে বললো

-“আরে ভুল ও হতে পারে।উনি থাকলে তো সোজা বাসায় আসতো।এতো রিস্ক নিয়ে একা রাস্তায় নিশ্চয়ই দাড়িয়ে থাকতো না।”

দৃশ্য কিছু না বলেই তার বারান্দার দিকে দৌড়ে গেলো। লম্পস্টের আলোতে একজন মানুষের অবয়ব দেখা যাচ্ছে।গড়িয়ে সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।দৃষ্টি তার এই বারান্দার দিকেই।মানুষটাকে চিনতে তার ভুল হলোনা।দৃশ্য দ্রুত রুমে চলে আসলো।দেয়ালে হেলান দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।নিঃশ্বাস তার দ্রুত গতিতে চলছে।জিনিয়া রুমে এসে দৃশ্যকে এই ভাবে দেখে অস্থির হয়ে বললো

-“সত্যি কি ওটা মাহাদ?”

দৃশ্য কিছু বললো না।আবার রান্না ঘরে চলে গেলো।জিনিয়া কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রইলো।কিছুক্ষণ পর লতা আসলে জিনিয়া জিজ্ঞেস করলো

-“কাহিনী কি আপু।রকস্টার সাহেব আসবে এটা দৃশ্য আগে থেকেই জানতো নাকি? এর জন্যই কি ভালো ভালো রান্না করছে?”

-“মানে কি?”

-“বারান্দা দিয়ে উকি দিয়ে রাস্তার দিকে দেখো।”

লতা দেখলো রাস্তায় কেউ দাড়িয়ে আছে।সে বললো
-” কে যেনো দাড়িয়ে আছে?”

-“আরে ওরা রকস্টার মাহাদ।”

লতা বিস্ময় নিয়ে তাকালো।আর বললো
-“দৃশ্য জানে?”

-“মাত্র দেখেছে।”

লতা আর জিনিয়া বেশ চিন্তায় পড়ে গেলো।
দৃশ্য এই নিয়ে বেশ কয়েক বার বারান্দায় উকি দিয়ে তাকিয়েছে। মাহাদ এখনো দাড়িয়ে আছে।দৃশ্য দেখলো আকাশ ভীষণ মেঘলা।যে কোনো সময় বৃষ্টি নামতে পারে।এই ছেলেটা আবার পাগলামি শুরু করেছে।দৃশ্য তো ভেবেছে সেদিনের পর মাহাদ ওর পিছু ছেড়ে দিবে।কিন্তু না।

রাতে দৃশ্য লতা আর জিনিয়াকে নিজ হাতে খাবার বেড়ে দিলো।তাকে খেতে বললে বললো সে পড়ে খাবে।তারা আর কিছুই বললো না।দৃশ্যর মনের অবস্থা বুঝতে পারলো।জিনিয়া আজ দৃশ্যকে একা ছেড়ে দিয়ে লতার রুমে ঘুমাতে চলে আসলো।

দৃশ্যর চোখে ঘুম নেই।সন্ধ্যা থেকে মাহাদ বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। এখন প্রায় সারে এগারোটা।দৃশ্য বারান্দার দরজার পাশে ফ্লোরে বসে আছে। হটাৎ আকাশে বিদ্যুৎ চমকে উঠলো। সাথে সাথে ঝুম বৃষ্টি শুরু।দৃশ্য হন্তদন্ত হয়ে উঠে বারান্দা দিয়ে সামনের রাস্তায় তাকালো।দেখলো মাহাদ বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে।দৃশ্য মনে মনে খুশি হলো।যাক এবার বাসায় চলে যাবে।কিন্তু প্রায় দশ মিনিট হতে চললো মাহাদ ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।দৃশ্যর মনে অস্থিরতা বাড়তে লাগলো।এই ছেলে পাগল হয়ে গেছে।এতো রাতে বৃষ্টিতে ভিজলে অসুস্থ হয়ে পড়বে।দৃশ্য হাসফাঁস করতে লাগলো।কি করবে কিছুই বুঝতে পড়ছে না।

মাহাদ বৃষ্টির মধ্যে দাড়িয়ে আছে।সন্ধ্যা থেকে এই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে শুধু একটা বার দৃশ্য কে দেখার জন্য।রাস্তা টা নির্জন হওয়ায় তার বেশি একটা সমস্যা হলো না।হটাৎ তার চোখ পড়ল সামনের দিকে। ছাতা হাতে কেউ একজন আসছে। মাহাদ কপালের ভেজা চুল গুলো হাত দিয়ে পেছনে ঠেলে দেখার চেষ্টা করলো কে আসছে।কিন্তু বুঝতে পারছে না।সব কেমন ঝাপসা হয়ে আসছে।মাথা টাও বেশ ভারী মনে হচ্ছে।দাড়িয়ে থাকতে বেশ কষ্ট হচ্ছে।তবে কয়েক মুহূর্ত পর বুঝতে পারলো তার প্রিয়তমা আসছে।

দৃশ্য এসে মাহাদের মাথায় ছাতা ধরলো।ততক্ষণে মাহাদ ভিজে টইটুম্বুর।দৃশ্যকে দেখে মুখের মাস্ক খুলে ফেললো মাহাদ।দৃশ্যকে দেখে মুচকি হাসলো।দৃশ্যর ইচ্ছে করছে মাহাদের ফর্সা গাল থাপ্পরে লাল করে ফেলতে।দৃশ্য রেগে বললো

-“পাগল হয়ে গেছো?এই বৃষ্টি মধ্যে এই জায়গায় কেনো দাড়িয়ে আছো?অসুস্থ হয়ে পড়বে তো।কি বলেছিলাম তোমায় মনে নেই?আমার সামনে আসতে মানা করেছিলাম না?বাসায় যাও মাহাদ।”

মাহাদ পিট পিট করে দৃশ্যর দিকে তাকিয়ে মাথা ডানে বায়ে নাড়িয়ে না বুঝালো।দৃশ্য কপাল কুঁচকে বললো
-“না মানে কি? বাসায় যাও বলছি।”

মাহাদ তখনও বাচ্চাদের মতো মাথা নেড়ে না জানাচ্ছে।দৃশ্যর রাগ হলো।এই অবস্থায় কেউ দেখে নিলে বাজে সিচুয়েশন ক্রিয়েট হবে।তাছাড়া মিডিয়া জানলে কাল ব্রেকিং নিউজ হয়ে যাবে।দৃশ্য মাহাদের হাত ধরে গাড়িতে উঠাতে চাইলো।কিন্তু মুহূর্তেই থেমে গেলো।দৃশ্য দ্রুত মাহাদের কপালে হাত রাখলো। শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।দৃশ্য দ্রুত গালে গলায় হাত দিয়ে দেখলো ভীষণ গরম।সে বুঝতে পারলো এই জ্বর আগেই এসেছে।দৃশ্য অস্থির হয়ে বললো

-“তোমার তো ভীষণ জ্বর।এই জ্বর নিয়ে সন্ধ্যা থেকে এই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকার মানে কি?আবার বৃষ্টিতেও ভিজতেছো?”

মাহাদ কিছুই বললো না।তার শরীর কিছুটা ঢুলতে লাগলো।দৃশ্য কি করবে বুঝতে পারছে না।একবার আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিলো। মাহাদের অবস্থা দেখে সে মাহাদের হাত ধরে বাসায় নিয়ে আসলো।বাসায় ঢুকেই দেখলো লতা দাড়িয়ে আছে।দৃশ্য আর মাহাদ কে দেখে কপাল কুচকে ফেললো লতা।দৃশ্য ভীষণ অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো।আপু কি ভাববে আল্লাহই জানে।কিন্তু দৃশ্যকে অবাক করে দিয়ে আপু বললো

-“রুমে নিয়ে গা মুছে দে।দেখে তো অসুস্থ মনে হচ্ছে।”

দৃশ্য আর কিছুই বললো না। মাহাদের হাত ধরে নিজের রুমে নিয়ে আসলো।আর মাহাদ ও বাধ্য ছেলের মতো দৃশ্য পিছু পিছু আসলো।দৃশ্য মাহাদকে দার করিয়ে কাভার্ড এর সামনে চলে আসলো। মাহাদ ভিজে গেছে।এই মুহূর্তে তার ড্রেস চেঞ্জ করা প্রয়োজন।দৃশ্য কাভার্ড থেকে একটা ব্যাগ বের করলো।এই জায়গায় একটা টাউজার আর টিশার্ট আছে।এগুলো সে মাহাদের জন্যই কিনেছিলো।

মাহাদের অফিসে জয়েন করে প্রথম সেলারি পেয়ে সবার জন্যই কিছু না কিছু কিনেছে।জিনিস গুলো বেশি দামী না।তবুও নিজের প্রথম সেলারি দিয়ে মায়ের জন্য একটা সিম্পল শাড়ি,ভাইয়ার জন্য আর মাহাদের জন্য টাউজার আর টিশার্ট কিনেছে।তার ভাই আর মাহাদ সব সময় ব্র্যান্ডের জিনিস ইউজ করে অভ্যস্থ।এক সময় সে নিজেও অভ্যস্থ ছিলো।কিন্তু পরিস্থিতে পড়ে এখন নিজেকে বদলে নিয়েছে।বাবার প্রতি ঘৃণা থাকলেও সে তো বাবা।তার জন্যও একটা সিম্পল পাঞ্জাবি কিনেছে।সে জানে বাবা এটা কোনোদিন পড়বে না।এই জিনিস গুলো তাদের দিতে পারবে কিনা জানা নেই তবুও কিনেছে।

মাহাদের চোখ পড়লো কাভার্ড এর ভেতর সুন্দর করে ভাঁজ করা একটা শাড়ির দিকে।তাদের বিয়ের শাড়ী। মাহাদ বাঁকা হাসলো। দৃশ্য কতো যত্ন করে রেখে দিয়েছে।
এই জামা গুলো মাহাকে দিতে তার বেশ অসস্তি বোধ হচ্ছে। মাহাদের মতো সেলিব্রেটি কি এই সব পড়বে?কিন্তু এটা ছাড়া আর অপসন নেই।সে ব্যাগটা মাহাদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো

-“ড্রেস চেঞ্জ করে নাও।ভেজা কাপড়ে থাকলে জ্বর আরো বাড়বে।”

-“এটাকি আমার জন্য কিনেছো?”

দৃশ্য কিছু না বলে মাহাদকে ব্যাগ ধরিয়ে দিলো।মাহাদ ড্রেস হাতে নিয়ে ওয়াস রুমে চলে গেলো।দৃশ্য সেখানে দাড়িয়ে ভাবতে লাগলো মাহাদের কথা।এতো অসুস্থ হয়েও আজ এমন পাগলামি কেনো করছে?ইসস! লতা আপুর সামনে কতো লজ্জায় পড়তে হলো।

মাহাদ চেঞ্জ করে এসে দৃশ্যর বিছানায় বসে পড়লো।জামাটা মাহাদের গায়ে বেশ মানিয়েছে। মাহাদের শরীরটা ভীষণ খারাপ লাগছে।সকাল থেকেই এই জ্বর শুরু হয়েছে।এই মেয়েটাকে না দেখে এতদিন অসুস্থ ছিলো।আর আজ তাকে দেখে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

দৃশ্য দেখলো মাহাদের চুল গড়িয়ে পানি পড়ছে।এই ছেলেটা কি মাথা মুছতে জানেনা?এমন ভেজা অবস্থায় থাকলে আরো জ্বর বেড়ে যাবে।দৃশ্য তোয়ালে নিয়ে মাহাদের সামনে দাড়িয়ে মাথা মুছে দিতে লাগলো। মাহাদ প্রথমে চুপ থাকলেও কয়েক মুহূর্ত পর দৃশ্যের কোমর ঝাপটে ধরলো।মুহূর্তেই দৃশ্য চমকে গেলো।শরীর বেয়ে শীতল শিহরণ বয়ে যাচ্ছে।তার হাত থেমে গেলো। মাহাদ তার পেটে নাক ঘষতে ঘষতে নেশাক্ত কন্ঠে বললো

-“হ্যাপি ফোর্থ ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি বউ।”

মুহূর্তেই দৃশ্যর নিঃশ্বাস আটকে গেলো।সে স্তব্ধ হয়ে ভাবতে লাগলো মাহাদ তাহলে মনে রেখেছে আজকের দিনে কথা?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here