#তোকে আমার চাই
#ইসরাত জাহান তন্নি
#৮.
|
|
|
|
‘গোধূলি বিকেল ছাড়ো দিকে আফসা আফসা অন্ধকার নেমে এসেছে এখন সময় টা চারটা কি পাচঁটা চুয় চুয় করছে সন্ধ্যাও বলা যায় তবে আজ আকাশে ভীষন মেঘ জমেছে প্রচুন্ড বজ্রপাত হচ্ছে, সাথে বৃষ্টি ও খুব ইচ্ছে করছে বৃষ্টিতে ভিজতে কিন্তু ভয়াংক বিদ্যুৎ চমকানোর জন্যই পারছি না,আর সবচেয়ে বড় কথা হলো,আজ আমি উনার সারপ্রাইজ উনি নিশ্চয় ভীষন খুশি হবে নাকি,রেগে যাবে আমাকে বকবে হয় তো মারতেও পারে, ছিঃ আমি কত খারাপ উনার নামে কিসব ভাবছি উনি তো কখনো আমাকে মারেন না, উলটো আমার থেকে উনি আমায়,বেশি ভালোবাসেন জানি না,আমার বলা কথাটা শুনলে উনার ঠিক কেমন রিয়েক্ট হবে। বেলকুনিতে দাড়িয়ে আনমনে আরো কত কি যে আমি ভেবে ফেলেছি সে আর বলতে, হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চমকানোর গতিটা যেনো বেড়েই গেলো, আমিও ভয় পেতে শুরু করি। তারপর বাধ্য হয়ে রুমে চলে আসি এসে দেখি আমার রাজা মোশাই পায়ের উপর পা তুলে সোফায় বসে আছে মাথায় হালকা পানি। কালো গেঞ্জি টা ভিজে আছে নিশ্চয় ভিজে এসেছে।।
তনু : ওগো শুনছো ( একটু ঢং করে )
‘
‘শুভ্রব : হ্যাঁ গো শুনছি বলো কিছু বলবা ( মাথার পানি মুছতে মুছতে )
‘
‘তনু : বলছিলাম কি ওগো, ( লাজুক। )
‘
‘শুভ্রব : ফাজলামি হচ্ছে। ( ভ্রু কুঁচকে )
‘
‘তনু : না, না, সে কি আপনার সাথে ফাজলামি করবো কেন,
শুভ্রব : থাক হয়েছে।
‘
‘এই রে, রেগে টেগে গেলো নাকি এই ব্যাটার একটা প্রবলেম একটুতেই রেগে যায় অসহ্য ( মনে মনে )
‘তনু : আচ্ছা আপনি কোথা থেকে ভিজে এসেছেন,
‘
‘শুভ্রব : আমি বাচ্চা না যে বৃষ্টিতে ভিজতে যাবো, এই তো সামনের মোড়ে যে একটা দোকান আছে না, ও দোকান থেকে আসার সময় একটু ভিজে গেলাম,
‘
‘তনু : আচ্ছা আমি নীরা ভাবির ঘর থেকে আসি, দেখি ভাবি কি করে একা একা ভাইয়া তো মনে হয় এখনো আসেনি অফিস থেকে।
শুভ্রব : হুম আগে শুন সিফাত হঠাৎ করে কোথায় উদাহ হয়ে গেলো বলো তো আজ চারদিন ধরে তনতন করে খুঁজে বেড়াচ্ছি কোথাও পাচ্ছি না কেন! এই বাদর টা কোথায় হাওয়া হলো কে জানে,,( একটু থেমে ) তনু তুমি কিছু জানো মানে তোমায় কাছে বলেছে কোথায় গেছে। ( ভ্রু জোড়া কুঁচকে )
উনি কি তবে আমাকে সন্দহে করছেন, উনি কি ভাবছেন আমি সিফাত কে ভালোবাসি ওর সাথে আমার সম্পর্ক টম্পর্ক আছে এমব কিছু ভাবছে কি, উনি নিজেকে কি ভাবে টা কি। আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে উনি আবারও বলে উঠলেন
‘
‘শুভ্রব : তনু আমি আসলে…
‘
‘তনু : আপনি আসলে কি এভাবে বলতে চান না তো।
‘
‘ শুভ্রব : উফফ তুমি বেশি বুঝো,’বলতে চাচ্ছি তোমার সাথে তো সিফাতের রাস্তা ঘাটে প্রায় দেখা হতো তুমি কলেজে যাওয়ার পথে তাই বললাম আর কি।
‘
‘উনার কথায় কোনো রকম পাত্তা না দিয়ে নীরা ভাবির ঘরের উদ্দেশ্য হাটা ধরলাম আমি। অবশেষে দরজা বরাবর এসে চেঁচিয়ে বলে উঠলাম!
‘তনু : নীরা ভাবি ও নীরা ভাবি কি করছো তুমি আসতে পারি।
‘
‘ভাবি : তুমি আসো ভিতরে আসো অনুমিত নেওয়ার কি প্রয়োজন আছে, তোমার যখন তখন আসবে। ( মুচকি হেসে )
‘
‘তনু : আচ্ছা ( দাঁত কেলিয়ে )
‘
‘ভাবি : শুনো না বলছি শুভ্রব কে বলেছো ঐ কথাটা,
‘
‘তনু : না ভাবি এখনো বলা হয়নি।
‘
‘ভাবি : আচ্ছা রাতে বলো।
‘
‘তনু : হুম শুনো না। জানো আমার স্কুল লাইফের বেস্টির খোজ পেয়েছি।
‘
‘ভাবি : ওমা সে কি তাই তা কিভাবে পেলে
‘
‘তনু : আম্মু বলেছে বৃষ্টি দের বাড়ি তো আমাদের বাড়ি থেকে খুব একটা দূর নয়,আম্মু কি দরকারে ওদিক টায় গিয়েছিল তখন দেখলো বৃষ্টি কে জানো বৃষ্টির ও বিয়ে হয়ে গেছে,
‘
‘ভাবি : ওও জানো আমারও বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো তবে ওর আর সাথে যোগাযোগ হয়েনি, ওর ও হয়তো বিয়ে হয়ে গেছে।
‘তারপর নীরা ভাবি আর আমি কিছুক্ষন গল্প করে আমি গেলাম চা আনতে ততক্ষণে আখিল ভাইয়াও চলে এলো আমাদের আড্ডা টা আরো জমে উঠলো।
চা বানাতে রান্না করে উঁকি দিতে পাকা, একা একা চা বানিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরের দিকে হাটা দিলাম, কিন্তু সিঁড়ির দিকে এক পা পারিয়ে আর যেন পা চলছেই না, হাত পা ঠান্ডা হতে লাগলো বিদ্যুৎ চমকানোর মতো মাথাও ঘুরছে সামনে পা বাড়ানোর মতো বিন্দু মাত্র শক্তি খুজে পাচ্ছি। না,,,,,,
|
|
‘চোখ খুলতে নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলাম আশেপাশে তাকিয়ে দেখি পরিবারের সবাই আমার কাছে বসে আছে, সবাই মুচকি হাসছে কেউ কিছুই বলছে না,ডাক্তার কাকু ও পাশে বসে আছে,কি হয়েছিল আমার কেউ কিছু বলছে না কেন উনি কোথায় উনাকে দেখছি না কেন,’আমি আস্তে আস্তে উঠার চেষ্টা করছি আর পড়ে যাচ্ছি উঠতেই পারছি না,
‘ফুপি : এ,তনু একদম নড়াচনা করবি না,চুপটি করে শুয়ে থাক ( কড়া গলায় )
‘
‘তনু : ফুপি কি হয়েছিল আমার, ( অসহায় )
‘
‘ডাক্তার : আচ্ছা আমি তাহলে এখন আসি। তনু মামনি তুমি ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করো তোমার শরীর খুব দুর্বল বলা যায় এক্কেবারেই দুর্বল তুমি তো মনে হয় কিছুই খাও না। আমি কয় একটা মেডিসিন লিখে দিচ্ছি শুভ্রব তুই নিয়ে আসিস। ( দরজার সামনে উনি দাড়িয়ে আছেন। )
‘
‘ফুপাজি : তনু মামনি এই খুশির খবর টা আগে দিলি না কেন রে, আরো আগে বললে তো মিষ্টির কারখানা করে দিতাম এখন তো ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে তার ওপর রাত হয়ে গেছে,…. ( হেসে )
‘
‘ফুপি : হয়েছে, তোমার বলা শেষ হলে যাও বের হও কাল মিষ্টি নিয়ে আসতে পারবে চল সবাই, খেতে আসো তনুর খাবার টা এখানে পাঠিয়ে দিবো।
তারপর এক এক করে সবাই চলে গেলেন বাকি রইলো উনি,’উনাকে দেখে মনে হচ্ছে উনি খুব রেগে আছে সত্যি কি রেগে আছে, তবে কি উনি বাবা হওয়াতে খুশি নয়,আমি কি ভুল করে ফেলেছি,আমার ও তো আম্মু ডাক শুনতে ইচ্ছে হয়। উনি ধীরে পায়ে হেটে আমার পাশে বসলেন!
‘
‘ তনু : শুনুন না।
‘শুভ্রব : বলো কিছু খাবে তুমি খিদে পেয়েছে ( ভ্রু কুঁচকে )
‘
‘তনু : আরে না,বলছি আপনি কি রেগে আছেন আমার উপর…
‘
‘শুভ্রব : না তো রেগে থাকবো কেন।
‘
‘তনু : না মানে আপনাকে না বলে আমি যে।
‘
‘শুভ্রব : তোমার উপর আমার কোনো রাগ নেই তবে এখন হবে, যদি তুমি ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া না করো, ডক্টর কি বলেছে জানো তুমি যদি ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া না করো তাহলে তোমার আর আমার প্রিন্সেসর ক্ষতি হবে জীবনের যুকি হতে পারে আমার তোমাকেও চাই প্রিন্সেস কেউ চাই।
‘
‘তনু : কি করে বুঝলে প্রিন্সেস হবে।
‘
‘শুভ্রব : আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমাদের ঘর টা আলো করে একটা লাল টুক টুকে প্রিন্সেস আসবে
‘তারপর উনার শুরু হয়ে গেলো প্রিন্সেস কে নিয়ে কল্পনা জল্পনা, স্বপ্ন প্রিন্সেস কে কি পড়াবে কি খাওয়াবে কোথায় ঘুরতে যাবে কত কী আমি শুধু মুগ্ধ হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম মানুষ টা বড়ই অদ্ভুত কয় একটা দিন কতো ভালো থাকে আবার কয় একদিন পর রেগে যায়,বুঝি না কিছু।।
এভাবে কেটে গেলো আমার প্রায় ৭-৮ মাস এর মধ্যে গঠে গেলো অনেক কিছু পরিবর্তন এই সাত আট মাসে উনাকে আমি প্রচুর বিরক্ত করেছি কিন্তু উনি বিরক্ত হন নি বরং অনেক কেয়ার করেছেন, নীরা ভাবিদের টুইন বেবি হয়েছে এক ছেলে এক মেয়ে উনি তো সারাদিন মেয়ে টাকে নিয়েই ঘুরে কখনো কখনো আখিল ভাইয়া মিলে জগড়া লেগে যায় উনারা দুভাই মেয়ে পাগল ছোটে মেয়েদের প্রচুন্ড ভালো বাসেন পিচ্চি গুলার নামেই বলা হয়-নি ছেলের নাম রেখেছি নিহাল মেয়ে তিতলি। পুরো বাড়ি মেতে রাখে ওরা ওদের বয়স মাত্র তিন মাস সারাদিন শুয়ে থাকে নয় তো কোলে কোলেই থাকে এখন আমি প্রচুর মোটা হয়ে গেছি দিন দিন মোটা হয়ে যাচ্ছি শুভ্রব আমার নতুন নাম রেখেছে মুটকি, সারাদিন মুটকি মুটকি করেই ডাকে প্রথমে কয়দিন রেগে যেতাম এখন আর কিছু বলি না, বলতে ইচ্ছেও করে না।
‘আজ আম্মু সকালে ফোন করে বলেছে, বাড়ি যেতে পরিবারের সবাই যেতে বলেছে বিয়ের পর একবার গিয়েছিলাম আম্মু অসুস্থতার জন্য আর এখন যাচ্ছি, সামনের গাড়ি করে আমি আর উনি, উনি ড্রাইভ করছেন আর আমি জানালা দিয়ে প্রকৃতি দেখছি, কিছুক্ষন পর পর আড় চোখে তাকাচ্ছেন উনি।
পিছনের গাড়িতে নীরা ভাবি আখিল ভাইয়া আর তাদের পুচকিরা। তার পরের গাড়িতে ফুপি ফুপাজি উনারা।
হটাৎ করেই করে উনি গাড়িটা জোড়ে চালাচ্ছেন আমি ভীষন ভয় পেয়ে গেছি।
তনু : কি হলো এতো জোড়ে গাড়ি চালাচ্ছেন কেন আমার ভয় করছে। প্লিজ আস্তে চালান!
‘
‘শুভ্রব : আমি ইচ্ছে করে জোড়ে চালাচ্ছি না। গাড়ি ব্রেক করতে পারছি না মনে হয় ব্রেক পেল হয়ে গেছে।
তনু : তাহলে এখন কি হবে।
শুভ্রব : তুমি চিন্তা করো না আমি দেখছি।
‘
এক পর্যায় গাড়িটা একটা গাছের সাথে বাড়ি খায়,উনি গাড়ি থেকে কিছু টা দূরে গিয়ে পড়েন আর আমি গাড়িতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকি। আখিল ভাইয়া তখন ফলো করেছিলেন আমাদের গাড়িটা গাড়ি দূরত্ব চলাতে উনাদের সন্দেহ হয়েছিল। উনারে এসে আমাকে আর শুভ্রব ভাইয়া হসপিটালে এডমিট করানো হয়,
শুভ্রব এর জ্ঞান ফিরতে উনি শুধু তনুকে চাই প্রচুন্ড পাগলামি করছে এইদিকে ডক্টর বলেছে তনুর অবস্থা খুবই খারাপ হয় তো নাও বাঁচতে পারে,
ডাক্তার : আপনাদের রোগীর অবস্থা খুব খারাপ এক দিকে উনার ডেলি বাড়ির ডেট প্রায় ৫-১০ দিন পার আরেকদিকে অনেক দুর্বল তার ওপর অক্সিডেন্ট যদিও তন্নির তেমন একটা ক্ষতি হয়নি, তবে জীবনের যুকি আছে শুভ্রব আপনি কাকে চান আপনার বউকে নাকি সন্তানকে।
‘
শুভ্রব : আমার দুজনকেই চাই ডক্টর, দুজনকেই। আমি একটু তনুর সাথে দেখা করতে চাই ডক্টর প্লিজ…
‘
‘ডাক্তার : সময় পাচঁ মিনিট জাস্ট ওকে, পাচঁ মিনিট পর আমরা উনাকে অপারেশন এর থ্রিরে নিয়ে যাবো!
‘
‘শুভ্রব : থ্যাংকস ডক্টর।
‘
দরজা বেয়ে ভিতরে ডুকলেন উনি মাত্র জ্ঞান ফিরলো আমার উনাকে দেখে মনে হচ্ছে প্রচুন্ড কেঁদেছে চোখ গুলো ফুলে আছে।
‘শুভ্রব : তনু
‘
‘তনু : হুম, কিছু বলবেন।
‘
‘শুভ্রব : হুম,,, তোমাকে কিছুক্ষ পর অপারেশন এর থ্রিরে নেওয়া হবে, তুমি একদম ভয় পাবে না সব সময় ভাববে শুভ্রব তোমার পাশে আছে।
‘
‘তনু : আমার জীবনের যুকি হতে পারে তাই না আমি মরে গেলে আমার বেবি টাকে তুমি আমার অভাব টা বুঝতে দিও না তাকে তুমি খুব ভালোবেসে।
‘
‘শুভ্রব : ব্যস হয়েছে তোমার বলা শুনো এবার আমি বলি আমার শুধু তোমাকে চাই, তনু শুধু তোকে চাই তোকে আমার চাইই চাই,আর কিছু শুনতে চাই না তুমি আর আমাদের প্রিন্সেস নিয়ে আমরা খুব হ্যাপি থাকবো দেখো,
কতাটি বলে উনি চলে গেলেন,কিছুক্ষপর ডক্টর এসে আমাকে নিয়ে গেলেন আমার খুব ভয় করছে আমি কি বাঁচবো নাকি মরে যাবো আমি মরে গেলে তো উনি একা হয়ে যাবে খুব পাগলামো করবে কে সামলাবে উনাকে।
#চলবে
তবে কি তনু মরে যাবে তনু মরে গেলে শুভ্রব কি করবে সেও কি মরতে চাইবে। কি মনে হয় আপনাদের,কমেন্ট এ বলবেন কিন্তু।
( আমি এখনো সুস্থ হইনি তাই রেগুলা দিতে পারছি না,ভুল ক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন, )
—