#তোকে_ঘিরে ❤
#পর্ব_৪৮
#ফাবিয়াহ্_মমো ?
পূর্বদিকের দীপ্তিময় সূর্যটা বেশ তেজী হয়ে উঠেছে আজকাল। অসহ্য গরমে গা জ্বালাময় অবস্থা। আজ পূর্ণতা ঠিক করলো ভার্সিটিতে যাবে একবার। ওয়াসিফ ভিলা ছাড়ার পর যথেষ্ট ব্যস্ত হয়ে পরেছে পূর্ব। ওকে বললে যদিও ভার্সিটি নিয়ে যেতো কিন্তু বাড়ি ঝামেলা না করার জন্য সে আয়মানকে কল দিলো।
– হ্যালো, দোস্ত? তুই ফ্রি আছিস?
– বল।
– একটু ভার্সিটিতে যাবো দোস্ত। তুই একটু এসে নিয়ে যাবি? যদি তোর আপত্তি না থাকে?
– কানে কপালে থাবড়ানো দরকার তোরে! বা* কও তুমি? আপত্তি কোন্ দুঃখে থাকবো? আসতাছি। রেডি থাক।
আয়মানের সুর শুনে আশ্বস্ত ভঙ্গিতে হেসে ফেললো পূর্ণতা। তার বন্ধুটা আবার সুস্থরূপে কথাবার্তা বলছে। শ্রেয়ার অকাল মৃত্যুর পর টানা এক সপ্তাহ নির্বাক ছিলো আয়মান। বোবার মতো চুপচাপ একাকিত্বে মাঝে নিজের চব্বিশটা ঘন্টা কাটাতো। আজ একমাস পর আয়মানের সাথে আগের মতোই সহজ স্বচ্ছলরূপে যোগাযোগ করছে। পূর্ণতার নতুন ঠিকানা সম্বন্ধে নির্দিষ্ট কিছু মানুষ জানে। পূর্বের পরিবার থেকে আপাতত পূর্বিকা ছাড়া আর কেউই জানেনা, এদিকে পূর্ণতার পরিবার থেকে জানে শুধু আয়মান।ঘড়িতে সাড়ে আটটা বাজতেই কানে বাইকের শব্দ এলো। পূর্ণতা চটজলদি দরজা খুলে দেখে আয়মান বাইক থেকে চাবি খুলে পকেটে পুড়ে এদিকে আসছে। গায়ে পর্তুগালের রোনালদোর জার্সি। কালো জিন্স প্যান্ট, হাতে সিলভার ওয়াচ। বাইকের চাবিটা তর্জনীতে ঘুরাতে ঘুরাতে একগাল হেসে ভেতরে ঢুকে বেডে বসলো। দুহাতের তালুতে ভর দিয়ে কিছুটা পিছনে হেলে বললো,
– ভাই কই?
– যেখানে থাকে।
– এমনে বলোস কেন?
– সকাল ছয়টা না বাজতেই ফুরুৎ!
– ঠিকই আছে। এখান থেকে অফিস যাইতে কতক্ষণ লাগে চিন্তা করছোস? ওইটা তো আর করতি না। করবি হইলো ভাইয়ে তোরে মূল্য দেয়না ওইটা ভাইবা। রেডি তুই? চল তাহলে?
– হ্যাঁ চল।
পূর্ণতা ইলেকট্রিসিটির সবকিছু চেক করে বাড়ি লক করে বেরিয়ে পরলো। আজ শাড়ি পরেনি পূর্ণতা। যেহেতু ভার্সিটিতে যাবে তাই নরমাল সালোয়ার-কামিজ পরে, গলায় ওড়না এক প্যাঁচ দিয়ে সামনে ঝুলিয়ে নিয়েছে। চুলটা উঁচুতে ঝুটি করে হাতে লেডিস ওয়াচ পরে বেরিয়ে পরলো আয়মানের সাথে। দুই বন্ধু পুরো রাস্তায় আড্ডার ছলে ছলে পৌঁছে গেলো ভার্সিটিতে। সবাই পূর্ণতাকে দেখে বেশ অবাক! আজ কতোদিন পর পূর্ণতা ভার্সিটি এসেছে, এ নিয়ে পূর্ণতার কিছু ক্লাসমেটও রীতিমতো নানা প্রশ্ন দফায় দফায় করে ফেলেছে। আয়মান ক্লাস এটেন্ড করতে নিজের ডিপার্টমেন্টের দিকে চলে গেলে পূর্ণতাও ক্লাসমেটদের সঙ্গে ক্লাসে এসে বসলো। ভার্সিটির সবাই জানে শ্রেয়া মারা গিয়েছে তাই আগ বারিয়ে যেচে কেউ পূর্ণতার কাছে ওর কথা তোলেনা। ঐশী, মেহতাজের সঙ্গে আপাতত পূর্ণতা বসেছে। টানা তিনটা লেকচার এটেন্ড করতেই বিরক্তিতে যখন গা গুলিয়ে উঠতো তখন শ্রেয়া এসে তাগাদা দিয়ে বলতো, এই পূর্ণতা? বের হস না প্লিজ! আর কতো ক্লাস করবি? তুই তো না পড়লেও পাস! প্লিজ বইন বের হ! আজ এই কথাগুলো ঐশী ও মেহতাজ বলে ফেললো। অনুনয়ের সুরে যখন তোষামোদ করতে লাগলো তখন পূর্ণতা বাধ্য হয়েই ক্যান্টিনে এসে বসলো। ছিমছাম গড়নের পাতলা দেহের ঐশী। শরীরে হাড্ডি ছাড়া একফোঁটা মাংসের অস্তিত্ব আছে কিনা এটা নিয়ে বিরাট সন্দেহ আছে। চুড়ির সাইজ এতোটাই ছোট বাচ্চাদের হাতের সাইজ মিলিয়ে কেনা লাগে। অপরদিকে মেহতাজ এককথায় রূপবতী। ঠোঁটে লিপস্টিক ও চোখে আইলাইনার ছাড়া বেরানোটা যেনো অসম্ভব। পোশাকও সবসময় ওয়েষ্টার্ন ধাঁচের থাকে বিধায় মাঝেমধ্যে দারুণ অস্বস্তিতে ফাঁসে পূর্ণতা। কাধে উপর রঙিন ফিতা দেখানোটাই যেনো ফ্যাশন মেহতাজের। জামা এতোটাই ফিটিং পরে যে পূর্ণতার বেশ লজ্জা লাগে। কোকের বোতলে স্ট্রং ঘুরাতে ঘুরাতে ফোনের দিকে তাকিয়ে ছিলো পূর্ণতা। হঠাৎ মেহতাজ চিকেন শর্মায় এক কামড় দিয়ে চিবুতে চিবুতে বললো,
– বয়ফ্রেন্ড কল দিবে নাকি? ফোনের দিকে কি দেখছিস?
পূর্ণতা স্ট্রং ঘুরানো থামিয়ে মেহতাজের দিকে তাকিয়ে মৃদ্যু হেসে দিলো। হাসি দিয়েই বললো,
– হবু বয়ফ্রেন্ড কল দেয় কিনা সেটাই দেখছিলাম।
মেহতাজ থম মেরে তাকালো পূর্ণতার দিকে। টেবিলে কনুই ঠেকিয়ে দুহাতে শর্মা ধরে এমন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যেনো পৃথিবীতে এমন আশ্চর্যজনক কথা সে আর কখনো শোনেনি। তাড়াহুড়ো করে স্ট্রয়ে ঠোঁট গুঁজে একটান মেরে বললো,
– কি! বয়ফ্রেন্ড আবার হবু হয় নাকি? কি বলছিস তুই?
কথার মাঝপথে ছিদ্র করলো ঐশী,
– ছেলে কি এখনো প্রোপোজ করেনি? আমি তো শুনেছি তোর নাকি চুটিয়ে প্রেম চলছে। তুই নাকি একটা ছেলের প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে একেবারে সাইকো ছিলি! এইটাই কি সে?
পূর্ণতা একই ভঙ্গিতে জবাব দেয়,
– হ্যাঁ। কিন্তু সাইকো শব্দটা ভুল বললি দোস্ত। আমি একটু ডেসপারেট ছিলাম কিন্তু সাইকো না। প্রেমে তো একটু-আধটু হওয়াই লাগে। তাইনা?
মেহতাজ ঠোঁট চোখা করে বললো,
– ওওও… তাই বল। ছেলে কেমন দেখতে? সুন্দর? তুই তো হেব্বি কিউট! তোকে দেখলে আমি নিজেই ক্রাশিত। বিশ্বাস কর, আমি ছেলে হলে তোকে সিরিয়াসলি বউ বানাতাম।
– হায়হায় কি আবোলতাবোল বলছিস! চুপ যা!
– আরে, সিরিয়াস কিন্তু! তুই তো ওয়াইফ মেটেরিয়াল! যে তোকে বিয়ে করবে তার যে কি ভাগ্য!! আমার একটা ভাই থাকলে তোকে অভিয়েসলি ভাবি বানাতাম।
– তাই?
– হাসছিস কেন? আমি কিন্তু ফাজলামি করছি না। আচ্ছা দোস্ত একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
– বল বল। কথা চেপে রাখার স্বভাব অন্তত তোর না।
– আয়মান কিন্তু খুব চেন্জ্ড পূর্ণতা। তোদের মধ্যে কি কিছু নিয়ে তোলপাড় হয়েছিলো? ও না এখন এটিটিউট নিয়ে থাকে। আগের মতো কারোর সাথেই আড্ডা-ফাড্ডা দেয়না। জোর করলে বলে, ‘আমার এসবে টাইম নেই।’।হাও স্ট্রেন্জ! আমি পুরোই টাস্কি!
মেহতাজের সাথে ঐশীও সুর মিলিয়ে বললো,
– কথা সত্যি কিন্তু! আমি ওর সাথে কথা বলতে গেলেই আমাকে চিনেই না এমন ভঙ্গিতে চলে যায়। ও এমন করছে কেনো? আই-ইউ-বি’র প্রতিটা স্টুডেন্টের সাথে ওর যেই খাতির! সেগুলো এখন একদমই নেই।
পূর্ণতা চুপচাপ স্ট্রতে ঠোঁট চেপে দুজনের কথা শুনছিলো। আয়মানের মতো মিশুক ছেলের জীবনে সবচেয়ে সুন্দর মিষ্টি স্মৃতিটা মাটির নিচে চলে গেছে এ ব্যাপারে সবাই জানলেও গভীরতম সত্যটি আসলে কেউই জানেনা। পূর্ণতা কোকের পরিমাণ আধা করতেই স্ট্র ছেড়ে বললো,
– সবচেয়ে কাছের বন্ধুটা চলে গেছে দোস্ত। আমাকে যতোটা হাসিখুশি দেখছিস সবটাই কিন্তু আয়মানের জন্য। আয়মান নিজেকে যেভাবে সামলে নিয়েছে এটাই ওর জন্য পার্ফেক্ট। রাজিবের পর শ্রেয়ার মৃত্যুর জন্য যে আঘাতটা পেয়েছে এতে পরিবর্তন হওয়াটাই স্বাভাবিক।
কথাগুলো শেষ করতেই টেবিলের উপর থেকে পূর্ণতার ফোনটা বাজতে লাগলো। ইংরেজি এ্যালফাবেটে শর্টফর্মে লিখা – ‘C.P.’। ঐশী ও মেহতাজের কৌতুহলী চোখ এখন পূর্ণতার ফোনের দিকে। তারাও শর্টফর্মের নামটা দেখে যথেষ্ট উৎকন্ঠা বোধ করছে পূর্ণরূপটা জানার জন্য। পূর্ণতা ওদের দিকে তাকিয়ে বললো,
– হবু মশাই দিয়েছে। শর্টফর্মটা বলা যাবেনি বুঝলি।। আচ্ছা বস, আমি একটু আসছি।
পূর্ণতা ফোনটা নিয়ে ক্যান্টিনের ডানকোণার দিকে একটা খালি টেবিলের কাছে চলে গেলো। কানে ফোন রেখে চেয়ার টেনে বসতেই এককাপ কোল্ড কফি অর্ডার করলো। ফোনের ওপাশে নিঃশব্দ। একমিনিট চৌত্রিশ সেকেন্ড ওভার হয়ে যাচ্ছে। পূর্ণতা প্রচুর উৎসুক হয়ে আছে কন্ঠটা শোনার জন্য। ঠোঁট কামড়াচ্ছে দাঁতে চেপে। নিরবতা সহ্য করতে না পেরে পূর্ণতাই আগ বারিয়ে বললো,
– কমরেড সাহেব কি চুপ করে থাকার জন্য কল করেছে?
এবার ওপাশ থেকে গম্ভীর সুরটা এলো,
– থাপ্পর মারবো! ওই নাভে ডাকতে বারন করেছি না? আমাকে জানালে কি ভার্সিটিতে রেখে আসতাম না?
পূর্ণতা জোর গলায় কিছু বলবে হঠাৎ ওয়েটার বয় এসে কোল্ড কফি সার্ভ করে গেলো। মগের হ্যান্ডেলে তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুল পেঁচিয়ে কফিতে মৃদ্যু চুমুক দিলো পূর্ণতা। এরপর ঠান্ডা কন্ঠেই বললো,
– তুমি ব্যস্ত ছিলে তাই বলিনি। এজন্য আয়মানের সাথে ভার্সিটিতে এসেছি।
– লেকচার এটেন্ড করে ঠিকঠাক মতো বাসায় যাও। আর ফোনের দিকে তাকিয়ে থেকে সময় নষ্ট করবেনা। আমি আর কল করবো না। একটু ব্যস্ত…
– কেন? এতো ডেমাক কেনো তোমার? আমার খোঁজ নিতে তোমার কষ্ট লাগে? এক কাজ করো না! তোমার দলের যেই হাইপদের নেতারা আছেন তাদের থেকে একজনের মেয়েকে চুজ করে বিয়ে করে ফেলো। ওখানেই সংসার করো। সমস্যা কি? চার বিয়ে যেখানে মওকুফ, সেখানে আরেকটা করলে তোমার তো সময়টা ভালোই কাটবে। ঠিকনা?
– তুমি কি পা পিছলে মাথায় ব্যথা পেয়েছো?
– না তো, পিছলাবো কেন? তুমি তো পারো না ফ্লোরের মধ্যেও ফোম বিছিয়ে দাও। পরে যে একটু ব্যথা পাবো সেটারও তো চান্স নেই।
– ইউ আর বিহেভিং লাইক ইনসেইন, পূর্ণতা!
– বাহ্! আমার নাম উচ্চারণ করে ধণ্য করলেন জাহাপনা!! আপনি তো বাইরে বেরুলে ভুলেই যান আপনি এখন বিবাহিত। আমার যে একটা সুন্দর নাম নাম আছে, পূর্ণতা কবির বলেও ডাকতে পারেন? পারেন না? নিজেকে দিনদিন আর্কষনীয় কোন কারনে বানাচ্ছেন তা তো বুঝতেই পারছি। সমস্যা নেই! আপনি ইচ্ছামতো বিয়ে করুন। কিন্তু হ্যাঁ, করার আগে আমার গ্লাসের পানিতে একটু পটাশিয়াম সায়ানাইড ঢেলে দিয়েন। শান্তিতে যেনো মরতে পারি। আপনি…
পূর্ণতা কথা শেষ না করতেই কানে কট করে কেটে যাওয়ার শব্দ এলো। পূর্ণতা আশ্চর্য হলেও কফিতে চুমুক দিয়ে ঐশীদের টেবিলে ফিরে এলো। ওরা দুজন যার যার প্রেমিক পুরুষের সাথে চ্যাটিং করছে। পূর্ণতাকে আড়নজরে একবার দেখে ঐশী জিজ্ঞেস করলো,
– তুই কি ব্যাটাকে ঝারলি নাকি পূর্ণতা? অতো রাগ নিয়ে যে কথা বললি!!
– আরে না, আমি কি রাগ দেখাব? সে-ই তো রাগ দেখিয়ে ফোন কেটে দিলো।
মেহতাজ হঠাৎ ফোন ঘুরিয়ে ওদের দেখিয়ে বললো,
– দ্যাখ, ছেলেটার নাম হাবিব। দেখতে সুন্দর হলেও ছেলেটা গাজাখোর। এমন কোনো নেশাদ্রব্য নেই যা সে খায়নি। কিন্তু চেহারা দেখলে কেউ বলবে এটা এমন উইড খায়? লিপও দ্যাখ, একদম সাদামাটা। বেনসন টানলেও তো কালো হওয়ার কথা। অথচ ঠোঁটের দিকে তাকালে সবাই ধাপ্পা খাবে! কতো মেয়ের সাথে বেড শেয়ার করেছে এটা মেবি কেউ বলতেও পারবেনা। প্রচুর ধিরিংবাজ ছেলে!
পূর্ণতা ও ঐশী ছবিটা ভালোভাবেই পর্যবেক্ষণ করলো। ‘জাতে ঠিক, তালে মাতাল ‘। মূলত হাবিব ছেলেটা এমনই। হঠাৎ আলোচনার পসরা উঠলে ঐশীও ফোনের গ্যালারি ঘেটে একটা ছবি পেশ করলো। পরিচয় দিলো ছবিটা যার, সে ওর প্রেমিক পুরুষ। মেহতাজ চোখ দুটো বিশাল বড় করে আশ্চর্য হয়ে গেলো। একবার ফোনের দিকে তো আরেকবার ঐশীর দিকে অনবরত তাকাতে লাগলো একই ভঙ্গিতে। পূর্ণতা এতোক্ষন খেয়াল না করলেও হঠাৎ কি যেনো ভেবে খপ করে ফোনটা ধরে ছবির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। ঐশী বিশ্বজয়ীর হাসির মতো হেসে দিয়ে বড়াই করার মতো ভঙ্গিমায় বলতে লাগলো,
– এটা হচ্ছে আমার বয়ফ্রেন্ড। পলিটিক্স করে। আমাকে ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না। একদিন মনেহয় বলেছিলাম আমার বিরিয়ানী খেতে ইচ্ছে করছে। এরপর কি করেছে জানিস? বলতেও লজ্জা করছে। তাও বলি শোন, একগাদা দশটা বিরিয়ানীর প্যাকেট সে এনেছে। আমাকে দেখে কি মনেহয় আমি একটার বেশি খেতে পারবো? পরে কাজের বুয়াদের সবগুলো প্যাকেট বন্টন করে দিয়েছি। আরেকদিন কি করেছে শোন, আমার খুব মুড সুইং চলছিলো। কিচ্ছু ভালো লাগছিলো না। ও না কিভাবে যেনো বুঝতে পেরে আমার জন্য দারোয়ানের কাছে একঝুড়ি চকলেট রেখে গেছে। কি জ্বালা একবার ভাব্?
পূর্ণতা ঠোঁটে চেপে নিজেকে হাসির প্রবণতা থেকে সংযত করছে। টেবিলের নিচে থাকা হাতটা ওড়নায় মুচলেকা করে নিজেকে হাসি থেকে কন্ট্রোল করছে। মায়ের কাছে খালাম্মার গল্প? পূর্ণতার হো হো করে গলা ফাটিয়ে হাসতে ইচ্ছে করছিলো। এই ছবির মালিকের রিয়েল ক্যারেক্টার জানলে ঐশী সাততলা ছাদ থেকে লাফ দিয়ে বলবে,’ নাআআআ…এ হতে পারেনা!!’। পূর্ণতা হাসি চেপে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলে জিজ্ঞেস করলো,
– এই ছেলের নাম ওয়াসিফ পূর্ব না?
– হ্যাঁ হ্যাঁ, সবাই তো একনামেই চিনে।
পূর্ণতা ফিচেল হেসে ওদের থেকে সৌজন্যমূলক বিদায় নিয়ে ভার্সিটির অডিটোরিয়াম রুমে চলে গেলো। যাওয়ার সময় পূর্ণতা বেশ ছোটখাট একটা জটলা দেখলো সেদিকে। ওখানে কিছু মেয়ে হৈচৈ করে ফূর্তিতে যেভাবে লাফায় সেভাবে রিয়েকশন দিচ্ছে। আয়মান সেখানে উপস্থিত থাকলে পূর্ণতা আয়মানকে দেখে হাত নাড়িয়ে ইশারা করতেই চটপট দৌড়ে এসে আয়মানের বিপরীত বেন্ঞ্চে বসে পরলো সে। আয়মান ভাব-গাম্ভীর্য ভঙ্গিতে বেঞ্চের উপর নোট বিছিয়ে আজকের লেকচার টুকে নিচ্ছে। পূর্ণতা ব্যাগটা লো বেন্ঞ্চে রেখে দুটো কোকের বোতলের একটা আয়মানের দিকে বারিয়ে দিলো। আরেকটার মুখ খুলে খেতে লাগলে আয়মান এক নজর পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে তারপর লেখার দিকে উদ্বুদ্ধ হলো। প্রসন্ন গলায় বললো,
– ভাই তোরে খুঁজে।
শুনতে দেরি চকিত ভঙ্গিতে একটু কোক ছিটকে কোলে পরতে দেরিনা। পূর্ণতা হড়হড় করে বলে উঠলো,
– কার ভাই? কোন ভাই? কে আমাকে খুঁজে?
– তোর জামাই। গেটের বাইরে গাড়ি থামায়া রাখছে। মাইয়াগুলার চিল্লাহল্লা দেখেও বুঝোস না?
– আশ্চর্য! উনি কি কোনো সেলিব্রেটি? এভাবে লাফালাফির তো মানে বুঝিনা দোস্ত।
– তোর কপাল ভালো নাকি সেটা আগে গিয়া চেক কর। আমারে হুদাই বকলো তোর কথা শুনায়া। ভালো কথা, তোর ফোন কই? কল দিলে ধরোস না ক্যান?
হঠাৎ কিছু মনে পরার ভঙ্গিতে তাড়াতাড়ি ব্যাগে হাত দিয়ে সাইলেন্ট ফোন অন করে দেখলো আয়মানের কল, সেই সাথে হৃদয় কাঁপানো কয়েকটা মেসেজ। পূর্ণতা ঢোক গিলে আয়মানের দিকে তাকালো,
– দোস্ত আসি? বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে, হ্যাঁ?দোয়া করিস একটু।
– দোয়া চাইলি? যা দোয়া দিলাম তাড়াতাড়ি আমার বউমাকে দুনিয়ায় আন।
পূর্ণতা কপাল কুঁচকে কিছুক্ষণ অবুঝের মতো তাকিয়ে থাকতেই হঠাৎ কথার সমীকরণ মিলিয়ে হতভম্ব কায়দায় বললো,
– তুই ইয়ার্কি করার জায়গা পাস না? আগে তোর ছেলে দুনিয়ায় আন! বদমাইশ! ফাজিল! কি বড় বজ্জাতের বজ্জাত! ছিঃ!
পূর্ণতা হনহন করে চলে গেলে আয়মান ফিক করে হেসে দিতেই আবার উদাস হয়ে গেলো।কলম ধরার হাতটা আর চালাতে পারলো না সাদা অফসেট পেপারে। তাকিয়ে রইলো নোটগুলোর দিকে। এমনই সময় হুট করে ঝড়ের গতিতে কেউ দৌড়ে যেতেই বেন্ঞ্চে ধাক্কা লেগে আয়মানের নোটগুলো নিচে ফেলে দিলো। আয়মান তিরিক্ষি মেজাজে চিল্লিয়ে ‘কোন্ কানার বাচ্চা রে এমন…’ বলতেই হঠাৎ থমকে গেলো। মিষ্টি কন্ঠে একটা মেয়ে কানে হাত দিয়ে ‘সরি সরি’ বলতেই বাক্য পূর্ণ করলো,
– আয়মান ভাইয়া? আমি সত্যি দেখিনি।আপনি তো সিনিয়র, প্লিজ আমাকে মাফ করুন। আই এম সরি ভাইয়া। প্লিজ প্লিজ…
হলুদ স্কার্ট, সাদা ফুলহাতা টপস। গলায় সাদা ওড়না পেচিয়ে বুকের দুপাশে ঝুলিয়ে রাখা। মাথার সিথি মধ্যভাগে তুলে চুল দুখন্ডে সামনে এনে ছেড়ে দেওয়া। তেজালো সূর্যের কিরণ এসে মুখের উপর পরতেই ঝলমল করে উঠছে কেশবহুল। ডানদিকে কাধের উপর বাদামী ফিতার ব্যাগ ঝুলছে। সরু একফালি গোলাপের পাপড়ির মতো ঠোঁটজোড়া, যেখান থেকে অনুশোচনার অনুকম্পন চলছে। চোখের ভেতর আস্তো একরাশ মুগ্ধতা। গালদুটো ফোলা ফোলা। হঠাৎ আয়মানকে আরেকদফায় চমকে দিয়ে অপরিচিত মেয়েটা একটা অভাবনীয় কাজ করে ফেললো! আয়মান হতবাক!
-‘ চলবে ‘
#FABIYAH_MOMO
(নোট : কারো তীব্র ইচ্ছা পূরণ করে দিলাম।)