তোকে ঘিরে♥পর্ব-২১

0
2301

#তোকে_ঘিরে❤
#পর্ব_২১
#ফাবিয়াহ্_মমো?

পান্জাবী টেনে ফর্সা বুকের বাঁ পাশে খানিকটা উন্মুক্ত করে পূর্ব স্নিগ্ধ কোমল কন্ঠে অনুনয়ের সুরে বলে উঠে,

– এদিকটায় পুড়ছে। একটু কাছে এসে ছুঁয়ে দাও না!!

পূর্ণতা পিটপিট করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে পূর্বের বুকে চুমু দিয়ে দেয়। পূর্ব আবেশে চোখ বন্ধ করে পূর্ণতাকে জাপটে ধরে। মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠে,

– পূর্ণ..
– হু,
– আমার একটা শেষ ইচ্ছা আছে, পূরন করবে?
ঝট করে বুক থেকে মাথা তুলে পূর্বের দিকে তাকায় পূর্ণতা।শেষ ইচ্ছা মানে? পূর্ণতা অস্থির হয়ে উঠে পূর্বের আজগুবি কথায়! পূর্বের দুগালে হাত রেখে প্রচণ্ড ছটফট ভঙ্গিতে বলে উঠে,

– কি বলছো? এগুলো বলো না!! ইয়া খোদা!! প্লিজ পূর্ব! আমি মরে যাবো!

পূর্ব মৃদ্যূ হেসে অস্থির পূর্ণতার মাথায় হাত রাখে। অপর হাতে পূর্ণতার গলা জড়িয়ে শান্ত কন্ঠে বলে উঠে,

– তুমি যার প্রেমে পরেছো সে-তো অনিশ্চিত, অনিয়ম, অনিমেষের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে পূর্ণ। আমি নিজেও জানিনা আমার প্রতিপক্ষ দল আজকের জার্নিতে কোনো ট্রেপ রেখেছে কিনা। যদি রাস্তাতে এক্সিডেন্ট করে মরে যাই? তোমার কাছে যদি কোনো কারনে ফিরে না আসি তুমি ঠিক থাকবে? কিন্তু তোমার যে ঠিক থাকতে হবে। তুমি হচ্ছো পূর্ণতা। আমার পূর্ণতা। সে সবসময় তার পূর্বের চিন্তায় বিভোর থাকবে তবে পূর্বের জন্য ঠিক থাকবেনা তা তো হয়না। ইট উইল বি ইনজাস্টিস পূর্ণ! ট্রায় টু আন্ডারস্টেন্ড প্রোপার্লি। আমি যখনি তোমার কাছ থেকে দূরে থাকি ভেবে নিও এটাই আমাদের শেষ দেখা। এতে দুটো প্রফিট আছে। এক. প্রতিটা দিন, প্রতিটা মূহুর্ত, প্রতিটা সেকেন্ড আমরা ‘শেষবার’ স্মরন করে ভালোবাসবো। দুই. তুমি নিজেকে শক্ত এবং হার্সনেস বানাতে প্রিপেয়ার হবে পূর্ণ। আমি চাইনা তুমি অন্য দশটা মেয়ের মতো স্বামীর শোকে শোকে মরিয়া হয়ে যাও। তুমি থাকবে বোল্ড, স্পষ্টভাষী, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তোমায় দেখে মানুষ সিমপ্যাথী দেওয়ার সাহস পাবেনা তুমি আমার জন্য এমন হবে পূর্ণ! আবেগ দুনিয়ার সব মানুষের জন্য না — এই আবেগটা হবে জাস্ট আমার জন্য! আমি এতে ঘেটে ঘেটে অধিকার খাটাবো! সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব আমার থাকবে! অন্য কেউ তোমার আবেগ, বিহ্বল, কান্না, অসহায়ত্ব দেখবেনা। তুমি দেখাবেও না। আমি চাই না তুমি স্বামীকাতর হও। সমরেশ মজুমদারের বিখ্যাত ‘সাতকাহন’ উপন্যাসের একচ্ছত্র ‘দীপাবলি’ হও যে অন্যায়, অবিচার এবং অশোচনীয়তা পছন্দ করেনা। যে নারীর নারীত্বে বলীয়ান। বলো তুমি হতে পারবেনা?

পূর্বের কথাগুলো আগুনের স্ফুলিঙ্গের মতো পূর্ণতার বিবেকের দরজায় ধামধাম করে কড়া নাড়ছে। মেয়েরা মোমের মতো জ্বলন্তকারিণী আবার মোমের মতো কঠিনচিত্ত! পূর্ণতার কোনরূপটা ধারন করা উচিত পূর্বের জন্য? সে কি ধুকে ধুকে কষ্ট নিপীড়নে জ্বলবে? নাকি কঠিনচিত্তে সব সমস্যা মোকাবিলা করে নিজেকে তৈরী করবে? পূর্ণতা চুপ করে তাকিয়ে আছে। পূর্বের গাল থেকে কখন অজান্তে হাত নামিয়ে ফেলেছে জানা নেই। পূর্ব একটু থেমে আবার শুরু করলো নিজের কথা,

– সবসময় মেয়েদের ত্যাগস্বীকার করে চলতে হয় পূর্ণতা। তুমি আমার জন্য নিজের সমস্তকিছু ত্যাগ করবে আমি তা কখনো মানতে পারবো না। আমি চাই তুমি শক্ত হও। পরিস্থিতি বুঝো। নিজেকে জানো। আমাকে ভালোবাসো। কিন্তু সবকিছুর যেমন লিমিট থাকে আমার ক্ষেত্রেও লিমিটেড ব্যাপারটা আনো। আমার জন্য তুমি সাফার করছো ব্যাপারটা আমায় খানখান করে দিচ্ছে পূর্ণ। প্লিজ এই গাট্স থেকে আমায় মুক্তি দাও। আমি এই ব্যাপারটার জন্যই তোমার সামনে এতোদিন আসিনি। ভেবেছি তুমি আমাকে ভুলে যাবে। তুমি ভুলতে পারোনি উল্টো মনের মধ্যে কল্পনার অসুখ বাধিয়ে ফেলেছো। আজ যেহেতু তোমার কাছে আছি অন্ততপক্ষে আমায় আশ্বস্ত করো তোমার কাছে ফিরে এসে আমি কোনো ভুল করিনি।

পূর্ণতা এদফায়ও চুপ করে তাকিয়ে আছে পূর্বের দিকে। সকালের পূর্ব আর এই পূর্বের মধ্যে যেন বিশাল তফাত! আচ্ছা? মেয়েদের বলা হয় পানির মতো। যে পাত্রে রাখবে সে পাত্রের আকার ধারন করবে। তবে ছেলেদের ক্ষেত্রে কি পেয়াঁজের উদাহরণ টানা যায় না? একটা পর একটা খোসা ছাড়িয়ে শেষপর্যন্ত দেখবে কিছুই নেই। পূর্বের এই বহুরূপীর মতো ব্যাপারগুলো মুগ্ধ নয়নে দেখছে।এই মানুষটা সতরন্ঞ্চের মতো রূপ বদলায়। সকালে ছিলো রোমান্টিক এখন হয়ে গেছে উজ্জীবিত নেতা। পূর্ণতা কিছুকালব্যাপী চুপ থেকে পূর্বের গালে পুনরায় হাত রেখে কিছুটা কাছে এসে বলে উঠে,

– আপনি ভুল করেন নি।

অস্ফুটিত কন্ঠে বলে উঠতেই পূর্বের কপালে আলতো স্পর্শ এঁকে দেয় পূর্ণতা। পান্জাবীর বোতাম লাগিয়ে নিঃশব্দে কোল থেকে উঠে দাড়ায়। যাওয়ার পূর্বমূহুর্তে পূর্বের চুলে আঙ্গুল ডুবিয়ে বলে উঠে,

– সময় হয়ে যাচ্ছে, আমি আসি…

পূর্ণতা ম্লান চেহারায় হাসি উপহার দিয়ে দরজা খুলে চলে যায়। পূর্ব মাথা নুয়িয়ে ফ্লোরে তাকিয়ে আছে। বুকে চাপা ব্যথা অনুভূত হচ্ছে। ওর মতো ছেলেকে কোনো আঙ্গিকেই ডিজার্ভ করেনা পূর্ণতা। মেয়েটা দুঃখ পাচ্ছে ওকে ভেবে। পূর্ব হাত এনে বুকের আমি তোমায় শেষ ইচ্ছাটাও বলতে পারলাম না পূর্ণতা। আমায় ক্ষমা করো দিও।

.

পূর্বদিকে উদয় হওয়া তেজস্বী সূর্যটা দারুন দাপট দেখাচ্ছে আজ। তৃষ্ণার্ত পথিকের মতো ছাতি ফেটে যাচ্ছে সবার। পূর্ণতা চলে যাওয়ার ঠিক দশমিনিটের মধ্যে বেরিয়ে পরে পূর্ব। এমনেতেই দেরি হয়ে গেছে পূর্ণতার সঙ্গ পেয়ে। গাড়িতে বসেই ড্রাইভারকে নির্দেশ দিলো জোরে গাড়ি চালাতে। যতদ্রুত সম্ভব তাড়াতাড়ি ওর গুপ্ত আস্তানার জরুরী মিটিংয়ে পৌছতে হবে। দলের কিছু লিডার যারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাজ করছে তারা সবাই একত্র হবে গাজীপুর মিটিংয়ে। পূর্ব যাচ্ছে ঢাকার আন্ডার থেকে। বামপন্থী দল ছাড়ার পর এই নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো যোগদান করছে পূর্ব। সবাই ওকে বেশ সম্মানের চোখে দেখে। কেউ কেউ এতোটা ভালোবাসে যে অন্যরা রীতিমতো হিংসায় জ্বলে। গাড়ি হাইওয়ের সড়ক ধরে চার ঘন্টায় পৌছলো গাজীপুরের চৌরাস্তা। ওখানে আগে থেকেই একটা সাদা প্রাইভেট কার থেমে ছিলো। পূর্ব নিজের গাড়ি ছেড়ে সেই প্রাইভেট কারে উঠতেই গাড়ি চললো ‘কোনাবাড়ি’ জায়গার দিকে। একটা মেটো সড়ক ধরে গাড়িটা ঠিক পনের মিনিট যেয়ে একটা ক্ষেতের কাছে থামতেই ড্রাইভার বললো,

– ক্ষেতের আইল দিয়া সোজা দশ মিনিট হাটলেই তিনটা বাড়ি দেখবেন। তিনটা বাড়ির পরে যেই বাঙলো বাড়িটা দেখবেন লগেলগে ঢুইকা পরবেন। নো এদিক ওদিক। যান এহন।

পূর্ব পান্জাবীর হাতাটা কনুইয়ে ভাজ করতেই ঘড়িতে সময় দেখে নিলো। এরপর হাটাঁ শুরু করলো ক্ষেতের আইল রাস্তা ধরে। চোখের সামনে তিনটা বাড়ি যখন দেখলো তখন ওর খুব আজব লাগলো। একটা মানুষও নেই এইসময়। কি আজব না?? ধু ধু মরুভূমির মতো সুনশান চারপাশ। কেমন নিস্তব্ধ নিরবতা! একটা পাখিও ডাকছেনা। এমন ভীতিকর পরিস্থিতিতে দূর থেকে শুধু কুকুর কান্নার শব্দ ভেসে আসছে। কুকুর বা বিড়াল কান্নার শব্দ অমঙ্গলজনক। তবে কি এটাই আগাম বার্তা দিচ্ছে কিছু অমঙ্গলের দিকে? কুসংস্কারে একচুল বিশ্বাসী না পূর্ব। পুরোদ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে সে গন্তব্যের দিকে।

.

– পূর্ণতা, বিয়েতে কোন্ কালার শাড়ি পরবি? আমি ভেবেছি তুই এবার লেহেঙ্গা পর। সবাই তো লালবধুর মত শাড়ি পরে। এ্যাই পূর্ণতা? কিরে তোর ধ্যান কই?

শ্রেয়ার কথায় ধ্যান ভাঙতেই পাশ থেকে আয়মান ব্যস্ততার সুরে বলে উঠে,

– কানের নিচে হাউমাউ করিস নাতো। টিকিট জায়গা মতো রাখছিস? দেখিস কইলাম..যদি টিকিট হারায়! আমি তোরে লাত্থি দিয়া ট্রেন থিকা ফালামু!
– উফফ! বললাম না টিকিট আন্টির কাছে দিয়েছি। একই কথা কয়বার জিজ্ঞেস করবি?
পূর্ণতা ওদের ঝগড়ার রেশে ছুড়ি চালিয়ে বলে উঠে,
– তোরা যদি এভাবে ঝগড়া করিস! আমি সত্যি সত্যি তোদের ট্রেন থেকে ধাক্কা মেরে ফেলবো! বোঝা গেছে?
– পূর্ণতা তোর কি হয়েছে? একটু আগে কি ভাবছিলি?

– ওয় ওর জামাইর কথা ভাবতাছে তোর সমস্যা কি? এতো চুলকানি কেন ওর ব্যাপারে ঘাটাঘাটি করার? বেলজ্জা ছেড়ি!
– ইবলিশ!
– তোর বাপ ইবলিশ!

– থাম ! হইছে তো ভাই! এইভাবে গায়ে গা লাগিয়ে ঝগড়া করছিস কেন? চুপচাপ বস! রাগ তুলিস না বলছি!
আয়মান লজ্জামিশ্রিত লাজুক হাসি দিয়ে বলে উঠে,
– বইন কি যে কস না শরম করে তো। এই খাচ্চুনির সাথে গায়ে গা লাগাইলে…ছ্যা ছ্যা..ওই দূরে যা। কেমনে তাকায়া আছে দেখ তো! বেলজ্জা!

শ্রেয়া আয়মানের দিকে গাঢ় দৃষ্টিতে কটমট করে কিছু বলবে মায়ের ডাক পেয়ে ওকে যেতে হলো। এদিকে আমি বিয়ের জিনিসপত্র কেনার লিস্ট করছি। আয়মান ছোটখাট ডেকোরেশন করার জন্য অনলাইনে ঢু মারছে। হঠাৎ ও সোফায় বসে আইপ্যাড হাতে বলে উঠলো,

– বইন একটা কথা বলি?
আমি খাতায় দ্রুত কলম চালাতে ব্যস্ত তবুও বলে উঠলাম, ‘হু.. বল’
– দুইদিনের মধ্যে তোর সাথে কথা হইছে?

আমার কলম ঘুরানো থমকে গেলো। দাতঁ চেপে শক্ত হয়ে আছি আমি এখন কাদঁবো না। আয়মান আরেকদফায় বলে উঠলো,

– পূর্বের বাসায় গেছিলাম দোস্ত। ও দুইদিন ধরে বাসায় আসে না।
আমি ঢোক গিলে নিজেকে শান্ত করে পুনরায় কলম চালিয়ে বলে উঠলাম,

– উনি ব্যস্ত আয়মান। কাজের জন্যই বাইরে।
– তোরে তো একটা কল করতে পারতো! করছে?
– করেনি তবে করবেন।
– কবে? বিয়ের ডেটের পর?
– করবে দোস্ত। আমার বিশ্বাস আছে উনার উপর। উনি হয়তো একটু বেশি ব্যস্ত তাই..
– আল্লাহ্ যেন তোর কথাই সত্য করুক। উনার ব্যাপারে একটা তথ্য পাইছি শুনবি? তোর তো শোনা উচিত।
– বলে ফেল।
– দুলাভাই বামপন্থীর দলে কাজ করতো দোস্ত। দলের সাথে প্রচুর ভাব ছিলো। কিন্তু পরে কি জানি হইছে পূর্ব ভাই আর ওই দলে কাজ করেনাই।
– আমাকে এসব গোজামিল কথাবার্তা বলিস না। আমি পলিটিক্স বুঝিনা। এই বামপন্থী কি সেটাও জানিনা।
– বুঝিয়ে বলি শোন…সাম্রাজ্যবাদী এবং সাম্যবাদী এই দুইটি ধারা পৃথিবীতে প্রচলিত। সাম্যবাদীরা মূলত ধনী গরিবের বৈষম্য মিটিয়ে সবাইকে একসমান করতে চায়। মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ ওরা চায়না। পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় সামাজিক প্রভাব বিস্তারকারী লোক ছিলো কার্ল মার্কস। জন্ম জার্মানীতে। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কার্ল মার্কসের নীতি আর্দশে কমিউনিস্টের মূলনীতি চলে। ওরা বিভিন্ন ভাবে ছাত্র সমাজকে বুঝায় এদেশের শাষনব্যবস্থা ভালো না, মানুষের জন্য যুগোপযোগী না, ব্রেনওয়াশ করে ওরা রাজনীতিতে ছাত্রদের ফুসলায়। পূর্ব ভাই ওদের কথায় বেঁকে গেছিলো। ভাই প্রচুর পরিশ্রমী। উনারে যখন যেইখানে যাইতে বলছে উনিও গাধার মতো ওখানে খাটছে। কিন্তু ফলাফল শূন্য! এখন যেই দলে কাজ করতাছে ওই দল ভালো। কিন্তু ওই সাবেক দলের লোকেরা ভালো না বইন। এখনো ঢোল পিটায়া ভাইয়ের ব্যাপারে মিথ্যা বানোয়াট কথা রটায়। রাজিব্বা শালায় ভুল কিছু বলেনাই যা শুনছিলো ওইটাই তোরে হুবহু বলছে। ফ্যাক্ট হইলো শালা একটা ধান্দাবাজ ছিলো। তোরে যে পছন্দের ঠেলায় ওই পদক্ষেপ নিবো ভাবতেও পারিনাই। বইন? দুলাভাইয়ের বাসায় সবাই গ্রামে যাওয়ার প্রস্তুতিপর্ব সারতাছে। ভাইরে নিয়া মাথাব্যথা নাই। আমারে কি বলছে জানোস? পূর্ব ভাই আগে বলে বাসাই ফিরতো না, বাইরে বাইরে দলের কাজে কামলা দিতো। আমার প্রচুর ভয় করতাছে বইন। ভাইয়ের কথা কইতে গেলেই শরীরের লোম দাড়ায়া যায়। দেখ…এখনো দাড়ায়া গেছে।

আর সহ্য করতে পারলাম না মাথা নুয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। দেয়ালে হাত রেখে মাথা নুয়িয়ে আছি আমার শরীর কাপছে। চোখ থেকে পানি পরছে। পূর্বের সাথে কথা হয়নি গত দুদিন। উনি ঠিক আছে কিনা, তাও জানার সৌভাগ্য আমার হয়নি। হাতে কামড় বসিয়ে হু হু করে কেদেঁ যাচ্ছি। কান্নার আওয়াজ যেনো কোনোভাবে বাইরে না যায়। যত চেষ্টাই করছি আমি কাঁদবো না, আমি কাদঁবো না ততোই আমার কান্নার প্রসারতা বাড়ছে। হঠাৎ দরজায় ধাক্কা মেরে মা বলে উঠলো,

– পূর্ণতা বের হ তো একটু…গহনাগুলো দেখে দে। আংটির মাপটা লাগবে সোনারু বসে আছে।

ঢোক গিলে চোখ মুছে বহুকষ্টে স্বাভাবিক গলায় বলে উঠলাম,

– বিছানায় রেখে যাও আসছি…

ট্রেনের টিকিট কাল সন্ধ্যার ব্রহ্মাপুত্র এক্সপ্রেস ট্রেনের। বগি নাম্বার ‘ঙ’ এবং চেয়ার কোচ সিটের টানা ২৫-৩৬ নাম্বার পযর্ন্ত সিট বুক্ড। দশটা টিকিটের সদস্য হিসেবে আমি,বাবা,মা,শ্রেয়া,শ্রেয়ার মা, শ্রেয়ার ছোট ভাই, আয়মান, আয়মানের মা,নূরানী, ওয়াকিল ভাইও উঠেছেন আমাদের সাথে। ব্যাগ-লাগেজ-বস্তা সহ টোটাল আঠারোটা মালপত্র বোঝাই করে আমরা ট্রেনে উঠেছি। আজ মঙ্গলবার, শুক্রবার বিয়ের দিনতারিখ ধার্য করা হয়েছে। গ্রামে ইতিমধ্যে হৈহৈ মিছিলে বিয়ের পসরায় লেগে পড়েছে মামা ও খালামনিরা। শুনেছি আনিশা আপুও হানিমুন কাটিয়ে সুইজারল্যান্ড থেকে দেশে ফিরছেন রাতে। পূর্বের পরিবার নিজেদের তিন চারটা গাড়ি করে চলেছে গিয়েছে গত সোমবার। আমার চেয়ে নানাভাই খুশিতে পাগল…গ্রামের পরিচিত বন্ধুসুলভ মানুষের নাতীর সাথে বিয়ে হচ্ছে উনি পারেননা আটগ্রাম সুদ্ধো দাওয়াত করে ফেলেন।

ট্রেন গফরগাঁও স্টেশন ছেড়েছে কয়েকমিনিট পূর্বে। জানালার কাছে সিটে হেলে ট্রেনের ঝনঝন শব্দের সাথে রাতের প্রকৃতি এবং চন্দ্রপ্রভা উপভোগ করছি। আকাশে খুব সুন্দর একটা চাদঁ উঠেছে। পাশে মাথা হেলিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে শ্রেয়া। আমার হাতে ‘সাতকাহন’ উপন্যাস… দীপাবলিকে একটু পরপর বই খুলে পড়ছি। রোমান্ঞ্চকর পরিবেশ! ট্রেনের ভেতরে লাইটটা কোনো কারনে অফ। শুধু চাঁদের আলোয় আবছা দেখা যাচ্ছে ট্রেনের ভেতর।পূর্ব হলে কি করতেন? উনার কথা ভাবলে চলবে না উনি দুষ্টু একটা মানুষ। এই সুযোগটা কিভাবে ব্যবহার করতেন উনি ভালো জানেনা। হঠাৎ আমার সাইলেন্ট ফোনটা ভাইব্রেটে বাজতে থাকলে আমি ব্যাগ থেকে ফোন নিয়ে রিসিভ করি।

– হ্যালো, কে বলছেন?

– আপনি কে বলছেন? কোথা থেকে বলছেন? কি পরিচয় আপনার? চটপট উগলে দিন তো!

– ‘ চলবে ‘

#FABIYAH_MOMO?

( নোটবার্তা : রিচেক দেইনি সরি। প্রচুর ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছি?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here