তোকে ঘিরে ❤পর্ব_৬২.অংশ – ০২.

0
1534

#তোকে_ঘিরে ❤
#পর্ব_৬২.
#ফাবিয়াহ্_মমো

( অংশ – ০২.)

সাগ্রত আজকের মতো এতোটা অস্থির হয়নি, যতোটা সে জেলের ভেতর পূর্বের অবস্থা শুনে হয়ে গেছে! পায়ে-পায়ে তুমুল দৌড় লাগিয়ে সাগ্রত গাড়ির দরজা খুলে বসে। যত দ্রুত সম্ভব সে জেলখানায় পৌঁছে। সব ফরমালিটিস কমপ্লিট করতে কিছু সময় পেরিয়ে গেলেও তার ভেতর অস্থিরতার রেশ একবিন্দু কমেনি। একটু আগে গোপনসূত্রে খবর পেয়েছে, পূর্বকে রিমান্ড ছাড়াই মারার জন্য জঘন্য পরিকল্পনা করেছে। গতবার পূর্বের যেই অবস্থা দেখেছিলো তার মধ্যে যদি আবার ওকে পিটায় তাহলে কেমন বীভৎস অবস্থা পূর্বের হবে, সেটা ভাবলেই ওর গা শিউরে উঠে! সাগ্রত তার গোয়েন্দা জীবনে শতশত কেস দেদারসে হ্যান্ডেল করলেও এবারের কেস যেনো বুকের মধ্যে ছুড়ি চালিয়ে দিচ্ছে। প্রচণ্ড অস্থির বোধ হচ্ছে, ছটফটানিতে ভেতরের অবস্থা করুন। এদিকে পুলিশ কাহিনী শুরু করলে সাগ্রত ওদের স্টাইলেই দূর্নীতি করে ঘুষ খাইয়ে দেখা করার বন্দোবস্ত করে। অনুমতি পেতেই সাগ্রত দৌড়ে সেলের কাছে পৌঁছে পুরোপুরি থমকে যায়। গ্রীষ্মের খরতপ্ত শুষ্কতার মতো গলা একদম কাঠ-কাঠ হয়ে যায়। শুকনো গলায় ঢোক গিলতেও কষ্ট অনুভূত হচ্ছে ওর। চোখের দৃষ্টি নির্বাক হয়ে বুকের ভেতর তোলপাড় চলছিলো। সাগ্রত নিজেকে ক্ষণিকের মধ্যে সামলে নিয়ে মধ্যবর্তী ব্যবধান কমিয়ে সেলটার কাছে এগিয়ে যায়। লোহার শিকগুলো দুহাতে ধরতেই নোংরা ফ্লোরে ডানকোণায় পরে থাকা মানুষটার উদ্দেশ্যে গলা খাকারি দেয়। ফ্লোরে উপুড় হয়ে পরে থাকা মানুষটা মৃদ্যু ভঙ্গিতে মাথা নাড়িয়ে শব্দউৎসটার দিকে মুখ ফেরানোর চেষ্টা করে। সাগ্রতের অটলদৃষ্টি কেনো জানি ঝাপসা হয়ে আসছে। বহুদিন পর আবারও সেই অদৃশ্য টানটা অনুভূত হলো। এই টানটা যতবার বুকের ভেতর উদ্ভব হয়েছে ততবার চোখদুটো ঝাপসা হয়ে উঠেছে। সাগ্রত তাড়াতাড়ি নিজের চোখদুটো ধূসর জ্যাকেটের হাতায় ডলে নিলো। চোখ ফিরিয়ে আবারও সেই মানুষটার দিকে দৃষ্টি দিতেই শান্ত গলায় বললো,

– পূর্ব সাহেব, আমি এসেছি। আমাকে চিনতে পারছেন না?

শেষ কথাটা উচ্চারণ করতে যেয়ে গলা ধরে এলো ওর। কি বললো? পূর্ব চিনতে পারবেনা কেনো? ওরা কি পূর্বকে মানসিক রোগী বানিয়ে দিয়েছে নাকি? সাগ্রত তাড়াতাড়ি নিজেকে শুধরে নিয়ে কিছু বলবে, ওমনেই পূর্ব ব্যথাতুর কন্ঠে আধো আধো গলায় বললো,

– তাশরীফ সাগ্রত..

পূর্বের ওইটুকু উত্তর শুনে সাগ্রতের বুক থেকে যেন পাথর নেমে গেলো। সে স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে ফেললো।। চোখ আবার ঝাপসা হতে চাইছে। নিজেকে সামালানো উচিত। পূর্বের উপর আবারও কয়েক ঘন্টার নৃশংস অত্যাচার চলেছে দেখে তার মন কোনোভাবেই কঠোর থাকতে পারছেনা। মোটা রোলারের তরতাজা আঘাত স্পষ্ট চোখে দেখা যাচ্ছে তার। পূর্ব ধীরে ধীরে শরীরের সমস্ত ব্যথা সহ্য করে দেয়াল ধরে উঠে বসে। মাথায় একহাত রেখে কয়েক মিনিট চোখ বন্ধ করে থাকলে ধীরে ধীরে শিকের কাছে চলে আসে। পিপাসায় গলা শুকিয়ে আছে কাল রাত থেকে। জেল কর্তৃপক্ষ একফোঁটা পানি দেয়নি পূর্বকে। সাগ্রত এখনো চোখ নিচু করে শিক আঁকড়ে দাড়িয়ে থাকলে পূর্ব অনেক সময় নিয়ে দেয়াল ছুঁয়ে ছুঁয়ে শিক ধরে সাগ্রতের সামনে বসা থেকে উঠে দাড়ায়। শরীর ভেঙ্গেচুড়ে আসতে চাইছে। কিন্তু পূর্ব যেনো সব সহ্য করে একটা মুখোশ পরে সাগ্রতকে ফেস করার সংকল্প করেছে। পূর্বকে সামনে দেখে চকিত দৃষ্টি ছুড়ে সাগ্রত কিছু বলবে তার আগেই পূর্ব ক্লান্ত রুগ্ন স্বরে বলে,

– ও কেমন আছে?

গলা আটকে আসছিলো সাগ্রতের। উত্তর দেওয়ার মতো শক্তি ওর মাঝে দেখা দিচ্ছিলো না। নিজের মুখ থেকে গলগল করে তরল রক্ত বেরুচ্ছে অথচ সে সবার আগে পূর্ণতার খবর জিজ্ঞেস করছে। সাগ্রত অশ্রু চোখে ওর কপালের দিকটায় তাকালো। ডানপাশটা কেটে চোট শুকিয়ে কানের পাশ দিয়ে কালচে রক্ত শুকিয়ে আছে। সাগ্রতকে ওমন ভঙ্গিতে দেখে পূর্ব রক্তাক্ত চোয়াল ঝুলিয়ে আহত চাহনিতে আবার প্রশ্ন করে,

– পূর্ণতা কেমন আছে?

এটুকু প্রশ্ন করতেই যেনো পূর্বের জান বেরিয়ে যাচ্ছে। লম্বা টানে শ্বাস নিতে হচ্ছে। হাঁশফাশ করছে প্রচুর। সাগ্রত নিরব দৃষ্টিতে তাকিতে থাকতেই বুড়ো আঙ্গুলের ডগায় নিজের চোখের কোণাটা মুছে। প্রসন্ন কন্ঠে বলে উঠে,

– আপনার পূর্ণতা আর সন্তান দুজনই ভালো আছে। কিন্তু আপনার এই অবস্থা দেখলে ওই মেয়েটা পাগল হয়ে যাবে।

সাগ্রতের কথা শুনে ভারাক্রান্ত দৃষ্টিতে হাসলো পূর্ব। থরথর করে কাঁপতে থাকা রক্তাক্ত চোয়াল যেনো ঢোক গিলার জন্য একটু থামলো। এরপর শিকের হাতটা আলগা করে কাপুনি অবস্থায় ধীরগতিতে সেটা সাগ্রতের হাতের উপর রাখলো। শুষ্ক গলায় পূর্ব বললো,

– ওর জন্য সবুজ, কৈলেশ নামের দুজন ছেলেকে নিযুক্ত রেখেছি। তবুও টেনশনে থাকি। জেলের এরা ভালো না। একদম ভালো না। টাকার জোর আর ক্ষমতার অপব্যবহারে সব করতে পারে। পূর্ণতাকে এখানে আসতে না করবেন।

সাগ্রত চট করে কিছু বলতে যেয়ে বুকে ধাক্কা খায়। পূর্বের দিকে আপাদমস্তক তাকিয়ে এরপর চোখ নিচু করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। পূর্ব কাদের নিয়ে পূর্ণতার জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে? কৈলেশ, সবুজ যে গ্রেফতারের দ্বিতীয়দিন থেকেই গুম সেটা তো পূর্ব জানেনা। আর কতো আঘাত খাবে? তবুও মিথ্যার অন্ধকারে না রেখে সাগ্রত পূর্বকে সত্যি কথা বললো,

– আপনার পূর্ণতাকে সিকিউরিটি দেওয়ার মতো কেউ নেই পূর্ব সাহেব। আপনি যাদের উপর এতো বড় দায়িত্বটা দিয়েছেন তারাও আপনার ক্ষতি করে গুম হয়ে গেছে।

কথাটা শুনে স্তব্ধ দৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে পূর্ব। শরীরের উপর দিয়ে যেনো শীতল হাওয়া বয়ে গেলো। মাথার ভেতরে রিনরিন করে উঠলো। এতোক্ষন নিজের শারীরিক ব্যথা হজম করে থাকলেও হঠাৎ যেনো মানসিক ব্যথাটা পুরো শরীরটা কাবু করে ফেললো। পূর্ব চুপচাপ কিছুক্ষণ ওই ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকলে সাগ্রত নিবরতার জালে ছিদ্র করে বলে,

– আপনাকে এখান থেকে বের হতে হবে পূর্ব সাহেব। এমন দূর্নীতিপূর্ণ দেশ আপনাকে মারলে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। আমি আপনাকে শাস্তি পেতে দিবো না। আশা রাখুন। দিন হয়তো খারাপ কিন্তু আজ নয়তো কাল আপনার ভালো দিন আসবেই। আপনি যেই মানুষগুলোর জন্য চিন্তা করেছেন তারা এগিয়ে আসবেই। আপনি ভেঙ্গে পরবেন না পূর্ব সাহেব। আপনার স্ত্রীর কমরেড ডাকটা শোনার জন্য হলেও আপনার জীবিত থাকতে হবে। আপনি দয়াকরে আমাকে বলুন আপনার সাথে কার বেশি শত্রুতা আছে? কারা আপনার ক্ষতি করতে উন্মূখ হয়ে আছে? সব বলুন পূর্ব সাহেব। আর ভেতরে কথা লুকিয়ে রাখবেন না। আপনি একটা কথা গোপন করলে মনে রাখবেন আপনি বাঁচার সুযোগ থেকে পিছিয়ে যাবেন।

কন্ঠ আটকে আসছিলো সাগ্রতের। বারবার চোখের সামনে পূর্ণতার কান্নারত নিশ্চুপ চেহারাটা ভাসছিলো। সেই মেয়েটা যদি এই মূহুর্তে পূর্বের এই অবস্থা দেখতো তাহলে কি হতো? সাগ্রত নিজের পকেট থেকে তাড়াতাড়ি একটা রুমাল বের করে শিক গলে পূর্বের সামনে বারিয়ে ধরলো। মাথা নিচু করে থাকা পূর্ব, ধীরে ধীরে থরথর করে কাঁপা হাতটা দিয়ে রুমালটা হাতে নিলো। মুখের রক্ত ধীরগতিতে পরিস্কার করতেই পূর্ব বললো,

– আপনাকে আজ একটা সত্যি বলি সাগ্রত সাহেব, শুনুন। আমার জীবনে ধাক্কা খেতে খেতে বড় হয়েছি। আমার আব্বু মানুষটা খুব সরল সহজ বলে কখনো চাচাদের কুমন্ত্রণা বুঝতে পারতো না। কিন্তু যখন বুঝতো তাদের ছাড় দিতো না। আমি কখনো বিলাসিতা ছাড়া বড় হইনি, কিন্তু নিজের বিলাসিতা কখনো বাইরে প্রকাশ করিনি। গরীব মানুষগুলোকে দেখলে আমার খুব কষ্ট লাগতো। ওরাও তো মানুষ তবুও ওরা ঠিক করে খেতে পযর্ন্ত পায়না। ওদের কঠোর পরিশ্রমে আজ ধণীরা এসির নিচে আরামে কাজ করছে। কিন্তু ওরা তিনবেলা ভাতটাও ঠিকমতো জুটাতে পারেনা। কেন এই বৈষম্য ভাই? আমি এই বৈষম্যের থিওরি বুঝতে গিয়ে কার্ল মার্কস, মাও সে তুং এনাদের মতো ব্যক্তির ব্যাপার বুঝলাম। এই মানুষগুলো পুরো সমাজের ভেতর থেকে সেই বৈষম্যের রেখাটা মুছে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মানুষের মানসিকতার জন্য সেটা সম্ভব হয়নি। আমি বামপন্থী দলে যোগদান করলাম। সেখানকার মুখ্য নেতার সঙ্গেও দেখা করার সুযোগ পেলাম, উনি ভালো মানুষ ছিলেন। কিন্তু জেলার যে কেন্দ্রীয় বামপন্থী নেতাটা ছিলো সে ভালো চিলো না। সবাই চ্যাটার্জী বলেই চিনে। আমি তখন ভার্সিটিতে পড়তাম। কিছুদিন কমিউনিজম করেছিলাম কিন্তু উনার সাথে সংঘাত লাগার পর আমি দল ছেড়ে কিছুদিন আলাদা ভাবে থেকেছি। এরপর আমার কাছে একদিন ডানপন্থী দল থেকে যোগ দেওয়ার জন্য একটা সুযোগ এলো। তাদের কাজ ও আর্দশ নিয়ে আমার মূল আর্কষন ছিলো শুধু তৎকালীন নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান, মাওলানা ভাসানী, তাজউদ্দীন আহমেদ, নুরুল ইসলাম, মহিউদ্দিন এনাদের মতো আরো বহু মানুষের আত্মত্যাগের জন্য। আমি ততদিনে এটা বুঝে গিয়েছিলাম প্রতিটি দলেই কিছু না কিছু নিচুস্তরের মানুষ থাকে, যারা দূর্নীতি করে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে, জনগণের ক্ষতি করে।এদের মতো গুটি কয়েক মানুষের জন্য সব দলকে খারাপ চোখে দেখে জনগণ। ডানপন্থী দলে খুব শ্রম দিয়ে কাজ করলাম, মানুষের জন্য নিঃস্বার্থে কাজ করলাম। মানুষের কাছে আপনও হয়ে গেলাম, আর ঠিক তখনই দল থেকে ঘোষণা এলো আগামী ইলেকশনে আমার দাড়ানোর মতো একটা সুবর্ণ সুযোগ আছে। আমি জেলা ভিত্তিক সব মানুষের হয়ে তাদের দূরবস্থার কথা সংসদে উত্থাপন করতে চেয়েছিলাম। সংবিধান মতে, পচিঁশ বছরের উর্ধ্ব হলেই একজন পুরুষ এমপি নির্বাচনে দাড়াতে পারবে। সব জানা সত্ত্বেও আরো পাঁচ বচর সময় নিয়ে নিজেকে যোগ্য করে তারপর নির্বাচনে আসলাম। বড় ধাক্কাটা সেদিন খেলাম, যেদিন একই টেবিলে বসে থাকা কিছু অন্য জেলার সংসদ সদস্য তাদের মিত্র মানুষ ইমতিয়াজ উদ্দীনের জন্য আমাকে অনুরোধ করলো টিকিটটা ছেড়ে দিতে। আমি কোনোভাবেই সেটাতে রাজি হইনি। ওই ইমতিয়াজ লোকটা খুবই জঘন্য মানসিকতার মানুষ। পূর্ণতাকে ক্ষতি করার জন্যও মাঝেমাঝে আমাকে হুমকি দিতো। একদিন উনার নির্দেশে আমার পায়ের উপর দিয়ে টায়ার উঠে যায়। আমি ক’মাস প্রচুর ভুগেছি। তবুও টিকিট ছাড়িনি। এরপর প্রচারণার কাজে যখন নামলাম তখনও তিনি নানাভাবে আমাকে হুমকি দিতো। আমার ভয়টা কখনো নিজের মৃত্যু নিয়ে ছিলো না। যারা রাজনীতি করে তাদের মৃত্যুভয় থাকেনা। কিন্তু আমার দূর্বল দিক শুধু পূর্ণতা ছিলো। ওর জন্য আমি ভয়ে থাকতাম। যেই আমি একসময় ছুড়ি চালাতেও দ্বিধা করিনি, সেই আমি কিনা এক বদ লোকের জন্য ভয় পেতাম। আমার পূর্ণতা দুঃখ ছাড়া কিছুই পায়নি সাগ্রত সাহেব। ও তো জানতো না আমাকে ভালোবাসার পরিণাম এতো ভয়াবহ হবে। আমাকে সাধারণ ক্যাটাগরির মানুষ ভেবে ও ঠিকই আমার প্রতি দূর্বল ছিলো, কিন্তু যখন দেখেছে আমি ভিন্ন টাইপের মানুষ, এরপর থেকে ও শক্ত হওয়ার চেষ্টা করেছে। আমি জানিনা আমি সামনে বাঁচবো কিনা। ওরা রিমান্ডের ভেতর অনেক চেষ্টা করেছে আমার মুখ দিয়ে স্বীকার করাতে, ওই ফেনসিডিল, ওয়াকিটকি, বিদেশী অস্ত্র আমার। কিন্তু আমি স্বীকার করিনি বলে এখনো মারছে। সাগ্রত সাহেব, মৃত্যুর আগ মূহুর্ত পযর্ন্ত পূর্ণতার কথা চিন্তা করে অস্থির থাকবো। তাই আপনার কাছে আমি হাতজোড় করছি, ওর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করুন। অন্তত মৃত্যুটা যেনো আমার জন্য কষ্টসাধ্য না হয়। আমি এই অবস্থায় ওকে দেখে রাখতে পারছিনা। ও কষ্ট পাচ্ছে। আমার অনাগত সন্তানটার কাছে সময় দেওয়ার সুযোগ নেই। আমি নিরুপায় হয়ে আছি..

রুদ্ধ কন্ঠের সাথে চোখ ছাপিয়ে পানি পরছিলো রাশভারী উপাধী পাওয়া পূর্বের। কোনো রাশভারী মানুষ এভাবে কেদেঁ দিতে পারেন জানা ছিলোনা সাগ্রতের। তার সামনে পূর্বের শোচনীয় অবস্থা দেখার মতো আর সার্মথ্য ছিলো না। পূর্বকে বিদায় দিয়ে যখন চলে আসবে তখন পূর্ব ওর হাতে একটা চিঠি তুলে দেয়। সাদা খামটার এককোণা জুড়ে লাল রক্তের প্রলেপ শুকিয়ে ছিলো। রক্তটা কিসের ছিলো সেটা আর জিজ্ঞেস করার হিম্মত করলো না সে। চুপচাপ বিদায় দিয়ে জেলের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে। দুপুরের সূর্যটা তেজহীন হয়ে মেঘের আড়ালে গা ঢাকা দিয়েছে। সাগ্রত সেটা আকাশে তাকিয়ে অদ্ভুত উত্তেজনায় দেখছে। পকেটের ভেতর পূর্বের দেয়া চিঠিটা রাখা, যেটা সে হাত ঢুকিয়ে ধরে আছে শক্তভাবে। মনে মনে সাগ্রত উচ্চারণ করছিলো শুধু, গায়ের সব রক্ত তোরা শুষে নিলেও ওই মানুষটার মুক্তি চাই! নিরাপরাধ মানুষকে শাস্তি দিলে এই দেশকে ধিক্কার জানাই!

.

দুটো দিন ধরে আয়মানের শরীর অসুখে ফেঁসেছে। শীতের কারনে ঋতু পরিবর্তনজনিত ঠান্ডায় ভুগছে। আফিয়া সকাল-বিকাল ছেলেকে গরম পানি, বিভিন্ন পদের চা ও তুলসী পাতার সরষে তেল খাওয়াচ্ছে। কিন্তু ফলপ্রসু কিছুতেই মেলছেনা। আয়মানের জন্য জটিল সমস্যা হলো ঠান্ডা লাগলে সেটা সহজে সারেনা। এর মধ্যে সাবিহা এক সপ্তাহ হলো শিকদার বাড়িতে নেই। গ্রামের বাড়িতে অসুস্থ বাবাকে দেখতে কিছুদিনের জন্য ওখানে থাকতে গিয়েছে। ফোনের মাধ্যমে আফিয়ার কাছ থেকে আয়মানের অসুস্থতার খবর শুনলে সাবিহা তৎক্ষণাৎ আসার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। কিন্তু আফিয়া বাধা দিয়ে বলে কিছুদিন বাবার দিকে খেয়াল রাখতে, এখানে আয়মানের সাথে উনি আছেন। সাবিহা এ উত্তর শুনে মিইয়ে গেলেও ভেতরে প্রচণ্ড উৎকন্ঠা অনুভব করে। ইচ্ছাকৃত বা অজান্তেই হোক সাবিহা আয়মানের প্রতি একটু একটু করেই দূর্বলতা অনুভব করে। অসুস্থতার খবর শুনে দ্রুত চলে আসার পরিকল্পনা স্থির করে ফেলে।

ডিজিটাল ঘড়িতে বড় বড় ডিজিটে রাত তখন নয়টা বিয়াল্লিশ বাজে। আয়মান গায়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে গলা পযর্ন্ত ঢেকে শুয়ে আছে। এখন ঠান্ডা বলতে কাশতে কাশতে গলা ব্যথা ও বুক ব্যথা এবং দুই কান বন্ধ হয়ে গেছে। রাতের খাবারটা আফিয়া জোর করে খাওয়ানোর পর আর ঘুম আসেনি চোখে। অদ্ভুত ধরনের ছটফটানি অনুভূত হয় মনে। ঘুম থেকে উঠলেই একটা পরিচিত মুখ দেখার জন্য তীব্র আশায় থাকে। আয়মান নিজের অপরিচিত অনুভূতি নিয়ে এখনো শঙ্কায় আছে। আদৌ কি সে শ্রেয়ার পর অন্য কাউকে জায়গা দিতে চাচ্ছে? আয়মান চোখ বন্ধ করে হাতদুটো কম্বলের ভেতর ঢুকিয়ে নেয়। টিক-টিক-টিক করে সময় আরো কয়েক ঘন্টা পেরুতেই আয়মানের চোখে যখন নিদ্রার আভাস আসছিলো ঠিক তখনই যেনো অকল্পনীয় দৃশ্যপট দেখে সে থমকে যায়! রুমের ভেজানো দরজা ক্যাচ করে খুলে সাবিহা ঢুকে। পড়নে তার গাঢ় নীলের শাড়ি, কালো মোটা পার। ডানপাশে একটা সাইড বেনী করে রেখেছে, কিছু চুল কানের দুইপাশে লম্বা হয়ে ঝুলছে। আয়মান বিছানায় শোয়া অবস্থায় চমকানো দৃষ্টিতে বলে উঠে,

– সাবিহা, তুমি কখন এলে?

সাবিহা চুপচাপ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে দরজা চাপিয়ে আয়মানের কাছে এসে বসে। আয়মানের চোখ জুড়ে সাবিহার মুখ আটকে আছে। সাবিহা আচঁলের নিচ থেকে নরমাল হটব্যাগ বের করে আয়মানের উপর থেকে কম্বল সরিয়ে বুকের উপর রেখে দেয়। আয়মান বিষ্ময়সূচক দৃষ্টিতে বালিশ থেকে মাথা উচু করে বসতে নিলে সাবিহা ওকে বাধা দিয়ে শুয়ে থাকতে বলে। নির্লিপ্ত কন্ঠে বলে,

– একটা সপ্তাহ দূরে ছিলাম আপনি একটা কল পযর্ন্ত করেননি। এ বাড়ির চাকরও আমার তুলনায় আপনার কাছে বেশি মূল্য পায়। অথচ আমি মানবতার খাতিরেও কোনো মূল্য পাইনি।

আয়মান ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলে কিছুক্ষণ পর উত্তরের পাল্লা খুলে,

– আমি যে অসুস্থ সেইটা চোখে পরেনা?

সাবিহা একই ভঙ্গিতে কঠোর গলায় জবাব দিলো,
– আপনি অসুস্থ ছিলেন, সেন্সলেস না। চাইলে ঠিকই একটাবার কল দিয়ে আমার আব্বার কথা জিজ্ঞেস করতে পারতেন। আপনি আমাকে কল দেওয়া তো দূর, মাকেও নাকি বলেছেন আমার বিষয়ে আপনার কাছে কথা না উঠাতে। কেন করেছেন এই কাজ? আপনি কি চান ডিভোর্সের তকমা লাগিয়ে আমি চলে যাই? আপনি সত্যি কথাই বলুন, আপনি কি আমাকে সহ্য করতে পারছেন না? আমি কি আজীবনের জন্য চলে যাবো?

আয়মান নিরুদ্যম ভঙ্গিতে কিছুক্ষণ চুপ মেরে রইলো। সাবিহার অভিমানী মুখটা দেখতে কেনো যেনো ভালো লাগছিলো। ওর মুখের অবস্থা এমন হয়ে দাড়ালো যে, কেদেঁ দিবে-দিবে অবস্থা। কিন্তু আয়মানের খামোশ ভঙ্গিটা দেখে তীব্র ক্ষোভ ও প্রচণ্ড রাগে চোয়াল কাঁপাচ্ছিলো সাবিহা। আর সহ্য করতে পারলো না সাবিহা। হঠাৎ ঠোঁট শক্ত করে কান্না আটকাতে গিয়ে তুমুল অশ্রুধারায় গাল ভিজিয়ে ফেললো। মনের সকল দুঃখগুলো চোখের পানিতে সিক্ত হয়ে প্রকাশ করলো। অসহ্য যন্ত্রণায় সাবিহার ইচ্ছে করছিলো জীবনের গতিপথ থামিয়ে দিয়ে শ্রেয়ার মতোই অভিশপ্ত পথ বেছে নিতে। খারাপ সময়ে কেউ যখন পাশে এসে দাড়ায় না, একা ছেড়ে চলে যায়, তখন নিজের নিশ্বাসটাও যন্ত্রণার মতো লাগে। মাথা নিচু করে কান্নারত সাবিহার দৃশ্যটা দেখে আয়মান মৃদ্যু ভঙ্গিতে হেসে বুকের উপর থেকে হটব্যাকটা সরিয়ে রাখে। দোটানা চিন্তায় বেকায়দা হলেও সাবিহাকে কি কাছে টানবে? নাকি দূরে ঠেলবে এমন চিন্তাভাবনায় যখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হওয়া প্রয়োজন, ঠিক সেসময় একটা অভাবনীয় কাজ করে ফেললো আয়মান। সে সাবিহার হাত ধরে কাছে টেনে দুই হাতে পিঠ আকড়ে জাপটে ধরলো বুকের সাথে। শুয়ে থাকা আয়মানের প্রশ্বস্ত দেহের উপর জীবনে এই প্রথম জায়গা পায়। অত্যন্ত কাঙালের মতো সে তার কাঙ্ক্ষিত মানুষের কালো টিশার্ট মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে রাখে। আয়মানের অশান্ত মন তখন প্রশান্তমনায় স্বস্তি পেয়ে মূহুর্ত্তের মধ্যে ভিন্ন দুনিয়ায় হারিয়ে যায়। মনের মধ্যে কোণঠাসা করে রাখা সুক্ষ অনুভূতিগুলো আচমকা উজাড় করে দেয়। দিনের পর দিন যাকে নিয়ে আয়মান অবসাদগ্রস্ত জীবনের দিকে ঝুকেছিলো তারই স্মৃতি আকড়ে সে সাবিহাকে মনের অন্য আসনে জায়গা দিলো।নিঃশব্দ রুমের ভেতর একজনের কান্নাসুর শোনা গেলেও অপরজনের নিশ্বাসের বেগ শোনা যাচ্ছিলো তখন। আয়মান অনেকক্ষন সাবিহাকে ওভাবে জাপটে ধরে অভিমানভরা অনুভূতিগুলো মুছে দিতে থাকে। সাবিহার মনে হচ্ছিলো বহুদিন পর সে শান্তিপূর্ণ আবাসগৃহে ফিরে এসেছে। আয়মান শান্ত সুরে নিচু কন্ঠে বলে উঠে,

– সাবিহা, আমি কারো প্রতি অন্যায় করার মনোভাব রাখিনা। জীবনে একটাই ভুল করেছি, শ্রেয়ার ক্ষমাটা ঠিক সময়ে করিনি। সেই ভুলটা আমার জীবনে কতখানি ক্ষত করে গেছে সেটা তুমি, মা, বাবা, পূর্ণতা, পূর্ব ভাই সবাই দেখেছো। আমি নিজের আচার আচরণ পরিবর্তন করতে পারিনা, আবার পরিবর্তন করতে টাইমও নেই না। কিন্তু তোমাকে মিথ্যা আশ্বাস দিবো না সাবিহা। আমি শ্রেয়াকে কোনোদিনও ভুলতে পারবো না। না আমি ওকে ভুলার কখনো চেষ্টা করবো। হ্যাঁ ঘটনাটা তোমার কাছে নাটক সিনেমার গল্প লাগতে পারে। আমি চাইলে চিরকুমার হয়েও থাকতে পারতাম। কিন্তু সাবিহা, এটা হচ্ছে বাস্তব জীবন। এখানে কেউ কারো জন্য থেমে থাকতে পারেনা। প্রয়োজনের জন্য সবাইকেই একদিন অতীত ফেলে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়া লাগে। আমি শ্রেয়াকে এখনো ভালোবাসি, খুব ভালোবাসি, ও সামনে থাকলে হয়তো ভালোবাসাটা একটু হলেও প্রকাশ করতাম কিন্তু আজ যেহেতু ও নেই, কাজেই প্রকাশ করার মানে হয়না। সাবিহা, আজ যদি শ্রেয়া আমার জায়গায় হতো, ও আরো আগে বিয়েশাদি করে সংসার শুরু করতো। কিন্তু আমি ছেলে বলে এতোদিন পিছিয়ে থাকতে পেরেছি। আমাকে ভুল বুঝো না সাবিহা। আমার জীবনে অনুভূতি নামক কিছুই নেই। হয়তো এখন যা অবশিষ্ট আছে, তাও খুব তলানি পরিমাণে আছে। মনের দিক থেকে একটা মানুষকে কখনোই ভুলা সম্ভব না। আমি ওকে ভুলতে পারবো না। তুমি কি এই দ্বৈত অনুভূতির ‘আমি’টাকে মেনে নিবে?

আয়মান তার দীর্ঘ বার্তা শেষ করে উত্তরের জন্য সাবিহার কাছ থেকে অপেক্ষা করতে থাকে। সাবিহা ক্ষণকাল চুপ থেকে পরে মাথা ‘হ্যাঁ’ সূচকে নাড়িয়ে অস্ফুট শব্দে বলে,

– হু..

উত্তর শুনেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে হেসে দেয় আয়মান। বাহুবন্ধনীর দৃঢ়তা আরো শক্ত করে আকড়ে রাখে সাবিহার কোমল দেহ। দীর্ঘদিনের ‘অহেতুক’ উপাধি পাওয়া সম্পর্কটা আজ যেনো মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হলো।

.

রাতের স্তব্ধ প্রহরে বিছানায় বসে আছে পূর্ণতা। একটু আগে একগাদা বমি করে তার শরীরটা ক্লান্ত হয়ে পরেছে। আগের তুলনায় এবার একটু বেশি কষ্ট হচ্ছে। পা তুলনামূলক ভারী হয়ে ফুলে উঠেছে, পেটেও মাঝেমাঝে হুটহাট ব্যথা করে উঠে। রাতে একদম ঘুমাতে পারেনা পূর্ণতা। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে থাকতে-থাকতে সময় পেরিয়ে যায় ওর। নিঃসঙ্গ সময়গুলো খুব যন্ত্রণায় কাটছে এখন। পূর্বের কথা চিন্তা করলে চোখ ছাপিয়ে পানি পরে হুটহাট। নিজেকে সামলানো কষ্টসাধ্য হয়ে পরে অনেকটা। আজ কোলের উপর পূর্বের পাঠানো চিঠিটা রাখা। কাগজের ভাঁজ খুলে চিঠিটা পড়ার সাহস হচ্ছেনা পূর্ণতার। বুক চিড়ে বিধ্বস্ত কান্নায় সবকিছু ভেঙ্গে আসতে চাইছে ওর। কতদিন পূর্ণতা ওকে দেখে না। রক্তাক্ত অবস্থায় সেদিন দেখার পর আর দেখা করার সুযোগ মেলেনি। পূর্ণতা শাড়ির আচঁলে চোখ মুছে নাক টেনে চিঠিতে অনেকক্ষন পর হাত দিলো। তিনভাঁজের কাগজটা খুলতেই পূর্বের লেখাগুলো দেখতে পেলো। কিন্তু আবারও সেই যন্ত্রণা এসে হানা দিয়ে পূর্ণতাকে অশ্রুবিদ্ধ করে ফেললো। চিঠিটা দুহাতে ধরে লেখাগুলো পড়তেই চোখ কুঁচকে হু হু করে কেদেঁ উঠলো পূর্ণতা।

পূর্ণ,

তুমি আজ আমার কাছ থেকে খুব দূরে আছো। আমি এক বন্দিখানায় আছি, যেখানে একটু পরপর মৃত্যু এসে ঘুরে যায়। আমি হয়তো তোমার কাছে আর ফিরতে পারবো না। ওরা আমাকে বাঁচিয়ে রাখার ভুল করবেনা। আমি কখনো ভেঙ্গে পরবো এটা ভাবিনী পূর্ণ। কিন্তু সত্যি আজ খুব ভেঙ্গে পরেছি। তোমার জন্য খুব চিন্তা হয় পূর্ণ, আম্মুর জন্য চিন্তা হয়, আব্বুর জন্য চিন্তায় আমি শেষ হই। কোনোকিছু পরোয়া না করে নিজের জীবনটা শেষ করে ফেলেছি। যাদের জন্য আমি সবটা বিলিয়ে দিলাম কেউ আমার জন্য প্রতিবাদ করতে আসেনি। আমার লেখা খুব খারাপ হচ্ছে। বুড়ো আঙ্গুলটার মাথায় চামড়া উঠে গেছে। কলম ঠিকমতো ধরে রাখতে পারছিনা। কিন্তু আজ যদি আমি কিছু না বলি, হয়তো আর কখনো তোমাকে লেখার সুযোগ আল্লাহ্ আমাকে দিবে না। চিঠির উপর কয়েকটা শব্দ পড়তে একটু কষ্ট হবে পূর্ণ। রক্তের কারনে কিছু লাইন ঢেকে গিয়েছে। তোমাকে নিয়ে আমার অনেক কিছুই বলার আছে। তুমি আমাকে সবচেয়ে সুন্দর স্মৃতি উপহার দিয়েছো পূর্ণ। আমার সন্তান, আমার অংশ, আমার চিহ্ন তুমি আবার আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছো। আমাকে ফার্স্ট যেদিন ভিজিট করতে এলে তোমার সাথে দেখা করার সাহস ছিলো না, জানো? তবুও তুমি আমাকে কাছে টেনে চুমু খেতে দ্বিধা করোনি। আমি অবাক হয়েছিলাম, রক্ত মাখা বিশ্রী ঠোঁটে কিভাবে তুমি নিজের সুন্দর ঠোঁট ডুবিয়ে নষ্ট করলে? কিন্তু আমি নিজেকে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় অপদার্থ ভাবি। ওরা আমার সামনে তোমাকে নিয়ে হাসাহাসি করছিলো। আমার উপস্থিতিতে তোমাকে লজ্জা দিচ্ছিলো। আমি খুব কেদেঁছি। এখনো কাঁদছি। যেই হাতটা দিয়ে আমার সন্তানের আগমন স্পর্শ করালে সেই হাতটা ওরা ভেঙ্গে দিয়েছে। আমি একদম নাড়াতে পারিনা। মাথাব্যথায় এখন দিনের পুরোটা সময় কাতরাতে থাকি। ওরা কেউ এসে ডাক্তার ডাকেনা। ইমতিয়াজ নামক লোকটা যে আমাকে জেলের জন্য ফাঁসিয়েছে ও কাল এসেছিলো। আমি যদি ওর পা ধরে ক্ষমা চাই তাহলে নাকি ও আমাকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য সাহায্য করবে। আমি ওর পা ধরতে রাজি হইনি! আমি কোনোদিন মিথ্যাকে সার্পোট করবো না। আমি এ কথাটা তোমাকে জানিয়ে রাখলাম পূর্ণ। কারন, ও-ই আমাকে মূলহোতা হিসেবে ফাঁসিয়েছে। শুধু এটুকু দোয়া করো, আমি যেনো মরে গেলেও ওদের কাছে মাথানত না করি। ওরা আমার শরীরের শেষ রক্ত টেনে নিলেও ওদের মিথ্যাকে আমি মেনে নিবো না। আমি তোমার কাছে ভেঙ্গে পরতে পারি, কিন্তু মিথ্যাবাদীর সামনে কক্ষনো মাথানত করবো না। মৃত্যুর জন্য আমি সদা প্রস্তুত ।

ওয়াসিফ পূর্ব,
( জেলখানা )

-‘ চলবে ‘

#FABIYAH_MOMO

( নোটবার্তা : আগামীকাল আরেক পর্ব আসছে। আর আজকের পর্বের সাথে আসল রাজনৈতিক দিকটা বুঝতে পারবেন আশাকরি। ❤)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here