#তোমাতেই_অস্তিত্ব_আমার
লেখনীতে:মিথিলা মাশরেকা
১৭.
ঘড়ির কাটা দুটো ছুই ছুই।রাতের অন্ধকারেও ঘরের ড্রিম লাইটের আলোতেই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ঘড়িটা।সেকেন্ড গুনে গুনে ভালোবাসার কাউকে ভালোবাসাটা কষ্টের।দুহাতে তবুও তাকে জরিয়ে থাকার মতো শান্তির বোধহয় আর কোনো কিছুই নয়।এই মুহুর্তে আরমানের এমনটাই মনে হচ্ছে।ঘুমন্ত মিথির নিশ্বাস ওর বুকে আছড়ে পরছে।চুলগুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে আপনাআপনি,আরমান চুপচাপ সেগুলোকে আবারো ওর কানে গুছে দিচ্ছে,কখনো নিজেও নাক ডুবাচ্ছে তাতে।কতটা নির্ভয়ে ঘাপটি মেরে রয়েছে ও আরমানের বুকে,কতই না মায়া ওই ঘুমন্ত চোখেমুখে।
আরেকপাশে ঘুমের ওষুধ না খেয়েও মরার মতো ঘুমাচ্ছে মাইশা।ভিউটা অন্যকেউ দেখলে কেমন রিয়্যাক্ট করবে ভেবে মুচকি হাসলো আরমান।বালিশের পাশে রাখা সাইলেন্ট ফোনটা অন্ধকারে জ্বলে উঠলো,এমদাদ মামুর ম্যাসেজ।কথা বলতে চান উনি।আরমান জানে এতো রাতেও উনি শুধুমাত্র ওর রিকুয়েস্টে স্ক্যানের রিপোর্টস্ জানাতে কল করতে চাচ্ছেন।একহাতে রিপ্লাই লিখলো,
-কি বুঝলে মামু?
-বেটার!ইভেন ভেরি মাচ বেটার।তোমাকে বললে তুমিও বুঝবে।
-কথা বলতে পারবো না মামু।
-শুনতে পারবে?আই মিন,শুধু আমি বলবো।
-হুম।
ড.এমদাদ কল করলেন আরমানকে।রিসিভ করে ফোনটা কানের উপর রেখে আবারো মিথিকে দুহাতে জরিয়ে ধরলো ও।
‘ ফার্স্ট অফ অল,কনগ্রাচুলেশনস্ ভাগ্নে।মিথি ইজ রিকভারিং টু ফাস্ট!শোনো,ম্যামোরি লস দুটো টাইপের হয়।মিথির ক্ষেত্রে যা হয়েছে,এক্সিডেন্টে ওর পাস্ট লাইফের অল্প কিছু সময় ওর মেমোরি রিকল করতে পারছে না।হুইচ ইজ,ওর রিট্রোগ্রেসিভ অ্যামনেসিয়ার প্রবলেম।আগের দিনই বলেছি তোমাকে,এটাতে ওর সোমাটিক ম্যামোরির বা প্রোসিডিউরাল ম্যামোরির কোনো প্রবলেম হবে না।
বাট ট্রমাটিক অ্যামনেসিয়ায় এপিসোডিক মেমোরি লস হয় বলে সবটা মনে করতে পারবে না ও। খুশির খবর এই যে,মেডিসিন,ঘুম,যোগব্যায়াম,আনন্দে থাকা এগুলো অনেক কাজে দিয়েছে ওর।ও আস্তে আস্তে কিছু কিছু করে মনে করছে সবটা।
আর আর আর!দ্যা স্পেশাল ওয়ান!ওর সামনে মেইন কিছু ইভেন্ট রিক্রিয়েট করা!এটা সবচেয়ে বেশি কার্যকরী হচ্ছে বলে আমি মনে করি।ও মেন্টালি যেটুকু প্রেশার নিয়ে সবটা মনে করার চেষ্টা করে সেটা ওর জন্য অনেকটা ইফেক্টিভ।যাকে বলে ন্যাচারাল ওয়ে টু রিগেইন প্রিভিয়াস মেমোরি।
মেডিকেল টার্মের সঙ্গায় থাকলেও,এই বিষয়গুলো সরাসরি আল্লাহপ্রদত্ত্বই হয়।যদিও সবকিছু তার ইচ্ছাতেই হয়,তবুও এ দিকগুলো আমরা ডক্টরেরা হাতে নিতে পারি না।সম্পুর্ন প্রাকৃতিক ভাবে পেশেন্টকে সারিয়ে তোলে।তুমি জানো?আমার এখানে গল্প করতে করতে ওর দেড় বছর মাঝের একটা কথা মনে পরে গিয়েছিলো,অনেকটা গুছিয়েও বলেছে কথাগুলো।যদিও ও নিজেও জানে না ঘটনাটা ওর হারানো দেড় বছরের মধ্যে ঘটেছিলো।সো,ইউ আর ভেরি ক্লোজ টু সাকসেস ইয়াং ম্যান।আবারো কনগ্রাটস্ আর অল দ্যা বেস্ট।রাখছি আমি।গুড নাইট। ‘
কথাগুলো শুনে আরমানের মন খুশিতে আর চোখ সে খুশির জলে ভরে উঠলো।ফোনটা রেখে ও মিথির কপালে ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে দিলো।
‘ এইতো,এইতো আর মাত্র কয়েকটা দিন জান।তারপর তোমার সবটা মনে পরে যাবে।মনে পরে যাবে আমার জন্য তোমার মনে আমি জায়গা করে নিয়েছিলাম।মনে পরে যাবে তোমার,আরমান নামের এই দিওয়ানাটাকে তুমিও ভালোবাসতে শুরু করেছিলে।মনে পরে যাবে যে আমাকে ঘিরে তুমিও ভাবতে শুরু করেছিলে ‘তোমাতেই অস্তিত্ব আমার’।মনে পরে যাবে আমাদের সে সব মুহুর্ত যা তুমি হারিয়েছো।
কিন্তু সবটা মনে পরলে তুমি আমাকে ঘৃনা করবে না তো?ভুল বুঝবে না তো?সেদিনের মতো ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ভাববে না তো?
নাহ্!সেটা আমি কোমোদিনও হতে দেবো না মিথি।শুধুমাত্র তোমার অসুস্থ্যতার কথা ভেবে এখনো নিয়ে যাইনি তোমাকে।আর হারাতে পারবো না তোমাকে আমি।একটাবার মাহবুব আলমের কাছ থেকে ওগুলো পাই,ওনার ভুলটা ভাঙাই,ওনার কাছে নিজেকে নির্দোষ প্রমান করি,তারপর সবটা ঠিক হয়ে যাবে।তোমাকে আর অতীত মনে করতে হবে না।কোনো ঘৃনার দেয়াল থাকবে না তোমার আর আমার মাঝে।যদি কিছু থাকে,তবে শুধুই সেটা ভালোবাসা,অশেষ ভালোবাসা,একে অপরের মাঝে নিজের অস্তিত্বকে অনুভব করার মতো ভালোবাসা।
ইউ নো হোয়াট?এই ডুপ্লিকেট চাবির ব্যাপারটা বড্ড বোরিং লাগে।তার উপর মাইশাটাও তোমার পাশেই ঘুমায়,নট ফেয়ার!ভালোলাগে না আমার।বাট তোমার কাছে আসলো তো সব ভুলেই যাই,এজন্য নেভার মাইন্ড বলে ছেড়ে দেই।একবার তুমি সুস্থ্য হয়ে যাও,সবটা ঠিক হয়ে যাক, তোমাকে তখন আর এভাবে চোরের মতো দেখতে আসতে হবে না,মাইশার পাশে এভাবে ভয় পেয়ে থাকতে হবে না আমাকে।কি করবো বলো,একটা মুহুর্তই যে যুগের মতো লাগে,সময় কাটে না আমার তোমাকে ছাড়া।কাছে থেকেও,খুজে পেয়েও দুরে রাখতে হয় তোমাকে।একাকী রাতগুলো যেনো আরো গলা টিপে ধরে,দম আটকে আসে আমার।ভালোবাসি মিথি।খুব ভালোবাসি। ‘
কথাগুলো বলে একটু হাসলো আরমান।জেগে জেগে এভাবেই নিজের সাথে কথা বলে বলে রাত কাবার করে দেয় ও।ভোরের আলো ফোটার আগেই আরেকবার মিথির কপালে ঠোট ছুইয়ে বেরিয়ে আসে ও বাসা থেকে।
•
রুমে রেডি হয়ে পড়ার টেবিলে বই খুলে মোবাইল ঘাটছিলো আরিশা,আরমান ডাক লাগালে ছুটবে ভার্সিটির জন্য।এখনো আসে নি,তাই মোবাইলের সাথে টাইমপাসের সুযোগটা হাতছাড়া করবে না ও ।সুহানা ঠাস করে দরজা খুলে ধপ ধপ করে এসে ওর টেবিলে চড় লাগিয়ে বললো,
-আরিশা,আরমান কাল বিকেলে বেরিয়ে আর বাসায় ফেরেনি?
আরিশা ভাবলেশহীনভাবে মোবাইলের দিকে তাকিয়েই উত্তর দিলো,
-জানি না,ওর লেজ ধরে থাকার টাইম আমার নাই।
-তো বলতে তো পারবে কোথায় গেছে?
-এটাও জানি না।
সুহানা আরিশার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিলো।আরিশা বিরক্তি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে দেখলো সাদা চামড়ার মেয়েটা রাগে চোখমুখ লাল করে ফেলেছে।যদিও গরম পরে নি সেভাবে,ওর নাক আর কপালে ঘাম।ও উঠে বেডে এসে বললো,
-ফোনটা দাও তো।
সুহানা কড়া গলায় বললো,
-না দেবো না।আগে বলো আরমান কোথায় গেছে?হোয়ার ইজ হি?
-বললাম তো জানি না সুহানা আপু।ভাইয়া কি কাউকে বলে যায় যে ও কোথায় যায়?
-বাট তোমরা জানো।আই নো দ্যাট।
-তুমি জানো না কেনো তাহলে?
সুহানা চোখ বড়বড় করে তাকালো।আরিশার কথার মানে ওর আন্দাজই ঠিক তা ও বুঝলো।কিছুটা দমে গিয়ে বললো,
-তারমানে ও…
-মেবি।আ’ম নট শিওর।
-বাট ইউ শুড বি ড্যাম শিওর!
আরমানের গলা শুনে দুজন চমকে তাকালো দরজার দিকে।দরজায় দাড়িয়ে একটা টেডিস্মাইল দিয়ে মোবাইল ঘোরাচ্ছে ও।আরমান ভেতরে আসতে আসতে বললো,
-আরু,এটা এক্সপেক্ট করি নি তোর কাছে!ভেবেছিলাম তুই অন্তত বুঝবি তোর ভাইয়া কোথায় রাত কাটাতে যায়।
আরমানের কথায় সুহানা রাগে ফুসছে।হাতে থাকা আরিশার ফোনটা এক আছাড়ে বেডে ছুড়ে মারলো ও।আরিশা হন্তদন্ত হয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে হাত বুলাতে লাগলো,যেনো ওটা কোনো জীবন্ত কিছু,খুব লেগেছে ওর।সুহানা আরমানের সামনে দাড়িয়ে বললো,
-তুমি ওর কাছে ছিলে?
………
-কি হলো?বলো?
আরমান ফোনটা পকেটে রেখে সুহানার দিকে তাকিয়ে বললো,
-ও এখনো মেনে নেয়নি আমাকে সুহানা।
সুহানার মুখে বিশ্বজয়ের হাসি।বুকে হাত গুজে বললো,
-আমি জানতাম।জানতাম ও ফিরে এসেও তোমার ভালোবাসা বুঝবে না।ও কোনোদিনই বোঝে নি তোমাকে আরমান।
-হাউ স্মার্ট সুহানা!এখন মনে হচ্ছে তোমাকে তাড়াতাড়ি বিডিতে এনে ভালোই করেছি আমি।বিজনেস ম্যাটার্সের ফল্টগুলো তুমি ঠিক ধরতে পারবে।
সুহানা একটু কাদো কাদোভাবে বললো,
-শুধু বিজনেসের জন্যই?কি এমন আছে বলোতো ওই মেয়ের মধ্যে যা আমার মধ্যে নেই?
-ওর মাঝে কি আছে সেটা আমি তোমাকে বুঝাতে পারবো না।এটুকো জেনে রাখো,ভালোবাসি।ভালোবাসি ওকে আমি।ব্যস!
-কেনো?কেনো আমাকে ভালোবাসো না তুমি?আমি তো তোমার কত আগের চেনা।আমাকে কেনো তুমি সেভাবে দেখো নি?কেনো আজ দেখছো না আরমান?
আরমান একটু গম্ভীরভাবে বললো,
-তোমাকে আগেও বলেছি এসব ভুলভাল কথা বলবে না।আর ও না মানলেও আমি ওকেই ভালোবাসি।
-কিন্তু আরমান…
-তুমি অফিস যাবে না?
-না।
-কেনো?
-এমনি।
আরমান ওকে পাশ কাটিয়ে আরিশার দিকে তাকিয়ে বললো,
-শোননা,ভেবেছিলাম তোকে ড্রপ করে অফিস গিয়ে সুহানাকে ওর কাজগুলো বুঝিয়ে দিবো।ও যেহেতু যাবে না বলছে…
-আমি যাবো আরমান।
সুহানার এমন জবাবটাই এক্সপেক্ট করছিলো আরমান।আরমান জানে ও যেখানে,সেখানে যাওয়ার জন্য সুহানা কখনোই না করবে না। ঠোটটা টিপে একটু হেসে ওভাবেই বললো,
-থাক সুহানা।গিয়ে কাজ নেই।
-না আরমান,যাবো আমি।
-এইতো বললে যাবে না
-প্লিজ আরমান।আব্বুর কাজগুলো দেখতে চাই আমি।
আরমান ওর দিকে ঘুরে অবাক হওয়ার ভান করে বললো,
-রিয়েলি?
-ইয়েস।যাবো আমি।
-ওকে ফাইন।রেডি হও তাহলে।একসাথে বেরোই আমরা।
সুহানার চোখ খুশিতে চকচক করে উঠলো।আরমান ওকে সাথে নিয়ে বেরোবে এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে ওর।বললো,
-আরমান!আজ আমরা একসাথে যাবো?
আরমান মৃদ্যু হেসে বললো,
-হোয়াই নট!আরুকে নিয়ে যেতে পারি,তোমাকে কেনো নয়?তুমিও তো বোন হও আমার!
সুহানার আবারো চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। ‘ তোমাকে খুব বেশিদিন এই কথাটা বলতে দিবো না আমি আরমান।আর এই ভুল ধারনায় রাখবো না তোমাকে,বোন নয়,জীবনসঙ্গী হয়ে বাচতে চাই আমি তোমার।আর ঠিক তাই হবে,দেখে নিও তুমি। ‘মনে মনে বললো সুহানা।
-তাহলে চল,আগে আমাকে ড্রপ করে দেন দুজনে মিলে অফিস যাবি।
আরমান একটা হাই তুলে বললো,
-ভেবেছিলাম আরু,আজ তোর ভার্সিটিতে যাবো না।
-কেনো বলতো ভাইয়া?
-ভেবেছিলাম সুহানা অফিস না গেলে আদিবকে কাজটা বুঝিয়ে দিয়ে বাসায় এসেই ঘুম দিবো।
আরিশা দাত কেলিয়ে বললো,
-কেনো?রাতে ঘুম হয়নি বুঝি?
আরমান বড় করে হেসে বেডে বসে বললো,
-কি করবো বল?সে যে শুধু ঘুম কেড়ে নিতেই জানে।
আরমান হাসি ঝুলিয়ে কথাগুলো বলছে,সুহানা একটার পর একটা আরো রাগী ফেস বানাচ্ছে।ওর রিয়্যাকশনে আরিশা বেশ মজাতেই আছে।সুহানা কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে আবারো যেভাবে রাগ নিয়ে এসেছিলো ওভাবেই বেরিয়ে যাচ্ছিলো।আরিশা বলে উঠলো,
-কিরে ভাইয়া?নতুন করে প্রেমে পরছিস নাকি আবার?
সুহানা দরজার বাইরেই দাড়িয়ে গেলো।আরমান একটু উচু গলায় বললো,
-তা আর বলতে?ম্যাডাম তো সব ভুলে বসে আছেন।মানতেই চাচ্ছেন না আমাকে।তার কাছে নিজেকে আবার নতুনকরেই তো প্রেজেন্ট করতে হচ্ছে।
কথাটার মানে বুঝলো না সুহানা।তবে মিথিকে আরমান ও বাসায় কেনো রেখেছে তার কারনটা এখনো ওর ক্লিয়ার না।আরিশা বললো,
-তোকে কতবার বুঝালাম ভাইয়া,মিথির জন্য আর এভাবে সুহানা আপুকে কষ্ট দিস না।তুই তো কিছুই শুনতে চাস না।
-আমার ইচ্ছা হয় আরু,জানিসতো ছ মাস আগের সে প্রতিটি মোমেন্ট ফিরে পেতে।তখন যদি সুহানা আমার লাইফে আসতো তবে হয়তো আজ…
-তো নতুন করে শুরু কর না।এক্সিডেন্টের পর মিথির তো মেমোরি লস হয়েছে,ওর তো তোকে ইনফ্যাক্ট লাস্ট দু বছরের কিছু মনে নেই।তুইও সবটা নতুন করে শুরু কর।
কথাটা শুনে সুহানা যেনো আকাশের চাদ হাতে পেয়েছে।মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি! সত্যিই কি?সত্যিই কি মিথির আরমান কে মনে নেই?
আরমান বললো,
-না রে,ওর মনে না থাকলে কি?আমি তো ওকে ভালোবাসি।আবারো ওর ভালোবাসা জয় করে নিবো আমি।
দরজার আড়ালে সুহানা মনে মনে বললো,
‘ তা আর হচ্ছে না আরমান ।আগেরবার আসতে দেরি করেছিলাম,এবার সে ভুল হয়নি আমার।ভেবেছিলাম নিজের মতো করে মিথিকে আমার রাস্তা থেকে সরাবো,এখানে মিথি তো সরেই আছে।শুধু দরকার আরমানকে ওর থেকে দুরে রাখা আর মিথিকে ওর কাছে ঘেষতে না দেওয়া।মিথি মেয়েটা তো বরাবরই বড্ড বোকা।আগেরবার তো আরমানের জন্য ফিলিংস্ থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র ওর কথায় ছাড়তে রাজি হয়ে গিয়েছিলো।এবার তো আরমানকে ওর মনেই নেই।শুধু ওকে তখনকার মতো বুঝাতে হবে যে আমি আরমানকে ভালোবাসি।ব্যস্!ও নিজে থেকেই সরে যাবে আরমানের জীবন থেকে। ‘
আরমান আবারো বললো,
-এজন্যই ওকে নতুন করে আই লাভ ইউ দিয়ে শুরু করার কথা ভাবছি।জানিনা আদৌও শুরু করতে পারবো কি না,বা কতোদুর পারবো।
সুহানা আরেকটু নিশ্চিত হতে রুমে ঢুকে বললো,
-মিথির মেমোরি লস হয়েছে?
আরমান বললো,
-হুম।
-এজন্যই ও ওই বাসায়?
-হুম।
-কিচ্ছু মনে নেই ওর?নাথিং?
-না।
-তাহলে তুমি ওর কাছে কিভাবে যাও?
-দ্যাটস্ টোটালি আপটু মি।ওসব ভাবতে হবে না তোমাকে।অফিস যেতে চাইলে রেডি হয়ে এসো।আমি নিচে আছি।
আরমান বেরিয়ে গেলো।আরিশা রেডিই ছিলো তাই ওউ বেরিয়ে গেলো আরমানের সাথেই।সুহানা নতুন উদ্দ্যমে রুমে ঢুকে রেডি হতে হতে নিজের গুটিগুলো সাজাতে লাগলো।যতোটুকো জেনেছে,ইটস্ এনাফ।এমনিতেও ওর ভেবে রাখা ছিলো কি করবে ও,এবার আরেকটু ভালোমতো কাজগুলো করতে পারবে ও।
সুহানা এখনো আসে নি।গাড়িতে উঠে আরিশা বললো,
-ভাইয়া,কাল আগে বেরিয়েছিলি যে,
-কাজ ছিলো।শোন আরু,মিথি রিকভার করছে।
-কি?
-হুম,ওর অজান্তেই ওর লাস্ট দেড় বছরের কিছু ইনসিডেন্ট মনে পরে গেছে।আমাদের জাস্ট এভাবেই ওগুলোকে সামনে আনার চেষ্টা করতে হবে।
-গ্রেট!আচ্ছা তুই সুহানা আপুকে এখনই জানালি এসব?
-হুম।
-কেনো?আর আমাদের সাথেই নিয়ে যাবি ওকে?এখন আরো বেশি ঝামেলা পাকাবে না ও?
আরমান ঠোট বাকিয়ে হেসে বললো,
-আগে আগে দেখ,হোতাহে কেয়া!
আরিশা বিরক্তি নিয়ে বললো,
-তোর এতো সাসপেন্স আমার ভালো লাগে না ভাইয়া!
-কান্ট হেল্প দ্যাট বেহনা।
-আচ্ছা এটাতো বল,মিথি ঠিক হয়ে গেলেই ওকে নিয়ে আসবি?নাকি তার আগেই?সবটা মনে করাতে গেলে আবার…
আরমান মুখটা কালো করে ফেললো।ছোট একটা নিশ্বাস ছেড়ে বললো,
-আরু,সবটা মনে পরলে ও আমাকে ভুল বুঝবে না তো?
-না ভাইয়া,কি বলছিস তুই?তুই বুঝিয়ে বলবি ওকে সবটা।আর…
-আগেরবারও তো বুঝাতে চেয়েছিলাম আরু।সে সময়টাই তো ও দিলো না।
আরিশা ভাইয়ের কাধে হাত রেখে বললো,
-তুই ইশতিয়াক আরমান।দ্যা ইশতিয়াক আরমান।তোর মুখে হেরে যাওয়ার কাহিনী মানায় না ভাইয়া।
আরমান মাথা তুলে ঝকঝকে একটা হাসি দিলো।আরিশার চুলে একটান দিয়ে বললো,
-সেটা তুই এতোদিনে বুঝলি?
আরিশা মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
-নোপ!যেদিন প্রথম তুই ভার্সিটিতে মিথির মুখে ফুলস্টপ বসিয়েছিলি সেদিন বুঝেছিলাম।জানিস তো,ও মেয়েকে ভাবতাম কেউই কোনো কথায় থামাতে পারবে না,বাট হ্যাটস্ অফ টু ইউ!
দুজনে হাসলো।এরমধ্যে সুহানা এসে দাত কেলিয়ে ব্যাকসিটে বসলো।যদিও এর আগে এ গাড়িতে ফ্রন্ট সিটে বসা নিয়ে অনেক জল্পনা কল্পনা ওর,তবে আজ একটু বেশিই খুশি ও।বাকিসব কিছুই মনে হচ্ছে না ওর আজ।আরমান বললো,
-সুহানা,তোমাকে বললাম মিথি অসুস্থ্য।তার ওর সামনে কোনো বাড়াবাড়ি করবে না।এমন কিছু করবে না যাতে…
আরমানের শীতল কন্ঠের কথাগুলোতে কিছুটা ভয় পেয়ে হ্যাসুচক মাথা নাড়ালো সুহানা।কিন্তু ও করবে সেটাই,যেটা করলে আরমান আর মিথি একে অপরের দিকে দুরে থাকবে।আরমান নিজে থেকে ওকে মিথির মেমোরি লসের বিষয়টা বলে ওর কাজটা সহজ করে দিয়েছে ভেবে একটু হাসলো ও।
আর ওদিকে সুহানার চেহারা দেখেই আরমান আন্দাজ করেছে ও কি করতে চায়।নিজেরই চক্রব্যুহে ওর কাজ হাসিল করে দিবে সুহানা।অন্যের চালে চেকমেট পাওয়ার অভিজ্ঞতাটা বেশ ভেবে মুচকি হেসে সানগ্লাসটা পরে গাড়ি স্টার্ট দিলো ও।
•
সকালটা শুরু হয় আমার গায়ে লেগে থাকা সেই নেশাময় সুঘ্রানে।ঘুমটা ভেঙে গেলে বিছানায় বসেই ওড়না গায়ে জরিয়ে কিছুক্ষন চেষ্টা করি এ চেনা সুবাসের উৎস মনে করার,গায়ে কারো স্পর্শের যে অনুভুতি সকালটাকে আরো সুন্দর করে দেয়,তাকে অনুভব করার।কিন্তু প্রত্যেকবারই চোখ বন্ধ করলে আশ্চর্যজনকভাবে আরমানের চেহারা দেখতে পাই আমি।প্রত্যেকবারই নিজেকে ধমকে মাথা থেকে ঝেরে ফেলি ওসব।
চেনা রুম,মাইশুর হাত পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে থাকা,বন্ধ মেইন গেইট মনে করিয়ে দেয় রুমে কেউ আসতেই পারে না।সত্যিই কি সবটা আমার মনের ভুল?নাকি এমনটাই হয় আমার সাথে?আর আরমান?উনি কেনো এভাবে জরিয়ে যাচ্ছেন আমার সাথে?দেখা হলে তো ঝগড়াটাই হয় আমাদের।তাহলে?এসবের মানে কি?নাহ্!নিজেকে আটকাতে হবে আমাকে।উনার প্রতি এসব ফিলিংস্ এখনই কন্ট্রোল করতে হবে,নইলে আমি আমার কমিটমেন্ট রাখতে পারবো না।যাবো না উনার সামনে,থাকবো না উনার কাছাকাছি।তাহলেই হলো।সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে বের হলাম ভার্সিটির জন্য।চারমাসে গ্যাপ গোছাতে গিয়ে একদমই ছাড়তে পারছি না একটা ক্লাসও।
রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে দোকানে গিয়ে চকলেটটা নিলাম।ঘুরে দাড়াতেই দেখি আরু গাড়ি থেকে নামছে।ওপাশের ড্রাইভিং সিটে চোখে সানগ্লাস পরে আরমান।এতোক্ষন সবটা ঠিক থাকলেও এখন আবহাওয়াটা একদম ভালো লাগছে না আমার।হাতের মুঠোয় থাকা চকলেটটা পিছলিয়ে যাচ্ছে,ঘেমে গেছে আমার হাত।আরমানকে বেরিয়ে
আসতে দেখে আমার কানের সামনে দিয়ে ঘাম গরিয়ে পরলো।
উনার দিকে তাকাতেই চোখ আটকে গেলো আমার।প্রত্যেকবার।প্রত্যেকবারই এমনটাই হয়।মনে মনে নিজেকে গালি দিয়ে চোখ নামিয়ে নিলাম।উনি সামনে এসে দাড়ালেন আমার,বুঝতে পারছি আমি।উনার পায়ের জুতোর দিকে তাকিয়ে আছি আমি।কেমন যেনো তাকাতে লজ্জা,ভয়,অস্বস্তি লাগছে আমার।এখানে দাড়ানোর একমাত্র কারন আরুর সাথে ভার্সিটিতে ঢোকা।তাহলে এমন হচ্ছে কেনো?না পারছি চোখ তুলে তাকাতে,না পারছি একচুল সরতে।ঘনঘন শ্বাস চলছে আমার।একটা দমকা হাওয়ার শীতল পরশ ছুয়ে দিয়ে গেলো আমায়।কানে গোজা চুলগুলো সামনে এসে পরতেই হুশে ফিরলাম আমি।চুলগুলো আবারো কানে গুজে দুপা পিছিয়ে নিজেকে সামলে আরুর দিকে তাকিয়ে বললাম,
-চল ভিতরে যাই।
আরু মিটমিটিয়ে হাসছে আর ওর পাশে আরমানের দিকে তাকাচ্ছে।আমি অন্য কোনোদিক না তাকিয়ে শক্ত হয়ে দাড়িয়ে ওর দিকেই আছি।একদম সামনের ইয়া লম্বা লোকটিও ঠোট টিপে হাসছে সেটা না তাকিয়েও এড়াতে পারলো না আমার চোখ।উনি সানগ্লাসটা নামিয়ে বললেন,
-তো এদিকে একটা মানুষ দাড়িয়ে,তার দিকে তাকানোও যাবে না?
আমার ভিতরটা ধক করে উঠলো।কি একটা অনুভুতি!আগে তো এমন হয়নি কখনো!এখন এমন কেনো মনে হচ্ছে?আমিতো চাই ই না,কারো দিকে ওভাবে তাকাতে।না তাকাই কোনোদিন।তবুও ওনার ক্ষেত্রে এমনটা কেনো?এজন্যই তো এভোয়েড করছি।কেনো বোঝেন না উনি?আমি চাইনা তার সান্নিধ্যে থাকতে।কালকের হসপিটালে যাই হয়ে থাকুক না কেনো,আমার মধ্যে যে চেন্জগুলো আসতে শুরু করেছে,যে অচেনা অনুভুতির সাথে পরিচিত হতে শুরু করেছি আমি,এখনই সেগুলোকে কন্ট্রোল করতে হবে।একটা শুকনো ঢোক গিলে সেদিকে না তাকিয়েই বললাম,
-আরু,চল যাই।
আমার কথায় কিছু বললো না আরু।পাশ থেকে কেউ একজনের মেয়েলি গলা শুনলাম।
-হাই মিথি!
আমি চোখ ঘুরিয়ে সেদিকে তাকালাম।মেয়েটাকে দেখি আশ্চর্য না হয়ে পারলাম না।গোলজামা,চুড়িদার,ছাড়া কালার করা চুল,চপ্পল,নাক কান খালি অনেকটাই আমার মতো চয়েজ ওর।পেছন থেকে দেখলে হয়তো যে কেউ আমি ভেবে নিবে।কিন্তু ও আমার নাম কি করে জানলো?আমি তো চিনি না ওকে।সৌজন্যের হাসি দিয়ে বললাম,
-হ্যালো।
আরমান কিছুটা সাইডে এসে বললেন,
-মিট সুহানা।আমার বড় আঙ্কেলের মেয়ে।
তারমানে এটাই সেই জরিয়ে ধরা মেয়েটা।এই গায়ে পরা মেয়েটা এখানে কেনো?উনার সাথে কি?তো ভাইয়ের বোন,বাড়িতে থাকুক না,পিছে লেগেছে কেনো?আমি এতোক্ষনে আরমানের দিকে তাকালাম।উনি হাসছেন।আমি এসব ভেবে যেখানে ভেতরে ভেতরে ঘেমে একাকার হয়ে যাচ্ছি বলে মনে করছি,ওনার কপালে পরে থাকা চুলগুলো কোথাকার কোন বাতাসে নরছে।গাছের ছায়ায় দাড়িয়ে মানুষটা,কিন্তু কোনো এক পাতার ফাক দিয়ে একফালি রোদ উকি দিয়ে উনার কাধে পরেছে,সে রোধ ধবধবে সাদা শার্টটাতে রিফ্লেক্ট হয়ে উনার মুখে পরছে।আরো মোহে পরে যাচ্ছি যেনো।
-কেমন আছো?
মেয়েটির কথায় আবারো চমকে উঠলাম।সম্পুর্নভাবে তার দিকে ঘুরে বললাম,
-জ্বী আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপু,আপনি?
-ভালো।তবে আরমানের সাথে অফিস যাচ্ছি তো,এ নিয়ে আরো ভালো আছি।
কথাটা বলে আপুটা আরমানের দিকে তাকালো।আরমানের কোনো রিয়্যাক্ট না দেখে একটু খুশি হলো সুহানা।
-ওহ্! বলে আমি একটু হাসলাম।কিন্তু সেটা সুখের হাসি একদমই ছিলো না তা আমার মন জানে।আরমানের সাথে অফিস যাচ্ছি মানে?কেনো,একসাথে যাবে কেনো?আর কথাটা বলে ও ওভাবে হাসলো কেনো?কি মতলব ওর?যেভাবে জরিয়ে ধরেছিলো,এখন অফিস যাওয়া নিয়ে এতো খুশি,এসবের মানে কি?না,এ মেয়ে শুধু ভাইয়ের চোখে দেখে না উনাকে।কিন্তু আরমান তো বোনের পরিচয়ই দিলেন।আবার কালকেও বলেছেন আমাকে,বোনের চোখেই দেখেন উনি।
-তুমি তো আরিশার সাথেই রাইট?
-জ্বী।
-বাচ্চা মেয়ে,ভালো করে পড়াশোনা করো হুম?
আমি ছিলাম আমার দুনিয়ায়,বাচ্চা শুনে মাথা ধরে উঠলো আমার।আড়চোখে আরমানের দিকে তাকালাম।উনি পকেটে হাত ঢুকিয়ে দাত কেলিয়ে বললেন,
-ঠিক বলেছো সুহানা।একমত আমি।
সুহানা আরমানের মুখে ও কথা শুনে লাফিয়ে ওর হাত ধরে বলে উঠলো,
-থ্যাঙ্কস্ জান।
আরমান এবারো কিছু বললো না।তবে কটমটে চোখে তাকাতেই হাত ছেড়ে দিলো সুহানা।
হাত ধরলো?জান?গায়ে আগুন ধরে গেলো আমার।এই বিলেতি মেয়ে আমাকে বাচ্চা বললো?উপদেশ দিচ্ছে আমাকে?আর তো আর আরমান ওর কথায় তাল মেলালেন?মেইন পয়েন্ট ইজ,সুহানা আপুর কথার সাথে মিল রাখতে আমাকে অপমান করলেন?আর সুহানাকে উনার হাত ধরতে দিলেন?জানও বলছে?
‘ এটা ঠিক করলি না বইন!একেতো আমাকে বাচ্চা বলা,উপদেশ দেওয়া,আবার আরমানের সাথে,,,’ সুহানা মেয়েটার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে এসবই ভাবছিলাম।কানে এলো,
-আরু,তোর এই বান্ধবীকে নিয়ে যা এখান থেকে।না হলে চোখ দিয়েই ও ঝলসে দিবে সুহানা কে।
আরমান অত্যন্ত নিচু গলায় কথাটা বললেন।কিন্তু আমার কান অবদি পৌছাতে খুব বিপত্তি পৌছাতে হয়নি তার নিচু স্বরকে।
-কি বললেন আপনি?
আরমান আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন,
-কই কিছু না তো?
-কিন্তু আমি স্পষ্ট শুনেছি আপনি আরুকে বললেন…
উনি আমার দিকে ঝুকে বললেন,
-কি শুনলে?
আমি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে।কি বলবো?বললে আমিই ফাসবো তো।কিসব ভুলভাল ভাবছি।উনার যা খুশি তাই করুক না।ওই সুহানা আপু উনাকে শুধু জান কেনো,ভাইজান,আব্বাজান,দাদাজান বললেও আমার কিছু যায় আসে না।হাত ধরেছে তো কি হয়েছে?তাতেও কিছু যায় আসে না আমার।
-কি হলো বলো?
-আ্ আপনি…
-আরমান,ইটস্ গেটিং লেইট।লেটস্ গো বেবি।
এ কথাটা বলেও সুহানা একরাশ ভয় নিয়ে আরমানের দিকে তাকালো।এ কথার জন্য আরমান ভালোমতো রাগ করবে তা ও জানে।কিন্তু আরমানকে চুপ দেখে খুশি হয়ে গেলো ও।এভাবে একটু একটু করেই আরমানের মনে জায়গা করে নিবে ও।
‘ কিই!বেবি?তর কোন জনমের বেবি লাগে এ?এই দামড়া ছেলে কেমনে তর বেবি হয়?তর মাদার তেরেসা হওয়া বের করে দিবো আমি একদম। ‘
সুহানার কথায় আরমান এবার না রেগে মিথির দিকে তাকালো।ওর চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে কতটা রেগে আছে ও।এজন্যই তো সুহানাকে আনা।তখন স্পর্শ করেছিলো বলে ওভাবে রিয়্যাক্ট করেছিলো আরমান।ওকে স্পর্শ করার অধিকার কেবল মিথিরই আছে।কিন্তু এ কথাগুলোতে মিথির রিয়্যাক্ট বেশ ভালোলাগছে ওর।
বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি সুহানা ম্যাডামের দিকে।আরিশা মেকি হাসি দিয়ে বললো,
-একচুয়ালি সুহানা আপু বিদেশের মাটিতে বড় হয়েছে তো,তাই ওভাবেই কথা বলে সবার সাথে।আরেহ্,বেবি জান সুইটু এগুলো তো ওখানকার কথার কথা।তাইনা সুহানা আপু?
সুহানা তাড়াতাড়ি ঘাড় উপর নিচ নারালো।আরু আমাকে ধাক্কা দিয়ে বললো,
-কিরে মিথি?চল আমরাও যাই।
আমি একবার আরুর দিকে তাকালাম।এই বিদেশী ম্যামের হাবভাব ভালো লাগছে না আমার।মেয়েটা সবসময় অন্যদৃষ্টিতেই তাকিয়ে থাকে আরমানের দিকে।
-সুহানা আপু,তোমরা যাও তবে?
আরমান একটু হেসে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
-আসছি আমরা।
উনি সানগ্লাসটা পরে ড্রাইভিং সিটে বসলেন।সুহানা মেয়েটা গিয়ে ফ্রন্ট সিটে বসার জন্য গাড়ির দরজা খুললো।সাথেসাথে আরু একটানে ঘুরিয়ে নিলো আমাকে।টানতে টানতে ভার্সিটিরে ভেতরে ক্লাসে নিয়ে আসলো আমাকে।আসার সময় বা ক্লাসে ও কি বললো,কি করলো কিছুই কানে যায় নি আমার।শুধু ভাবছিলাম,
‘ আসার সময় কোথায় ছিলো ওই সুহানা?তখন তো আরু ছিলো সামনে।ও তখন ব্যাকসিটে বসলে এখন বসলো না কেনো?এখন কি ব্যাকসিটে কেউ পেরেক গেথে দিয়ে গেছে নাকি?খালি জায়গা পেলো আর বসে পরলো?নির্লজ্জ মেয়ে একটা!একটা ছেলের গায়ে হুমরে পরে,পছন্দ করে না ওকে,তবুও ঘুরঘুর করে।হুহ!!! ‘
#চলবে…
®