তোকে চাই❤part:28/29/30

0
11743

#তোকে চাই❤part:28
#writer:নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤



আলসেমীর চরম পর্যায় বলতে একটা কথা আছে,,এই মুহূর্তে আমি সেই চরমে অবস্থান করছি।।কম্বল আর বইয়ের স্তুপ সরিয়ে,, বাইরে যাওয়ার জন্য তৈরি হওয়ার মতো তুচ্ছ জিনিসটা আমার কাছে রীতিমতো মহামারী বলে বোধ হচ্ছে।।।তারউপর দিনটি যদি শুক্রবার হয় তাহলে তো কথায় নেই।।কিন্তু তবুও আমায় উঠতে হলো,,,এবং চরম অনিচ্ছা সত্যেও বাসার দরজা পেরিয়ে রাস্তায় পা ফেলতে হলো।।।গন্তব্য আফরান স্যারের বাসা।।ভদ্রলোক খুব কড়া হুকুম জারি করেছে,,, আমাকে তার বাসা থেকে সিট কালেক্ট করতে হবে,,,,আর আমি তো বরাবরই ভদ্র মেয়ে,, তাই চুপচাপ মাথা হেলিয়ে নাচতে নাচতে উনার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি।।।৫ মিনিট যাবৎ আমি স্যারের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।।এই পর্যন্ত দুবার কলিংবেল চেপেছি,,,তৃতীয়বার চাপবো কিনা ভাবছি।।কলিংবেল দুবারের বেশি চাপা উচিত না,,,এটা নাকি ম্যানারের মধ্যে পড়া না,,,,এই মুহূর্তে আমি নিজেকে কোনোমতেই ম্যানারলেস প্রুব করতে রাজি নই,,,আমাকে আর বেশিক্ষণ ভাবতে হলো না তার আগেই একজন বৃদ্ধা মহিলা দরজা খুলে দিলো।।মহিলাটির মুখে একটা চাকর চাকর ভাব আছে,,,উনাকে দেখেই মনে হচ্ছে উনি এবাড়ির কাজের লোক,,,,তাও যেই সেই কাজের লোক নয়,,,যারা সারাদিন মালিকের তোষামুদে ব্যস্ত থাকে তেমন কাজের লোক।।

জি,,স্যার বাসায়,আছে?

জে স্যার আছে,,,আপনি ভিতরে আহেন,,

আরে,,ব্যস কি মারাত্মক শুদ্ধভাষা,,,,(মনে মনে) না আমি ঠিক আছি,,স্যারকে একটু ডেকে দিবেন??স্যার আসতে বলেছিলো(হালকা হেসে)

আচ্ছা,,,

মহিলাটি মাথা হেলিয়ে স্যারকে ডাকতে চলে গেলেন,,,যাওয়ার আগে পুরো দরজাটা আম্মুর ভাষায়”হা” করে খুলে রেখে গেলেন।।।আমি চোর হলে এটাই হতো আমার জন্য সুবর্ন সুযোগ।।আমাকে এই সুবর্ন সুযোগের অধিকারী করে মহিলাটি ভিতরে ডুকেই চেঁচিয়ে উঠলেন,,,

আব্বা??তোমার ইস্টুডেন্ট এসেছে।।

“ইস্টুডেন্ট”,, বাহ দারুন উচ্চারন।।ইংরেজির ভুল উচ্চারণ করাটাও রীতিমতো একটা আর্ট।।সবাই কিন্তু পারে না,,,কলেজের ইংরেজি প্রফেসর কখনোই স্টুডেন্ট কে ইস্টুডেন্ট উচ্চারন করতে পারবেন না,,,মূলত এই উচ্চারণ করাটা ওদের এবিলিটির মধ্যেই পড়ে না।।ওপাশ থেকে স্যার কি জবাব দিলো তা আমার কান পর্যন্ত পৌছালো না,,,তার উত্তরটা হয়তো এমন হবে,,” ওয়েট করতে বলো”।।হ্যা আমিও ওয়েট করছি,,বেশ উৎসাহ নিয়েই ওয়েট করছি,,,একজন প্রফেসর তার ছাত্রীকে ওয়েটিং লিস্টে না রেখে দেখা করবে তা তো হতে পারে না,,,,তাতে প্রফেসর প্রফেসর ফিলিংস আসবে না।।।প্রায় দশমিনিট পর স্যার বাইরে বেরিয়ে এলেন।।ভদ্রলোককে বড্ড ইম্বারেসড্ বলে মনে হচ্ছে,,,,তার অস্বস্তির কারনটা হলো তার লুঙ্গি।।।একজন সম্মানীয় প্রফেসর তার স্টুডেন্টের সামনে লুঙ্গি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে ব্যাপারটা সত্যিই অস্বস্তিকর,,, আর স্টুডেন্টটা যদি মেয়ে হয় তো কথায় নেই।।উনি এমন ভাবে লুঙ্গি চেপে ধরে দাড়িয়ে আছেন যেন,,এখনি খুলে গিয়ে কেলেংকারী হয়ে যেতে পারে,,,

আসসালামু আলাইকুম স্যার,,,

ওয়ালাইকুমুস আসসলাম,,,রোদেলা এই নাও দুটো সিট আর বাকি সাজেশনটা কোচিং থেকে নিয়ে নিও,,,ওখানে গিয়ে আমাকে ফোন দিও,, আমি বলে দিলেই হবে,,,(হালকা হেসে)
আপনাদের সুবিধার জন্য নিচে পেজটির লিংক দিয়ে দিলাম — https://www.facebook.com/রুপকথার-মায়াবী-লেখক-লেখিকা-112614303485434/

ওকে স্যার।।

স্যারকে সালাম জানিয়ে বেরিয়ে এলাম।।।বেশ বিরক্ত লাগছে,,ইচ্ছে করছে নিজের চুল ধরে টানি।।ভাইয়ার এতো বলা সত্তেও ফোনটা যে কেনো সাথে নিলাম না,,,উফফ্,,,যে সাজেশনের জন্য এতোকিছু সেটা না নিয়েই এবার বাড়ি ফিরতে হবে,,,সব সব নষ্ট,,,গাড়ি ভাড়া,,দেড় ঘন্টা সময় দুটোই ওয়েস্ট,,,চরম বিরক্তি নিয়ে সিএনজিতে বসে আছি,,,রাস্তায় একটা সাইনবোর্ড দেখে বিরক্তিটা আরো কয়েক ধাপ উপরে উঠে গেলো,,,,বাসস্ট্যান্ডের পাবলিক টয়লেটে বড় বড় করে বাংলায় লেখা “বার্থ রুম”।।। কি সব আজগুবি ওয়ার্ড,,,বার্থ রুমটা আবার কি??একেই হয়তো বলে আধুনিক বাংলার শুদ্ধ প্রয়োগ,,মূর্খরা হঠাৎ ঞ্জানী হয়ে গেলে যা হয় আর কি।।।সব কটাকে ধরে চড়ানো উচিত,,,,লিখতে না জানলে লিখতে যায় কেন এরা,,যত্তোসব।।।বার্থ রুম টপিকস হয়তো আরো কিছুক্ষণ চলতো,,,কিন্তু হঠাৎ ব্রেক কষায়,,” “বার্থ রুম” টপিকস ও ব্রেক কষলো।।।

কি মামা??সমস্যা কি??মার্ডার করতে চান??এখনি তো মুখ থোবড়ে রাস্তায় গিয়ে পড়তাম(রাগী চোখে)

আমি কি করুম আফা,,,সামনে এমন কইরা গাড়ি দাঁড় করাইলে তো আমার আর কিছু করার নাই,,,,

কিহ,,,কোন শালায় রাস্তার মাঝখানে গাড়ি দাঁড় করায়,হ্যা??গাড়ি থাকলেই কি কলিজায় উঠায় দিতে হবে নাকি???

কথাগুলো বলতে বলতে সিএনজি থেকে নেমে এলাম,,ব্যাপক মোডে আছি,,,,গাড়িওয়ালার কলার ধরে বড়দের মতো একটু ঝেড়ে দিবো,,,কিন্তু তা আর হলো কই??উল্টো নিজেই চুপসে গেলাম,,,শুভ্র গাড়ির দরজা ধরে দাড়িয়ে আছে,,,এই ব্যাটার এক্চুয়াল প্রবলেমটা যে কি তাই বুঝতে পারছি না।।।সেদিন রিক্সার সামনে তো আজ সিএনজি,,,উফফফ।।।মাথা থেকে সব ভাবনা ঝেড়ে ফেলে উনার দিকে তাকালাম,,,,উনাকে খুব উশকোখুশকো লাগছে,,,মনে হচ্ছে কতোদিন ধরে ঘুমোয় না,,,এখন আমার মনে হচ্ছে মামানি হয়তো ঠিকই বলেছিলো,,,,,এই তো সেদিন মামানি ফোনে বলেছিলো,,

রোদ???

কেমন আছো মামানি?

ভালো,,চলে আয় না মা,,,

এডমিশনের পরই চলে আসবো,,,

আজই চলে আয়,,আই থিংক,,শুভ্র তোকে অনেক মিস করছে রে,,,আমার ছেলেটার চোখ-মুখ একদম শুকিয়ে গেছে,,,আগের মতো কেমন যেনো শুধু ঘরের মধ্যেই থাকে,,,

তেমন কিছুই না হয়তো কাজের চাপে আছে তাই ওমন লাগছে,,,


কারো ছোঁয়ায় ঘোর কাটলো,,,শুভ্র তার দুহাতে আমার দু’গাল জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে আছেন।।আমি উনার দিকে তাকাতেই এক ঝটকায় কোলে তোলে নিলেন আমায়।।।আমি কিছুই বললাম না,,,শুধু উনার দিকে তাকিয়ে আছি,,,উনার চোখদুটো টলমল করছে,,,চুলগুলো এলোমেলো,, দাড়ি বেড়ে গেছে অনেক,,,তবুও কি সুন্দরই না লাগছে।।।আমাকে গাড়িতে বসিয়ে সীট ব্যাল্ট লাগিয়ে দিলেন,,,
।।
আমাকে গাড়িতে কেন বসালেন??আমি সিএনজি করেই যাবো।।

বলেই গাড়ীর দরজা খুলতে গিয়েই বুঝলাম দরজা লকড।।

কি সমস্যা??দরজা লক করেছেন কেন??খুলুন বলছি,,,,(রাগী চোখে)

উনার কোনো ভাবান্তর হলো না,,,উনি চুপচাপ গাড়ি চালাতে লাগলেন,,,,আমি উনাকে ক্রমাগত গাড়ি থামাতে বলছি,,তার উত্তরে উনি শুধু একটা কথায় বলেছেন,,,,

উইথআউট রিজন যে আমার থেকে এতোদিন দূরে থাকলে তার জন্য ইউ ডিজার্ব আ পানিশমেন্ট,,,, আর তোমার পানিশমেন্ট হলো,,আগামী একবছর বাপের বাড়ির নাম মুখেও নিবে না,,,

হোয়াট???বললেই হলো,,,

হুম,,বললেই হলো,,তোমারও বুঝা উচিত দূরে থাকাটা কতো কষ্টের,,,,

কষ্ট??আমি না থাকাতে আপনার কষ্ট হয়েছে??আর ইউ কিডিং উইথ মি???

#চলবে,,,,
(গল্প তো দেওয়ার কথা,ছিলো না তবু দিলাম,,আমার বার্থডে ট্রিট এন্ড হ্যাপি নিউ ইয়ারের শুভেচ্ছা হিসেবে।।।সবার জন্য এত্তোগুলো ভালোবাসা রইলো,❤❤❤)

#তোকে চাই❤
#writer:নৌশিন আহমেদ রোদেলা ❤
#part:29


আমি না থাকায় আপনি কষ্ট পেয়েছেন??লাইক সিরিয়াসলি??আমাকে তো দু’চোখে দেখতে পারেন না,,আবার দূরেও যেতে দিতে চান না,,,আপনি এক্চুয়েলি চান টা কি??

তোকে চাই,,,আই ওয়ান্ট ইউ,,,হ্যাপি??নাও স্যাট আপ।।

এরপর আর একটা কথাও বলেন নি উনি,,,গাড়ি থেকে নেমে সোজা কোলে তোলে নিয়েছেন আমায়,,,আমার হাজার বাঁধাও তার কাছে বিন্দুনাত্র গুরুত্ব পায় নি।।আমাকে কোলে নিয়ে বাড়িতে ডুকতেই,, সবাই এমন ভাবে তাকালো যেনো ভূত দেখেছে,,,,লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছিলো আমার।।উনি কোনো কথা না বলে,, আমায় নিয়ে সিঁড়ির দিকে পা বাড়াতেই মামু বলে উঠলেন,,,

ওকে ওভাবে কোথা থেকে আনছিস??পায়ে ব্যাথা পেয়েছে নাকি??শরীর অসুস্থ??(অস্থির হয়ে)

কিডন্যাপ,,,তোমার ছেলে আমাকে মাঝ রাস্তা থেকে কিডন্যাপ করে নিয়ে এসেছে,,,

কি??(অবাক হয়ে)

এতো অবাক হওয়ার কি আছে??আমার বউ আমার সাথে থাকবে,,,,সে যদি খোলা পেয়ে লাফালাফি করে তো উঠিয়েই আনতে হয়,,,,(গম্ভীর মুখে)

যেমন বাপ তার তেমন ছেলে,,(মুখ টিপে হেসে)

বাহবা,,এতো প্রেম???

আপুর কন্ঠ কানে আসতেই পেছনে ফিরে তাকালাম,,,,

আপিইইই,,,,বুড়ি কখন এলি???(জড়িয়ে ধরে)

মাত্রই,,,আমার দেবরের সাথে প্রেম তো ভালোই চলছে,,(চোখ টিপে)

বাহ,,দুই বোনে জড়াজড়ি করছে আর আমার ভাই ডাফারের মতো দাড়ায় আছে,,,আরে আমাকে জড়ায় ধরবি না??

অভ্র ভাইয়ার কথা শুনে সবাই হেসে উঠলো।।শুভ্রও হেসে উনাকে জড়িয়ে ধরলেন,,এত্তোক্ষনে আমার কিউট দিদা মুখ খুললেন,,,

সবাই জড়াজড়ি করছিস,,,আমাকে কে ধরবে??আমার,দুই বয়ফ্রেন্ড তো বউ পেয়ে আমাকে ভুলে গেছে(মন খারাপ করে)

আমি দৌড়ে গিয়ে দাদুকে জরিয়ে ধড়লাম একে একে সবাই,,,,কিন্তু আপু ধরতে গেলেই দিদা আপুকে তাড়াতাড়ি থামিয়ে দিলেন,,,

না না বড় নাত বউ,,তুমি নিচু হয়ো না,,,আমিই উঠে দাঁড়াচ্ছি,,,,

দিদা,উঠে দাড়িয়ে আপুকে জরিয়ে ধরে কপালে চুমু একে দিলেন,,,

আরেহ,,,আপুকে এক্সট্রা আদর কেনো??(অবাক হয়ে)

কারন তোর আপু এক্সট্রা জিনিস দিচ্ছে,,,

মানে??(কনফিউজড হয়ে)

রুহি প্রেগনেন্ট রোদ,,

হোয়াটটটট???এতো তাড়াতাড়ি??

বলেই জিব্হায় কামড় দিলাম বুঝতে পারছি রং জায়গায় রং কথা বলে ফেলছি,,,,কথা কাটাবার জন্য বলে উঠলাম,,

না মানে,, আমি বলছিলাম কি,,আমি যে এতো তাড়াতাড়ি খালামনি হবো ভাবতে পারি নি।।

কে বললো তুমি খালামনি হচ্ছো??

তো??আপুর বেবি হলে তো আমি খালামনিই হবো,,

জি না,,,তুমি কাকিমনি হবা,,,

অবিয়েসলি নট,,,

অবিয়েসলি ইয়েস,,,

আপনি বললেই হবে নাকি??মগের মুল্লুক পাইছেন??আমি কাকিমনি হবো না বরং আপনি ওর খালু হবেন,,,তারমানে আংকেল,,

জি না,,আমি,,

আরে স্টপ গাইস,,,ঝগড়া থামা,,,

ছোটদাদু ভাই,,,এবার তো তোমার পালা।।।বউকে শুধু কোলে নিয়ে ঘুরলেই হবে নাকি??বউয়ের কোলেও তো কেউ চায়,,,(দুষ্টু হাসি দিয়ে)

কেনো,,বউমনির বেবি আছে,,ওকে কোলে নিয়েই ঘুরে বেড়াবে,,,,

উনার এমন কথায়,,আমার ব্যাপক হাসি পাচ্ছে কিন্তু দিদার মুখটা রীতিমতো চুপসে গেলো,,,সবাই চুপচাপ কারন উনার আর আমার সম্পর্ক যে স্বাভাবিক না তা সবাই একটু হলেও জানে,,,

তা তো ঘুরবে,,কিন্তু দাদুভাই সন্তান হলো সম্পর্কের মধ্যে একটা শক্ত বাঁধন,,,এগিয়ে যাওয়ার নতুন সিঁড়ি।।।একটা সন্তানই পারে সম্পর্কের বাঁধনগুলো বেঁধে রাখতে,,,

দিদার কথাটা শেষ না হতেই উনি আমাকে টেনে রুমে নিয়ে এলেন,,,এভাবে রুমে নিয়ে আসার কোনো মানে হয় না।।।সবাই যে অবাক হয়েছে বুঝতে পারছি,,আমি নিজেও চরম অবাক,,,উনি আমাকে বিছানায়,বসিয়ে দিয়ে দরজা লক করে নিজেও সোফায় বসে পড়লেন,,,উনার চোখ-মুখ অসম্ভব রকম লাল হয়ে আছে,,,মনে হচ্ছে প্রচুর টায়ার্ড,,,আধা ঘন্টা যাবৎ দুজনেই চুপচাপ বসে আছি,,,আমি কিছু বলার সাহস পাচ্ছি না,,,উনার মাথায় কি চলছে কে জানে??আর উনিও মাথা নিচু করে বসে আছেন।।।অবশেষে উনি অসম্ভব শীতল গলায় বলে উঠলেন,,

রোদ???

হুম,,(আড়চোখে তাকিয়ে)

তুমি কখনো বেবি নিবে না,,

উনার কথায় যেনো আমি অবাকের সপ্তম আকাশে পৌছে গেলাম,,,কি বলছেন এসব??প্রথমত আমাদের মাঝে তেমন কোনো রিলেশনই নেই যে বেবির কথা আসবে।।।দুজনের মাঝে দুরসম্পর্কের আত্মীয় আত্মীয় ভাব,,,সো বেবি নেওয়ার প্রশ্নই আসে না,,,দ্বিতীয়ত,, নিবোই না বা কেনো??

কেনো??কেনো নিবো না??(ভ্রু কুচকে)

আমি বলেছি সো নিবে না ব্যস,,,,

সবকিছুতে ব্যস বলে দিলেই হবে না,,,আই ওয়ান্ট এক্সপ্লেনেশন।।

তুমি জানো,,বেবি নিলে লাইফ রিস্ক থাকে,,যদি তোমার কিছু হয়ে যায়,,,কি দরকার লাইফ রিস্ক নেওয়ার।।কখনো না,,, তুমি নিবা না,,,

সো সিলি মিষ্টার শুভ্র।।মা হতে গেলে রিস্ক তো সব মেয়েকেই নিতে হয়,,,তাই বলে সবাই বেবি নেওয়া বাদ দিবে নাকি??(ভ্রু কুঁচকে)

আমি সবার কথা বলি নি,,,শুধু তোমার কথা বলছি।।আর যা বলছি তাই হবে,,,,

পাগলের মতো কথা বাদ দিন,,,আমাদের মধ্যে এসব নিয়ে কথা বলা শোভা পায় না,,,তাছাড়া এমন কোনো দিন আসলে আমি অবশ্যই বেবি নিবো,,আই ওয়ান্ট আ বেবি,,,

বাট আই ডোন্ট ওয়ান্ট,,,তুমি চাইলে এডপ্ট করতে পারো বাট নিজে কখনো না,,,

এনাফ ইজ এনাফ শুভ্র,,,এসব পাগলামো বাদ দেন প্লিজ,,,আর এই টপিকটাও অফ করেন,,, সব কিছু আপনার ইচ্ছেই হবে না,,,আমারও চাওয়া থাকতে পারে।।। আর সব মেয়েই মা হতে চাই,, আর ছেলেরা বাবা,,,আর আপনি কি না,,,

আমি চাই না,,,,

আপনি চানটা কি হ্যা??(রেগে)আজ বলেই দিন,,,এক্চুয়েলি আপনার চাওয়া টা কোথায়?(চিৎকার করে)

উনি হঠাৎই উঠে দাঁড়িয়ে আমার গাল চেপে ধরলেন,,,মনে হচ্ছে গালের হার এখনিই মট করে ভেঙে যাবে,,,

আই জাস্ট ওয়ান্ট ইউ,,,নাথিং ইল্স।।শুধু #তোকে চাই আমার,,,,আন্ডারস্ট্যান্ড??আর কিচ্ছু না,,,বেবি তো কখনোই না,,,(দাঁতে দাঁত চেপে)

কথাটা বলেই আমাকে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।। ।গালটায় প্রচন্ড ব্যাথা করছে,,,উনার মাথায় কি চলে কিছুই বুঝতে পারি না,,,মাঝে মাঝে মনে হয় উনি আমাকে মারাত্মক রকম ভালোবাসেন,,,যাকে বলে ডেঞ্জারাস লাভ।।।কিন্তু আবার মুহূর্তেই মনে হয়,আমার থাকা না থাকাতে উনার যায়ই আসে না।।।আসলে কি চান উনি??আমি এখনো বুঝতে পারলাম না,,,কনফিউজিং ক্যারেক্টার মিস্টার শুভ্র আবরার।।।

#চলবে,,,

(গল্প দিতে না পারলে আপনাদের থেকে আমার বেশি খারাপ লাগে বাট আম হেল্পলেস।।।হ্যাপি নিউ ইয়ার এর জন্য আসছিলাম,,,আবার হারিয়ে যাচ্ছি বাট আবারো ফিরবো।।।আপনাদের খারাপ লাগবে জানি,,তবু সামান্য সান্ত্বনা হিসেবে পরপর তিনটা পার্ট দিয়েছি,,,,তিনদিনের টা হয়ে গেলো।।।কেউ মন খারাপ করবেন না৷৷ ভালো থাকবেন,,লাভ ইউ এন্ড মিস ইউ অল,,,)
#তোকে চাই❤
#writer:নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part:30


রাস্তার পাশে দাড়িয়ে আছি,,হাত ভর্তি শপিং ব্যাগ,, আমি একা নই,,,ফুল ফ্যামিলি আজ শপিং এ বেরিয়েছি।।ব্যাপক মজা হচ্ছে,,তার সাথে আমার প্যারাময় জামাইয়ের প্যারাও আছে,,এদিকে যেয়ো না,,,ঠিক ভাবে হাটো,,,এখনি পড়ে যেতে,,,দৌড়াচ্ছো কেন??উফফ উফফ বিরক্তিকর,,,, আমি বাচ্চা নাকি??সবাই সামনে সামনে হাটঁছেন আমি আর শুভ্র পিছনে,,,,

দেখুন ফুচকার স্টল,,, চলুন ফুচকা খাবো,,,প্লিজ প্লিজ(হাত ধরে ঝাকিয়ে)

ছি,,,লুক এট হিজ হ্যান্ড,, কি বিশ্রী ভাবে হাত দিয়ে মাখাচ্ছে,,,,একদম খাবা না চলো,,,

প্লিজজ না?

নো তুমি খেলে বউমনিও খাবে,,পরে বেবির ক্ষতি হবে,,তুমি তাই চাচ্ছো??(ভ্রু কুচকে)

ওকে ফাইন(দাঁতে দাঁত চেপে)

আচ্ছা ওই ফুলগুলো নিবো,,রেড কালার ইজ মাই ফেবরিট।।সবগুলো লাল গোলাপ নিবো,,

এতোগুলো??(অবাক হয়ে)একশোরও বেশি হবে,,,

সো,,আমি নিবোই নিবো,,,

আচ্ছা তুমি দাঁড়াও আমি আন….

কে শুনে কার কথা,,রেড রোজ ইজ মাই ফেবরেট ফ্লাওয়ার,,,উনার কথায় পাত্তা না দিয়ে দিলাম ভৌ দৌড়।।উনার কথা শুনতে যাবো কেন হুহ??পিছন থেকে উনি ডেকেই চলেছেন,,,ডাকুক,, তাতে আমার কি?

রোদ প্লিজ দেখে,,,গাড়ি আছে,,প্লিজ রোদ থামো,,,রোদদদদ

উনার হাতে, ধরা পড়ার কোনো শখ নেই আমার,,ধরতে পারলে পুরো আস্ত চিবিয়ে খাবেন,,তবু উনার রিয়েকশনটা দেখার লোভ সামলাতে পারলাম না,,,পিছনে তাকালাম,,, উনার চেহারায় একরাশ ভয়ের চিন্হ,,উনিও হঠাৎই দৌড়াতে লাগলেন কিন্তু ততোক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গেলো।।।সামনে তাকাতেই প্রচন্ড ঝটকায় ছিটকে পড়লাম।।চোখদুটো বন্ধ হয়ে আসছে,,,বুঝতে পারছি রক্তে শরীর ভিজে যাচ্ছে,,,চারপাশটা ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে আসছে,,চোখদুটো বুজার আগে কারো মুখ আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো,,হ্যা,, শুভ্র,,টলমলে চোখে কি যেনো বলে চলেছে ক্রমাগত,,,,তারপর কি হয়েছিলো জানি না,,,যখন চোখ খুলি তখন আমি হসপিটালের বেডে,,,,আমার চারপাশে সবাই দাড়িয়ে আছে,,শুধু শুভ্র নেই।।।কিন্তু মনটা উনাকেই খুজছিলো,,,কিন্তু আমার থাকা না থাকাতে হয়তো উনার যায়ই আসে না,, তাই এই অবস্থাতেও ফেলে চলে গেছেন আমায়,,,হুহ।।সবাই এক এক করে মাথায় হাত বুলিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেলো,,,শুধু থেকে গেলো আপু আর মামানি।।।আপুর কাছে জানলাম সবাইকে টেনশনে ফেলে গত ২৪ ঘন্টা খুব আরামে শুয়ে ছিলাম,,ডক্টরের অবজারভেশনের লাস্ট আওয়ারে সেন্স ফিরেছে আমার।।।বাপরে,,হোয়াট আ ভাগ্য,,,টেনেটুনি বেঁচে গেলাম দেখি,,,কৌতূহল বশত আপুকে জিগ্যেস করেই ফেললাম,,,

উনি কোথায় আপু??

উনিটা কে??(ভ্রু কুচকে)

উফফ আপু,,তোমার দেবরের কথা বলছি,,,

ওহ,,,,তাকে তো পাগল বানিয়ে ছেড়ে দিয়েছিস,,,এখন আবার খবর নেওয়া হচ্ছে,,হুম??(মুচকি হেসে)

মানে??কি বলছো এসব??

তোকে বলেছিলাম না রোদ??আমার ছেলেটা তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে,,,,অনেস্টলি বলছি,,আজ তোর কিছু হয়ে গেলে,,আমার ছেলে সব ভেঙে চুরমার করে ফেলতো।।।(চোখের পানি মুছে)পাগল একটা,,,,

বনিতা না করে বলবা প্লিজ কি হয়েছে??আর উনিই বা কোথায়,,, ঠিক আছেন তো???

এবার বড্ড টেনশন লাগছে,,,,কাহিনীটা কি আসলে,,,তবে আপু আর মামানির কাছে সব শুনে আমি টুটালি নির্বাক,,,শুভ্রও এমন করতে পারে???ওদের কথা অনুসারে ঘটনাটা হলো এই,,,,

রোদের দিকে গাড়ি আসতে দেখেই ছুটে এসেছিলো শুভ্র বাট শেষ রক্ষা হলো না।।।নীলির মতো রোদকেও নিথর হয়ে পড়ে থাকতে দেখে বুকে মোচড় দিয়ে উঠলো তার।।দৌড়ে রোদকে জড়িয়ে ধরে চেচাতে লাগলো,,,কিন্তু ততক্ষণে রোদের চোখের পাতাও বুজে গেছে,,,
।।
রোদ,,এই রোদ??এই পিচ্চি??চ,,চোখ খুলো,,,প্লিজ কথা বলো।।।(কাঁপা গলায়)এই মেয়ে?? (চিৎকার করে)

শুভ্র??ওকে হসপিটালে নিতে হবে উঠা ওকে,,,

বাবা??দ,,,দেখো।কথা বলছে না,,ও কথা বলছে না।।।এমনিতে তো ধমকিয়েও থামাতে পারি না,,,আজ দেখো কথা বলতে বলছি তাও কথা বলছে না।।।বাবা তুমি একটু বলো না,,একটু কথা বলতে বলো,,,,আমি জাস্ট শুনবো।।

শুভ্র,,,পাগলামো করিস না,,,গেট আপ মাই সান।।।ও ঠিক হয়ে যাবে,,,,তাড়াতাড়ি হসপিটালে চল,,,

কি বলছো বাবা??ও ঠিক আছে,,একদম ঠিক আছে,,এই পিচ্চি??এই একটু বলো তুমি ঠিক আছো,,,বাবা,,প্লিজ ওকে বলো না কিছু বলতে প্লিজ বাবা,,, আমি শ্বাস নিতে পারছি না বাবা,,,ওকে উঠতে বলো তো,,,

শুভ্র??গেট আপ ম্যান,,,পাগল হয়ে গেলি,,,???

অভ্র আর শুভ্রর বাবা,,, শুভ্রকে কোনোরকম উঠিয়ে হসপিটাল পর্যন্ত এনেছে কিন্তু বিপত্তি দেখা দিয়েছে অপারেশন থিয়েটারের সামনে,,,শুভ্র কিছুতেই রোদকে অটিতে নিতে দেবে না,,,তার ধারনা ওই রুমে নিয়ে গেলে রোদ আর ফিরবে না,,,ওরা ওকে মেরে ফেলবে,,,তাকে অনেক বুঝিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না,,,তার এক কথা তার রোদ তার সাথেই থাকবে,,,কোথাও যাবে না ব্যস,,,

শুভ্র?কি পাগলামো করছিস??তুই বাচ্চা না,,,ডক্টরদের কাজ করতে দে,,,

না,,কেউ টাচ করবা না ওকে,,,,মা তুমি বুঝতে পারছো না,,,ওরা আমার রোদকে মেরে ফেলবে,,নীলিকেও মেরে ফেলছে,,,,রোদকেও মেরে ফেলবে,,,আমি আমার রোদকে ওদের কাছে দিবো না,,,কিছুতেই না।।।

শুভ্রর বাবা ছেলের পাগলামো হয়তো আর নিতে পারলেন না,,,অনেকক্ষণ থেকেই সহ্য করছেন এসব।।তাইতো শুভ্রর গালে জোড়ে সোড়ে একটা চড় বসিয়ে দিলেন।।।অনেক কষ্টে রোদকে অটিতে ঢুকানো হলো,,বাট শুভ্র কি এতো সহজে মানবে নাকি??কখনো না।।সে অটির দরজায় ক্রমাগত লাথি দিচ্ছে,,,তার উদ্দেশ্য অটির দরজা ভেঙে ফেলা এবং রোদকে উদ্ধার করা।।কেউ ওকে বাঁধা দিচ্ছে না,,,মূলত সবাই এতোই অবাক যে,, কি করবে তাই বুঝতেছে না।।রোদকে নিয়ে চিন্তা বাদ দিয়ে শুভ্রকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছে সবাই।।শুভ্রর মতো ছেলে এমন ধরনের পাগলামু করতে পারে কেউ চিন্তায় করতে পারে নি।।।

শুভ্র??বাবা শান্ত হো,,,ওখানে রোদ ভালো আছে,,

মিথ্যা,,সব মিথ্যা।।নীলির সময়ও তোমরা বলেছিলে নীলি ফিরবে কিন্তু ও ফিরে নি,,,,এবার রোদকেও নিতে চাও তোমরা,,,,দিবো না নিতে,,,আমার রোদের কিছু হলে সব শেষ করে ফেলবো আমি,,,,আই উইল ফিনিশ এব্রিথিং,,,এন্ড আই উইল ডু ইট,,,

শুভ্র??ভাই,, এমন করছিস কেন??স্বাভাবিক হো প্লিজ,,,

হ্যা শুভ্র ভাইয়া প্লিজ বোঝার চেষ্টা করুন,,,,সব ঠিক হয়ে যাবে,,,,(কাঁদতে কাঁদতে)

বউমনি?বউমনি তুমি বাবাকে বলো আমার রোদকে আমায় দিয়ে দিতে,,আমি আর কিচ্ছু করবো না,,,প্রমিজ,,,, প্লিজ বউমনি বলো না,,,ওরা রোদকে মেরে ফেলবে,,,রোদ হয়তো একা ভয় পাচ্ছে,,,

শুভ্র এসব পাগলামো বন্ধ কর,,,আমরা কেউ শত্রু নই তোর,,

মা,,তুমিও??এবারও আমায় একা করে দিবা??এবার আর বাঁচবো না মা,,,প্লিজজ এমনটা করো না তোমরা,,,সত্যি মরে যাবো।।।আমি শুধু রোদকে চাই, প্লিজ দিয়ে দাও।।আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি মা,,,একটু বাঁচতে দাও আমায়,,,প্লিজজ

তখনি ডক্টর বেরিয়ে আসে মুখে মুচকি হাসি,,

এইযে মিষ্টার আপনার রোদ একদম ঠিক আছে,,,একটু পরেই ওকে দেখতে পাবেন,,,,দরজা ভাঙার কোনো দরকার নেই আর,,,,,

ডক্টরের কথায় শুভ্র শান্ত হলো বলে মনে হলো না,,,সে রুমের ভিতর ক্রমাগত উঁকিঝুঁকি দিয়ে চলেছে,,

ডক্টর??আমার মেয়ে ঠিক আছে তো??কোনো ভয় নেই তে??

হ্যা এমনি ঠিক আছে,,,তবু ২৪ ঘন্টার মধ্যে সেন্স ফিরে গেলেই টেনশন ফ্রি হতে পারি,,,নয়তো কোমায় চলে যেতে পারেন।।মাথায় চোটটা একটু গাঢ় নয়তো এব্রিথিং ইজ অলরাইট।।

এই ২৪ ঘন্টা শুভ্র ডক্টর আর নার্সদের জ্বালিয়ে খেয়েছে,,,কেনো রোদ কথা বলছে না??তারা রোদের সাথে কি করেছে??ইনজেকশন কেন দিচ্ছে,,,তার রোদকে কোনো ইনজেকশন দেওয়া যাবে না,,,,,রোদের কাছে কোনো ডক্টর আর নার্স আসতে পারবে না,,,তার রোদের কাছে শুধু সেই থাকবে।।অবশেষে শুভ্রকেই ঘুমের ঔষধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে,,,সে এখন পাশের কেবিনে ঘুমাচ্ছে,,,


শুভ্র যে রোদের জন্য এমন পাগলামো করেছে তা রোদের বিশ্বাসই হচ্ছে না,,,আবার লজ্জাও লাগছে।।।ছি,,সবাই কি ভাবছে,,,

#চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here