তোমাতেই খুজি আমার পূর্ণতা পর্ব ৬

0
1111

#তোমাতেই_খুজি_আমার_পূর্ণতা🤗 (৬)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

বর্তমান…..
আমার দুহাত নিজের একহাতের মুঠোয় নিয়ে দেওয়ালের সাথে খুব শক্ত করে চে’পে ধরে দাতের সাথে দাত চেপে রাগে হি’স’হি’সি’য়ে তীব্র বলে উঠে..

_____আমার উপর ন’জ’র’দা’রি করার সাহস পেলি কোথায় তুই? সারাদিন চু’প ছিলাম জন্য ভেবেছিস তোকে সব য’ন্ত্র’ণা থেকে মুক্তি দিয়ে দিয়েছি? তাই আমার সব কাজে নজর রাখা শুরু করেছিস? আবারও শুরু করে দিয়েছিস তোর অত্যাধিক কৌতুহলী স্বভাবের বহিঃপ্রকাশ! কিরে বলছিস না কেন? এইমূহূর্তে যদি তোকে খু”ন করে কু’চুি”কু’চি করে কে/টে নদীর পানিতে ভাসিয়ে দি তাহলে কেও কি তোর চি”হ্ন ও খু’জে পাবে? বল……

পুরুষালি শক্ত হাতের বাঁধনে নিজের হাত বাঁধা থাকায় ক’রু’ণ য’ন্ত্র’ণা”য় চোখ মুখ কুঁচকে রেখেছে আমি। তীব্রের বলা কথা গুলো যে সত্য তা বুঝতে পেরে ভ/য়ে বুকের ভিতরটা যেনো শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে যার দরুণ মুখ ফুটে একটা টু শব্দ ও বের করার শক্তি নিজের মাঝে যুগিয়ে উঠতে পারছি না আমি। পিটপিট করে চোখ মেলে নিজের মুখের খুবই সন্নিকটে তীব্রের রাগে রক্তিম বর্ণ ধারণ করা চোখ জোরা আর সম্পূর্ণ মুখশ্রী দেখে শুকনো একটা ঢোল গি/লে নেই আমি। মূহূর্তেই যেনো চোখের সামনেটা ঝাপসা হয়ে আসছে আমার, আর কিছু বলার বা বুঝে উঠার পূর্বেই সেন্সলেস হয়ে যাই আমি।
________________________
সেন্স ফিরতেই নিজেকে আমাদের রুমের বিছানায় আবিষ্কার করি। কিছুসময় স্তব্ধ হয়ে থাকি, পরমুহূর্তেই স্মরণ হয় সেন্স হা’রা’নো’র পূর্বের ঘ’ট’না……

সকালে তীব্রকে উদ্দেশ্য করে ভা’ঙা কন্ঠে তি’ক্ত যে কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিয়েছিলাম তারপর থেকে রাতের ঘটনাটির পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তীব্র আমার সাথে একটা টু শব্দ ও করে নি। দিনের বেলা অনেক বার ওর সামনে দিয়ে চলাচল করেছিলাম আ’ড়’দৃষ্টিতে লক্ষ ও করেছিলাম ওকে, কিন্তু আমার দিকে একটা বার ফিরেও দেখে নি, নিজ কাজে যেনো গভীর ভাবে মনোনিবেশ করে রেখেছিলো সে। আমিও আর কথা বা’ড়া’ই নি।

তীব্রকে এমন শান্ত আর নীরব থাকতে দেখে মনের কোনে কেনো যেনো অন্যরকম অ’শা’ন্তি অনুভব হচ্ছিলো, কেনো যেনো মনে হচ্ছিলো আমার কথাগুলো ওর মনে বেশ গভীর প্রভাব ফেলেছে। মানুষটা কি তবে এখনও আমাকে ভালোবাসে?

কিন্তু বাসর রাতে যে ভাবে উচ্চস্বরে স্পষ্টভাষায় বলেছিলো আমার সাথে শুধুই ভালোবাসার অভিনয় করেছে তাতে কি করে মানি মানুষটার মনে আমার জন্য সত্যিই ভালোবাসার অনুভূতি রয়েছে যা উনি ইচ্ছে করেই নিজের মধ্যে চা’পা দিয়ে রেখে আমার সাথে এমন রু’ষ্ঠ ব্যবহার করেন!

মাথা কাজ করছে না আমার, কোনটা সত্যি আর কোনটা মি’থ্যে তা পুরোপুরি বুঝতে না পারলে মনের কোনে সৃষ্টি হওয়া এই চা’পা অ’শা’ন্তি’র অ’ব’শা’ন ঘ’ট’বে না। কিন্তু কি করবো আমি! কিভাবে বুঝবো ওনার (তীব্র) মনের ভাষা! কেনো উনি আমার সাথে এমন করলেন, কি জ’টি’ল রহস্য লুকিয়ে আছে ওনার মাঝে! এসব নানান ধরনের চি’ন্তা করতে করতেই বি’ষ’ন্ন মন নিয়েই কেটে যায় পুরো একটা দিন।

রাতের খাবার শে’ষ করে রুমে এসে শুয়ে পড়ি, একরাশ প্রশ্ন আর গভীর চি’ন্তা’র মেলা যেনো আমার মস্তিষ্কের সম্পূর্ণ জায়গাই দ’খ’ল করে নিয়েছে, অনেক সময় ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করছিলাম কিন্তু কিছুতেই ঘুমের দেখা মিলছে না। চোখে-মুখে একরাশ বি’র’ক্তি নিয়ে শোয়া অবস্থা থেকে উঠে বসি, গলা টাও কেমন শুকিয়ে আসছে পানি খাওয়া প্রয়োজন।

হলুদ বর্ণের ডি’ম বাতির প্রভাবে সম্পূর্ণ ঘরটিতে হালকা আলো বিরাজ করছে। হাত বাড়িয়ে বেড সাইড টেবিলের উপর থেকে পানির জগ টা হাতে নিতেই আমার বি’র’ক্তি’র রেশ ২ গুণ বেড়ে গেলো। রাতের খাবার শে’ষ করে রুমে আসার পর পানি আছে কিনা তা খেয়াল না করেই শুয়ে পড়েছিলাম। বি’র’ক্তি’তে মুখ দিয়ে “চ” শব্দ বেড়িয়ে আসে।

পরমুহূর্তে আর কোনো উপায় না পেয়ে বিছানা ছেড়ে নেমে রুম থেকে বেড়িয়ে নিচে যাওয়ার উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরি। কয়েক কদম সামনের দিকে ফেলতেই একটা রুমের দরজার ফা’কা অংশ দিয়ে হালকা আলো জ্বলতে দেখি। ভ্রু কিন্ঞ্চিত কুঁচকে আসে আমার, এতো রাতেও রুমের আলো জ্বলছে তীব্র কি জেগে আছে এখনও! ধীরপায়ে সেই রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরি৷ দরজার হালকা ফাঁকা অংশ দিয়ে রুমের ভিতর দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই দেখতে পাই তীব্র টেবিলের পাশে চেয়ার টে’নে বসে কিছু লিখছে৷

বেশকিছু সময় ওভাবে দাঁড়িয়ে থেকে তীব্রের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করি। পরমুহূর্তে দেখি তীব্র বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়ায় একটা ডায়েরি হাতে নিয়ে, বুঝতে পারি ঐ ডায়েরিতেই লিখছিলো কিছু এতোসময় ধরে। রুমের অন্যপাশে রাখা আলমারির ল’ক খুলে সেখানে খুব যত্ন সহকারে ডায়েরিটা রেখে দেয়। আর আলমারির চাবিটা টেবিলের ড্রয়ারের ভিতর রেখে দেয়। তীব্রের কাজে গভীর মনোনিবেশ করে রাখায় হু’ট করেই আলতো ভাবে চা’পা’নো দরজার সাথে শরীরের ভর দিয়ে ফেলি আর হু’ম’রি খেয়ে রুমের ভিতর ঢু’কে মেঝেতে পড়ে গিয়ে মৃদুস্বরে “আহহহ” বলে উঠি।

আমার কন্ঠ কর্ণপাত হতেই তীব্র চ’ট করে আমার দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। আমি দু’হাতে মুখ চে’পে ধরে ভী’ত চোখে তীব্রের দিকে তাকাই৷ ইতিমধ্যে ওর ফর্সা মুখশ্রী র’ক্তি’ম বর্ণ ধারণ করেছে দেখে মনে মনে নিজেকে একরাশ ব’কা দিতে শুরু করি। পরিস্থিতি হাতের বাহিরে চলে যাওয়ার পূর্বে আমার এখান থেকে কে’টে পরা উচিত বলে মনে করি।

তৎক্ষনাৎ বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে রুমের বাহিরে আসতে পা বাড়াতে নিতেই তীব্র আমার হাত চে’পে ধরে। যেখানে বা’ঘে’র ভ’য় সেখানেই সন্ধ্যে হয় এই প্রবাদ বাক্যটিই এখন বারবার আমার মন আওড়াতে শুরু করেছে। কিছু বলতে প্রস্তুত হবো তারপূর্বেই তীব্র আমাকে হ্য’চ’কা টা’নে দেওয়ালের সাথে মিশিয়ে দেয়।

আমি মনে মনে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে থাকি, তৎক্ষণাৎ আমার মধ্যে একটা বুদ্ধির উদয় হয় যা এইমূহূর্তে তীব্রের হাত থেকে আমাকে বা’চা’তে কাজে আসতে পারে। তীব্র যদি কিছু বাড়াবাড়ি করতে নেয় তাহলে আমি সেন্সলেস হওয়ার অভিনয় করবো৷ কিন্তু তীব্রের ধ’ম’কে’র স্বরে প্রতিটি কথা শুনে আমি সত্যি সত্যিই সেন্স হারিয়ে ফেলেছিলাম, তাই এখনও পর্যন্ত ওর হাতে শহীদ হওয়া থেকে বে’চে আছি, এসব ভেবে ছোট্ট করে একবার স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ি।

পরমুহূর্তেই আমার ডায়েরিটার কথা স্মরণ হয়, কি লেখে তীব্র ঐ ডায়েরিতে তা আমার জানতেই হবে বলে মনঃস্থির করি। তবে এবার আর বো’কা’মী করলে চলবে না, খুব সতর্কতার সাথে ডায়েরিটা হাতে নিতে হবে তাহলেই হয়তো সম্ভব হবে তীব্রের মধ্যে লু’কি’য়ে থাকা আসল রহস্য গুলোর উ’ন্মো’চন করা।

_____হু’ট হা’ট সেন্স হা’রা’নো’র স্বভাব তোমার কবে থেকে হলো শুনি?

তীব্রের কন্ঠ কর্ণপাত হতেই চি’ন্তা’র ঘো’র থেকে বে’ড়ি’য়ে আসি আমি। শোয়া অবস্থা থেকে উঠে বসে তীব্রের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করি। তীব্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রেখেছে আমার মুখশ্রী পানে। আমি তৎক্ষণাৎ দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে নেই। কিছুসময় নিরব থেকে স্বাভাবিক কন্ঠে বলি…

_____ঘরে পানি না থাকায় পানি আনতে বাহিরে গিয়েছিলাম সেইসময় ঐ রুমে আলো জ্বলতে দেখতে পাই, তাই দেখতে রুমে প্রবেশ করতে নিতেই শাড়ির কুচির সাথে পা বে’ধে হু’ম’রি খেয়ে রুমের ভিতর ঢু’কে মেঝেতে পড়ে গিয়েছিলাম। আপনি আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই যে ধ’ম’কে’র সুরে হু’ম’কি দিতে শুরু করেছিলেন তাই ভিষণ ভ’য় পেয়ে সেন্স হারিয়ে ফেলেছিলাম হয়তো। আর তাছাড়া আপনার উপর নজর রাখতে যাবো কেনো বলুন তো? আপনার মধ্যে কি তেমন কোনো র’হ’স্য লুকিয়ে আছে যা জানতে আমার আপনার উপর নজর’দা’রি করার প্রয়োজন পড়বে?

কথাগুলো বলে তীব্রের দিকে আবারও দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই দেখি তীব্রের মুখশ্রীর ধরণ পা’ল্টে গিয়েছে। পরমুহূর্তে তীব্র আমাকে কিছু না বলেই স্থান ত্য’গ করে। আমার ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসির রেখা ফুটে উঠে।

#চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here