তোমার আমার প্রণয় পর্ব-১৮

0
4469

#তোমার_আমার_প্রণয়
#israt_jahan_arina
#part_18

সমুদ্রের অপার সুন্দর্য সকলকেই বিমোহিত করে। সূর্য যখন সমুদ্রের কোলে ঢলে পড়ে সে অপার সৌন্দর্য পর্যটকদের মন কেড়ে নেয়। দৃশ্য আর ঈশিতা বসে সূর্যাস্ত দেখছে। হঠাৎ মৃদুল সেখানে উপস্থিত হয়। দুইটা ডাব এনে তাদের দুজনকে দিয়ে বললো

-“গার্লস ডাবের পানি খাও একদম ফ্রেশ লাগবে। বিচে বসে ডাবের পানি খাওয়ার মজাই আলাদা।”

দৃশ্য ও মুচকি হেসে ডাব হাতে নিয়ে বললো
-“থ্যাংক ইউ মৃদুল ভাইয়া। আপনার ডিউটি আজকের জন্য শেষ?”

-“হে আজকের জন্য শেষ।”

তারপর তারা সেখানে বসে কিছুক্ষণ গল্প করলো। হঠাৎ দৃশ্য বললো

-“মৃদুল ভাইয়া আপনি আর ঈশিতা গল্প করুন আমি একটু রুমে যাব।”

মৃদুল একটু চিন্তিত হয়ে বললো

-“তোমার শরীর ঠিক আছে তো দৃশ্য?”

-“হ্যাঁ ভাইয়া আমি ঠিক আছি। একটু টায়ার্ড লাগছে।”

-“আচ্ছা ঠিক আছে যাও।”

দৃশ্য রুমে এসে চুপচাপ বিছানায় বসে রইল। তার কিছুই ভালো লাগছে না। তার মনের ভিতর চলছে তুমুল ঝড়। সময় কি মানুষ কে আসলেই পরিবর্তন করে দেয়। না হলে অল্প কিছুতেই কেদে কেদে বুক ভাসানো মেয়েটা আজ এত শক্ত কি করে আছে?

আজ রাতে এই হোটেলে একটা পার্টি আয়োজন করা হয়েছে। মাহাদ দের শুটিং সুন্দরভাবে কমপ্লিট হওয়ায় আজ তারা পুরো টিম মিলে পার্টি আয়োজন করেছে। কাল সবাই তারা ঢাকায় ফিরে যাবে।

পার্টি ভীষণ জমে উঠেছে। চারিদিকে তীব্র মিউজিক বাজছে। সেখানে অনেকেই ডান্স করছে। মিডিয়ার এই সাইটটা দৃশ্যটা মোটেও পছন্দ না। পার্টি তে আসা সকলের ড্রেসআপ দেখে সে অবাক হলো না। ফ্যাশন হাউসে কাজ করার সুবাদে এধরনের হাজারো ড্রেস সে দেখেছে। কিন্তু এটা যদি আগের দৃশ্য হতো তাহলে হয়তো তার চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসতো। তখন তার দুনিয়াটা ছিল ভীষণ ছোট। শুধুমাত্র পরিবার আর মাহাদের মাঝেই সীমাবদ্ধ।

সাউন্ড আর মানুষের ভিড়ের মাঝে দৃশ্য ভীষণ অসহায় ফিল করছে। এমন পার্টি সে জীবনে কখনোই করেনি। অতি রক্ষণশীল পরিবারের মেয়েদের এ ধরনের পার্টি না দেখারই কথা। তাদের জন্য তো সন্ধ্যার পর বাড়ির বাইরে যাওয়াও নিষিদ্ধ।

তীব্র শব্দ আর মানুষের ভিড়ে দৃশ্যের মাথাব্যথা ধরেছে। একটা সাইডে ছোটখাটো বার বসেছে। সেখানেই সকলে ড্রিংকস করছে। তাদের টিমের লোকজন ছাড়াও এখানকার গণ্যমান্য লোকজনও এখানে শামিল হয়েছে। কিছুক্ষণ পর ঈশিতা দৃশ্যের সামনে একটা গ্লাস এগিয়ে দিলে দৃশ্য বললো

-“ঈশিতা আমি ড্রিঙ্কস করি না।”

-“আরে বাবা এটা সফট ড্রিংকস অ্যালকোহল না।”

দৃশ্য ও মুচকি হেসে গ্লাসটা হাতে নিল।
গ্লাসে একটা চুমুক দিতেই তার চোখ গেলো মাহাদের দিকে। মাহাদ বারের সামনে এসে বসেছে আর পাশে কারো সাথে কথা বলছে। দৃশ্য অবাক হলো তখন যখন দেখলো মাহাদ মুহূর্তেই 2pac গিলে ফেলেছে।

কয়েক বছর আগে ঠিক এভাবে অবাক হয়েছিল যখন সে প্রথম দেখেছিল মাহাদকে সিগারেট খেতে।

সেদিন দৃশ্য কোচিং থেকে একটু আগেই বেরিয়ে গেছে। বেরিয়ে মেইন রোডের সামনে আসতেই তার নজর পড়লো সামনে বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো মাহাদের দিকে। মাহাদ আর তানিম একসাথে দাঁড়িয়ে হাসাহাসি করছে আর মনের সুখে সিগারেটের ধোঁয়া ওড়াচ্ছে। দৃশ্য অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল সেদিন। এই ছেলেটা যে সিগারেট খায় সেটা তো জানা ছিল না। এই সিগারেট জিনিসটা তার ভীষণ অপছন্দ। তার মতে ভালো ছেলেরা কখনো এই ধরনের নেশায় আসক্ত হয় না।

এই স্বভাবটা তার ভাইয়েরও আছে। তবে দৃশ্য সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে পারে না বলে ফাহিম বাসায় সিগারেট খায় না।

তীব্র অভিমান জমা নিলো দৃশ্যর ছোট্ট মনে। দৃশ্য নাবিলার হাত ধরে দ্রুত সামনে এগোতে লাগলো। এই ছেলেটার সাথে সে আর কোনদিন কথা বলবে না। অসভ্য বাজে লোক।
দৃশ্য কে আসতে দেখে মাহাদ একটু অবাক হলো।কারণ আরও আধা ঘন্টা পর দৃশ্যর আসার কথা। মাহাদ একটু আগেই রাজশাহী এসেছে। ভেবেছে বিকেলে দৃশ্যর কোচিং এর সামনে দাঁড়িয়ে তাকে অবাক করে দেবে।দৃশ্যকে আসতে দেখে মাহাদ সিগারেটটা নিচে ফেলে জুতার সাহায্যে পিষে ফেললো। কিন্তু দৃশ্য মাহাদের সামনে দাঁড়ালো না সে সামনে আগাতে লাগলো। মাহাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়লো। হঠাৎ তার পিচ্চিটার কি হলো? সে দৌড়ে দৃশ্যর সামনে দাঁড়িয়ে বললো

-“কি পিচ্চি? চোখে কালো চশমা পরে ঘুরছো নাকি, আমাকে দেখা যায় না?”

দৃশ্য জবাবে কিছুই বললো না। মাহাদকে এড়িয়ে আবার সামনে আগাতে লাগলো। মাহাদ বেচারা কিছুই বুঝলো না। তার পিচ্চিটা তাকে ইগনোর কেনো করছে?

মাহাদ এবার পেছন থেকে দৃশ্যর হাত ধরে নিজের সামনে দাঁড় করালো,আর বললো

-“কি ব্যাপার আমার দৃশ্য পাখি কি কোন কারনে রাগ করেছে?”

দৃশ্য এবার ভীষণ রাগ হচ্ছে। তাদের বংশ যে শুধু ছেলেদেরই রক্ত গরম তা কিন্তু নয় মেয়েদেরও আছে। যেমন দৃশ্য খুব সহজে রেগে যায়। এরকম একটা বাজে কাজ করে আবার তাকে আহ্লাদ দেখানো হচ্ছে। সে এক ঝটকা মেরে মাহাদের হাতটা ছাড়িয়ে নিলো।আর রাগী কন্ঠে বললো

-“খবরদার আমার সাথে একদম কথা বলবে না। অসভ্য লোক।”

বেচারী নাবিলা এই অবস্থা দেখে কিছুটা পিছিয়ে দাঁড়ালো। নির্ঘাত এই দুইজন এখন ঝগড়া করবে।তাছাড়া মাহাদকে সে ভীষণ ভয় পায়।

মাহাদের এবার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। সে সব সহ্য করতে পারলেও দৃশ্যর এই ব্যবহার সহ্য করতে পারছে না। সে দুহাতে দৃশ্যর বাহু চেপে নিজের আরো কাছে নিয়ে আসলো। আর ভীষণ রেগে বললো

-“এই সমস্যা কি তোর? আমাকে ইগনোর কেন করছিস?”

কথাটা বলার সাথে সাথেই দৃশ্য গরগর করে বমি করে দিলো মাহাদের উপর। আকর্ষিক ঘটনায় মাহাদ চমকে গেলো। তার পরনের পুরো গেঞ্জিটাই বমি লেগে যা-তা অবস্থা। মাহাদ ভীষণ চিন্তিত হয়ে দৃশ্যকে এক হাতে ধরে বললো

-“দৃশ্য পাখি তুমি ঠিক আছো? তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে? নাবিলা তোমার কাছে পানি আছে?”

নাবিলা দ্রুত তার ব্যাগ থেকে পানির বোতল এগিয়ে দিলো। মাহাদ দৃশ্যকে দ্রুত পানি খাওয়ালো। নিজের গেঞ্জিটাতে বাকি পানিটুকু ঢেলে পরিষ্কার করার চেষ্টা করলো।

দৃশ্য ভীষণ অসুস্থ বোধ করছে। বমি করার ফলে তার পুরো শরীর কাঁপছে। মাহাদ দৃশ্যকে আবার ধরতে গেলে দৃশ্য দুই কদম পিছিয়ে গেলো। মাহাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফুটে উঠলো। নাবিলা বিষয়টা বুঝতে পেরে দৃশ্যকে এসে ধরলো আর বললো

-“ভাইয়া দৃশ্য সিগারেটের গন্ধ একদম সহ্য করতে পারে না।”

ব্যাস মাহাদ বুঝে গেলো তার দৃশ্য পাখিটা কেন তার সাথে এমন করছিলো। সে দ্রুত পাশের দোকানের দিকে দৌড়ে গেলো। আরেকটা পানির বোতল নিয়ে ভালো করে কুলি করলো সাথে একটা চুইংগাম চিবালো।

দৃশ্য আর মাহাদ বসে আছে একটা কফি হাউজে। পাশের টেবিলেই বসে আছে তানিম আর নাবিলা। তানিম মুচকি হেসে নাবিলাকে বললো

-“বুঝলেন বেয়াইন, এই নিব্বা নিব্বি গুলা কিন্তু জমিয়ে প্রেম করছে। এই দুইটার ঝগড়াগুলো কিন্তু সেই মিষ্টি লাগে।এদের প্রেম করা দেখে তো আমারও কেমন প্রেম প্রেম পাচ্ছে।”

নাবিলা কি বলবে বুঝতে পারল না। তাই সে শুধু মুচকি হাসলো।

দৃশ্য এখন কিছুটা ব্যাটার ফিল করছে। তবে সে মাহাদের সাথে কোন কথা বলছে না আর না তার দিকে তাকাচ্ছে। মাহাদ এতক্ষণে তার গেঞ্জি টা চেঞ্জ করে নিয়েছে। কারণ তার কাঁধের ব্যাগে গেঞ্জি ছিলো। ঢাকা থেকে ফিরে এসে সোজা দৃশ্যের জন্য এখানে ওয়েট করছিল। তানিমকে কল করলে তানিম নিজের বাইক নিয়ে মাহাদের সাথে দেখা করতে আসে।

সকল নীরবতাকে ছাপিয়ে মাহাদ বললো
-“সরি পিচ্চি, তুমি যে সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে পারো না সেটা আমার জানা ছিল না।”

দৃশ্য চোখ গরম করে মাহাদের দিকে তাকালো। যেন এই চোখ দিয়েই মাহাদকে ধ্বংস করে ফেলবে। মাহাদ বেচারা ও কিছুটা ভয় পেলো। দৃশ্য প্রচন্ড রেগে বললো

-“আর তুমি যে এরকম বাজে নেশা করো সেটাও আমার জানা ছিল না।”

মাহাদ বেচারা এখন ভয়ে আছে। আজ প্রথম দৃশ্য তাকে সিগারেট খেতে দেখেছে তাতেই এত রাগ করেছে। যদি সে জানে মাহাদ ক্লাস নাইন থেকে সিগারেট ধরেছে তাহলে তো তার খবর আছে। যা রাগী মেয়ে সোজা ব্রেকআপ করে দেবে। তারা আর এই মেয়ের সাথে সংসার করা হবে না। সে তো আর জানতো না যে দৃশ্য এত আগেই চলে আসবে।
তাহলে সিগারেট ধরানোর চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতো। তবে তার এখন খারাপ লাগছে। তার জন্যই মেয়েটা অসুস্থ হয়ে পড়লো। মনে মনে ভেবে নিলো আর কখনোই সিগারেট ছুঁয়েও দেখবে না। যেটা তার পিচ্চিটাকে কষ্ট দেয় সে কাজ কিছুতেই করবে না। মায়া জড়ানো কণ্ঠে মাহাদ বললো

-“সরি তো জান। আর কক্ষনো সিগারেট ছুঁয়েও দেখব না। প্রমিস।”

দৃশ্য তবুও কথা বললো না। তবে তার ভীষণ ভালো লাগছে এটা ভেবে যে মাহাদ তার বমি করার পর মোটেও ঘৃণা করে নি। বরং তার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছিল। এমন কেয়ারিং একজন মানুষকে ভালো না বেসে থাকা যায়? তবুও সে মাহাদের উপর রেগে থাকলো।পরে মাহাদ তাকে বেশ কয়েক ফ্লেভারের আইসক্রিম খাইয়ে তারপর মানিয়েছে।

অতীতের কথাগুলো ভেবে দৃশ্য নিজের উপরেই হেসে দিলো। সে এই মানুষটার মাঝে আগের মাহাদকে কেনো খুঁজছে? সেতো জানে বর্তমান মাহাদ কেমন। ড্রিঙ্ক করে বেশ কয়েকবার হাঙ্গামা করেছে মাহাদ। যেটা মিডিয়ায় অনেক চর্চা হয়েছিলো। দৃশ্য সবসময় খবর গুলো এভয়েড করার চেষ্টা করতো।

হঠাৎই দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেলো। মাহাদ একদৃষ্টিতে দৃশ্যের দিকে নজর বোলাচ্ছে। তাকে পা থেকে মাথা অব্দি স্ক্যান করে যাচ্ছে। এতে দৃশ্যের ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে। সে বারবার গায়ের ওড়না টা টেনে ঠিক করছে। এই লোকটা ভীষণ অসভ্য হয়ে গেছে।

হালকা পিংক কালার থ্রি পিসটায় দৃশ্য কে ভীষণ স্নিগ্ধ লাগছে। মুখে কোন মেকআপ নেই না আছে চোখে কাজল। শুধু ঠোটে হালকা লিপস্টিক। কোমর অব্দি চুলগুলো খুলে রেখেছে। কয়েক বছরেই কারো চুল এত লম্বা হতে পারে?

কিছুক্ষণ পর অরিন আসলো মাহাদের কাছে।দুজন একসাথেই ড্রিংক করছে। অরিন কে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো দৃশ্য। অতি সুন্দরী মেয়েটার ড্রিংক করার স্টাইলটাও ফ্যাশনেবল। মাহাদের সাথে এমন মেয়েই মানাবে,তাকে নয়।

তারা দুজন হেসে কথা বলছে। দুজন সুদর্শন মানুষ যখন এমন মিষ্টি করে হাসে তখন সবারই নজর কাড়ে। তেমনই পার্টিতে সকলের নজর তারা কেড়েছে।

মাহাদ আড়চোখে বারবার দৃশ্য কে দেখছে। আচ্ছা দৃশ্য কি আরেকটু লম্বা হয়েছে? আগে তো তার বুক অব্দি পড়তো এখন নিশ্চয়ই তার থুতনিতে মাথা ঠেকবে।

দৃশ্য আর এক মুহূর্তও সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। বাইরে থেকে নিজেকে যতই শক্ত প্রমাণ করতে চায় না কেন, সে তো জানে সে ঠিক কতটা দুর্বল। তবে এই দুর্বলতা সে মাহাদকে দেখাতে চায় না।

দৃশ্য ঈশিতাকে বলে পার্টি থেকে বেরিয়ে আসলো।
কয়েক মিনিট করিডোরে দাঁড়িয়ে উত্তাল সমুদ্র দেখলো। ঠিক এই ঢেউয়ের মতো তার মনেও হাজার অনুভূতি আছরে পড়ছে।উপরের ফ্লোরের মিউজিকের সাউন্ড নিচ অব্দি আসছে।তাই দৃশ্য রুমের উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য পেছন ফিরতেই ভয়ে দু’কদম পিছিয়ে গেলো। তার সামনে মাহাদ দাঁড়িয়ে।ভয়ে দৃশ্য কয়েক ঢোঁক গিলে নিলো। তার হার্টবিট প্রচন্ড দ্রুতবেগে লাফাচ্ছে। আর একটুর জন্য সে মনে হয় হার্টফেল করেনি। এমন ভূতের মত পেছনে দাঁড়িয়ে থাকলে যে কেউ ভয় পাবে। দৃশ্য তোতলাতে তোতলাতে বললো

-“আপনি এখানে?”

মাহাদ দু’কদম সামনে এগিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো
-“কেনো অন্য কারো আসার কথা ছিলো?”

দৃশ্য আশেপাশে একবার চোখ বোলালো আর বললো
-“প্লিজ দূরে সরে দাঁড়ান। কেউ দেখলে সমস্যা হতে পারে।”

মাহাদ ঠোঁট বাঁকা করে অদ্ভুত ভাবে হাসলো। মাহাদের এই হাসি তো সে কখনও দেখেনি। কেমন অদ্ভুত হাসি। যেন হাজারো রহস্য ঘেরা এই হাসিতে। দৃশ্য কিছু বলবে তার আগেই মাহাদ তার হাত ধরে সামনে এগোতে লাগলো। এবার দৃশ্যের যেনো ভয়ে জান বেরিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। দৃশ্য বারবার মাহাদের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে আর বলছে

-“হাত ছাড়ুন প্লিজ।”

কিন্তু মাহাদ কোন কথাই শুনছে না। সে দৃশ্য কে সোজা তার রুমে এনে দরজা লাগিয়ে দিলো। দৃশ্য কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। ভয়ে তার আত্মা বেরিয়ে যাবার মত অবস্থা। মাহাদকে খেয়াল করতেই সে বুঝতে পারলো মাহাদ প্রচন্ড ড্রিংক করে মাতাল হয়ে আছে। এখন এই মাতালকে সে কি করে সামলাবে?

দৃশ্য দ্রুত রুমের দরজার দিকে এগোতে গেলে মাহাদ তাকে একটানে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে ধরলো। এতে দৃশ্য পিঠে কিছুটা ব্যথা পেলো। আল্লাহ এই ছেলেটার শরীরে এত শক্তি কি করে আসলো? দৃশ্যর মনে হচ্ছে মাহাদ এই বডিটা বানিয়েছে দৃশ্যকে ঠিক এভাবেই পিষে ফেলার জন্য। যখন তখন তাকে আছরে ফেলার জন্য।

হঠাৎ দৃশ্য পুরো শরীর কেঁপে উঠলো। মাহাদ একটা হাত তার কোমরে রেখেছে। আর অন্য হাত দিয়ে ওর গালে স্লাইড করছে। দৃশ্যর পুরো শরীর জুড়ে এক অদ্ভুত শিহরন বয়ে গেলো। কেমন মাতাল করা অনুভূতি। দৃশ্য মনে হচ্ছে মাহাত ড্রাংক হলেও মাতাল সে হচ্ছে।এতো শক্ত হাতের ছোঁয়া এত স্নিগ্ধ কি করে হয়?

পরক্ষণেই সে এসব ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসলো। মাহাদ মাতাল হতে পারে কিন্তু সে তো না। আবেগে গা ভাসিয়ে দেওয়া মোটেও ঠিক হবে না। কারণ বাস্তবতা আবেগকে প্রশ্রয় দেবে না।কিছুতেই মাহাদকে সায় দেওয়া ঠিক হবেনা। সে দ্রুত কোমর থেকে মাহাদের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। এতে কাজের কাজ কিছুই হলো না বরং মাহাদ তার উষ্ণ বলিষ্ঠ ময় হাত দিয়ে নিজের সাথে তাকে মিশিয়ে নিলো। দৃশ্যর এবার রাগ হচ্ছে ভীষণ রাগ। এমন কেন করছে মাহাদ? অতীতটা কি সে ভুলে গেছে? সব জেনেও কেন তার সাথে এমন ব্যবহার করছে?সে চোখ গরম করে মাহাদের দিকে তাকালো আর বললো

-“এমন অসভ্যতার মানে কি? আমাকে ছাড়ুন। মাতলামো অন্য জায়গায় করুন।”

মাহাদ নীচু কন্ঠে বললো
-“তুমি পুরোটাই একটা নেশা। তোমার কাজল বিহীন চোখে তাকালে এমনি আমার নেশা ধরে যায়। তাহলে মাতলামি অন্য জায়গায় কেনো করবো?”

-“মাহাদ প্লিজ আমাকে ছাড়ো? তোমার স্পর্শ গুলো আমি নিতে পারছিনা।”

কথাটা বলতেই দৃশ্য চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করলো। মাহাদ ঘোর লাগানো চোখে তার দিকে তাকিয়ে দেখছে তার প্রিয়সির ক্ষুদ্র অজস্র বৃষ্টিধারা।সে বললো

-“কাঁদলে তোমাকে ভীষণ কিউট লাগে দৃশ্য পাখি।”

এতগুলো বছর পর ‘দৃশ্য পাখি’ শব্দ টা শুনে দৃশ্যর মনে অনুভূতির তাণ্ডব শুরু হলো। কতদিন পর সে এই ডাক শুনলো।

মাহাদের নাকে ভেসে আসছে তীব্র মেয়েলী ঘ্রাণ। কত বছর হল এই ঘ্রাণটা সে পায় না। তীব্র উত্তেজনা কাজ করছে তার মধ্যে। ভীষণ ভাবেই মাতাল হয়ে পড়ছে। কিছু না ভেবেই সে হঠাৎ দৃশ্য ওষ্ঠ জোড়া দখল করে নিলো। ভীষণ তৃষ্ণার্ত সে। যে তৃষ্ণা একমাত্র এই পিচ্চিটাই মেটাতে পারবে।

আকস্মিক ঘটনায় দৃশ্য পুরো বরফের মতো জমে গেলো। তার চিন্তা ধারণা সবকিছুই যেন থমকে গেছে। মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। নিঃশ্বাস নিতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার। মনে হচ্ছে শরীরের রক্ত কণিকা গুলো হিমশীতল ঠান্ডা বরফ হয়ে আছে। কিন্তু যখন তার জ্ঞান ফিরলো নিজেকে ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

মাহাদ যেন উন্মাদ হয়ে গেছে। সে দৃশ্যকে নিজের সাথে আরও শক্ত ভাবে জড়িয়ে নিলো। নিজের প্রিয়সিকে কাছে পাবার লোভ সামলাতে পারছে না।দৃশ্যর যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে। তার মনে হচ্ছে এই পৃথিবীতে আজই তার শেষ দিন। উপায় না পেয়ে দৃশ্য মাহাদের ওষ্ঠে জোরে কামড় বসিয়ে দিলো। সাথে সাথেই মাহাদ দৃশ্যকে ছেড়ে দিলো। দৃশ্যর দুচোখ বেয়ে অজস্র অশ্রুকণা ঝরছে।

মাহাদ এক পলক দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে আবার দৃশ্যের চিবুকে পাগলের মত চুমু খেতে লাগলো। ঘাড়ে গভীরভাবে মাহাদের ঠোটের স্পর্শ পেয়ে দৃশ্য প্রচণ্ড ভাবে কাঁপতে লাগলো।সে কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারছে না। দৃশ্য খুব কষ্টে শক্তি সঞ্চার করে মাহাদকে জোর করে ছাড়িয়ে দুই গালে পরপর কয়েকটা চড় মেরে বসলো।

মাহাদ অদ্ভুত ভাবে দৃশ্যের দিকে তাকালো। এই তাকানোর মানে দৃশ্য বুঝতে পারলো না। সে কি রেগে আছে না অবাক হয়েছে কিছুই বোঝা গেলো না। দৃশ্য আর বোঝার চেষ্টাও করলো না। সে দ্রুত ওখান থেকে বেরিয়ে আসলো আর দ্রুত নিজের রুমে চলে গেলো।

রুমের খাটে বসে দৃশ্য অঝোরে কাঁদতে লাগলো। এসব কি হচ্ছে তার সাথে। জীবনটা কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেছে তার। ভালোবাসা নামক শব্দটা তার জীবন থেকে সবকিছু কেড়ে নিলো। সবকিছু।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here