তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব ১৩

0
818

#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_১৩

চেয়ারে পায়ের উপর পা তু*লে বসে আছে আবরার। তার সামনে ফ্লোরে বসানো হয়েছে সেই ড্রাইভার কে যে আবরারের গাড়ি ধা*ক্কা মে*রে*ছিলো। কিছু টা দূরে বসিয়ে রাখা হয়েছে আরশি কে কি*ড*ন্যা*প করা লোক গুলোকে। আবরারের গা*র্ড রা তাদের ধরে নিয়ে এসেছে। মধ্য বয়স্ক ড্রাইভার লোক টা ভ*য়া*র্ত চোখে তাকিয়ে আছে আবরারের দিকে। আবরার বাঁ*কা হেসে লোকটা কে বললো,

— কি হলো? এটাই ভাবছিস তো এতো জলদি তোর খোঁজ কি করে পেলাম? তুই হয়তো ভাবতেও পারিস নি এতো জলদি ধরা খেয়ে যাবি। উম চল তোকে জানিয়েই দেই কিভাবে এতো জলদি তোকে খুঁজে পেলাম। কেউ একজন আমাকে তোর ট্রাকের নাম্বার দিয়েছিলো। তাই তো এতো জলদি তোর খোঁজ পেয়ে গেলাম। আর কিছু সময় গেলে তো তুই গা ঢাকা দিতি। যাই হোক এখন যা যা জানিস সত্যি সত্যি বলে দিবি। তাহলে শা*স্তি কিছু টা কম হবে। আর নাহলে সোজা উপরে পাঠিয়ে দিবো। তো বল কে তোকে আমাকে মা*রা*র অর্ডার দিয়েছিলো?

ড্রাইভার লোকটার নাম হাসেম মিয়া। হাসেম মিয়া এই শীতেও দ*র*দ*র করে ঘামছে ভ*য়ে। কিন্তু মুখ দিয়ে একটা টু শব্দ ও করছে না। রা*গ লাগলো আবরারের। হাসেম মিয়ার গাল চে*পে ধরে দাঁ*তে দাঁ*ত চে*পে বললো,

— ভালোয় ভালোয় বলবি নাকি অন্য কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে?

ভ*য়ে থ*র থ*র করে কাঁ*প*ছে হাসেম মিয়া। এবারও কিছু না বলায় কপালের রগ ফুলে উঠলো আবরারের। একটা লোহার র*ড দিয়ে বে*ধ*ড়ক মা*র*তে লাগলো হাসেম মিয়া কে। আবরার কে এমন উ*দ*ভ্রা*ন্তের ন্যায় মা*র*তে দেখে ভ*য়ে আত্মা কেঁ*পে উঠলো আরশি কে কি*ড*ন্যা*প করা লোক গুলোর। দুই মিনিট মা*র খেতেই মুখ খুললো হাসেম মিয়া। ব্য*থা*য় কা*ত*রাতে কা*ত*রাতে বললো,

— আর মা*র*বেন না আমাকে স্যার। আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে। আমাকে ক্ষমা কইরা দেন স্যার।

আবরার র*ড ঘুরাতে ঘুরাতে বললো,

— তাহলে বল কে তোকে আমাকে মা*রা*র অর্ডার দিয়েছে?

হাসেম মিয়া ব্য*থা*য়, ভ*য়ে কাঁ*দতে কাঁ*দতে বললো,

— সে বলেছে তার ব্যাপারে কাউকে কিছু জানালে আমার ফ্যামিলির ক্ষ*তি করবে।

আবরার র*ড ফেলে কপালে আঙ্গুল ঘ*ষতে ঘ*ষতে বললো,

— যা জানিস সব টা বলে দে। তোর ফ্যামিলি কে নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব আমার।

হাসেম একটা শুকনো ঢো*ক গি*লে বললো,

— বস কে কখনো দেখি নি আমি। আর তার নাম ও জানি না। উনার সাথে ফোনেই কথা হয়েছে প্রতিবার।

আবরার ক্ষি*প্ত কণ্ঠে বললো,

— হোয়াট? একজন লোকের হয়ে কাজ করছিস অথচ তাকে দেখিস নি কখনো আর তার নাম ও জানিস না? তাহলে তাকে খুঁজে পাওয়ার রাস্তা কি?

হাসেম কাঁ*পা কাঁ*পা গলায় বললো,

— আমার মোবাইলে একটা নাম্বার আছে। তবে সেই নাম্বার টা তার কিনা আমার জানা নেই। আর আমার জানামতে তার ডান হাত কাল্লু নামের একজন। কাল্লুর একটা ছবি আছে আমার ফোনে আর তার নাম্বার ও। বসের সাথে আমার যোগাযোগ কাল্লুই করিয়ে দিয়েছে। জানি না সে আমার খোঁজ কোথা থেকে পেলো।

আবরার শীতল কণ্ঠে হাসেম কে জিজ্ঞাসা করলো,

— এই বসের কথায় এর আগে কাকে কাকে খু*ন করেছিস?

হাসেম ভ*য়া*র্ত চোখে তাকিয়ে বললো,

— একটা। আমি আগে খু*ন করতাম না। কিন্তু হুট করে পাঁচ বছর আগে কাল্লু আসে আমার কাছে। আমাকে বলে একজন কে খু*ন করতে হবে। আমি ভ*য় পেয়ে যাই। রাজী হই না। কিন্তু পরে সে আমাকে বলে খু*ন টা করলে আমাকে দুই লক্ষ টাকা দেয়া হবে। এতগুলো টাকা পাবার লো*ভে রাজী হয়ে যাই আমি। আমার জীবনের প্রথম খু*ন করি। লোক টা পেশায় একজন সাংবাদিক ছিলো। হয়তো বসের গোপন কোনো বিষয় সে জেনে গিয়েছিলো তাই তাকে মা*রা*র অর্ডার দেয়া হয়। আমি তার গাড়ি এ*ক্সি*ডে*ন্ট করাই। লোক টা মা*রা যায়। এরপর এতো বছর কাল্লু বা বসের কোনো খোঁজ ছিলো না। যেই দিন আপনি একা রেস্টুরেন্ট এ গিয়েছিলেন সেই দিন সকালে কাল্লু আমার কাছে আসে। আবারও আমাকে অনেক টাকা দেয়ার লো*ভ দেখায়। আপনাকে মা*র*তে পারলে আমাকে অনেক টাকা দেয়া হবে। আমি আবারও লো*ভে পড়ে রাজী হয়ে যাই। কাল্লু আমাকে জানিয়েছিলো বস কতো টা ভ*য়ং*কর। কাজ না হলে সে আমাকে মে*রে ফেলতে পারে। আর আমি যদি তার ব্যাপারে কাউকে কিছু বলি তাহলে আমার পরিবারের ক্ষ*তি করবে। তবুও আমি টাকার লো*ভে এসব কিছু ভাবি নি। তাদের কথা মেনে নিয়েছি।

কথা শেষ করে কাঁ*দ*তে লাগলো হাসেম মিয়া। আবরার এবার গিয়ে দাঁড়ালো আরশি কে কি*ড*ন্যাপ করা লোক গুলোর সামনে। আবরার ওদের সামনে দাঁড়িয়ে বাঁ*কা হাসতেই ওদের মধ্যে একজন গ*ড়*গ*ড় করে বলতে লাগলো,

— স্যার, স্যার আমরা খু*নী নই। আমাদের কাজ চু*রি, ছি*ন*তা*ই করা। আমাদেরও কাল্লু হায়ার করেছে কি*ড*ন্যাপ করার জন্য। আমাদের অনেক টাকা দেয়ার কথা ছিলো। আমরাও লো*ভে পড়ে কাজ টা করেছি। আমার ফোনেও কাল্লুর নাম্বার আছে। স্যার, স্যার আমাদের ক্ষ*মা করে দেন স্যার। আর কখনো এসব করবো না।

আবরার নিজের লোকেদের কাছ থেকে হাসেম মিয়া আর ওই ছেলের ফোন টা নিলো। ওদের কাছ থেকে জিজ্ঞাসা করে সব টা জেনে সিওর হয়ে নিলো। সে দেখলো দুই ফোনে কাল্লুর নাম্বার একই। আবরার তার এক লোক কে কাল্লুর ছবি আর নাম্বার গুলো দিয়ে বললো খোঁজ নিতে। গোডাউন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে সে তার গার্ডদের উদ্দেশ্য করে বললো,

— এদের একটু খাতির যত্ন করবে। বুঝতে পারছো নিশ্চয় কি করতে বলছি? দুই মাসের আগে যেনো বিছানা ছেড়ে উঠতে না পারে। আর আমি না বলা পর্যন্ত কাক পক্ষীও যেনো ওদের হদিস না পায়। সো বি কেয়ারফুল।

আবরার বেরিয়ে আসলো গোডাউন থেকে। গাড়িতে বসে ভাবতে লাগলো আর আরশির সামনে পড়বে না সে। আ*ড়া*ল থেকেই তাকে সেফ করে যাবে। ভাগ্যে যদি লেখা থাকে তাহলে তাদের আবার দেখা হবে। এসব ভাবতে ভাবতে আবরারের চোখ গেলো নিজের পায়ের দিকে। গাড়ির হালকা আলোয় চকচকে কিছু একটা দেখতে পেলো সে। আবরার হালকা ঝুঁ*কে সেই জিনিসটাকে তুললো। একটু ভালোভাবে দেখেই বুঝতে পারলো এটা একটা লকেট। বেশ পুরোনো। এমন ডিজাইন এখন আর তেমন দেখা যায় না। অদ্ভুত সুন্দর কারুকাজ করা লকেট টায়। আবরার লকেট টা দেখতে দেখতে ভাবতে লাগলো এই লকেট তার গাড়িতে কি করে আসলো? পরোক্ষনেই আবরারের মাথায় আসলো আরশির কথা। সে মনে মনে ভাবতে লাগলো,

— এটা মিস অদ্ভুত চোখওয়ালির নয়তো? আজ আমার গাড়িতে মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি ছাড়া আর কেউ ওঠে নি। এমন কি বাবাই ও আজ আলাদা গাড়িতে করে ভার্সিটি গিয়েছিলো। তার মানে এটা মিস অদ্ভুত চোখওয়ালির।

লকেট টা আরশির ভেবেই আবরারের ঠোঁটের কোণে চমৎকার এক হাসির রেখা দেখা দিলো। সে আপন মনে বিড়বিড় করে বললো,

— আমার মন বলছে আমাদের আবার দেখা হবে মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি। ভাগ্য আমাদের আবার দেখা করাবে এবং তা অতি শীঘ্রই দেখে নিও।

আবরার মুচকি হেসে আরশির লকেট টা যত্ন সহকারে নিজের কোটের বুক পকেটে রেখে দিলো।

———-

ফ্রেস হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুখ মু*ছ*ছিলো আরশি। হঠাৎ তার চোখ গেলো নিজের গলার দিকে। গলা ফাঁকা দেখে দুই হাতে মুখ চেপে ধরলো আরশি। গা কাঁ*প*ছে তার। চোখ জলে টলমল করছে। আরশি কাঁ*পা কাঁ*পা গলায় বললো,

— আমার লকেট, আমার লকেট কোথায় গেলো?

আরশি সারা ঘর পা*গ*লের মতো তন্ন তন্ন করে খুঁজতে লাগলো। খুঁজতে খুঁজতে বাইরের রাস্তা পর্যন্ত খুজলো সে। কিন্তু লকেটের কোনো হদিস পেলো না। চোখ ভর্তি জল নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলো আরশি। তাকে এমন আচরণ করতে দেখে তার পিছন পিছন দরজা পর্যন্ত এসেছিলো রিফা। আরশি ঢু*লু ঢু*লু পায়ে ঘরে ঢুকতেই দরজা লাগিয়ে দিলো রিফা। আরশি সহজে কারোর সামনে কাঁ*দে না। রিফা দেখে নি। সেই আরশির চোখে জল দেখে অ*স্থির হলো রিফা। তারও চোখে পানি চলে আসলো। আরশির সামনে এসে অ*স্থির কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো

— কি হয়েছে আপু মনি? কি খুঁজছো তুমি? আমাকে বলো আপু মনি। আমি খুঁজে এনে দিচ্ছি।

আরশি অশ্রু ভর্তি চোখে রিফার দিকে তাকিয়ে বললো,

— আমি আমার বাবার দেয়া শেষ উপহার হা*রি*য়ে ফেলেছি রিফা। আমি আব্বু কে দেয়া কথা রাখতে পারি নি। আমি একজন অ*যোগ্য সন্তান, আমি একজন অ*যোগ্য সন্তান।

আরশি আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না। দৌড়ে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। রিফা অ*সহায় চোখে তাকিয়ে রইলো আরশির যাওয়ার পানে। তার চোখ দিয়েও টপটপ করে পানি পড়ছে। সে মনে মনে আ*ফ*সোস করতে লাগলো,

— ইশ যদি আমার কাছে কোনো ম্যাজিক থাকতো? তাহলে আমি ম্যাজিক করে এক নিমিষেই আপু মনির সব ক*ষ্ট দূর করে দিতাম।

চলবে?

(আস্সালামুআলাইকুম। সবাই ভু*ল-ত্রু*টি ক্ষ’মা’র দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here