তোমাতেই অস্তিত্ব আমার পর্ব-২১

0
1670

#তোমাতেই_অস্তিত্ব_আমার
লেখনীতে:মিথিলা মাশরেকা

২১.

আমাকে কোলে তুলে নিয়ে মেইনগেইট ছেড়ে ভার্সিটির অন্য গেইট দিয়ে বেরোচ্ছেন আরমান।আমি দুহাতে ওড়নায় মুখ ঢেকে রেখেছি।শুরুতে হাত পা ছুড়োছুড়ি করে,ওনার বুকে কিল‌ঘুষি দিয়েও দমাতে পারি নি ওনাকে।শুধু আশেপাশের সবার দৃষ্টিআকর্ষন হয়েছে তাতে।তাই লোকলজ্জার ভয়ে নিজের মুখটাই ঢেকে নিলাম।চোখমুখ খিচে বন্ধ করে রয়েছি।কান্না করে দিয়েছি আমি।আরমান হাটতে হাটতে কাউকে বললেন,

-ইটস্ ইউর টেস্ট।লেট মি সি,কতোক্ষন থাকতে পারো তুমি!ওয়েট দেয়ার।

আমি তখনো কেদে চলেছি।একবার তাকিয়ে দেখলাম ওনার কানে ব্লুটুথ।ওটাতেই কাউকে বললেন হয়তো কথাটা।ভয় বাড়লো আমার।ওনার কাজে বাধা দেওয়ার ইচ্ছা থাকে না আমার,পারিপার্শিক ভেবে যেসবে বাধা দিতে যাই,কোনোভাবেই আটকাতে পারি না আমি ওনাকে,পেরে উঠি না ওনার গায়ের জোরের সাথে।আরমান গাড়ির দরজা খুলে আমাকে গাড়িতে বসিয়ে আমার উপর ঝুকে বললেন,

-স্টপ ক্রায়িং!

আমি ওভাবেই মুখ ঢেকে কাদছি।আরমান চেচিয়ে বললেন,

-আই সেইড স্টপ ক্রায়িং!

কেপে উঠলাম আমি।কান্না কিছুটা কমিয়ে মুখ থেকে ওড়না সরিয়ে তার দিকে তাকালাম।কপালের ভাজগুলোতে বিন্দু বিন্দু ঘাম।রক্তবর্ন চোখ,উশকোখুশকো চুল,শক্ত চোয়াল বলে দিচ্ছে উনি অনেক রেগে আছেন।এতো রাগ?কি বলেছি আমি?কি করেছি আমি?আমার উপর এতো রাগ কেনো?চোখ নামিয়ে নামার জন্য যেই না গাড়ির দরজায় হাত লাগিয়েছি,উনি এক ঝটকায় আমার হাত সরিয়ে দিলেন।

-এক পা বাইরে বেরোনোর চেষ্টা করলে পা ভেঙে হাতে ধরিয়ে দেবো।পঙ্গু করে রেখে দেবো একদম।

কথাটা বলে দরজা লক করে গাড়িতে উঠে বসলেন।এবার রাগে কাপতে শুরু করেছি আমি।রাগ হলেও কান্না পায় আমার।চেচিয়ে বললাম,

-এভাবে কেনো আনলেন আমায়?কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?এতো বাজে…

উনি সিটবেল্ট লাগাতে লাগাতে কিছুটা ধীরে বললেন,

-সিটবেল্ট লাগাও।

-না।লাগাবো না।দরজা খুলুন বলছি।নইলে আমি চেচিয়ে লোকজন জড়ো করবো বলে দিলাম।

-অযথা সিন ক্রিয়েট করো না মিথি।

-নিজেই তো সিনক্রিয়েট করছেন।আমাকে এভাবে…

সিটবেল্ট লাগানো শেষে একপলক আমার দিকে তাকালেন আরমান।হুট করে একদম কাছে চলে আসলেন উনি।আমি যতোটুকো সম্ভব পেছনের দিকে হেলে গেলাম।উনি পাশে হাত দিয়ে আমার সিটবেল্ট নিয়ে লাগাতে লাগাতে দাতে দাত চেপে বললেন,

-আগেই বোঝা উচিত ছিলো আমার,সোজা কথার মানুষ নও তুমি।যা করেছো তার শাস্তি তো পেতেই হবে তোমাকে।চুপচাপ বসে থাকো,নইলে আই সোয়ার আমি কি করবো জানি না।

ভয়ে নুইয়ে গেলাম আমি।এগুলো কেমন ব্যবহার?আবারো সেই আগের ফর্মে ব্যাক করেছেন উনি।কি বলছেন কি করছেন এসব?কি করলাম আমি এমন?এই ব্যবহারের কোনো কারন খুজে পাচ্ছি না আমি।আর ওনার রাগই বা আমি কেনো দেখবো?উনি দেখেছিলে আমার অভিমান?ভেবেছিলেন একটাবারো আমার কথা সুহানার সাথে শপিংএ গিয়ে হাতে রিং পরিয়ে ছবি পোস্ট করার আগে? সুহানার সাথে সত্যিই নিজেকে জড়িয়ে ফেললেন এভাবে?আবার আমার সাথে এভাবে ব্যবহার করছেন!রাগটা কি আমার দেখানোর কথা নয়?

আরুর কাছে যখন জানলাম আরমানের সাথে সুহানা,খুব রাগ হচ্ছিলো আমার।ফার্স্ট ক্লাস শেষে বেরোতে মোবাইলটা দেখেই আরু একপ্রকার আকাশ থেকে পরা টাইপ এক্সপ্রেশনের সাথে চেচিয়ে বললো,

-মিথি!

আমি এমনিতেও রাগ নিয়ে নিচদিক তাকিয়ে হাটছিলাম।ওর চেচানিতে কান ধরে দাড়াতো হলো আমাকে।ঝারি মেরে বললাম,

-ওই ফাইভ পয়েন্ট ওয়ান অডিও স্পিকার!তরে দিদি নাম্বার ওয়ানে বেইচ্চা আমু কইলাম।এতো জোরে কেউ চিল্লায়?

আরু ধপ করে মাথায় হাত দিয়ে বারান্দার ফ্লোরে বসে পরলো।আমিসহ বাকি সব হা করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।মোবাইলে কি এমন দেখলো ও?বাসায় কারো কিছু হলে তো কল করতো,কথা বলতো।নিশ্চিত মোবাইলটা হ্যাং মেরেছে।কলিজার কলিজা ওর মোবাইল।আমি নিচে বসে মিনমিনে গলায় বললাম,

-মোবাইল হ্যাং মেরেছে?ঠিক হয়ে যাবে তো।এভাবে বসলে তোকে ভার্সিটির গেইটের সামনে বসা আসমা খালাম্মা ভাববে সব।

ও ওভাবেই বসা।রাগ হচ্ছে আমার আরো।এই দুই ভাইবোন মিলে চিবিয়ে খাচ্ছে আমার মাথাটা।পড়া ছেড়ে আজগুবি সব চিন্তা করতে শুরু করেছি।টেনেটুনে তোলার চেষ্টা করলাম,পাটখড়িটাকে উঠাতেই পারলাম না।বিরক্ত হয়ে মোবাইলটা হাতে নিলাম।যা দেখলাম তাতে রাগ করবো নাকি কান্না করবো বুঝে উঠছি না।তবে কান্নাটাই আগে আসলো।টুপ করে একফোটা নোনাজল বেরিয়ে এলো।
মোবাইলটা হাতে নিয়ে আমি দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাড়ালাম।কষ্ট হচ্ছিলো।স্ক্রিনের ছবিটাতে একটা রিং পরা হাত।ক্যাপশনে লেখা – লাভলি গিফট্ ফ্রম দ্যা ওয়ান্টেড ওয়ান!।ওটা সুহানার পোস্ট ছিলো,আরমানকে ট্যাগ দিয়ে।আরু বলে উঠলো,

-আয়হায়!আমার ভোলাভালা ভাইয়াটাকে দিয়ে শেষমেষ আংটি পরিয়েই নিলো সুহানা আপু?কি হয়ে গেলো গো!

সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছে শুধু।আরিশা‌ বললো,

-ভাইয়া শুধু বোন হিসেবে ওকে কষ্ট দিবে না বলেছে।তাই বলে এভাবে ব্লাকমেইল করলো ওকে?এ্যাঁআআআ!

ওর মরাকান্না শুনে মাথায় খুন চেপে গেলো আমার।তোর ভাই কি বাচ্চা?বললো আর আংটি পরিয়ে দিলো?ওই সুহানা এতো চালাক?খুব রাগ হচ্ছে।রায়হান এসে আরুকে ধরে উঠালো।উর্বি মালুও আছে।আমি দাতে দাত চেপে মোবাইলটা আরুকে ফেরত দিয়ে বললাম,

-ক্লাসে যাচ্ছি আমি।তোর নাটক দেখার টাইম নাই।

আরু পিছন থেকে চেচিয়ে বললো,
-হ্যাঁ,হ্যাঁ।যা যা।যাবিই তো।ভাইয়াকে পছন্দ করিস না,তাই বলে ওর এতোবড় সর্বনাশটায় কিছু মনে হচ্ছে না তোর?

কিছু না বলে হাটছি আমি।গা জ্বলছে আমার।আরু আবারো বললো,

-ভাইয়ার ম্যাসেজ!এসেছে ও।গাইস,আসছি আমি।ওর সাথে দেখা করে আসছি।হিসাব মেটাবো আমি ওই সুহানা আপু…

রায়হান বললো,

-কি হয়েছেটা কি?ক্লিয়ারলি বলবে তো?

-এসে বলছি।

-বেশ।মিথি,ক্লাসে যা তুই।আমরা আরুর সাথে এগোলাম। আসছি।

কথাটা বলে উর্বি চলে গেলো।সাথে আরু মালু রায়হানও। বিয়েশাদী করে উনি এখানে কেনো?ওই মেয়েকেও নিয়ে এসেছে নাকি?ওহ্!এখন তো যাবে হানিমুনে।বাসায় গিয়ে আগে সেলিব্রেট করবে না?দেখি তো নতুন কাপল কে আমিও একবার।এসব ভেবে আমিও আসলাম একটু পর।গেইটে এসে দেখি আরমান না,সিয়াম দাড়িয়ে।আমাকে দেখেই দাতগুলো বের করে দেখালো।দেখো আমি আছি,সাথে আমার দাতও আছে।এ লোকের কাজ নাই কোনো?আরুদের আর খুজে পেলাম না।রাগে ফুসতে ফুসতে আবারো ভার্সিটিতে ঢুকতে যাবো তখনই সিয়ামের পিছুডাক,

-মিথি?

-ক্লাস আছে আমার।

-তাহলে এদিকে এসেছিলে যে?

-এমনি।

-ওয়েট,কথা বলি?

বিরক্তি নিয়ে ঘুরলাম।তাকিয়ে দেখি সিয়ামের গাড়ির পেছনেই একজোড়া লাল চোখ তাকিয়ে আছে আমার দিকে,যেনো জ্বালিয়ে দেবে সবকিছু।মাস্ক পরা থাকলেও লোকটার পারসোনালিটি দেখে চিনতে সমস্যা হয়নি।ওটা আরমান।সেদিন সিয়াম আমার হাত ধরতে এসেছিলো বলে নাক ফাটিয়েছিলেন তাইনা?আজ আমি ধরবো,দেখি কি করতে আসেন আপনি!বিদেশী নেউলের পাংখাগিরি?আংটি পরিয়ে দিলেন?যা খুশি করুন আপনি।কিচ্ছু যায় আসে না আমার।

গুটিগুটি পায়ে আরমানের দিকে তাকিয়েই সিয়ামের কাছে এগোচ্ছি।সিয়াম আমাকে এগোতে দেখে ঠিকমতো দাড়ালেন।কাছে গিয়ে ওনার শার্টের কলারের কিছুটা নিচে ডানহাতটা রেখে আরমানের থেকে চোখ সরিয়ে সিয়ামের দিকে তাকালাম।ওই‌ মুখে পান চিবানো টাইপ হাসি দেখলে ঘুষি মেরে আমারো নাক ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছা করে।হাত মুঠো হয়ে আসলো আমার।বড় জিহাদ নফসের সাথে জিহাদ।সে জিহাদে জয়ী হয়ে মুঠো করা হাতকে আটকালাম আমি।হাতটা দিয়ে শার্টটা একটু ঝেরে বললাম,

-কি লেগেছিলো এখানে?নোংরা কেনো?

কথাটা বলে আরমানের দাড়ানোর ওই জায়গাতে চোখ ঘুরালাম।উনি নেই!কোথায় গেলেন?হাতটা নামিয়ে নিলাম।পাশেই গাড়ি স্টার্টের শব্দ পেলাম।ওটা আরমানের গাড়ি,ভার্সিটির ব্যাকসাইডের দিকে নিয়ে গেলেন।চলে গেলেন?সুহানা কই?ওদের তো একসাথে থাকার কথা।এরমধ্যেই মালু ভার্সিটির ভেতর থেকে ডাক লাগালো।এমনভাবে চেচিয়েছে যেনো বড়সড় কোনো বিপদ হয়েছে ওর।পিছন ফিরে দু পা হেটে দৌড় লাগালাম ভেতরে।সিয়াম অবশ্য পেছন থেকে ডেকেছিলেন।ফিরে তাকাইনি।ভয় নিয়ে গেলাম মালুর কাছে।আমাকে দেখে হাত ধরে টানতে টানতে বললো,

-চল আমার সাথে।

-কোথায়?টানছিস কেনো এভাবে?

-আরে বলবি তো!

….

-মেজাজ চড়ে আছে মালু,জ্বালাস না।কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?

ও ওভাবেই টানতে টানতে বললো,

-তোর জমের কাছে।আমার আত্মাটাও অল্পের জন্য বেচেছে।এখনো দোয়াদরুদ পরছি আমি।

-পাগল হয়ে গেছিস তুই?

ও কোনো কথা না বলে ওভাবেই অন্যগেইট অবদি নিয়ে আসলো আমাকে।ছেড়ে দেওয়ার সাথে সাথেই আরমান কোলে তুলে নিলেন আমাকে।তারপর ওভাবেই গাড়িতে এনে বসিয়ে দিলেন।

গাড়িটা থামিয়ে আরমান বেরোলেন আগে।আমার পাশের দরজাটা খুলে দিয়ে ভারী গলায় বললেন,

-নামো।

…..

-কি হলো?নামো?

এবার একটু ঝারি দিয়ে বলেছেন।মাথা তুলে কাদোকাদো গলায় বললাম,

-কেনো নিয়ে এসেছেন আমাকে এভাবে?কি চান আপনি?

উনি আবারো রাগী লুক নিয়ে ঝুকলেন আমার দিকে।আমি চেচিয়ে বললাম,

-নামছি নামছি।খুলছি আমি সিটবেল্ট।

আরমান পিছিয়ে দাড়ালেন।আমি নেমে মাথা নিচু করে কাচুমাচু হয়ে গাড়ি ঘেষেই দাড়ালাম।কোনোদিক তাকাই নি।উনি আমার হাত ধরে হাটা লাগালেন।রাগে,অপমানে,লজ্জায় পা চলছে না আমার।আবারো চোখের পানি উপস্থিতি জানান দিতে এসেছে।চোখ ভরে উঠেছে,কিছু দেখতে পারছি না।মাথা নিচু রেখেই তবুও তার সাথে ধুকতে ধুকতে কিছুটা এগোলাম।উনি আমার হাত ছেড়ে দিয়ে দাড়ালেন।আমি হাত কচলাচ্ছি।কান্নাটা নেই,রাগটা আছে।সুহানার শপিং,আংটি,পোস্ট,সিয়ামের ওখানে ওনার ইগ্নোর করা,সবার সামনে ওভাবে কোলে তুলে,স্পর্শ করে আমাকে অপমান করা সবকিছু মিলিয়ে প্রচন্ড রাগ হচ্ছে আমার।জোরে একটা শ্বাস নিলাম।হাত ছেড়ে মাথা তুলে সাহস করে বললাম,

-কি পেয়েছেন টা কি আপনি?সেই ফার্স্ট ডে থেকে এভাবে কেনো জ্বালাচ্ছেন বলুন তো আমায়?আমার কেনো এতো কাছে আসেন আপনি?কেনো বারবার স্পর্শ করেন আমাকে?কিসের এতো জোর আপনার?আপনি আমার বান্ধবির ভাই!বড় হিসেবে সম্মান করি আপনাকে,তাই কিছু বলি না।তা বলে এমনটা ভাববেন না আমার অপমানবোধ নাই।একজন পরপুরুষ হয়ে…

আর কিছু বলার সুযোগ পেলাম না।আরমান আমার মুখ ধরে পিছনে থাকা কিছু একটার সাথে চেপে ধরেছে আমাকে।ওনার চেহারায় আবারো রাগ স্পষ্ট।কিন্তু আমি তো ভুল কিছু বলি নি।চোখ বড়বড় করে ওনার দিকে তাকিয়ে ছোটার চেষ্টা করে চলেছি।একহাতে আমার মুখ ধরেছেন,অন্যহাতে ডানহাতের আঙুলগুলোর ফাকে আঙুল দিয়ে পিছনে আটকে ধরে রেখেছেন।আমার বামহাতের ধাক্কায় একচুলও নড়ছেন উনি বলে তো আমার মনে হয় না।চেচাচ্ছি তবে মুখ‌ দিয়ে আওয়াজ বেরোচ্ছে না।কিছুক্ষন পর আমিই হাপিয়ে উঠলাম।আরমান রাগী গলাতেই বললেন,

-গায়ের সব জোর শেষ?

শুধু কটমটে চোখে তাকালাম ওনার দিকে।আর কিছু বলার বা করার অবস্থায় আমাকে রাখেন নি উনি।বললেন,

-লিসেন,তোমার কাছে আমিই আসবো,তোমাকে স্পর্শ আমিই করবো।তুমিও শুধু আমার কাছে আসাকেই‌ মেনে নিবে,আমার স্পর্শকেই গ্রহন করবে।আর এই পুরুষটা পর না,শুধুই তোমার।কান খুলে শুনে রাখো,তোমার পাশে অন্য কাউকে সহ্য করবো না আমি!সেদিন সিয়াম এগিয়েছিলো,তাই ওকে শুধু আঘাত করেছিলাম।স্পর্শ করলে ওর হাতটাই থাকতো না।আজ তুমি এগিয়েছো,তাই শাস্তিটা তোমাকে দেবো।তবে ওকেও ছাড়বো না আমি।

আমি শুধু শুনছি ওনার কথা।কি বললেন এসব?কেনো আসবেন আমার কাছে?স্পর্শ করবেন?আমি কেনো মানবো?উনি আমার মানে?আমার পাশে অন্য কাউকে কেনো সহ্য করবেন না উনি?

-আরো উত্তর চাই তোমার?

-উম্….

-আই ওয়ান্ট ক্লিয়ারেন্স মিথি।

-উম্ ম্….

-সে ইট ড্যামিট!

আমি চোখ দিয়ে আমার মুখের দিকে ইশারা করলাম।উনি এক ঝটকায় আমার হাত ছেড়ে,মুখ ছেড়ে ওভাবেই রাগ নিয়ে সরে দাড়ালেন।আমি ছাড়া পেয়ে একটু দম নিলাম।দম বন্ধই হয়ে যাচ্ছিলো আমার।উনি কি মেরে ফেলবেন আমাকে?জানি না কি হলো আমার,রাগে হিতাহিত বোধ লোপ পেয়েছে।মাথা পুরো ফাকা।একছুটে গিয়ে ওনার কলার চেপে ধরলাম।দাত কিড়মিড়িয়ে বললাম,

-কেনো হ্যাঁ?কেনো?কেনো ছোবেন আপনি আমাকে?কেনো সিয়ামের পাশে দেখতে পারেন না আমাকে?নিজে যে সুহানাকে শপিং এ নিয়ে গিয়ে আংটি পরিয়ে ছবি ছড়াচ্ছেন ফেসবুকে?তারবেলায়?আমি কিছু বলেছি আপনাকে?বলুন?আমি এগিয়ে জোর জবরদস্তি করেছি আপনাকে?বেশ করেছি সিয়ামের কাছে গিয়েছি আমি।আরো যাবো।আপনিও যান,আপনার বিলেতি নেউল সুহানার কাছে।

বলা শেষে আরমানের মুখে দু সেকেন্ডের একটা অদ্ভুত হাসি দেখতে পেলাম।কিছুটা আনন্দের,কিছুটা স্বস্তির।সাথেসাথে হাসিটাকে থামিয়ে দিয়ে জোরে শ্বাস ফেললেন উনি।কোমড়ে হাত দিয়ে এমন একটা লুক দিয়েছেন যেনো আমি খুব বিরক্তিকর কিছু বলেছি।আমার কথায় বিরক্ত লাগে ওনার?রাগে আরো এগুতে গিয়ে ওনার বুকের সাথে লেগে গেলাম।হাতের মুঠোয় শক্ত কিছুর অনুভুতিতে হুশ আসলো আমার।ওনার কলার ধরে আছি আমি!ছেড়ে দিয়ে গগনচুম্বী আতঙ্ক নিয়ে অনেকটা পিছিয়ে আসলাম আমি।

আরমান মাথা নিচু করে কপালটা আঙুলে স্লাইড করছেন।এক্সপ্রেশনটা ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।ভয় করছে আমার।খুব ভয় করছে।হাত পা অসার হয়ে আসছে।দুপুরের কড়া রোদে যেনো আগুন ঢেলে দেওয়া।শরীর ঘেমে জামায় আটকে গেছে আমার বুঝতে পারছি।ঘামা হাত জর্জেটের ওড়নায় মুছতে গিয়ে অস্বস্তি লাগছে আরো বেশি।কি থেকে কি হয়ে গেলো?রাগের বশে ওই‌ এংরি বার্ডের কলারে হাত দিয়ে ফেললাম?এবার কি হবে আমার?

#চলবে…

®

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here