তোকে আমার চাই ৯

0
1463

#তোকে আমার চাই
#লেখিনীতে : ইসরাত জাহান তন্নি
#শেষ পর্ব

|

|

|

রৌদ্র দুপুর ঘাম ঘাম ক্লান্ত শরীর নিয়ে উনিশ কি বিষ হবে বয়সের মেয়েটি বড্ড আয়েশ,আলাদ, করে পায়েস,পিঠা চিকেন বিরিয়ানি ইত্যাদি,ইত্যাদি রান্না করছে,চোখে মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে, পড়নে লাল বেনারসি শাড়ী, চুল গুলো বেধে, চোখে গাঢ়,কাজল, ঠোটে ঘোন লাল লিপস্টিক, হাত ভর্তি সোনালী রঙের চুড়ি, উদাসী মনে রান্না বান্নায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, পিছনে থেকে ছাব্বিশ কি আটাশ, বয়স এর ছেলেটি কোমড় জড়িয়ে আছে, মেয়েটি হালকা মৃদু হেসে,’বললো কি হচ্ছে কি ছাড়ো না বাচ্চারা দেখলে কি ভাবে বলো তো,,
মেয়েটির কথায় পাত্তা না দিয়ে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গাঢ়ে হালকা করে চুমু বসিয়ে, বাচ্চা ময় কন্ঠে বললো,’দীর্ঘ পাঁচ বছরে তুমি একটুও পরিবর্তন হও নি, দিন দিন সুন্দরী হচ্ছো আমাকে ইমপ্রেস করার জন্য, জানো তোমায় শুধু ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। খুব আদর করতে ইচ্ছে করে।
মেয়েটি বিরক্ত, হয়ে চেঁচিয়ে বললো, ‘আপনি না জীবনও ভালো হবে না,অসভ্য লোক ছাড়ুন তো বাড়ি ভর্তি লোকজন আর আপনি আসছেন রান্না করে রোমান্স করতে! আপনি যাবে নাকি আমি ফুপিকে ডাকবো।
যা বাবা চলে গেলো রেগে টেগে গেলো নাকি না আজ আর রাগ করে বেশিক্ষণ থাকতে পারবে না, থাকবে না। আজ তো আমার শোভার জন্মদিন,

|

|

সাথী,ইভা,মিথিলা ওদের বিয়ে হয়ে গেছে, মাত্র একবছর হবে। মিথুর বিয়ে হয়ে, যায় যায়,করেও চার বছর পর, হলো। মিথুর বিয়ের দুইমাস পর তার দেবর নাদিমের সাথে ইভা বিয়ে হয়,সাথী বিয়ে করেছে। আজ থেকে আরো দুইবছর আগে বিয়েটা পরিবারের ইচ্ছেতে, বান্ধুবীদের মধ্যে কারোরই বেবি নেই।

আজ থেকে পাঁচ বছর আগে, সেদিনের কথা, আমাকে অপারেশন এর রুমে নেওয়ার পর হাজারো আকুতি মিনুতি করে,ডাক্তার দের বুঝিয়ে সুজিয়ে, নরমাল ডেলিবারি করি। যদিও আমার অনেক রিক্স ছিল। অবশেষে মরে মরেও বেঁচে গেছি,সেদিন ডাক্তারা সহ সবাই অবাক আমার সেদিন মেয়ে হয়,শুভ্রব এর ইচ্ছে টা অবশেষে পূর্ন হয়,খুব ইচ্ছে তার প্রিন্সেস কে নিয়ে হাজারো কল্পনা,জল্পনা,স্বপ্ন, পাঁচ। পাঁচ টা বছর আমরা আমাদের, শোভা আহমেদ তিনা কে নিয়ে খুব ভালো আছি দিনগুলো ভালোই কাটছে, আজ শোভার জন্মদিন।
সাথী,ইভা,মিথিলা,ওরা সবাই আসছে।

“শোভা: চবায় পুতা তেউ ভালু না আমালে ভালুবাতে না, ( চোখে হাত কচলিয়ে কান্না করে )

দরজা সামনে শোভা কান্না করছে পাশ দিয়ে শুভ্রব যাচ্ছিল বাহিরে,


শুভ্রব : কি হয়েছে আমার প্রিন্সেস এর কান্না করছো কেন। তুমি বৃষ্টিতে ভিজেছো। ( শোভার দুহাত ধরে )

শোভা : পাপা তোমলা তেউ আমায় ভালুবাতো না, মাম্মান ও না। ( মন খারাপ।)

শুভ্রব : বাসি তো মা তোমায় আমি এতো খানি ভালোবাসি। চল তোমার মুটকি মায়ের কাছে। ( হাত ধরে টেনে )

শোভা : নু না আমি যাবো না, মাম্মান ভালু না আমায়,ভালুবাতে না। ( জিদ নিয়ে।)


তারপর শুভ্রব শোভাকে এক প্রকার জোড় বসার ঘরে নিয়ে আসে তনু সেখানেই আছে।


শুভ্রব : তনু, তনু, কোথায় তুমি ( চেঁচিয়ে )


তনু : কি হয়েছে কি চেঁচামিছি করছো কেন। ( বিরক্ত নিয়ে )


শুভ্রব : চেঁচাচ্ছি কি আর শাদে তুমি নিজের তো কেয়ার করোই না। আমার মেয়ে টার ও না দেখো ও কি করছে। ( রেগে )


তনু : কি করছে,,,,,এমা আম্মি তোমার এ অবস্থা কেন। ( শোভাকে ধরে বললো )


শোভা : তোমাল সাতে কতা নাই তুমি ভালু না পুতা, মুতকি মাম্মান ( মুখ ভেংছে )


তনু : বাপ বেটি হইছোস তোরা এক রকম খালি আমার পিছনে লাগা, তোর বাপ তোকে শিখাইছে মুটকি বলতি ( কিছুটা রেগে )


শোভা দু পাশে মাথা নাড়ালো যার অর্থ না,

‘তনু : বাপ তো দেখি তোকে মিথ্যে বলাও শিখাইছে, এই যে মটু গটু আপনি ভালো কিছু শিখাইতে পারে না,মেয়েকে সব সময় ভুলভাল কথা শিখায় আজাইরা পাবলিক।


শোভা : পাপা মাম্মান তোমালে মতু গুতু বলেছে তুমি কিছু বলবা না,ইয়ে আমাল মাম্মান মুতকি পাপা মতু গতু,

‘শোভা ছোট বাচ্চা মেয়ে ও আর কি বুঝে হাসতে হাসতে পুরো বাড়ি মাতিয়ে ফেলেছে,আর সবাইকে বলছে মাম্মান মুতকি পাপা মতু গতু, শোভার কথা শুনে সবাই হৈ চৈ করে হেসে দিলো। শুভ্রব তনুর দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,তনু মিটমিটে হাসছে শুভ্রবকে রাগাতে তনুর খুব ভালো লাগে,

তনু শোভাকে ড্রেস চেঞ্জ করে সাথী, ইভা, মিথিলার সাথে গল্প করছে,
শোভা আবারো দরজার সামনে আসতে ও কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায়,


শোভা : উহু,,,,,, মাম্মান আমালে দুষ্তু ছেলে মেরেছে,,,( কান্না করে )

সাইফ : তোমালে আমি কখনো মারলাম তুমি কি শোভা! ( আদো আদো কন্ঠে )


শোভা : তুমি আমালে তাক্কা দিছো,আমালে নাম জানো তুমি, ‘আমালে চিনো।( অবাক।)

সাইফা : হু,,,

‘অনন্য দিকে সিফাতও এসে উপস্থিত এতো ক্ষণে তনু, শুভ্রব এর সাথে সিফাত ও তার বউ পরিচয় হয়ে নিয়েছে। সিফাতের দেখতে কিছু টা তনুর মতো ফর্সা,চেহেরা একদম মায়া, মায়া, তনু তো এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,চোখ জেনো সরাইতে পারছে না,

‘শোভা : মাম্মান ও মাম্মান দুষ্তু ছেলে আমালে মালে, মাম্মান এ মাম্মান।

‘শোভা তনুর হাত নাড়াচ্ছে,আর বলছে কিন্তু তনুর কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না,এখনো তাকিয়ে আছে, শুনেছে মেয়ের নাম নাকি মায়রা রুপের সাথে নামটা একদম মিলেছে,হিহি,,,,,
অবশেষে তনুর সাড়া শব্দ না পেয়ে হাতে আস্তে করে কামড় বসিয়ে দিল শোভা।
প্রচুন্ড ব্যাথা পেয়ে আহ,করে কুকরে উঠলো, তনু পাশেই দাড়িয়ে ছিল, তনু, শুভ্রব তনুর চিৎকার শুনে ছুটে আসে পুরো বাড়ির মেহমান সহ সবাই হত্যাভাগা হয়ে তাকিয়ে আছে।

তনু : শোভা তুমি এটা কি করলে, পাগল হয়ে গেছো নাকি,বেয়াদব মেয়ে,তোমাকে আদরে আদরে বাদর বানিয়েছি,
‘বলে শোভাকে থাপ্পড় মারলো তনু,আসলে শোভার কামড়ে তনুর প্রচুন্ড ব্যাথা পায় কামড় টা বেশ জোড়েই দিয়েছে। শোভা বাচ্চা মেয়ে টা অসহায় হয়ে তাকিয়ে আছে বাবা মায়ের দিকে, কখনো কখনো ঘুমড়ে কেঁদে উঠে,


শুভ্রব : তনু তুমি কি পাগল টাগল হলে নাকি ওকে মারছো কেন বাচ্চা একটা মেয়ে,ও না হয়,ভুল করে ফেলেছে,তোমার আমার মেয়ে টাকে থাপ্পড় দেওয়া মোটেও উচিৎ হয়-নি, ( কড়া গলায়।)


তনু : মেয়ে তো শুধু তোমার একা আমারও কষ্ট আমি করেছি তুমি না,তুমি চুপ থাকো তুমিনরমসট দেখেছো মেয়ে কি করছে,এই দেখো কামড়ে পুরো হাত পুলে গেছে লাল ও হয়ে গেছে দেখো,,,,,,


সাইফ : তনু আন্তি, তোমালে শোভি,অনেক বার ডাকছে তুমি শুনো নি তাই কামুল দিছে।রাগ করে।


শুভ্রব : দেখেছো তোমার ভুলের কারনে তুমি কামড় খেয়েছো। মাঝ থেকে শুধু শুধু আমার মেয়ে টা থাপ্পড় খেলো। ( ভ্রু জোড়া নাচিয়ে )


তনু,শোভার একটু কাছে গিয়ে দুহাত গালে রেখে বললো,,,,স্যরি সোনা মনি আর এমন হবে না,আমি আসলে এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলাম তোমাকে খেয়াল করেনি বা,দেখিনি। স্যরি ( কান ধরে )

শোভা খিল খিল করে হেসে দিলো বরাবরই মায়ের মতো হয়েছে আবেগহীন, তারপর সবাই মিলে কেক কেটে খেয়ে দেয়ে,,যে যার ঘরে চলে গেলো এখন রাত প্রায় অনেক গেস্টরাও চলে গেলো।

বেলকুনিতে দাড়িয়ে আছে,শুভ্রব এক হাতে কপির মগ কপি খাচ্ছে আবার কখনো কখনো গুন গুন করে গান গাইছে,শোভা ঘুমাচ্ছে তনু ওয়াশ রুম ফ্রেশ হয়ে থেকে মাত্র বের হলো। রুমে শুভ্রবকে না দেখে বেলকুনিতে গেলো।

তনু : তোমার কি মন খারাপ। ( ভ্রু কুচঁকে )


শুভ্রব : কিছু না,এমনি ভাবছি আমাদের আগের দিনগুলোর কথা সিফাতের কথা,পাঁচ বছর আগে হঠাৎ হারিয়ে গেলো আবার ঠিক পাঁচ বছর পর বউ বাচ্চা নিয়ে হাজির,,, হাহা,,,,,আচ্ছা একটা কথা বলবো।


তনু : বলো,( বাকা হেসে )


শুভ্রব : তুমি সব সময় আমাকে এভাবে ভালোবাসবে আগলে রাখবে,তোকে আমার চাই তনু শুধু তোকে চাই আর কিছু চাই না! ( নেশা চোখে )


তনু : বাসবো না কেন অবশ্যই বাসি বাসবো,এভাবে দুজন দুজনে ভালোবেসে আগলে রেখে বাকি জীবন টুকু পারিয়ে দিবো,,,আমরা আমাদের শোভাকে নিয়ে খুব হ্যাপি থাকবো দেখো, ( মুচকি হেসে )

‘এভাবেই অটুট থাকুক তনু, শুভ্রবের ভালোবাসা, আরো গভীর হয়ে উঠুক তাদের প্রেম ভালবাসা।

_____________সমাপ্তি ______________

গঠন মূলক কমেন্ট আসা করছি এতোদিন তো নাইছ নেক্সট কমেন্ট করছেন,আজ একটু বলুন না। গল্প নিয়ে কমেন্ট করুন।

যারা আমার গল্পটা মন দিয়ে ধৈর্য সহকারে পড়েছেন, তাদের প্রত্যেকে ভালোবাসা,হয়তো গল্পটায় কিছু ফুটিয়ে তুলতে পারিনি। খুব ইচ্ছে কল্পনা জল্পনা ছিল, অনেক বড় করবো গল্পটা প্রথমে এমনটাই ভেবে ছিলাম কিন্তু গল্পের মাঝ পথে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি,নানান,সমস্যার মুখমুখি হই,যার জন্য লেখার আগ্রহ টা হারিয়ে ফেলি কিছু তুলে ধরতে পারিনি,
‘তবে ইচ্ছে আছে ঈদের পর সিজন ২ লিখতে পারি, আর রমজান মাসে,যদি পারি,তো ছোট খাটো গল্প লিখবো ইনশাআল্লাহ ততদিন সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।

( ভুল ক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন.)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here