তোমার আমার প্রণয় পর্ব-৩৯

0
4309

#তোমার_আমার_প্রণয়
#israt_jahan_arina
#part_39

মাহাদ দের পুরো পরিবারে ছেয়ে গেছে শোকের ছায়া।একজন মানুষের অনুপস্থিতি পুরো পরিবারকে কষ্টের সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছে।আমজাদ রহমানকে মাটি দেওয়ার পর থেকে মাহাদ বাবার কবরের পাশে চুপ করে বসে আছে।অপরাধ বোধ তাকে গ্রাস করে আছে।আজ তার জন্য বাবা পাশে নেই।এই অপরাধ বোধ নিয়ে সে কি করে বাঁচবে?তার জীবনের শ্রেষ্ঠ মানুষটি যে তার পাশে নেই।এই শূন্যতা কি করে দূর করবে?

শামসুন্নাহার বেগম ছেলেকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছে।তার প্রেসার অনেক বেড়ে গেছে।বিছানা ছেড়ে উঠতে পড়ছে না।দুই ছেলেই তার চোখের মণি।কিন্তু বড়ো ছেলেটা একদম আলাদা।তার মতো মাটির মানুষ আর হয় না।রাজনীতিতে এতো জটিলতা আর দুর্নীতি দেখে সে রাজনীতি ছেড়েছে।নাহলে বংশগত রাজনীতি কে ছারে।তার একটাই কথা মানুষের সেবা করার জন্য রাজনীতিতে থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই।রাজনীতির বাইরে থেকেও সেবা করা যায়।সে বরাবর একটা সাধারণ জীবন চেয়েছে।নিজে থেকে কিছু করতে চেয়েছে।ব্যাবসায়ী প্রতি তার বেশ ঝোঁক ছিল।তাই ঢাকায় একটা ছোট ফেক্টরি দিয়ে শুরু করে।যা দিন দিন বড়ো হতে থাকে।ঢাকা শহরে বিশজন ধনী ফেক্টরী মালিকের মধ্যে তিনি একজন।

তবে এই ব্যাবসায় পরিচালনার ক্ষেত্রে তার অনেক কষ্ট করতে হতো।কারণ তাকে প্রতি সপ্তাহে ঢাকা টু রাজশাহী যাতায়াত করতে হতো।তিনি চাইলেই খুব সহজে পরিবার নিয়ে ঢাকায় শিফট করতে পারতেন।কিন্তু তার মা শামসুন্নাহার বেগম কিছুতেই ঢাকায় যাবেন না।ওই যান্ত্রিক শহরে নাকি তার দম বন্ধ হয়ে আসে। আর শাশুড়িকে ছেড়ে আখি রহমানও যেতে রাজি হয়নি।

তার এই মুহূর্তে ছেলের বউয়ের চিন্তা হচ্ছে।তার ছেলেকে ছেড়ে মেয়েটা কি করে থাকবে?ছেলেটা বউকে ভীষণ ভালো বাসতো।ভাগ্য করে এমন বৌমা পেয়েছেন তিনি।তাকে ভীষণ সম্মান করে আখি।আজও মনে আছে সে দিনের কথা।তখন আমজাদ রাজনীতিতে পুরো পুরী মত্ত।বিয়ের কথা বললেও ছেলে রাজি হতো না।একদিন বাসায় এসে জানালো তার একটা মেয়েকে পছন্দ।মেয়েটাকে কলেজে যাওয়ার পথে দেখেই নাকি পছন্দ হয়ে গেছে।তিনি পর দিনই আখির বাসায় বিয়ের প্রস্তাব রাখেন।তারপর পারিবারিক ভাবে তাদের বিয়ে হয়।ছেলে যে বউকে চোখে হারাতো।

আখি রহমান নিস্তব্ধ হয়ে গেছেন।না কান্না করছে,না করো সাথে কথা বলছে।যেনো পাথর হয়ে গেছে।নিজের প্রাণ প্রিয় স্বামীকে এই ভাবে হারাতে হবে ভাবতে পারেননি।মানুষটা তো তাকে কথা দিয়েছিলো সারা জীবন পাশে থাকবে।তবে আজ কেনো স্বার্থপরের মত একা চলে গেলো।একটি বারও কি তার কথা ভাবলো না? আজ থেকে কে তার খেয়াল রাখবে?কে আদর করে ম্যাডাম বলে ডাকবে?রাগ করে থাকলে কে আদুরে কথা বলে রাগ ভাঙিয়ে নিজ হাতে খাইয়ে দিবে?

মাহিম ঘর বন্ধ করে বসে আছে।এই মুহূর্তে তার করো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।সে কিছুতেই অশ্রুধারা কে আটকে রাখতে পড়ছে না।বাবা নামক ছায়াটা মাথা থেকে হারিয়ে গেলে ঠিক কতটা অসহায় লাগে তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।তার বাবা তো আট দশটা বাবার মতো ছিলো না।তার বাবা ছিলো তাদের দুই ভাইয়ের বেস্ট ফ্রেন্ড।শাসন জিনিসটা তারা বাবার কাছ থেকে কোনো দিন পায়নি।যা শাসন মা আর দাদী করতো।বাবার এমন কাজের জন্য মা আর দাদীর কাছ থেকে কতো কথা শুনেছে।কিন্তু তবুও কোনো দিন একটা ধমক ও তিনি দেননি।এমন বাবার ছায়া হঠাৎ এই ভাবে হারিয়ে গেলে তারা কি করে নিজেকে সামলাবে?

আরিফ ও অপরাধ বোধের কারণে ভাবির সামনে যায়নি।সে এই বয়সে এসে এমন ভুল কি করে করলো?এমন ডিসিশন নেওয়ার আগে একবার ভাই কে জানলে হয়তো পরিস্থিতি এতটা ঘোলাটে হতো না।

মাহাদের মামা আর মামীরা সব আত্মীয় স্বজনদের সামলাচ্ছেন।কারণ এই বাড়ির করো পরিস্থিতি কথা বলার মতো নেই।এলাকার সকল মানুষ ছুটে এসেছিল আমজাদ রহমানকে শেষ বার দেখার জন্য।মানুষটি কে অপছন্দ করে এমন খুব কম মানুষ পাওয়া যাবে।রাজনীতিতে থাকতে তিনি সবার জন্য ভালো কিছু করার চেষ্টা করেছে।এমনকি রাজনীতি ছাড়ার পরও মানুষের বিপদে সব সময় পাশে থেকেছেন।এমন মানুষ হটাৎ এই ভাবে চলে যাওয়াটা সবার জন্য দুঃখের।

এলাকার সকলের এতো সময়ের মধ্যে জানা হয়ে গেছে মেয়র এর মেয়ে আর মাহাদ পালিয়েছিলো।যার কারণে মেয়র সাহেব আমজাদ রহমানের সাথে ঝামেলা করেছে।আশরাফ হুসেনের মতো অহংকারী মানুষ যে কি করতে পারে তা সকলের জানা।আশরাফ হুসেনের কারণেই আমজাদ রহমান অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন তা পুরো এলাকায় রটে গেলো।মানুষ আশরাফ হুসাইনকে ছি ছি করছেন।অনেকে এটাও বলছে আমজাদ রহমানের মতো এতো বিত্তশালী লোকের ছেলে যে তার মতো অহংকারী লোকের মেয়েকে পছন্দ করেছেন এটাই তার সাত কপালের ভাগ্য।নাহলে আমজাদ রহমানের মতো এতো ভালো মানুষ ওই অহংকারী আশরাফের বাড়ির মেয়ে কোনো দিন অনতো না।আশরাফ হুসাইন ক্ষমতায় থাকায় এলাকার মানুষ তার সামনে কিছুই বলতে পারে না।তবে দৃশ্য আর মাহাদ বিয়ে করে নিয়েছে সেটা সবাই জানে না।কারণ তাদের ধারণা বিয়ে করলে নিশ্চয়ই কয়েক দিন পর বাড়ি ফিরতো।তাদের ধারণা তাদের পালানোর সময় আশরাফ ধরে নিয়েছে।আর এর জন্যই আমজাদ রহমানের সাথে ঝামেলা করেছে।আবার অনেকের ধারণা তারা বিয়ে করে ফেলেছে।

টাকা আর ক্ষমতা থাকলেই যে ভালো মানুষ হওয়া যায়না সেটা আশরাফ হুসাইন বুঝিয়ে দিয়েছেন।অন্যদিকে সাত পুরুষ বিত্তশালী হলেই যে তাদের মধ্যের অহংকার চলে আসে না সেটা আমজাদ রহমানকে দেখে বোঝা যায়।

আমজাদ রহমানের মৃত্যুর খবর শুনে দৃশ্যর মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পরলো।বুকের বা পাশে তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করলো।চিৎকার করে কাদলো।আচ্ছা ভালো মানুষ গুলো এই ভাবে কেনো চলে যায়?এই মানুষটা যখন তাকে ঘরের লক্ষী বলে তখন তার শরীর বেয়ে শীতল হাওয়া বয়ে যায়।এতো আদুরে ডাকে কোনো মানুষ তার ছেলের গার্লফ্রেন্ডকে ডাকতে পারে সেটা তো জানা ছিল না। দৃশ্য ভেবেছিলো তাদের বিয়ের খবর শুনে তিনি বকা ঝকা করবেন।আর যখন তার বাবা তাকে অপমান করছিলো তখন দৃশ্য ধরেই নিয়েছে তিনি তাকে কখনো মেনে নিবে না।কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে মানুষটি তার বাবার পথ আগলে দাড়িয়েছে।তাকে বাড়ির বউ বলে মেনে নিয়েছে।

আজ নিজের বাবার প্রতি তীব্র ঘৃণা কাজ করছে।এই মানুষটির আর কতো খারাপ রূপ আছে?এই মানুষটি যে কোনদিন তার মাকে সম্মান করেনি সেটা দৃশ্য বুঝে গেছে।এই পরিবারে জন্ম নিয়ে আজ দৃশ্যর আফসোস কাজ করছে।সে কেনো আমজাদ রহমানের মতো একজন বাবার ঘরে জন্মালো না?আর ওই মানুষটিকে সে বাবা হিসেবে পেয়েও হারিয়ে ফেললো।এমনটা কেনো হলো।আর মাহাদ!সে ঠিক আছে তো?বাবা যে তার জীবনে কতোটা জুড়ে আছে সেটা দৃশ্য জানে।নিশ্চয়ই সে ভীষণ ভাবে ভেঙে পড়েছে।এই সময় তার কি করা উচিৎ নিজেও জানেনা।সে একটা বার সে বাড়িতে যেতে চাইলো।কিন্তু যাবে কি করে?তার বাবা যে তাকে ঘর বন্দি করে রেখেছে।সেদিন হসপিটালে আমজাদ রহমানকে দেখতে যাবার অপরাধে তাকে রুমে আটকে রেখেছে।এই দুই দিনে দৃশ্য এক ফোঁটা খাবার মুখে তুলেনি।আশরাফ হুসাইন করা ভাবে নিষেধ করেছেন ওই রুমের দরজা খুলতে।আনিকা কবির শুধু আঁচলে মুখ লুকিয়ে কেদে চলছেন।মেয়ের জন্য কিছুই করতে পারছেন না।

ফাহিম দুই দিনে অনেকটা চুপসে গেছে।বাবার ভিন্ন কিছু রূপ তার চোখে পড়ছে।তার বাবা কি করে ওই সম্মানী মানুষটিকে আঘাত করতে পারলো?আবার ওই বাড়ি থেকে ফিরে দৃশ্যকে রুমে বন্দি করে রাখলো।সে রুম খুলতে চাইলে তাকে একটা থাপ্পর মেরে শাসিয়ে দিলো।এতো কিছুর পরও বাবার মধ্যে বিন্দু মাত্র অপরাধবোধ তার চোখে পড়েনি।তাহলে কি ওই বাড়ির মানুষ গুলি বাবা সম্পর্কে ঠিক বলছিলো?বাবা কি আসলেই এমন?সেদিন মায়ের গায়েও অনেক আঘাতের চিহ্ন দেখেছিল। তবে কি সে চিহ্ন গুলো বাবার দেওয়া আঘাতের কারণে হয়েছে? বাবা কি আসলেই মায়ের গায়ে হাত তুলে? আর কিছুই ভাবতে পারল না সে। নিজের বাবা সম্পর্কে এতটা খারাপ ধারণা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।

একটা খারাপ লাগা কাজ করছে তার মাঝে। আমজাদ রহমানের জানাজায় সে শরিক হয়েছিল। তার অবচেতন মন এই মানুষটাকে পছন্দ করে সম্মান করে। সেখানে মাহাদকে দেখেছিল বিধ্বস্ত অবস্থায়। বাবার মৃত্যুতে ছেলেটা একদম ভেঙে পড়েছে। এই প্রথম মাহাদের জন্য কিছুটা খারাপ লাগা কাজ করেছে ফাহিম এর মধ্যে।

সে বাসায় ঢুকতেই দেখতে পেল তমা দরজা খুলে দিয়েছে। এই মেয়েটা আজ অনেকদিন পর তাদের বাসায় এসেছে। সেদিনের পর আর তাঁর চেহারা দেখা হয়নি ফাহিমের। হয়তো মেয়েটা ইচ্ছে করেই তার সামনে আসতো না। মেয়েটা কি অভিমান করেছে তার সাথে? করলে করুক তবে তার কিছু যায় আসে না।ফাহিম আর তমাকে নিয়ে বেশি মাথা ঘামালো না। সে নিজের রুমের দিকে এগোতে নিলেই তমা ডাকলো।আর বললো

-“এখন নিশ্চয়ই অনেক খুশি হয়েছেন আপনারা। আপনাদের ইগো তো জিতে গেল তাই না?”

-“কি বলতে চাইছিস তুই?”

তমা তাচ্ছিল্য হেসে বললো
-“আপনাদের পরিবারের সমস্যা কি জানেন আপনারা কখনো কারো মন বুঝতে চান না। সবসময়ই অহংকার আপনাদের রন্দ্রে রন্দ্রে ঘুরে। দৃশ্যর কি অপরাধ ছিল বলুন তো? সে একটা মানুষকে ভালোবেসেছে সেটাই অপরাধ নাকি সে আপনাদের প্রতিদ্বন্দ্বী আর আপনাদের চাইতে দ্বিগুণ ক্ষমতাশালী কাউকে ভালবেসেছে সেটা অপরাধ? আমজাদ আঙ্কেলের মত এমন একজন ভালো মানুষ অত্র এলাকায় আর একটা আছে কিনা আমাকে দেখান তো? আপনার বোনতো রাস্তার কোন লোফার ছেলেকে ভালোবাসে নি। আর না ভালোবেসেছে কোন ঘর চুলহীন ছেলেকে। মাহাদের বাবার ক্ষমতা আর প্রতিপত্তি সম্পর্কে আমার চাইতে আপনি ভালো জানেন। মাহাদের ক্যারিয়ার ও ব্রাইট। অথচ দেখুন তারা এত বিত্তশালী হওয়ার পরও তাদের মধ্যে কোন অহংকার নেই। মানুষের সাথে খুব খুব সহজেই তারা মিশে যায়। মানুষের বিপদের কিভাবে সবার আগে তারা এগিয়ে আসে। এমন একটা মানুষ আজ আপনাদের ইগো আর অহংকারে জন্য দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলো।ওই মানুষটার মৃত্যুর জন্য দায়ী কিন্তু আপনারা।

সত্যি করে একটা কথা বলুন তো। মাহাদের নামে আজ পর্যন্ত কোনদিন একটা খারাপ কথা শুনে ছিলেন আপনি? কোনদিন কোন নারীঘটিত ব্যাপারে কোনো স্ক্যান্ডেল শুনেছেন?”

ফাহিম এক মিনিট ভাবলো।আসলেই সে কোনোদিন মাহাদের নামে একটা খারাপ কথা শুনেনি।তার বাবার মতো তার বেশ নাম আছে এলাকায়।আর মেয়ে সংক্রান্ত কোনো কোথাও কোনো দিন শুনেনি।সে সব সময় মেয়েদের এরিয়ে চলে এমন শুনেছে।বছর খানেক আগে রকির মাধ্যমে জেনেছিল মাহাদ এক বাচ্চা মেয়ের সাথে প্রেম করছে। তাও আবার ভীষণ সিরিয়াস প্রেম।যে কিনা মেয়েদের এড়িয়ে চলত সে শেষ পর্যন্ত একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে প্রেম করছে বিষয়টা জেনে ফাহিম নিজেও প্রচন্ড হেসেছিল। কিন্তু তার জানা ছিলনা সে বাচ্চা মেয়েটা তার নিজের বোন।

তমা আবার বললো

-“আপনারা আসলেই ভীষণ বোকা।একটা বার ভেবে দেখেছেন মাহাদ যদি আপনার বোনের জীবন নিয়ে খেলতে চাইতো তবে সে অনেক আগে সেটা করতে পারত। দৃশ্য মাহাদের প্রতি কতটা অ্যাডিক্টেড সেটা নিশ্চয়ই দেখেছেন। মাহাদ চাইলে আপনার বোন নিজেকে বিলিয়ে দিতে এক মিনিটও কিন্তু ভাবতো না। তার খারপ ইচ্ছা থাকলে আপনার বোনকে বিয়ে করার জন্য বাসায় প্রস্তাব পাঠাতো না।
আপনারা বারবার তাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন।দৃশ্যর উপর অত্যাচার করেছেন। অথচ একটাবার আপনারা দেখেন নি তারা দুজন দুজনকে কতটা ভালোবাসে। মাহাদ যদি আপনার বোনের জীবন নষ্ট করতে চাইত তবে বিয়ে করে নিজের বাড়িতে তুলতো না। সে চাইলেই পারতো দৃশ্য কে বিয়ে করে দূরে কোথাও চলে যেতে কিছুদিনের জন্য কিন্তু সেটা করেনি সে তাকে সসম্মানে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছিল।

কিন্তু সেটা আপনাদের বোঝার ক্ষমতা নেই। মানুষের ভালোবাসাকে কখনোই আপনি সম্মান দেখান নি। না নিজের বোনের আর না অন্য কারোর। আপনাদের মত মানুষরা কাউকে ভালবাসতে জানেনা। আপনারা নিজে কাউকে ভালবাসতে পারেন না আর না করো ভালবাসা দেখতে পারেন।। শুধু জানেন নিজের ইগোকে সেটিস্ফাইড করতে।”

প্রচন্ড রেগে কথা গুলি বলে তমা দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলো।বাসা থেকে বেরিয়ে তমা সিড়িতে বসে পড়লো। দুই চোখ ভিজে উঠেছে তার। সে এমন একটা মানুষকে ভালবেসেছে যার মধ্যে মন বলে কিছু নেই। যে মানুষের মন বুঝে না। ভালোবাসা উপলব্ধি করতে পারে না।যে মানুষটা এত আদরের বোন কে বুঝতে পারল না সে তাকে কি করে বুঝবে? দৃশ্য জন্য প্রচন্ড খারাপ লাগা কাজ করছে তার। চঞ্চল মেয়েটা কেমন নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। বাচ্চা মেয়েটার উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। অথচ এই পাথর মানুষগুলোর মন গলেনি।

ফাহিম নিজের রুমে যেয়ে বিছানায় ধপ করে বসে পড়ল। তমার বলা প্রত্যেকটা কথাই তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।তার বোনের জন্য মাহাদ কি আদৌ ছেলে হিসেবে খারাপ ছিল? বরং অনেক বেশি যোগ্য ছিল। তার বাবা কিংবা সে হাজার খুঁজেও আদো ওর চাইতে ভালো কোন ছেলে খুঁজে পেতো? ব্যক্তিগত কারণে সে মাহাদকে পছন্দ না করলেও মাহাদ ছেলে হিসেবে কেমন সেটা খুব ভালো করে জানা আছে। সবচেয়ে বড় বিষয় তার বোন মাহাদ কে ভালোবাসে।বোনের কথাটাও তো সে একবার ভেবে দেখেনি। বোন টা যে কত দিন ধরে কতটা মানসিক যন্ত্রণায় আছে সেটা কেন তার চোখে পড়েনি?মাথাটা তার চিন্তায় ভনভন করছে। এত সব কিছু সে কেন ভেবে দেখেনি। তমা ঠিক বলেছে ইগো আর অহংকার এর কারণে আর দুই চোখ বন্ধ হয়ে আছে। চোখের সামনে ন্যায় অন্যায় গুলো সে দেখতে পাচ্ছিল না। ওই মানুষটার মৃত্যুর জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তারাই দায়ী। এতো রিয়াক্ট না করে তারা যদি একটা বার সবকিছু ভেবে দেখতো, তাহলে হয়তো আজ এমন কিছু হতো না।

পরদিন দৃশ্য আর কিছুতেই চুপ করে বসে থাকতে পারলো না। মাহাদ কে একটা বার দেখার জন্য মন অস্থির হয়ে উঠেছে। মানুষটা যে ঠিক নেই সেটা সে বুঝতে পারছে। সে অনবরত কান্না করতে লাগল আর দরজা ধাক্কাতে লাগলো। আশরাফ হোসেন তখন বাসায় ছিলেন না। আনিকা কবির আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না। তিনি একটা হাতুড়ি এনে দরজার লক ভেঙে ফেললেন। রুম থেকে বেরিয়ে দৃশ্য মাকে জাপটে ধরে কাঁদতে লাগলো। আনিকা কবির পরম আদরে মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন। দৃশ্য মাহাদের বাড়িতে যেতে চাইলে আনিকা কবির আর মানা করতে পারলেন না। আর কেউ মানুক বা না মানুক তিনি মানেন এই বিয়েটা। যেখানে মেয়ে সুখে থাকবে তিনি চান মেয়ে সেখানেই থাক। সেই ছেলেটার মাঝে যে তার মেয়ের সুখ নিহিত সেটা তিনি অনেক আগেই বুঝেছেন। তাই আর বাধা দিলেন না।

দৃশ্য দিকবিদিক ভুলে মাহাদ দের বাড়ির দিকে ছুটলো। এই মুহূর্তে তার মানুষের পাশে থাকা উচিত। সে কথা দিয়েছিলে মাহাদকে কোনদিন তার হাত ছাড়বে না। কথার বরখেলাপ সে করবে কি করে। তাছাড়া মাহাদ তার স্বামী। বাবা হাজার চেষ্টা করেও তাকে তার স্বামীর কাছ থেকে কিছুতেই দূরে রাখতে পারবে না।কিছুতেই না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here