তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব ১৪

0
907

#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_১৪

কেঁ*দে কে*টে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে আরশি। অতিরিক্ত কা*ন্নার কারণে চোখের পানি যেনো ফু*রি*য়ে গেছে তার। শ্যাম বর্ণের উজ্জ্বল চেহারা টা ফেকাসে বর্ণ ধারণ করেছে। নিজের বাবার ছবি বুকে জড়িয়ে এক নাগাড়ে ফু*পা*চ্ছে আরশি। আজ এতগুলো বছর পর আবার এতো কাঁ*দ*লো সে। নিজের বাবার ছবিতে হাত বু*লা*তে বু*লা*তে ফুঁ*পিয়ে উঠে আরশি। ভা*ঙা গলায় বলে,

— আব্বু আমি তোমার দেয়া উপহার হা*রিয়ে ফেলেছি। তুমি কি আমাকে ক্ষ*মা করবে? আ..মি, আমি আসলে ওটার যোগ্যই ছিলাম না।

কথা টা বলেই আবার কেঁ*দে ফেলে আরশি। লকেট টা আরশির দাদির ছিলো। তিনি যখন প্রেগনেন্ট ছিলেন তখন লকেট টা বানান। তার খুব শখ ছিলো তার একটা মেয়ে হবে। কিন্তু তার কোনো মেয়ে হয় নি। আরশির বাবা কে উনি ভীষণ ভালোবাসতেন। কারণ তার ছেলেদের মধ্যে আরশির বাবার চরিত্র একেবারে অন্যরকম ছিলো। এমন কি তিনি মৃ*ত্যু*র আগ পর্যন্ত আরশির বাবার কাছেই ছিলেন। আরশি নিজের বাবার মুখে শুনেছে তার দাদা মা*রা যাওয়ার পর থেকেই দাদি আরশিদের বাড়িতে থাকতেন। তিনি নাকি অন্য কোনো ছেলের বাড়িতে যেতেই চাইতেন না। এখন বুঝে আরশি তিনি কেনো যেতে চাইতেন না। হয়তো উনার সাথেও তারা বা*জে ব্যবহার করেছে।

আরশি হওয়ার এক বছর আগেই আরশির দাদি ই*ন্তে*কা*ল করেন। তার অনেক শখ ছিলো আরশির বাবার একটা মেয়ে হবে। তিনি নাতনি কে নিয়ে খেলবেন। বিশেষ ওই লকেট টা নাতনি কে দিবেন। কিন্তু তিনি নিজের হাতে আরশি কে তা দিয়ে যেতে পারেন নি। মৃ*ত্যু*র আগে তিনি আরশির বাবার কাছে লকেট টা দিয়ে যান। আর এটাও বলে যান তার যদি নাতনি হয় তাহলে তাকে যেনো এই লকেট টা দেয়া হয়।আরশির বাবা লকেট টা যত্ন সহকারে রেখে দিয়েছিলেন। মেয়ে হওয়ার পরও তাকে দেন নি। যেদিন আরশির এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়, সেদিন তিনি আরশি কে লকেট টা পড়িয়ে দেন। আর বলেন,

— এটা তোমার দাদি তোমাকে দিতে বলেছিলো। তার মেয়ের অনেক শখ ছিলো কিন্তু আল্লাহ তাকে মেয়ে দেয় নি। তাই তিনি এই লকেট টা নিজের নাতনি কে দিতে বলেছেন। আমি চাইলে এটা তোমার জন্মের পরপরই তোমাকে পড়িয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু আমি অপেক্ষা করেছি। আমি চেয়েছি তুমি আগে এর মূল্য বুঝো তারপর এটা কে পড়ো। সবসময় এই লকেট টা যত্ন করে রাখবে মামুনি। মনে রাখবে এটা শুধুমাত্র একটা সামান্য লকেট না, এই লকেটে তোমার দাদির দোয়া আর ভালোবাসা মিশে আছে। তোমার দাদির পক্ষ থেকে আমি তোমাকে এই লকেট টা পড়িয়ে দিলাম। এবার এটা সামলে রাখা তোমার দায়িত্ব। আমার বিশ্বাস আমার মামুনি পারবে এটা আ*গ*লে রাখতে।

আরশি বালিশে মুখ গু*জে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,

— আমি পারি নি আব্বু। আমি পারি নি দাদির দোয়া, ভালোবাসা আর তোমার বিশ্বাস রক্ষা করতে।

———

এর মধ্যে দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। নতুন বছর চলে এসেছে। কিন্তু আরশির দিনকাল ভালো যাচ্ছে না। তার প্রিয় লকেট টা সে খুঁজে পায় নি। তার লকেট হা*রি*য়ে গেছে জানার পর বন্ধু মহলের সবাই মিলে সারা ভার্সিটি ত*ন্ন ত*ন্ন করে খুঁজেছে কিন্তু পায় নি। শুধু এটুকুতেই থেমে নেই। এই তো কিছুক্ষন আগের কথা। তার দুই স্টুডেন্ট এর আম্মু ফোন করে জানালো তারা ট্যুরে যাচ্ছে। দুই স্টুডেন্ট বান্ধুবী হওয়ায় তাদের মায়েদের মধ্যেও সখ্যতা রয়েছে। তারা একসাথেই বেড়াতে যাচ্ছে। ১৫ দিনের আগে ফিরবে না জানিয়ে দিলো আরশি কে। অর্থাৎ এই মাস টা তারা পড়বে না হয়তো। আর যদি দশ, পনেরো দিন পড়েও বেতনের আশা আরশি রাখতে পারবে না। এই তো গত মাসের বেতনটাই তো তারা আরশি কে দিলো না। ট্যুরে চলে গেলো। একবারও ভাবলো না টিচারের সংসার কিভাবে চলবে। আরশি হ*তা*শার নিঃশ্বাস ফেললো। এই মাস টা সে কিভাবে চলবে বুঝতে পারছে না। এই মাসে মা কে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো। কিভাবে নিয়ে যাবে? ভেবেছিলো বেতন পেলে রিফা কে কিছু নতুন জামা কাপড় কিনে দিবে। কিন্তু তাও আর হবে না হয়তো। খরচ তো কম নয়। পড়াশোনা, খাবার, ওষুধ, বাড়ি ভাড়া আরও কতো রকমের খরচ। বর্তমান বাজারে টিউশনি করে সংসার চালানো যে খুব ক*ঠি*ন। তবুও সব জায়গা থেকে বেতন পেলে মোটামোটি চলে যায় তাদের। কিন্তু এই মাসে কি করবে সে?

এসব ভাবতে ভাবতে ভার্সিটি তে পৌছালো আরশি। ভিতরে প্রবেশ করে দেখলো বড় গাছ তলায় বসে আছে তার বন্ধু মহলের সবাই। আরশি ওদের দিকে এগিয়ে চললো। আরশি কে দেখতেই বন্ধু মহলের সবার মুখ ম*লি*ন হয়ে গেলো। তাদের আরশির ম*লি*ন মুখ টা দেখলেই ক*ষ্ট লাগে। নিজেদের ব্য*র্থ মনে হয় কারণ তারা আরশির জন্য কিছুই করতে পারে না। এই তো মাত্র কয়েকদিনেই মেয়েটা কেমন শু*কি*য়ে গেছে। উজ্জ্বল ফুটফুটে চেহারা টা উজ্জ্বলতা হা*রি*য়েছে। সারাক্ষন ম*লি*ন মুখে থাকে আরশি। তারা কতো রকমের চেষ্টা করেছে আরশি কে হাসানোর। কিন্তু মেয়েটা জো*র করে হাসে। আগের মতো প্রানবন্ত হাসি আর হাসে না।

মুন আর মোহনা দুই পাশে সরে যেতেই মাঝখানে বসলো আরশি। ওদের সবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,

— আচ্ছা আমার তো অনার্স কমপ্লিট হয় নি। আমি কি এই কোয়ালিফিকেশন নিয়ে মোটামোটি স্যালারির কোনো চাকরি পেতে পারি? আমি ভাবছি টিউশনি করা ছেড়ে দিবো। টিউশনি আজ আছে কাল নেই। মোটামোটি একটা জব পেলে ভালো হতো। আমি তো নিউজপেপার রাখি না। তোরা একটু ক*ষ্ট করে খোঁজ খবর রাখিস এই কোয়ালিফিকেশন এ কোনো পদে চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেয় কিনা।

আরশির কথায় সবাই মাথা দু*লা*লো। তারা অবশ্যই খোঁজ নিবে। তারা সবাই বুঝতে পেরেছে আরশি নিশ্চয় কোনো স*ম*স্যা*র মধ্যে পড়েছে। কিন্তু তাদের বলছে না। তারা চাইলেই আরশি কে আর্থিক ভাবে স*হা*য়তা করতে পারে। কিন্তু আরশির আত্মসম্মানবোধ সম্পর্কে এতদিনে সবার ধারণা হয়ে গেছে। আরশি এমন মেয়ে যে না খেয়ে ম*রে যাবে কিন্তু কারোর দ*য়া, ক*রু*না নিবে না। কারো সামনে হাত পা*ত*বে না। তার আত্মসম্মানবোধ প্র*খ*র।

———-

ক্লা*ন্ত দেহ কোনোরকমে টে*নে বাড়ি ফিরলো আরশি। আজকাল ভীষণ ক্লা*ন্ত হয়ে যায় সে। তার মানসিক বল টা যেনো সে কোথাও হা*রি*য়ে ফেলেছে। নিজের রুমে যাওয়ার আগে মায়ের রুমে একবার উঁকি দিলো আরশি। তিনি একটা ছবি হাতে নিয়ে কি যেনো বিড়বিড় করছেন। ছবি টা আরশির বাবার। মা কে এভাবে দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ত্যা*গ করলো আরশি। তার মায়ের রুটিন ই তো এটা। হয় ওষুধের প্রভাবে ঘুমান আর জেগে থাকলে স্বামীর ছবি বুকে নিয়ে কতো শত কথা বলেন, অ*ভি*যোগ করেন, কখনো হাসেন আবার কখনো কাঁ*দে*ন।

আরশি নিজের রুমে এসে ব্যাগ টা বিছানার উপর রেখে অনেক ক*ষ্টে পা চা*লি*য়ে ওয়াশরুমে গেলো। এখন শাওয়ার নেয়া তার জন্য খুব জরুরী হয়ে গেছে। শাওয়ার নিলে যদি শরীর, মন একটু ফ্রেস লাগে। রিফা বাইরের রুমে ফ্লোরে বসে কাপড়ে সুতার কাজ করছে। পাশের বাসার কার কাছ থেকে যেনো সুতার কাজ নিয়ে এসেছে। আরশি অনেকবার মা*না করেছিলো। কিন্তু রিফার এক কথা সারাদিন ফাঁ*কা বসে থাকতে তার ভাল্লাগে না। এইসব টু*ক*টা*ক কাজ করলে তার সময় ও কে*টে যাবে আর কিছু টাকাও আসবে। ক*ষ্ট লাগে আরশির। সে তো চেয়েছিলো রিফা কে একটা সুন্দর জীবন দিতে। কিন্তু মেয়েটাও তার কারণে ক*ষ্ট পাচ্ছে। নিজেকে ব্য*র্থ মনে হয় আরশির। সে জানে রিফা কেনো কাজ করছে।

শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে পড়তে বসলো আরশি। কিন্তু পড়াতেও আজকাল ভালো ভাবে মন বসাতে পারে না। মনে যে শান্তি নেই। যদি নিজের ক*ষ্ট টা কাউকে দেখাতে পারতো, কারোর সাথে নিজের মনের কথাগুলো শেয়ার করতে পারতো তাহলে শান্তি লাগতো হয়তো। কিন্তু তার ক্ষেত্রে নিজের দু*র্ব*লতা, ক*ষ্ট, অনুভূতি কাউকে দেখানো যে নি*ষি*দ্ধ।

ফোনের দিকে চোখ যেতেই আবরারের কথা মনে পড়লো আরশির। আজ এক সপ্তাহ যাবৎ আবরারের কোনো খোঁজ নেই। হয়তো নিজের জীবনে ব্য*স্ত হয়ে গেছে সে। আরশি আবরার কে মনে করতে চায় না। তবুও কেনো যেনো না চাইতেও মনের মাঝে আশা জাগে। মনে হয় আজ বুঝি আবরার তাকে ফোন দিবে, তার সাথে ঝ*গ*ড়া করবে। কিন্তু এসব যে আর হওয়ার নয়। তা*চ্ছি*ল্যের হাসি হাসলো আরশি। সে কতো বড় বো*কা হলে ভেবেছিলো আবরারের মতো একজন তার মতো একটা মেয়ের প্রেমে পড়বে। আরশি নিজের মাথা ঝা*কা*লো। যেনো আবরারের চি*ন্তা মাথা থেকে ঝে*ড়ে ফেলতে চায়। সে নিজেকে বুঝায় তাকে অনেক অনেক পড়তে হবে। এছাড়া তার কোনো গতি নেই। এসব প্রেম ভালোবাসা তার জন্য বা*র*ণ।

চলবে?

(আস্সালামুআলাইকুম। কেমন লেগেছে আজকের পর্ব জানাবেন অবশ্যই আর ভু*ল-ত্রু*টি ক্ষ’মা’র দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here