তোমাতেই_অস্তিত্ব_আমার সূচনা পর্ব

0
8871

#তোমাতেই_অস্তিত্ব_আমার
লেখনীতে:মিথিলা মাশরেকা
সূচনা পর্ব

মাঝরাস্তায় অচেনা একটা লোক জাপটে জরিয়ে ধরে রয়েছে আমায়। তার নিশ্বাস আমার কাধে পরছে। সুঠাম লম্বা দেহের বুকের মাঝের হৃদপিন্ডটার কম্পন শুনতে পাচ্ছি আমি। আচমকা এমন ঘটনা ঘটায় কিছুক্ষন চমকে থেকেও পরক্ষনেই ধাক্বাধাক্কি শুরু করে দেই। কিন্তু তার জোরের সাথে পেরে উঠছি না। মিনিট পাঁচেক দমবন্ধকর এমন পরিস্থিতির পর লোকটা আমাকে ছেড়ে দাড়ায়। প্রথমে দু পা পিছিয়ে গেলেও আবারো এগিয়ে চোয়াল শক্ত করে তার গালে চড় লাগিয়ে দিলাম।

ব্যস্ততম শহরের বিকাল! এখানে বিকাল বলতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে রাস্তায় গাড়ির জ্যাম,পাশের ফুটপাতে পথচারীর ভিড়,দোকানদারদের হাঁকডাক,টি স্টলের চামচ নাড়ার শব্দ আর ঝালমুড়িওয়ালার কাঠি নারিয়ে মুড়ি মাখানো। এসব দেখতেই বেরিয়েছি,অন্য কোনো দরকারে নয়। বিকালটা আমার এভাবেই কাটাতে ভালোলাগে। কিন্তু গত একমাসে আব্বু আম্মুর কড়া নজরদাড়ি,একাকি বেরোনো যাবে না।তাই লুকিয়ে চুরিয়ে আজ বেরিয়েছি,বিকেল উপভোগ করে স্কুলের বান্ধবীর বাসায় গিয়ে সারপ্রাইজ দিবো,আবার চুপচাপ বাসায় ফিরে যাবো। রাস্তার বেশ অনেক কিছুই অপরিচিত লাগছিলো,যেনো চারমাস নয়,আমি চারবছর পর এলাম এখানে। কিন্তু এরকম সিচুয়েশনে পরতে হবে তা আমি ভাবতেও পারি নি।

গালে হাত দিয়ে নিচদিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে দাড়িয়ে আছে মানুষটা। ফর্সা চেহারাটা রাগে লাল হয়ে গেছে। আমি একবার চারপাশে চোখ বুলিয়ে আবারো তার দিকে তাকালাম। পরনে হোয়াইট শার্টের উপর ব্লু ব্লেজার,শার্টের হাতা কনুই অবদি ফোল্ডেড,ব্লাক প্যান্ট-সু,হোয়াইট রিস্টওয়াচ। ফর্সা হাতের লোম,আর মুখে চাপ দাড়ি চেহারাকে আরো মোহময় করে দেয়। কিন্তু চারপাশের পাঁচজন ব্লাক কোটসুট পরা লোক আর ব্লাক গাড়ির কম্বিনেশন বলে দিচ্ছে আমার কাজটার ফল মোটেও ভালো হবে না।

-আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে স্পর্শ করার! হাউ ডেয়ার ইউ?

লোকটা চোখ কটমট করে আমার দিকে তাকালো।গাল থেকে হাত নামিয়ে একপা এগিয়ে বললো,

-আমার সাহসের নতুন করে ইন্ট্রো দিতে হবে তোমাকে?

আমি কিছুটা অবাক হলাম। নতুন করে মানে?উনাকে তো এরআগে কখনো দেখেছি বলে আমার মনে পরছে না। তবে? কোনো খারাপ পরিবেশ না তৈরি হয় এজন্য পাশ কটিয়ে চলে আসার সময় পথ আগলে দাড়ালেন উনি। বললাম,

-দেখুন,আমি ঝামেলা চাইনা। বেয়াদবি করেছেন,শাস্তিও পেয়েছেন। পথ ছাড়ুন।নইলে…

-নইলে কি?

-আমি…আমি লোকজন জরো করবো। পুলিশ ডাকবো।

উনি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললেন,

-হাহ! ইশতিয়াক আরমানকে লোকজন আর পুলিশের ভয় দেখাচ্ছো? সিরিয়াসলি?

-রাস্তায় একজন মেয়েকে এভাবে হ্যারাস করছেন,একেতো দোষ স্বীকার করছেন না,আবার এমনভাবে কথা বলছেন যেনো লোকজন আপনাকে ছেড়ে দিবে? নাকি আপনি আইনের উর্ধ্বে?

-দুটোর কোনোটাই নয় তা তো তুমিও জানো। না আমি তোমাকে হ্যারাস করছি,না নিজেকে আইনের উর্ধ্বে ভাবি। সিন ক্রিয়েট না করে বাসায় চলো।

-কিসের সিন ক্রিয়েট? সেটাতো আপনি করছেন।কিসের বাসা? কার বাসা?”

উনি বাকা হেসে বললেন,

-কেনো বলোতো? নিজের বলে মানতে পারোনি এখনো? নাকি ভুলে যাওয়ার ভান করছো? আমাকে এসব বিশ্বাস করার মতো বোকা ভাববে তুমি এমনটা তো এক্সপেক্ট করিনাই আমি।

-আপনার এক্সপেক্টেশন পুরনে বসে নাই আমি।রাস্তা ছাড়ুন আমার। কে আপনি? এরকম করছেন কেনো? চিনি না তো আপনাকে আমি।

-চেনো না বলছো?

-না চিনি না আপনাকে।

-ওকে ফাইন,আবারো নতুন করে চিনিয়ে দেবো তোমাকে। বাট এবারের ডোজটা কড়া হবে বলে রাখলাম।

-কিসব আজেবাজে বকছেন আপনি?পাগল নাকি আপনি?মাঝরাস্তায় এভাবে পাগলামি করছেন কেনো?পথ ছাড়ুন আমার।

-পাগল আর পাগলামি? হা হা হা। হাসালে। তুমিইতো বলতে যে আমি নাকি সাইকো! তাহলে আজ আবারো নতুন করে জানতে চাচ্ছো যে!

আমি রাগে পিছন ফিরে চলে আসার সময় অন্য আরেকজন কালো সুটপড়ালোক পথ আটকে দিলো। বুঝলাম। ওনারা এনারি বডিগার্ড। লোকগুলো অলরেডি রাস্তার জরো হওয়া লোকজনকেও সরিয়ে দিয়েছে। চলে গেছে সব,নিজের কাজে। চোখ বন্ধ করে শ্বাস ছেড়ে বললাম,

-কি চাই কি আপনার বলুনতো? এভাবে কেনো ডিস্টার্ব করছেন আমাকে?

-জানো না তুমি?

-না জানি না। তাইতো জানতে চাচ্ছি। হোয়াইটস্ ইউর প্রবলেম?

-মাঝরাস্তায় কি বলবো? এতদিন পর পেলাম তোমাকে। চলো বাসায় গিয়ে সবটা বলছি আবারো। তুমি বোধহয় আমার যন্ত্রনার কথা শুনে আনন্দ পাও। চলো আবারো শুনাবো তোমাকে।আনন্দ দিবো তোমাকে।

-বাসা বাসা করছেন কেনো? আর আপনি ভাবলেনই কি করে চিনি না জানি না আপনার সাথে আমি আপনার বাসায় চলে যাবো?

-আবারো বলছো চিনো না?

-না চিনলে আরো হাজারবার বলবো।

উনি কপালটা একটু ডলে বললেন,

-অনেক ন্যাকামো করেছো আর উল্টাপাল্টা বলেছো। এবার চলো আমার সাথে বাসায়।

বলে আমার হাত টানতে লাগলেন। আমি হাত মুচড়াতে মুচড়াতে বললাম,

-বাসায় মানেহ্? আপনার বাসায় কেনো নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে? কে আপনি বলুনতো?

একরাশ বিরক্তি চোখেমুখে নিয়ে পিছন ফিরে বললেন,

-এই এই,বারবার কে আপনি কে আপনি করছো কেনো বলোতো?

-কারন চিনি না আপনাকে। আপনিও হয়তো কারো সাথে আমাকে গুলিয়ে ফেলছেন। ছাড়ুন আমার হাত।

উনি একঝটকায় আমাকে আরো কাছে টেনে আমার দুহাতের কনুইর উপরে ধরে দাতে দাত চেপে বললেন,

-গুলিয়ে ফেলবো? তোমাকে? আমার মিথিকে? হাউ ক্যান ইউ ইভেন থিংক আবাউট ইট? চুপচাপ গাড়িতে বসো।

লোকটার মুখে আমার নাম শুনে আবারো অবাক হলাম। উনি কি করে আমার নাম জানবেন?কোনোদিন তো দেখিনি উনাকে। তাহলে? তবে কি…নাহ! নাম জানতেই পারে। আরো অনেক কিছু জানতে পারে। আমি এর সাথে কেনো যাবো?নিজেকে সামলে বললাম,

-দেখুন,নাম জানাটা নরমাল বিষয়। আর আপনি আমাকে চিনলেও আমি তো আপনাকে চিনি না।বিশ্বাস করুন। ছেড়ে দিন আমাকে।

-দেখো মিথি…

আমি কেদে দিয়ে বললাম,

-দেখুন,ছেড়ে দিন আমাকে প্লিজ। আমি সত্যিই দেখিনি কোনোদিন আপনাকে। যেতে দিন আমাকে,আব্বু আম্মু টেনশন করবে।

আমার বারবার বলা এ কথাগুলোয় তার কোনো হেলদোল নেই। গাড়ির দরজা খুলে যেইনা আমাকে তুলতে যাবে একটা ফুলের ঝুড়িওয়ালা বাচ্চা ছেলে এসে আমার হাত ধরে বললো,

-ভাইজান,আপারে কই লইয়া যাইতাছেন? এমনে জোর করতাছেন ক্যান?

লোকটা ওর কথায় থেমে গেলেন। উনার গার্ডস্ রা যেই ছেলেটাকে ধরতে যাবে উনি হাত দিয়ে ওদের থামিয়ে দিয়ে ভ্রুকুচকে আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আমার হাত ছেড়ে দিলেন। এবার নিজের বুকে হাত গুজে দাড়ালেন। যা দেখে বেশ অবাক হলাম আমি। আমার কথাতে তো ছাড়ছিলো না,বাচ্চাটার কথা ঠিকই শুনলো। বাচ্চাটা আমাকে টেনে কিছুদুর নিয়ে আসলো। আমি আড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম সেই লোকটা এখনো যায় নি।আমি নিচু স্বরে ছেলেটাকে বললাম,

-ধন্যবাদ। তোমার জন্য আজকে হয়তো বড়সড় ঝামেলা থেকে বেচে গেলাম।

-ধন্যবাদ ক্যান দিতাছো আপা? তুমি কইরা ক্যান কইতাছো? আমারে নাম ধইরা তুই কইরা কওনা।

আমি হেসে বললাম,

-আচ্ছা বেশ! কি নামে ডাকবো তোকে?

-কি গো? মনে নাই তোমার? চারমাসেই ভুইলা গেছো? আচ্ছা বাদ দেও। নিলু কইয়াই ডাকো আমারে।

-বেশ। তো নিলুর হাতে তো কতো ফুল! আমাকে কিছু দিবে না?

-তুমি ফুল নিবা? সত্যই? হ,হ লও না। তুমি ফুল না নিলে যে আমার দিন ভালো যাইবো না।

-তাই নাকি? তবে তুই দে আমাকে পছন্দ করে।কোনটা নিবো আমি?

-ক্যান? তুমি তো ফুল পছন্দই করো না। আমি ক্যামনে বুঝুম তোমার পছন্দ মিথি আপা?

ছেলেটা কথা শুনে আবারো অবাক হলাম আমি।আমার নাম,পছন্দ এসব ও জানে কিভাবে? কিচ্ছু বুঝে উঠতে পারছি না। আজই আব্বুকে জিজ্ঞাসা করবো সবটা। জানতেই হবে আমাকে। ছেলেটাকে বললাম,

-আচ্ছা,তুই কতোদিন হলো চিনিস আমাকে নিলু?

-ক্যান? ভুইলা গেছো? তোমার কলেজের পোরথোম দিনে আমারে গাড়ির সামনে থাইকা বাচাইছিলা?মনে নাই তোমার?

এমনটা কিচ্ছু মনে নেই আমার। কলেজের প্রথম দিন স্পষ্ট মনে আছে। সেদিন আব্বুর হাত ধরে ক্যাম্পাসে গিয়ে একদিনেই বেশ অনেকগুলো বান্ধবি বানিয়ে অনেক ভালো দিন কাটিয়েছিলাম।তবে ও কিসের কথা বলছে? আমাকে ভাবতে দেখে নিলু আমাকে ধাক্কা মেরে বললো,

-কি হইলো আপা? মনে নাই তোমার?

আমি ধ্যান ভেঙে বললাম,

-হু্ হুম! আচ্ছা বাদ দে এসব। ফুল নিবোনা। টাকা দিবো। নিবি তো তুই নাকি?

-না নিলে কোনোদিন ছাড়ছো তুমি আপা? নিমু তো।

আমি মৃদ্যু হেসে ব্যাগ থেকে একটা পন্ঞ্চাশ টাকার নোট ওর হাতে দিলাম। ও অবাক চোখে তাকিয়ে বললো,

-পঞ্চাশ টাকা ক্যান দিলা আপা?

-কেনো? ওহ আচ্ছা! আরো কিছু দেই? এইনে আরো একশো,,,,

-আরে না,বেশি ক্যান চামু আপা। তুমি তো জানো ফুল না নিলে আমি টাকা নেই না,এল্লাইগাই তো তুমি আমারে বেশি কম না দিয়া পোত্তেকদিন বিশ টাকা দিতা।

এবার আর আমি পারছি না। সবকিছু অসহ্য লাগছে। কেনো এমন হচ্ছে আমার সাথে? ছেলেটার হাতে টাকা গুজে দিয়ে দৌড়ে চলে এলাম ওখান থেকে। আসার সময় যদিও কালো গাড়িটা চোখে পরেছিলো আমার। তবে কি যে সন্দেহটা আমি করছিলাম এতোদিন তাই ঠিক? আজ আব্বুকে সবটা জিজ্ঞেস করবো। কি হয়েছে টা কি আমার সাথে!

বাসায় ফ্রেমেবন্দি ছবির দিকে তাকিয়ে আছে আরমান। ছবিটাতে জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটার সাথে সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছে সে। এতো মুল্যবান ছবিটাকে আজকের ঘটনা অর্থহীন করে দিচ্ছে ভাবতেই চোয়াল শক্ত হয়ে আসলো তার।এগিয়ে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনের ছবিটা হাতে নিলো। চুরমার করতে ইচ্ছা করছে সব। দেয়ালে কয়েটা পান্ঞ্চ মেরে শেষেরটা ইচ্ছে করেই সোজা আয়নার কাচে লাগালো সে।
শব্দ পেয়ে আতকে উঠেছে আরিশা। এতোক্ষন মায়ের সাথে ড্রয়িংয়ে বসে ভাইয়ের এমন কোনো কাজের জন্যই অপেক্ষা করছিলো সে। গার্ডসসহ বেরোতে দেখে তারা আন্দাজ করেছিলো,আর এভাবে বাসায় ঢুকতে দেখে শিওর হয়ে যায়।

-দেখেছো আম্মু,আজকেও গেলো আরেকটা।

-তুই সেটা ভাবছিস? আর আমি ভাবছি আজ চার মাস পর আবারো ও গার্ডস্ নিয়ে বেরিয়েছিলো কেনো? কি হয়েছে এমন?

-শুনো আম্মু,ভাইয়া কেনো এরকম করে বলোতো?কেনো সেই একটা ঘটনাকেই ধরে বসে আছে?

-কি বলতে চাইছিস তুই আরু? শুধু একটা ঘটনা ছিলো না ওটা ওর জীবনে। ওটাই ওর জীবন ছিলো।

-ছিলো। তাই বলে কি মানুষ আগে বাড়ে না? নতুন করে বাচতে শেখে না? এতো ভালো পড়াশোনা করে,আব্বুর বিজনেস ছেড়ে দিয়ে এইসবের কোনো মানে হয় আম্মু? তুমিই বলো?”

মিসেস জামান এবার কেদে দিলেন। আফরোজ জামান এর মতো একজন ইন্ডাসট্রিয়ালিস্ট এর ছেলের আজ এই দশা। যে ছেলে কিনা চার মাস আগ অবদি জীবনের সবটুকু রঙে নিজেকে রাঙিয়েছিলো। নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে শিখেছিলো সে। আবারো সবটা ওলোটপালোট হয়ে গেলো। আচলে চোখমুখ মুছে বললেন,

-চল আরু,কাছে যেতে দিবেনা বলে কি আমরা ওর কষ্ট দেখেও দুরে থাকবো? চল ওর রুমে।

আরিশা আর মিসেস জামান হন্তদন্ত হয়ে রুমের দিকে ছুটলেন। রুমের দরজা থেকে ভেতরে তাকিয়ে বুকের ভেতরটা দুজনেরই মোচড় দিয়ে উঠলো। আয়নার কাচ মেঝেতে টুকরো টুকরো হয়ে পরে রয়েছে।আরমানের হাতে বিধে টপটপ করে রক্ত চুইয়ে পরছে মুঠো করা হাতের আঙ্গুল থেকে।ওখানেই থেমে গেলেন মিসেস জামান।
আরিশা দৌড়ে গিয়ে হাত তুলে বললো,

-কি করেছিস ভাইয়া? হাতে এভাবে কাচ ঢুকে আছে।

কাচগুলো তুলে দেওয়ার চেষ্টা করতেই আরমান এক ঝটকায় হাত সরিয়ে নিয়ে বললো,

-রুমে কেনো এসেছিস? বের হ।

আরিশা চেচিয়ে বললো,

-না বেরোবো না। কেনো এভাবে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছিস? কি হয়েছে টা কি তোর? বল ভাইয়া?চারমাসে নিজেকে ঘরবন্দি করে বাইরে গুজব ছড়িয়েছিস যে তুই চিরদিনের জন্য কানাডা চলে গিয়েছিস। আজ বেরিয়েছিলি গার্ডস্ নিয়ে। ফিরে এসে এভাবে রিয়্যাক্ট করছিস। কি চাস কি তুই?

-আরু আমাকে একা থাকতে দে। যা এখান থেকে।

মিসেস জামান এবার এগিয়ে আসলেন। ছেলের হাতে বিধে থাকা কাচগুলো ছাড়াতে ছাড়াতে শান্ত গলায় বললেন,

-তুই নিজেকে এভাবে শেষ করার আগে আমাদেরকে মেরে ফেল আরমান। আমাদের আর বাচার ইচ্ছা নেই। তোর বাবা সইতে না পেরেই আটবছর আগে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। চারমাস আগে আসার কথা ভাবলেও প্যান্ডেমিক এসে তা পিছিয়ে দিলো,এখন তুই এমন বিহ্যাভ করছিস। আমি আর বাচতে চাইনা আরমান।মেরে ফেল আমাকে।

এতোবড় কথাগুলো আরমানের বুকে বিধলো ঠিকই কিন্তু কোনো রিয়্যাক্ট করলো না সে। হাতের পিঠ দিয়ে মুখ মুছে,মায়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,

-আর না আম্মু। আর কষ্ট দিবোনা তোমাকে।তোমাকে তোমার ভালো ছেলে ফিরিয়ে দেবো। কথা দিচ্ছি তোমাকে।

কথাগুলো বলে আরমান গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে গেলো। আজ আবারো আরমান এই কথাটা বললো যা সে ছ মাস আগে বলেছিলো। জীবনে,দ্বিতীয়বারের মতো সুযোগ দেবে নিজেকে সে এমনটা ভেবে মিসেস জামান খুশিতে কেদে ফেলেছেন। আরিশাও মাকে জরিয়ে কাদতে লাগলো। ওরা জানে,আরমান যাই করুক তার পদ্ধতি সমাজের কাছে গ্রহনযোগ্যতা না পেলেও ওর প্রতিটা কাজের উদ্দেশ্য সবার কল্যান। তাই আরমানকে সরাসরি সাপোর্ট না করলেও মনে মনে ওকে নিয়ে গর্ব ঠিকই করে।

#চলবে…

®

[ যারা পড়বেন,রেসপন্স করে যাবেন একটু। কন্টিনিউয়াসলি রিপোস্ট করবো তাহলে। নইলে গ্যাপ দেবো কিন্তু ? ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here