#তোমাতেই_আমি
#পার্ট_৪
#হালিমা_চৌধুরী
.
ইন্সপেক্টর ইমন আমার হাতে একটা ব্যাগ দিয়ে বলে,
‘তৌসিকে তৈরি করে নিয়ে আসো।’
‘আমি পারবো না। তৌসি আপনাকে বিয়ে করবে না। শুধু শুধু কেনো ওর পিছনে পড়ে আছেন?’
‘আমাকে এখানে খু*ন করতে বাদ্য করবে না বলে দিলাম।’
‘আমি বললাম তো আপনার যা ইচ্ছে তাই করুন তারপরে ও আমি তৌসির জীবন নষ্ট হতে দিবো না।’
ইন্সপেক্টর ইমন এসে আবারো আমার মাথায় পিস্তল ধরে। তৌসি দৌড়ে এসে বলে,
‘আপনি ওকে ছেড়ে দিন আমি বললাম তো বিয়েটা করবো।’
‘ওকে সুইটহার্ট তুমি তোমার এই সো কোল্ড ফ্রেন্ডকে বোঝাও।’
‘দেখুন সবকিছু নিয়ে কথা বলবেন বাট আমার ফ্রেন্ডদের নিয়ে আজে বাজে বকবেন না।’
তৌসি যে খুব রেগে গেছে সেটা ওর মুখ দেখলেই বোঝা যায়। ও আমাকে টেনে উপরে নিয়ে যায় ওকে তৈরি করে দেওয়ার জন্য।
.
‘তৌসি তুই ভুল করছিস এই বিয়েটা করিস না।’
‘আমার কি করার আছে স্রুতি?’
‘তুই পালিয়ে যা এখান থেকে।’
‘আমি পারবো না। আমার জন্য তোরা কেনো বিপদে পড়বি? এর থেকে আমার জীবন টা নষ্ট হওয়াটাই ভালো।’
‘কিন্তু এতো অল্প বয়সে বিয়ে করা বাল্য বিবাহ বলে গণ্য করা হয়।’
‘স্রুতি প্লিজ আর এরকম করিস না। গ্রামে আরো কম বয়সি মেয়েদের বিয়ে হয়। আমিও তাদের মতো অভাগীদের দলের একজন হলাম।’
আমি আর কিছু বললাম না একপ্রকার রাগ করেই তৌসি কে তৈরি করে নিচে নিয়ে গেলাম।ইন্সপেক্টর ইমন একজন কাজি নিয়ে হাজির হয় ইতোমধ্যে। বিয়ে পড়ানো শেষ। আমি আর ভাবি একপাশে দাড়িয়ে আছি আর তৌসি ড্রয়িং রুমে বসে আছে।
‘বিয়ে পড়ানো শেষ স্যার এবার আপনি আসতে পারেন।’
‘আমি আজকের মতো চলে যাচ্ছি স্রুতি। তোমার ফ্রেন্ড কে বলে দিও আমার বিষয় টা বিবেচনা করে দেখতে।’
‘আপনার কি বিষয় বিবেচনা করে দেখতে হবে স্যার?’
‘আমাদের বিয়ে টা হুট করেই হয়ে গেলো তাই আমাকে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করো। আশা করি তুমি নিজের কর্তব্য তা যথাযথ ভাবে পালন করবে।’
‘আমাদের বিয়েটা যখন হয়েই গেছে তখন আমাকে কয়েকদিন সময় দিন সব ঠিক হয়ে যাবে।’
আমি শুধু অবাক হচ্ছি তৌসির কথা শুনে। ও এতো স্ট্রং এখনো কিভাবে আছে!
আমি হলে আমার সাথে যে এরকম করেছে তাকে একটা লা*ত্থি দিতাম। আর এই তৌসি মেয়েটা কি বলে এসব। ছেলেটাকে নাকি ও মেনে নেওয়ার চেষ্টা করবে।
.
.
রাত প্রায় বারোটা বাজতে চলেছে তৌসি এখনো কাদছে। এক পর্যায়ে আমি বিরক্ত হয়ে বলি,
‘তৌসি তোর কি এখনো কান্না পাচ্ছে? আমি তো তোকে বারণ করেছি বিয়েটা করতে তাহলে করলি কেনো?’
‘স্রুতি এই বিষয় টা বাদ দে আমার ভালো লাগছে না এসব আর।’
‘হুম শুয়ে পড় এবার। কালকে স্কুলে যাবি তো?’
‘হু যাবো স্কুল কি কখনো বাদ দিয়েছি নাকি?’
‘হুম ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট বলে কথা।’
এরকম দূষ্ট মিষ্টি ঝগড়া করতে করতেই তৌসি ঘুমিয়ে পড়ে।
.
আমি সকাল সকাল উঠে তৈরি হয়ে স্কুলের জন্য বেরিয়ে পড়লাম। তৌসি এখনো ঘুমাচ্ছে তাই ওকে আর ডাক দেই নাই। সকাল সাড়ে সাত টা বাজে এখন। রাস্তা’টা পুরো নিস্তব্ধ। আমার এরকম নির্জন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার অভ্যাস আছে তবুও আজকে কেমন ভয় লাগছে। তারপর ও নিজেকে নিজে আশ্চস্ত করে হেঁটে চললাম। হঠাৎ করে আমার সামনে একটা ছেলে এসে আমার হাত টেনে ধরে। অকস্মাৎ এরকম হওয়ার আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলি।
‘আরে স্রুতি চোখ খোলো এতো ভয় পাওয়ার কি আছে?’
চিরচেনা কন্ঠস্বর শুনে আমি ফিটফট করে চোখ খুলে তাকাই। সামনে থাকা ব্যাক্তির দিকে বিরক্ত ভরা দূষ্টি নিঙ্গেপ করে বললাম,
‘খেয়ে দেয়ে আর কাজ নেই আপনার? সারাদিন এরকম পিছনে ঘুরেন কেনো?’
‘তুমি জানো না স্রুতি আমি তোমাকে ভালোবাসি? আমার পরিবার ও তোমাকে মেনে নিবে এটা কোনো ঝামেলা নেই। আর তোমার ওই হিটলার ভাইকে তুমি বুঝালেই হবে।’
‘আপনার পরিবার কিভাবে মেনে নিবে এই সম্পর্ক টাকে? আপনি একজন এসএসসি পরিক্ষার্থী আর আমি দশম শ্রেনির ছাত্রী কেবল। সবাই মেনে নিলেও আশে পাশের লোকজনের কথা কি আপনি শুনবেন?’
‘আমি জানি না আমি বাবা কে তোমার কথা বলেছি বাবা বলেছে আমার যা ইচ্ছে তাই করতে।’
‘চলুন আজ আর প্রাইবেট পড়বো না আপনাদের বাড়িতে যাবো। রাস্তায় কথা বললে লোকে খারাপ ভাববে।’
আমার কথা শুনে পূর্ন নামক ছেলেটার চোখ চকচক করে উঠে।
.
পূর্ন ভাইয়াদের বাড়িতে আসতেই উনার মা এসে দরজা খুুলে দেয়। হয়তো উনি আমার কথা উনার মাকেও বলেছেন। তাই তো দরজা খুলেই তিনি ব্যাস্ত হয়ে পড়লেন নাস্তা তৈরি করার জন্য। আমি উনাকে বললাম ছাদে নিয়ে যেতে আমাকে। ছাদে এসে আমি ছাদের রেলিং ঘেষে দাড়িয়ে আছি। পূর্ন ভাইয়া বললো,
‘কিছু বলবে স্রুতি? ‘
‘হু ভাইয়া আমার অনেক কিছু বলার আছে তাইতো আপনাদের বাড়িতে আসা।’
‘কি বলবে বলো!’
‘ভাইয়া আমার কথা শুনে হয়তো আপনি কষ্ট পেতে পারেন তাতে আমার করার কিছু নেই। আপনি তো সাইন্সের স্টুডেন্ট। রোল ও নাকি শুনলাম ৩। তাহলে সামনে আপনার এসএসসি পরিক্ষা আপনি মন দিয়ে পড়াশোনা না করে আমার পিছনে কেনো পড়ে, আছেন? আচ্ছাহ আপনি তো আমাকে ভালোবাসেন সেটা টিকবে নাকি টিকবে না আমি সেই ভয়ে আপনাকে গ্রহন করি না। এই বয়সের প্রেম টা ঝোকের বশে হয়। আমি চাই না আমি জেনেশুনে এরকম কাজে জড়িত হই। আমাদের আরেকটু বড় হওয়া উচিত আপনি,যদি আমার জন্য ততদিন অপেক্ষা করেন তাহলে আমি বুঝবো আপনি আমাকে ভালোবাসেন। আর একটা কথা এসএসসিতে খুব ভালো একটা রেজাল্ট করতে হবে আপনাকে। স্যার আপনাদের উপর ভরসা করে আছে আপনারা অনেক ভালো রেজাল্ট করবেন। আমি চাই না একজন ভালো স্টুডেন্ট আমার জন্য জরে পড়ুক অন্তত আমার কথা টা ভেবে পড়াশোনায় মন দিন। আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করবো ততদিন। দেখবো আপনার ভালোবাসা ততদিন থাকে কিনা!’
আমার কথা শুনে পূর্ন ভাইয়ার কপোল ভেয়ে একফোটা নোনাজল গড়িয়ে পড়ে।
‘বেশ তাহলে তাই হবে। আমি অপেক্ষা করবো ততদিন তোমার জন্য। তুমি যখন আমার ভালোবাসা কে আবেগ বলে গন্য করছো তাহলে আমার কিছু করার নেই। তবে আমার একটা কথা তোমায় রাখতে হবে।’
‘কি কথা?’
আমার কথার উত্তর না দিয়ে উনি হাটু ভেঙে বসে পকেট থেকে একটা রিং বের করে আমার আঙ্গুলে পরিয়ে দেয়। আমার হাতে থাকা রিংয়ে ঠোট ছুয়ে বলেন,
‘অনেক দিন ধরেই ভাবছি তোমাকে এটা পরিয়ে দিবো।বাট সময় হয়ে উঠেনি। মনে করো আমাদের engagement হয়ে গেছে। এই রিং টা তোমার হাতে থাকলে ভাববো আমি সঠিক মানুষ টার জন্যই অপেক্ষায় আছি আর যদি না থাকে তাহলে ভাববো আমি মরিচিকার পিছনে ছুটেছি এতোদিন।’
‘দোয়া করছি আপনি যেনো সফল হোন। যাই এখন।’
‘আমার সফলতার চাবিকাঠি কিন্তু তোমার হাতে। আর মাঝে মাঝে বিরক্ত করবো আমি আবার মহান প্রেমিক নই যে প্রেয়সীর মুখ না দেখলেও চলবে। আমি তো একটা বখাটে ছেলে একটু তো বিরক্ত সহ্য করতেই হবে।’
বলেই মুচকি হাসে পূর্ন।
‘বেশি দেখা করা যাবে না আপনাদের পরিক্ষার বাকি দেড় মাস দুই বারের বেশি আমি আপনার সাথে দেখা করবো না। আর মন দিয়ে পড়তে হবে আপনাকে বলে দিলাম।’
পূর্ন ভাইয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে দৌড়ে নিচে চলে এলাম। পূর্ন ভাইয়াও আমার পিছন পিছন নিচে চলে আসে। আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবো এমন সময় তুমুল ভাবে বৃষ্টি পড়া শুরু হয়। পূর্ন ভাইয়ার মা আমাকে আটকে বলে কিছুক্ষন এখানেই থাকতে।ক্লাস শুরু হতে এখনো সময় আছে তাই আমি বসে পড়লাম সোফায়। পূর্ন ভাইয়ার মা রান্নাঘরে চলে যায় আর পূর্ন ভাইয়া এসে আমার পাশ ঘেষে বসে। তাই আমি একটু দূরুত্ব বজায় রাখার জন্য সরে বসলাম আর পূর্ন নামক ছেলেটা আমার দিকে রুক্ষ দৃষ্টিতে তাকায়।
চলবে….
[ ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃ্ষ্টিতে দেখবেন। গল্পটা দিবো না বলেছি তারপরও দিয়ে দিলাম আমার পরিক্ষার যেহেতু এখনও দেরি আছে।]